#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#প্রথম_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ10
রাগে হনহন করে হেঁটে নিজের কেবিনে ঢুকল রুশা। কোনোদিকে না তাকিয়ে গিয়ে ঠাস করে নিজের চেয়ারের উপর বসে পড়ল। রাগে ওর সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। কাঁপা হাতে টেবিলের এক সাইডে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে দ্রুত দুই ঢোক পানি খেল। তারপর শব্দ করে গ্লাসটাকে টেবিলের উপর রেখে হাত দিয়ে মাথা’টা চেপে ধরল। এরমধ্যেই শান এসে দরজায় নক না করেই রুশার চেম্বারের মধ্যে ঢুকে পড়ল। কিন্তু রুশার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না। সে আগের মতোই মাথা চেপে ধরে ঠায় বসে রইল। শান রুশার দিকে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছুটা দুষ্টুমির ছলে বলল,
–“এটা কিন্তু ঠিক না ডাক্তার সাহেবা। আমি আপনাকে এত বড় একটা প্রবলেমের হাত থেকে সেফ করলাম। আর আপনি আমাকে একটা থ্যাংক্স না দিয়েই এভাবে অ্যাটিটিউড দেখিয়ে এখানে চলে আসলেন? দিস ইজ নট ফেয়ার।”
কথায় আছে প্রত্যেকটা মানুষের সহ্যের একটা সীমা থাকে। সেই সীমা যখন অতিক্রম করা হয়, তখন মানুষ ভয়ংকর হয়ে উঠে। রুশার বেলায়ও তার ব্যাতিক্রম কিছু ঘটল না। সেই তখন থেকে শানের সব কথাগুলো কথা ‘ও’ চুপচাপ হজম করে নিলেও, এবারে ওর সব রাগ নিজের মধ্যে থেকে উপচে পড়ল। ‘ও’ বসা থেকে দাড়িয়ে শানের দিকে এগিয়ে গিয়ে আচমকা কষিয়ে শানের গালে একটা চড় মেরে দিল। সাথে সাথে শান চোখ জোড়া বন্ধ করে হাতের আঙুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। রুশা শানের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগে চেঁচিয়ে বলল,
–“কি চান আপনি? কেন আমার লাইফটা এভাবে হেল করে দিচ্ছেন? কেন আমাকে বারবার আপনি বিপদের মধ্যে ফেলছেন? কেন আমার সুস্থ লাইফটাকে এভাবে ব্যাতিব্যস্ত করছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?”
রুশার প্রশ্ন শুনে শান চোখ খুলে পূর্ন দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকাল। অগ্নি জ্বলজ্বলে চোখ দুটো রুশার ক্রোধে ভরা চোখের দিকে নিবদ্ধ হতেই যেন মুহূর্তের মধ্যে চোখ জোড়া শীতল হয়ে গেল। রুশা শানের কলার আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
–“যেদিন থেকে আপনি আমার লাইফে ফিরে এসেছেন সেদিন থেকে শুধু আমার লাইফে একটার পর একটা প্রবলেম ক্রিয়েট করে যাচ্ছেন। আপনার জন্যে আপনার লাইফের সমস্ত সুখ-শান্তি হারাম হয়ে গেছে। আপনার জন্যে আজকে আমাকে এত গুলো লোকের সামনে হেনস্তা হতে হয়েছে। আপনার জন্যে আমার ক্যারেক্টারে দাগ লেগেছে। আপনার জন্যে এই এত গুলো দিন আমি একা নিজের ঘরে বসে সাফার করেছি। শুধুমাত্র আপনার জন্যে আমার লাইফে এত এত প্রবলেম। কেন আপনি কুকুরের মতো আমার পিছনে পড়ে আছেন হ্যাঁ? কোন স্বার্থ হাসিল করার জন্যে আমাকে শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন?”
রুশার বলা কুকুর শব্দটা বারবার শানের কানে বারি খাচ্ছে। ‘ও’ কি বলবে বুঝতে পারছে না। সব কথা ওর গলায় কেমন আটকে আসছে। কই আগে ত কখনো এরকম হয়নি। কোনো মেয়ে তো দূরে থাক। কোনো পাওয়ারফুল ব্যাক্তিদের সামনে এসেও ত শান রায়জাদার কথা কখনো আটকে যায়নি। তাহলে আজ এরকম কেন হচ্ছে? কেন কিছু বলতে চেয়েও না বলতে পারার কষ্টে নিজেকে আজ শানের অসহায় লাগছে? কেন ওর কলার ধরার অপরাধে ‘ও’ রুশার গালে ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতে পারছে না? কেন ওকে চড় মারার অপরাধে রুশাকে জানে মেরে ফেলার ইচ্ছে ওর মধ্যে জাগছে না? এত কেনোর উত্তর শান হাজার চেষ্টা করেও খুঁজে পাচ্ছেনা। শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে ‘ও’ শুধু রুশাকেই দেখে যাচ্ছে। রুশা হুট করেই শানের কলার ছেড়ে দিয়ে ওর বুকে ধাক্কা দিল। আকষ্মিক আক্রমণে শান কিছুটা পিছিয়ে গেল। রুশা তর্জনী আঙুল উঠিয়ে শানকে শাষানোর ভঙ্গিতে বলল,
–“খবরদার যদি এরপর থেকে আপনি আমার চারপাশেও এসেছেন তাহলে আমি আপনাকে খু*ন করে ফেলব। সেদিন আপনি আমাকে মা*র*তে চেয়েছিলেন না? ভবিষ্যতে আমাকে মারতে আসার আগে নিজে মরার প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। কজ নিজের শত্রুকে মা*র*তে রুশানির কখনো হাত কাঁপবে না। আরেকটা কথা, এই পৃথিবীতে যদি আমি কাউকে সবথেকে বেশি ঘৃনা করে থাকি, তাহলে সেই ব্যাক্তিটা হচ্ছেন আপনি। আই যাস্ট হেট ইউ, হেট ইউ, হেট ইউ।”
কথাটা বলে রুশা আর ওখানে দাড়াল না। শব্দ করে হেঁটে চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল। শান নিজের জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে রইল। রুশার হেট ইউ শব্দ টা ওর বুকের মধ্যে ধারাল ছুড়ির মতো গেঁথে গিয়ে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। এই মুহূর্তে শানের মাথার মধ্যে শুধু রুশার বলা কথা গুলোই ঘুরছে। সবগুলো ওয়ার্ড বারবার রিপিড হয়ে কানের কাছে বারি খাচ্ছে। শান শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইল। এরকম ভয়াবহ অনুভূতি ওর কখনো হয়নি। ইতির সাথে বিচ্ছেদের পরেও ‘ও’ এতটা এলোমেলো হয়ে যায়নি। অথচ আজকে রুশার বলা এই অল্প কিছু শব্দ ওকে ভিতর থেকে ভিষন ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ কব্জিতে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে শান ঘাড় ঘুরিয়ে আগন্তুক ব্যাক্তিটির দিকে তাকাল। দেখল, শুকনো মুখে সৃজা দাড়িয়ে আছে। শান নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে বলল,
–“কিরে তুই এখানে কি করছিস?”
সৃজা শানের প্রশ্নের অ্যান্সার না দিয়ে উল্টে ওকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলল,
–“তুমি রুশানি আপুকে সব সত্যিটা বললে না কেন ভাইয়া? কেন আপুকে জানালে না, সেদিন আপুকে তুমিই হসপিটালে……”
সৃজাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে শান কড়া গলায় বলল,
–“শাটআপ সুজি! আমি সেদিন রুশাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম। এটাই একমাত্র সত্যি। এর বাইরে আর কোনো সত্যি নেই। বুঝেছিস? খবরদার এসব নিয়ে বেশি পাকনামি করতে যাবি না।”
কথাটা বলে শান দ্রুত পায়ে ওখান থেকে বের হয়ে গেল। শানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সৃজা একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল। সেদিন শান রুশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পর বাসার উদ্দ্যেশে রওনা দেয়। কিন্তু মাঝ পথে এসেই হঠাৎ ‘ও’ ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে আগের জায়গায় যেতে বলে। গাড়িটা সেই জায়গায় এসে থামতেই শান দ্রুত নেমে রাস্তার পাশের সেই কুয়াটার দিকে ছুটে যায়। ততক্ষনে রুশা নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। শান গিয়ে দ্রুত ওকে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর রুশার হসপিটালে গিয়ে ওকে ওখানে ভর্তি করিয়ে চুপচাপ ওখান থেকে চলে যায়। হসপিটালের সব স্টাফরাই রুশাকে চিনত। তাই ওকে ওখানে ভর্তি করার পর ওরাই রুশার দেখাশোনা করেছে।
শান তখন অবদি সত্যি টা জানত না। কিন্তু বাড়িতে আসার পর সকালে সৃজার হুশ ফিরতেই ‘ও’ সবটা শানকে জানায়। সব শুনে শান যখন বুঝতে পারে এখানে রুশার কোনো দোষ নেই তখন ‘ও’ একদম দিশেহারা হয়ে যায়। নিজেকে রুম বন্দি করে নেয়। দুইদিন পযর্ন্ত শান নিজের ঘর থেকে বের হয়নি। কোনো খাবার অবদি মুখে তুলেনি। তিন দিনের দিন সৃজা গিয়ে অনেক রিকোয়েস্ট করে শানকে দিয়ে ওর রুমের দরজাটা খুলিয়েছিল। দরজা খুলতেই শানের এলোমেলো, ছন্নছাড়া রূপ দেখে সৃজা বেশ আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল। এতটা অগোছালো অবস্থায় শানকে এর আগে কখনো দেখেনি ‘ও’। সৃজা সেদিন বিষ্মিত হয়ে শানকে জিজ্ঞেস করেছিল,
–“কি হয়েছে তোমার ভাইয়া? তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?”
সৃজার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে শান আনমনা হয়ে বলেছিল,
–“আমি একটা মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি সুজি। না বুঝেই একজনকে ভিষণ ভাবে আঘাত করে ফেলেছি। কিন্তু জানিনা কেন আমার ভিতরটা এখন জ্বলে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাচ্ছে।”
শানের কথা শুনে সৃজা টাস্কি খেয়ে বসেছিল। কাউকে আঘাত করার পর শানের আপসোস হচ্ছে আবার কষ্টও হচ্ছে। এটা এই প্রথমবার ঘটেছিল। যেই শান কাউকে মারার পর তার প্রতি মিনিম্যাম সহানুভূতি টুকুও প্রকাশ করে না। সে কিনা একজনকে আঘাত করে দুই দিন পযর্ন্ত রুমের দরজা আটকে বসেছিল। সৃজা কিছুক্ষণ হা করে শানের দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। শানও মেন্টালি ডিপ্রেস হয়ে কোনো কিছু না ভেবেই ওকে সব বলে দেয়। সব শুনে সৃজারও শানের উপর মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেদিন। কিন্তু শানের অবস্থা আগে থেকেই এরকম হতাশাজনক ছিল। তাই ‘ও’ আর এই বিষয়ে শানকে কিছু বলেনি।
_________________________
রুশা হসপিটাল থেকে বের হয়ে পার্কিংয়ের দিকে যাচ্ছিল। তখনই ওর চোখ গেল মেডিকেল কলেজের গেটের দিকে। সেখানে কিছু ছেলেরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েদের টোন্ট করছিল। রুশা এমনিতেই রেগে ছিল, তার উপর এদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে ওর রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেল। ‘ও’ রাগি মুড নিয়ে হেঁটে ছেলে গুলোর দিকে এগিয়ে গেল। ছেলে গুলো রুশাকে দেখে চুপ হয়ে গেল। রুশা ওদের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
–“এই মেডিকেলে পড়তে হলে ভদ্র ভাবে থাকতে হবে। যদি কারো মধ্যে বিন্দুমাত্রও উশৃঙ্খলতা দেখি তাহলে ঘাড় ধরে এখান থেকে বের করে দেব। কথাটা মাথায় থাকে যেন।”
এইটুকু বলে রুশা ঘুরে সামনের দিকে পাঁ বাড়াতেই পিছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠল,
–“এমন ভাব করছেন মনে হচ্ছে কলেজ টা আপনার বাবার।”
কথাটা কানে আসার সাথে সাথে রুশা গিয়ে ছেলেটার গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারল। ছেলেটার পাশে যারা দাড়িয়ে ছিল সবাই চোখ বড় বড় করে রুশার দিকে তাকাল। যেই ছেলেটাকে রুশা চড় মেরেছে ওর নাম জয়। এর আগেও ওকে কয়েকবার মেয়েদের বিরক্ত করতে দেখা গেছে। ‘ও’ আর ওর ফ্রেন্ড’রা মিলে প্রায়শই মেয়েদের বিরক্ত করে। বেশ কয়েকবার অন্যান্য টিচারেরা ওকে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বাবা-মায়ের অতিরিক্ত লাই পেয়ে পেয়ে ছেলেটা একেবারে উচ্ছন্নে চলে গেছে। এখন কারো কথাই তোয়াক্কা করার প্রয়োজন মনে করে না।
জয় নিজের গালে হাত দিয়ে ক্রোধ নিয়ে রুশার দিকে তাকাল। তারপর রেগে চিল্লিয়ে বলল,
–“তোর সাহস হল কীভাবে আমার গায়ে হাত তোলার? তুই জানিস আমি কে?”
কথাটা শেষ করতে না করতেই রুশা জয়ের আরেক গালে চড় মারল। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“টিচারকে যদি সম্মান দিয়ে কথা বলতে না পারো তাহলে কানের নিচে এরকম আরো পড়বে। আর তোমাকে তো আমি ভালো করেই চিনি। কিন্তু তোমরা বোধহয় আমাকে এখনো চিনতে পারনি।”
রুশা আবারও চড় মারায় জয় রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। আচমকা ‘ও’ রুশার গলায় হাত দিয়ে রুশাকে গেটের দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। রুশা হাঁটু দিয়ে জয়ের মেন পয়েন্টে জোরে একটা লাথি মারল। সাথে সাথে জয় ওর গলা ছেড়ে দিয়ে নিজের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ল। আশেপাশের সবাই ভিড় করে দাড়িয়ে আছে। রুশা জয়ের সামনে হাঁটু গেরে বসে বলল,
–“সবার সাথে গায়ের জোর দেখাতে নেই। ভুল জায়গায় ভুল মানুষের উপরে শক্তি প্রয়োগ করতে গেলে বিপদ টা নিজেরই হয়। পরের বার থেকে নিজের এই নোংরা হাতটা সামলে রেখ। নাহলে এটাকে পিচ পিচ করে কয়েক ভাগ করে মালা বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দিব।”
জয় চোখ মুখ কুচকে হুমকির স্বরে বলল,
–“তুই চিনিস না আমার বাবাকে। একবার যদি এসব জানতে পারে না? তাহলে এই মেডিকেল তো দূরের কথা এই শহরেও তুই টিকতে পারবি না।”
রুশা মুখ বাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
–“আচ্ছা? তাই নাকি? তাহলে আমিও তোমার বাবার জানা অবদি অপেক্ষা করি। দেখি উনি আমার কি করতে পারেন।”
কথাটা বলে রুশা দাড়িয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিল। নিজের গাড়ির কাছে এসে দরজার লক খুলতে যাবে এরমধ্যেই একটা মেয়ের চিৎকারের শব্দ ওর কানে ভেষে আসলো। ‘ও’ ঘাড় ঘুরিয়ে আবারও ছেলে গুলোর দিকে তাকাল। দেখল, জয় নামের ছেলেটা একটা মেয়েকে জোর করে পিছন থেকে জাপটে ধরে মেয়েটার বডির বিভিন্ন জায়গায় বাজে ভাবে স্পর্শ করছে। মেয়েটা হাত-পাঁ ছুড়ছে আর জয়ের থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করছে। আশেপাশে থাকা সবাই আতঙ্কিত হয়ে জয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। ওর অন্যান্য বন্ধুরা মেয়েটার একেকটা চিৎকারের সাথে উচ্চস্বরে মুখ দিয়ে সিটি বাজাচ্ছে। এসব দেখে রুশা নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল। ঘৃনায় ওর শীরের কাটা দিয়ে উঠল। জয় রুশার দিকে তাকিয়ে একটা বিশ্রি হাসি দিয়ে ওখান থেকেই চেঁচিয়ে বলল,
–“আমাদের মেডিকেলের মেয়েরা যেমন হট। তেমনই মেয়ে টিচার গুলোও কিন্তু একেবারে মাখন। ভাবছি এবার থেকে স্টুডেন্টদের বাদ দিয়ে হট হট টিচার গুলোকে সার্ভিস দিব। হতেও ত পারে এতে তারা আমাদের উপর খুশী হয়ে আমাদের পরীক্ষার মার্ক’স একটু বাড়িয়ে দিবে।”
কথাগুলো বলে জয় উচ্চস্বরে হেসে উঠল। রুশা আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারল না। এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ডিকির লক খুলে সেখান থেকে একটা রড বের করল। এই রডটা সব সময়ই রুশার গাড়িতে থাকে। বিপদে-আপদে কাজে লাগতে পারে বলে রুশা এটাকে ডিকিতে রেখে দিয়েছে। জয় যখন মেয়েটার সাথে অসভ্যতা করতে ব্যস্ত, সেই মুহূর্তে রুশা গিয়ে পিছন থেকে ওর ঘাড়ে একটা বারি মারল। সাথে সাথে জয়ের হাতটা আলগা হয়ে গেল। মেয়েটা জয়কে একটা ধাক্কা দিয়ে ছিটকে দূরে স্বরে গেল। রুশা কোনো দিকে না তাকিয়ে জয়কে একটানা মারতে লাগল। জয় ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে খেতে একের পর এক চিৎকার দিতে লাগল। জয়ের মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে দেখে রুশা থেমে গেল। ছেলেটা মাটিতে শুয়ে শুয়ে কাৎরাচ্ছে। রুশা ওর হাতের রড টা নিয়ে জয়ের বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেল। রুশাকে আসতে দেখেই সবগুলো দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে গেল। ভিড়ের মাঝে দাড়িয়ে থাকা একজন ওয়ার্ড বয়কে ডেকে রুশা বলে উঠল,
–“এটাকে নিয়ে গিয়ে ভিতরে ভর্তি করে দেও। আর ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের খবর দিয়ে জানিয়ে দাও, এই মেডিকেলে ওনাদের ছেলেকে আর রাখা হবে না।”
______
দুপুর 1:00 টা
জয়ের বাবা-মা এসে হসপিটালে ঝামেলা করছে। সবার কাছে জানতে চাইছে জয়কে কে মেরেছে। কিন্তু সবারই এক কথা। কেউ কিচ্ছু দেখেনি। কারো থেকে কোনো অ্যান্সার না পেয়ে ওনারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে চাইলেন। কিন্তু সেখানেও কিছুই পেলেন না। পুলিশ এসে সবাইকে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো প্রমান না পেয়ে ওখান থেকে চলে গেল। জয়ের বাবা-মা ওর বন্ধুদেরকেও অনেক প্রশ্ন করল। কিন্তু তারা ক্যারিয়ার বাঁচানোর জন্যে নিজেদের মুখ বন্ধ রাখল। ওনাদের জানিয়ে দিল, ঘটনার সময় ওরা জয়ের সাথেই ছিল না। বরং ভিতরে বসে সবাই ক্লাস করছিল।
এদিকে রুশা ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বাঁকা হাসছে। নিচে জয়ের বাবা-মা কি কি করছে ‘ও’ সেটা এখান থেকে দাড়িয়েই দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু যাই করুক না কেন, ফলাফল যে জিরোই হবে সেটা রুশা ভালো করেই জানে। যতোই হোক ‘ও’ আর ডাক্তার আশিষ মিলে এত সুন্দর করে সব প্রমান গুলো গায়েব করেছে। সাক্ষীদের মুখ বন্ধ করেছে। ওদের এত এফোর্ট তো বিফলে যেতেই পারে না। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই রুশা ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসলো। সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই ‘ও’ হাতে থাকা ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরল। কিন্তু ওপাশের ব্যাক্তিটির কথা শুনে রুশা চমকে গেল। ফোনটা দ্রুত কেটে দিয়ে লিফটের অপেক্ষা না করেই সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামতে লাগল। ছয় তলায় এসে দ্রুত জয়ের কেবিনের দিকে দৌড়ে গেল। কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখল। জয় নিজের হাত দুটো উচিয়ে ধরে চিৎকার করে যাচ্ছে। নার্সরা ওর হাতে একের পর এক পানি ঢেলে যাচ্ছে। রুশাকে দেখে ডাক্তার আশিষ এগিয়ে এসে রুশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে বাইরে আসলো। তারপর এক সাইডে গিয়ে রুশাকে উদ্দ্যেশ্য করে ধীর কণ্ঠে বলল,
–“ডাক্তার এসে একটু আগে ওকে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে চলে গিয়েছিল। তারপর কিছুক্ষণ একাই ছিল। হঠাৎ ওর চিৎকার শুনে ওয়ার্ড বয়েরা ভিতরে এসে দেখে এভাবে হাত তুলে চিৎকার করছে। আর বলছে ওর হাত নাকি জ্বলে যাচ্ছে। আই থিংক কোনো এসিড টাইপ ক্যামিকেল ওর হাতে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। যার কারনে মাত্র কিছু সময়ের মধ্যেই হাতের কোষগুলো এরকম ভাবে ঝলসে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু এরকম সাংঘাতিক কাজটা করল কে?”
রুশা স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওরা তো এসব কিছুই করেনি। তাহলে এই কাজটা করল কে? প্রশ্নটা রুশার মাথায় ঘুড়পাক খেতেই ওর কড়িডোরে থাকা সিসি টিভি ফুটেজের কথা মনে পড়ল। ‘ও’ ডাক্তার আশিষকে নিয়ে গ্রাউন্ডফ্লোরের একটা রুমে আসলো। এখানেই সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরার কন্ট্রোল সুইচ। একমাত্র হসপিটাল কর্তিপক্ষ ছাড়া এখানে কারো আসারই পারমিশন নেই। রুশা আর আশিষ এসে ছয় তলার সব ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করতে লাগল। কিন্তু ছয় তলার প্রত্যেকটা ক্যামেরার আজকের সারাদিনের ফুটেজ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হল সেটা রুশা আর আশিষ কিছুতেই বুঝতে পারছে না। একটু আগেও ওরা এসে যখন বাইরের ফুটেজ গুলো ডিলেট করছিল তখন ওরা স্পষ্ট দেখেছিল সবগুলো ক্যামেরা ভালো ভাবে চলছে। তাহলে এইটুকু সময়ের মধ্যে সেগুলো গায়েব হল কীভাবে? কে-ই বা সেগুলোকে এত নিখুঁত ভাবে ডিলেট করল? এটাই ওদের মাথায় ঢুকছে না।
#সমাপ্ত……
(বিঃদ্রঃ প্রথম পরিচ্ছেদ এখানেই শেষ হল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বাকি অংশ দেওয়া হবে।)