আজকে শহর তোমার আমার পর্ব ১৩

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৩

ডাক্তার এসে রুপ্সিতাকে চেক-আপ করেছে।সবাই অধির আগ্রহে চেয়ে আছে ডাক্তারের দিকে উনি কি বলেন সেটা শোনার জন্য।ডাক্তার বললেন,উনার শরীরটা একটু উইক।খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করেনা মনে হয়।অনেক্ষণ পানিতে ভেজার কারণে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে রাতে জ্বর ও আসতে পারে।আমি কিছু ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছি সেগুলো আনিয়ে নিয়ে উনাকে খাওয়াবেন।
রুপ্সিতার শাশুড়ী ভেবেছেন হয়তো রুপ্সিতা প্রেগন্যান্ট।কিন্তু ডাক্তার উনার আশানুরূপ কথা না বলে অন্য কথা বললেন।উনি বরাবরই ছোট বাচ্চার প্রতি আগ্রহী।তাই রুপ্সিতার অসুস্থতায় এরকম একটা ধারণা করে বসে আছেন।

আরিফ গেছে ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে সামনের ঔষধ দোকান থেকে রুপ্সিতার জন্য ডাক্তারের বলা ঔষধ গুলো আনতে।আলিফকে রুপ্সিতার কাছেই বসিয়ে রেখে এসেছে।ছোট্ট সানি ড্যাবড্যাব করে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে থেকে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো,আম্মু!মামনির কি হয়েছে?
ইরিন সানিকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,তোমার মামনি একটু অসুস্থ বাবা।
সানি চোখ পিটপিট করে বলল,তাহলে কি মামনি আমার সাথে খেলবেনা?
ইরিন স্মিত হেসে বলল,আগে তোমার মামনি সুস্থ হয়ে নিক তারপর আগের মতো তোমার সাথে খেলবে।

সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে।আলিফই সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে।যেহেতু রুপ্সিতার এখনো জ্ঞান ফেরেনি তাই এখানে থেকে কারো কাজ নেই।আলিফ বলেছে রুপ্সিতার জ্ঞান ফিরলে সবাইকে ডেকে দেবে।
আলিফ রুপ্সিতার পাশে বসে ওর একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাকিয়ে রইলো রুপ্সিতার মুখের দিকে।মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে।চেহারার হাল বেহাল হয়ে গেছে।নিথর দেহটি বিছানার সাথে মিশে আছে।আলিফের বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে।মনে হচ্ছে এই মেয়েটার অনুপস্থিতে ও দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাবে।তখন রুপ্সিতাকে ওয়াশরুমে ওই অবস্থায় দেখে আলিফের কি অবস্থা হয়েছিলো একমাত্র সে বলতে পারবে।

আস্তে আস্তে রুপ্সিতার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে।কিন্তু এখনো জ্ঞান ফিরছেনা দেখে আলিফ চিন্তায় পড়ে যায়।ডাক্তার তো বলে গেছে তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরবে কিন্তু ডাক্তার যাওয়ার আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো অথচ রুপ্সিতার জ্ঞান ফেরেনি।হঠাৎ আলিফ খেয়াল করলো রুপ্সিতার চোখের পাতা নড়ছে।
কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়।আলিফ মিহি কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,এখন কেমন লাগছে রুপ্সি!

রুপ্সিতা আলিফের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আলিফ ও রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে থাকে উত্তরের আশায়।কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকার পর রুপ্সিতার মনে পড়ে যায় সেই ছবি সেই ডায়েরিতে অন্যকাউকে উদ্দেশ্য করে লিখা আলিফের সমস্ত আবেগ,ভালোবাসার কথা।মুহূর্তেই চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে রুপ্সিতার।ঝাড়া মেরে আলিফের হাতের মুঠোয় থাকা নিজের হাতটি ছাড়িয়ে নেয়।
আলিফ অবাক হয়ে তাকায় রুপ্সিতার দিকে।
রুপ্সিতা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।আলিফ কিছু বুঝতে না পেরে বলে কি হয়েছে খারাপ লাগছে?আচ্ছা আমি সবাইকে ডাকছি।
তারপর আলিফ উঠে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনে।রুপ্সিতার শাশুড়ী ওর মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে কিভাবে পড়েছো তুমি??

রুপ্সিতা কি বলবে?তাই চুপ করে আছে।ওর শশুর বলল,তুমিও না?ডাক্তার কি বললো শুনোনি?মেয়েটার শরীর দুর্বল।
আলিফের মা ইরিনকে বলল,রুপ্সিতার জন্য খাবার নিয়ে আসতে।সেই সকালে খেয়েছে আর এখন রাত হয়েছে।
ইরিন রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসে রুপ্সিতাকে খাইয়ে দিতে গেলো।রুপ্সিতা মাথা নেড়ে বলল,আমি খাবোনা।আলিফ জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল,খাবেনা মানে?না খেয়ে খেয়ে আজ অসুস্থ হয়েছো।তুমি জানো আমরা সময় মতো না আসলে কি হতো?চুপচাপ খাবার খাও!নয়তো চড় মেরে যা কয়টা দাঁত আছে সেগুলো ফেলে দেবো।

আলিফের বাবা আলিফকে উল্টো ধমক দিয়ে বলল,তুই চুপ থাক।সুন্দর করে বলা যায় না?
আলিফ চুপ করে যায়।আলিফের মা ইরিনকে সরিয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুপ্সিতাকে বলল,খেয়ে নাও।মায়েরা বললে না করতে নেই।উনার কথা শুনে রুপ্সিতার চোখে পানি চলে এসেছে।মায়ের কথা বড্ড মনে পড়েছে।হা করতেই উনি সযত্নে মুখে খাবার তুলে দেন।সবাই ভাবছে আলিফ ধমক দিয়েছে বলে রুপ্সিতার চোখে পানি।রুপ্সিতা খাইয়ে দিয়ে সবাই চলে গেছে।আলিফ ঔষধ পাতা থেকে বের করে গ্লাসে পানি ঢেলে রুপ্সিতার দিকে এগিয়ে দেয়।রুপ্সিতা ঔষধ গ্লাস কোনোটাই ধরলোনা বরং মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলো।আলিফের এবার প্রচুর রাগ লাগলো।জ্ঞান ফেরার পর থেকেই ওকে ইগনোর করে যাচ্ছে কি পেয়েছাটা কি?

তাই রুপ্সিতার মুখ টিপে ধরে মুখে ঔষধ ঢুকিয়ে গ্লাসের পানি জোর করে খাইয়ে দেয়।রুপ্সিতা চোখ লাল করে তাকিতেই আলিফ বলল,সমস্যা কি তোমার?এরকম করছো কেন?কি করেছি আমি?
এবার রুপ্সিতা চুপ থাকলোনা।আলিফের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,কি করেছিস তুই?মায়া কে হ্যাঁ?কে মায়া?
রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফ চমকে উঠে।
রুপ্সিতা আলিফকে ঝাঁকিয়ে বলল,কি হলো?বলছেন না কেন?মায়াকে এতো ভালোবাসেন তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করলেন?যদি বাধ্য হয়ে করে থাকেন তাহলে আমাকে বলে দিলেই পারতেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন।তাহলে আমি কখনো আপনাকে নিয়ে ভাবতাম না আর না নিজের অনুভূতি গুলো আপনার কাছে প্রকাশ করতাম।কথাগুলো বলতে বলতে মায়া ডুকরে কেঁদে ওঠে।

আলিফ মায়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু সে ব্যর্থ।রুপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলো,তোমাকে কে বলেছে আমি মায়াকে ভালোবাসি?

আমাকে কেউ বলেনি আমি আপনার ডায়েরি পড়েছি মায়ার ছবিগুলোও দেখেছি।এখন প্লিজ এটা বলবেন না ডায়েরিতে লেখা গুলো মিথ্যা।মায়াকে ভালোবাসেন বলেই বুঝি এতদিন আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন?সেটা মানলাম কিন্তু এই কটাদিন আমার সাথে যে ব্যবহার গুলো করেছেন সেগুলো কি ছিলো?আমাকে যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করালেন সেগুলো কি ছিলো?কথা গুলো বলতে গিয়ে রুপ্সিতার কন্ঠ জড়িয়ে আসছে।তবুও হেঁচকি তুলে কথাগুলো বলছে।

আলিফ রোবট হয়ে গেছে।ওর কিছু বলার নেই কিই বা বলবে?ও চেয়েছিলো মায়ার কথাটা রুপ্সিতার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে কিন্তু সেই রুপ্সিতা সব জেনেই গেলো।ও ভেবেছে রুপ্সিতা জানলে কষ্ট পাবে এখনতো আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে।রুপ্সিতার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে।আলিফ ওকে জোর করে শুইয়ে দিয়েছে।রুপ্সিতা বিড়বিড় করে বকে যাচ্ছে।আলিফ ওয়াশরুম থেকে জগে করে পানি এনে তোয়ালে ভিজিয়ে রুপ্সিতার কপালের জলপট্টি দিচ্ছে।

রুপ্সিতা উঠার চেষ্টা করছে।আলিফ উঠতে দিচ্ছেনা জোর করে হাত চেপে ধরে আছে আরেক হাতে ওর কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
জ্বরের ঘোরে চোখ বন্ধ করে কি বলছে রুপ্সিতা নিজেও জানেনা।
আলিফ পানি আর রুমাল ওয়াশরুমে রেখে এসে রুপ্সিতার পাশে এসে বসে।রুপ্সিতা এখনো বিড়বিড় করে কিছু বলে চলেছে।আলিফ সেটা শোনার চেষ্টা করতে রুপ্সিতার মুখের কাছে কান পেতে রইলো।

রুপ্সিতা বলছে,কেউ আমাকে ভালোবাসে না।কেউনা।আপনি ও ভালোবাসেন না।কিন্তু আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি আর আপনি ওই মায়াকে ভালোবাসেন।আমাকে একটু ভালোবাসলে কি হয়?বাবা মা ও আমাকে ভালোবাসেনা।একটা বাইরের ছেলের কথায় আমাকে মেরেছে পরেরদিন আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন কিন্তু না আপনিও সবার মতো আমাকে দূরে ঠেলে দিলেন।আপনি মায়াকে ভালোবাসেন।

রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফ অবাক হয়ে যায়।তারমানে রুপ্সির গায়ে যে দাগ গুলো দেখেছিলাম সেগুলো ওর পরিবারের থেকে দেওয়া?কিন্তু রুপ্সি কোন ছেলের কথা বলছে আর কিই বা বলছে আমিতো বুঝতেছিনা।দুহাতে রুপ্সিতাকে আগলে নিয়ে নিজেও রুপ্সিতার পাশে শুয়ে পড়ে।

নিজের গায়ে একটু উষ্ণ ছোয়া পেতেই রুপ্সিতা আলিফকে আঁকড়ে ধরে করুণ সুরে বলে,
আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেননা।ছোট বেলা থেকেই যেটা আমার সেটাতে আমি কাউকে ভাগ দিতাম না।সেটা খাবার হোক,খেলনা হোক।কিন্তু আপনিতো আমার ভালোবাসা,স্বামী তাহলে আপনার ভাগ আমি কিভাবে দেবো?
আলিফের চোখে পানি চলে এসেছে রুপ্সিতার কথা শুনে।
রুপ্সিতাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুপ্সিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া দিয়ে বলল,কারো সাথে ভাগ করতে হবেনা।আমি পুরোটাই তোমার।কেউ তোমার ভালোবাসায় ভাগ বসাতে আসবেনা।
আলিফের ছোয়া পেয়ে রুপ্সিতা আরেকটু গুটিশুটি মেরে আলিফের বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকে।

রাত ০২ঃ৪৮ মিনিট।রুপ্সিতা ঘুমিয়ে আছে আলিফের বুকে।আলিফের চোখে ঘুম নেই সে রুপ্সিতাকে দেখে চলেছে।মায়ের পরে দুজন নারী ওকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসেছে।একজন মায়া অন্যজন রুপ্সিতা।নিজের প্রতি তাচ্ছিল্য করে হেসে নিজের মনেই বলল,আমি ওদের ভালোবাসার যোগ্যইনা।আমাকে ভালোবেসে সবাই কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু রুপ্সিতাকে আর কষ্ট দিতে পারবোনা আমি।এই মেয়েটাই এখন আমার সব।আজ থেকে তোমাকে আর কষ্ট পেতে দেবোনা বলে রুপ্সিতার কপালে গভীর চুমু আঁকে।তারপর রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করে।সকালে ঘুম থেকে উঠলে ওর উপর দিয়ে একটা ঝড় যাবে আর সেই ঝড়টা যে রুপ্সিতা নিজেই বইয়ে দিবে সেটা আর ভাবার অপেক্ষা রাখেনা।হয়তো সকালে উঠলে রুপ্সিতার এখনকার কোনো কথাই মনে থাকবেনা।আপাতত এসব না ভেবে ঘুমানো প্রয়োজন।

সকালে ঘুম ভাঙতেই রুপ্সিতা নিজেকে আলিফের বাহুডোরে আবিষ্কার করে।দ্রুত সরে এসে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,আমিতো চেয়েছিলাম এভাবে থাকতে কিন্তু আপনিতো সেই পথ খোলা রাখেননি।রাতের চেয়ে জ্বর এখন অনেকটা কম পুরোপুরি নির্মুল হয়নি।ভালোভাবে ঠান্ডা লেগেছে জ্বর সারতে সময় লাগবে।আস্তে আস্তে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় রুপ্সিতা।

আলিফ আস্তে করে চোখ খুলে তাকায়।রুপ্সিতা ঝাড়া মেরে সরে যাওয়ার সময়ই আলিফের ঘুম ভেঙে গেছে এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে পড়েছিলো।ও চায় না এতো তাড়াতাড়ি রুপ্সিতা টর্নেডো,ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস শুরু করে দিক।আরেকটু সময় নিয়ে নিজেকে প্রিপার্ড করে নিয়ে রুপ্সিতার সামনে যাবে যাতে প্রথমবারেই ঢেউয়ের সাথে ভেসে না যায়।রুপ্সিতার জেদ সম্পর্কে এতদিনে আলিফ অবগত হয়ে গেছে।এত সহজে যে আলিফের নিস্তার নেই সেটা ভেবেই শুকনো ঢোক গিলে আলিফ।

রুপ্সিতা রমে এসে দেখে আলিফ খাটে নেই।বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।নিশ্চয়ই মায়া হবে তাছাড়া আর কার সাথে কথা বলবে?রুপ্সিতার গলা ধরে আসছে।খাটে এসে বসে রইলো চুপ করে।

আলিফ ফোনে বসকে বলছে,ওর ছুটি দরকার আজকে অফিসে যেতে পারবেনা।আলিফ খুব একটা অফিস কামাই দেয়না তাই বস আজকের জন্য ছুটি দিয়ে দিলো।তারপর মায়ার নাম্বারে কল দিয়ে বলল,
……………………….
আর হ্যাঁ তুমি আরাফাতকেও সাথে নিয়ে এসো।আমি রুপ্সিকে নিয়ে পৌঁছে যাবো।
ওপাশ থেকে মায়া বলল,হুম ঠিক আছে।আর তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে সেটা আসলেই বলবো বায়।

আলিফ কল কেটে ভাবছে মায়া কিসের গুড নিউজের কথা বলছে?
এদিকে রুপ্সিতা চোখের পানিতে নালা-নদী ভাসিয়ে ফেলতেছে।
#চলবে……….।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here