বাসর ঘরে মেঝেতে বসে কাদঁছি এদিকে আমার বর নামক প্রাণী নাক টেনে ঘুমাচ্ছে যেন কোন কিছুই তার কানে যাচ্ছে না।কান্না থামিয়ে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।বের হয়ে দেখি এখনো সায়েদ ঘুমাচ্ছে। আমি গিয়ে চুপিচুপি ওর পাশে শুতে গেলে আবার দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। এবার বেশ ভালোই ব্যাথা পেলাম।
-“আপনার সমস্যা কি বলুন তো?রুমে এসেই আমাকে বারবার আঘাত করছেন।”
এবার সায়েদ আমার মুখ শক্ত করে ধরে বলে,,,
-“সমস্যা কি তুই বুঝিস না।তুই সমস্যা তুই।আর হে এই খাটের আশেপাশেও তোকে যেন না দেখি শুতে হলে সোফা বাহ মেঝেতে শো। এই সায়েদ আরফানের সাথে এক বিছানায় শোয়া কল্পনাও করিস না?”
-“সায়েদ আমি কিন্তু এখন আপনার স্ত্রী সেটা আপনি মানুন বাহ না মানুন এটাই সত্যি।”
-“বিয়ে মাই ফুট।তোকে বিয়ে করেছি শুধু সেই দিনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। এখন যা তো এখান থেকে আমার মাথা খাস না।”
-“আপনি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ের মতো একটা পবিত্র জিনিস নিয়ে খেললেন।”
-“তা নয়তো কি? তোকে বিয়ে না করলে লোকজন হাজারটা তীর আমাকে ছুড়তো। আর এই সায়েদ আরফান নিজের ক্যারিয়ারয়ে কোন ভুল করে না। না তুই আমার ভালোবাসা পাবি না পাবি সম্মান আর তুই এই বাড়ি ছেড়েও যেতে পারবি না। তুই হাড়ে হাড়ে টের পাবি তুই কার গায়ে সেদিন হাত তুলেছিলি।”
-“সেই জন্য আমি আপনাকে অনেকবার সর্যি বলেছি।দরকার হলে আপনি আমাকে মারুন।”
-“নো বেবি তুমি এখন মিসেস সায়েদ আরফানের ওয়াইফ তোমাকে কি মারা যায়। কিন্তু তোমাকে আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবো।”
এই বলেই সায়েদ তার বিশাল বিছানায় শুয়ে পড়ল আর আমি দাঁড়িয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরে গিয়ে সোফায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম কি হয়ে গেল আমার সাথে কালও তো আমি কত খুশি ছিলাম শান্তিতে জীবন কাটাঁতাম আর আজ।
একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডুব দিলাম সেইদিনের ঘটনায় যেদিন সায়েদের সাথে আমার প্রথম দেখা হলো।
~~~~~~~~~~~~~
আজ আমার নিথুর পরীক্ষা শেষ তাই ভাবলাম আজ ফুচকা খেয়ে আশ্রমে যাবো।
-“ইসরা তুই এটা করতে পারিস না?ঝাল হলে আমি ফুচকা খাবো না। তুই জানিস আমি ঝাল খেতে পারি না।”
-“তাই তো নিথু বেবি আমি ঝাল করে ফুচকা খাবো যাতে তুই দেখবি আর লুচির মতো ফুলবি।”
-“দেটস্ নট ফেয়ার ইসরা”
নিথুর এমন বাচ্চামো কষ্ট দেখে আমি হেসে দেই। তখনই দেখি রাস্তার মাঝে অনেক ভিড় হয়েছে। আমি আর নিথু কৌতুহূল হয়ে গিয়ে দেখি কিছু লোক মিলে একটা লোককে মারছে আর দূরে একটা লোক বসে দেখছে মজা নিচ্ছে। দেখেই আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল। আমি সেই লোকটার সামনে গিয়ে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলাম। এতে চারিদিকে সব স্তব্ধ হয়ে গেছে। মারামারি এতোক্ষনে থেমে গেছে। সকলের নজর এখন আমার উপর।
-“কি ভেবেছেন কি আপনি? একটা মানুষকে মেরে নিজের পাওয়ার দেখাতে এসেছেন। এই আপনাদের মতোই বড়লোক বখাটে ছেলের জন্যই না ছেলেদের এতো দুর্নাম।আর আপনারা একটা লোককে কিছু লোক মারছে আর আপনারা দেখছেন কেন লোকটাকে সাহায্য করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে। আর আপনি…… ”
বলেই থেমে গেলাম কারণ সায়েদের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে গেছে, হয়তো রাগে। আমি দেখেই ভয় পেয়ে গেলাম। সায়েদ একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে আসে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে। ইতিমধ্যে মিডিয়া এসে উপস্থিত।মিডিয়াকে দেখে তো আমি অবাক। নিথু কোন মতে ওখান থেকে আমাকে তাড়াতাড়ি বের করে আনে।
-“নিথু কে রে ছেলেটা?”
-“জানি না কিন্তু এখন আমাদের পালাতে হবে ”
-“হে হে চল।”
বলেই আমি আর নিথু আশ্রমে চলে এলাম। নিথু আমাকে আশ্রমে রেখে ওর বাড়িতে চলে গেল।আশ্রম থেকে ভিতরে ঢুকে দেখি এক জন মধ্যেবয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা বসে আসে।আমাকে দেখে ভদ্রমহিলা উঠে এসে আমাকে ধরে বলে,,,,
-“মা নাম কি তোমার?”
-“জ্বি ইসরা।”
-“বাহ ভারি মিষ্টি নাম।”
তারপর ভদ্রলোকটা আমার কাছে এসে বলে,,,,
-“একদিন দেখেছিলাম তোমায় কিছু বাচ্চাকে খাবার কিনে দিতে তাদের নিয়ে আনন্দ করতে তারা তোমার কে হয়?”
-“কেউ না। আমি তো অনাথ তাই কোন অনাথকে দেখলে তাকে খুশি করতে ইচ্ছে করে। আর ওরাও অনাথ ওখানে মন খারাপ করে ছিল তাই ওদের নিয়ে আনন্দ করেছি।”
ভদ্রমহিলাটা বলে উঠল,,,,
-“আজ থেকে তুমি আর অনাথ নও। আমরা তোমারা মা-বাবা।”
আমি তাদের কথা কিছুই বুঝলাম না শুধু তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবলাম হয়তো আমায় দত্তক নিবে। এরমধ্যে ফুপ্পি এসে আমাকে ডাকে। আমি ফুপ্পির কথা শুনে ফুপ্পির কাছে যাই। ফুপ্পি তাদের বলে,,,,
-“ঠিক আসে সেই কথাই রইল। আপনারা এখন আসুন।”
ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা চলে গেলে। ফুপ্পিকে বলি,,,,
-“ফুপ্পি ওনারা কারা গো।বললো ওনারা নাকি এখন থেকে আমার মা-বাবা কিন্তু আমার মা-বাবা তো সেই কবেই মরে গেছে আমি তো তাদের দেখিও নেই। তাহলে এনারা কারা?”
ফুপ্পি গম্ভীর স্বরে বলে,,,,
-“ইসরা তুই কি আমাকে আপন মনে করিস?”
ইসরা অবাক হয়ে ফুপ্পির গলা জড়িয়ে বলে,,,,
-“আরে ফুপ্পি এটা কি ধরনের প্রশ্ন অবশ্যই তোমাকে আমি আপন মনে করি তুমি ছাড়া আমার আছে কে?হয়তো তুমি আমার আপন ফুপ্পি নও কিন্তু তাও তুমি আমার খুব আপন।”
-“তাহলে তুই আমার সব কথা মেনে নিবি তো?”
-“কি কথা ফুপ্পি?”
-“একটু আগে তুই যে ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলাকে দেখলি ওরা চায় তোকে তাদের ঘরের বউ বানাতে।ওদের তোকে পছন্দ হয়েছে। সমন্ধটা অনেক ভালো পরিবার থেকে এসেছে। তুই ওখানে রাজরানির মতো থাকবি।আর আমিও তোর ভালোর জন্য তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি।তুই রাজি হয়ে যা না।”
-“ব্যস এই ব্যাপার ঠিক আছে আমার কোন মত নেই। তুমি যেটা ভালো বুঝো সেটা করো। আমি বিয়েতে রাজি।”
-“তুই আমার উপর রেগে নেই তো।তুই সত্যি এই বিয়েতে রাজি।
-“কেন রেগে থাকবো। হে আমি বিয়ে করতাম না কিন্তু আমার কাছে তোমার কথার অনেক মূল্য তাই তোমার জন্য আমি বিয়েতে রাজি।”
-“ঠিক আসে। ওরা একসপ্তাহের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছে।”
-“ঠিক আসে আমার সমস্যা নেই।”
এরপর আরো কিছুকথা বলে ফুপ্পি চলে যায়।
~~~~~~~~~~
এদিকে সায়েদ বাসায় এসে ঘরের সব জিনিস ভেঙে ফেলেছে। রাগে এখনো ফোঁপাচ্ছে।
-“একটা মেয়ের কি করে এতো সাহস হলো সায়েদ আরফানের গায়ে হাত তোলা। রাস্তার লোকজনের কাছে অপমান করা। কি করে? ”
বলেই সামনের ফুলের টপটা ভেঙে ফেলল। এতো আওয়াজ শুনে মিসেস.পারভীন ছুটে আসল ছেলের ঘরে। এতোক্ষন বাসায় ছিলো না। বাসায় এসে বাসার এই অবস্থা দেখেই সে বুঝেছে যে তার ছেলে রেগে গেছে।
-“সায়েদ এগুলো কি হচ্ছে? বাসার একি অবস্থা করেছো তুমি?”
মায়ের কথা যেন সায়েদের কর্ণগোচর হলো না সে তো এখনো রাগে ওই মেয়েটার কথা মনে করছে আর ফোঁপাচ্ছে।”
এরমধ্যেই সায়েদের বাবা সাফোয়াত আরফান ঘরে প্রবেশ করে।
-“সায়েদ এসব হচ্ছেটা কি?”
এবার বাবার কথায় সায়েদের হুস ফিরে। বাবাকে সে অনেক ভয় পায়। সায়েদ বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
-“বা..বা আ..আসলে আ…আমি…….”
তখনই মিস্টার সাফোয়াত আরফান,,,,,,,,
#অশ্রুসিক্ত_নয়নে_তুমিই_আছো
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব -১
#চলবে