আগাছা পর্ব ১

মাঝ রাতে ঘুম ভাঙতেই দেখি বিছানায় অনিক নেই!
অনিক সাধারণত এক ঘুমেই রাত পার করে দেয়।আজ এতো রাতে কোথায় গেল!

উঠে রুমের লাইট না জ্বালিয়েই ওয়াশরুম চেক করে এলাম।নাহ্,ওয়াশরুমে যায়নি।

বারান্দায় উঁকি দেওয়ার আগেই চোখ গেল বেডরুমের দরজার দিকে।দরজা ভেজানো;কিন্তু স্পষ্টতঃ মনে আছে ঘুমানোর আগে ছিটকিনি দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম।

তাহলে নিশ্চয়ই অনিক বেরিয়েছে,হয়তো পানি খেতে।
রুম থেকে বের হয়েই সামনের দৃশ্যটা দেখে আমি মোটামুটি একটা ধাক্কা খেলাম।

তরী আর অনিক পরস্পর একদম কাছাকাছি বসে একটা টিভি শো দেখছে এতো রাতে!দেখেই গা’টা জ্বালা করে উঠলো।
অনিক আমায় ধোঁকা দিচ্ছে না তো?কই ঘুম নষ্ট করে আমার সাথে তো কখনো এতো রাতে টিভি দেখেনি ও!

অনিক!আমার স্বামী।একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করে।ও আমার সংসারে প্রাচুর্যতা এনে দিতে না পারলেও আমাকে কখনো কোনো অভাবেও রাখেনি। প্রায় ২ বছরের সম্পর্কের পর পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়েছিল।আলহামদুলিল্লাহ এখন দাম্পত্যজীবনের ৪ বছর চলছে।

আমাদের জীবনটা সুখেই কাটছিল,যতদিন না তরীর আগমন ঘটে আমার বাসায়।

তরী!আমার দূর সম্পর্কের খালাতো বোন।ঢাকায় এসেছে HSC পরীক্ষা শেষ করে,এডমিশন কোচিং এর উদ্দেশ্যে। ঢাকায় ওর কোনো নিকটাত্মীয় না থাকায় আমি নিজেই ওকে আমন্ত্রণ করেছিলাম যতদিন না পাকাপোক্ত কোনো ব্যবস্থা হয়ে যায় ওর,ততদিন পর্যন্ত যেনো আমার বাসায় থেকে কোচিং করতে।

কেনো না,২ জনের সংসারে অনিক যখন অফিস চলে যায়,তখন আমার খুব একা লাগে।ভেবেছি একজন সঙ্গী জুটলে বেশ হবে।তখনো ভাবিনি আমার এই সাদরে আমন্ত্রণই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে!

যাইহোক,বেশ কিছুক্ষণ আমি রুমের সামনে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের পরখ করছিলাম।এবারে আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে ঠিক ওদের পিছনে দাঁড়ালাম আর একটা গলা খেঁকাড়ি দিলাম।দুজনেই চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো।

যেনো কিছু একটা লুকাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে এমন ভাবে শঙ্কিত হয়ে তরী কবলে উঠলো,
–আআপু এতো রাতে তুমি!

অনিককে দেখলাম কিছুটা বিব্রত দেখাচ্ছে,আমতা আমতা করে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
–আসলে ঘুম আসছিল না,তাই ভাবলাম টিভি দেখি।এসে দেখি তরী আমার আগেই টিভির রিমোট দখল করে বসে আছে।হাহাহা।

অনিকের কথায় আমার মোটেও হাসি পেলো না।

তবে মনের ভাব চেপে রেখে স্বাভাবিকভাবেই বললাম,

–কাল তো তোমার অফিস আছে,এতো রাত জেগো না।
আর তরী তুমিও ঘুমিয়ে যাও জলদি,একটা দিনও তো সকালে ঠিক সময়মতো ক্লাসে যেতে পারো না।

বলেই আমি ঘুরে রুমের দিকে হাঁটা দিলাম।আমার পিছন পিছন অনিকও আসছে।

তরী বলে উঠলো,
–কী জিজু, প্রোগামটা শেষ করে যাও?
–না থাক,তুমিই দেখো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।গুড নাইট।
–অক্কে জিজু।হেভ আ্য নাইস ড্রীম।

অনিক মুচকি হেসে বললো,
-ইউ টু।

রুমে এসেই দরজা আটকিয়ে আমি সোজা বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।অনিক ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওয়াশরুম থেকে এসে আমার পাশে শুয়ে,আমাকে নাম ধরে ডাকলো।আমি কোনো সাড়া দিলাম না।

ও আবার ডাকলো,
-লক্ষ্মীটি ঘুমিয়ে পড়েছো?
ওর এই আদুরে ডাকও আমার কাছে এখন কেমন যেনো অসহ্য লাগছে।আমি এবারেও সাড়া দিলাম না।মরার মতো চুপ করে পড়ে রইলাম।

—————-

সকালে উঠে নাস্তা বানাচ্ছি।আজ দেরী হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে।অনিকের অফিসের সময় হয়ে গেছে।নাস্তা রেডী না থাকলে হয়তো না খেয়েই চলে যাবে।

‌তখনি অনিক গোসল শেষ করে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রান্না ঘরে আসলো।
‌এসেই আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে একহাত আমার পেটে রাখলো আর অন্য হাত দিয়ে ঘাড়ের কাছের চুল সরিয়ে গলার কাছে একটা চুমু দিয়ে বললো,
‌–মেহের,তুমি কি রাগ করে আছো?(আমার নাম মেহেরীমা,অনিক আমাকে শুধু মেহের বলেই ডাকে।


‌অনিকের এহেন আচরণেই আমার ভিতরের রাতের সব রাগ অভিমান গলে পানি হয়ে গেল।মুচকি হেসে আমি আমার হাতটা কাঁধের উপর দিয়ে উলটো করে নিয়ে ওর ভেজা চুলগুলো ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললাম,
‌–আরেহ্ নাহ্,পাগল একটা!

‌ও আমাকে আরও জোরে চেপে ধরলো।তারপর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিল।

‌আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‌–এই সরো,কাজ করতে দাও।আর ড্রয়িং রুমে তরী আছে তো!


‌ঠিক তখনই ঠাসসসস!

‌দুজনেই নিরাপদ দুরত্বে সরে দাঁড়ালাম।
‌ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম,তরী রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর ওর হাতের চায়ের কাপটা নিচে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে চা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।


আমি দেখলাম তরী কিছুক্ষণ কটমট করে অনিকের দিকে চেয়ে রইলো।পরক্ষণেই দু’চোখ ছলছল করে উঠলো ওর।একবার আমার দিকে আরেকবার অনিকের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই দৌঁড়ে রুমে চলে গেল।

ও চলে যেতেই আমি অবাক হয়ে অনিকের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম।চোখের দৃষ্টি দিয়ে জানতে চাইলাম,তরী তোমার সাথে এরকম আচরণ করলো কেন!

আমার চোখের ভাষা বুঝে নিতে কষ্ট হলো না অনিকের।আমতা আমতা করে বললো,
–…….

চলবে….

#আগাছা
#khadija_Akter
পর্ব-০১

( সাড়া পেলে নেক্সট পার্ট দিব।😊)মাঝ রাতে ঘুম ভাঙতেই দেখি বিছানায় অনিক নেই!
অনিক সাধারণত এক ঘুমেই রাত পার করে দেয়।আজ এতো রাতে কোথায় গেল!

উঠে রুমের লাইট না জ্বালিয়েই ওয়াশরুম চেক করে এলাম।নাহ্,ওয়াশরুমে যায়নি।

বারান্দায় উঁকি দেওয়ার আগেই চোখ গেল বেডরুমের দরজার দিকে।দরজা ভেজানো;কিন্তু স্পষ্টতঃ মনে আছে ঘুমানোর আগে ছিটকিনি দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম।

তাহলে নিশ্চয়ই অনিক বেরিয়েছে,হয়তো পানি খেতে।
রুম থেকে বের হয়েই সামনের দৃশ্যটা দেখে আমি মোটামুটি একটা ধাক্কা খেলাম।

তরী আর অনিক পরস্পর একদম কাছাকাছি বসে একটা টিভি শো দেখছে এতো রাতে!দেখেই গা’টা জ্বালা করে উঠলো।
অনিক আমায় ধোঁকা দিচ্ছে না তো?কই ঘুম নষ্ট করে আমার সাথে তো কখনো এতো রাতে টিভি দেখেনি ও!

অনিক!আমার স্বামী।একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করে।ও আমার সংসারে প্রাচুর্যতা এনে দিতে না পারলেও আমাকে কখনো কোনো অভাবেও রাখেনি। প্রায় ২ বছরের সম্পর্কের পর পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়েছিল।আলহামদুলিল্লাহ এখন দাম্পত্যজীবনের ৪ বছর চলছে।

আমাদের জীবনটা সুখেই কাটছিল,যতদিন না তরীর আগমন ঘটে আমার বাসায়।

তরী!আমার দূর সম্পর্কের খালাতো বোন।ঢাকায় এসেছে HSC পরীক্ষা শেষ করে,এডমিশন কোচিং এর উদ্দেশ্যে। ঢাকায় ওর কোনো নিকটাত্মীয় না থাকায় আমি নিজেই ওকে আমন্ত্রণ করেছিলাম যতদিন না পাকাপোক্ত কোনো ব্যবস্থা হয়ে যায় ওর,ততদিন পর্যন্ত যেনো আমার বাসায় থেকে কোচিং করতে।

কেনো না,২ জনের সংসারে অনিক যখন অফিস চলে যায়,তখন আমার খুব একা লাগে।ভেবেছি একজন সঙ্গী জুটলে বেশ হবে।তখনো ভাবিনি আমার এই সাদরে আমন্ত্রণই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে!

যাইহোক,বেশ কিছুক্ষণ আমি রুমের সামনে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের পরখ করছিলাম।এবারে আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে ঠিক ওদের পিছনে দাঁড়ালাম আর একটা গলা খেঁকাড়ি দিলাম।দুজনেই চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো।

যেনো কিছু একটা লুকাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে এমন ভাবে শঙ্কিত হয়ে তরী কবলে উঠলো,
–আআপু এতো রাতে তুমি!

অনিককে দেখলাম কিছুটা বিব্রত দেখাচ্ছে,আমতা আমতা করে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
–আসলে ঘুম আসছিল না,তাই ভাবলাম টিভি দেখি।এসে দেখি তরী আমার আগেই টিভির রিমোট দখল করে বসে আছে।হাহাহা।

অনিকের কথায় আমার মোটেও হাসি পেলো না।

তবে মনের ভাব চেপে রেখে স্বাভাবিকভাবেই বললাম,

–কাল তো তোমার অফিস আছে,এতো রাত জেগো না।
আর তরী তুমিও ঘুমিয়ে যাও জলদি,একটা দিনও তো সকালে ঠিক সময়মতো ক্লাসে যেতে পারো না।

বলেই আমি ঘুরে রুমের দিকে হাঁটা দিলাম।আমার পিছন পিছন অনিকও আসছে।

তরী বলে উঠলো,
–কী জিজু, প্রোগামটা শেষ করে যাও?
–না থাক,তুমিই দেখো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।গুড নাইট।
–অক্কে জিজু।হেভ আ্য নাইস ড্রীম।

অনিক মুচকি হেসে বললো,
-ইউ টু।

রুমে এসেই দরজা আটকিয়ে আমি সোজা বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।অনিক ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওয়াশরুম থেকে এসে আমার পাশে শুয়ে,আমাকে নাম ধরে ডাকলো।আমি কোনো সাড়া দিলাম না।

ও আবার ডাকলো,
-লক্ষ্মীটি ঘুমিয়ে পড়েছো?
ওর এই আদুরে ডাকও আমার কাছে এখন কেমন যেনো অসহ্য লাগছে।আমি এবারেও সাড়া দিলাম না।মরার মতো চুপ করে পড়ে রইলাম।

—————-

সকালে উঠে নাস্তা বানাচ্ছি।আজ দেরী হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে।অনিকের অফিসের সময় হয়ে গেছে।নাস্তা রেডী না থাকলে হয়তো না খেয়েই চলে যাবে।

‌তখনি অনিক গোসল শেষ করে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রান্না ঘরে আসলো।
‌এসেই আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে একহাত আমার পেটে রাখলো আর অন্য হাত দিয়ে ঘাড়ের কাছের চুল সরিয়ে গলার কাছে একটা চুমু দিয়ে বললো,
‌–মেহের,তুমি কি রাগ করে আছো?(আমার নাম মেহেরীমা,অনিক আমাকে শুধু মেহের বলেই ডাকে।


‌অনিকের এহেন আচরণেই আমার ভিতরের রাতের সব রাগ অভিমান গলে পানি হয়ে গেল।মুচকি হেসে আমি আমার হাতটা কাঁধের উপর দিয়ে উলটো করে নিয়ে ওর ভেজা চুলগুলো ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললাম,
‌–আরেহ্ নাহ্,পাগল একটা!

‌ও আমাকে আরও জোরে চেপে ধরলো।তারপর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিল।

‌আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‌–এই সরো,কাজ করতে দাও।আর ড্রয়িং রুমে তরী আছে তো!


‌ঠিক তখনই ঠাসসসস!

‌দুজনেই নিরাপদ দুরত্বে সরে দাঁড়ালাম।
‌ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম,তরী রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর ওর হাতের চায়ের কাপটা নিচে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে চা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।


আমি দেখলাম তরী কিছুক্ষণ কটমট করে অনিকের দিকে চেয়ে রইলো।পরক্ষণেই দু’চোখ ছলছল করে উঠলো ওর।একবার আমার দিকে আরেকবার অনিকের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই দৌঁড়ে রুমে চলে গেল।

ও চলে যেতেই আমি অবাক হয়ে অনিকের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম।চোখের দৃষ্টি দিয়ে জানতে চাইলাম,তরী তোমার সাথে এরকম আচরণ করলো কেন!

আমার চোখের ভাষা বুঝে নিতে কষ্ট হলো না অনিকের।আমতা আমতা করে বললো,
–…….

চলবে….

#আগাছা
#khadija_Akter
পর্ব-০১

( সাড়া পেলে নেক্সট পার্ট দিব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here