আগাছা পর্ব ৭

#আগাছা
#Khadija_Akter
#পর্ব_০৭

একটু আগে অনিকের মুখে যে মেঘের ঘনঘটা ছিল,সেটা কেটে গিয়ে রোদের মুখ দেখা দিচ্ছে,হাসছে অনিক মিটিমিটি করে,তার হাসি আস্তে আস্তে আরও প্রসারিত হচ্ছে,আরও বেশি………!

“একটা মেয়ে বৃষ্টির মধ্যে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে কদমফুল নিয়ে। দুহাত দুইদিকে ছড়ানো, আকাশ পানে মুখ তার।চোখ বন্ধ,মুখে প্রানবন্ত হাসি।”
মেয়েটা আর কেউ না,মেহেরীমা!
খুব পছন্দের একটা ছবি এটা অনিকের।যখনই মন খারাপ হয় বা মেহেরকে মিস করে সে ঠিক তখনই খুঁজে খুঁজে এই ছবিটাই বের করে।আর অপলক নয়নে চেয়ে থাকে।
বিয়ের কিছুদিন আগে তোলা ছবি,এই ৪ বছরেও একটুও পুরাতন হয়নি তার কাছে ছবিটা। যতবার দেখে ততবারই নতুন মনে হয়!

গত ২দিন সে অনেক অনেক মিস করেছে মেহেরকে।
কিন্তু ঐ যে,মনে পুষে রাখা রাগ তাকে দূর করে দিয়েছে প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে!

অনিক ভাবলো,খুব করে ভাবলো…..
আসলে মেহেরের তো কোনো দোষ নেই।পৃথিবীর কোনো মেয়েই চাইবে না তার স্বামীর পাশে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে।
যদিও আমার তরীর প্রতি অন্যরকম কোনো লালসা নাই।কিন্তু তরীর প্রতি আলাদা ভালোবাসার কারণ টা তো আর আমি মেহেরের সাথে শেয়ার করিনি।
তাই ভুল বোঝাটা অসম্ভব কিছু না।

কিন্তু সেদিন যে আমার কি হয়েছিল,কি জানি!ওর কথাগুলো হজম করতে পারিনি,রিয়েক্ট করে বসেছিলাম।
আমার উচিত ছিল ওকে শান্ত করা।ওকে ভরসা দেওয়া যে আমি এখনো তোমারই আছি মেহের।
কিন্তু আমি কি করলাম….!

আসলে গত ১মাসে তার উপর এতো কাজের প্রেশার ছিল যে,অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যেত।
তবে সে যেটার জন্য দিনরাত এতো মেহনত করেছে,সেটা অবশেষে অর্জন হতে যাচ্ছে।
আগামীকালই প্রজেক্টের ফাইনাল সব কিছু বুঝিয়ে দিবে ইন্ডিয়ান এই কোম্পানিকে।
তারপর আর তার প্রমোশন ঠেকায় কে!

অনিক মনে মনে ঠিক করলো কাল একবারে বাসায় গিয়েই মান ভাঙাবে মেহেরের।
তারপর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে লম্বা একটা ট্যুর দিবে মেহেরীমাকে নিয়ে।
মেয়েটাকে একটুও সময় দিতে পারেনি সে এই ক’দিন।যেকোনো মূল্যেই হোক ওর সব ক্ষোভ দূর করে দিব আমি।

—————

বাংলাদেশী সময় রাত-১১ঃ৩০ টা

রাতের খাবার খেয়েদেয়ে শাশুড়ী ঘুমাতে চলে গেলেন আর আমি সবকিছু গুছিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।

অনিক বাসায় না থাকাতে এখন তরীর মুখ দেখাও ভার হয়ে পড়েছে।সারাদিন রুমে বসে থেকে যে কি করে শুধু ওই জানে!
আমাদের সাথে খেতেও বসেনি।আগে অথবা পরে খেয়ে চলে যায়।
যাক সে-ই ভালো বাবাহ্!এই মেয়েটাকে এখন আমি একদম সহ্য করতে পারছি না।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম অনিকের কাছে কিভাবে স্যরি বলা যায়।না জেনে বুঝেই অতগুলো অপবাদ আমি ওকে দিয়ে দিয়েছিলাম,না জানি কতটা খারাপ লাগছে ওর।
অনিক কি আমায় আদৌ ক্ষমা করবে?

ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে নিলাম,অনিককে কল দিতে গিয়েও পরে আবার ভাবলাম,থাক কালই তো আসার কথা ওর।ক্ষমাটা নাহয় সামনাসামনিই চেয়ে নিলাম।
আমি নিশ্চিত যে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইলে,ও আমায় মাফ না করে থাকতেই পারবে না!

অনিকের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম,বুঝতেই পারিনি।

——————-

পরদিন সকালবেলা,
পাখির কিচিরমিচির ডাক আর পর্দার ফাঁক-ফোকর
দিয়ে ঢুকে পড়া রোদ আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিল।

ঘড়িতে দেখলাম ৭টার কাছাকাছি বাজে।
শোয়া থেকে উঠে বসতেই মাথাটা ঘুরে গেল,মাথা আর শরীর এতো ভার ভার লাগছে যে আর উঠার সাহস করলাম না।
আবারও শুয়ে পড়লাম।

আমার মনটা আজকে অনেক ফুরফুরে লাগছে।অনেকদিনপর আমি একটা সুন্দর সকাল দেখছি।আজ যে অনিক আসবে!
ভাবতেই মনের ভিতরটা পুলকে ভরে উঠলো।

কিন্তু আমার শরীরের কী হলো!এতো জ্বর জ্বর আর দূর্বল লাগছে কেন?
শুয়ে থাকতে থাকতে আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম।

বেলা সাড়ে দশটায় ঘুম ভাঙলো।
চেয়ে দেখি আমার শাশুড়ী মা আমায় শিয়রের পাশে বসে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে,উনার হাতটা টেনে নিয়ে এসে আলতো করে চুমু খেলাম।

–শরীর খারাপ লাগছে বুঝি?এতো বেলা পর্যন্ত তো ঘুমাও না কখনো।

–হ্যাঁ মা,সকালেই উঠেছিলাম। কিন্তু শরীরটা অনেক দূর্বল লাগছিল।তাই আবার ঘুমিয়ে গেছিলাম।

–আসো,উঠো।ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো।আজ নাস্তা আমি বানিয়েছি।

–আম্মা,আপনি কেন কষ্ট করতে গেলেন।আমাকে ডাকলেই তো হতো।আসলে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম বুঝতে পারিনি।

–আরেহ্ মা ছাড়ো তো।কাজের মানুষ কাজ ছাড়া কি আর ভালো লাগে? ঘরের এইটুকু টুকটাক কাজও যদি না করতে দাও তাহলে তো বসে বসে কুঁড়ে হয়ে যাব।
আর এই সময়ে তোমার একটু রেস্টও দরকার।
তুমি আসো,আমি খাবার রেডি করছি।

উনি যাওয়ার পর আমি উঠে ওয়াশরুমে গেলাম।ব্রাশে টুথপেস্ট লাগাতে লাগাতে,আম্মার একটা কথা মনে করে আমি একটু হতভম্ব হলাম।
“এই সময়ে আমার রেস্টের দরকার” মানে আম্মা ঠিক কি বুঝাতে চাইলেন! আশ্চর্য!

——————

শেষ মিটিংটাও এই মাত্র শেষ করে হোটেলে ফিরে এলো অনিক।
এখন শুধু গোছগাছ করে এখান থেকে চেক আউট করার পালা।
সব ঠিকঠাক থাকলে দুপুরের পরপরই সে বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে।

সব গুছানো হয়ে গেছে,রেডী হয়ে বের হওয়ার আগে সে হোটেলের ওয়াইফাই কানেকশনটা ফোন থেকে যেই না অফ করতে যাবে,ঠিক তখনি কল আসে একটা অনিকের ফোনে।

মেহেরীমার কল!সত্যি মেহেরীমা ফোন করেছে অবশেষে। তারমানে তার রাগ ভেঙেছে! আমাকে ছাড়া এতটা সময় একা একা কাটালেও শেষ মুহুর্তে এসে আর অপেক্ষা পারেনি পাগলীটা।

–হ্যালো মে..

–হ্যালো অনিক!কিরে বাবা কেমন আছিস তুই?কখন ফিরবি?আজ আসবি তো?

–মা!তুমি?কবে এসেছ?আর আমাকে জানাওনি কেন?

–কালই এলাম বাবা।তোর তো অনেক সাহস,আমার মেয়েটাকে বাসায় একা রেখে তুই দেশের বাহিরে চলে যাস!আমি তো আর আমার মেয়েকে একা ছাড়তে পারি না।তাই চলে এসেছি।

–একা কোথায় রেখে এলাম মা! তরী তো…

এইটুকু বলেই থমকে গেল অনিক।তরী!
মা তরীকে দেখে নেয়নি তো!মায়ের রিয়েকশন কি ছিল!
অনিক উত্তেজিত হয়ে আবার বলতে লাগলে,

–মা তুমি ঠিক আছো তো?

ছেলের এই উদ্বেগের কারণ রহিমা বেগম স্পষ্ট বুঝলেন।তিনি বললেন,

–আমি একদম ঠিক আছি বাবা।আর তুই কি বলতে চাইছিস সেটাও বুঝতে পারছি।
তুই একদম চিন্তা করিস না।তোর মা নিজেকে সামলে নিয়েছে গত ১২ বছরে।

–………………

–তুই কখন আসবি বাবা?আজ আসবি তো?
তোর পছন্দের মাছ আর শুটকি রাঁধতে চেয়েছিলাম আর কি।

মায়ের হাতের কৈ মাছ ভুনা আর শুটকি তরকারির কথা মনে পড়তেই অনিকের জিহবায় পানি চলে আসলো।বিগলিত কন্ঠে জবাব দিল,

–২ ঘন্টা পরেই আমার ফ্লাইট মা।এখান থেকে সোজা অফিসে যাব।কিছু কাজ সেরে তারপর একবারে বাসায় আসবো।

–আচ্ছা সাবধানে আসিস।এই নে বউমার সাথে কথা বল।

এটা শুনে অনিক খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেল।সে চেয়েছিল রাগ-অভিমান ভুল বুঝাবুঝি যা-ই ছিল না কেন,একবারে সামনে এসে ভাঙাবে।এখন হঠাৎ করে মেহেরকে সে ঠিক কি বলবে না বলবে ভাবতেই তার ঘাম ছুটে গেল।

মাঝেমাঝে অতি আপন মানুষটির সাথেও কথা বলাটা অনেক কঠিন কাজ হয়ে পড়ে।

“না, আম্মা এখন না।আপনি রেখে দিন।” বলেই মেহেরীমা পালিয়ে বাঁচলো।
মাঝখানে কয়েকদিনের দূরত্ব এদিকে তাকেও খুব অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে শাশুড়ীর সামনে অনিকের সাথে এভাবে কথা বলার ব্যাপারটা আসাতে।

এমেহেরীমা ফোন না ধরাতে অনিকও যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে ফোন রেখে দিল আর হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এলো।

——————-

শাশুড়ী বউমা মিলে রান্নার কাজটা সামাল দিচ্ছে।আজ সব অনিকের পছন্দের ডিশ রান্না হচ্ছে বাসায়।
আম্মা রান্না করছে আর আমি টুকিটাকি কাজ করে দিচ্ছিলাম।
দুজনে মিলে গল্প করতে করতে,একফাঁকে শাশুড়ী মা মৃদু হেসে বললেন,

–অনেক দিন তো পার হলো বউমা!এবার তো নাতি-নাতনীদের মুখ দেখার মতো সুযোগ করে দাও আমাদের।আর কত অপেক্ষা করাবে আমাদের বুড়া-বুড়িকে?

আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম।আমতা আমতা করে বললাম,

–আর কয়েকটা দিন যাক আম্মা।অনিক বলেছে ওর নেক্সট প্রমোশনটা হয়ে গেলেই আমরা একটা ভালো সোসাইটিতে শিফট হতে পারবো।আর তখনি এসব নিয়ে চিন্তা করে দেখবে।

–শুনো মা,রিজিকের মালিক আল্লাহ।দেওয়ার মালিকও আল্লাহ।
তোমাদের কি জমানা আসলো বুঝি,বাচ্চা নিতে হলেও নাকি কত প্ল্যান পরিকল্পনা প্রোমোশন লাগে!

আমাদের সময়ে তো ধরো এই বছর একজনের বিয়ে হলো তো সামনের বছর তার কোলে একটা বা দুইটা লেদা বাচ্চা তুমি দেখবাই,একদম নিশ্চিত।

আমি আর শাশুড়ী দুজনেই একযোগে হেসে উঠলাম।

একটুপর খেয়াল করলাম, শাশুড়ী আমার দিকে কেমন আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।

–আম্মা কি হয়েছে? হাসছেন যে?

–নাহ্ কিছু না।

–না কিছু তো একটা আছেই।আপনি অনেক্ষন ধরেই হাসছেন।বলেন না আম্মা হাসছেন কেন?না বললে কিন্তু আমি আজ ছাড়ছি না।

কথাটা বলেই আমি আমার শাশুড়িকে পিছন থেকে পাজাকোলা করে জড়িয়ে ধরলাম।আর আদুরে সুরে বারেবারে বায়না করতে লাগলাম,কেন হাসছে তা বলার জন্য।
আম্মা হাসতে হাসতেই বললেন,

–আর কত ধৈর্যের পরীক্ষা নিবে আমার,বলো তো?

–মানে?বুঝলাম না তো।

শাশুড়ি মা সকৌতুকে বললেন,

–না,ইয়ে মানে টানে তেমন কিছু না।ঐ আর কি বললাম যে,বিয়ের পর ৩টা বছর তো কাটিয়ে দিলে পড়াশোনার উছিলায়।কিন্তু গত ১বছর আগেই তো তোমার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে।এখনো কেন অপেক্ষা করাচ্ছো আমাদের সেটাই বললাম।

–বললাম তো মা,অনিক আরও কিছুদিন সময় চায় আরেকটু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য।
বাচ্চা তো আর আমার একার সিদ্ধান্তে আসবে না।আপনার ছেলেরও তো মতামত থাকতে হবে।

–হুম হুম! ঠিক ঠিক!

রহিমা বেগম আবারও মিটিমিটি হাসতে লাগলেন।

—————–

আজ সকাল থেকেই তরী ড্রয়িং রুমে আছে কোনো না কোনো উছিলায়।কখনো টিভি দেখছে,কখনো ম্যাগাজিন পড়ছে বা বসে বসে ফোন চাপছে।

আজ আর রুমে যাওয়ার নাম নেই তার!সকালে ঘুম থেকে উঠেই পার্লারে গিয়ে যত ধরনের শর্টকাট প্যাকেজ আছে সকল সার্ভিস সে নিয়ে এসেছে।
বাসার মধ্যেও এতোটা পরিপাটি হয়ে বসে আছে,যে কেউ দেখলে ভাববে তাকে বুঝি পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে!

তরীর চাল-চলন, হাবভাব কিছুই নজর এড়ালো না আমার।মনে মনে কষ্ট পাচ্ছি,আমার স্বামীকে পটানোর জন্য অন্য কোনো নারী সাজগোজ করে বসে আছে আমারই চোখের সামনে আর আমি কিছু বলতেও পারছি না!
আবার এটা ভেবে ভালোও লাগছে যে, মেয়ে তুমি যতই সাজগোজ করো না কেনো,স্বামী তো আমারই!অধিকারও আমারই!
তুমি বড়জোর অনিকের বোনের জায়গাটা নিতে পারো এর চেয়ে বেশি কিছু না,হুহ।

বসে বসে একাএকাই এভাবে নিজের সাথে নিজে লড়াই করে যাচ্ছিল মেহেরীমা।

রহিমা বেগম বউমার মনের অবস্থাটা আন্দাজ করতে পেরে তাকে শান্তনা দিতে লাগলেন।

–জানি মা তোমার মনে এখন কি চলছে।তোমাকে তো আমি সবই বলছি মা!তাহলে অহেতুক কেনো কষ্ট পাচ্ছ?যতদিন তুমি আর তোমার স্বামী ঠিক থাকবে ততদিন কোনো তৃতীয় ব্যাক্তিই পারবে না তোমাদের সংসার খারাপ করতে।

আমি কান্না জড়িত কন্ঠে বললাম,

–আম্মা,আমি তরীকে শাস্তি দিতে চাই।কঠিন শাস্তি!
যেনো কখনো কোনো মেয়ের স্বামীর দিকে নজর দেওয়ার মতো হিম্মত ওর মনে না থাকেন।ও যেনো অন্যের সংসারে আগাছা হয়ে গজাতে না পারে।যেনো উপকারীর অপকার করতে না পারে।

–ঠিক আছে বউমা।আমরা ঐ শয়তান মেয়েটির একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবো।কিন্তু তার আগে তোমার চাচা-চাচী দেশের থেকে যাক।

–সেটা নাহয় গেল।কিন্তু আম্মা,অনিক!

অনিককে কিভাবে বুঝাবো যে তরী মেয়েটা আসলে কী চায়?তরীর নামে কিছু একটা বললেই তো ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আগে তো বুঝতাম না কেন এরকম করে,তখন অন্য কিছু ভেবে কষ্ট পেতাম।এখন তো জেনে গেছি,হয়তো কষ্ট পাবো না আগের মতো।

কিন্তু অনিককে বুঝাতে তো হবে যে অনিক তরীকে যে নজরে দেখে তরী মোটেও সেই নজরে দেখে না।অনিকের তরীর প্রতি এতোই টান যে এইটুকু বুঝাতে গেলেও তো অনিক আমাকে ভুল বুঝবে,ভাববে আমি তরীকে দেখে জ্বলি।
আমি কি করবো এখন আম্মা?

–আগে আগে এতো চিন্তা করো না মা। একটা সত্যি কথা বলি শুনো,
তরীর মাঝে আমি যখন আমার আনিকাকে দেখতে পেয়েছিলাম,আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তরী মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরি।বুকের সবটা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখি,যে-কোন মূল্যেই আর হারাতে দিব না ওকে।
কিন্তু মেয়েটা সেই যে সকালে দরজা লাগালো,আর খুললোই না।
তাইতো সারাক্ষণ শুধু তোমার কাছে তরী তরী করছিলাম, তরীর কথা শুনে সুখ পাচ্ছিলাম।
কিন্তু যখন থেকেই তোমার মুখে এই মেয়েটার কান্ডকারখানা শুনলাম,তখন থেকেই আমার সমস্ত মাতৃস্নেহ উবে গিয়েছিল মেয়েটার উপর থেকে।

একটা কথা খুব করে বুঝে গিয়েছি,মেয়ের মতো দেখতে হলেই মেয়ে হওয়া যায় না।আমার মেয়েটা যদি তরীর মতো এমন কালনাগিনী হতো তাহলে আমি নিজ হাতেই ওকে মেরে ফেলতাম।

তুমি দেখো,একদিন না একদিন এই মেয়েটার মুখোশ অনিকের সামনে উন্মোচিত হবেই।সেদিন অনিকের মন থেকে সমস্ত ভ্রাতৃস্নেহ উঠে যাবে।
আর অনিকও বুঝতে পারবে,দেখতে বোনের মতো হলেই সবাইকে বোন ভেবে আপন করে নেওয়া যায় না।

সব ঠিক হয়ে যাবে একসময় মা,শুধু সময়ের ব্যাপার।মাশআল্লাহ তুমি অনেক ধৈর্য্য ধরেছো,আর কিছুদিন ধৈর্য্যর পরীক্ষা দাও মা।

আর আমি তো আছি,মরে তো যাইনি।
আমি ততদিন পর্যন্ত তোমার এখানে থাকবো যতদিন না পর্যন্ত তোমাদের সোনার ফসল আগাছামুক্ত হয় ।

শাশুড়ির কথা অনেকটা চিন্তামুক্ত হয় মেহেরীমা।তাকে আর এখন একা একা লড়তে হবে না। তার সাথে তার মা আছে।সে নিশ্চিন্ত মনে উঠে গোসলে চলে যায়।

—————-

দুপুরের খাবার খাচ্ছে সবাই।
আজ তরীও বসেছে মেহেরীমাদের সাথে।

তরীর দিকে পাত্তা না দিয়ে আমি আর আম্মা দু’জনে খেতে খেতে গল্প করছিলাম আর খাচ্ছিলাম।
অনিকের পছন্দের সব খাবার রান্না হয়ে গিয়েছে।অনিক আসলে তারপর সেগুলো রাতের খাবারে পরিবেশন করা হবে।

অনিকের মতো আমারও ও শাশুড়ীর হাতের কৈ মাছ দিয়ে ভুনাটা অনেক পছন্দের।
তাই আম্মা আগে থেকেই রাতের কৈমাছের তরকারিটার কিছু অংশ একটা বাটিতে তুলে রেখেছিল দুপুরে আমাকে খাওয়ানোর জন্য।

অনেক আগ্রহ নিয়ে কৈ মাছটা পাতে নিতেই আমি আর বমি আটকে রাখতে পারলাম না।মাছের গন্ধে আমার নাড়ীভুঁড়ি উলটে বমি আসতে লাগলো।দৌঁড়ে বেসিনে চলে গেলাম।

বমি করে শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে।আর খেতে ইচ্ছে করেছে না।রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।

একটুপর সব গোছগাছ করে শাশুড়ী মা আমার রুমে আসলেন।
উনার মুখে আগের মতোই মিটিমিটি হাসি লেগেই আছে।এই হাসি যেন আর ফুরাবার নয়।২দিন ধরে হেসেই যাচ্ছেন তো হেসেই যাচ্ছেন।
উনি আমার পাশে এসে বসে মাথায় হাত রাখলেন।

আমি অভিমানী সুরে বললাম,
–আম্মা,আমার অসুস্থতা দেখে আপনার হাসি পাচ্ছে!

উনি এবার জোরে জোরে হাসলেন,

–আর কতদিন লুকাবে আমার কাছে শুনি?এবার তো বলে দাও।

–আম্মা কি বলছেন?কি লুকাবো!

–এটাই যে আমি দাদী হতে যাচ্ছি!

আমি তো শাশুড়ীর কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম!হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝলাম না।

–কি বলেন আম্মা?আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
আসলে সংসারের এতোদিন অনেক অশান্তি ছিল জানেনই তো ।মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম।তাই ঠিকমতো খেতে ইচ্ছে করতো না আর সেই থেকে শারীরিকভাবেও দূর্বল হয়ে পড়েছি।

–যা ভেবেছি তাই!

–কী?

–আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে তুমি নিজেও জানতে পারো নাই এখনো।
শুনো মা,আমরা আগের যুগের মানুষ। মুখ দেখলেই সব বলে দিতে পারি।
তুমি মা হতে চলেছো বোকা মেয়ে!অথচ নিজেও জানো না।

আমি হতভম্ব হয়ে পিটপিট করে চেয়ে রইলাম আম্মার দিকে।কি বলে উনি এগুলো!আমি মা হবো,আর আমিই জানি না!কেনো যেনো ভীষণ হাসি পাচ্ছে আমার।আমি কোনোমতে হাসি চেপে বললাম,

–না,মা এরকম কিছুই না।আপনি কিসের ভিত্তিতে বলছেন এই কথা!আমি মানছি যে আপনারা মুরব্বি মানুষ। অনেক অভিজ্ঞতা আছে তাই অনেক কিছুই বুঝতে পারেন।কিন্তু এবারে কোথাও ভুল হচ্ছে আপনার।
আমি তো বললাম আমি চিন্তায় চিন্তায় একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছি।এছাড়া আর কিছুই না।

–হাহাহা।আচ্ছা বলো তো এই মাসে কি তোমার পিরিয়ড হয়েছে।

আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম,তারপর চমকে উঠে আম্মার দিকে চেয়েই রইলাম।
কারণ পিরিয়ডের ডেট আমার অনেক আগেই পার হয়ে গেছে।আর এতো ঝামেলার মাঝে আমার এটা মাথায়ও আসেনি।

–কি হলো?বলো?

–না আম্মা হয়নি।কিন্তু মাঝে মাঝে ডেট ওভার হয়ে যেতেই পারে,তাই বলে কি…..

–বুঝেছি,আমার কথা বিশ্বাস করবা না তুমি।
উঠো তো,উঠো।

–কেন?

–রেডি হও।

–কোথায় যাব?

–ক্লিনিকে।

–কিন্তু কেন!

–আমি বলছি তাই।

অতঃপর আমার শাশুড়ী আমাকে একপ্রকার জোর করে ধরে বেঁধে ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে নিয়ে রওনা হলেন।

—————

বিকাল-৫টা
অনিক তার অফিসে বসে আছে।আরও ১ঘন্টা আগেই দেশে এসে পৌঁছেছে সে।
কয়েকটা ই-মেইল সেন্ড করা হয়ে গেলেই তার আর কোনো কাজ নেই।

ই-মেইল সেন্ড করা হওয়া মাত্রই সে কম্পিউটারটা অফ করে দিল।ড্রয়ার থেকে চাবিটা আর দরজার সামনে থেকে লাগেজটা নিয়েই অফিস থেকে বের হয়ে গেল।

বাসার কাছাকাছি এসে ‘করবী ফুল বিতান’ থেকে অর্ডার দিয়ে একটা সাদাগোলাপের বুকি বানিয়ে অনিক সঙ্গে নিয়ে নিল।

যতবারই সে অফিসিয়াল ট্যুরে বাসার বাহিরে যায়,আসার সময় এই ফুলের দোকানটা থেকে মেহেরের জন্য সাদা গোলাপের তোড়া নিয়ে যায়।
এটা এখন প্রায় একটা আবশ্যকীয় নিয়মে পরিনত হয়েছে তার জন্য।
মেহেরের সাদা গোলাপ অনেক পছন্দ!

——————

শাশুড়ী আম্মা ঘুমাচ্ছেন।
তরী ড্রয়িং রুমে বসে ফোন টিপছে।

আর আমি শুয়ে আছি।ক্লিনিক থেকে এসে শরীরটা আরও খারাপ লাগছে।মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেছে।দূর্বল শরীর নিয়ে শুয়ে আছি।আর অনিকের কথা ভাবছি।

কখন আসবে ও?ও কি দেশে এসে পৌঁছাইছে?একবার ওর নাম্বারটাতে ট্রাই করে দেখবো? যদি খোলা পাই তাহলে তো কনফার্ম হতে পারবো।

ঠিক তখনই কলিং বেল বাজলো…

আমি তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।শরীর দূর্বল,মাথা ঘুরাচ্ছে।তবুও ঝটপট আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে একটু দেখে নিলাম।
তারপর রুমের দরজা খুলে বের হয়ে কিছু দূর আগাতেই দেখি আমার আগে তরী দরজা খুলে দিয়েছে।

একহাতে সাদা গোলাপের বুকি আর অন্যহাতে লাগেজ নিয়ে দরজার বাহিরে হাসোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে অনিক।আমার অনিক!

হাতের সাদা গোলাপের তোড়াটার দিকে চেয়ে আমার চোখ চকচক করে উঠলো।এতোকিছুর পরেও অনিক ভুলেনি আসার সময় আমার জন্য গোলাপ আনতে।

আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম ফুলগুলো নেওয়ার জন্য।তার আগেই তরী ছোঁ মেরে অনিকের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে নিল।
তারপর আদুরে সুর করে টেনে টেনে বললো,
–থ্যাঙ্কিউ অ নি ক জি জু।

আমি সেখানেই থেমে গেলাম।স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছি তরীর হাতের ফুলগুলোর দিকে।

আমার দিকে চোখ পড়তেই অনিক থতমত খেয়ে আমার চোখের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইলো।যেনো চোখের ভাষায় বুঝাতে চাইছে,
“মেহের ভুল বুঝো না,ফুলগুলো আমি তোমার জন্যই এনেছিলাম।কিন্তু ভুল হাতে চলে গিয়েছে।”

অনিকের চোখের ভাষা আমি বুঝলাম ঠিকই কিন্তু না বোঝার ভান করে,মনটা খারাপ করে আবার রুমে চলে আসলাম।দরজার দিকে আর যাইনি।

আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম যে এখানে অনিকের কোনো দোষ নেই।সব দোষ ঐ শাকচুন্নিটার।
তরী অনিকের কাছে থেকে ফুলগুলো একপ্রকার ছিনিয়েই নিয়েছে বলতে গেলে।
এখন ফুলগুলো আবার তরী কাছ থেকে ফেরত নিতে হয়তো অনিকের দ্বিধাবোধ হচ্ছিল।

কিন্তু তবুও আমার খুব অভিমান হচ্ছিল অনিকের উপর।
কথায় আছে না,”প্রিয় মানুষের প্রতি অকারণেও অভিমান করতে ভালো লাগে।”
মেয়েরা যখন অকারণেও অভিমান করে তখন বুঝে নিতে হয় যে মেয়েটি এখন একটু ভালোবাসা চাইছে তার প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে।

অনিকও খুব ভালো করেই বুঝে সেটা।আমি যখন ভালোবাসার অভাববোধ করি,তখন ছোট্ট একটা বিষয় নিয়েও অভিমান করি।আর অনিক তখনই বুঝে নেয়,বউয়ের ভালোবাসার তৃষ্ণা পেয়েছে।
তখন সে সব কাজ ফেলে রেখে ব্যস্ত হয়ে যায় আমার অভিমান ভাঙাতে।

কিন্তু আজ কি অনিক আমার অভিমানকে বুঝবে?মান ভাঙাবে আমার?কিন্তু কেন ভাঙাবে!ও নিজেই হয়তো আমার উপর অভিমান করে আছে এখনো!
বুঝে না বুঝে কতই না অপবাদ দিয়ে রেখেছি ওর চরিত্রে!

মেহের চলে যেতেই অনিক তরীর সাথে দুয়েকটা কথা বলে, রুমে দিকে চলে আসছিল।তরী পিছন থেকে ডাকলো,

–অনিক জিজু,মাত্রই তো আসলে।এখনি ভিতরে চলে যাচ্ছা যে?আসো এখানে বসে আগে একটু গল্প করি।

–হেই সুইটি,আমি খুব টায়ার্ড এখন।ফ্রেশ হয়েই ঘুম দিব একটা।
সন্ধ্যার পর মন ভরে আড্ডা দিব আমরা,অকে?

তরীর মুখটা কালো হয়ে গেল।তবুও সে বললো,
–অকে।তুমি যা বলবা সেটাই হবে।

তরীর মন খারাপের বিষয়টা নজরে পড়লো অনিকের কিন্তু তবুও সে না দেখার ভান করে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

আসলে অনিকের মনে পড়ে আছে মেহেরের দিকে।
এমনিতেই মেয়েটাকে সে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে এই কয়েকদিনে।শুধু মানসিকভাবে না,শারীরিকভাবেও আঘাত করেছে!
তার উপর আজ আবার ওর পাওনা ফুলগুলোও একটা মেয়ে নিয়ে গেল ওর চোখের সামনেই,তাও এমন একজন মেয়ে যে মেয়েকে ও আমার সাথে জড়িয়ে সন্দেহ করে!

মেহেরের চোখে স্পষ্ট অভিমান দেখতে পেয়েছিল অনিক।তাই এখন সে আর এখানে সময় ব্যয় করে মেহেরের কষ্টটাকে বাড়াত চায় না।

“ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে আছে অনিক।ঘামে শার্টের ভিতরে গেঞ্জি ভিজে তারপর শার্টও ভিজে গেছে অনেকাংশে।

শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো,হাতের লোমগুলো ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে হাতের সাথে।বুকের যতটুকু লোম দেখা যাচ্ছে ঐ লোমগুলোর একই অবস্থা।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।”

রুমে ঢুকা মাত্রই মেহেরীমা এক নজরে সবটা পর্যবেক্ষণ করে নিল অনিককে। অনিকের এই রুপটা ওর খুব খুব খুব পছন্দের।

এদিকে অনিক রুমে ঢুকেই হাত থেকে লাগেজটা এক কর্ণারে রেখে ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে ফ্যানের নিচে এসে দাঁড়ালো ।সে হাপাচ্ছে ভীষণ।
হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কপালের জমে থাকা ফোঁটা ফাঁটা ঘামগুলোকে সরিয়ে দিয়ে হাতটা কোমরের উপরে রাখলো।
অন্যহাত দিয়ে শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলে দিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বাতাস নিচ্ছে শরীরে।

কিছুটা স্থির হয়ে এবারে অনিক ঘাড় ফিরিয়ে খাটের উপর বসে থাকা মেহেরর দিকে তাকালো।

মেহের এতক্ষণ ধরে গভীর মনোযোগ দিয়ে অনিককেই দেখছিল।
অনিকের চোখে চোখ পড়তেই মেহেরীমার অভিমানটা দ্বিগুন বেড়ে গেল।
সে খাট থেকে উঠে গিয়ে ব্যলকনির দিকে চলে যাচ্ছিল।যখন অনিককে ক্রস করছিল, অনিক হুট করে মেহেরের হাত ধরে তাকে একদম কাছাকাছি নিয়ে এসে মুখোমুখি দাঁড় করালো।

এক হাতে মেহেরের হাত ধরে রেখে,যতটা পারা যায় পিছনের দিকে ঝুঁকে হা করে খুলে থাকা দরজাটাকে অন্য হাতে ধাক্কা দিয়ে দিল।দরজাটা পুরোপুরি বন্ধ হলো না,অর্ধেক গিয়েই থেমে গেল।

অনিক সেদিকে পাত্তা দিল না আর।
এবারে সামনের দিকে ঘুরে মেহের কিছু বুঝে উঠার আগেই অনিক তার বাম গালে হুট করেই চকাশ শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে নিল।

একবার চুমু খেয়েই ক্ষ্যান্ত হলো না,মেহেরীমার গালে ঠোঁট দিয়ে ঘষতে শুরু করে দিল।

তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
এই গালে আমি আঘাত করেছিলাম!আজ সে আঘাত তুলে নিচ্ছি।
আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও।আর কক্ষনো অনিক তার মেহেরকে আঘাত করবে না,প্রমিজ।

এ যে দেখি মেঘ না চাইতেই জল!যেখানে আমি যা নয় তা বলে অপমান করেছি অনিককে।সেখানে আমি স্যরি বলার আগে,আমি ওর রাগ ভাঙানোর আগে,ওই আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে!

অবশ্য ও স্যরি না বললেও হতো।ওর একটা চুমুর পরেই আর ভিতরের সব অভিমান নাই হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু আমি সেটা অনিককে বুঝতে দিলাম না।
আরও বেশি রাগ দেখিয়ে শক্ত হয়ে,ওর কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম।

অনিক দেখলো,মেহের তার স্যরি এক্সেপ্ট করছে না।
ওর মুখে হাসি ফোটেনি,এখনো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে।
অনিকের কাছ থেকে ছাড়া পেতে চেষ্টা করছে মেহের।

তাই দেখে অনিক আরও জোরে চেপে ধরলো ওকে,একদম নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মেহেরের চোখে চোখ রেখে বললো,”যাও এবার দেখি কেমন যেতে পারো!”

মেহের আবার চেষ্টা করলো,কিন্তু এবারে একচুলও নড়তে পারলো না।
বাধ্য হয়ে এবার সে ঐভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো অনিকের মুখোমুখি হয়ে।কিন্তু ঘাড় ফিরিয়ে রেখেছে অন্যদিকে।

অনিক এক হাত দিয়ে মেহেরের কোমর চেপে ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে ওর মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে বললো,

“ঐদিকে কি?ঐদিকে তো আমি নাই।তোমার অনিক তো এই দিকে!”

ওর মুখে “তোমার অনিক” কথাটা শুনে ভিতরে ভিতরে একটা ঢেউ খেলে গেল।
এই প্রথমবারের মতো স্বেচ্ছায় মাথা উঁচু করে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে ওর চোখে চোখ রাখলাম।

আমি খুব করে চাইছি রাগ করে থাকতে,ওর চোখে চোখ না রাখতে,ওর বাহুডোর থেকে বেরিয়ে যেতে।

কিন্তু আমার শরীর তাতে সায় দিচ্ছে৷ না।একদম সরাচ্ছে না চোখদুটো ওর চোখের উপর থেকে,শরীরটা সরতে চাইছে না ওর সান্নিধ্য থেকে বরং আরও চিপকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে ওর শরীরের সাথে।

এদিকে অনিকের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো!এই নিষ্পাপ মানুষটাকেই আমি কিছুদিন আগে কত কিছুই না বলে ফেলেছি!
নির্দোষ হয়ে কথাগুলো হজম করে নিতে কতটাই না কষ্ট হয়েছে তার!
ভাবতে ভাবতে দুচোখ ভর্তি হয়ে গেল পানিতে তারপর টপাটপ করে গাল বেয়ে পড়তে লাগলো সেই পানি।

অনিক দেখলো মেহের কাঁদছে!তবে সে জানে এই কান্না কষ্টের কান্না না,এটা সুখের কান্না।
অনিক মুচকি হাসলো,যাক অবশেষে রোদের দেখা পাওয়া গেছে। বরফ তবে গলতে শুরু করেছে।

সে মেহেরীমার দু’চোখে দুটো চুমু খেলে গেল।
“হয়েছে,এবারে কান্না বন্ধ করো।আছি আমি তোমারই পাশে।”

“আই’ম স্যরি অনিক!তোমাকে সেদিন অনেক কড়াকড়া কথা বলে ফেলেছিলাম রাগের মাথায়।আমি ওসব বলতে চাইনি একদম….”

বলতে বলতে কান্না ভেঙে পড়লাম আমি।

তারপর অনিকের বুকে মাথা গুজে,অনিককে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে।

কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর হঠাৎ অনুভব করলাম,অনিক ওর পায়ের নখ দিয়ে আমার পায়ের পাতায় আঁচরাচ্ছে।

অনিকের এই ইঙ্গিত আমার আমার পূর্বপরিচিত!

আমি একবার ঘাড় নুইয়ে ওর পায়ের দিকে চাইলাম,তারপর লজ্জা মিশ্রিত মুখ নিয়ে উপরের দিকে চেয়ে ওর চোখে চোখ রাখলাম।

দু’জনের মধ্যে কিছুক্ষণ চোখের ভাষায় কথোপকথন চললো।
নীরব শব্দের এই কথোপকথন শেষ হতেই আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।

আর ও আমার ঘাড়ে মুখ গুজে দিল।ওর তপ্ত শ্বাস আমার ঘাড়ের উপর পড়তেই আমি শিউরে উঠলাম।দু’হাতে ওর পিঠ আরো শক্ত করে খামচে ধরলাম………

#চলবে

(ওরে রে🙊 রোমান্টিক সীন লিখতে আমার শরম করে।🤦‍♀️এক লাইন লিখি তো আগের ২লাইন কেটে দেই! কিয়েক্টা অবস্থা বলো তো।☹️

অনেকদিন ধরে সাসপেন্স আর ইমোশনে রেখে ছিনিমিনি খেলছি পাঠকদের মন নিয়ে।
অনেকে বলেছে,রাতে নাকি ঠিক করে তারা ঘুমাতেও পারে না নেক্সট পার্টে কি হবে সেটা ভেবে! 😃কারো কারো আবার গল্প পড়তে গিয়ে বুকে ব্যাথা উঠে যেত!😄

তো আমি ভাবলাম মেন্টালি প্রেশার থেকে একটু রিলাক্স করা দরকার সবাইকে তাই আজকের পর্বটা একটু বড় করে দিব আর শেষের দিকে কিছুটা রোমান্টিক সীন আনবো।

কিন্তু লিখতে গিয়ে আমার খবর হয়ে গেছে🙆‍♀️লিখতে আর পারলাম কই!আমার আবার অনেক শরম!😛

নেক্সট পার্ট থেকে রোমান্স স্কীপ করে দিব।🤐)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here