অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -৩০

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ৩০ (❌18+এলার্ট❌)

সকাল 8:15

মিসেস রাহেলা রায়জাদা রেডি হয়ে সাইড ব‍্যাগ’টা হাতে নিয়ে ড্রইংরুমে আসলেন। এসে দেখলেন শান সোফায় বসে বসে নিউজ পেপার উল্টেপাল্টে দেখছে। উনি এগিয়ে এসে আলত করে শানের মাথায় হাত রাখলেন। তারপর নরম কণ্ঠে বললেন,

–“তুমি যা বলেছো সেটা কিন্তু আমি মেনে নিয়েছি শান। এবার তোমাকেও আমার দুটো কথা মানতে হবে। প্রথমত, সৃজাকে আমি তোমার ভরসায় রেখে যাচ্ছি, ওর ভালো করে খেয়াল রাখবে। আর দ্বিতীয়ত, রুশার সাথে কোনো-রকম মিসমিহেব বা ওর উপরে কোনো-রকম জোর জবরদস্তি করবে না। ইজ দ‍্যাট ক্লিয়ার?”

রাহেলা রায়জাদার কথার প্রতিউত্তরে শান কিছু বলল না। নিউজ পেপার’টা টি-টেবিলের উপরে রেখে বসা থেকে দাড়িয়ে থমথমে কণ্ঠে বলে উঠল,

–“লেইট হয়ে যাচ্ছে আম্মু। চলো, তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসি।”

কথাটা বলে শান সামনের দিকে হাঁটা দিল। পিছন থেকে রাহেলা রায়জাদা শানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললেন,

–“একটা কথা ভালো করে মনে রেখো শান। তোমার সাথে রুশার বিয়ে’টা তখনই হবে, যখন রুশা নিজে বিয়েতে সম্মতি জানাবে। তুমি যদি ভেবে থাকো, তুমি আমার ছেলে বলে আমি তোমার একতরফা সব ডিসিশন মেনে নিয়ে রুশার সাথে অবিচার করব, তাহলে সেটা তোমার ভুল ধারনা হবে। তোমার ইচ্ছের যেমন আমাদের কাছে মূল‍্য আছে। তেমনই রুশার ইচ্ছে-অনিচ্ছেরও আমাদের কাছে মূল‍্য আছে। তাই তুমি কতটা জেদি, সেটার প্রমান ওকে না দিয়ে। তুমি ওকে কতটা ভালোবাসো সেটা ওকে বোঝাও। তাহলেই দেখবে ‘ও’ তোমার সমস্ত ইচ্ছে মেনে নিবে। তোমাকে বিয়ে করতেও নিজ ইচ্ছেতে রাজি হয়ে যাবে।”

শান এবারেও কিছু বলল না। দাড়িয়ে থেকে রাহেলা রায়জাদার কথাটুকু শুনে দপদপ করে পাঁ ফেলে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে গেল। রাহেলা রায়জাদা একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেললেন। রুশা ওই বাড়ি থেকে চলে আসার পর থেকে শান একদম চুপচাপ। ওর মাথা মধ‍্যে কি চলছে সেটা একমাত্র ‘ও’-ই জানে। রাহেলা রায়জাদা বরাবরের মতোই ছেলের মতিগতি বুঝতে এবারেও অক্ষম হচ্ছেন। কারন শান বরাবরই স্বল্পভাষী। তাই ওর মনে আর মাথার মধ‍্যে কি চলে সেটা বোঝার ক্ষমতা ওনার নেই। উনি শুধু ভয় পাচ্ছেন ছেলের জেদ’টাকে। জেদের বশে শান যদি রুশার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে, তখন সিচুয়েশন কি হবে? সেটা ভাবতে ভাবতেই ওনার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
_________________________

সন্ধ‍্যা সাড়ে ছয়টা বাজে। রুশা হসপিটাল থেকে আজকে একটু তাড়াতাড়ি-ই ব‍্যাক করেছে। শরীর’টা তেমন ভালো লাগছিল না। তাই সব কাজ অল্প সময়ে শেষ করে বাসায় এসে পড়েছে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ‘ও’ কিছুক্ষণ রেস্ট নিল। তারপর ভাবল রাহেলা রায়জাদা’র সাথে ওর একবার দেখা করে আসা উচিৎ। গতকাল উনি এতবার বলার পরেও রুশা ওনাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করে আসেনি। এখন যদি একবার দেখা করতেও না যায় তাহলে ব‍্যাপার’টা রুড দেখায়। এসব ভাবনা চিন্তা করে রুশা বেড থেকে উঠে দাড়াল। জামা-কাপড়ের স্টান্ডের উপর থেকে ওড়না’টা হাতে নিয়ে মাথায় পেচিয়ে পড়ে গলার সাথে ঝুলিয়ে নিল। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এসে সামনের ফ্লাটে কলিংবেল বাজাল। একবার কলিংবেল বাজাতেই শান এসে দরজা খুলে দিল। রুশা সিরিয়াস ফেস করে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
–“বড়-মা কোথায়?”

শান দরজার সামনে থেকে সাইড হয়ে দাড়িয়ে নিজেও গম্ভীর স্বরে জবাব দিল,
–“ভিতরেই আছে।”

রুশা আর কিছু না বলে চুপচাপ শানের সাইড দেওয়া জায়গা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। ‘ও’ ভিতরে ঢুকতেই শান দরজাটা লক করে দিল। ড্রইংরুমে ভালো করে চোখ বোলানোর পরেও মিসেস রাহেলা রায়জাদাকে বা সৃজাকে কোথাও দেখতে পেল না রুশা। তাই ‘ও’ ভিতরের দিকে এগিয়ে গেল। এই ফ্লাটে টোটাল চারটা রুম। মেইন দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই প্রথমে ড্রইংরুম। তারপাশের’টা ডাইনিং এবং ডাইনিংয়ের সাথে এডযাস্ট করা কিচেন। ড্রইংরুমের সোজাসুজি ওপজিট সাইডে একটা কমন ওয়াশরুম। আর সেই ওয়াশরুমের দুই সাইডে দুটো বেড-রুম। দুটো বেডরুমের সাথে দুটো এটাচ ওয়াশরুম আর একটার সাথে এটাচ ব‍্যালকনি। রুশার ফ্লাট’টাও একদম এটার মতোই সেইম ডিজাইনের। তাই এই বাসার কোথায় কোন রুম আছে সেটা একদম রুশার নখদর্পণে।

রুশা ড্রইংরুম থেকে ভিতরে ঢুকে তারপাশের ডাইনিং রুমটায় উকি দিল। কিন্তু ডাইনিং বা কিচেনেও রাহেলা রায়জাদাকে দেখতে পেল না। তাই পিছনে ঘুরে শানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
–“কোথায় বড়-মা? দেখতে পাচ্ছি না তো?”

শান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে-ই বলল,
–“ওই পাশের রুমে শুয়ে আছে। সবকিছু গোছাতে গোছাতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই একটু রেস্ট নিচ্ছে।”

শানের কথা শুনে রুশা আর এক মুহূর্তও ওখানে না দাড়িয়ে সোজা বাঁম পাশের রুমটার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু ভিতরে ঢুকে কাউকে না দেখতে পেয়ে বেশ অবাক-ই হলো। ওয়াশ-রুমের দরজার দিকে তাকাতেই দেখল সেটাও বাইরে থেকে বন্ধ। রুশা এবার শানের উপরে বিরক্ত হয়ে ওকে কিছু কঠিন শব্দ বলার জন‍্যে পিছনে ঘুরল। কিন্তু ‘ও’ কিছু বলার আগেই শান রুমের ভিতরে ঢুকে দরজা’টা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে চাবি’টা প‍্যান্টের পেকেটে ঢুকাল। রুশা দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজার লক ঘোরাতে ঘোরাতে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
–“এসব কি মিঃ রায়জাদা? দরজা লক করলেন কেন? আর বড়-মা কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না কেন?”

কথাটা বলে রুশা “বড়-মা” “বড়-মা” সম্মোধন করে উচ্চস্বরে কয়েকবার ডেকে উঠল। কিন্তু প্রতিউত্তরে কারো কোনো সারা-শব্দই পেল না। শান গিয়ে বিছানার উপরে থপ করে বসে পড়ল। তারপর ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠল,

–“বড়-মা, বড়-মা বলে চিল্লিয়ে কোনো লাভ নেই। আম্মু এখানে নেই। সকালেই বাসায় চলে গেছে। আর সৃজাও নিজের কাজের জায়গায় আছে। সো, বর্তমানে এই বাসায় তুমি-আমি ছাড়া আর কেউ নেই।”

কথাটা শুনে অজান্তেই রুশার বুঁকের মধ‍্যে ধক করে উঠল। ‘ও’ শানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
–“তারমানে আপনি আমাকে এতক্ষণ মিথ‍্যা কথা বলেছেন?”

শান নির্বিকার ভঙ্গিতে উপর নিচ করে ‘হ‍্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়ল। রুশা শানের মুখ-চোখের ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারল ওর মাথার মধ‍্যে কোনো একটা সাংঘাতিক প্লান চলছে। রুশা শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে শক্ত রেখে শানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তারপর খানিকটা কঠিন স্বরে বলল,

–“চাবিটা দিন মিঃ রায়জাদা। আমি এখানে আপনার সাথে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না। আপনার যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে আমরা বাইরে বসে সেই ব‍্যাপারে ডিসকাস করব। এখানে না। প্লিজ দরজার লকটা খুলুন, নাহলে চাবি আমার কাছে দিন।”

রুশা কথাটা বলার সাথে সাথে শান বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। একটু একটু করে এগিয়ে এসে রুশার দিকে খানিকটা ঝুকে শীতল কিন্তু গভীর স্বরে বলল,

–“আমি তো তোমাকে এখানে কিছু বলার জন‍্যে ডাকিনি। আর না কোনো সিনক্রিয়েট করার জন‍্যে ডেকেছি। আমি তোমাকে এখানে এনেছি তোমাকে একটা জিনিস বোঝানোর জন‍্যে।”

–“কি জিনিস?”

রুশা প্রশ্নটা করতেই শান রুশার চোখে-চোখ রেখে ঠোঁট বাকিয়ে বাঁকা হাসল। রুশা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে শানের দিকে তাকিয়ে রইল। শান হুট করেই রুশার গলায় থাকা ওড়নাটা টেনে নিজের হাতে নিয়ে নিল। রুশা কিছু বুঝে বা বলে ওঠার আগেই শান রুশার দু-হাত পিছনে মুচড়ে ধরে হাত দুটোকে ওড়না দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিল। রুশা চেচিয়ে উঠল। ছিটকে শানের থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলল,

–“কি করছেন মিঃ রায়জাদা? পাগল হয়ে গেছেন? হাত খুলুন আমার। বাড়াবাড়ির একটা লিমিট থাকে কিন্তু।”

কথাটা বলে রুশা হাত মোচড়া-মুচড়ি করে নিজেই নিজের হাতের বাঁধন খোলার চেষ্টা করতে লাগল। শান এগিয়ে এসে ওর হাতের মুঠোর মধ‍্যে থাকা ফোন’টা ছিনিয়ে নিয়ে ফ্লোরে ছুরে মারল। রুশার মেজাজ এতে আরো খারাপ হয়ে গেল। ‘ও’ রাগে দাঁত কটমট করে বলল,

–“আপনি জীবনেও নিজের স্বভাব চেইঞ্জ করতে পারবেন না, তাইনা? সারাজীবন এমন অসভ‍্য আর ম‍্যানারলেস-ই থেকে যাবেন।”

শান এগিয়ে এসে রুশার মুখোমুখি দাড়াল। এক হাত রুশার কোমড়ে রেখে ওকে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। তারপর শক্ত কণ্ঠে বলল,

–“হ‍্যাঁ একদম ঠিক ধরেছো। আর আমি আজকে তোমাকে এটাও বোঝাব যে আমি কতটা অসভ‍্য, ম‍্যানারলেস, আর বাজে প্রকৃতির মানুষ।”

কথাটা বলে শান রুশার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে ওকে ধাক্কা মারল। রুশা চিৎ হয়ে বেডের উপরে পড়ে গেল। ওর শরীরের সমস্ত ভার গিয়ে পড়ল পিছনে বেধেঁ রাখা হাত দুটোর উপরে। রুশা ব‍্যাথায় চোখ-মুখ কুচকে ফেলল। শান হুট করেই নিজের গায়ের টি-শার্ট খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারল। রুশার আর বুঝতে বাকি রইল না শান কি করতে চাচ্ছে। এতক্ষণ নিজেকে শক্ত রাখলেও এবারে ভয়ে রুশার হৃদপিণ্ড ভারী হয়ে গেল। ওর চোখে-মুখেও ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠল। ‘ও’ কোনোরকম ভর দিয়ে উঠে বসে হামাগুড়ি দিয়ে বেডের একদম অপর সাইডের জানালার কাছে গিয়ে গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
–“নিচে কেউ আছেন? প্লিজ হেল্প মিঃ, আমি এখানে লক হয়ে গেছি। আমাকে বাঁচান প…..”

রুশা পুরো কথাটা শেষ করার আগেই শান এসে রুশার হাত ধরে ওকে হিরহির করে টেনে বেডের একদম মাঝ বরাবর ছুড়ে মারল। তারপর জানালা’টা লক করে দিয়ে রুশার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল। রুশা এবারেও হাতে বেশ ব‍্যাথা পেল। ‘ও’ আহত দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে ব‍্যাথাতুর স্বরে বলে উঠল,

–“প্লিজ ডোন্ট দিস মিঃ রায়জাদা। আমি জানি আপনার আমার উপরে অনেক রাগ আছে। কিন্তু তাই বলে আপনি আমার এতবড় ক্ষতি করতে পারেন না।”

শান রুশার দিকে এগিয়ে আসলো। নিজের দু-হাত রুশার দু-পাশে রেখে ওর দিকে ঝুঁকে বলল,
–“ক্ষতি? কিসের ক্ষতি? আমাদের তো বিয়ে হয়েছে। তুমি আমার লিগ‍্যালি ম‍্যারেড ওয়াইফ। তোমার উপরে আমার সম্পূর্ন অধিকার আছে। আমি তো শুধু আমার বিয়ে করার বউয়ের থেকে নিজের অধিকার আদায় করছি। এখানে তো আমি ক্ষতির কিছু দেখছি না।”

শানের কথায় রুশার পুরো শরীর জ্বলে গেল। রাগে, ঘৃনায় আর নিজের অপারকতার জন‍্যে ওর চোখের কোন থেকে পানি উপচে পড়তে লাগল। ‘ও’ অশ্রুসিক্ত-ঘৃনাভরা দৃষ্টিতে শানের চোখে-চোখ রেখে বলল,

–“মানি না আমি এই বিয়ে। আমার কাছে এই বিয়ের কোনো ভ‍্যালু নেই। আপনাকেও আমি আমার হাসবেন্ট হিসেবে মানি না। আমার উপরে আপনার কোনো অধিকার নেই। এরপরেও যদি আপনি আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করেন, তাহলে আমি আপনার মা-বাবাকে তো সব জানাবোই, সাথে আপনার নামে রেপ কেসও করব।”

–“এখান থেকে বের হতে পারলে তো এসব করবে। আমি তোমার এমন অবস্থা করব যে তুমি কিছুক্ষণ পর এখান থেকে বের হওয়ার মতো অবস্থায়ই থাকবে না সুইটহার্ট।”

শানের হিংস্র কণ্ঠের কথাটা শুনে রুশার ভিতর’টা আৎকে উঠল। শান রুশার বাহু চেপে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজল। রুশা কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে শানের কাধ বরাবর জোরে কামড় বসিয়ে দিল। শান ব‍্যাথায় নাক-মুখ কুচকে রূশার থেকে খানিকটা দূরে সরে গেল। সেই সুযোগে রুশা উঠে দরজার কাছে ছুটে গিয়ে হেল্পের জন‍্যে চিল্লাতে শুরু করল। শান মুখ থেকে বিরক্তি-সূচক ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে আবারও রুশার হাতের বাহু ধরে টেনে এনে ওকে বেডের উপরে ছুড়ে মারল। তারপর প‍্যান্টের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে রুশার মুখটা বেধে দিল। রুশা ছটফট শুরু করল। পাঁ দিয়ে শানকে বারবার আঘাত করার চেষ্টা করতে লাগল। দুজনের মধ‍্যে এক-প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল। শান রুশার উপরে নিজের শরীরের সব ভর ছেড়ে দিয়ে ওর ঘাড়ে আবারও মুখ গুজে দিল। রুশার নিঃশ্বাস আটকে আসতে লাগল। ওর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে। শানের একটা হাত রুশার উন্মুক্ত পেঁটে বেপরোয়া ভাবে বিচরণ করছে। রুশা এতক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদলেও এবারে আর নিজেকে সামলাতে পারল না। লজ্জায়, অপমানে চোখ খিচে বন্ধ করে হু হু করে কেঁদে উঠল। ওর কান্নার শব্দ শানের কানে আসতেই শান থেমে গেল। রুশার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে স্থির দৃষ্টিতে ওর কান্নারত চেহারার দিকে তাকাল। রুশা হাউমাউ করে কেঁদে যাচ্ছে। মুখ বাধা থাকলেও সেই কান্নার শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। শান স্থির দৃষ্টিতে রুশার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এতদিনের স্ট্রং, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষটার মধ‍্যে আজকে ‘ও’ একজন ভেঙে-চুরে যাওয়া পরাস্থ সৈনিক কে দেখতে পেল। যার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া প্রত‍্যেকটা অশ্রুকনার মধ‍্যে যেন পরাজয়ের চিহ্ন লেপ্টে আছে। শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুশার উপর থেকে সরে গেল। তাতে রুশার মধ‍্যে কোনো ভাবান্তর হলো না। ‘ও’ আগের মতোই হাউমাউ করে কাঁদতে রইল। শান রুশার মুখের বাঁধন’টা খুলে দিয়ে ওর পাশেই বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে ওর মাথায় হাত রাখল। রুশা শানের থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিল। শান শান্ত আর স্থির দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে রইল। কান্নার মধ‍্যে হেঁচকি দেওয়ার কারনে রুশার শরীর বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওর ফোপানোর শব্দ এসে শানের কানে তীব্র ভাবে বারি খাচ্ছে। শানের হৃদপিণ্ডে উথালপাতাল ঝড়ে ভিতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাও ওর চোখে-মুখে বিন্দুমাত্রও অনুশোচনা নেই। কেন থাকবে? ‘ও’ তো এটাই চেয়েছিল। ‘ও’ তো চেয়েছিল রুশার ভিতরে থাকা অতিরিক্ত রাগি, জেদি আর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সত্তা’টা ওর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিক।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here