#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#প্রথম_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ9
সকাল 07:00 টা
তিরিং বিরিং করে লাফাতে লাফাতে রুশার চেম্বারে এসে ঢুকল সৃজা। কিন্তু সারা রুমে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়েও কোথাও রুশার ছায়াটাও দেখতে পেল না। সৃজা ভাবল রুশা হয়ত বাইরে কোথাও আছে। তাই ওকে খোঁজার জন্যে সামনে ঘুরে বাইরে যাওয়ার জন্যে পাঁ বাড়াল। এরমধ্যেই রুশার ডেস্কের উপরে রাখা ফোনটায় রিংটোন বেজে উঠল। সৃজা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, ফোনের স্কিনে বিলেতি বাদর লেখা নামটা জ্বলজ্বল করছে। সৃজা নামটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
–“আজকাল বিলেতি বাদর’রাও ফোন চালানো শুরু করেছে! কই জানতাম না ত। আচ্ছা এই বাদর কি তাহলে মানুষের মতো কথাও বলতে পারে না-কি?”
কথাটা বলতে বলতে সৃজা ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল। ওপাশ থেকে কেউ পুরুষালি কণ্ঠে “হ্যালো” বলে উঠতেই সৃজা খানিকটা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
–“আরেহ ব্যস ইনি তো দেখি ছেলে বাদর।”
কথাটা একটু জোরে বলায় ওপাশের ব্যাক্তিটি স্পষ্ট সৃজার কথাটা শুনতে পেল। এতেই যেন সে রেগে বোম হয়ে গেল। সৃজাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কর্কশ গলায় বলে উঠল,
–“হেই আপনি আমাকে বাদর বললেন? কে আপনি? রুশ’এর ফোন আপনার কাছে কেন?”
সৃজা মুখ থেকে একটা বিরক্তিকর ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে বলে উঠল,
–“উফফফ মিঃ বিলেতি বাদর এত প্রশ্ন একসাথে করলে আমি কীভাবে অ্যান্সার গুলো দেই বলুন ত? আস্তে আস্তে একটা একটা করে প্রশ্ন করুন।”
সৃজার এবারের কথায় ওপাশের ব্যাক্তিটির রাগের সীমা আসমান অতিক্রম করল। সে খানিকটা চেঁচিয়ে বলল,
–“আপনি আবারও আমাকে বিলেতি বাদর বললেন? আপনার সাহস হল কীভাবে আয়াশ দেওয়ান কে বিলেতি বাদর বলার? ইউ ম্যানারলেস, থার্ড ক্লাস, চিপ গার্ল আপনাকে আমি পুলিশে দিব।”
আয়াশ কথাটা শেষ করতে না করতেই ফোনটা কেটে গেল। আয়াশ ওর ফোনটাকে টেবিলের উপর ঠাস করে শব্দ করে রেখে রাগে ফুশতে ফুশতে লাগল।
এদিকে সৃজা ফোনটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে ‘থ’ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর চোখের সামনে আয়াশের সেদিনের করা কর্মকাণ্ড গুলো একেএকে ভেষে উঠছে। সৃজা ঠাস করে ফোনটাকে ডেস্কের উপর রেখে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল। তারপর একা একাই বলে উঠল,
–“জোর বাঁচান বেঁচে গেছিস সৃজা। ভাগ্যিস ওই গব্বার সিং বুঝতে পারেনি এটা তুই। বুঝতে পারলে হয়ত এখানে এসে আবারও তোকে সেদিনের মতো মারত।”
কথাটা বলতে বলতে বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট উল্টে ফেলল সৃজা। ওই ঘটনার পর থেকে আয়াশের নাম শুনলেও সৃজার বুক কেঁপে উঠে। মুভিতে দেখে যাকে এতদিন ভালো-নম্র একটা মানুষ ভেবেছিল। তার হিংস্র রূপটা হঠাৎ করেই সামনে এসে পড়ায় সৃজা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। ওর ছোট্ট মনে ‘ও’ যেই প্রেমিক পুরুষকে সব সময় কল্পনা করে এসেছে, তার সাথে বাস্তবের আয়াশের আকাশ-পাতালের তফাৎ।
রুশা টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল ওর চেম্বারে সৃজা দাড়িয়ে আছে। এত সকালে সৃজাকে এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুশা একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। টাওয়েল টা দিয়ে গলার ভিজে অংশ টুকু মুছতে মুছতে সৃজার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
–“সৃজনী তুমি হঠাৎ এখানে? কোনো প্রবলেম হয়েছে?”
রুশার কণ্ঠস্বর শুনে সৃজা চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাল। একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল,
–“না আপু কোনো প্রবলেম হয়নি। আসলে তোমাকে খুঁজতে এসেছিলাম।”
–“কেন? কিছু বলতে চাও?”
সৃজা নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
–“আসলে আম্মু তোমাকে ডেকেছে। বলেছে এক্ষুনি গিয়ে আম্মুর সাথে দেখা করতে।”
রুশা ওর হাতে থাকা টাওয়েল টা চেয়ারের উপর রেখে ফোন আর একটা ফাইল হাতে নিতে নিতে বলল,
–“হ্যাঁ চলো। আমিও বড়-বাবার চেকআপ করার জন্যে এখনই ওখানে যেতে চেয়েছিলাম। ভালোই হল, এই সুযোগে নাহয় বড় মার সাথেও কথা বলে আসা যাবে।”
সৃজা ভ্রু কুচকে বলল,
–“বড় বাবা? বড় মা? তুমি আমার আম্মু-আব্বুকে বড়-মা, বড়-বাবা বলে ডাকো? কিন্তু আম্মু তো বলল তুমি ফুপ্পা-ফুপ্পির মেয়ে। তাহলে তুমি আমার আব্বু-আম্মুকে মামা-মামি না ডেকে এসব কেন ডাকো?”
সৃজা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে রুশার পানে তাকিয়ে আছে। রুশা বুঝতে পারছে সৃজা এখনো ছোট। আর অনেকটা সরল প্রকৃতির মেয়ে হওয়ায় রাহেলা রায়জাদা ওকে তেমন কিছুই বলেনি। রুশারও ইচ্ছে করল না এই সরল মেয়েটাকে এসব জটিল সম্পর্কের সমীকরণ বোঝাতে। তাই ‘ও’ মুচকি হেসে বলল,
–“ছোট বেলায় তোমার আব্বু-আম্মু আমাকে অনেক বেশি আদর করত। আমার কখনো মনেই হয়নি ওনারা আমার মামা-মামি। আমি সব সময় ভাবতাম ওনারা আমার আরেকটা বাবা-মা। তাই তখন থেকেই ওনাদের বড় বাবা, বড় মা ডাকার অভ্যাস করেছি। যেই অভ্যাসটা এখনো যায়নি।”
সৃজা খুব সহজেই রুশার কথা শুনে বিশ্বাস করে নিল। স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“ওহ আচ্ছা।”
_________________________
রুশা শানের বাবার চেকআপ করে আই.সি.ইউ. থেকে বের হতেই রাহেলা রায়জাদা এসে রুশার সামনে দাড়াল। রুশা ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। উনি ঘাড় ঘুরিয়ে সৃজাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“সৃজা দেখ ত শান কোথায় আছে। ওকে খুঁজে নিয়ে আয়।”
মিসেস রাহেলার কথা শুনে সৃজা গুটি গুটি পায়ে ওখান থেকে চলে গেল। মিসেস রাহেরা এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“এসবের মানে কি রুশা? তুমি কবে থেকে এখানে আছো? আর এতদিন আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করোনি কেন? তুমি জানো, আমরা তোমার দাদুকে যতবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছি, ততবার উনি বলেছেন তুমি ক্যালিফোর্নিয়া আছো। যখনই ওনার কাছে তোমার কন্ট্রাক্ট নম্বর চেয়েছি, উনি বলেছেন তুমি নাকি আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাও না। অথচ এত বছর পর আমরা জানতে পারলাম তুমি বাংলাদেশেই আছো। তাও আবার এই শহরেই।”
মিসেস রাহেলার কথায় রুশার মধ্যে মোটেও কোনো পরিবর্তন এলো না। ‘ও’ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“দাদুকে আমিই এসব বলতে বলেছিলাম। আমি চাইনি, আমি যে বাংলাদেশে আছি সেই খবরটা তোমাদের কারো কানে পৌঁছাক। আমি আসলেই তোমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাইনি।”
রুশায় কথায় মিসেস রাহেলার মুখটা শুকিয়ে গেল। উনি শুকনো গলায় বললেন,
–“সেই ত আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেই বা কেন? আমরা কে হই তোমার? তোমার মাকে বলেছিলাম সব সময় তোমার খেয়াল রাখব। তোমার যত্ন করব। কিন্তু তোমার বাবা সেটা হতে দিল না। এইটুকু বয়সে জোর করে তোমাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিল। কত করে বললাম, তোমাদের সমস্যা হলে ওকে আমার কাছে দিয়ে যাও। আমি একাই ওকে মানুষ করতে পারব। শুনল না তোমার বাবা আমার একটা কথাও। আমার কোলের মেয়েটাকে আমার কাছ থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে অন্যদেশে পাঠিয়ে দিল। তারপর হঠাৎ করে তুমি একদিন ফিরে এলে। দেখলাম, তুমি আর সেই ছোট্ট টি নেই। অনেক বড় হয়ে গেছো। ভাবলাম, এইবার তোমাকে আর কোথাও যেতে দিব না। দরকার হলে শানের বউ করে তোমাকে রেখে দিব। কিন্তু আবারও হঠাৎ একদিন শুনলাম তুমি বাসা থেকে রাতে বের হয়ে গেছো। তোমার দাদু বলল তুমি আবারও ক্যালিফোর্নিয়া ফিরে গেছো। আমি তোমার দাদুকে কত রিকোয়েস্ট করলাম তোমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু সে মুখের উপর বলে দিল তুমি আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাও না। তোমাকে আমি যতই নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসি না কেন, তোমার মা হয়ে উঠতে আমি কখনো পারিনি। শুধু মুখেই বড়-মা ডাকেছো আজীবন। আসলে কখনো মা ভাবতে পারোনি।”
কথা গুলো বলতে বলতে মিসেস রাহেলার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। উনি দ্রুত চোখের পানিটুকু মুছে মুখটা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে ফেললেন। রুশা কিছু না বলে হুট করেই গিয়ে ওনার গলা জড়িয়ে ধরল। মিসেস রাহেলা দু-চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। এতদিনের শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া কলিজাটা ওনার মুহূর্তের মধ্যেই শান্ত হয়ে গেল। উনি রুশার পিঠে এক হাত রেখে নরম কণ্ঠে বললেন,
–“আমার সাথে যাবি রুশা? ওই বাড়িতে তোকে যেতে হবে না। তুই আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। সেখানে কেউ তোকে কিচ্ছু বলবে না। তোর চোখের দিকে তাকিয়েও কেউ কথা বলবে না। এটা আমি তোকে বলছি। তুই শুধু একবার আমার সাথে চল।”
রুশা মিসেস রাহেলার গলা ছেড়ে দিয়ে ওনার থেকে দূরে সরে আসলো। মুহূর্তেই ওনার মুখটা শুকিয়ে পানশে হয়ে গেল। রুশা হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নিজের গালে জমে থাকা পানিটুকু মুছে নিয়ে বলল,
–“সেটা হয় না বড়-মা। আমি যেদিন সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম সেদিনই ভেবে নিয়েছিলাম আর ওই বাড়িতে ফিরে যাব না। আমি আমার সেই সিদ্ধান্তে এখনো অটুট আছি। প্লিজ তুমি আর যাই বলো আমাকে তোমার সাথে ফিরতে বোলো না। কারন আমি তোমার সেই কথাটা কোনো ভাবেই রাখতে পারব না।”
রুশার কথায় মিসেস রাহেলা আহত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। রুশা নম্র কণ্ঠে বলল,
–“আমাকে এখন যেতে হবে বড়-মা। একটু পরে ডাক্তার রবিন চলে আসবেন উনিই এসে বড়-বাবার বাকি টেস্ট গুলো করাবেন। আমি আসছি। ভালো থেকো।”
কথাটা বলে রুশা আর দাড়াল না। পিছনে ঘুরে নিজের চেম্বারে যাওয়ার জন্যে পাঁ বাড়াল। আসার সময় দেখল শান আর সৃজা ওখানেই দাড়িয়ে আছে। রুশা ওদের দেখেও না দেখার ভান করে ওখান থেকে চলে আসলো।
_________________________
সকাল 10 টা
বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে রুশা। ওর ইচ্ছে করছে কোথাও থেকে মাটি খুরে তার মধ্যে ঢুকে নিজেকেই নিজের কবর দিয়ে দিতে। লজ্জায় রুশা মাথা তুলে কারো দিকে তাকাতে অবদি পারছে না। এরকম একটা বিষয় নিয়ে ওর এত বছরের ক্লিন ক্যারেক্টারে এভাবে দাগ লেগে যাবে সেটা ‘ও’ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। রুশার সামনের বড় কাচের টেবিলটার উপরে বেশ কিছু ছবি রাখা। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে রুশার চেম্বারে দাড়িয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে। আর রুশাও ছেলেটার বুকের উপর হাত দিয়ে রেখেছে। ছবিতে রুশার মুখ স্পষ্ট দেখা গেলেও ছেলেটার শুধু পিছনের দিকটা দেখা যাচ্ছে। কারন গতকাল রাতে শান যখন রুশার কোমড় চেপে ধরে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিল, তখন শান দরজার দিকে পিঠ করে দাড়িয়ে ছিল। আর রুশা ওর মুখোমুখি দাড়িয়ে ছিল। যার কারনে দরজার বাইরে থেকে পিক গুলো তোলার সময় রুশার চেহারা’টা সেখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
সবার মধ্যের মৌনতা কাটিয়ে ডাক্তার আশিষ রুশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“আপনি এই বিষয়ে কিছু এক্সপ্লেইন করতে চান মিস রুশানি?”
রুশা মনে মনে নিজেকে শক্ত করে হালকা একটু গলা খ্যাকানি দিয়ে বলল,
–“এটা আমার পার্সনাল বিষয় স্যার। আমি এই বিষয়ে এখানে কিছু ডিসকাস করতে চাই না।”
রুশার কথায় তৈলে বেগুনে জ্বলে উঠল প্রিয়া। রাগে কটমট করে বলল,
–“এটা হসপিটাল, তোমার বাড়ি না। এখানে বসে নোংরামি করাটা মোটেও তোমার পার্সনাল বিষয় না। বুঝেছো? এখানে করা তোমার প্রত্যেকটা কাজের হিসেব তুমি হসপিটাল কর্তিপক্ষকে দিতে বাধ্য।”
প্রিয়ার কথা শুনে রুশা ঘাড় ঘুরিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকাল। এই মেয়েটা এখানের বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের কেউ না। এখানে ওর কোনো কাজও নেই। পিক গুলো কালকে রাতে ও’ই তুলেছিল বলে নিজের চোখে রুশাকে অপমানিত হতে দেখার জন্যে এখানে দাড়িয়ে আছে। কিছু মাস আগে প্রিয়ার করা একটা অন্যায়ের কথা রুশা আশিষ কে বলে দিয়েছিল। যার কারনে প্রিয়ার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে গিয়েছিল। অনেক রিকোয়েস্ট করে ‘ও’ নিজের চাকরি টা বাঁচিয়েছিল। সেই থেকেই রুশা প্রিয়ার চোখের বিষ। সুযোগ পেলেই ‘ও’ রুশাকে অপমান করার বিভিন্ন ছুতো খুঁজতে থাকে।
রুশা কড়া গলায় প্রিয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“আমি যতদূর জানি আপনি বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের কেউ না। তাহলে আপনি এখানে কি করছেন মিস প্রিয়া?”
প্রিয়া জ্বলন্ত চোখে রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“আগে নিজের অপকর্মের দায়ভার থেকে নিজেকে বাঁচাও। আমি এখানে কি করছি সেটা তুমি পরেও জানতে পারবে।”
রুশা বলল,
–“আমি এমন কোনো অপকর্ম করিনি, যার থেকে আমার নিজেকে বাঁচাতে হবে।”
–“তাই না-কি? রাতের বেলা ছেলেদের নিজের চেম্বারে ডেকে এনে তাদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করাটা কোনো জায়গার ভালো কাজ শুনি?”
প্রিয়া এইটুকু বলতেই আশিষ ধমকের স্বরে প্রিয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ ডাক্তার প্রিয়া। আপনি এই ছবি গুলো তুলে দিয়েছেন তাই ঘটনার সত্যতা যাছাই করার জন্যে আপনাকে এখানে রাখা হয়েছে। খবরদার যদি মুখ থেকে একটা বাজে শব্দও বের করেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে আমরা বাধ্য হব।”
আশিষের কথায় প্রিয়া চুপশে গেল। আশিষ প্রিয়ার দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘাড় ঘুরিয়ে রুশার দিকে তাকাল। রুশাকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজায় নক পড়ল। দেয়ালের পাশে ঘাপটি মেরে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকা ওয়ার্ড বয়ের দিকে তাকিয়ে আশিষ ইশারা দিয়ে দরজা খুলতে বলল। ওয়ার্ড বয়টি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজার লক খুলে বাইরে উকি দিল। মুহূর্তের মধ্যে একজন ওকে সাইড কাটিয়ে গটগট করে ভিতরে ঢুকে গেল। আচমকা কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেখে বোর্ড অফ ডিরেক্টরেরা সবাই দাড়িয়ে গেল। অগন্তুক ব্যাক্তিটিকে দেখে আশিষ এগিয়ে এসে বলল,
–“আরেহ মিঃ শান আপনি এখানে?”
কথাটা বলতে বলতে আশিষ এগিয়ে এসে শানের সাথে হ্যান্ডশেক করল। শান একটু ঘাড় কাৎ করে রুশার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
–“বাইরে সবাই বলাবলি করছিল এখানে না-কি কিছু একটা প্রবলেম হয়েছে। তাই দেখতে এলাম অ্যাকচুলি কি নিয়ে প্রবলেম টা হচ্ছে।”
আশিষ জোর পূর্বক একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
–“তেমন কোনো ব্যাপার না। এই একটা নরমাল ইস্যু আরকি।”
প্রিয়া জোর গলায় বলল,
–“আপনি সবটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কেন করছেন স্যার? এই মেয়েটা এত বড় একটা অন্যায় করেছে আর আপনি বলছেন নরমাল ইস্যু? এই জঘন্য বিষয়টাকে যদি আপনি এরকম নরমালি দেখেন, তাহলে তো ভবিষ্যতে বাকিরাও এরকম নোংরামি, অন্যায় করে পাড় পেয়ে যাবে।”
আশিষ অগ্নি দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকাল। তারপর আবারও ধমক দিয়ে বলল,
–“আপনাকে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করতে বারন করেছি মিস প্রিয়া। নিজের লিমিটে থাকেন।”
শান আশিষকে সাইড কাটিয়ে হেঁটে টেবিলের কাছে এসে পিকগুলো হাতে নিয়ে একটা একটা করে দেখতে লাগল। আশিষ চোখ মুখ কুচকে বিরবির করে বলল,
–“শিট। এবার বোধহয় মেয়েটা লজ্জায় মরেই যাবে। এই প্রিয়ার বাচ্চাকে তো আমি….”
আশিষের বিরবির করে বলা কথার মধ্যেই শান বলে উঠল,
–“এইগুলো কে তুলেছে ডাক্তার আশিষ?”
আশিষ কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়া হালকা হেসে বলল,
–“আমি।”
শান প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
–“ওয়াউ! থ্যাংক ইউ সো মাচ। আপনি পিক গুলো না তুললে জানতেই পারতাম না, রেগে গেলে আমার ওয়াইফি কে এতটা সুইট দেখতে লাগে। আপনার এই কাজের জন্যে আপনি আমার থেকে একটা গিফট ডিজার্ভ করেন ডাক্তার প্রিয়া।”
শানের কথা শুনে রুশা সহ ওখানে উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। প্রিয়া ড্যাবড্যাব করে শানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“ওয়াইফি মানে?”
শান এগিয়ে গিয়ে প্রিয়ার সামনে দাড়িয়ে বলল,
–“ওয়াইফি মানে বউ। রুশা ইজ মাই ফিয়ন্সে। আর পিকের মধ্যে যেই ছেলেটা রুশার সাথে ক্লোজ হয়ে দাড়িয়ে আছে সেটা আমি।”
শানের এবারের কথায় সবাই হা হয়ে গেল। রুশা খেয়ে ফেলা লুক নিয়ে শানের দিকে তাকাল। প্রিয়া কিছুক্ষণ শকড হয়ে দাড়িয়ে থেকে হঠাৎ বলে উঠল,
–“আপনার কথা যে সত্যি তার কি প্রমান আছে? এমনও ত হতে পারে আপনি রুশাকে বাঁচাতে মিথ্যা বলছেন।”
শান কঠিন দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“শান রায়জাদা নিজের মুখে বলেছে তারমানে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রমান। এরপরে আর কোনো প্রমান দেওয়ার আমি কাউকে প্রয়োজন মনে করি না।”
কথাটা বলে শান আশিষের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর প্যান্টের পকেটে এক হাত গুজে সোজা হয়ে দাড়িয়ে আশিষের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“কাউকে কৈফিয়ত দেওয়াটা আমার মোটেও পছন্দ না ডাক্তার আশিষ। কিন্তু এখানে আমার ফিয়ন্সের মান-সম্মানের ব্যাপার। তাই প্রমান দিতে আমি অনেকটা বাধ্য। কজ আমি চাইনা আমার জন্যে ওর ক্যারেক্টারের দিকে কেউ আঙুল তুলুক। ডাক্তার আশিষ আপনারা হয়ত জানেন না, গতকাল রাতে আমার বাবার স্ট্রোক হয়েছে। আর ওনার ট্রিটমেন্ট টা রুশাই করেছে। এই কারনেই রুশা সারা রাত ওর চেম্বারেই থেকে গেছে। আমি যাস্ট ওকে ওর চেম্বারে দেখতে গিয়েছিলাম। তখনই আমাদের ক্লোজ মোমেন্টের কিছু পিক এই মেয়েটা তুলে নিয়েছে। দ্যাটস ইট। এরপরেও আপনাদের বিশ্বাস না হলে, আপনারা রুশার চেম্বারের বাইরে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে পারেন। আশাকরি সেখানে আমার ফেস স্পষ্ট দেখতে পাবেন।”
কথাটা বলে শান আশিষের থেকে কোনো অ্যন্সার পাওয়ার অপেক্ষা না করেই রুশার দিকে এগিয়ে গেল। রুশা এখনো রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। শান রুশার হাত ধরে বলল,
–“চলো আমার সাথে।”
রুশা ভ্রু কুচকে বলল,
–“কোথায়?”
–“আপাতত এখান থেকে বাইরে। আশাকরি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলে ওনাদের সব কনফিউশন দূর হয়ে যাবে। আর তারপর তোমাকে ওনাদের কোনো প্রয়োজন হবে বলে আমি মনে করি না। তাই তোমার অযথা এখানে দাড়িয়ে থাকারও কোনো মানে নেই।”
শানের মুখে “তুমি” সম্মোধন শুনে রুশা হা হয়ে গেল। শান কারো পরোয় না করে রুশার হাত ধরে টেনে ওকে বাইরে নিয়ে আসলো।
#চলবে…..