অভিমানে তুমি পর্ব ২৩+২৪

#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৩ (নোট অবশ্যই পড়বেন)

স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মেইন গেইট ক্রস করে গেল!!!

তাদের এই সকল কাজ ওপরের ছাদ থেকে কেউ একজন খুব দৃঢ় ভাবে তাকিয়ে দেখছিল!!!

তারপর সে রেলিং শক্ত করে ধরে বলল–যাক বাবা!!ভালো সময় এসেছিলাম,,,রেলিং এ ঝোলানো গাছের টব টার শিকল শক্ত করে না ধরলে এখনই একটা অঘটন ঘটে যেত!!

কথাটা বলেই অভ্র রেলিং এ ঝোলানো গাছের টবটা শিকল ধরে টেনে তুলে নিল!!!তারপর গাছটা নিচে রেখে দেখল আরো কয়েকটা গাছ ভেঙে পড়ে আছে!!!

অভ্র ভ্রু কুঁচকে বলল-বাগানের এই হাল কে করলো??

আর ঐ শিকলটা তো একা খুলে যাওয়ার কথা না!!!

তারপর স্টোর থেকে জিনিসপত্র এনে অভ্র বাগান পরিষ্কার করতে লাগল!!!

অন্যদিকে,,

স্পর্শ নিদ্রিতাকে নিয়ে নিজের অফিসে এলো!!

স্পর্শ অফিসে আসতেই সবাই তাকে দেখে কুশলাদি জানাল!!!

স্পর্শ নিদ্রিতাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিজের কেবিনে নিয়ে গেল!!!

কেবিনে এসে স্পর্শ ম্যানেজারের থেকে কাজের আপডেট নিচ্ছে!!!

আর কাঁচের রুমটা নিদ্রিতা ঘুরে ঘুরে দেখছে!!!

নিদ্রিতা এবার এসে কাঁচের সামনে দাঁড়িয়ে বাইরের রাস্তাঘাট দেখছে!!!

ম্যানেজার যেতেই স্পর্শ এসে নিদ্রিতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল!!!

নিদ্রিতা আতকে উঠে বলল–কি করছো টা কি??সবাই দেখছে তো!!কাঁচের রুম!!

স্পর্শ নিদ্রিতাকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে–দেখবে না!!আমার কেবিনে ভেতর থেকে বাইরে দেখা যায় কিন্তুু বাইরে থেকে ভেতরে দেখা যায় না!!

নিদ্রিতা–ওহহ!!আমরা কি এখন এখানেই থাকবো??

স্পর্শ –নাহ!!এখুনি বের হবো!!

নিদ্রিতা–ওকে!!

অফিসের সবাই নিদ্রিতাকে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানালো!!

এরপর স্পর্শ নিদ্রিতাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল!!!

এবার স্পর্শ নিদ্রিতাকে নিয়ে এলো একটা লেকের পাড়ে!!

নিদ্রিতা–এটা কোথায় এলাম???

স্পর্শ –এটা রবীন্দ্র সরোবর!!বেশ পরিচিত একটা লেক কোলকাতার!!!বলা যায় দক্ষিণ কোলকাতার ফুসফুস!!!

নিদ্রিতা–বাহ!!খুব দারুণ তো!!!

খানিকক্ষণ লেকের পাড়ে ঘুরাঘুরি চলল তাদের!!!

এরপর স্পর্শ নিদ্রিতাকে নিয়ে এলো কোলকাতার আরো একটি নামকরা জায়গা গড়ের মাঠ!!!গড়ের মাঠ থেকে নিদ্রিতার বায়না ধরল রঙিন গোলা খাবে!!রঙিন গোলা কিনে স্পর্শ এবার নিদ্রিতার হাত ধরে একটু হেঁটে পৌঁছে গেল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এ!!

তারপর টিকিট নিয়ে ভেতরে চলে গেল!!

স্পর্শ –এটা রাণী ভিক্টোরিয়া হল!!! আগাগোড়া শ্বেত পাথরের তৈরি ইংল্যান্ডেশ্বরী মহারানি ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করা হয়েছে!!

নিদ্রিতা–হুমম,, আমি বইতে পড়েছি!!পড়েছিলাম এর কাজ ১৯০৬ সালে শুরু হয়ে ১৯২১ সালে শেষ হয়েছিল!!

স্পর্শ –পশ্চিমবঙ্গের বেশ ঐতিহাসিক একটা জায়গা!!!

নিদ্রিতা–হুমম!!শুধু ইন্টারনেটেই দেখতাম!!আজ বাস্তবে দেখলাম!!এটা তো মুঘল স্থাপত্য তাইনা??

স্পর্শ –হুমম!!!

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে বেরিয়ে নিদ্রিতা বলল–আরে দেখো ঘোড়ার গাড়ি!!!

স্পর্শ –এখানে প্রায়শই দেখা যায়!!চড়বে তুমি??

নিদ্রিতা–হুমম!!!

স্পর্শ –আচ্ছা এসো!!!

নিদ্রিতা হেসে দিল!!!

ঘোড়ার গাড়িতে উঠে নিদ্রিতা তো অনেক খুশি!!!স্পর্শ নিদ্রিতার কাছে ফিসফিস করে বলল–খুশি তো তুমি???

নিদ্রিতা–অনেক খুশি!!!

স্পর্শ এবার নিজের গাল ইশারা করে বলল–এই খুশিতে একটা কিস তো দিতেই পারো!!!

নিদ্রিতা হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল–মোটেই না,, বেলজ্জা লোক একটা!!!

স্পর্শ –আচ্ছা,, বাড়ি ফিরে দেখছি!!!

নিদ্রিতা জিহবা বের করে ভেঙিয়ে দিয়ে বলে–আচ্ছা দেখবোনি!!!ঘোড়ার গাড়ি ২ রাউন্ড দিয়ে তারা নামল ইডেন গার্ডেনের সামনে!!!

স্পর্শ –এটা ইডেন গার্ডেন!!ক্রিকেটের একটা বিখ্যাত স্টেডিয়াম!!!

নিদ্রিতা–হুমম!!এটা টিভিতে দেখেছি যখন খেলা হতো!!

স্পর্শ –চলো এবার আরো সুন্দর একটা জায়গায় যাবো!!!

গাড়িতে উঠে এবার তারা এলো একটা কফি হাউজে!!

স্পর্শ কফি অর্ডার করে বলল–মান্নাদের ঐ গানটা শুনেছো??কফি হাউজের সেই আড্ডা!!

নিদ্রিতা–হুমম!!!বাপী খুব শুনত এই গানটা!!

স্পর্শ –এটা সেই স্মৃতিবিজড়িত কফি হাউজ!!! এর অপজিটে প্রেসিডেন্সি কলেজ!!!

নিদ্রিতা চারপাশ টা ঘুরে দেখে কফিটা শেষ করল!!!

এবার বাইরে এসে স্পর্শ বলল–পরশু থেকে তো কলেজ যাবে??বই লাগবে তো??

নিদ্রিতা–হুমম!!!তা তো লাগবেই!!!

স্পর্শ –চলো কিনে নিয়ে আসি!!!

কিছুটা সামনে এগিয়ে,

নিদ্রিতা অবাকের সুরে বলে এতো বইয়ের দোকান!!!!

স্পর্শ –এটা কলেজ স্ট্রিট!!সব রকমের বই পাওয়া যায়!!চলো তোমার বই গুলো কিনে কিছু খেতে হবে!!!ক্ষিদে পেয়েছে আমার!!!

নিদ্রিতা তার প্রয়োজনীয় বই সহ আরও কিছু উপন্যাসের বই কিনে স্পর্শের হাত ধরে বলল–চলো!!

স্পর্শ –হুমম!!!চলো!!

গাড়িতে উঠে স্পর্শ গাড়ি ঘুরিয়ে নিল,,

স্পর্শ ড্রাইভ করছে আর নিদ্রিতা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছে!!!কতো ব্যস্ত জীবনযাত্রা মানুষের!!!

স্পর্শ ড্রাইভিং এর মাঝে আড় চোখে নিদ্রিতাকে বারকয়েক দেখে নিচ্ছে!!!

হাওড়া ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় স্পর্শ বলল–এটা হাওড়া ব্রিজ নিদু!!!হাওড়া আর কোলকাতা শহরের মধ্যে সংযোগ স্হাপনকারী!!!

নিদ্রিতা—কি দারুণ!!

স্পর্শ এবার গাড়ি নিয়ে থামলো কোলকাতার বেশ নামকরা একটা রেস্তোরাঁ!! নাম এলফ্রেসকো!!

ভেতরে বসে স্পর্শ মেনু কার্ডটা নিদ্রিতার দিকে দিয়ে বলল–দেখো তুমি!!!অর্ডার করো!!আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি!!!

নিদ্রিতা মেনুটা নিয়ে এপিট ওপিট দেখতে লাগল!!!

স্পর্শ উঠে ওয়াশরুমে গেল!!!হাতে মুখে পানির ছিটা দিয়ে এসে দেখে নিদ্রিতা এখনো মেনু নাড়াচাড়া করছে!!!

স্পর্শ পাশে বসে মুখ মুছতে মুছতে বলল–এখনো অর্ডার করোনি??

নিদ্রিতা মেনু টা স্পর্শের দিকে ঠেলে দিয়ে বলল–তুমি অর্ডার করো!!আমার শুধু এই ক্রিম মাশরুম স্যুপই ভালো লেগেছে!!!

স্পর্শ –আচ্ছা!!

স্পর্শ নিজে ওয়েটার ডেকে অর্ডার করে দিলো!!!

নিদ্রিতার দিকে সরে এসে নিদ্রিতার কোমড় চেপে ধরে বলল—কাল বিয়ে রেজিষ্ট্রি হবে!!তারমানে আজ আমাদের প্রি হানিমুন চলছে!!!এবার বলো মেইন হানিমুনে কোথায় যাবে??

নিদ্রিতা—তুমি কোথায় নিয়ে যেতে চাও??

স্পর্শ নিদ্রিতার গালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলে–আমার পড়াশোনার অনেকটা সময় লন্ডনে কাটিয়েছি!!!লন্ডন বেশ সুন্দর আর দেখার মতো জায়গা!!!তুমি চাইলে আমরা ওখানেই যেতে পারি!!!

নিদ্রিতা একটা হাসি দিয়ে বলল—তাহলে লন্ডন ফাইনাল!!!

স্পর্শ –ওকে!!!আমি সব ব্যবস্হা করে রাখব!!!

খাবার আসতেই স্পর্শ নিদ্রিতাকে বলল–খায়িয়ে দাও!!!

নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলল–কেন??হাতে কি সমস্যা??

স্পর্শ —হাতে খুব ব্যাথা!!!মনে হয় ভেঙে গিয়েছে!!!

নিদ্রিতা ঠোঁট চেপে বলল–হুমম!!!সারা রাস্তা গাড়ি চালালে, এখন আমার কোমড় ধরে বসে আছো!!আর খাওয়ার বেলায় তোমায় হাতে ব্যাথা!!!

স্পর্শ ইনোসেন্ট ফেস করে বলল–হুমম!!খুব ব্যাথা!!!

তারপর খাওয়া শেষ করে স্পর্শ বিল পে করে বলল–চলো!!!

নিদ্রিতা–এখন কোথায় যাবো??

স্পর্শ –মার্বেল প্যালেস!!!

নিদ্রিতা–আচ্ছা,,, চলো!!

বেরিয়ে পার্কিং সাইডে এসে স্পর্শ সিগারেট ধরিয়ে টান দিতেই নিদ্রিতা সামনে এসে বলল–আবারও এই ছাই পাশ খাচ্ছ তুমি??

স্পর্শ –আজ এই একটাই আর খাবো না!!!তোমার সাথে থাকলে তো খাই না!!!

নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলল–তাহলে আমাকে ও দাও!!টেস্ট করে দেখি!!!

স্পর্শ সিগারেটটা হাতে ধরে নিদ্রিতার ঠোঁটের কোণে চুমু দিয়ে বলল–পিচ্চি মানুষ আদর আর চুমু খাও!!!এসব খেতে হবে!!!

নিদ্রিতা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল–তাড়াতাড়ি শেষ করে এসো!!!

বিকেলের মধ্যেভাগ,,,

স্পর্শ আর নিদ্রিতা মার্বেল প্যালেস টা ঘুরে ঘুরে দেখছে!!!বাড়ি টা জমিদার রাজেন্দ্র মল্লিক বাহাদুরের বাড়ি!!!বেশ শৌখিন উপায়ে তৈরি!!!

নিদ্রিতা ঘুরে ঘুরে দেখছে আর স্পর্শ তার পেছন পেছন হেঁটে নিদ্রিতার খুশির ঝলকগুলো লক্ষ করছে!!!বারকয়েক তা ক্যামেরাবন্দি ও করে নিয়েছে!!!মার্বেল প্যালেস ঘুরে বের হতে হতে সন্ধ্যা নেমে গেল!!!সাথে সাথে জ্বলে উঠলো রাস্তার ধারের সোডিয়ামের আলো!!!

ব্যস্ত জীবনের জনযাত্রা তে তাও তেমন ভাটা পড়ল না!!!

স্পর্শ নিদ্রিতাকে নিয়ে একটা নির্জন বিলের!!! ধারে বসে আছে।।

দুজনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে সন্ধ্যার পূর্বের কিছুটা সময় উপভোগ করছে!!!

স্পর্শ এবার ঘুরে নিদ্রিতার দিকে তাকালো!!

স্পর্শ —খালামনির সাথে কথা বলছো না কেন নিদু??

নিদ্রিতা স্পর্শের দিকে ফিরে বলল–আজকে শুধু আমাদের কথা বললে হয় না!!!

স্পর্শ –এটাও তো আমাদের কথার মধ্যেই!!!আমাকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নিতে পারলে খালামনিকেও ক্ষমা করা উচিত!!!

নিদ্রিতার চোখে জল জমে এলো!!!তারপর বলল–মা কিভাবে পারলো??

স্পর্শ –তুমিই তো বলেছিলে সে সাময়িকের জন্য এসেছিলো তাই যেকোনো কারণে চলে গিয়েছে!!! তার জন্য তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার তো কোনো মানে হয় না!!!

নিদ্রিতা–কিন্তুু!!!

স্পর্শ –কোনো কিন্তুু না!!!আর কোনো মনোমালিন্য রেখো না!!! আমাদের এবার উচিত একে ওপরকে মাফ করে ভালো থাকা!!!

নিদ্রিতা–তুমি কি খালামনিকে!!!??

স্পর্শ –হুমম!!ক্ষমা করে দিয়েছি!!!হাজার হলেও আমার মা!!!আজ আমি পৃথিবীতে আছি তার বহু কষ্টের বিনিময়ে!!!

নিদ্রিতা এবার স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে!!!!স্পর্শ ও জড়িয়ে ধরে বলে–সারাদিনের পাওনার কিছু কি এখন দেবে??(দুষ্টুমি কন্ঠে)

নিদ্রিতা–কিসের পাওনা???

স্পর্শ নিদ্রিতার মুখ উঁচু করে ধরে কপালে আর চোখে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে দিল!!

তারপর আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল!!!

অন্যদিকে,,

হাতে ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে নিজের ঘরে বসে আছে নিশান!!!

নিশান গ্লাসের দিকে তাকিয়ে নেশালো কন্ঠে বলল-আমি বুঝেছি স্পর্শ,, তুই না মরলে,,নিদুকে কখনো পাবো না!!!আর আমি যদি ওকে না পাই তাহলে ওকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কি!!!
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৪

স্পর্শ আর নিদ্রিতা একেবারে ডিনার করে রাত ৮ টায় বাড়ি ফিরলো!!!
নিদ্রিতা ফ্রেস হয়ে বিছানা রেডি করছে!!!আর স্পর্শ ফ্রেস হয়ে এসে নিদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল–তুমি তাহলে একটু রেস্ট নাও!!!আমি ছাদ থেকে আসছি!!!
নিদ্রিতা স্পর্শের দিকে ঘুরে বলল–কেন??এখন ছাদে যাবে কোন কাজে??
স্পর্শ হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝাল যে সিগারেট খেতে!!!
নিদ্রিতা কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল–না!!এখন এসব খাওয়া চলবে না!!
স্পর্শ এবার টাওয়াল ফেলে নিদ্রিতাকে কাছে টেনে বলল–প্লিজ!!!
নিদ্রিতা ও মাথা নাড়িয়ে বলল–একদম না!!
স্পর্শ নিদ্রিতার চোখে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলল–আচ্ছা!!! যা তুমি বলবে তাই!!
নিদ্রিতা খুশি খুশি মুখ করে বলল–তাহলে চলো বেলকনিতে!! আজ তোমার ইচ্ছে তে চন্দ্র বিলাশ হবে!!।স্পর্শ কপাল কুঁচকে বলল–তোমার সেদিনের কথা এখনো মনে আছে!!!
নিদ্রিতা–হুমম!!চলো!!দোলনাতে গিয়ে বসি!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে কোলে তুলে বলল–এবার চলো!!
চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে দোলনায় বসে থাকা নিদ্রিতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে স্পর্শ!!! দুহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে নিদ্রিতার!!
নিদ্রিতা স্পর্শের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল–আর যেন কোনো সমস্যা না আসে!!
স্পর্শ নিদ্রিতার কোমড় আরো শক্ত করে ধরে পেটে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–চিন্তা করো না!!!আর কোনো সমস্যা আমি আমাদের জীবনে আসতে দিব না!!
নিদ্রিতা –হুমম!!!তবে তোমার কাছে কিছু চাই আমি!!!
স্পর্শ উঠে বসে নিদ্রিতাকে নিজের কোলে বসিয়ে বলল–বলো কি চাই??বিয়ের পর আজ ১ম তুমি কিছু চাইলে আমার কাছে!!!।নিদ্রিতা হালকা হেসে স্পর্শের বা হাতটা নিজের পেটে রেখে বলল–আমার একটা বেবি চাই স্পর্শ!!!তোমার আর আমার ভালোবাসার একটা অস্তিত্ব চাই!!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে আরো একটু জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল—আল্লাহ চাইলে খুব দ্রুতই আমাদের আমাদের ঘরে আমাদের সন্তান আসবে!!!
নিদ্রিতা স্পর্শের দিকে ঘুরে বলল–চলো না ডাক্তারের কাছে যাই!!!
স্পর্শ হালকা হেসে বলল—তুমি আর একটু বড় হও!!এমনিতেই লাস্ট টাইম অলমোস্ট অ্যাবোরশন হয়েছে!!এজ কমে এতো ধাক্কা বডি নিতে পারবে না!!!আর একটু সময় নি আমরা!!!
নিদ্রিতা ধরা গলাতে বলল–না না!!!আমার বেবি চাই!!দ্রুতই চাই!!ডাক্তারের কাছে চলো!!!
স্পর্শ –আচ্ছা,, আচ্ছা!! যাবো ডাক্তারের কাছে!!!
নিদ্রিতা–কালই??
স্পর্শ –নাহ কাল না!!একটু খোঁজ নিয়ে নি!!ভালো গাইনি ডাক্তার সম্পর্কে তারপর নিয়ে যাবো!!
নিদ্রিতা–কাল খোঁজ নিচ্ছ তো সিউর??
স্পর্শ –হুমম!!দিশাদকে বলে দিবো!!
নিদ্রিতা স্পর্শের গালে চুমু দিয়ে স্পর্শ কে জড়িয়ে ধরল!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার কানে ফিসফিস করে বলল–সারাদিন যে এতো ঘোরালাম!!তার কিছু পাওনা হয়েছে তা দাও এখন!!
নিদ্রিতা মুখে দুষ্টমি হাসি ফুটিয়ে বলল–কি চাই??
স্পর্শ –আমার যা চাই তা আমিই নিয়ে নি!!!
নিদ্রিতা জিজ্ঞেস করার আগেই স্পর্শ নিদ্রিতার গলায় নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!!!
পরদিন সকালে,,
স্পর্শ একটা কফিশপে বসে আছে!!!নয়না ম্যাসেজ করে ডেকেছে তাকে!!স্পর্শ বুঝতে পারছে না আচমকা কফিশপে ডাকার কারণ কি??!!!
স্পর্শের অফিসে যেতে হবে বারবার ঘড়ি দেখছে!!তারওপর নিদ্রিতার জন্য ডাক্তারের খোঁজ ও নিতে হবে!!মেয়টা কাল থেকে বারবার স্পর্শকে ব্যস্ত করে তুলছে!!
স্পর্শ বিরক্তিতে উঠে যেতে নিলেই কালো গোল জামা পরিহিতা একটা মেয়ে সামনে এসে বসল!!
স্পর্শ ঘড়ি দেখে বলল–১৪ মিনিট লেট!!!
নয়না–সরি!!আসলে একটা ক্লাস ছিল!!
স্পর্শ –ইটস ওকে!!বলো কি জন্য ডেকেছো আমায়??
নয়না–একটু দরকার!!তবে প্রয়োজনটা তোমারই বেশি!!!
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বলল–যেমন?
নয়না- ভার্সিটি থেকে এলাম ২ টো ক্লাস করে,,কিছু অর্ডার করি!!
স্পর্শ মেনুটা এগিয়ে দিয়ে বলল–আমার জন্য অনলি কোল্ড কফি!!
নয়না অর্ডার দিয়ে ঘুরতেই স্পর্শ বলল–একটু দ্রুত!!কাজ আছে আমার!!
নয়না–তুমি তো জানোই নিশান নিদ্রিতা ভাবির জন্য পাগলপ্রায়!!
স্পর্শ –ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে তোমার ভাই!!সময় থাকতে সাবধান করো!!!নয়তো!!
নয়না–আমি জানি!!কিন্তুুু ও এমন কিছু করতে চলেছে যা তোমাদের জীবনে আবার ঝড়ের সৃষ্টি করতে পারে!!তাই তুমি আর ভাবি একটু সাবধানে থেকো!!
স্পর্শ –তুমি নিজের ভাই সম্পর্কে এমন ইনফরমেশন আমাকে কেন দিচ্ছ??
নয়না–তার কারণটাও বলবো বলে এসেছি!!
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে –কি??
নয়না–আমি জানি ভাই ভুল করছে!!এটা উচিত না!!নিদ্রিতা ভাবি বিবাহিত!! আমাদের সাথে পরিচিত হওয়ার আগেই তোমরা বিবাহিত!! তবে একটা কথা কি জানো!! অনুভূতি কখনো পরিস্থিতি বোঝে না!!!যেমনটা আমার আর ভাইয়ের বেলাতে!!!
স্পর্শ কপাল কুঁচকে –নিশানের ব্যাপারটা বুঝলাম বাট তোমার!!
নয়না–আম ইন এ লাভ উইথ ইউ!!বাট আমি জানি তুমি আমার না!!আর ভয় নেই আমি কখনো তোমাদের ভেতর বাধা হয়ে দাঁড়াবো না!!
স্পর্শ —এই সকল অনুভূতি ঝেড়ে ফেলাই ভালো!!!
নয়না–তুমি কখনো অন সাইডেড লাভে পড়ো নি তাই বুঝবে না!!
স্পর্শ –যে ভালোবাসার পরিণতি শুরুতেই শেষ সেই প্রেমে না পড়াই শ্রেয়!!!
নয়না–যাই হোক!!আমি তো তোমায় একটু ভাইয়ের ব্যাপারে জানাতে এলাম!!!
স্পর্শ –হুমম!!!
অন্যদিকে,,
নিদ্রিতা তার মায়ের কোলে শুয়ে আছে!!আর তামান্না মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!!
নিদ্রিতা–মা,,তুমি আর রেগে নেই তো আমার ওপর??
তামান্না–না রে মা!!রাগ তো তোর থাকার কথা!!!
নিদ্রিতা–নাহ আর রাগ নাই!!!
তামান্না–সোনা মেয়ে আমার!!
নিদ্রিতা–জানো স্পর্শ বলেছে কাল আমাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রি করবে!!
তামান্না–এতো ভালো খবর!!!
নিদ্রিতা–কাল সবাই মিলে ভালো খাবার দাবার রান্না করে খেলে কেমন হয় মা??
তামান্না–তা বেশ ভালো হয়!!!দেখি বাজারের লিস্ট রাতে খেতে বসে করে নিবো!!
নিদ্রিতা–আচ্ছা!! মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো একটু ঘুমাবো!!
তামান্না হালকা হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে লাগল!!
কিছুক্ষণের মধ্যেই নিদ্রিতা ঘুমিয়ে গেল!!!
অপরদিকে,,
স্পর্শ অফিসে এসে বসে আছে!! নয়নার বলা কথা গুলো বারবার তাকে ভাবাচ্ছে!!!
দিশাদ দরজা নক করে বলল–মে আই কাম ইন স্যার??
স্পর্শ –ইয়েস!!
দিশাদ ভেতরে এসে বলল–স্যার,,আপনি গাইনি ডাক্তারের খোঁজ চেয়েছিলেন!! পেয়েছি খোঁজ!!
স্পর্শ –কে?? আর কোথায় বসেন??
দিশাদ–ডক্টর ফারহানা!!এ্যাপোলো তে বসেন।। সপ্তাহে ৪ দিন!!সিরিয়াল কি দিয়ে দিবো স্যার??
স্পর্শ –হুমম!!পরশুর সিরিয়াল দাও!!
দিশাদ–ওকে স্যার!!
দিশাদ বেরিয়ে যেতেই স্পর্শ নিদ্রিতার নম্বরে ফোন করল!!
নিদ্রিতা ফোন রিসিভ করতেই স্পর্শ বলল–কি করছো পাখি??
নিদ্রিতা–মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম!!শাওয়ারে যাবো!বাট আবারো ঘুম পাচ্ছে!!!
স্পর্শ –তা ঘুমায়!!আর কোনো কাজ করার দরকার নেই তোমার!!তোমার ডাক্তারের জন্য সিরিয়াল দিয়েছি পরশু বিকালের!!!
নিদ্রিতা খুশিতে বলল–বাহ!!!বেশ ভালো খবর!!তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসবে আজ!!কাল তো রেজিষ্ট্রি আমাদের!!
স্পর্শ –হুমম!!সন্ধ্যার মধ্যেই আসবো!!তুমি রেস্ট নাও!!
নিদ্রিতা–আচ্ছা!!!
তারপর ফোন কেটে নিদ্রিতা আবারও বিছানাতে গা এলিয়ে দিল!!!
স্পর্শ ফোন কেটে কিছু কাজে মন দিলো!!
নিশান মাথা চেপে নিজের ঘরে বসে আছে!!!রাতে সে গিয়েছিল এক ঝলক নিদ্রিতাকে দেখার জন্য!!! কিন্তুু গিয়ে দেখে নিদ্রিতা স্পর্শের কোলে বসে আছে আর স্পর্শ নিদ্রিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে আছে!!!
সেই থেকে নিশানের মাথা গরম!!!ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে একাকার অবস্থা!! চারদিকে বিছানার বালিশ, কাথা,টেবিলের ফুলদানি সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে!!
নিশান নিজের হাতে একটা কাঁচের টুকরো চেপে ধরে বলল–সহ্য হয় না নিদু!!তোমার সাথে স্পর্শকে!!!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here