অভিমানে তুমি পর্ব ২১+২২

#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২১

সেন্স ফেরার পর নিদ্রিতা বারান্দার কাচের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!!চোখটা বাইরে স্হির!!!চোখের কোণে জল!!!!

স্পর্শ ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে হাতড়িয়ে নিদ্রিতার জায়গা ফাকা দেখে ধরফর করে উঠে আফছা আলোতে দেখে নিদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে!!!

স্পর্শ এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে—-এখন শরীর কেমন লাগছে??

নিদ্রিতা হালকা করে বলল–ভালো!!

স্পর্শ –রেগে আছো আমার ওপর??খুব সরি!!!আর হবে না এমন!!!

নিদ্রিতা একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বলল–নাহ!!তোমার ওপর রেগে নেই!!!আমি আমার ওপর রেগে আছি!!!কত ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে আছি!!!

স্পর্শ —দেখো যা হবার হয়েছে!!! এখন সব নতুন করে শুরু করব!!

নিদ্রিতা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল–মা কিভাবে পারল বলোতো??কিভাবে করল এতো জঘন্য কাজটা??

স্পর্শ নিদ্রিতার কাঁধে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বলল—একটা কথা কি জানো নিদু!!!সন্তানের জন্য মা – বাবা সব করতে পারে!!!যদিও আমার ক্ষেত্রে কথাটা আংশিক সত্যি!! তবে বাবার যে রুপ আমি দেখেছি তাতে অল্প হলেও এখন এই কথাটাতে বিশ্বাস করি।।আর খালামনির জায়গায় আমি যদি থাকতাম তাহলে হয়তো আমিও কিছুটা এমনই চিন্তা করতাম!!!খালামনি তোমার ভালো ভেবেছে!!!ঠিকই তো তোমার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না!!তারওপর বিয়ের বিষয়টা অনেকেই জানতো না!!!তোমার বয়সটাও কম!!!সব দিক দিয়ে তার নিজের সন্তানের ভালো চিন্তা করেছে!!

নিদ্রিতা স্পর্শের দিকে ঘুরে ফিচেল মুখ করে বলল–কারো প্রাণ নিয়ে কি কারো ভালো করা সম্ভব??

স্পর্শ –জানি না নিদু!!তবে এটুকু বলতে পারি এতে খালামনির কোনো দোষ নেই,,,দোষ আমার!!আমার জন্যই খালামনির মনে এমন চিন্তার উদয় হয়েছিল!!!

নিদ্রিতা আবারও ফুপিয়ে উঠল!!!স্পর্শ জড়িয়ে ধরে বলল–ব্যাস!!আর কাঁদবে না!!!সব ভুলে যাও!!!

নিদ্রিতা–কিন্তুুু!!

স্পর্শ –কোনো কিন্তুু নাহ নিদু!!!নতুন করে শুরু করতে হবে!!

নিদ্রিতা–হুম!!তবে তুমি তখন বাবার কোন রুপের কথা বললে??

স্পর্শ –আমি সুইজারল্যান্ডে আটকে থাকাকালীন দিশাদের মাধ্যমে বাবাকে সবটা জানিয়েছিলাম!!!বাবা সবটা শুনেই তো এদিকের বাকিটা সামলে নিল!!!আর নিজে হাতে সান্তানীকে গুলি করে মেরেছে রেগে গিয়ে!!তাই বললাম!!

নিদ্রিতা –ওহহ!!আর সায়ানের কি করবে??

স্পর্শ একটা শ্বাস নিয়ে সোফাতে বসে বলল–দেখো হাজার হলেও আমি তার কাছে ২৬ বছর মানুষ হয়েছি!!!তাই যা করার বাবা করবে!!!কারণ সবচেয়ে বেশি অন্যায় বাবার সাথেই করেছে ও!!!

নিদ্রিতা–হুমম!!!

স্পর্শ –নিদু!!আমার পিঠে একটু ভলিনি স্প্রে করে দাও!!ব্যাথা করছে!!!

নিদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে বলল–দিচ্ছি!!!

নিদ্রিতা আলো জ্বেলে তারপর ড্রয়ার থেকে স্প্রে বের করে সোফাতে আড় হয়ে বসে থাকা স্পর্শের পেছনে গিয়ে বসে বলে–টি-শার্ট টা খুলো!!

স্পর্শ ধীরে টি-শার্ট খুলে ফেলে!!নিদ্রিতা স্পর্শের পিঠের দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায়!!!সাথে সাথে কেঁদে ওঠে!! কারণ স্পর্শের ফর্সা পিঠে গোটা গোটা দাগ পড়ে গিয়েছে!! তা একেবারে কালচে বর্ণ ধারণ করে আছে!!!

বোঝাই যাচ্ছে খুব শক্ত কিছু দিয়ে অনেক আঘাত করা হয়েছে!!!

নিদ্রিতার কান্নার আওয়াজ শুনে স্পর্শ ঘুরে যায়!!

তড়িঘড়ি করে বলে–আরে কাঁদছো কেন??তেমন কিছু হয় নি!!এজন্য আমি তোমাকে দেখাতে চাই নি!!কিন্তুু এতো ব্যাথা করছে যে!!

নিদ্রিতা এবার স্পর্শের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল আর জোরে কাঁদতে শুরু করল!!!

কাঁদতে কাঁদতে বলল–তুমি কতো কষ্ট পেয়েছো!!!

স্পর্শ ও জড়িয়ে ধরে বলল–ধুর!!এই যে তুমি জড়িয়ে ধরলে!!ব্যাথা গায়েব!!তবে তোমার ওপর আমার অভিমান হয়েছে!!!!

নিদ্রিতা স্পর্শের বুকে থেকেই মুখ উঁচু করে বলল–কেন??কি করেছি আমি??

স্পর্শ –কি করেছো মানে??বারবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছো!!!যদি কিছু হয়ে যেত??

নিদ্রিতা স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে মুখ ফুলিয়ে বলে–তা কি করবো!!!আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না!!

স্পর্শ নিদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে–থাকতে পারি না বলে কোনো কথা না নিদু!!!তুমি আমাকে কথা দাও যদি কখনো আমার কিছু হয়েও যায় তাহলে তুমি কখনো নিজের কোনো ক্ষতি করবে না!!!

নিদ্রিতা–না না!!!

স্পর্শ আর জোড়াজুড়ি করলো না কারণ এটা পরে ঠান্ডা মাথায় নিদ্রিতাকে বোঝাবে!!!

স্পর্শ হালকা করে নিদ্রিতাকে বলল–জড়িয়েই যখন ধরে আছো!!!একটু আদরও করো!!পুরো ব্যাথাই গায়েব হয়ে যেত তাহলে আর কি!!!

নিদ্রিতা লজ্জা পেয়ে বলল–একদমই কোনো আদর দিবো না!!!

স্পর্শ আচমকা কি চিন্তা করে নিদ্রিতাকে বুক থেকে উঠিয়ে কোমড় চেপে ধরল!!এত শক্ত করে ধরেছে যে নিদ্রিতার মনে হচ্ছে হাড় মাংস সব এক হয়ে যাবে!!!

নিদ্রিতা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই স্পর্শ নিদ্রিতার ঠোঁট আকড়ে নিল!!!

নিদ্রিতা আবেশে চোখ বন্ধ করতেই বুঝল স্পর্শ তার ঠোঁটে কামড় দিচ্ছে!!!

নিদ্রিতা এবার ছুটোছুটি শুরু করে দিল কারণ তার বেশ ব্যাথা লাগছে!!

নিদ্রিতার ছুটোছুটি দেখে স্পর্শ নিদ্রিতার কোমড় খামচে ধরল!!!

খানিক ছোটাছুটি করার পরও ছাড়া না পেয়ে ক্লান্ত নিদ্রিতা চোখের পানি ছেড়ে দিল!!!

এবার স্পর্শ ছেড়ে দিল!!!

নিদ্রিতা জোড়ে জোড়ে কয়েকদফা শ্বাস নিল!!তারপর ঠোঁট আর কোমড়ে বেশ জ্বলন হচ্ছে!!! ঠোঁট ইতিমধ্যে ফুলে গিয়েছে!! আর কোমড়ে নখের দাগ বসে গিয়েছে!!

নিদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে বলল–এমন করুণ অত্যাচারের কারণ কি??

স্পর্শ নিদ্রিতাকে কোলে বসিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল–একটু আদরময় শাস্তি দিলাম!!!বারণ করেছিলাম বেডরুমে ছাড়া ফ্রক পরে বের হতে!!কিন্তুু তুমি তা পরে সমস্ত কোলকাতা ঘুরেছো!!!তারপর কালো শাড়িটা বলেছিলাম আমার সামনে ছাড়া পরবে না তা পরে ছাদে ঘুরঘুর করেছো!!!আর সব ঠিক ছিল কোমড় বের করে রেখেছো আর তাতে ওই স্টুপিড নিশান চোখ দিয়েছে!!! তাই!!!

নিদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে —সরি!!!

স্পর্শ –হুমম!!!ওই নিশানকে পরে দেখছি আমি!!শখের অভাব নেই,,আমার বউকে বিয়ে করতে চায়,,সাহস কত!!!

নিদ্রিতা মুখ ফুলিয়েই বলে–পঁচা লোক!!এসেই ব্যাথা দিচ্ছে!! ভালো হতে ওই স্টুপিডকে বিয়ে করে নিলে!!!

স্পর্শ এবার নিদ্রিতার কপালে চুমু দিয়ে বলল–আমার আমার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস আছে!!তার জীবনে আমি না তো কেউ না!!!আই নো!!!!

নিদ্রিতা স্পর্শের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল–খুব ভালোবাসি তোমাকে!!!তোমাকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে!!!

স্পর্শ এবার নিদ্রিতার কেটে যাওয়া ঠোঁটে হালকা করে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল—আমিও খুব ভালোবাসি তোমাকে!!!সবসময় ভালোবাসতে চাই!!প্রতি মুহুর্তে ভালোবাসতে চাই!!!তুমি কি আজ আমাকে একটু সুযোগ দেবে নিজের মনের কিছুটা অনুভতি তোমাকে জানানোর???

নিদ্রিতা মুচকি হেসে দেয়!!!স্পর্শ ও হালকা হেসে তাকে কোলে তুলে বিছানার দিকে চলে যায়!!!

এটুকু সময় তাদের খুব প্রয়োজন, একে অপরের অনুভতি হাজারো ঝড় ঝাপ্টার মাঝে বারে বারে চাপা পড়ে যায়!!!তাই নতুন করে শুরু করতে নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করা খুবই প্রয়োজন!!!

রাতের শেষভাগ চলছে,,,

নিদ্রিতা স্পর্শের বুকে মাথা দিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন!!!!মনে হচ্ছে তার ১ মাসের ঘুম সে আজ ঘুমিয়ে নিচ্ছে!!!

অপরদিকে স্পর্শ গায়ে ব্যাথাতে ঘুমাতে পারছে না!!!নিদ্রিতা বুকের ওপরে শুয়ে থাকায় নড়তেও পারছে না!!!নিদ্রিতার ঘুম যাতে না ভাঙে তাই শুয়ে আছে স্হির হয়ে!!!আর একহাত দিয়ে নিদ্রিতার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে!!!

তারপর আরও কিছু চিন্তার মাঝে কখন যে ঘুমিয়ে গেল তা নিজেও জানে না!!!!

সকালের মিষ্টি রোদের আলো মুখে পড়তেই নিদ্রিতার স্বাদের ঘুমটা নষ্ট হয়ে গেল!!!

নিদ্রিতা একটু উঠে স্পর্শের হাতের বাঁধন থেকে ধীরে বেরিয়ে এলো!!!তারপর স্পর্শের দিকে তাকিয়ে দেখে স্পর্শ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে!! স্পর্শের উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে স্পর্শের সমস্ত গায়ে কালচে নীল মারের দাগ!!!নিদ্রিতার চোখের কার্নিশে পানি জমে গেল!!!নিদ্রিতা স্পর্শের বুকে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে আস্তে করে বেডের সাইডে পরে থাকা শাড়িটা জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়!!!

নিদ্রিতা ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখে স্পর্শ এখনো ঘুম!!!তাই নিদ্রিতা ভলিনি স্প্রে বের করে স্পর্শের বুকের দাগ গুলোতে স্প্রে করতে লাগল!!!

ঘুমের মধ্যে বুকে আর কাঁধের কাছে জ্বলে ওঠার কারণে স্পর্শের ঘুম ভেঙে যায়!!!চোখ খুলে বলে –কি করছ??

নিদ্রিতা স্প্রে করতে করতে বলে–স্প্রে করে দিচ্ছি,, ব্যাথাটা কমবে এতে!! আর চাচ্চুকে বলব ডাক্তার নিয়ে আসতে!!

স্পর্শ হালকা হেসে উঠে বসে বলল–পিঠে দেও!!বেশি ব্যাথা ওখানে!!!

নিদ্রিতা স্প্রে করতে লাগল!!!

হঠ্যাৎ দরজাতে নক হওয়ায়,

নিদ্রিতা উঠে দরজা খুলে দেখে অভ্র,,,

নিদ্রিতা–গুড মর্নিং,, চাচ্চু!!

অভ্র–গুড মর্নিং মা,,,একটু চা নিয়ে আসবি!!৩ জনে খাবো!!

নিদ্রিতা সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে গেল চা আনতে!!

অভ্র ভেতরে এসে দেখল স্পর্শ খালি গায়ে বসে আছে!!

অভ্র স্পর্শের গায়ে দাগ দেখে বলল–ভলিনি বা মুভ কোথায় আছে ঘরে??লাগিয়ে দেই আমি!!!

স্পর্শ –লাগবে না বাবা!!নিদু দিয়েছে মাত্রই!!

অভ্র–সায়ানের ব্যাপারে কি ভাবলি??(স্পর্শের পাশে বসে)

স্পর্শ টি-শার্ট গায়ে দিতে দিতে বলল–ওটা তুমি ভাববে!!

আমার আর নিদুর একটু স্পেস দরকার!!!আর ঝামেলা ভালো লাগছে না!!!

অভ্র–ঘুরে আয় কিছুদিন!!

স্পর্শ –হুমম যাবো!!!তার আগে একটা কাজ আছে!!!ওটা শেষ করব তারপর!!!

অভ্র–কি কাজ??নিশানের ব্যাপারে!!!

স্পর্শ —
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২২

আমার আর নিদুর একটু স্পেস দরকার!!!

অভ্র–ঘুরে আয় কিছুদিন!!

স্পর্শ –হুমম যাবো!!!তার আগে একটা কাজ আছে!!!

অভ্র–কি কাজ??নিশানের ব্যাপারে!!!

স্পর্শ — ওর ব্যাপারটা আমি দেখছি!!তবে কাজটা হলো আমার আর নিদুর বিয়ের রেজিষ্ট্রি টা করে ফেলতে হবে!!!

অভ্র–তা ভালো!!!কবে করবি ভাবছিস??

স্পর্শ –আমার তো যেকোনোদিন হলেই হয়!!দেখি নিদু কি বলে!!!

অভ্র–তোদের এই তালে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়!!!এতো ঝামেলার মাঝে কোনো অনুষ্ঠান করা হয়নি বহুদিন!!!

স্পর্শ –খারাপ হয় না!!!

অন্যদিকে,,,

নিদ্রিতা রান্নাঘরে গিয়েই দেখে তামান্না কাজ করছে!!

নিদ্রিতা কোনো কথা ছাড়াই রান্নাঘরে গিয়ে পাতিলে পানি নিয়ে চুলায় বসাতে লাগল!!!

নিদ্রিতাকে দেখেই তামান্না বলল–কিছু লাগবে মা??আমায় বল!!!

নিদ্রিতা নীরব ভাবে দাঁড়িয়ে পাতিলের পানিতে চিনি মিশিয়ে নাড়তে লাগল!!!

মেয়ে কথা না বলাতে তামান্নার বুক ফেটে কান্না চলে এল!!!কোনোমতে কান্নাগুলো গলাতে আটকে ধরা গলায় বলল–তুই আমার ওপর খুব রাগ করেছিস আমি জানি!!!আমি তো ভেবেছিলাম যে স্পর্শ আর বোধ হয় ফিরবে না!!তাই

কথা শেষ করার আগেই নিদ্রিতা বলল—তাই তুমি আমাদের বাচ্চাটাকে মেরে দিলে তাইতো!!!

তামান্না এবার চোখের জল ফেলে বলে–বিশ্বাস কর,, আমি শুধুই তোর ভালো চেয়েছি!!!

নিদ্রিতা চা কাপে ঢেলে ট্রে তে নিয়ে বলল–কারো প্রাণ নিয়ে কি কারো ভালো করা যায়???

তারপর দ্রুত রান্নাঘর ত্যাগ করে ঘরের উদ্দেশ্যে চলে যায়!!!তামান্না ধপ করে ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করে!!!

নিদ্রিতা চা হাতে ঘরে এসে দেখল অভ্র আর স্পর্শ কথা বলছে!!!

নিদ্রিতা চা হাতে হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে বলল–চা চলে এসেছে!!!

অভ্র–আয় মা!!!

নিদ্রিতা টেবিলে চা রেখে অভ্র আর স্পর্শকে চা দিল!!!

অভ্র চা হাতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল–তোরা গল্প কর!!আমার একটু কাজ আছে!!

বলে অভ্র চা হাতে বেরিয়ে গেল!!

নিদ্রিতা এসে চা হাতে স্পর্শের পাশে বসল!!!

স্পর্শ হাসি মুখে বলল–চা টা বেশ দারুন হয়েছে!!

নিদ্রিতা–হুমম!!

স্পর্শ –আমি চাইছি যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি টা করিয়ে নিতে!!তুমি কি বলো??

নিদ্রিতা–ঠিক আছে!!কবে করবে?

স্পর্শ –বাবা চাইছে আবার ছোট একটা অনুষ্ঠান করে করতে!!

নিদ্রিতা–না গো!!তুমি আগে রেজিষ্ট্রির ব্যবস্হা করো!!!পরে অনুষ্ঠান হবে!!এমনিতেই ঝামেলার শেষ নেই!!

স্পর্শ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল–তা ঠিক!!!আর একটা কথা!!!

নিদ্রিতা–বলো!!

স্পর্শ এবার চা রেখে নিদ্রিতার কাছে এসে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে নিদ্রিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল—এতোদিনে যা হয়েছে তাতে সবচেয়ে বেশি সাফার তুমি করেছো!!! আমিও তোমায় সাফার করিয়েছি সবচেয়ে বেশি!!!না চাইতেও বারবার কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!!!আমি কাল ভাবছিলাম আমার আর তোমার একটু স্পেস দরকার৷ কিন্তুুু এখন আমার মনে হচ্ছে তোমার স্পেসটা বেশি দরকার!!!তাই তুমি যদি চাও কিছুদিন কোথাও তোমার ঘুরে আসার ব্যবস্হা করতে পারি!!আমার কিছু লেডি গার্ড আর এমনি গার্ড দিয়ে দিবো সাথে!!!আমি না হয় কিছুদিন দূরে থাকলাম তোমার থেকে!!!এতে তোমার মাইন্ড ও ফ্রেস থাকবে!!!

নিদ্রিতা একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলল—স্পেস আমাদের ২ জনের দরকার তবে আলদা করে নয়!!!তোমার থেকে দূরে থাকা আর পসিবল না!!!আমি তো মাত্র কয়েকদিন সাফার করেছি আর তুমি যে তোমার সেই ৮/৯ বছর বয়স থেকে সাফার করছো!!!তাই যদি কোথাও ঘুরতে যেতে হয় একসাথে যাব নয়তো না!!!

স্পর্শ নিদ্রিতার হাতে চুমু দিয়ে বলল–আচ্ছা!! কলেজ কবে থেকে যাচ্ছ??

নিদ্রিতা–পরশু থেকে যাব ভাবছি!!!

স্পর্শ –ওকে!!!আমি নিয়ে যাব আর নিয়ে আসব!!

নিদ্রিতা–আজ আমায় একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে!!বিকালে!!!

স্পর্শ –নিয়ে যাব!!তোমাকে আমার অফিস ও তো দেখাতে হবে!!!

নিদ্রিতা–কিসের অফিস??

স্পর্শ –এখানে আমার একটা বিজনেস আছে!!

নিদ্রিতা–কিসের ব্যবসা??

স্পর্শ –মসলিন, মনিপুরী তাঁতের নাম জানো নিশ্চয়ই!! এই কাপড় আমাদের দেশীয় তাঁতির থেকে বুনন করিয়ে তা দিয়ে জামা কাপড় বানিয়ে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়!!এই দেশীয় জিনিসের চাহিদা বিদেশে অনেক!!দেশেও বিক্রি হয়!!ইন্ডিয়াতেই আমার ৮ টা আউটলেট আছে!!!আরও অনেক কিছু তৈরি হয়!!এগুলো তোমায় ফ্যাক্টরিতে নিয়ে দেখাবো!!

নিদ্রিতা–বাহ!!আমি কখনো তাঁত বুনন দেখিনি!!

স্পর্শ –আমি দেখাতে নিয়ে যাবো!!

নিদ্রিতা–তাহলে কখন বের হবো!!!

স্পর্শ –চলো আজ লান্চের আগেই বের হই!!ব্রেকফাস্ট করে তারপর রেডি হও!!

নিদ্রিতা খুশি হয়ে বলল–আচ্ছা!!

স্পর্শ এবার উঠে ফোন হাতে নিয়ে বলল–তাহলে ব্রেকফাস্ট করে নি চলো!!

নিদ্রিতা–আচ্ছা,, চলো!!

স্পর্শ আর নিদ্রিতা নিচে নেমে দেখল নাশিতা টেবিলে বসে আছে!!যেহুতু গতকাল বহু ঝামেলার কারণে নাশিতার সাথে নিদ্রিতার আলাপই হয়নি তাই নিদ্রিতা এগিয়ে গিয়ে নাশিতাকে সালাম দিল!!!

আর স্পর্শ চেয়ারে বসে ফোন চেক করছে!!!

নিদ্রিতা সালাম দিয়ে নাশিতার পাশে বসল!!

নাশিতা হালকা হেসে সালামের জবাব দিয়ে বলল–শরীর কেমন আছে এখন??

নিদ্রিতা–আমি ভালো আছি!!!তোমার শরীরের কি অবস্থা??

নাশিতা–এইতো মোটামুটি!!!

নিদ্রিতা–চাচ্চু ডাক্তার ডেকে পাঠিয়েছে!!!আসলে তোমার চেকাপটাও করিয়ে নিতে হবে!!!

নাশিতা–ডাক্তার কেন?কি হয়েছে??

নিদ্রিতা–তেমন কিছু না!!স্পর্শের একটু চেকাপের দরকার!!

নাশিতা–হুমম!!ওর ওপর অনেক ধকল গেছে!!

স্পর্শ –এসব আপনার না ভাবলেও চলবে!!নিদু,,ব্রেকফাস্ট দাও!!!

নিদ্রিতা আর কি বলবে বুঝতে না পেরে খাবার দিয়ে দিল!!!

স্পর্শ –তুমি খাবে না??

নিদ্রিতা–সবাই আসুক তারপর!!তুমি খেয়ে নাও!!!

স্পর্শ নিজের মতো খেয়ে ওপরে চলে যায়!!!

ছাদে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে ফোন করে দিশাদকে!!!

দিশাদ–স্যার,,এখুনি আসছি!!

স্পর্শ ফোন কেটে দেয়!!!

২ মিনিট পর দিশাদ নিশানকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হয়!!

স্পর্শের সিগারেটে টান দিয়ে বলে–দিশাদ তুমি যাও!!

দিশাদ চলে যেতেই স্পর্শ নিশানের কাঁধে হাত রেখে বলে–সিগারেট খাবি নাকি??

নিশান নাক মুখ কুঁচকে ঘাম মুছে বলে–না,,,ভাইয়া!!

স্পর্শ এবার নিশানের কাঁধে রাখা হাতটা শক্ত করে ধরে বলে–ভাইয়া বলে ডাকলি রাইট??তাহলে ভাইয়ার বউ কে ভাবি বলে ডাকিস না কেন??

নিশান আমতা আমতা করে বলল–না মানে,, ও তো আমার অনেক ছোট!!!

স্পর্শ –সম্পর্কে তোর থেকে বড়!!তাই ভাবি বলবি আর তুমি না আপনি বলে সম্মোধন করবি!!আর মাথায় যেসব চিন্তা এনেছিলি তা ঝেড়ে ফেল!!!

নিশান ঢোক গিলে আর কোনো উত্তর দিলো না!!!

স্পর্শ এবার নিজের সিগারেটটা নিশানের হাতের কোণে চেপে ধরল,,,নিশান চিৎকার করার আগেই বলল–চুপ!!!ইচ্ছে করছে এই সিগারেট টা তোর চোখে চেপে ধরি!!যে চোখ দিয়ে নিদ্রিতার কোমড়ে নজর দিয়েছিস!!!এবারের মতো মাফ করলাম!!!পরের বার এমন কিছু করার চিন্তা করলে তোর লাশের ঠিকানা ও কেউ জানবে না!!!

বলেই স্পর্শ সিগারেট ফেলে পা দিয়ে পিষে চলে গেল!!!

নিশানের চোখ লাল হয়ে আছে!!!

নিশান স্বভাবত খুব নরম,,আঘাত সহ্য করতে পারে না ছোটবেলা থেকেই!!!বাবা-মা গায়ে কখনো আচড় ও কাটেনি!!!

আজ স্পর্শ তো সরাসরি তার হাত পুরিয়ে দিয়েছে!!! যথেষ্ট জ্বলছে জায়গাটা!!!

নিশান চোখ,মুখ শক্ত করে বলল–আমি নিদ্রিতাকে চাই

যাই হোক না কেন!!!!

তারপর নিশান লাথি মেরে কয়েকটা টব ভেঙে দেয়!!!

বিগত ৩৫ মিনিট যাবত স্পর্শ রেডি হয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,নিদ্রিতা এখনো আসছে না!!!৩ বার ডেকে পাঠিয়েছে ছায়া(মেইড)কে দিয়ে!!!

স্পর্শ ৪র্থ বারের জন্য ডাকার প্রস্তুতি নিতেই সদর দরজা দিয়ে কানের দুল ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসে নিদ্রিতা!!!

পরণে লাল,কালো শাড়ি,কানে ছোট্ট দুল আর হাতে ২ টো চিকন চুড়ি!!!

স্পর্শের কাছে এসে বলল–সরি!!খুব লেট হয়ে গিয়েছে!!

স্পর্শ নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে বলল–এখন আমি কি করে যাই বলো??

নিদ্রিতা ভ্রু কুচকে বলল–কেন কি সমস্যা??

স্পর্শ নিদ্রিতার একটু কাছে এসে বলে–এই যে তুমি এতো দারুণ করে সেজে এসেছো!!এখন তো আমার তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে!!!

নিদ্রিতা মুখ বাকিয়ে বলল–বাজে কথা সারাক্ষণ!!! চলো!!তারপর স্পর্শ আর নিদ্রিতা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে গেল!!!

স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মেইন গেইট ক্রস করে গেল!!!

তাদের এই সকল কাজ ওপরের ছাদ থেকে কেউ একজন খুব দৃঢ় ভাবে তাকিয়ে দেখছিল!!!

তারপর সে রেলিং শক্ত করে ধরে বলল—

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here