অশ্রুমালা পর্ব ১৭+১৮

#অশ্রুমালা
part–17
#Arishan_Nur(ছদ্মনাম)

অথৈ আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে নিল। হালকা বেগুনি রঙের একটা সুতির কাজ করা সালোয়ার কামিজ। এক রঙের একটা ওড়না গায়ে জড়িয়েছে সে। চুল গুলো খেজুর বেণি করা। কপালের সামনে কিছু চুল এসে পড়েছে। চোখে চিকন করে কাজল দেওয়া আর ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক। একদম ফর্মালভাবেই সেজেছে। ইন্টারভিউয়ে এভাবেই যেতে হয়। সে আবারো নিজেকে দেখে নিল সব ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য। নিজের মধ্যে কোন খুঁত পেল না অথৈ৷

অথৈ খুব নার্ভাস। সে খুব করে চাচ্ছে যে এই চাকরি টা যেন তার হয়ে যায়। একটা জবের খুব দরকার তার এই মূহুর্তে। অর্থের জন্য না বরং নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য হলেও এই জব দরকার তার।

কিন্তু অথৈয়ের রেজাল্ট ফাইনাল সেমিস্টারে খারাপ ছিল জন্য সিজিপিএ তেও গড়ে কিছু পয়েন্ট কমে গেছে তাই এখন জব সেক্টরে বেশ নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে। এক বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে সে। কিন্তু ফল পাচ্ছে না। একে তো প্রাইভেট ফার্মে লিংক বেশি দরকার পড়ে যেটা তার নেই। তার কোন মামা-চাচা নাই। তার বাবা দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকরি পাইয়ে দিবেন না৷ অথৈ ছোট করে একটা নিশ্বাস ফেলল। সব দোষ ওই মেঘের৷ ওর জন্যই অথৈয়ের রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল। এমনি ইডেন আন্ডাররেটেড ভার্সিটি তার উপর সিজিপিএ কম! কিন্তু জবটা তার খুব দরকার

অথৈ রুম থেকে বের হলো। সাড়ে নয়টা বাজে।

অথৈকে দেখে তার মা বলল, নাস্তা করে নে।

অথৈ চুপচাপ বসে পড়ে এবং মিনমিন সুরে বলে, বাবা অফিস গিয়েছেন?

–হ্যা। কিছুক্ষন আগেই বের হলো। শোন?

–হু?

–তোর বাবা কিন্তু একটু রেগে আছে তোর উপর।

অথৈ সহজ গলায় বলে, কেন?

তার মা চা খেতে খেতে উত্তর দেয়,কালকে রাতে তুই বাসায় ছিলি না। আমরা কিন্তু ওই ধরনের পরিবার না। যে মেয়ে বাইরে থাকলেও সমস্যা নাই। তোর বাবা এজন্য রেগে আছে। বুঝে-শুনে চলিস একয়েকদিন।

–আচ্ছা।

অথৈ তার বাবা-মাকে বলেছিল যে সে নেহার বাসায় ছিল। তার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে তার মা-বাবা। সে নাস্তা করে রওনা দিতে গেলে তার মা বলে উঠে, শোন, কালকে তোকে ফোনে না পেয়ে ফয়সাল তোর বাবাকে কল করেছিল। তোর বাবা আর ফয়সালের মধ্যে কথা হলো। ফয়সাল দ্রুত বিয়ে করে নিতে চাচ্ছে। ওর নাকি প্রোমোশন হয়েছে৷

মুহুর্তের মধ্যে অথৈয়ের চেহারা কালো হয়ে গেল। চারপাশ অন্ধকার দেখতে লাগে সে। চোখ দুটো টলমল করে উঠল।

অথৈ টলমল চোখ নিয়েই যাত্রাপথে পা বাড়ালো।

★★★

আবেগের কাছে কোন জবাব না পেয়ে রোদেলার চোখ ছলছল করে উঠে। চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে যায়।

সেটা দেখে আবেগ বিড়বিড় করে বলে, ইচ্ছা করে কাদো তাই না? খুব ভালো করেই জানো কাউকে কাদতে দেখলে আমি আত্মসমর্পন করে নিই। নাইস ট্রিক।

রোদেলা নাক টেনে বলে, এতোই যদি ভালোবাসো নেহা কে তাহলে ওর কাছেই যাও না। আমার আর সমুদ্রের সাথে থাকতে হবে না। আমাদের দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে বোঝা বাড়াতে হবে না।

আবেগ ফস করে বলে দেয়, তোমার একটা গতি করে দিই তারপর পরেরটা পরে দেখা যাবে।

কথাটা আস্তে বললেও রোদেলার কানে পৌছায়। রোদেলা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। কিসের গতি করে দিতে চায় আবেগ? এই কথা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে আবেগ?

রোদেলা তেজ গলায় বলে, কিসের গতি করে দিবে তুমি?

আবেগ কিছু বললো না।

রোদেলা কান্না চাপিয়ে রেখে বলে, বাক্য টা শেষ কর।

আবেগ নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে, বাক্যটা এখানেই শেষ।

–পরেরটা কি হবে সেটা জানতে চাচ্ছি আমি আবেগ।

–বললাম তো পরের টা পরে দেখা যাবে। ভবিষ্যত নিয়ে কিভাবে মন্তব্য দিব? আমি কি জোতিষ্ক নাকি?

রোদেলা দাতে দাত চেপে বলে, পরে আর কি করবে তুমি? আমার গতি করে দিয়ে নেহার কাছে ব্যাক করবে?

আবেগের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো
এমনি সে যথেষ্ট শান্ত স্বভাবের। সহজেই রেগে যাওয়া তার স্বভাব না। কিন্তু এই মূহুর্তে তার খুব রাগ লাগছে । প্রচন্ড রাগ যাকে বলে।আবেগ যখন রেগে উঠতে শুরু করে তখন তার কপালের রগ ফুলে উঠে। আজকেও তার কপালের রগ ফুলে উঠতে শুরু করেছে।

এই মিস্টি রোদটাকেও তার অসহ্য লাগছে সেই সাথে রোদেলাকে অসহ্য লাগছে শুধু রোদেলা না। এই মূহুর্তে পৃথিবীর সব কিছুই তার কাছে জাস্ট অসহ্য লাগতে শুরু করেছে।

রোদেলা আবারো কিছুটা চেচিয়ে উঠে বলে, মুখ দিয়ে কোন কথা কেন বের হচ্ছে না তোমার? তুমি কিন্তু ভেজা বিড়াল না।

আবেগ বিড়বিড় করে, আশ্চর্য আমি বিড়াল কেন হতে যাব?

রোদেলা আরো কিছু বলছে কিন্তু সেগুলো আবেগ তার কানে নিল না। এই মূহুর্তে তার আরেকটা ভয়ংকর কাজ করে বসতে মন চাচ্ছে তা হলো রোদেলাকে ঠাস করে একটা চড় মারা। এই কোলাহলপূর্ণ রাস্তায় কোন মেয়ে তার স্বামীর সাথে এরুপ আচরণ কিভাবে করতে পারে?

আবেগের মুখ, চোখ লাল হতে লাগলো। সে সামনে তাকিয়ে দেখে রিকশাওয়ালা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রিকশা মাঝরাস্তায় থামা।

সে কিছুটা ধমক দিয়ে বলে, রিকশা থামায় রাখছেন কেন? আগান।

রিকশাওয়ালা রিকশা যেই না আগাবে রোদেলা চিৎকার দিয়ে বলে উঠে, খবরদার রিকশা আগাবেন না।

আবেগ অবাক হয়ে রোদেলার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, তোমার আবার কি হলো?

রোদেলা দরদর করে ঘামছে। সে রিকশাওয়ালা কে উদ্দেশ্য করে বলে, আমি এই লোকের সাথে যাব না। আপনি রিকশা সাইড করেন আমি নামব।

আবেগ আশেপাশে তাকিয়ে বলে, কোন লোকের সাথে যাবা না তুমি? কার কথা বলছো তুমি? আমি তো কিছুতেই বুঝতে পারছি না তোমার কথা!

রোদেলা বলল, তোমার সাথে যাব না আমি৷

আবেগ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে, আমি লোক?

রিকশাওয়ালা দাত বের করে হেসে দিয়ে বলে, তো ভাইজান আপনি কি মাইয়া লোক নাকি?

আবেগ কড়া চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রোদেলা নেমে গেল অগত্যা আবেগ ও নামলো এবং রিকশাওয়ালার কছে টাকা ধরিয়ে দিয়ে সামনে পা বাড়ালো।

রোদেলা জোড়ে জোড়ে হাটছে। এতে একটু ব্যথা লাগছে তার কিন্তু সে পরোয়া না করে হেটেই যাচ্ছে। থাকবে না আর আবেগের সাথে। সমুদ্র কে নিয়ে আজকেই বাবার কাছে চলে যাবে।

আবেগ রোদেলার পিছনে পিছনে আগাতে লাগলো। কি একটা অবস্থা! এভাবে কোন দিন কারো পেছনে রাস্তায় দৌড়ানি খাওয়া লাগে নি।

সে রোদেলার কাছাকাছি গিয়ে, উপায় না পেয়ে রোদেলার হাত ধরে ফেলে। হাত ধরার ইচ্ছা মোটেও ছিল না আবেগের।

রোদেলা থমকে যায়। তার কেমন যেন লাগতে শুরু করে। সে পেছনে ঘুরে তাকায় না কিন্তু দাড়িয়ে যায়। আসলে রোদেলা হাটার শক্তিটুকু আর পাচ্ছে না।

আবেগ নিজে রোদেলার সামনে গিয়ে মুখোমুখি দাড়ালো।

রোদেলা মুখ ফিরিয়ে নিল। যদি আবেগ তার গতি করে দিয়েই চলে যেতে চায়। মুক্তি দিতে চায়। তাহলে শুধু শুধু মায়া বাড়ানোর দরকার কি?

রোদেলার চোখ ভরে উঠতে লাগলো। সে চোখের পানি লুকানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো।

আবেগের চোখ তা সবার আগে ধরে ফেলে। কিন্তু সে কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।তখনো আবেগ রোদেলার হাত ধরেই রেখেছে। হাত ছেড়ে দিলে যদি ছুট লাগায়!

রোদেলা নিজ থেকেই বলে উঠে, শুধু শুধু ঢং করার কোন মানে নেই আবেগ। আমার হাত ছাড়ো। আমি আজকেই গ্রামে যাব।

আবেগ হাতের বাধনটা আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে, আচ্ছা যাও। সমস্যা নাই৷

আবেগের কাছ থেকে মোটেও এমনটা আশা করেনি রোদেলা। কতো সহজে বলে দিল চলে যাও! বাহ! চমৎকার! মনে মনে বলে উঠে সে৷

আবেগ মুখ খুলল এবং বলে, টিকিট কেটে আনব? নাইট কোচ নাকি সকালে রওনা দিবে?

–এখুনি রওনা দিব। (কটমট করে)

–এখন কোন বাস নাই। হয় রাতে নাহয় কালকে যেতে হবে।

রোদেলা আবেগের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা এমন কেন? কেন তাকে একবারো বুঝল না? সবসময় দূরে ঠেলে দেয়।

রোদেলার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব তখনি আবেগ রোদেলার চোখের পানি মুছে দিল এবং বলল, কান্না করা কোন সমাধান না।

রোদেলা দাতে দাত চেপে কান্না দমিয়ে রেখে বলে, যদি আমাকে ছুড়ে ফেলে দিতেই চাও তাহলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল?

আবেগ নির্বিকার ভাবে উত্তর দেয়, ছুড়ে ফেলতে চাই নি তো। দূরে যেতে দিতেও চাই না।তুমি নিজেই যেতে চাও। সব তোমার ইচ্ছাতেই হয়।

রোদেলা একথায় চমকে উঠে বলে, মানে?

–মানে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নাই।

এবার রোদেলা আবেগের শার্টের কলার ধরে বলে, যদি আমাকে তোমার জীবনে না ই চাও তবে আজকে সকালে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ কেন একেছিলে?

একথা টা আবেগের কানে যেতেই সে শক খেল৷ তার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিলো যে রোদেলা ওই সময় জেগে ছিল। ইশ কেন যে এই কান্ড ঘটাতে গেল? এখন কি জবাব দিবে সে?

আবেগের চোখ-মুখে লজ্জার লাল আভা ফুটে উঠল।

তা দেখে রোদেলার কেন যেন এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশেও হাসি পেয়ে গেল কিন্তু রোদেলা কান্নার মতো হাসি চাপিয়ে বলে, এখন মেয়েদের মতো লজ্জা কেন পাচ্ছো? বল কেন চুমু দিয়েছিলে?

আবেগ অতি দ্রুত উত্তর দিল, ভুলে দিয়ে দিয়েছিলাম।

রোদেলা ভ্রু কুচকে বলে, ভুলে কিভাবে কেউ কাউকে চুমু দেয়? এই ফাস্ট শুনলাম?

–আ,,সমুদ্র মনে করে দিয়ে দিয়েছি।

–হুয়াট!

–হুম।

রোদেলা একথা শুনে শব্দ করে হেসে দিল।

রোদেলার রিনরিনে হাসির শব্দে মাতোয়ারা হতে লাগলো আবেগ। বিমুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে সে রোদেলার দিকে।

সূর্যের সুমিস্টি রোদও যেন রোদেলার হাসির মায়ায় তলিয়ে যাচ্ছে সাথে আবেগকেও তাদের সঙ্গী বানানোর প্র‍য়াস করছে। এতোক্ষনে বাগে পাচ্ছিলো না কিন্তু এবার আবেগও সম্পূর্ণ রুপে রোদেলাতে মগ্ন হলো।

রোদেলা হাসি থামালো। সে দেখল আবেগ তার দিকে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

রোদেলা আবেগের কাছে গিয়ে তার কিছু টা কাছে এসে ফিসফিস করে বলে, তুমি কি আমায় ভালোবেসে ফেলেছে আবেগ? ডিড ইউ ফল ইন লাভ উইথ মি?

আবেগের কেন যেন উত্তরে হ্যা বলতে মন চাইলো। কিন্তু আবেগ সহজেই মনের কথা শুনে না। নাম আবেগ হলে কি হবে? কাজ সে বিবেকের কথা শুনেই করে। তাই তো নিশ্চুপ থাকে।

সূর্য হেলে পড়ছে। রোদ কমতে লাগে সেই সাথে সদ্য উদয় হওয়া রোদেলার প্রতি মুগ্ধতা ও কমে যেতে লাগলো।

★★★

ইভানা তার ফ্রেন্ডের বাসায় বসে বসে ফুলকপির বড়া খাচ্ছে৷ শীত মৌসুমে তার ভাজাপোড়া খেতে দারুন লাগে। তার বান্ধবী সমুদ্র কে কোলে নিয়ে খেলছে৷

ইভানা খাওয়া শেষ করে বলে, যাই রে এখন।

–আরেকটু থাক না। তোকে বললাম না ছোটদা বাচ্চা খুব পছন্দ করে। ও এখুনি চলে আসবে।

ইভানা আরো একটা ফুলকপির বড়া মুখে পুরে নিয়ে বলে, তোরা দুই ভাই-বোন তো দেখি টুরু বাচ্চা লাভার!

শায়েরী সমুদ্র কে কোলে নিয়ে ওর হাত দুটো নিয়ে খেলছে আর ইভানার সাথে কথা বলছিল। সে একথা শুনে হেসে দিল এবং বলল, ছোটদা আমার চেয়ে বেশি পছন্দ করে বেবিদের।

ইভানা খাবার চাবাতে চাবাতে বলে, তাহলে তো তোর ভাইয়ের বউয়ের কোন সমস্যা নাই। তোর ভাই বাচ্চা পালবে আর তোর ভাবী পায়ের উপর পা তুলে ফোন চালাবে৷

ঠিক তখনি বেল বাজালো। শায়েরী বেলের শব্দ শুনে সমুদ্রের সামনে মুখ এনে বলে, কে এসেছে বাসায়? হু? কে এসেছে?

সমুদ্র খিলখিল করে হাসছে৷

ইভানা তা দেখে বলে, এতো হাসি বাপরে বাপ! বাসায় কিন্তু এতো হাসে না ও।

শায়েরী উঠে দাড়ালো এবং গেট খুলতে গেল সমুদ্র কে কোলে নিয়েই।

রুমের বাহির থেকে কন্ঠস্বর পেতে লাগল ইভানা। পুরুষ কন্ঠস্বর পাচ্ছে। এই ছেলেটাই কি শায়েরীর ছোটদা নাকি? যার সাথে সমুদ্র কে দেখা করাবে জন্য শায়েরী তাদের আটকে রেখেছে।
#অশ্রুমালা
part–18
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

আবেগের হাত টা এক ঝটলায় ছাড়িয়ে নেয় রোদেলা। এতে কেন যে আবেগ অপমানিত বোধ করে। এমনিতেই মেজাক চটে গিয়েছে তার। মাঝখানে ঠিক হতে ধরেছিল কিন্তু এখন আবার রাগ লাগছে।

আবেগ কিছু বলতে যাবে তখন ভ্যানওয়ালা লোকটা এসে বলে, আপনারা এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন? কোন সমস্যা?

আবেগ মাথা নাড়িয়ে বলে, সমস্যা নাই। হাতের বা দিক ধরে যান। কালো গেটটার সামনে থামবেন।

ভ্যানওয়ালা আচ্ছা বলে আগাতে লাগে ।

রোদেলা ও সামনে আগাতে ওমনি আবারো আবেগ তার হাত ধরে ফেলে। এবারো রোদেলার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়। সে থেমে যায়। পেছন হতেই আবেগ বলে উঠে, একা যাবে?

রোদেলা পেছনে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে, মানে?

আবগ নির্লিপ্ত গলায় বলে, সমুদ্র থাক আমার সাথে। ওকে শুধু শুধু কষ্ট দেওয়ার কি মানে? আমার বলা কথা তোমার গায়ে লাগছে তো তুমি যাও। সমুদ্র কে নেওয়ার দরকার নাই।

একথা শুনে রোদেলার রাগ লাগতে শুরু করে। রাগে তার গা থরথর করে কাপতে লাগলো।

রোদেলা দাত কটমট করে বলে, আমি বাবুকে রেখে গেলে ওকে খাওয়াবে কে? তুমি ওকে বেলায় বেলায় খাওয়াবে?

আবেগ রোদেলার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। বলে কি মেয়েটা!

সে হ্যাবলার মতো রোদেলার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তাহলে তোমার জন্য একটা টিকিট কাটলাম। এতো ছোট বাচ্চার টিকিট লাগে না। তুমি বাসায় যাও। আমি টিকিট কেটে আনছি।

এবার রোদেলার সব রাগ পড়ে গিয়ে এক বুক হাহাকার জমতে লাগে মনে! সে আবেগের দিকে তাকালো। মাত্র একবার রোদেলা বলেছে সে গ্রামে যেতে চায়। ব্যস আবেগ ও তাকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। এখন যদি রোদেলা বলে সে গ্রামে যাবে না তার তো মনে হয় আবেগ তখন জোড় করে হলেও পাঠিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাচবে। আচ্ছা সে কি এতোই বিরক্তিকর? এতোই অপ্রয়োজনীয় আবেগের জীবনে? রোদেলার চোখ ভিজে উঠতে লাগে।

সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব কিন্তু এখনো সন্ধ্যা হয় নি ঠিক যেমন আবেগ তার হয়েও হয় নি তার!

আবেগ ঘেমে গেছে। শার্ট ভিজে উঠতে শুরু করেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ছুটছে তার৷

এই নভেম্বর মাসের হালকা শীতেও তার গরম লাগছে। এতোক্ষন লাগছিল না যখনি রোদেলা তার মুখের উপর বলল, সে বাপের বাড়ি যেতে চায়। তখন থেকেই আবেগ মনে মনে ফুসছে। তখন থেকেই তার গরম লাগছে। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। সে বুঝে পাচ্ছে না কিছু একটা হলেই গ্রামে দৌড়াতে হবে রোদেলাকে?গ্রামে রেখে আসার জন্য তো বিয়ে করেনি সে রোদেলাকে?

এই প্রশ্ন মাথায় আসতে ই আবেগ ভাবতে লাগলো, তবে কিসের জন্য বিয়ে করেছে সে?
উত্তর টা সেও জানে না। তার ও জানা নেই।

আবেগ ছোট করে দম ফেলল। তার জীবনে কি ঘটে কখনোই বুঝে না সেটা কেন ঘটছে। কি অদ্ভুত! এই যে পাচ বছর যে নেহার সাথে একটা সম্পর্কে আবব্ধ ছিল কিন্তু কেন ছিল? জানে না সে। শুধু সপ্তাহের শেষ দিনে কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করত আবেগ। আবেগ যেন হাজিরা দিত গিয়ে।

এসব আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতেই আবেগ খেয়াল করল রোদেলা বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে তাকে রেখেই।

আবেগ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, হাটা তো মাত্র শুরু করেছিলাম কিন্তু যাত্রার অগ্রভাগেই রেখে চলে গেলে!

বলে সামনে পা বাড়ালো।

দোলনা রুমে সেট করে দিয়ে ভ্যানওয়ালা টাকা নিয়ে চলে গেল। রোদেলা সোজা বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নিল। করোনাকালে যেখানেই যাক না কেন বাসায় ফিরেই গোসল সারতে হয়৷

গোসল করে বাথরুম থেকে বের হতেই তার শীত শীত করতে লাগলো। হুট করে ঠান্ডা কেন লাগছে তার?

রোদেলা সামনে পা বাড়িয়ে বাইরে থেকে কিনে আনা জামা গুলো আনপ্যাক করতে লাগলো।

একটা হলুদ সোয়েটারের উপর নজর গেল রোদেলার। হলুদ সোয়েটারের বুকে লাল ফুল আকা। খুব সুন্দর সোয়েটারটা৷ রোদেলার খুব পছন্দ হয়েছে।বাবু আসলে এটাই সবার আগে পড়াবে। এখন তো শীত পড়েই গেছে তাই পড়ালে সমস্যা নেই। পাতলা সোয়েটার।

রোদেলা সব সুন্দর করে ভাজ করে রেখে যেই না আলমারি তে ঢুকাবে ওমনি আবেগ রুমে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো।

রোদেলার হাতে কাপড় দেখে আবেগ বলল, ওহ, প্যাকিং শুরু করে দিয়েছো এতো তাড়াতাড়ি?

আবেগের কথা শুনে রোদেলার মেজাজ বিঘড়ে যায়। সে শব্দ করে আলমারি লাগিয়ে বলে, হ্যা। শুধু শুধু দেরি করার কি আছে?

–না কোন কারন নেই। ইভানা তো এলো না এখনো। কল দিয়ে এখনি আসতে বল।

রোদেলা ভাবতে লাগলো, বাবু এতোক্ষন তাকে ছাড়া কিভাবে আছে? কান্না করছে নাকি? পরক্ষনে ভাবলো, নাহ কান্না করলে ইভানা কি আর থাকত? চলেই আসত বাবুকে নিয়ে।

★★★

বাইরে কারো শব্দ শুনে ইভানা হাতে ফুলকপির বড়া নিয়েই বের হলো। বের হতেই ইভানার চোখ চড়ক গাছে। তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল৷ মুখ অটোম্যাটিকলি হা হয়ে যায় তার৷ মুখে যে খাবার আছে সেটা ভুলেই গেছে ইভানা। তার সামনে এক সুদর্শন পুরুষটা কে?

শায়েরী তার ভাইয়ের কোলে সমুদ্র কে দিতে দিতে বলল, ভাইয়া তোর অপেক্ষায়ই ছিলাম৷

শায়েরীর ভাই সমুদ্র কে কোলে নিয়ে খেলা আরম্ভ করে দিল৷

দুই ভাই-বোন তো সমুদ্র কে পেয়ে দিন-রাত বেমালুম ভুলে গেছে। ইভানা যে তাদের সামনে এসে দাড়িয়েছে সেটা কারো মনেই নেই৷

এদিকে ইভানা হা করেই বিষ্ময়ভরা চোখে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটাকে দেখেই যাচ্ছে। তার এই জীবনে অনেক সুন্দর ছেলে দেখেছে সে।কিন্তু এতো অপরুপ দেখতে, এতো সুন্দর আর এতো হ্যান্ডসাম ছেলে সে আগে কখনো দেখে নি! উফ! কিভাবে সম্ভব? একটা ছেলে এতো সুন্দর কিভাবে হয়? সাদা শার্ট পড়ায় তো মনে হচ্ছে সৌন্দর্য আরো একশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এতোক্ষন যাবত শৌখিন একবারো আশেপাশে তাকায়নি। বাসায় আসতেই শায়েরী একটা বাচ্চা কোলে এনে বলল, তার ফ্রেন্ডের ভাইয়ের ছেলে।
শৌখিনের বেবিটাকে দেখেই কোলে নিতে মন চাইলো তাই দেরি না করে শায়েরীর কাছ থেকে নিজের কোলে তুলে নেয়।

শায়েরী বলল, ইভু তো সেই কখন যেতে চেয়েছিল। আমিই ধরে বেধে রেখেছি ওদেরকে। তোর সাথে মিট করানোর জন্য।

শৌখিন বলল, ভালো করেছিস।

বলে সমুদ্রের সাথে খেলায় মনোযোগ দিল৷

ইভানা এখনো দাড়িয়ে আছে। তার গা কাপছে। হুট করে পিপাসা পেয়ে গেল। ছেলেটা যতো নিকটে আসছে তার তৃষ্ণা পাওয়ার গতি ততো বাড়ছে৷

শায়েরী ইভানাকে দেখে তার ভাইয়ের উদ্দেশ্য বলে, ভাইয়া, ও ইভু। যার গল্প বলি তোকে।

শৌখিন সমুদ্রের দিক থেকে চোখ উঠিয়ে সামনে তাকালো এবং ইভানাকে দেখে সুন্দর করে, সালাম দিল। এতো স্পষ্ট করে সালাম দিল যে ইভানা উত্তর দেওয়ার কথা ভুলে গেল।

দুই-তিন মিনিট নিরবতা। ইভানার মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। সে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে৷

সালামের জবাব না পাওয়ায় শৌখিন একটু আহত হল কিন্তু আমলে নিল না৷

শায়েরী বলে উঠে, কি রে খাচ্ছিস না কেন? কোন সমস্যা?

ইভানা সেটার ও উত্তর দিল না। সে শৌখিনকে দেখছে। দেখছে মানে যে শুধু দেখছে না তা একেবারে সিটিস্ক্যান থেকে শুরু করে ইসিজি সব করে ফেলেছে।

সাদা শার্ট পড়ায় একদম সাদা পরীর মতো লাগছে ছেলেটাকে। কিন্তু পরী তো ছেলে হয় না! তাহলে কি? ছেলেটাকে একেবারে সাদা ফুটফুটে জ্বীনের মতো লাগছে? ইভানা নিজেই বিষম খেল।

সে হেটে হেটে শায়েরীর রুমে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। আর এক মুহূর্ত ছেলেটার সামনে থাকলে ইভানা হয় মারাত্মক বড় ধরনের কিছু করে বসত আর না তাহলে অজ্ঞান হয়ে যেত। কি মোলায়েম চাউনি রে বাবা! উপেক্ষা করার কোন জো নেই। গলা কাঠ হয়ে গেছে। হাতে এখনো বড়া ধরেই আছে এমনকি মুখেও খাবার নিয়ে সে বসে পড়ল। হুট করে কি হলো তার? এমন কেন লাগতে শুরু করল তার?

শৌখিন এভাবে ইভানাকে কোন কথা না বলে যেতে দেখে তার বোনকে জিজ্ঞেস করে, ওনার কি কোন প্রবলেম নাকি?

শায়েরী জোড়পূর্বক হেসে বলে, আরে না। কি প্রবলেম হবে। পড়তে পড়তে ও এমন একটু তার ছিড়া হয়ে গেছে। আমাদের মেডিকেলের বেস্ট স্টুডেন্ট ও!

শৌখিন অবাক হয়ে গেল এবং বলে, উনি ডাক্তার?

–হু। আমার সামনের রোল।

–ও।

–ওর ভাইয়াও ডাক্তার।

–আচ্ছা।

বলে শৌখিন ডাইনিং রুমে বসে পড়ে। তাদের বাসাটা খুব ছোট। পাখির বাসাও বুঝি এর চেয়ে বড় হয়! দুইটা বেড রুম তাও খুব ছোট ছোট। একটা বিছানা আর আলমারি দিলেই রুমে আর জায়গা থাকে না। ড্রয়িং রুম নাই। ডাইনিং আর রান্নাঘর। দুইটা বাথরুম।

শৌখিন সমুদ্র কে নিয়ে খেলতে লাগে। সমুদ্র ও বুঝি শৌখিনকে খুব পছন্দ করেছে৷

শায়েরী রুমে গিয়ে বলে, কি রে? তুই ওভাবে চলে এলি কেন? ছোটদা খারাপ ভাবলো না এভাবে কিছু না বলে চলে আসায়?

ইভানা বলল, তোর ছোটদা আমাকে মারার প্লান করছে রে!

–বিড়বিড় করে কি বলিস বুঝি না তো!

–তোর বোঝা লাগবে না গাধী মেয়ে কোথাকার।

শায়েরী বলে উঠে, ভাইয়া আর বেবি খেলছে। তুই খাওয়া শেষ কর।

ইভানা বহু কথা কষ্টে খাওয়া শেষ করল। তখনি রোদেলার ফোন আসে। ইভানা ফোন ধরেই বলে, আসছি। আসছি আমি। তারপর বিড়বিড় করে বলে, এক সেকেন্ডে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে৷

বলে দৌড়ে বের হলো। শায়েরী তার পেছনে এসে তার ভাইয়ের কাছ থেকে সমুদ্র কে নিয়ে ইভানার কোলে দিল৷।

ইভানা ডানে-বামে না তাকিয়ে এক প্রকার দৌড়ে বের হলো শায়েরীর বাসা থেকে।

শৌখিন ভ্রু কুচকে বলে, মেয়ের মাথায় তো বড়সড় সমস্যা আছে রে শায়েরী।

শায়েরীও সায় দিয়ে বলে, তাই তো দেখছি!

★★★

রোদেলা ব্যাগ গোছাচ্ছে। আলমারি থেকে তার জামা-কাপড় একে একে বের করে ব্যাগে ভরাচ্ছে সে।

আর আবেগ সমুদ্র কে কোলে নিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সমুদ্র কে কিছুক্ষন আগেই হলুদ সোয়েটারটা পড়ানো হয়েছে। একদম রাজপুত্রের মতো লাগছে। আধ ঘন্টা হলো ইভানা বাসায় ফিরেছে। সমুদ্র এতোক্ষন দোলনায় দুল খাচ্ছিল মাত্র আবেগ কোলে নিল।
বাসার সবাই হতভম্ব। বলা নাই কওয়া নাই বাড়ির বউ বলে বাড়ি যাবে! এটা কেমন কথা? বিয়ের সাত দিন ও হয় নি আর এখনি বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছে৷

জাবেদা খাতুন পান চাবাতে চাবাতে বলে, ঘন ঘন বাপের বাড়ি যায় জন্য ই এই মেয়ের ঘর টিকে না। কই আমরাও তো সংসার করছি? বিয়ের সাতদিনের মাথায় তো বাপের বাড়ি যাওয়া তো দূর ভাবতেও পারি নাই৷

ইতয়িয়াজ রহমান বিরক্ত হয়ে গেল এবং বলে, ওই জানোয়ারের সাথে কেন আমাদের মেয়ে সংসার করবে? আর ওর যেতে মন চাইলে যাবে। সমস্যা কোথায়?

★★★

–সমুদ্র কে না নিলে হয় না? তুমি একা যাও।

আরেকবার এই কথা আবেগের মুখ থেকে শুনে রোদেলা পেচন ঘুরে বলে, দেখো, মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ কখনো বেশি হয় না।

আবেগ রোদেলার কথা শুনে একদম রোদেলার সামনে এসে দাড়িয়ে যায়। এতে রোদেলার অস্বস্তি হতে লাগলো।

আবেগ ভ্রু কুচকে আস্তে করে বলে, আমি ওর মাসী কেন হতে যাব? আই এম হিস ফাদার!

বলে পাশ কেটে চলে গেল। রোদেলা কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

আবেগ বিছানায় হানিফ বাসের টিকিট রেখে দিল এবং রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

হুট করে রোদেলার খুব কান্না পেতে লাগল। তার মনে হতে লাগে –আর বুঝি এই বাসায় ফেরা হবে না। তাকে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না এই বাসায়

রোদেলা চোখ মুছে বের হলো রুম থেকে।

ইমতিয়াজ রহমান বলে, আবেগ কই? ও রেখে আসত তোকে বাসস্ট্যান্ডে।

রোদেলা তাচ্ছিলের হাসি দিল এবং সামনে পা বাড়ালো। গেটের সামনে বেবি ট্রলি রাখা। রোদেলা সেখানে সমুদ্র কে শুইয়ে দিল।

ইমতিয়াজ সাহেব রোদেলার সাথে বের হয়ে বলে, ছেলেটা তো আমার দায়িত্ব হীন। আমিই রেখে আসি তোকে।

রিকশা করে বাসস্ট্যান্ডে গেল তারা। ইমতিয়াজ রহমান রোদেলাকে কিছু শুকনো খাবার কিনে দিল। বারবার রোদেলার চোখ ভরে উঠছে। সে চোখ দ্রুত মুছে দেয়।

ইমতিয়াজ রহমান বলে, কবে আসবি?

রোদেলা শক্ত গলায় বলে, যেদিন আপনার ছেলের আমাকে প্রয়োজন হবে।

তিনি আর কিছু বললেননা। গাড়ি ছাড়ার আগে সমুদ্র কে চুমু দিয়ে রোদেলার হাতে কিছু টাকা গুজে দিল। রোদেলা মামাকে জড়িয়ে কেদে দিল৷

মামা ভেজা গলায় বলে, বোকা মেয়ে কান্দিস কেন? কান্না থামা।

রোদেলা কাদতে কাদতে বাসে উঠে পড়ে এবং সামনে যেখানে ফাকা পায় সেখানে বসে পড়ে৷

বাস ছেড়ে দেয়। যতোক্ষন মামাকে দেখা যাচ্ছিল দেখে নেয় রোদেলা। তার খুব কষ্ট হতে লাগলো

সে সমুদ্র কে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে কান্না গলায় বলে, আমরা মা-ছেলেই যতো সমস্যার মূল! সবার বোঝা আমরা। আমি তো তাও অনেক পরে সবার বোঝা হয়েছি কিন্তু তুই তো জন্মের আগে থেকেই সবার কাধের ঝামেলা । চোখের বালি তুই।

এই কথা শুনেও সমুদ্র হেসে দেয়। রোদেলা বলে, এইটা কষ্টের কথা বাবাই! বড় হলে বুঝবি তোর মায়ের কতো কষ্ট! সবার কাছেই আমি অগাছা। না পারে ফেলে দিতে আর না পারে রেখে দিতে!

বেশ কিছু ক্ষন পর বাস থামল। কিছু যাত্রী উঠে পড়ে। তখনি হেল্পার এসে বলে, আপা এটা আপনার সিট না। আপনি পিছনে যান। আপনার সিট ই-২।

রোদেলা আচ্ছা সর‍্যি বলে উঠে দাড়ালো এবং সামনে পা বাড়ায়। গাড়ি এতোক্ষন থামা থাকলেও এখন চলতে শুরু করে দিয়েছে৷

সে ই নং সিটের সামনে গিয়ে দাড়ালো এবং দেখল কেউ একজন বসে আছে। অন্ধকারে কেবল অবয়ব দেখা যাচ্ছে। রোদেলা একটু সামনে ঝুকে দেখার চেষ্টা করল এবং যখন আবছা আলোয় দেখতে পেল ব্যক্তিটাকে তখন ভুত দেখার মতো চমকে উঠে এবং চোখ বড় বড় করে বলে, তুমি?তুমি এখানে কি করছো? আর কিভাবে জানলে আমি এইখানে?

চলবে।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here