অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -০২ || আরভি আহিয়াদ তিহু

অব্যক্ত_ভালোবাসা
লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু/
#Love_Stories_Writer ( Our Page )
সবাই দয়াকরে একটা করে কমেন্ট করবেন প্লিজ 😖🙏
প্রথম_পরিচ্ছেদ
পর্বঃ2

দু-কদম এগিয়ে যেতেই রুশানি হাতে টান অনুভব করল। আকষ্মিক ঘটনায় ‘ও’ পিছনে তাকিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়াশ ওর হাত ধরে টেনে ওকে বেডের উপরে ছুড়ে মারল। আয়াশের এমন কাণ্ডে রুশানি একদম হতবম্ভ হয়ে গেল। ‘ও’ চকিত দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“এভাবে ছুড়ে মারলি কেনো? আমার যদি লেগে যেত?”

আয়াশ রুশানির প্রশ্নের কোনো অ‍্যান্সার না দিয়ে হুট করেই এসে বেডের উপর উঠে পড়ল। তারপর এক হাত দিয়ে শক্ত করে রুশানির গলা টিপে ধরল। রুশানি চমকে উঠল। দু-হাত দিয়ে নিজের গলা থেকে আয়াশের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,

–“কি করছিস আয়াশ? পাগল হয়ে গেছিস নাকি? লাগছে আমার।”

আয়াশ রুশানির কথায় পাত্রা না দিয়ে আরো জোরে ওর গলা চেপে ধরল। তারপর হিংস্র গলায় বলল,

–“তুই আমার লাইফটা শেষ করে ফেলেছিস। তোর জন‍্যে আজকে আমি একেবারে শেষ হয়ে গেছি। তুই একটা বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তোর কোনো অধিকার নেই। আজকে আমি তোকে একেবারে শেষ করে দিব।”

রুশানি বুঝল আয়াশ নেশার ঘোরে ওকে ইতি ভাবছে। তাই এরকম হিংস্র বিহেব করছে। ‘ও’ কয়েকবার চেষ্টা করেও আয়াশের হাত নিজের গলা থেকে ছাড়াতে পারল না। তাই কোনো রকম আওয়াজ বের করে রোহানকে ডাকতে লাগল। রোহান মাত্র-ই বাসা থেকে বের হওয়ার জন‍্যে উদ্দোত হচ্ছিল। এর মধ‍্যেই রুশানির চিৎকার শুনে ‘ও’ দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসলো। এসে রুশানির এমন যায়-যায় অবস্থা দেখে রোহানের পিলে চমকে গেল। ‘ও’ দৌড়ে এসে আয়াশকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে রুশানির থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু আয়াশের প্রখর শক্তির সাথে পেরে উঠল না। রোহান কাঁদো কাঁদো স্বরে আয়াশকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“স‍্যার কি করছেন? ছাড়ুন ম‍্যামকে। নাহলে ম‍্যাম ম*রে যাবে স‍্যার।”

আয়াশ দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
–“মা*রার জন‍্যেই তো ওর গলা টিপে ধরেছি। আজকে এই পৃথিবীতে ওর শেষ দিন। ওকে আমি আজ কিছুতেই ছাড়ব না।”

আয়াশের কথা শুনে রোহানের এবার মেজা*জ খারাপ হয়ে গেল। ‘ও’ রা*গে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলল,

–“শা*লা মাতা*লের বাচ্চা ওটা তোর কাল নাগিনী এক্স না। ওটা আমার রুশা ম‍্যাম। মা*র*তে হলে তোর ওই ভু*তনি এক্সকে গিয়ে মা*র। আর সাথে তুইও এক গ্লাস পানিতে ডুবে ম*রে যা। তাও আমার রুশা ম‍্যামকে মা*রিস না।।”

রুশানির দম একেবারে আটকে গেছে। আর কয়েক সেকেন্ড আয়াশ এভাবে ওর গলা টিপে রাখলে ‘ও’ যে একেবারে দম আটকে মা*রা যাবে, সেটা নিয়ে ওর বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই। রুশানি আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজের দু-পাঁ দিয়ে জোরে আয়াশের পেটে লা*থি মারল। পেটে এত জোরে আ*ঘাত লাগতেই আয়াশ রুশানির গলা ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে নিজের পেট চেপে ধরল। ছাড়া পেয়ে রুশানি গলায় হাত দিয়ে কাশতে লাগল। এরমধ‍্যেই রোহান এগিয়ে এসে রুশানিকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে ব‍্যস্ত কণ্ঠে বলল,

–“ম‍্যাম এই পাগলা ষাঁড় আবারও ক্ষেপে যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি চলুন এখান থেকে। স‍্যার এখন পিনিকে আছে। যখন তখন আপনার সাথে যা তা কিছু একটা করে ফেলতে পারে। এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলুন ম‍্যাম।”

রোহানের কথায় রুশানি কাশতে কাশতে কোনো রকম শোয়া থেকে উঠে বসল। তারপর আশেপাশে না তাকিয়েই এক দৌড়ে বাইরে বের হয়ে গেল। রুশানির পিছনে পিছনে রোহানও বের হয়ে গেল। রোহান বের হতেই রুশানি এসে রুমের দরজাটাকে টেনে বাইরে থেকে লক করে দিল। রোহান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ভিতর থেকে আয়াশ জোরে জোরে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে। আর চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে দরজাটা খুলতে বলছে। রুশানি বুকে হাত দিয়ে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

–“কাল সকালের আগে এই রুমের দরজা খুলতে সবাইকে বারন করে দিবেন রোহান ভাই। যদি রুমের মধ‍্যে ঝূর্নিঝড়, টর্নেডো, জ্বলোচ্ছাসও বয়ে যায়, তাও এই রুমের দরজা যেন কেউ না খুলে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবেন, এটা রুশানি ম‍্যামের অর্ডার।”

কথাটা বলে রুশানি দরজার দিকে তাকিয়ে একটা অ‍্যাংড়ি লুক দিয়ে। হনহন করে ওখান থেকে চলে গেল।
_________________________
রাত 02:30

বিশাল একটা রুমের মাঝ বরাবর চোখ বাধা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে ইতি। ওর থেকে খানিকটা দূরত্বে পাঁয়ের উপর পাঁ তুলে আরাম করে চেয়ারে বসে আছে একজন ব‍্যাক্তি। ব‍্যাক্তিটি একটা পেপার ওয়েট হাতে নিয়ে কাচের টেবিলের উপর ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,

–“তো মিস ইতি এক্সের হাতে চড় খেয়ে কেমন ফিল হচ্ছে? চড়টা ভিষন টেস্ট ছিল নিশ্চয়ই?”

খুব পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর কানে ভেষে আসতেই শরীরের লোম দাড়িয়ে গেল ইতির। কিন্তু ব্রেনে অনেক জোর দেওয়ার পরেও মনে করতে পারল না এই কণ্ঠস্বরের মালিকের নাম। ইতি খানিকটা ভয় নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

–“কে আপনি? আর কী চান আমার থেকে?”

লোকটা আগের মতোই পেপার ওয়েটটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,

–“আমার যা চাই সেটা আমি অলরেডি পেয়ে গেছি মিস ইতি। এবার আপনার পাওনাটা আপনাকে দেবার পালা। শর্ত মোতাবেক সকাল হতেই আপনার একাউন্টে পাঁচ লক্ষ টাকা সেন্ট হয়ে যাবে। আর শাওন আহমেদের নেক্সট মুভিতে আপনাকে হিরোইন হিসেবে কাস্ট করা হবে। এখন আপনি শুধু জার্নালিস্টদের সবকিছু গুছিয়ে বলতে পারলেই হলো। তাহলেই আপনার মডেল থেকে হিরোইন হওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না।”

লোকটার কথাটা শুনে ইতি বেশ খুশী হয়ে গেল। ফাইনালি এত স্টাগলের পরে আজকে সাকসেস ওর এতটা কাছাকাছি চলে এসেছে। যেই স্বপ্নের জন‍্যে একদিন ‘ও’ ওর ভালোবাসা, ফ‍্যামিলি সবকিছু স‍্যাক্রিফাইজ করেছিল । সেই স্বপ্ন আজকে প্রায়ই ওর হাতের নাগালে চলে এসেছে। তবে এই সবকিছুর মধ‍্যে ইতির মনে বারবার একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্নটা চেপে রাখতে না পেরে কৌতূহলবশত ইতি লোকটাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“কিন্তু আপনি এতসব কেন করছেন? আয়াশের ক্ষতি করে আপনার কি লাভ?”

ইতির কথা শুনে লোকটা হুট করেই পেপার ওয়েট টা ঘোরানো থামিয়ে দিল। তারপর কঠিন গলায় বলে উঠল,

–“দ‍্যাট’স নন অফ ইউর বিজনেস মিস ইতি। আপনাকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছিল, আপনি সেটা করেছেন। এরজন‍্যে আপনাকে আপনার ডিমান্ড অনুযায়ী সবকিছু দেওয়া হবে। এর বাইরে অন‍্য আর কোনো বিষয় নিয়ে আপনি অতিরিক্ত কৌতুহল দেখানোর চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, আমি যেমন আপনাকে মডেল থেকে হিরোইন বানানোর ক্ষমতা রাখি। তেমন নাইকা থেকে রাস্তার ফকির বানানোরও ক্ষমতা রাখি। সো মাইন্ড ইউর ওন বিজনেস।”

ইতি আর কথা বারানোর সাহস পেল না। যদিও এই লোকটাকে ‘ও’ চিনে না। তাও এই লোকের ক্ষমতা সম্পর্কে ওর বেশ ভালোই আইডিয়া হয়ে গেছে। গত পরশু রাতে হঠাৎ করেই ওর ফোনে একটা কল আসে। ‘ও’ ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে,

–“আমি কে, কেন ফোন করেছি, সেই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না। শুধু আমি যা যা বলব সেটা মন দিয়ে শুনবেন।”

কণ্ঠটা শুনে ইতির ভিষন চেনা লেগেছিল। কিন্তু ‘ও’ তখনও বুঝতে পারছিল না ওটা কার কণ্ঠস্বর ছিল। এর মধ‍্যেই লোকটা বলেছিল,

–“আগামীকাল সন্ধ‍্যায় দ‍্যা ফেমাস ডিরেক্টর শাওন আহমেদের হলুদ সন্ধ‍্যায় আপনাকে ইনভাইট করা হলো। এ‍্যাজ আ গেস্ট আপনি ওখানে উপস্থিত থাকবেন। ওখানে আপনার দুই বছর পুরনো এক্স আয়াশ দেওয়ানও থাকবে।”

আয়াশের নাম শুনে ইতি চমকে গিয়েছিল। কারন ‘ও’ ভালো করেই জানে আয়াশের চারপাশেও যদি ‘ও’ যায়, তাহলে আয়াশ ওকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। ইতির এসব ভাবনার মধ‍্যেই লোকটা আবারও বলে,

–” আপনাকে শুধু একটা কাজ-ই করতে হবে। যেকোনো ভাবে আয়াশকে রাগাতে হবে। আর এমন ভাবে রাগাতে হবে যাতে ‘ও’ আপনার উপর অ‍্যাটাক করে বসে। আশা করি এর জন‍্যে আপনাকে বেশি এফোর্ট করতে হবে না। কারন আয়াশ এমনিতেই শর্ট টেম্পারের মানুষ। ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে ভয়ংকর রেগে যায়। আর আপনার চেহারা দেখলে তো কথাই নেই। আপনাকে ‘ও’ এত পরিমান ঘৃনা করে যে আপনার ছায়াটাই ওকে রাগানোর জন‍্যে যথেষ্ট।”

ব‍্যাক্তিটির কথা শুনে ইতি বেশ শকড হয়ে বলেছিল, –“আপনার কথায় আমি এসব কেন করতে যাব?”

ব‍্যাক্তিটি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিল,
–” কারন এছাড়া আপনার হাতে আর কোনো অপশন নেই তাই। আপনি যদি আমার কথা মতো কাজগুলো না করেন, তাহলে আপনি নাইকা হওয়ার জন‍্যে গত দুই বছরে যতগুলো ফিল্ম ডিরেক্টরদের সাথে ফিজিক্যাল হয়েছেন সেই সবগুলো ভিডিও আগামি চব্বিশ ঘন্টার মধ‍্যে সোস‍্যাল মিডিয়ায় আপলোড হয়ে যাবে। আর যদি কাজটা করে দেন, তাহলে শাওন আহমেদের নেক্সট মুভির মেইন ফিমেল লিডের ক‍্যারেক্টার টা আপনার হবে। সাথে আপনার একাউন্টে নগদ কড়কড়ে পাঁচ লক্ষ টাকাও ট্রান্সফার হয়ে যাবে। এখন ভেবে দেখুন কি করবেন। যদি কাজটা করতে রাজি থাকেন, তাহলে আগামীকাল সন্ধ‍্যায় রেডি থাকবেন। আমার লোকেরা গিয়ে আপনাকে পিক করে নিবে।”

ব‍্যাস এতটুকু কথা বলেই লোকটা ফোনটা কেটে দিয়েছিল। যেন উনি আগে থেকেই জানত ইতি এই শর্তে হান্ড্রেড পার্সেন্ট রাজি হবে। ইতিও সারা রাত ভাবার পর কাজটা করার জন‍্যে রাজি হয়ে গিয়েছিল। কারন ‘ও’ হিরোইন হওয়ার এত বড় একটা সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি। ওর এসব ভাবনার মধ‍্যেই সামনে বসে থাকা লোকটা গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে বলল,

–“জোভান, ইতি ম‍্যামকে স-সম্মানে ওনার অ‍্যাপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসো। ওনার এখানে আর কোনো প্রয়োজন নেই।”

লোকটার কথা শেষ হতে না হতেই কেউ একজন এসে ইতির হাত ধরে টানতে টানতে ওকে বাইরের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। নিয়ে আসার সময়ও ওকে এভাবে নিয়ে এসেছিল। হলুদের অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে ‘ও’ নিজের বাসার দিকে যাচ্ছিল। বাসার সামনে নামতেই যেই গাড়িটা ওকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল সেটা আবারও ওর সামনে এসে থামে। তারপর একজন লোক এসে ওর চোখ বেধে দিয়ে ওকে গাড়িতে উঠিয়ে এখানে নিয়ে আসে।

ইতিকে নিয়ে যেতেই শান হো হো করে হেসে উঠে। ওর হাসির ঝংকার পুরো রুমের দেয়াল গুলোকে কাপিয়ে তোলে। শান বসা থেকে দাড়িয়ে টেবিলের উপর দু-হাত রেখে আপন মনেই শক্ত কণ্ঠে বসে উঠে,

–“তোমাকে আমি শান্তিতে থাকতে দিব না আয়াশ দেওয়ান। তুমি আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছো। আমি তোমার থেকে তোমার সব প্রিয় জিনিস কেড়ে দিব। তোমাকে নিঃশ্বেষ করে দিব। লোকে তোমার নাম শুনলেই তোমার থেকে ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিবে। না তুমি শান্তিতে বাঁচতে পারবে। আর না আমি তোমাকে শান্তিতে মরতে দিব।”
_________________________

সকাল 10:30

রুশানির চেম্বারে বসে কাঁদো কাঁদো ফেস করে হাতের নখ খাচ্ছে আয়াশ। সামনেই সাদা এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে টেবিলের উপর দু-হাতে ভর দিয়ে ফাইলের মধ‍্যে মুখ গুজে আছে রুশানি। প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ আয়াশ রুশানির সামনে বসে আছে। কিন্তু রুশানি সেই যে ফাইলে মুখ গুজেছে তারপর আর ভুলেও আয়াশের দিকে ফিরে তাকায়নি। আয়াশ বেচারা পড়েছে মহা মুশকিলে। কি বলে কথা শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। একবার ভাবল সরি বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই ওর মনে হলো যদি সরি বললে রুশানি ওর মুখের উপর জুতা ছুড়ে মারে, তখন কি হবে? জাতির সামনে তো আয়াশ দেওয়ানের পেজটিস একদম পাঞ্চার হয়ে যাবে। এসব ভেবেই আয়াশ আর সরি বলার সাহস পায়নি। দুজনের মধ‍্যের নিরবতা কাটিয়ে শান্ত কণ্ঠে রুশানি বলে উঠল,

–“কিছু বলবি?”

এই এতক্ষণ পরে আয়াশ কিছু বলার সুযোগ পেয়ে গড়গড় করে বলা শুরু করল,

–“রুশ আমাকে মাফ করে দে ইয়ার। আমি আর কখনো ড্রিংকস করব না। ড্রিংকস করা তো দূরের কথা, আমি ওটা ছুয়েও দেখব না। প্লিজ আমার উপর রেগে থাকিস না। তুই জানিস, তুই ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। তুই আমাকে ভুল বুঝলে আমি একেবারে ম*রে যাব ইয়ার। বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। ওই মেয়েটার ওসব কথা শুনে আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই…..”

এইটুকু বলেই চুপ হয়ে গেল আয়াশ। ওর চোখে মুখে আবারও রাগের ছাপ স্পষ্ট দেখা গেল। কপালের রগটা ফুলে উঠল। চোখ মুখ ভয়ানক লাল হয়ে গেল। রুশানি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। টেবিলের উপরে থাকা পানিটা হাতে নিয়ে আয়াশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–“সবার আগে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শিখ। তারপর আমাকে এসব বলতে আসিস।”

আয়াশ রুশানির হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে দুই ঢোক পানি খেয়ে গ্লাসটা আবারও টেবিলের উপর রেখে দিল। রুশানি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–“জানিস কালকের তোর ওই স্টুপিড কাজটার জন‍্যে তোর নামে কি কি কন্ট্রোভার্সি হচ্ছে? আজকে সকালের নিউজ চেক করেছিস? বাইরের সবাই তোর নামে উল্টাপাল্টা কথা বলছে আয়াশ। তোকে নিয়ে ট্রল করছে। তোর ওই একটা বোকামির জন‍্যে তোর অর্ধেক ফ‍্যান ফলোয়ার তোকে নিয়ে নেগেটিভ মন্ত‍ব‍্য করছে।”

রুশানির কথা শেষ হতেই আয়াশ নির্বিকার ভাবে বলল,
–“হু কেয়ার’স রুশ? তুই ভালো করেই জানিস, আমাকে নিয়ে কে কি বলল, কে কি ভাবল, সেসব নিয়ে আমার মোটেও মাথা ব‍্যাথা নেই। আমি এসবের পরোয়া করি না। যদি আমার সব ফ‍্যান ফলোয়াররাও আমাকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব‍্য করে, তাহলেও আমি আয়াশ দেওয়ান, অলওয়েজ আয়াশ দেওয়ানই থাকব। ওদের মন্তব‍্য আমার মাথার একটা চুলও বাঁকা করতে পারবে না।”

আয়াশের কথা শুনে রুশানি রাগি কণ্ঠে বলল,
–“সবকিছুর প্রতি তোর এই কেয়ারলেস অ‍্যাটিটিউড দেখলেই, না আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছে করে তোর কানের নিচে ঠাটিয়ে কয়েকটা চ*ড় বসিয়ে দেই।”

কথাটা বলে রুশানি জোরে জোরে দম নিতে লাগল। ওকে রেগে যেতে দেখে হঠাৎ করেই আয়াশের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। আয়াশ বসা থেকে উঠে এগিয়ে গিয়ে রুশানির এক সাইডে দাড়াল। তারপর রুশানির চেয়ারের হাতল ধরে টেনে ওকে নিজের দিকে ঘোরাল। আয়াশের এমন কান্ডে রুশানি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকাল। আয়াশ রুশানির চেয়ারের দুই হাতলে নিজের দু-হাত রেখে ভর দিয়ে ওর দিকে খানিকা ঝুকে বলল,

–“এভাবে রাগে না বউ। রাগলে তোমার গাল’টা টমেটোর মতো লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে করে সস বানিয়ে ফ্রাঞ্চ ফ্রাইয়ের সাথে খেয়ে ফেলি।”

রুশানি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“আমার চোখের সামনে থেকে সর আয়াশ। ফালতু কথা বললে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলেদিলাম।”

আয়াশ রুশানির দিকে আরেকটু ঝুকে বলল,
–“ইশশশ এভাবে বলে না বউ। বরের নাম ধরে ডাকলে পাপ হয়। সুন্দর করে জান বলে ডাকো।”

রুশানি রাগে ফুসতে ফুসতে বলল,
–“গতকাল রাতের লাথিটার কথা মনে হয় ভুলে গেছিস। তাই এখন এসব উদ্ভট কথা বলার সাহস পাচ্ছিস। নাহলে এসব বলার আগে অন্তত একশো বার ভাবতি।”

রুশানির কথা শুনে আয়াশ হুট করেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ল। তারপর কিছু একটা মনে পড়ার মতো ভাব করে বলল,

–“ভুলে যাওয়ার মতো করে তো লাথি টা দিস নি ভাই? এমন ভাবে দিয়েছিস যে তোর পায়ের হিলের দাগ আমার পেটে বসে গেছে। কি নিষ্ঠুর তুই। এভাবে কেউ কাউকে মারে? জানিস, অতিরিক্ত পেটে ব‍্যাথায় আমি সকাল বেলা সোজা হয়ে দাড়াতে অবদি পারছিলাম না।”

রুশানি ক্ষেপে গিয়ে বলল,
–“লা*থি টা কি আমি ইচ্ছে করে মেরে ছিলাম নাকি? তোর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন‍্যেই তো লা*থি মা*রতে বাধ‍্য হয়েছিলাম। তুই আমার গলাটার কি অবস্থা করেছিস, দেখ।”

রুশানি বসা থেকে দাড়িয়ে ঘাড় বাঁকা করে আয়াশকে দেখাল। তারপর ব‍্যাথাতুর স্বরে বলল,

–“দেখ ছাগল, তোর জংলির মতো নখ গুলো সব আমার গলায় বসে গেছে। এত জ্বলছে যে ঠিকভাবে আমি ঘাড়ও নাড়াতে পারছি না।”

কথাটা বলে রুশানি ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে নাক-মুখ কুচকে ফেলল। আয়াশ ঠোঁটের কোনে আবারও দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বলল,

–“খামচি দেওয়া জায়গায় একটা কিস করতে দে। তাহলেই দেখবি ঘাড় থেকে সব ব‍্যাথা ভ‍্যানিশ হয়ে গেছে।”

আয়াশ একপা একপা করে রুশানির দিকে আগাতে লাগল। রুশানি একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

–“বুঝেছি, কালকের পিনিক তোর এখনো কাটেনি। এই পিনিক কাটাতে হলে তোকে জুতো পেটা করতে হবে। দাড়া তোর মাথা থেকে সব পিনিক ছোটানোর ব‍্যবস্থা করছি।”

এইটুকু বলেই রুশানি ওর পায়ে হাত দিয়ে জুতো খুলতে লাগল। রুশানিকে জুতা খুলতে দেখে আয়াশ চোখ জোড়া বড় বড় করে বলল,

–“এইরে ডাক্তার সাহেবা সত‍্যি সত‍্যি ক্ষেপে গেছে মনে হচ্ছে। ভাগ আয়াশ ভাগ! বেঁচে থাকলে এরকম ডজন খানেক সুন্দরী মেয়ের ফর্শা ঘাড়ে চুমু খেতে পারবি।”

বলতে বলতে আয়াশ দৌড় লাগল। পিছন থেকে রুশানি জুতো হাতে নিয়ে চিল্লিয়ে বলে লাগল,

–“পায়েশের বাচ্চা, তুই যদি আর কখনো ভুলেও আমার চেম্বারে এসেছিস, তাহলে আমি তোকে জোর করে নিয়ে গিয়ে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে রেখে আসব বলেদিলাম। তারপর সেখানে বসে পাগলদের পাগলদের গলায় চুমু খাস। ছাগল কোথাকার।”

চলবে….

বিঃদ্রঃ শর্ট করে গঠনমূলক মন্তব‍্য করার চেষ্টা করুন। নাহলে বুঝবো কীভাবে গল্পটা আদৌ আপনাদের মনের মতো হয়েছে কিনা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here