#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ26
রাত দশটা বাজে। ড্রইংরুমের সোফার উপরে থ হয়ে বসে আছেন রাহেলা রায়জাদা এবং আরাফ রায়জাদা। দুজনের চোখে মুখেই বিষ্ময়ের ছাপ। ওনারা দুজন টিভিতে নিউজ দেখছেন। নিউজে দেখাচ্ছে আহমেদ গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সহ মিঃ আলতাফ আহমেদের আরো চারটা ফ্যাক্টরিতে সন্ধ্যার দিকে শকড সার্কিটের জন্যে আগুন লেগেছে। আগুনের প্রকোপ এতটাই বেশি যে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট গুলো চার ঘন্টা ধরে চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারছেন না। নিউজটা দেখে রাহেলা রায়জাদা বিষ্ময় ভরা কণ্ঠে বললেন,
–“এসব কখন হলো? আর কীভাবেই বা হলো?”
আরাফ রায়জাদা টিভির দিকে দৃষ্টি রেখেই বললেন,
–“কীভাবে বলব? আমিও তো মাত্র-ই নিউজটা দেখলাম।”
শান সিড়ি দিয়ে নেমে এগিয়ে এসে সোফার সামনে রাখা ছোট্ট টি-টেবিলটার উপর থেকে টিভির রিমোট টা হাতে নিল। তারপর চ্যানেল ঘুরিয়ে দিতে দিতে শান্ত কণ্ঠে বলল,
–“এসব দেখে নিজেদের চোখের এনার্জি লস কোরো না। ভালো কিছু দেখো।”
কথাটা বলে শান চ্যানেল চেইঞ্জ করে দিয়ে বাইরের দিকে যাওয়ার জন্যে হাঁটা দিল। এরকম একটা নিউজ দেখার পরেও শানকে এতটা শান্ত দেখে রাহেলা রায়জাদা এবং আরাফ রায়জাদা দুজনেই সন্দীহান দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। শান বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই আয়াশও উপর থেকে নেমে শানের পিছনে পিছনে হাঁটা দিল। এই সময়ে দুজনকে একসাথে বাইরে যেতে দেখে রাহেলা রায়জাদার কেমন খটকা লাগল। কিন্তু উনি কিছু না বলে চুপচাপ সেখানে বসেই ওদের ফেরা অবদি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
শান বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে উঠতে নিতেই আয়াশ এসে ওর সামনে দাড়াল। আয়াশকে এখানে দেখে শান ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকাল। আয়াশ কোনো ভনিতা না করেই বলল,
–“আমিও যাব তোমার সাথে।”
আয়াশের এমন কথায় শানের কপালে ভাঁজ পড়ল। ‘ও’ খানিকটা গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
–“কোথায়?”
–“তুমি তখন ফোনে যা যা বলেছো সব আমি শুনেছি। তাই আমিও তোমার সাথে যেতে চাই। ওর সাথে আমারও অনেক হিসেব বাকি আছে।”
শান অমত করল না। চোখ দিয়ে ইশারা করে আয়াশকে গাড়িতে উঠে বসতে বলল। আয়াশও আর কিছু না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে পড়ল।
_________________________
চোখের সামনে দাউদাউ করে জ্বলে শেষ হয়ে যাচ্ছে নিজেদের ভবিষ্যৎ। সবটা দেখেও নিরুপায় হয়ে দাড়িয়ে আছে হৃদান। একসাথে এভাবে পাঁচটা ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে যাবে সেটা ‘ও’ কখনো ভাবতেও পারেনি। ওর পরিবারের সবাই একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। কিছু ঘন্টা আগেও যারা রায়জাদাদের এবং সিকদারদের ক্ষতি করার জন্যে নিজেদের মধ্যে একের পর কটু প্লান করে যাচ্ছিল। তাদের সবার মধ্যে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক ঘন্টা আগে হৃদানের বাবা আলতাফ আহমেদের ব্রেইনস্ট্রোক হয়েছে। উনি বর্তমানে হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছেন। হৃদানের মাও ওনার সাথে হসপিটালেই আছেন। আর বাকিরা সবাই জ্বলন্ত ফ্যাক্টরির সামনে দাড়িয়ে নিজেদের দম্ভকে মাটিতে মিশে যেতে দেখছেন।
হৃদান দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর ভাইয়ের সাথে কথা বলছিল। তখনই ওর ফোনে একটা কল আসে। ‘ও’ কলটা রিসিভ করার জন্যে হাঁটা দিয়ে সবার থেকে বেশ অনেকটা দূরে চলে যায়। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে একজন জানায় ওদের বাসাতেও না-কি একটু আগে আগুন লেগেছে। এটা শুনে হৃদান একদম হতবিহ্বল হয়ে যায়। ‘ও’ কিছুক্ষণ থম মেরে দাড়িয়ে থেকে এক দৌড়ে ছুটে আসে নিজের গাড়ির দিকে। তারপর পকেট থেকে চাবি বের করে গাড়িতে উঠে ছুট লাগায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দ্যেশে।
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামতেই হৃদান বুঝতে পারে কেউ ওকে ফেইক নিউজ দিয়েছে। এরকম একটা সময়ে এমন ফেইক নিউজ দেওয়ায় হৃদানের মেজাজটা বেশ খারাপ হয়ে যায়। আবার বাড়ির কিছু হয়নি বলে ওর খানিকটা সস্তিও লাগে। ওখানে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে হৃদান চলে যাওয়ার জন্যে আবারও নিজের গাড়িতে উঠার জন্যে উদ্যত হয়। তখনই ওদের বাড়ির মেইন গেট দিয়ে পরপর কয়েকটা গাড়ি শা করে ভিতরে চলে আসে। হৃদান কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িগুলো ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে। এতে হৃদান বেশ ঘাবড়ে যায়। কিন্তু গাড়ি থেকে শান, আয়াশ আর শানের লোকদের নামতে দেখে ‘ও’ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শান গাড়ি থেকে নেমে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে এসে গাড়ির সামনে দাড়ায়। তারপর গাড়ির বনেটের সাথে হেলান দিয়ে পকেটে দু-হাত গুজে বাঁকা চোখে হৃদানের পাঁ থেকে মাথা পযর্ন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। হৃদান এগিয়ে এসে শানের মুখোমুখি দাড়িয়ে কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে,
–“তোমরা এই সময়ে এখানে কি করছো?”
শান ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত এক হাসি টেনে ঠান্ডা গলায় বলল,
–“তোর খবর নিতে আসলাম। দেখতে আসলাম তুই বেঁচে আছিস না-কি মা’রা গেছিস?”
শানের কথার ধরন দেখে হৃদান খুব ভালো ভাবেই বুঝে গেল যে শান এখানে ওর শুভাকাঙ্খী হিসেবে আসেনি। বরং ওর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে এসেছে। তাই হৃদান চোখে-মুখে রাগের রেশ এনে থমথমে গলায় বলল,
–“দেখা নিশ্চয়ই হয়ে গেছে। এইবার আসতে পারিস। আমার জরুরী কাজ আছে। আমি এখন ভিষণ ব্যস্ত।”
শান বলল,
–“কোথায় যাব? আমরা তো তোর কাছেই এসেছি। কোথায় আমাদের বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাবি। চা-কফি কিছু একটা অফার করবি। তা না করে আমাদের চলে যেতে বলছিস?”
শানের এমন হেয়ালি মার্কা কথা শুনে হৃদানের রাগের মাত্রাটা তরতর করে বেড়ে গেল। ‘ও’ খিটখিটে গলায় বলল,
–“দেখ শান, এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অহেতুক আমার মাথা খাস না। আমি এখন যথেষ্ট সিরিয়াস মুডে আছি। যদি কোনো কাজের কথা বলতে চাস তাহলে বলতে পারিস। নাহলে তোর কু’ত্তা গুলোকে নিয়ে এখান থেকে বের হয়ে যা।”
হৃদানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আয়াশ এগিয়ে এসে হৃদানের কলার চেপে ধরে ওর নাকের উপর পরপর কয়েকটা ঘুষি মারল। আচমকা আক্রমনে হৃদান দু-হাত দিয়ে নিজের নাক চেপে ধরে হাটু ভেঙে মাটিতে বসে পড়ল। আয়াশ বিকট আওয়াজে চিৎকার দিয়ে বলল,
–“এত বড় অন্যায় করেও আমাদের সামনে দাড়িয়ে গলা উচিয়ে কথা বলছিস? বুক কাপছে না তোর?”
হৃদান নাক থেকে হাত সরিয়ে চোখের সামনে নিয়ে আসতেই দেখতে পেল ওর হাতে টাটকা র’ক্ত লেগে আছে। ‘ও’ রাগে চিল্লিয়ে উঠে বলল,
–“তোর এত বড় সাহস তুই আমার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আমার গায়ে হাত তুলিস? তোকে তো আজকে আমি…..”
কথাটা বলতে বলতে হৃদান মাটি থেকে উঠে দাড়াতে নিল। কিন্তু পুরো কথাটা শেষ করে দাড়ানোর আগেই আয়াশ পিছন থেকে ওর পিঠের উপর জোরে একটা লাথি মারল। সাথে সাথে ‘ও’ ব্যালেন্স হারিয়ে উপুর হয়ে একদম শানের পাঁয়ের সামনে হুমরি খেয়ে পড়ল। আয়াশ দাঁত কটমট করে বলল,
–“আমার সাহসের এখনো তুই কিছু দেখিসই নি শু”য়োরের বা”চ্চা। সেদিন যদি আমি ওই বাড়িতে উপস্থিত থাকতাম তাহলে তুই সেদিনই টেড় পেয়ে যেতি আমার সাহস ঠিক কতটা।”
হৃদান মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাল। সামনে তাকাতেই দেখল শান এখনো সেই আগের মতো করেই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। হৃদান আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ওর এক পাঁ হৃদানের ঘাড়ের উপর রেখে জোরে পারা দিয়ে ধরল। ব্যাথায় হৃদানের চোখ-মুখের এক্সপ্রেশন বিকৃত হয়ে গেল। শান ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,
–“সাহসটা তো তোরও অনেক বেশি। নাহলে কি আর সেদিন ওই জানোয়ার গুলোকে আমার ছোট্ট বোনটাকে রেপড করতে বলতি? তোর উপরে আমি ভরসা করে তোর সাথে আমি আশুর বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তোকে বিশ্বাস করে আমি তোকে আমাদের পরিবারের একটা অংশ বানাতে চেয়েছিলাম। অথচ তুই কি করলি? আমার ওই ছোট্ট বোনটার জীবনটা একদম শেষ করে দিতে চাইলি? একবারও ভাবলি না শান রায়জাদা এসব জানতে পারলে তোর কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করবে না?”
শানের চোখ-মুখের রং পাল্টে গেছে। কথা গুলো বলতে বলতে ওর চেহারায় হিংস্রাত্মক ভাব ফুটে উঠেছে। হৃদানের মনে হচ্ছে ওর গলা দিয়ে এক্ষুনি ওর প্রানটা বের হয়ে যাবে। ‘ও’ হাত দিয়ে ওর ঘাড়ের উপরে রাখা শানের পাঁ টা কে সরানোর চেষ্টা করতে করতে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
–“তুমি আমাকে ভুল বুঝছ শান। প্লিজ তোমার পাঁ টা সরাও আমি তোমাকে সবটা ক্লিয়ার করে বলছি।”
–“উহুম, একদম ভুল বুঝছি না। ভুল তো সেদিন বুঝেছিলাম যেদিন তোর কথা শুনে আমি আমার বোনকে আঘাত করেছিলাম।”
হৃদান বুঝল শান আর ওর কথায় বিশ্বাস করবে না। তাই ‘ও’ বিভিন্ন কথা বলে শানের কাছে মাফ চাইতে লাগল। হৃদানের বলা প্রত্যেকটা কথার সাথে সাথে শানের পাঁয়ের চাপটা আরো দৃঢ় হতে লাগল। হৃদান চেষ্টা করেও ওর ঘাড় থেকে শানের পাঁ টা সরাতে পারল না। কিছু সেকেন্ড পর ওর মুখ থেকে ফ্যানা বের হতে লাগল। ‘ও’ আহত পাখির মতো ছটফট করতে লাগল। ওর এইরকম অবস্থা দেখে শান নিজেই ওর পাঁ টা সরিয়ে ফেলল। ছাড়া পেয়ে হৃদান কাশতে শুরু করল। শান ওর লোকদের চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করতেই ওরা সবাই গাড়ির ঢিকি খুলে একেক জন একেকটা করে পেট্রোলের বোতল বের করে হাতে নিল। তারপর বোতলগুলো নিয়ে হৃদানদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়াল। বোতলের ঢাকনা খুলে তারমধ্যে থাকা লিকুইড পেট্রোল গড়গড় করে ঢেলে পুরো বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিল। আয়াশ গিয়ে পকেট থেকে একটা ম্যাচবক্স বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে বাড়িরটার দরজার উপরে ছুড়ে মারল। সাথে সাথে পুরো বাড়িতে দাবানলের মতো আগুন ছড়িয়ে পড়ল। হৃদান হতবম্ভ হয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল। শান হৃদানের সামনে সটান হয়ে দাড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল,
–“ভাবলাম সবগুলো ফ্যাক্টরি তো জ্বালিয়েই দিয়েছি। অযথা এই বাড়িটা রেখে কি করব? তাই এটাকেও জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড বানিয়ে দিলাম।”
শানের কথায় হৃদান অবাক হয়ে শানের দিকে তাকাল। কণ্ঠে অবাকের রেশ ধরে রেখেই জিজ্ঞেস করল,
–“আমাদের ফ্যাক্টরিতে আগুন তুই লাগিয়েছিস?”
শান গাঁ ছাড়া একটা ভাব নিয়ে বলল,
–“আমি না, আমার লোকেরা লাগিয়েছে। কেনো? তুই কি ভেবেছিলি? আলাদা আলাদা জায়গায় থাকা পাঁচটা ফ্যাক্টরিতে একসাথে শকড সার্কিটের জন্যে আগুন লেগেছে? ছাগল না-কি তুই? এরকম কো-ইন্সিডেন্স হতে কখনো দেখেছিস?”
হৃদান অবিশ্বাস্য চোখে শানের দিকে তাকাল। হাঁটুতে ভর দিয়ে কোনো রকম মাটি থেকে উঠে দাড়িয়ে শানের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর শানের কলার চেপে ধরে ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
–“কেন করেছিস এরকম? কী লাভ হলো তোর এসব করে?”
শান হৃদানের চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের জ্বলন্ত চোখ জোড়া ওর দিকে নিক্ষেপ করল। কঠিন গলায় বলে উঠল,
–“সেদিন একটা মেয়েকে টেনে হিচরে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে নিয়ে এসেছিলি, মনে আছে? জানিস ওর মেডিকেলের একটা স্টুডেন্ট ওর গলা চেপে ধরেছিল বলে আমি সেই ছেলের দুটো হাতই কেমিক্যাল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। আর তুই তো ওর সারা শরীর স্পর্শ করেছিস। ওকে একটার পর একটা রিপিডলি আঘাত করে গেছিস। জংলি দানবের মতো ওর পেটে নখের আচড় পযর্ন্ত কেটেছিস। এখন আমার তোকে কি করা উচিৎ বল তো?”
শানের কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যে হৃদানের ক্ষিপ্ত চোখ জোড়ায় আতঙ্ক ফুটে উঠল। শান ওর কলার থেকে হৃদানের হাত দুটো চেপে ধরে ওর চোখের সামনে নিয়ে আসলো। তারপর হাত দুটোকে ইশারায় দেখিয়ে বলল,
–“এই হাত দিয়েই তো ওকে স্পর্শ করেছিস তাইনা?”
শান কিছুক্ষণ হিংস্র দৃষ্টিতে হৃদানের হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল। শানের এই দৃষ্টির দিকে তাকাতেই হৃদানের শরীর থরথর করে কাপতে শুরু করলো। শান হৃদানের দুটো হাতকে ওর এক হাতের মধ্যে বন্ধি করে এক টানে গাড়ির বনেট তুলে ফেলল। তারপর চোখের পলকের মধ্যে হৃদানের হাত দুটো গাড়ির ইঞ্জিনের মধ্যে ঢুকিয়ে বনেট’টাক জোরে হৃদানের হাতের উপরে চেপে ধরল। হৃদান ভূবন কাঁপানো একটা চিৎকার দিয়ে মাটিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল। ওর চিৎকারের শব্দে শানের গার্ডরা সবাই নিজেদের কান চেপে ধরল। শান হৃদানের হাত দুটো ইঞ্জিন থেকে বের করে ওর জামার কলার ধরে দাড় করাল। তারপর ওর মাথাটাকেও সেই একই জায়গায় ঢুকিয়ে আবারও বনেট টা ওর মাথার উপর ফেলে চাপ দিল। হৃদান অনবরত চেঁচাতে লাগল। হৃদানের অবস্থা দেখে আয়াশ চোখ-মুখ কুচকে ফেলল। শান হৃদানের কলার ধরে টেনে ওকে ওখান থেকে বের করে মাটিতে ছুড়ে মারল। হৃদান মাটিতে পড়ে ছটফট শুরু করল। ইঞ্জিনের গরমের তাপে ওর দুটো হাত আর চেহারার এক সাইড একদম ঝলসে গেছে। শান হৃদানের ছটফট করা শরীরটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাঁটু ভাঁজ করে ওর পাশে বসল। হৃদান ওকে কাছে আসতে দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ছটফট করতে করতে ওর থেকে খানিকটা দূরে ছিটকে গেল। শান ঠান্ডা গলায় বলল,
–“চাইলে আমি তোকে এখনই একেবারে শেষ করে দিতে পারি। কিন্তু আমি সেটা করব না। কারন আমি চাই তুই বেঁচে থাকিস। আর সারাজীবন যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে নিজের কাজের জন্যে রিগ্রেট করতে থাকিস। শুরু তুই না, তোর মতো একটা হিপোক্রিটের জন্যে তোর পুরো পরিবার সারাজীবন রিগ্রেট করবে। আমি তোর এমন অবস্থা করব যে তুই তোর পুরো জীবনে আর কখনো বিজনেসে নিজের ঘাড় সোজা করে দাড়াতে পারবি না। অবশ্য তোর চেহারার যা হাল হয়েছে তাতে আজকের পর থেকে তুই বাইরের জগতের কাউকে নিজের মুখ দেখানোর মতো অবস্থায়ই থাকবি না।”
কথাটা বলে শান উঠে দাড়াল। তারপর ওর লোকদের ইশারা করে সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে নিজেও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পড়ল। আয়াশ যাওয়ার আগে এক নজর হৃদানের দিকে তাকাতেই ওর শরীর শিউরে উঠল। কি ভয়ংকর ভাবে বিকৃত হয়ে গেছে হেচারা আর হাত দুটো। এখানে আসার আগে আয়াশের ইচ্ছে ছিল হৃদানকে একেবারে মে’রে ফেলবে। কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে মৃত্যুর থেকেও ভয়ানক শাস্তি হৃদান পেয়েছে।
#চলবে….