অভিমানে তুমি পর্ব ৩

#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৩

বারবার নিদ্রিতাকে তাকাতে দেখে স্পর্শ জিজ্ঞেস করল–তুমি কি কিছু বলবে??
নিদ্রিতা থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বলল–না–না মানে!!
স্পর্শ — না মানে কি??
নিদ্রিতা– কিছু না স্যার!!
বলেই জানালার দিকে ঘুরে নিদ্রিতা মুচকি হেসে চলেছে।।
স্পর্শ খানিক ভ্রু কুঁচকে থেকে আবারও ড্রাইভে মনোযোগ দিল।।
নিদ্রিতা কিছু একটা চিন্তা করে আবার ঘুরে বলল–স্যার আপনি কি এখানকার ই??
স্পর্শ — না আমি চাকরিসূত্রে এসেছি।।
নিদ্রিতা খানিক চিন্তা সরে বলল–তাহলে তো আমি ঠিকই ধরেছিলাম।
স্পর্শ –যেমন??
নিদ্রিতা–আপনাকে দেখেই বুঝে ছিলাম আপনি এখানকার নন।।হালকা বিদেশি ছোঁয়া আছে।
স্পর্শ — সেন্স অফ হিউমার ভালোই।।ঠিকই বুঝেছো।।
আমি জন্মসূত্রে ইন্ডিয়ান। বাবা-মা কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন বাট জন্ম আর বেড়ে ওঠা কানাডাতে।স্টাডি শেষে মুম্বাই এসেছিলাম ওখানে জবের ইন্টারভিউ দিলে এখানকার কলেজে জব হয়।
নিদ্রিতা–হুমম বুঝলাম।।
স্পর্শ –তা তুমি কোথাকার বাসিন্দা??
নিদ্রাতা–আমি পিউর দার্জিলিং এর বাসিন্দা জন্মসূত্রেই।
স্পর্শ –বাহ!!!
নিদ্রিতা–হুমম!!!তা আপনি এখানকার সবকিছু চিনলেন কিভাবে?
স্পর্শ এবার হালকা হেসে বলে–২.৫ বছর জব করছি এখানে। এইটুকু শহর চেনা কোনো ব্যাপার নাকি!!!
নিদ্রিতা তা আর শুনতে পেল না কারণ সে তো স্পর্শ হাসিতে পুরোপুরি বিমোহিত।নিদ্রিতা স্পর্শকে পুরোপুরি স্ক্যান করে নিতে ব্যস্ত।।স্পর্শের যে হালকা উঁচু ২ টো দাঁত আছে ২ পাশে তাও নিদ্রিতার নজর এড়ালো না।।
আরো কিছু টুকটাক কথা বলতে বলতে স্পর্শ একটা কলোনির সামনে এসে বলল–এবার কোন দিকে নিদ্রিতা??
নিদ্রিতা হাতের ইশারাতে ডাম দিক দেখিয়ে দিল।
স্পর্শ গাড়ি ডান দিকে নিয়ে গেল।।
নিদ্রিতার বাড়ির সামনে আসতেই বলল–এসে গিয়েছি আমার বাড়িতে স্যার গাড়ি থামান।।
স্পর্শ গাড়ি থামিয়ে বলল–হেঁটে যেতে পারবে তো??
নিদ্রিতা–হুমম স্যার পারব।বেশ ব্যাথা কমে গিয়েছে।।
স্পর্শ –ওকে।
নিদ্রিতা–স্যার চলুন আমাদের বাসায়।।
স্পর্শ — আজ নয় নিদ্রিতা অন্য একদিন।।
নিদ্রিতা–ওকে!!
স্পর্শ –টেক কেয়ার!!
নিদ্রিতা–ওকে স্যার আর থ্যাংক ইউ।।
স্পর্শ বিপরীতে হালকা হাসি দিল।
নিদ্রিতা হালকা পায়ে নেমে গেট দিয়ে ঢুকতেই স্পর্শ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল।।
নিদ্রিতা একবার একটু ঘুরে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল।
নিদ্রিতাকে একটু টেনে হাঁটতে দেখে তার মা জিজ্ঞেস করল–কি হয়েছে নিদু মা??চোট পেয়েছিস নাকি??(চিন্তিত স্বরে)
নিদ্রিতা–হুমম মা,,একটুখানি তুমি চিন্তা করো না।।
নিদ্রিতার মা–তুই ফ্রেস হয়ে নে আমি হলুদ দিয়ে দুধ নিয়ে আসছি!!!!
নিদ্রিতা নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিল।তার মা হলদি দুধ দিয়ে গেল তা খেয়ে বিছানাতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজতেই স্পর্শের সেই হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠল।।
স্পর্শ তাকে কোলে নিয়েছে এটা ভাবতেই লজ্জাতে মুখ কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে নিল নিদ্রিতা।
নিদ্রিতা নিজেও বুঝতে পারছে না তার এই আচমকা লজ্জার কারণ।
স্পর্শের কথা ভাবতে ভাবতেই রাজ্যজুড়ে ঘুম নেমে আসে নিদ্রিতার চোখে।।সন্ধ্যাতে তার মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে নিদ্রিতার।নিদ্রিতা উঠে গায়ে হালকা চাদর জড়িয়ে নিয়ে নিচে গেল।
নিচে গিয়ে সোফাতে বসল।।
নিদ্রিতা–হ্যালো বাপী!!
নয়ন–হায় মামনি!!
নন্দিতা–কথা পরে,,,আগে বাবা মেয়ে গরম গরম পুরি খাও।।আমি চা নিয়ে আসছি।।
নয়ন–আয় মা খেয়ে নে।।
চা নাস্তা সেরে নিদ্রিতা নিজের ঘরে এলো।।তারপর ফেসবুক ঘাটতে বসল।হঠ্যাৎ তার মনে হলো–আচ্ছা।।
স্পর্শ স্যারের নামে আইডিটা একবার সার্চ দিয়ে দেখি।।
যেই ভাবা সেই কাজ নিদ্রিতা আইডি সার্চ দিল।।
স্পর্শ আহমেদ লিখে।।
কয়েকবার স্পেলিং চেন্জ করে দিতেই স্পর্শের আইডি খুঁজে পেয়ে গেল।
স্পর্শের আইডি চেক করে দেখল বেশ অনেক ছবি দেওয়া।।কিন্তুু একটা ছবিতে নিদ্রিতার চোখ আটকে গেল নিদ্রিতার।
ছবিতে স্পর্শ সম্ভবত একটা ক্যাফে তে বসে আছে।।
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।।ঠোঁটে ঝুলছে ঝলমলে হাসি।নিদ্রিতা যেন মুগ্ধ হয়ে দেখছে স্পর্শের ছবি।।
নিদ্রিতা কিছুক্ষণের মুগ্ধতা কাটিয়ে স্পর্শের কয়েকটি ছবি ফোনে সেভ করে নিল।।এই কাজের কারণ নিদ্রিতা বুঝে পায় না।
কয়েকদিন বেশ পার হয়ে যায়।।রোজ কলেজে গিয়ে নিদ্রিতার চোখ অজান্তেই স্পর্শকে খোঁজে।স্পর্শের ক্লাসে নিদ্রিতা পুরোটা সময়ই তার দিকে তাকিয়ে থাকে।।
নিদ্রিতা যে তাকিয়ে থাকে তা কি স্পর্শ বোঝে না এটা ভেবেই পায় না নিদ্রিতা।।
নিদ্রিতা নিজের এই ভালোলাগার অনুভতি গুলো বুঝে পায় না।।
এমন টানাপোড়ন সহ্য করতে না পেরে অবশেষে রাত ২.৫০ এ নিদ্রিতা ফোন লাগায় সামিরা কে।।
বারকয়েক রিং হতেই সামিরা ফোন রিসিভ করে।।
নিদ্রিতা–ওই ছাগলের দাদি,,ফোন রিসিভ করতে কত সময় লাগে তোর??
সামিরা ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে–এই রাতে ফোন দিয়েছিস একে এটা তো মহা অন্যায় আবার রাগ ও আমাকে দেখাচ্ছিস এটা চরম অন্যায়।
নিদ্রিতা–রাখ তোর ন্যায় অন্যায়।তোকে খুব দরকারি কথা বলার আছে।।
সামিরা ঢুলু ঢুলু কন্ঠে বলে–বল নিদু জলদি।।
নিদ্রিতা–আচ্ছা তুই যখন ইভু ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিলি তোর অনুভতি কেমন ছিলো??
সামিরা — ইট’স আ আমেজিং ফিলিংস নিদু।।আই কান্ট ডেসক্রাইব ইট টু ইউ।।
নিদ্রিতা–অল্প কিছু তো বল।
সামিরা–এই যে ধর আমার সারাদিন ইভু ভাই কে দেখতে মন চাইত,তার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে ইচ্ছে করত।।এমনই।।!!! কেন বলতো???
নিদ্রিতা খুশি হয়ে উঠে বসে বলে–এমনি বাই!!!
এবার নিদ্রিতা খুশিতে বিছানার ওপর লাফাতে শুরু করে।।
তারপর ক্লান্ত হয়ে বেডে শুয়ে বলে–আম ইন লাভ উইথ স্পর্শ।।
বলেই দুহাতে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে।।
আচমকা উঠে বসে বলে–তবে এই কথা তাকে বলব কেমনে??আর সেকি মানবে আমায়??!!!
তারপর বিছানা থেকে উঠে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে বসে পড়ে টেবিলে।।বই হাতড়ে একখানা সবুজ রঙের কাগজ বের করে আনে।।তার পেনব্যাগ থেকে একটা লাল রঙের কলম বের করে লিখতে বসে!!
প্রিয়,,,স্পর্শ ♥️
চিঠির শুরুতেই প্রিয় লিখলাম,জানা নেই আদৌতে প্রিয় সম্বোদনের অধিকার আছে কিনা!!!
সংঙ্গা ছেড়ে মূল কথাতে আসি কারণ বেকার কথাপোকথন খুব একটা মানানসই নয়।।তোমাকে দেখে যে আমার লাভ এ্যাট ফাস্ট সাইট হয়েছে ঠিক তা নয়।।
তবে তোমাকে বিগত কয়েকদিন দেখে আমার মনে কোনো এক সুপ্ত অনুভূতির জানান দিয়েছে।।
কবির ভাষায় বলতে গেলে,,,
একটা প্রেমের কবিতা
লিখব বলে …
তোমার কাছে মৃদু পায়ে
আজ এসেছি চলে …
সরাসরি বলতে গেলে আমি তোমার প্রেমে পড়েছি!!গভীর প্রেম!!!”

চিঠি লেখা শেষ করে কাগজটা ভাজ করে রেখে দিল ইংরেজি বইয়ের ভেতরে।।
তারপর বিছানাতে শুয়ে ঘুমের অপেক্ষা করতে লাগল।।তবে মনে মনে তার একটাই চিন্তা—স্পর্শ কি মানবে!!!নাকি এক লহমাতে ভেঙে দিবে নিদ্রিতার মন???
পরদিন সকালে যথারীতি নিদ্রিতা কলেজে গেল।।
ক্লাস শেষে অপেক্ষা করতে লাগল স্পর্শ কখন নিজের কেবিনে প্রবেশ করবে।।
নিদ্রিতার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে স্পর্শ নিজের কেবিনে চলে গেল।।
নিদ্রিতা উঠে এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে স্পর্শের কেবিনে নক করল।।।স্পর্শ পানি পান করছিল।।
নিদ্রিতা–মে আই কাম ইন স্যার??
স্পর্শ –উমম।ইয়েস কাম ইন!!
নিদ্রিতা একপ্রকার লাফিয়ে কেবিনে প্রবেশ করল।।
স্পর্শ — বসো!! কোনো দরকার ছিল??
নিদ্রিতা বসতে বসতে বলল–ইয়েস স্যার।।
স্পর্শ –হুমম বলো!!
নিদ্রিতা ফটাফট ব্যাগ থেকে বই বের করে বলল–আসলে স্যার এই বইয়ের ২৩৪ নং পাতার মডেলের ৯ নম্বর টা বুঝতে পারছি না।।
স্পর্শ কপাল কুঁচকে বলল–ক্লাসে বললে না কেন??
নিদ্রিতা আমতা আমতা করে বলল–আসলে স্যার!!ওতো মানুষের মধ্যে বুঝতে কষ্ট হয় আমার তাই।।
স্পর্শ — ওহহ ওকে।ওয়েট আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।।
স্পর্শ এবার চেয়ার টেনে নিদ্রিতার সামনে বসল।।নিদ্রিতার বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে।।।
স্পর্শ পাতা উল্টে যাচ্ছে।। ২৩৪ নং পেজে এসে একটা মেলানো কাগজে নিজের নাম দেখে চোখ আটকে গেল স্পর্শের।।ভ্রু কুঁচকে হাতে তুলে নিল কাগজটা।।
আর নিদ্রিতা আগ্রহী চোখে ঠোঁট কামড়ে স্পর্শের রিয়েকশন দেখার জন্য বসে আছে।।

#চলবে
১০৮০ শব্দের পর্ব😊😊

বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন?? গল্পটাতে অনেক রহস্য।। ধৈর্য্য সহকারে পড়ুন😊😊😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here