অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -১১

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ11

সকালের সোনালি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে মুখের উপর এসে পড়তেই শুরু হয়ে যায় রুশার ব‍্যস্ত জীবন। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় ‘ও’। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রেডি হয়ে এপ্রোন টা হাতে ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দ‍্যেশ‍ে। সকালের খাবার টা কখনোই বাসায় খাওয়া হয় না রুশার। মাঝে মাঝে সময় পেলে হসপিটালের ক‍্যান্টিনে গিয়ে কিছু একটা খেয়ে নেয়। আর নাহলে একেবারে দুপুরেই লাঞ্চের সাথে ব্রেকফাস্টও করে নেয়। এমনিতে সব কাজ-কর্ম রুশা রুটিন অনুযায়ী করলেও খাওয়া দাওয়ার ব‍্যাপারে ‘ও’ বরাবরই উদাসীন। যখন ইচ্ছে করে তখন খায় আর ইচ্ছে না হলে না খেয়েই থাকে। পরিবার সাথে না থাকায় এসব বিষয়ে ওকে শাষন করারও কেউ নেই। যার জন‍্যে ওর যেরকম ইচ্ছে ‘ও’ সেরকম ভাবেই নিজের জীবনযাপন করে।

ঘড়িতে দুপুর দুইটা বাজে। হসপিটালের চেম্বারে মুখোমুখি বসে রুশা আর আয়াশ লাঞ্চ করছে। আয়াশ ওর শুট শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে সোজা এখানে চলে এসেছে রুশার সাথে লাঞ্চ করার জন‍্যে। মাঝখানে অনেকদিন রুশা অসুস্থ থাকায় দুজন তেমন ভাবে আড্ডা দিতে পারেনি। তাই একসাথে লাঞ্চ করতে করতে দুজন নিজেদের কাজের ব‍্যাপারে কথাবার্তা বলছে। এরমধ‍্যেই রুশার চেম্বারের দরজায় নক পড়ল। রুশা খাওয়া থামিয়ে বসা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। আয়াশ ওর মাথার হুডিটা ভালো করে সামনে টেনে ডেস্কের উপরে থাকা পেপার ওয়েটটার দিকে দৃষ্টি রাখল। রুশা দরজার লক খুলে বাইরের দিকে উঁকি দিতেই একজন ব‍্যাক্তি ওকে সাইড কাটিয়ে চেম্বারের মধ‍্যে ঢুকে গেল। ব‍্যাক্তিটিকে দেখে রুশার কপালে সুক্ষ ভাজ পড়ল। ব‍্যাক্তিটি ভিতরে ঢুকে আয়াশের দিকে এক পলক তাকাল। কিন্তু আয়াশের পিছনের সাইড ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। দেখার তেমন চেষ্টাও করল না। ব‍্যাক্তিটি আয়াশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রুশার দিকে পূর্ন দৃষ্টি রাখল। তারপর কাঠ কাঠ গলায় রুশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“তোমার মায়ের 20 তম মৃত‍্যু বার্ষিকী’তে কিছু পথচারী মানুষ আর এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে। তোমার দাদু চান তুমিও সেখানে উপস্থিত থাকো। তোমার মায়ের জন‍্যে তোমার মনে বিন্দুমাত্রও ভক্তি-শ্রদ্ধা অবশিষ্ট থাকলে চলে এসো সেখানে।”

ইমদাদ সিকদারের কথা শুনে মুহূর্তের মধ‍্যে চেহারার রং চেইঞ্জ হয়ে গেল রুশার। প্রত‍্যেক বছর ইচ্ছে করেই ওই দিনটা ভুলে থাকার চেষ্টা করে ‘ও’। ওই একটা দিন যেদিন রুশার পুরনো সব তিক্ত স্মৃতিগুলো একে একে ওর মস্তিষ্কে হানা দিতে থাকে। ওকে মৃত‍্যুর মতো যন্ত্রণা দিয়ে ছটফট করায়। রুশাকে থম মেরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইমদাদ সিকদার বললেন,

–“কি হল? কিছু বলছো না কেন? তুমি আসবে না-কি আসবে না?”

ইমদাদ সিকদারের কথায় রুশার হুশ আসলো। ‘ও’ নিজেকে সামলে নিয়ে কঠিন গলায় বলল,

–“আমি আসব না-কি আসব না, সেটা নিয়ে ত আপনার মাথা ব‍্যাথা থাকার কথা না? আমি না আসলেই ত আপনারা খুশী হবেন।”

ইমদাদ সিকদার একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
–“সারাজীবনে আমার একটাই আপসোস রয়ে গেল রুশা। তুমি আমায় কোনোদিন-ই চিনতে পারলে না। আমি সব সময় যে তোমার ভালো চেয়ে এসেছি সেটা আমি তোমাকে কখনো বোঝাতেই পারলাম না।”

রুশা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। বিদ্রুপের স্বরে বলল,
–“হ‍্যাঁ এখন পযর্ন্ত ত আপনি শুধু আমার ভালোই চেয়ে গেছেন। তাই ত মাত্র পাঁচ বছর বয়সে আপনি আমাকে আমার পরিবার থেকে আলাদা করে দিয়েছিলেন।”

ইমদাদ সিকদার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
–“তুমি তোমার নিজের দোষের জন‍্যেই নিজের পরিবার থেকে আলাদা হয়েছো। এখানে আমার কোনো ভুল নেই। আমার তখন যেটা সঠিক মনে হয়েছিল আমি সেটাই করেছি। যাই হোক, এখন এসব বলে আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাই না। ইচ্ছে হলে তুমি ওইদিন এসো, আর নাহলে আসতে হবে না। এমনিতেও তোমাকে ওই বাড়ির কেউই খুব একটা পছন্দ করে না।”

কথাটা বলে ইমদাদ সিকদার ওখান থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। রুশা দরজাটা লক করে দিয়ে ধপ করে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল। এতক্ষণ আয়াশ চুপচাপ বসে সব কথাগুলো মনোযোগী হয়ে শুনছিল। এবার ‘ও’ মাথা থেকে নিজের হুডিটা নামিয়ে রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“আমি যদি খুব ভুল না হই, তাহলে এই ভদ্রলোক তোর ফাদার, রাইট?”

আয়াশের কথায় রুশার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া ধরা দিল। রুশা তিক্ত স্বরে বলল,
–“হুম, আনফরচুনেটলি!”

আয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে বলল,
–“আচ্ছা তোর বাড়ি ছেড়ে আসার কারন কি ছিল? কি এমন ঘটেছিল যার জন‍্যে তুই এত বছরেও নিজের বাড়ির লোকদের সাথে একটাবার দেখা অবদি করতে যাসনি?”

আয়াশের প্রশ্নে রুশা বেশ অবাক হল। কারন আয়াশ এত বছরে একবারও রুশার ফ‍্যামিলি বা ওর পাস্ট সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চায়নি। এমনকি রুশার পদবী কি সেটাও আয়াশের জানা আছে কিনা সন্দেহ আছে। আসলে রুশাকে ওর পাস্টের ব‍্যাপারে জিজ্ঞেস করে আয়াশ ওকে বিব্রত করতে চায়নি। ওর রুশার পাস্ট নিয়ে তেমন একটা মাথা ব‍্যাথাও ছিল না। রুশাও কখনো আয়াশকে আয়াশের পাস্ট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেনি। শুধু আয়াশের চাচীর থেকে শুনেছিল, আয়াশের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর আয়াশের মায়ের সাথে ওর বাবার ডিবোর্স হয়ে যায়। তারপর আয়াশের বাবা আয়াশকে নিয়ে ক‍্যালিফোর্নিয়া চলে যায়। আর বছর দুই পর ওর মা-ও অন‍্য আরেকজনকে বিয়ে করে নেয়। এরপর থেকেই আয়াশ ওর মা’কে ঘৃনা করা শুরু করে। রুশাকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়াশ আবারও বলে উঠে,

–“দেখ, তুই যদি আমাকে এই বিষয়ে বলতে না চাস, তাহলে না-ই বলতে পারিস। তোর পাস্ট নিয়ে তোকে প্রশ্ন করে আমি মোটেও তোকে হার্ট করতে চাই না। আমার কাছে তোর ভালো থাকাটা জরুরি। এছাড়া তোর ফ‍্যামিলির বিষয়ে আমার তেমন কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তবে আমি বলব, যারা তোকে নিয়ে ভাবেই না তাদের কথা ভেবে তুই আন্টির মৃত‍্যু বার্ষিকীর দোয়া অনুষ্ঠান টা মিস করিস না। আই থিংক তোর ওখানে একবার যাওয়া উচিৎ। আগে কে কি করেছে সেসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে তুই তোর মায়ের জন‍্যে ওখানে ফিরে যা।”

আয়াশের কথা শুনে রুশা গভীর ভাবনায় ডুব দিল। ওখানে যাবে কি যাবে না, সেটা নিয়ে বেশ সংশয়ে পড়ে গেল। রুশাকে গভীর ভাবনায় ডুবে যেতে দেখে আয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল,

–“ভাই এসব নিয়ে তুই পরে ভাবা-ভাবি করিস। আপাতত খাওয়ায় মনোযোগ দে। কোথায় ভাবলাম তোর সাথে আজকে একটু আড্ডা দিব। কিন্তু সেটা আর হল না। ঠিক সময়ে একজন আমাদের হ‍্যাপি মোমেন্টের তেরোটা বাজাতে চলে এলো। এদের কি খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই না-কি? সব সময় আমার আর আমার জান্টুস বউয়ের কোয়ালিটি টাইমের সর্বনাশ করতে চলে আসে।”

আয়াশের কথা কানে পৌছাতেই রুশা কটমট করে ওর দিকে তাকাল। আয়াশ রুশার দিকে তাকিয়ে একটা টেডি স্মাইল দিল। রুশা ওর সামনের ডেস্কের উপরে রাখা পেপার ওয়েট’টা হাতে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“উল্টাপাল্টা কথা বললে এটা তোর মুখের উপরে ছুড়ে মারব বে*য়াদব। অন‍্যের বউকে নিজের বউ বলে দাবি করতে লজ্জা করে না তোর?”

আয়াশ ঠোঁট বাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে বলল,
–“না, লজ্জা করে না। সুন্দরী সিজ্ঞেল মেয়েদের আমি সব সময় আমার নিজের বউ-ই মনে করি।”

রুশা নাক ছিটকে বলল,
–“ছিহ ছিহ! আমার মনে হচ্ছে মুভি করতে করতে তোর চরিত্রে সমস‍্যা দেখা দিয়েছে। প্লিজ ভালো কোনো ডাক্তার দেখা আয়াশ। নাহলে ঝাড়ু দিয়ে পি*টিয়ে আমাকে তোর চরিত্র ঠিক করতে হবে।”
_________________________
রাত 10 টা……

নিজের প্রয়োজনীর সব জিনিস-পত্র ব‍্যাগে ঢুকিয়ে বাসার দরজা লক করে বেড়িয়ে পড়ল রুশা। লিফট দিয়ে নিচে এসে পার্কিংয়ে নিজের গাড়ির কাছে আসতেই ওর ফোনে আয়াশের কল এলো। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে আয়াশ বলল,

–“তোকে গাড়ি নিয়ে আসতে হবে না, ল‍াগেজ টা নিয়ে গেটের বাইরে আয় তাড়াতাড়ি। আমি সামনের রোডে দাড়িয়ে আছি।”

কথাটা বলে আয়াশ ফোন কেটে দিল। রুশা ল‍াগেজ টা টানতে টানতে পার্কিংজোন থেকে বের হয়ে পাকা সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেটের বাইরে চলে আসলো। এসে দেখল আয়াশ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছে। রুশা এগিয়ে এসে আয়াশকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“তুই এই সময়ে এখানে কি করছিস? তোকে তো আমি বললাম আমি ওখানে যাচ্ছি। কিছুদিন তোর সাথে দেখা করতে পারব না।”

কথাগুলো বলে রুশা থামতেই আয়াশ সোজাসুজি ভাবে বলে উঠল,
–“আমিও তোর সাথে ওই বাড়িতে যাব রুশ। দেখ, তোর বাবার কথার যে সাইজ দেখলাম তাতে ওনাদের ভরসায় তোকে একা ছাড়ার সাহস আমি কিছুতেই পাচ্ছি না। তাই তুই যতদিন ওখানে থাকবি, ততদিন আমিও তোর সাথে ওখানে থাকব।”

রুশা অবাক কণ্ঠে বলল,
–“তুই ওখানে গিয়ে কি করবি?”

আয়াশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,
–“কিছু করার না থাকলে চব্বিশ ঘন্টা তোর পিছনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তোকে পাহাড়া দিব।”

আয়াশের কথা শুনে রুশা হাত দিয়ে কপাল চাপরাল। কিন্তু আয়াশকে কিছু বলল না। আর কিছু বলেও যে তেমন একটা লাভ হবে না সেটা রুশা ভালো করেই জানে। আয়াশ যখন বলেছে ‘ও’ রুশার সাথে যাবে, তারমানে ‘ও’ যেভাবেই হোক ওখানে যাবেই। রুশা সাথে করে নিয়ে না গেলে ওর পিছন পিছন ওকে ফলো করে আয়াশ যাবে। তাই রুশা আর কথা বাড়াল না। হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসে পড়ল।
_________________________

রাত বারোটার দিকে আয়াশের গাড়ি এসে থামল একটা আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। রুশা আর আয়াশ দুজনেই গাড়ির ডিকি থেকে নিজেদের লাগেজ বের করে গেটের সামনে এসে দাড়াল। সিকিউরিটি গার্ড এগিয়ে এসে ওদেরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে প্রশ্ন ছুড়ল,

–“কি চাই?”

রুশানি বিলম্ব না করেই বলল,
–“আমি রুশানি সিকদার। আশরাফ সিকদারের নাতনি।”

রুশার কথা শুনে লোকটার মুখে হাসি ফুটে উঠল। উনি ঠোঁটের কোনে অমায়িক হাসি বজায় রেখেই বললেন,
–“ওহ আচ্ছা। বড় স‍্যার একটু আগে ফোন করে বলেছে আপনাকে রিসিভ করার কথা। ভিতরে চলুন ম‍্যাম।”

লোকটা রুশার হাত থেকে ল‍াগেজ টা নিয়ে অন‍্য আরেক জনকে বলল আয়াশের ব‍্যাগটা নিতে। আরো কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড এগিয়ে এসে হাসি মুখে রুশার সাথে কুশলাদি বিনিময় করল। তাদের একজনের হাতে আয়াশ গাড়ির চাবি ধরিয়ে দিয়ে গাড়িটা ভিতরে পার্কিং করে দিতে বলে ওরা বাড়ির ভিতরে আসার জন‍্যে পাঁ বাড়াল। রুশার বাড়িতে পাঁ রাখার সাথেসাথে চারপাশের সবার মধ‍্যে একটা হৈচৈ পড়ে গেল। দরজার সামনে এসে কলিংবেল বাজানোর আগেই ভিতর থেকে একজন মহিলা এসে দরজার লক খুলে দিলেন। মহিলাটি রুশার দিকে তাকিয়ে মেকি একটা হাসি দিয়ে বললেন,

–“কেমন আছো রুশা মামনি?”

রুশা কিছু না বলে ওনাকে সাইড কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। আয়াশ বাঁকা চোখে মহিলাটির পাঁ থেকে মাথা পযর্ন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিল। এই রাতের বেলা মহিলাটির গায়ে এমন চকোমকো টাইপ শাড়ি আর গাঁ ভর্তি জুয়েলারি দেখে আয়াশ এনাকে সিরিয়ালের খাচ্চুনি টাইপ মহিলাদের দলে ফেলে দিল। আয়াশকে এভাবে তাকাতে দেখে মহিলাটি এক ভ্রু উপরে উঠিয়ে বলল,
–“এই ছেলে তুমি আবার কোথা থেকে এলে? কে তুমি?”

আয়াশ ভেংচি কেটে বলল,
–“আপনাকে বলব কেন? সরুন সামনে থেকে।”

কথাটা বলে আয়াশও ওনাকে সাইড কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। মহিলাটি খেয়ে ফেলা লুক দিয়ে আয়াশকে দেখতে লাগল। রুশা ড্রইংরুমে ঢুকতেই ওর দাদু আশরাফ সিকদার লাঠিতে ভর দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালেন। রুশা গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরল। এত বছর পরে আদরের নাতনিকে কাছে পেয়ে আশরাফ সিকদারের চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল। রুশা ওর দাদুকে জড়িয়ে ধরে রেখেই আদুরে গলায় বলল,

–“কেমন আছো দাদুভাই? তোমার শরীরের এখন কি অবস্থা?”

আশরাফ সিকদার শান্তির হাসি হেসে বললেন,
–“এতদিন ভালো ছিলাম না দাদুভাই। কিন্তু এখন খুব ভালো আছি। তুমি এসে গেছো না, এবার থেকে আমি সব সময় ভালো থাকব। তুমি কেমন আছো, আগে সেটা বলো?”

রুশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াশ ওনার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল,
–“আমি থাকতে তোমার নাতনি কখনো খারাপ থাকতে পারে দাদু?”

বলতে বলতে আয়াশ এসে আশরাফ সিকদারের পাঁয়ে হাত দিয়ে সালাম করল। আশরাফ সিকদার ওনার চোখে থাকা মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে আয়াশের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দিয়ে বলল,

–“সরি, কিন্তু তোমাকে ত চিনলাম না। কে তুমি?”

আয়াশ ওর মুখের মাক্স টা খুলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

–“আমি আয়াশ দেওয়ান। তোমার নাতনির বেস্ট ফ্রেন্ড+তোমার ভবিষ্যৎ নাত-জামাই।”

আয়াশের কথা শুনে আশরাফ সিকদার ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলেন। রুশা ওনাকে ছেড়ে দিয়ে আয়াশের বাহুতে ধরাম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল,

–“এখানে বসে কোনো রকম ফালতু কথা বলবি না পায়েশের বাচ্চা। বললে কিন্তু তোকে আমি লা*থি মে*রে এখান থেকে বিদায় করব, বলেদিলাম।”

আয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার সামনের সেই মহিলা ছুটে এসে গালে হাত দিয়ে অবাক দৃস্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে এক প্রকার চেঁচিয়ে বলল,

–“ওহ মাই গড, এ ত দেখি সত‍্যি সত‍্যি সুপারস্টার আয়াশ দেওয়ান আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। ওহ আল্লাহ্ আমার ত মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি।”

মহিলাটির কথা শুনে রুশা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেলল। আয়াশ ঠোঁট বাকিয়ে হালকা হাসল। এরমধ‍্যেই মোহনা সিকদার সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রুক্ষ স্বরে বলে উঠলেন,

–“বাড়ির মেয়ে ফিরে আসাতে সবাই আনন্দ উল্লাস করছ ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে এত রাতে চেচামেচি করে বাকি মানুষ গুলোর রাতের ঘুম কেন নষ্ট করছ? তোমাদের কথার সাউন্ডের জন‍্যে আশুর আর ওর বাবার প্রবলেম হচ্ছে। প্লিজ এভাবে চেচামেচি কোরো না।”

মোহান সিকদারের কথা শুনে সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার দিকে তাকাল। ওনাকে দেখে মুহূর্তের মধ‍্যে আয়াশের হাসি-হাসি মুখটাতে বিষ্ময়ের ছাপ দেখা গেল। সেকেন্ডের মধ‍্যে সেই বিষ্মিত হয়ে যাওয়া মুখটায় রাগের আভা ফুটে উঠল। আশরাফ সিকদার কঠিন দৃষ্টিতে মোহনা সিকদারের দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললেন,

–“এইটুকু কথার সাউন্ডে যাদের ঘুম নষ্ট হচ্ছে তারা কানে তুলো গুজে ঘুমালেই পারে। আর নাহলে একেবারে এই বাড়ি থেকে বেরও হয়ে যেতে পারে। দরজা খোলাই আছে।”

আশরাফ সিকদারের কঠিন বাক‍্য শুনে মোহনা সিকদার একটু মিয়িয়ে গেল। রুশার হঠাৎ চোখ গেল আয়াশের দিকে। আয়াশ অগ্নি দৃষ্টিতে মোহনা সিকদারের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কপালের রগ গুলো সব ফুলে উঠেছে। নাক-মুখ সব টুকটুকে লাল হয়ে গেছে। আয়াশকে দেখে এখন আহত বাঘের মতো লাগছে। রুশা এগিয়ে এসে আয়াশের হাতের সোল্ডারে এক হাত রেখে বলল,

–“কিরে কি হয়েছে তোর? হঠাৎ এরকম রেগে গেছিস কেন?”

আয়াশ হাতে থাকা মাক্সটা আবারও মুখে পড়ে নিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে রুশার দিকে তাকাল। এতে রুশা খানিকটা ভরকে গেল। আয়াশ যথাসম্ভব শান্ত স্বরে বলল,

–“আমার ঘুম পাচ্ছে রুশ। আমাকে গেস্ট রুমে নিয়ে চল।”

#চলবে…

(আসল টুইস্টের জন‍্যে রেডি ত জনোগন্স?)

(বিঃদ্রঃ কিছুদিন যাবৎ একটু অসুস্থতায় ভুগছি। তাই গল্প দিতে একটু লেইট হল। পরের পার্টগুলো দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here