অভিমানে তুমি পর্ব ১৯+২০

#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৯ বোনাস♥️😊

নিদ্রিতা কথা গুলো ভেবেই আলমারি থেকে ফ্রক করে ওয়াশরুমে চলে গেল!!!
ফ্রেস হয়ে নিজেকে আয়নাতে দেখে নিল!!!
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে খুব ধীরে হাতের ক্যানোলা টা ও খুলে নিল তারপর চুল আঁচড়ে নিজেকে হালকা করে ঠিকঠাক করল!!!
নিদ্রিতা নিজেকে আয়নাতে দেখে মনে মনে বলল–এটাই হবে আমার শেষ চেষ্টা!!!এবার যদি তুমি না ফেরো তাহলে!!!
কথা শেষ করার আগেই দরজা খুলে নিজে নেমে গেল!!
সবাই একটু চা নাস্তা করছিল!!!নিদ্রিতাকে নামতে দেখে সবাই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল!!আরও অবাক হওয়ার কারণ নিদ্রিতা বুঝে নিল!!কারণ নিদ্রিতা সবসময় শাড়ি পড়ে থাকে!!স্পর্শের সামনে ছাড়া ফ্রক তেমন পড়া হয়নি তার!!!আর স্পর্শেরই বারণ ছিল!!
নিদ্রিতা নেমে সোফাতে বসে বলল–মা আমাকে চা দাও!!আর তোমাদের সাথে আমার কথা আছে!!
তামান্না দ্রুত নিজের চা এগিয়ে দিল!!
নিদ্রিতা চা এ চুমুক দিয়ে বলল–চাচ্চু আমি পড়তে চাই!!আসলে এতো ঝামেলার মাঝে সেকেন্ড ইয়ারের আর পরীক্ষা দেওয়াই হয়নি!!!তুমি কি আমাকে এখানকার একটা কলেজে ভর্তি করে দেবে???
অভ্র খুশি হয়ে বলল–অবশ্যই!!কালই যোগাযোগ করছি আমি!!
তারপর অবাক হয়ে বসে থাকা নিশান কে বলল–দেখো ভাইয়া বিয়ে আমি আর নিজের পরিবারের কাউকে করতে চাই না!!তোমাকে আমি সবসময় নিজের ভাই মনে করি!!তাই ভালো হবে এই সম্পর্কটা ধরে রাখা!!!যদি না পারো তাহলে বলবো আমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রেখো না!!!
নিশান আর নয়না হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!!
তারপর নিদ্রিতা বলল–চাচ্চু আজ আমাকে একটু কোলকাতা ঘুরিয়ে দেখাবে??আমি তো বাড়ির বাইরে তেমন কিছু দেখলামই না!!!
অভ্র –হ্যাঁ মা!! নিশ্চয়ই!! চল!!
নিদ্রিতা আর অভ্র বেরিয়ে গেল!!
বাড়ির সবাই একটু স্বস্তির শ্বাস নিলেও তাদের বুকে একঝাঁক ভয়!!!
নিদ্রিতা আর অভ্র একটা পার্কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে!!নিদ্রিতা অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল–একটা কথা জিজ্ঞেস করব চাচ্চু??
অভ্র–হুমম কর!!
নিদ্রিতা–জীবনটা বেশ কঠিন তাইনা??জীবন কখনো প্লানমাফিক কেনো চলে না??
অভ্র–এটাই জীবনের নীতি রে মা!!!সে নিজের মতোই চলবে!!!
নিদ্রিতা–হুম!!এই নিয়ম মানতে গিয়েই তোমার ছেলে লুকিয়েছে তাইনা??!!
অভ্র আমতা আমতা করে বলল–মানে??
নিদ্রিতা–কিছুনা!!চলো ফুচকা খাবো!!
নিদ্রিতা হেঁটে চলে গেলো ফুচকার স্টলে!!অভ্র রুমাল বের করে মুখ মুছে তারপর নিদ্রিতার পেছনে গেল!!!
নিদ্রিতা ফুচকা খাচ্ছে আর অভ্র এর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে!! অভ্রর কেনো জানিনা নিদ্রিতার চাহনি ভালো ঠেকছে না!!!
নিদ্রিতা একটা ফুচকা এগিয়ে দিয়ে বলল–একটা ফুচকা খাও,, এতো চিন্তা করো না!!
অভ্র আবারো ঘাবড়ে গেল!!!
নিদ্রিতা হালকা হেসে আবারো খাওয়া শুরু করল!!!
ঐ দিনের মতো বেশ ঘুরে নিদ্রিতা ফুরফুরে মনে বাড়ি ফিরল!!
সুইজারল্যান্ড,,,
আমার আজকেই কোলকাতা ফেরার ব্যবস্হা করো দিশাদ!!!
দিশাদ–ওকে স্যার!!বাট ম্যামের হেল্থ কন্ডিশন তো বেশ খারাপ!!!
লোকটি–বাকি ট্রিটমেন্ট কোলকাতা গিয়ে হবে!!!
দিশাদ–ওকে স্যার!!!
দিশাদ চলে গেল!!!
আজ রাতেই তাদের কোলকাতা রওনা হতে হবে!!!
২ দিন পার হয়,,
নিদ্রিতা এখনো স্পর্শের কোনো উপস্থিতি টের পায় নি!!তবে সে জানে স্পর্শ তার গতিবিধি নজরে রাখছে!!
নিদ্রিতা আজ কালো একটা হালকা শাড়ি পড়েছে!!নিশান এখন চেষ্টাতে আছে নিদ্রিতার সাথে কথা বলার!!নিদ্রিতা ছাদের গাছে পানি দিচ্ছে!!! নিশান গিয়ে নিদ্রিতার পেছনে দাঁড়িয়ে কাশি দেয়!!!
নিদ্রিতা ঘুরে হাসি মুখে বলে–আরে নিশান ভাইয়া,,এই বিকেলে এলে যে,,
নিশান হালকা হেসে বলল–তোমার সাথে গল্প করতে এলাম!!!
নিদ্রিতা–হুমম।।তা করাই যায়।।
নিশান–পরশু থেকে তো কলেজ যেতে হবে!!
নিদ্রিতা–কথা তো সেরকমই!!
নিশান–ভিক্টোরিয়া এখানকার খুব ভালো কলেজ!!!
নিদ্রিতা–ও আচ্ছা!!!
নিশান–একদিন চলো তোমাকে কোলকাতা ঘুরিয়ে দেখাই!!অনেক কিছু আছে!!
নিদ্রিতা–পরশু কলেজ শেষ করেই যাওয়া যায়!!
নিশান–তা বেশ!!আমি পৌঁছে তোমাকে পিক করে নিবো!!
নিদ্রিতা–তবে আমাকে কিন্তুু গড়ের মাঠের রঙিন গোলা খাওয়াতে হবে!!
নিশান–ওহহ!!!অবশ্যই(হেসে)
নিদ্রিতাও হেসে ওঠে!!!
আচমকা একটা গুলি এসে নিশানের পায়ের কাছরের ফুলের টবে লাগে!!
ফুলের টবটা ভেঙে চৌচির হয়ে যায়!!!নিশান ভয়ে সরে আসলেও নিদ্রিতা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে!!!
নিশান আরেকটু এগিয়ে এসে নিদ্রিতার হাত ধরে বলল–নিচে চলো!!
নিদ্রিতা হেসে বলল–ভয় পেও না!!বসো!!
নিশান ঢোক গিলে চেয়ারে বসে পড়লো!!আর নিদ্রিতা বসে মাটিতে ছড়িয়ে পড়া ভাঙা টব পরিষ্কার করতে লাগল!!!নিশানের দৃষ্টি নিদ্রিতার দিকে আবদ্ধ!!!
নিশান এক দৃষ্টিতে কাজে ব্যস্ত নিদ্রিতার শাড়ির ফাকে বেরিয়ে থাকা ধবধবে ফর্সা কোমড়ের দিকে তাকিয়ে আছে!!!
ঘোরে থাকা নিশানের ঠিক সোজা বরাবর ঝুলন্ত টবে আরো একটা গুলি এসে টবটা শিকল খুলে নিচে পড় যায়!!!
নিশান এবার আরো ভয় পেয়ে যায়!!!
নিদ্রিতা নিশানকে ঘামতে দেখে বলে–তুমি নিচে যাও!!আমি কাজ শেষ করে আসছি!!!
নিশান ভয়ার্ত কন্ঠে বলল–কিন্তুু তুমি!!!
নিদ্রিতা কাজ করতে করতে বলল–তুমি যাও!!আমি পরে আসবো!!
নিশান ভয়ে দ্রুত নেমে গেল!!
নিদ্রিতা সব পরিষ্কার করতে করতে হেসে দিল!!তারপর বলল–সামন্য টবে গুলি লাগাতে এতো ঘামছে!!!আর এই বুকভরা সাহস নিয়ে এসেছিলো আমায় বিয়ে করতে!!!
নিদ্রিতা টব গুলো পরিষ্কার করে নিচে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নেয়!!!
সন্ধ্যাবেলা ঝুম বৃষ্টি নামল!!নিদ্রিতা চা খেয়ে বসে টিভি দেখতে লাগল আর নিশানের সাথে টুকটাক গল্প করছে!!!
একবারে রাতের খাবার শেষ করে নিদ্রিতা নিজের ঘরের দিকে এলো!!ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার!!! রাস্তার সোডিয়ামের আলোটাও আজ জ্বলছে না!!!নিদ্রিতা ঘরে এসে দরজাটা ভালো করে আটকে দিল!!!তারপর নিদ্রিতা আলো জ্বালানোর জন্য সুইচ এ চাপ দিতেই দেখল আলো জ্বলছে না!!আরো সুইচ চেপে বুঝল বাড়িতে কারেন্ট নেই!!
নিদ্রিতা হাতড়ে ফোন খোঁজার চেষ্টা করল কিন্তুু পাচ্ছে না!!
আচমকা কারো পায়ের আওয়াজে নিদ্রিতা চমকে উঠল!!!নিদ্রিতা কে জিজ্ঞেস করতেই কেউ একজন নিদ্রিতাকে টেনে দেয়ালে চেপে ধরল!!!ব্যাপারটা এতো দ্রুত হলো নিদ্রিতা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না!!!
নিদ্রিতা আবারো কে বলতেই লোকটি নিদ্রিতাকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে চেপে ধরল!!!
তারপর লোকটি নিদ্রিতার মুখে টেপ লাগিয়ে দিল!!!
নিদ্রিতা বারবার চেষ্টা করেও নড়াচড়া করতে পারছে না!!লোকটি নিদ্রিতার ব্লাউজের ফিতা টেনে ছিড়ে দিল!!
তারপর একসাইড দিয়ে ব্লাউজ ছিড়ে ফেলল!!
নিদ্রিতা উমম উমম আওয়াজ করছে!!!
লোকটি এবার নিদ্রিতার ব্লাউজের ছেড়া অংশ কাঁধ থেকে নামিয়ে নিজের দাঁত বসিয়ে দিল!!!
পরপর ৭/৮ টা কামড় দেওয়ার পর লোকটি শান্ত হলো একটু!!!ওদিকে নিদ্রিতা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে!!! এবার নিদ্রিতা সুযোগ বুঝে লোকটির থেকে হাত ছাড়িয়ে ধাক্কা দিল লোকটিকে!!লোকটি একটু পিছিয়ে যেতেই নিদ্রিতা ঘুরে মুখের টেপ খুলে লোকটিকে সজোরে এক থাপ্পড় দেয়!!আর হাঁপাতে থাকে!!!
তারপর লোকটি ফোনের ফ্লাস জ্বেলে টেবিলের উপর রাখতেই ঘরটা বেশ আলোকিত হলো!!!
নিদ্রিতার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে লোকটি ধীর কন্ঠে বলল–নিদুু!!!
নিদ্রিতা শক্ত চোখ মুখে লোকটির দিকে তাকাল!!
তারপর কাঠ কাঠ গলাতে বলল–স্পর্শ আহমেদ।।
স্পর্শ এগিয়ে গিয়ে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল!!নিদ্রিতা না ধরে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে আস্তে করে স্পর্শকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল–তা আপনি এসময় এখানে???
স্পর্শ –রেগে আছো নিদু??
নিদ্রিতা হেসে বলল–রাগবো কেন!!!কার ওপর রাগবো??আপনার সাথে কি কোনো সম্পর্ক আছে আমার!!!না আমার জন্য আপনার মনে কোনো চিন্তা আছে!!!
স্পর্শ এবার এগিয়ে এসে বলল–নিদু,ট্রাস্ট মি আমি ইচ্ছে করে গা ঢাকা দেই নি!!সেদিন কি হয়েছিলো তুমি জানো না!!!
নিদ্রিতা–আর জানতেও চাচ্ছি না!!আসতে পারেন এখন!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল তারপর বলল–আমার কথা গুলো শুনে তারপর ডিসাইড করো সবটা প্লিজ!!!
নিদ্রিতা–আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না!!শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি!!!
স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে!!নিদ্রিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে
বলে–চলে যাওয়ার আগে বিদ্যুতের মেইন সুইচ অন করে দিয়ে যাবেন!!
বলে নিদ্রিতা ওয়াশরুমে চলে গেল!!!
স্পর্শ ভালোভাবেই বুঝল যে নিদ্রিতা রেগে গিয়েছে!!
কিন্তুু সে যে নিজেও খুব বাজে ভাবে ফেসে গিয়েছিল!!! এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুরত্বে যে তার হাত নেই তা কিভাবে বোঝাবে এখন নিদ্রিতাকে সে!!!!
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২০

হাতে ক্যানোলা লাগানো অবস্থায় বিছানাতে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে নাশিতা!!!

মাথাটা নিচু করে রেখেছে!!!একটু দুরত্ব রেখে বসে আছে স্পর্শ!!! দৃষ্টি কঠোরভাবে নাশিতার ওপর নিক্ষেপ করে চিল্লিয়ে বলল—একাকিত্ব আর একাকিত্ব!!! একা মনে হয়েছিল বলে পরকিয়া করলেন!!!নিজের সংসার ছেড়ে চলে গেলেন???সন্তানের পিতৃ পরিচয় বদলে দিলেন!!!বাহ!!!

নাশিতা চুপ করে আছে!!!

স্পর্শ একটু থেমে আবারও বলল–আর আপনার একাকিত্ব ছিল বাবাকে বলতেই পারতেন!!!তা না করে পরকিয়া!!! আপনার জন্যই আজ এত ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে!!! পরিবারের ভাঙনের পেছনের পরোক্ষ হাতটাও আপনারই!!!প্রত্যক মানুষ দিন শেষে একা!!হুমম বাবা আপনাকে টাইম দিতে পারত না কাজের জন্য!! আমি মানছি!!বাড়ি ভর্তি লোক ছিল আপনার কথা বলার জন্য!! নাকি আপনি চাইতেন চাকরি বাকরি ছেড়ে বাবা আপনার পাশে বসে থাকুক!!

নাশিতা–না মানে!!!

স্পর্শ –কোনো বাহানা সাজাবেন না!!!দোষ সম্পূর্ণ আপনার!!! একাকিত্ব তো বাহানা মাত্র!!!যাই হোক রেডি হয়ে নিন!! বাড়ি যেতে হবে!!!

বাড়ির নাম শুনতেই নাশিতার বুক ধক করে উঠল।।২৭ বছর আগে বাড়িটা ছেড়ে এসেছে!!!কিভাবে দাঁড়াবে সবার সামনে গিয়ে!!! অভ্র কি ক্ষমা করবে তাকে!!!

স্পর্শের কথামতো ২ জন লেডি গার্ড এসে নাশিতাকে রেডি করিয়ে দিল!!

নাশিতাকে নিয়ে স্পর্শ রওনা হলো নিজের বাড়িতে!!!

২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল স্পর্শের ফ্লাটে!!!

বেল বাজাতেই নানু দরজা খুলে দিলেন!!!

নানু তো অবাক!!কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই স্পর্শ বলল–সবাইকে ডাক নানু!!!বাকি কথা তারপর হবে!!!

স্পর্শ গিয়ে সোফাতে বসল!!!

নাশিতাকে তার মা আর তামান্না ধরে কান্না করছেন!!!

ইতিমধ্যে নিদ্রিতা সিড়ি দিয়ে নেমে আসলো!!!

নিদ্রিতাকে দেখেই স্পর্শের মাথা গরম হয়ে গেল!!!কারণ নিদ্রিতা একটা ফ্রক পড়ে আছে!!!কিন্তুু পরিস্থিতি র দরুণ,,

কিন্তুু স্পর্শ আর কিছু বলল না!!!নিদ্রিতা এসে সোফার কোণে দাঁড়াল!!

তামান্না নাশিতাকে ধরে সোফাতে বসিয়ে দিল!!!

অভ্র ও এসে বসল স্পর্শের পাশে!!ধীরে ধীরে প্রায় সবাই খবর পেয়ে ড্রইং রুমে উপস্হিত হলো!!!

নানু–স্পর্শ আমাকে একটু খুলে বলোতো সবটা!!!তুমি কোথায় ছিলে ১মাস!!!আর সায়ানের কি হলো???

স্পর্শ –সায়ান আমার আন্ডারে আছে!! মরেনি তবে মরবে!!!

নানু–মানে??আর ১ মাস তুমি কোথায় ছিলে??নিদ্রিতা নানুদিদিকে কেন এমন করে কষ্ট দিলে??

স্পর্শ একটা শ্বাস নিয়ে বলল–আমি ইচ্ছে করে করিনি নানু!!!ওই দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি একজন ল ইয়ারের কাছে গিয়েছিলাম আমার আর নিদুর বিয়ে রেজিস্ট্রার করতে!!ওখানে কথা বলে বেরিয়ে কিছুদূর আসার পর আচমকা গাড়ি খারাপ হয়ে যায়!!রাস্তাটা বেশ ফাকা ছিল!!হঠ্যাৎই পেছন থেকে কেউ মাথায় বেশ জোড়ে আঘাত করে!!তারপর আর কিছু মনে নেই!!!যখন চোখ খুলি নিজেকে একটা কাঁচের রুমে আবিষ্কার করি!!কিছুক্ষণ পর সায়ান এসে উপস্থিত হয়!!ঘন্টাখানেক রড দিয়ে বেদরক মারলো!এভাবেই প্রায় রোজই এসে মারত!!!তারপর চলে যায়!!ওখানকার গার্ডদের কথা শুনে বুঝলাম যে আমি সুইজারল্যান্ডে আছি!!তাতেই সন্দেহ হলো মিসেস নাশিতাও এখানেই আছে!!খুব কৌশলে একজন গার্ডের ফোন নিয়ে দিশাদকে ফোন করি!!তারপর দিশাদ এসে আমাকে বাঁচায়!!মায়ের খোঁজ নিয়ে সায়ানকে জিম্মি করে ২ দিনের মধ্যেই কোলকাতা ফিরেছি!!তাহলে বলো কিভাবে আমি নিদ্রিতার সাথে যোগাযোগ করব!!

সবটা শুনে সবাই হতবাক!!স্পর্শকে দোষ দিবে কিভাবে!!!সে নিজে কতোটা কষ্ট পেয়েছে!!!

নিদ্রিতা ও হতবাক!!

হঠ্যাৎ তামান্না চিৎকার করে স্পর্শের কলার ধরে বলল–তোর জন্য প্রত্যক বার আমার মেয়ে কষ্ট পায়!! ওর যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে কি হতো!!বল কৈফিয়ত দে!!

স্পর্শ হালকা হেসে তামান্নার হাত ধরে বলল–তোমার মেয়ে আমার স্ত্রী,, তাকে কষ্ট দিয়েছি বলে তুমি কৈফিয়ত চাইছো!!আর তুমি যে আমার ২.৫ মাসের সন্তানকে নিদ্রিতার গর্ভেই মেরেছো তার কৈফিয়ত টা কি তুমি দিবে???

তামান্না চোখ বড়বড় করে স্পর্শের কাছ থেকে সরে আসে!!! নিদ্রিতাও হতবাকের মতো তাকিয়ে আছে!! তার সন্তানকে তার মা মেরেছে তা সে কল্পনাই করতে পারছে না!!!

স্পর্শ আবারো বলতে শুরু করল–তোমার কি মনে হয় গত ৩ মাস আমি নিদ্রিতার থেকে দূরে ছিলাম বলে আমি তার কোনো খবরই রাখিনি!!তুমি আমার অনাগত সন্তানকে মেরেছো!!জানি আমি!!এবার তুমি তার কারণটা বলো!!!

তামান্না কাঁদতে কাঁদতে বসে বলল–নিদ্রিতা প্রেগনেন্ট শুনে আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম!!তারপর যখন জানলাম স্পর্শ নিদ্রিতার সাথে যোগাযোগ করছে না তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!!তাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিদুর অজান্তেই নিদুকে ওষুধ দেওয়া শুরু করি!!২.৫ মাসেই ব্লিডিং হয়ে বাচ্চাটা মারা যায়!!! নানু বলে-তুই মানুষ তামান্না??কিভাবে পারলি??হায় খোদা!!!!

বসার ঘরে থাকা সবাই নিস্তব্ধ!!!

স্পর্শ –চিন্তা করো না নানু!!সব ঠিক হবে এখন থেকে!!!শয়তান ২ টো আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আমাদের!!!

নিদ্রিতা এবার পড়ে যেতে নিলে নানু ধরে বসে!!!

নিদ্রিতা হা করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে!!

স্পর্শ নিদ্রিতার সামনে এসে হাত ধরে বলল–ট্রাস্ট মি নিদু,, এটা আমি আগেই জানতাম,, কিন্তুু কাউকে বলিনি,, কারণ আমার মনে হয়েছিল যে আমার অনুপস্থিতির কারণেই এটা হয়েছে,,, আমাদের বাবুর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী!!

নিদ্রিতা আচমকা সেন্সলেস হয়ে যায়!! স্পর্শ দ্রুত নিদ্রিতাকে ধরে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল!!!

বাকিরাও ধীরে ধীরে চলে গেল!!

নাশিতাকে ধরে নিয়ে তামান্না নিজের ঘরে নিয়ে গেল!!স্পর্শ ঘরে গিয়ে নিদ্রিতাকে শুইয়ে দিল।।তারপর ডাক্তারকে ফোন দিয়ে নিদ্রিতার কাছে এসে নিদ্রিতার হাত ধরে হাতের তলপিটে চুমু দিল!!!

তারপর বলল–তোমার কি মনে হয় আমার পক্ষে সম্ভব তোমার থেকে দূরে থাকা???!!সায়ানের মারের ব্যাথা লাগেনি!!!তোমার থেকে দুরত্বের ব্যাথা বেশি পেয়েছি!!!

ডাক্তার এসে চেকাপ করে জানায় নিদ্রিতা বেশ দুর্বল!!প্রপার যত্ন দরকার!!!

ডাক্তার দেখে যাওয়ার পর স্পর্শ নিদ্রিতাকে চেন্জ করিয়ে শাড়ি পরিয়ে দেয় তারপর নিজে যায় ফ্রেস হতে!!!

ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখে অভ্র বসে আছে!!!

স্পর্শ দ্রুত এসে অভ্র কে জড়িয়ে ধরে!!

অভ্র–খুব কষ্ট পেয়েছিস না রে??

স্পর্শ –নাহ!!তেমন না!!!

অভ্র–তুই খবর দেওয়ার পর নিজেকে কেমন পাগল মনে হচ্ছিল!!!

স্পর্শ –তোমার হেল্পের জন্যই আজ নিদ্রিতা সুস্থ আছে!!!

অভ্র–একবার বাবা বলে ডাকবি!!!যেমন গতদিন ফোনে ডেকেছিলি!!

স্পর্শ –আরে এখন থেকে তো সবসময় বাবা ই বলে ডাকবো!!

তারপর দুজনেই হেসে ওঠে!!!

স্পর্শ এবার অভ্র কে বলে–তুমি এবার রেস্ট করো!!আমিও একটু রেস্ট নি!!

অভ্র–হুমম!!কাল কিন্তুু ডাক্তার দেখাতে হবে!!আমি আমার ডাক্তার বন্ধুকে খবর দিয়েছি!!!

স্পর্শ –আচ্ছা!!

অভ্র বেরিয়ে যেতেই স্পর্শ দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে নিদ্রিতার পাশে এসে শুয়ে পড়ে!!!

অন্যদিকে,,,

অভ্র বারান্দাতে দাঁড়িয়ে আছে!!পেছনের চেয়ারে ঠেস দিয়ে নাশিতা বসে আছে!!

বাইরে কেবল মাত্র গোধূলির ছোঁয়া লেগেছে সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি!!!নীরবতা খন্ডন করে নাশিতা বলল–আমি জানি তুমি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না!!আর আমার করা ভুলের ক্ষমা ও হয় না!!

অভ্র হালকা হেসে বলে–ক্ষমা বড়ো অদ্ভুত জানো নাশিতা!!!তোমাকে ক্ষমা না করলেও আমি কি আমার হারিয়ে ফেলা মুহুর্ত গুলো ফিরে পাবো!!!কখনোই না!!আমার সন্তানের ১ম মুখ,কথা সবই হারিয়েছি আমি!!!আর ক্ষমার মালিক আল্লাহ!! তিনি জঘন্যতম গুনাহ ক্ষমা করে দেন!!আমি তো তারই বান্দা!!!তোমার ওপর কোনো অভিযোগ নেই কারণ দোষ আমারও!!!আমি যদি তোমাকে সময় দিতাম,বুঝতাম তাহলে আজ আমরা আলাদা থাকতাম না!!!

নাশিতা চোখের পানি মুছে বলে–তোমার কোনো দোষ নেই!!!

অভ্র–তবে আজ আমি খুশি কারণ স্পর্শ আমায় বলেছে এখন থেকে আমাকে বাবা বলে ডাকবে!!

নাশিতা –আমি জানি না সে আমায় মাফ করবে কিনা!!!

অভ্র–নিজের ঘরে গিয়ে রেস্ট করো!!

নাশিতা–আমার ঘর কোনটা অভ্র??

অভ্র–দেখো,,এতো বছর পেরিয়ে আমার মনে হয় না আমাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব!!!তবুও বাচ্চাদের তাগিদে একই ছাদের নিচে থাকতেই হবে!!তাই আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি!!!

নাশিতা চোখের পানি ফেলে বলে–তুমি কি আমায় ভালোবাসো না আর অভ্র??

অভ্র হালকা হেসে বলে–অবশ্যই বাসি!!!ভীষণ ভালোবাসি!!তবে সে ভালোবাসাতে আজ আর সাথে থাকার আকাঙ্খা নেই!!!

বলেই অভ্র চলে যায়!!!নাশিতা কাঁদতে থাকে!!!!অভ্র কান্নার আওয়াজ শুনেও ফিরে আসে না কারণ নাশিতার এই কান্নাটার প্রয়োজন ভীষণ প্রয়োজন!!!!

অন্যদিকে,,

সেন্স ফেরার পর নিদ্রিতা বারান্দার কাচের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!!চোখটা বাইরে স্হির!!!চোখের কোণে জল!!!!

স্পর্শ ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে হাতড়িয়ে নিদ্রিতার জায়গা ফাকা দেখে ধরফর করে উঠে আফছা আলোতে দেখে নিদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে!!!

স্পর্শ এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে—-

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here