অশ্রুসিক্ত নয়নে তুমিই আছো পর্ব-১৮ ও শেষ

#অশ্রুসিক্ত_নয়নে_তুমিই_আছো
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ১৮

—-একি?আপনি এখানে কেন?

গম্ভীর সুরে ইসরা সায়েদকে বলল।ইসরা নিথুর ফোন নিথুর রুমে নিতে আসলেই নিথু সায়েদকে তার রুমে পাঠিয়ে দেয় আর সায়েদ এসে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়।

—– কেন? কোন সমস্যা নাকি আমি এখানে থাকলে?

—– না কি সমস্যা থাকবে।

এই বলে ইসরা যেতে নিলে সায়েদ পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়।ইসরা রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,,

—– কি হলো? পথ আটকাচ্ছেন কেন?আমাকে যেতে দিন।

—– আর যদি যেতে না দেই।

—– মানে হলো,,,

বলেই সায়েদ ইসরা পিছনে গিয়ে একটা মালা ইসরার খোঁপায় পড়িয়ে দেয়।

—– নাও ইউ আর পার্ফেক্ট।

ইসরা একটু অবাক হলো।

—— মানে?

সায়েদ ইসরার গলায় দুহাত ঝুলিয়ে বলে,,,,,

—– মানে টা হলো আমার বউকে আজ খুবই সুন্দর লাগছিলো কিন্তু তাও আমার মনে হচ্ছিল যে কিছু একটা মিসিং তারপর যখন বুঝলাম তুমি খোপায় মালা দেয় নি তাই আমিই তোমার জন্য মালা নিয়ে এসে তোমার খোপায় পড়িয়ে দিলাম।

এটা শুনে ইসরা প্রচুর অবাক হলো।সে একাধারে সায়েদকে দেখতে লাগলো।ভাবতে লাগলো,,সায়েদ যা বলছে তা কি আদোও সত্যি নাকি স্বপ্ন।

—– ওভাবে দেখো না বউ,,,,প্রেমে পড়ে যাবো তো?

সায়েদের মুখে এই কথা শুনে ইসরা তো পুরোই থ।সে ভাবতেও পারে নি সায়েদ এমন কথা বলবে।সায়েদের কথাটা মস্তিস্কে খেলতেই ইসরা চোখ সরিয়ে নেয়,,, এসে জমা হয় এক রাশ লজ্জা যার বহিঃপ্রকাশ পাচ্ছে ইসরার গাল লাল হওয়ার ফলে। ইসরা আর অপেক্ষা না করেই সোজা রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো আর সায়েদ ইসরা এহেন কান্ডে হাসতে হাসতে শেষ।

ইসরা রুম থেকে ছুটে নিথুর কাছে আসে।

—– কি রে,,,,আসতে এতোক্ষন লাগে নাকি?

—– এই নে,,,, তোর ফোন।

নিথু দেখল ইসরা গাল দুটো গোলাপি হয়ে গেছে।

—– কি রে,,,,এমন ব্লাস করছিস কেন?

—– কই না তো।

—-আমি দেখছি। আহারে গাল দুটো পুরো গোলাপি গোলাপি হয়ে গেছে। আসলে কাল আমার সাথে সাথে তোর বিয়েটাও দিতে হবে দেখছি।

—– ধুর,, বাদ দে।আর কনে হয়ে এতো কথা কিসের তোর?এই নে ফোন এনে দিয়েছি এখন পিক তোল।

—– হুউউউ,,,বুঝি বুঝি সব বুঝি।

—– ওই কাল তো তোর বিয়ে দেন ফুলশয্য। তখন আবির ভাইয়া তোকে,,,,,,

আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই নিথু মুখ চেপে ধরল।

—– ওইই মাইয়া তুই না আমার বান্ধুবী। বান্ধুবী কে এমন কথা বলতে লজ্জা করে না তোর।

—– একটু আগে আপনি যা করছিলেন তখন তো আপনার লজ্জা করছিলো না তো এখন আমার লজ্জা করবো এটা ভাবলে কেমনে তুই?

—— এখানে কি কথা চলছে শুনি?

তখনই ইসরা আর নিথুর এক ফ্রেন্ড আছে আর ওরা তার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে। পুরো অনুষ্ঠানে ইসরা এতো ব্যস্ত ছিলো যে সায়েদকে দেখারও সুযোগ পায় নি আর এদিকে সায়েদ তো ইসরাকে দিব্যি দেখছে। যেহেতু সে বরপক্ষ থেকে এসেছে তাই তার কোন কাজ নেই শুধু বসে থাকা ছাড়া।

অনুষ্ঠান শেষে সায়েদ নিথুদের বাসায় থাকতে চাইলে সায়েদের সাথে যারা এসেছে (বরপক্ষ/সায়েদ এবং আবিরের ফ্রেন্ড)ওকে থাকতে দেয় নি।

~~~~~~~~~~

আজকে ইসরার উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। রুমে এসে শরীরটা যখনই বিছানায় এলিয়ে দেয় ঠিক তখনই একটা নোটিফিকেশনের আওয়াজ আছে।

—– খুব ক্লান্ত বুঝি?

সায়েদের এমন মেসেজে ইসরা সোজা উঠে বসে আর ভাবতে থাকে আজ সারাদিন সায়েদ তার সাথে কি ব্যবহার করেছে। যখনই সায়েদের মাথায় ফুল দেওয়ার কথা মাথায় আছে তখন আরেক দফা অবাক হয়ে ভাবে,,, এসব সায়েদ কেন করছে?সায়েদ কি আদোও তাকে মেনে নিয়েছে নাকি লোক দেখানোর জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে আবার মেসেজ আসলো,,,

—–কি হলো?এখনো ব্যস্ত নাকি?আজকে আর কাজ করতে হবে না। কালকেও অনেক কাজ আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো।

ইসরা ছোট করে বলে,,,

—–ওকে গুড নাইট। আপনিও শুয়ে পড়ুন।

~~~~~~~~~

ভাবতেই কেমন লাগছে আজ থেকে আমার পরিচয় হবে মিসেস.সায়েদ। যাকে কিনা এতোদিন ভালোবাসতাম তাকে আজ সম্পূর্ণ নিজের করে পাবো। এতোদিন ধরে যে স্বপ্ন দেখলাম।তা যে এতো তাড়াতাড়ি পূরণ হবে তা ভাবতেও পারি নি। আচ্ছা ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেতে কি ভাগ্য লাগে। যদি লাগে তাহলে আমার সেই ভাগ্যটা রয়েছে। আমি কি পারবো,,, আবিরকে সুখী করতে?পারবো ওদের পরিবারকে নিজের পরিবার বলে মেনে নিতে?কেন পারবো না অবশ্যই পারবো যদি আবির আমার পাশে থাকে তাহলে আমি সব করতে পারব।

—–বর এসেছে, বর এসেছে।

বাহিরে মেয়েদের কথায় নিথু তার ভাবনা জগৎ থেকে বের হয়।আবির এসে গেছে,একটু পরই আবির আর সে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। চিরকালের মতো আবির তার হয়ে যাবে এসব ভাবতে ভাবতেই নিথু ব্লাস করা শুরু করল।

—– কি রে হটাৎ এতো ব্লাস করছিস যে,আবির ভাইয়াকে দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝি?

ইসরা কথাটা দুষ্টুমি করে বলে।ইসরার এমন কথায় নিথু পাল্টা জবাব দিয়ে বলে,,,,,

—– এই তুই এখানে কেন?বর এসেছে যা দেখতে যা আর এসে আমাকে জানা আমার সাইয়া দেখতে কেমন লাগছে?

—– হে হে যাচ্ছি।থাকতাম না তোর কাছে।

এই বলে ইসরা যাওয়া ধরলেই নিথু ইসরার হাত চেপে ধরে।

—– ইসু, আই এম ফিলিং নার্ভাস।

ইসরা মুচকি হেসে বলে,,,,,

—– তুই বেশি চিন্তা করছিস।আবির ভাইয়া খুব ভালো ছেলে।তোকে খুব ভালো রাখবে।

—– আমি সেটা জানি,কিন্তু আমি কি পারবো আবিরের ফ্যামিলিকে যোগ্য সম্মান দিতে।

—– নিশ্চয়ই পারবি। তোর সেই ক্যাপাবিলিটি আছে। ডোন্ট ওয়ারি। এখন যাই দেখে আছি তোর সাইয়াকে কেমন লাগছে।

—– হুম।

—– এভাবে গোমরামুখো করে বললে হবে নাকি।এতো টেনসন করলে দেখবি তোর সব চুল পড়ে গেছে দেন আমার আবির ভাইয়া কিন্তু কোন টাকলা মেয়েকে বিয়ে করবে না, হিহি।

নিথু হাসি মুখে বলে,,,,

—– এই জন্য তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আলাবু বেপি।

ইসরা নিথুকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,

—– আলাপু তু বেপি এন্ড ইউ আর লুকিং ড্যাম কিউট। হায় আবির ভাইয়া ছাড়া যেন কারোর নজর না লেগে যায়।

উত্তরে নিথু মুচকি হাসে।

বর এসেছে,বর এসেছে কথাটা শুনতেই ইসরা বরকে দেখতে যায়। বর ঠিকই এসেছে কিন্তু সায়েদকে ইসরা দেখতে পায় না। এদিকে আবির ভাইয়াকেও যে বলবে তারও তো কোন উপায় নেই। কত্তো লোকজন এর মধ্যে বরকে গিয়ে কি না বলবে তার বর কথায় ভাবতেই লজ্জা লাগছে। অনেকক্ষন ধরে আশে পাশে খুজেও ইসরা সায়েদকে খুজে পায় না। ইসরার মনটা আপনা আপনিই খারাপ হয়ে গেল ঠিক তখনই,,,,,,,#অশ্রুসিক্ত_নয়নে_তুমিই_আছো
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ১৯ (শেষ পর্ব)

—– আমাকে খোঁজা হচ্ছে বুঝি?

কানের কাছে এমন লো ভয়েজে শুনে ইসরা কেঁপে উঠে। ইসরা মুখ ঘুরিয়ে দেখে সায়েদ তার পিছনে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কতো যুগ তাকে দেখে নি,,, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

—— না মানে আসলে,,,

—– কি না মানে আসলে?

—-আমার কি ঠেকা যে আমি আপনাকে খুজতে যাবো।আপনাকে খুজতে আমার বয়েই গেছে।

—– তাই?

—– জ্বি।

বলেই মুখ ভেংচি কেটে ইসরা চলে গেল।

খুব সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে নিথু আর আবিরের বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিদায়ের সময় নিথু অনেক কান্না করছিল।মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে তো কাঁদছিলোই সাথে ইসরাকে জড়িয়ে ধরেও কাঁদছিলো।

—– এই বোকা মেয়ে,কাঁদছিদ কেন?তুই কি পর হয়ে যাচ্ছিস নাকি?তুই আগের মতোই আমার সাথে আবার দেখা করতে পারবি?কাঁদে না।

নিথুর কানে ইসরার কোন কথাই যাচ্ছে না। নিথু তো কাঁদতে ব্যস্ত।তারপর ইসরা দুষ্টুমি করে নিথুর কানে কানে বলে,,,

—– আজ আবির ভাইয়া নির্ঘাত তোকে দেখে হার্ট অ্যাটাক করবে। কেঁদে কেঁদে মুখের সব মেকআপই তো উঠিয়ে ফেলেছিস। তোকে এখন দেখতে পুরো পেত্নী লাগছে।

এই কথা শুনে নিথু কাঁদা বাদ দিয়ে ইসরাকে মারা শুরু করে।

—– কিইইইই আমাকে পেত্নী লাগছে তুই পেত্নী,রাক্ষসী।

—– আরেএএ লাগছে তো।

—– লাগার জন্যই মারছি।

হটাৎ করেই নিথুর কাঁদা থেকে মারা পর্যায়টায় সবাই অবাক হয়। আবির সায়েদের কানে ফিসফিস করে বলে,,,,

—– দোস্ত, আমাদের মনে হয় দুই বান্ধুবীকে বিয়ে করা ভুল হইছে।

সায়েদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,,,,,,

—– কেন?

—– আরে কথা নাই বার্তা নাই ইমোশনাল মোমেন্টে এসে দেখ দুজন কেমনে মারামারি করছে। আমার তো রীতিমতো ভয় হচ্ছে,,,, বাসর রাতে না আমার বউ কুংফু ক্যারাটে হয়ে যায়।

আবিরের কথা শুনে সায়েদ আবিরকে ভয় দেখাতে বলে,,,,,

—– দাড়া নিথুকে বলছি।

—– এই এই একদম না,,,,,তাইলে আজ বাসর রাতে বউয়ের গাতে বর শহীদ হইবো।এইটা কি তুই চাস, বল?

আবিরের কথা শুনে সায়েদ আওয়াজ ছাড়াই হেসে দেয়।

~~~~~~~~~~~~

নিথুর বাসা থেকে বের হতে ইসরা আর সায়েদের এমন অনেক দেরি হয়ে যায়। নিথুর বাবা-মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইসরা আর সায়েদ গাড়িতে যাচ্ছে, দুজনেই নিশ্চুপ।

—– লং ড্রাইভে যাবে?

সায়েদের মুখে এমন কথা শুনে ইসরা একটু অবাকই হয়।ইসরা সায়েদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। সায়েদ ড্রাইভ করতে করতে আবারও প্রশ্ন করে,,,,,,,

—–কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?যাবে লং ড্রাইভে।

—— আপনার কি হয়েছে সায়েদ?

সায়েদ মুচকি হেসে বলে,,,,,,,

—– কেন? কি হবে?

—– না এতো কমফরটেবলি কথা বলছো।

—– তো রেগে বলবো।মানে তোমার সাথে ভালো ভাবে কথা বললেও প্রবলেম?

—– না আসলে,,,,, আচ্ছা ঠিক আছে।

কিছুদূর যাওয়ার পরে ইসরা বুঝতে পারে যে এটা বাড়ির রাস্তা নয়।

—– আমরা কোথায় যাচ্ছি?

—– সারপ্রাইজ।এখন চুপ করে বসে থাকো।

—– মানে টা কি এতো রাতে কিসের সারপ্রাইজ? টাইম দেখেছেন ১২ টা ছুইছুই।আর আপনি কি না এখন সারপ্রাইজের প্ল্যান করছেন।

—– উফফফ ইসরা চুপ করে বসে থাকো আর আমাকে ড্রাইভে কন্সেনট্রেট করতে দেও।

সায়েদের ধমক শুনে ইসরা চুপ হয়ে যায়। সায়েদ এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে ইসরা গাড়ি থেকে নামায়।তারপর একটা রুমাল দিয়ে ইসরা চোখ বেধে দেয়। ইসরা মানা করলেও সায়েদ শুনে নি।
সায়েদ ইসরার হাত ধরে আস্তে আস্তে একটা জায়গায় নিয়ে আছে। তারপর ইসরার চোখের বাঁধন খুলে দেয়।

ইসরা চোখ খুলে দেখে চারিদিকে মোমবাতির আলোতে জ্বল জ্বল করছে। গোলাপির পাপড়ি দিয়ে চারিদিকে সাজানো। ইসরার দেখেই মনে হচ্ছে সে যেনো স্বপ্ন দেখছে। তখনই একটা আওয়াজে ইসরা উপরে তাকালে দেখে আকাশ বাজী ফুটছে। তারপর কিছুক্ষন পরে আকাশে লেখা উঠে,,,,

HAPPY BIRTHDAY ISRA…..

ইসরা এসব দেখে এতোটাই স্তম্ভ ছিলো যে,,, কখন যে তার চোখ আনন্দে অশ্রুতে পুর্ন হয়ে গেছে তা টেরও পায় নি।

—– হ্যাপি বার্থডে ইসরা।

সায়েদ ইসরার কানের কাছে এসে ইসরাকে ইউস করে। এটা শুনে ইসরা সায়েদের দিকে তাকায়। আসলে কেউ কখনো এভাবে ইসরার বার্থডে সেলিব্রেট করে নি। সায়েদ দেখে ইসরার চোখে পানি তার মানে ইসরা কাঁদছে। সায়েদ কিছু না বলেই ইসরার চোখের পানি মুছে দেয়। ইসরা শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। ইসরা ভাবছে,,,,

—– এই কি সেই সায়েদ যে কি না বিনা কারনে আমাকে আঘাত করতো?এ কিই সে যাকে জ্বালালে সে আমাকে জ্বালিয়ে দিতো?রাতের পর রাত যার জন্য আমি অশ্রু বিসর্জন দিয়েছি?

সায়েদ ইসরা গাল দুটো নিজের হাতে বন্দী করে নিয়ে বলে,,,,,,

——কি ভাবছো?

—– আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?

উত্তরে সায়েদ মুচকি হেসে বলে,,,,,

—— না এটা কোন স্বপ্ন নয় এটা সত্যি।

—– আপনি ঠিক আছেন তো?সুস্থ আছেন।

—– জ্বী ম্যাডাম আমি একদম ঠিক আর সুস্থ আছি।

ইসরা সায়েদের হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে অভিমানী গলায় বলে,,,,,,

—– তাহলে এসব কেন করছেন?

—– ভালোবাসি তাই।

কথাটা যেন ইসরার হজম হলো না। সে অবাক দৃষ্টিতে সায়েদের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। সায়েদ ইসরার সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে বলে,,,,,,

—– তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন খুব রাগ উঠেছিল উপর থেকে আমাকে আবার তোমার সাথেই বিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে আমার রাগ আরও দ্বিগুন হয়ে যায়। তাই তোমাকে নানা ভাবে অত্যাচার করতাম। যখন আমার বাবা-মা আমার না হয়ে তোমার কথা বলতো তখন ভাবতাম তুমি এমন কি করলে যে আমার বাবা-মাকেও তোমার দলে নিয়ে নিলে। তোমাকে হাজারও কষ্ট দেওয়ার পরেও তুমি আমাকে কিচ্ছু বলতে না এমন ভাব করতে যে তোমার তাতে কিছুই এসে যায় না অথচ রাতের পর রাত যে কিভাবে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছো তা আমাকে একটি বার বলোও নি। সত্যি বলতে ইসরা কখন যে তোমাকে ইগনোর করতে করতে তোমাকে নিয়ে পসিসিভ হয়ে গেছি তা টেরও পায় নি। কখন যে তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো তাও বুঝতে পারি না। আর যখন বুঝতে পারলাম তখন সোজা এসে তোমাকে জানিয়ে দিলাম।

এক নিশ্বাসে সায়েদ কথাগুলো বলল।ইসরা নিরবে চোখের পানি ফেলছে। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এগুলো আদোও সত্যি নাকি স্বপ্ন। সায়েদ আবারও বলতে শুরু করে,,,,,

—– ইসরা,, আমাকে কি একটা সুযোগ দিবে।কথা দিচ্ছি আর তোমার প্রতি কোন অবিচার করবো না,তোমাকে আগলে রাখবো,অনেক ভালোবাসবো। আমার জন্য তোমাকে আর কষ্ট পেতে হবে না।

ইসরা এখনো নিশ্চুপ। সায়েদ উঠে দাঁড়িয়ে ইসরার গালে হাত দিয়ে মুখটা একটু উঁচু করে ধরে বলে,,,,,

—– আমাকে ভালোবাসতে দিবে ইসরা। বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি যে তোমায়। তোমায় ছাড়া যে থাকতে পারবো না। একটি বার সুযোগ দেও না, প্লিজ।

খুব কাতর স্বরে কথাগুলো বলল সায়েদ। মনে হচ্ছে কত কাল ধরে তৃষ্ণায় আচ্ছন্ন। সায়েদের চোখের কোণেও পানি এসে পড়েছে। ইসরা সায়েদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

—– আমি কি আপনাকে আদোও ছেড়ে গিয়েছি।আপনি ছাড়লেও আমি আপনাকে ছাড়ছি না। বুঝলেনঅন অফ দ্য মোস্ট পপুলার গোমরামুখো বিজনেসম্যান মিস্টার সায়েদ আরফান।

সায়েদ কিছু না বলে ইসরা জড়িয়ে ধরে বলে,,,,

—– ইয়েস মিসেস সায়েদ আরফান।

এভাবে কিছুক্ষন জড়িয়ে থাকার পর হটাৎই ইসরা সায়েদের কাছে এক আবদার করে বসে।

—– জানেন আমার না খুব ইচ্ছা আমার বরের সাথে চন্দ্রবিলাস করবো।

—– কিন্তু আজ তো আকাশে চাঁদ নেই।

—– তো কি?মাঝে মাঝে আকাশ চাঁদ ছাড়াই খুব সুন্দর লাগে।

—– তাই ঠিক আছে।

বলেই সামনের দোলনায় গিয়ে সায়েদ আর ইসরা বসলো। তারপর আরেক আবদার ধরলো যে সে সায়েদের গলায় গান শুনবে সায়েদও বিনা বাক্য গান গাইতে লাগল।গান গেয়ে যদি তার প্রিয়তমা খুশি হয় তাহলে খুশি করাই যায়।

তুমি চাঁদের জোছনা নও,
তুমি ফুলের উপমা নও,
তুমি চাঁদের জোছনা নও,
ফুলের উপমা নও,
নও কোন পাহাড়ি ঝর্ণা,
আয়না-
তুমি হৃদয়ের আয়না।

তুমি সাগর নীলিমা নও,
তুমি মেঘের বরষা নও,
তুমি সাগর নীলিমা নও,
মেঘের বরষা নও,
তুমি শুধু আমারই গয়না,
আয়না –
আমি হৃদয়ের আয়না।

কবির লেখা যত কবিতা,
শিল্পীর আঁকা যত ছবি,
তোমার তুমির কাছে
হার মেনে যায় যেন সবই।

সাঁঝের বেলা রাঙ্গা গোধূলি,
বর্ষাকালের ভরা নদী,
তোমার রূপের কাছে
হার মেনে যায় যেন সবই।

তুমি সাগর নীলিমা নও,
তুমি মেঘের বরষা নও।
তুমি সাগর নীলিমা নও,
মেঘের বরষা নও,
তুমি শুধু আমারই গয়না,
আয়না –
আমি হৃদয়ের আয়না।

সমাপ্ত

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here