আধখাওয়া অষ্টভুজ,পর্ব:৭+৮

উপন্যাসঃ
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#পর্বঃ৭
#উম্মে_নাদিয়া_তাবাসসুম

-আমার সারাকে শেষ করে দিলেন আপনারা,হ্যাঁ?এইজন্যই আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন না তাইতো!ভাইয়া দেখেন,আমায় যে ধরাধরি করে আটকে রাখলেন কি করলো কি দেখুন।ডক্টরকে এক ধাক্কা দিয়ে ভেতরে সারার কাছে চলে গেল সায়ান।
ডক্টর কোনো মতে তাল সামলে দাঁড়ালো,সাদীদকে বললো,”দেখুন পেশেন্টের অবস্থা ভালো না,এরকম করলে তো আরও খারাপ কিছু…”

সায়ান বেডে সারার কাছে মাথা রেখে অনর্গল চোখের পানি ফেলতে লাগলো।চোখের পানিতে বালিশ ভিজে একাকার।
ছেলে মানুষদের এমন করে কাঁদতে নেই।ওরা যে ঝুনো নারকেলের মতো হয়।খুব শক্ত,ভেতরের মিষ্টান্ন তো ছোঁয়া যায় না এত সহজে।এমন করে কাঁদতে কোনো ছেলেকে আজ অবধি কেউ দেখেনি।গোটা পৃথিবীর প্রতিটা গল্প একত্রিত করলেও বোধ হয় সায়ানের গল্প ছোঁয়া যাবে না।
সায়ানের চোখের পানিতে সারার চুলের এক পাশ ভিজে গেল।”সায়ান!”অস্পষ্ট একটা শব্দ ভেসে আসে কানে।সায়ান তখনো ফুপিয়ে কাঁদছে।
মুখ তুলে তাকায় সারার দিকে।

থমকে যায় সায়ানের জোড়া চোখ, কি করুণ চাহুনি!শেষ বেলার রোদটা এসে পড়েছে সারার অর্ধেকটা জুড়ে।কোকরানো চুলগুলো কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে।বাতায়ন ভেঙে মৃদু হাওয়ায় উড়ছে সারার চুল,খানিক পড় পড় এসে লাগছে সায়ানের মুখে।একটুও বিরক্ত হচ্ছে না সায়ান।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হলদেটে আলোয় ভয়ংকর সুন্দর লাগছে সারাকে।এ রূপ উপেক্ষা করার সাধ্যি যেন কারো নেই।
সারার ধরা ধরা কন্ঠে কিছুটা অবাক হয়ে বললো, “সায়ান,তুমি কাঁদছো?এই পাগল!কি হয়েছে?
আমি তো ঠিক আছি তাইনা?একদম পারফেক্ট হয়ে ফিরে এসেছি,এখন আমার আর কিচ্ছু হবেনা,তুমি আছো না!”
সায়ানের বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো এক পাহাড় সমান চাপা কষ্টে।কোনোমতে নিজেকে সামলে সারাকে আগলে ধরে বললো,হুঁ।
তারপর হুড়হুড় করে বেরিয়ে চলে গেল।
ডক্টরের সাথে কথা হলো,আল্লাহর অশেষ রহমতে সারা এখন মোটামুটি ঠিক আছে।সায়ান ঠিক করলো আজ সন্ধ্যায় নিকাহ হবে ওদের।

একটা হোটেল বুক করে নিলো আরাদ,কোনোমতে শাওয়ার নিয়ে ভেজা কাপড় পাল্টে নিলো।দুদিনের জন্যে শহরের বাইরে এসেছে,ভাগ্যিস এক সেট কাপড় এনেছিলো ব্যাগে করে,নাহলে কিযে হতো!
জানালা খুলে বৃষ্টি দেখতেই মনে পড়লো সেদিনের কথা কত আনন্দে ভিজছিলো ইন্তিকা।বৃষ্টি ভেজা তরুণীর উচ্ছাস ভারি সুন্দর!কিন্তু হুট করে কি হয়ে গেল?মুখ ছেয়ে বিষন্নতা নেমে এলো কেন?চেহেরাটা চোখে ভাসতেই বুকে ভেতরটা কেমন ধক করে উঠলো।কেমন অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে।মেয়েটাকে না কান্নাতে মানায় না,কি সুন্দর কুচি? কুচি দাঁতের পাগল করা হাসি!ভুলতে পারেনা আরাদ একটা মুহূর্তের জন্যেও।গত চারদিন ধরে ওকে দেখছেনা,কোথায় গেছে ও?শহরের বাইরে আসার পর ভাইয়ার সাথেও আর যোগাযোগ হয়নি।
ফ্রাইডরাইস খেতে খেতে হঠাৎ করে মনে হলো,ও খেয়েছে?কি করছে এখন?
সারাক্ষণ ইন্তিকার কথা মনে হতে থাকে ওর,এক সপ্তাহ কেটে গেলো অনেক চেষ্টা করেছে নিজেকে সামলাতে,কিন্তু কিছুতেই পারলো না।খাবারটা আধখাওয়াতেই রেখে দিলো।
খুব ইচ্ছে করছে ও কে ভালোবাসতে,কাছে টেনে নিতে,চুপটি করে হাতে হাত গুঁজে বসে থাকতে, কুচি কুচি দাঁতের পাগল করা হাসিতে হারিয়ে যেতে।হুডখোলা রিকশায় আমার কাধে সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে দেবে,ঝুম বৃষ্টি দেখলে অানন্দে উচ্ছাসে মেতে উঠবে,আমি একগুচ্ছ কদম এগিয়ে দেবো,ও বেসুরেলায় গান ধরবে,
“আজি ঝরো ঝরো মুখরো বাদলদিনে
জানি নে,জানি নে
কিছুতেই কেন যে মন লাগেনা”….
যদি কখনো মুড অফ হয়ে যায় ও কে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দেবো আর ওর কান্না করা রূপ দেখবো হাহাহা।আনমনেই হাসতে থাকে আরাদ।

প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে ও কে।দু-বার বোধ হয় ভালোমতো দেখেছে কিন্তু কিছুতেই ওর কথা মন থেকে সরাতে পারছেনা।কেন এমনটা হচ্ছে ওর?কেমন যেন একটা অস্বস্তি।ভুলতে চাইলে যেন একটা কেমন অস্বস্তি কাজ করছে।আচ্ছা এটাই কি ভালোবাসা?ভালোবাসা কি এমন হয়?অাধার ভরা গগণে আচমকা আলোর আগমন।তারপর ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অস্তিত্ব জুড়ে জেঁকে বসা।মনে হচ্ছে কোনো ফোবিয়ায় ভুগছি।কঠিন ফোবিয়ায়!এর যেন কোনো সমাধান নেই।
আচ্ছা আমি কি কখনো ওকে নিজের করে পাবো?একটাবার কি ছুঁতে পারবো?আমার জন্যে কি ও ঐ সুদর্শন দাঁতের হাসি হাসবে?একটু কষ্টে কি ভয়ংকর রূপের কান্নাঝড় ওঠাবে?
আমি তাকে মনভরে পলকহীন দৃষ্টিতে পিচ্চি কে তাকিয়ে থাকার সুযোগ পাবো?এক বৃষ্টিভেজা সুন্দর ভালোবাসা এনে দিতে পারবো?আচ্ছা ও, ও কি আমায় এমনটা ভালোবাসবে?

টুং করে নোটিফিকেশনের শব্দ জেগে উঠলো রামিসা।ওর ঘুম খুব পাতলা।সবসময়ই ঘুমোয় তবে উঠে পড়ে হুটহাট।দেখেছো,ফিহা আপু ওয়াইফাই অফ করতেই ভুলে গেছে।”Ninad Rahman replied to your comment on a photo”….চোখ কচলে এটুকু পড়ে রেখে দিলো রামিসা।ফিহাকে অনেকবার ডাকলো,কিন্তু ফিহা তো বেহুশ ঘুমে।

চলবে….

উপন্যাসঃ
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#পর্বঃ৮
#উম্মে_নাদিয়া_তাবাসসুম

ফিহা ঘুম থেকে উঠেই ফোনটা হাতে নিলো।সকাল সকাল উঠেই ফেসবুকিং করা যেন খবরের কাগজ পড়ার মতোই ফরজ কাজ তার।চোখ পড়ে গেল নোটিফিকেশনটাতে।দেখেই তো চক্ষু স্থির।”কেমন পাজি ছেলেরে বাবা!একদম কোমড় বেঁধে এসেছে ঝগড়া করতে।”
ফিহাও কম যায় না।একবার কাউকে পেলে ছেড়ে কথা বলবেনা কোনোভাবেই।

গোটা গোটা অক্ষরে নিনাদ লিখেছে “জাহিন এর মতো মেয়েলি ছেলে নিয়েও আবার এত মাতামাতি!”
জাহিন হলো নামকরা জনপ্রিয় গায়ক।ফিহা উরাধুরা পাগলা ভক্ত তার, অফিসিয়াল ফ্যান গ্রুপ চালায় জাহিনের।
এতবড় কথা ফিহা কোনোভাবেই মেনে নেবেনা।রক্তগরম হয়ে গেছে ওর।”
-জাহিনকে নিয়ে এত বড় কথা!মন চাইছে আমার ১০০ টা দাঁত দিয়ে ধামধুম করে চিবিয়ে খেয়ে ওকে কুলকুচি করে ফেলে দিই।কেমন বদের হাড্ডি।দাড়া রে তোরে একবার পাই শুধু,ঢাকা শহরে পা রাখিস তারপর দেখবি।বলে না, একবার না পারিলে দেখো শত বার,শতবার না তোকে আমি দ্বিতীয়বারই খুন করে দেবো,বদের হাড্ডি!নিজের মতোই গিজগিজ করতে থাকে ফিহা।

সুন্দর মতো একটা কমেন্ট করেছে,”জিহান মেয়েলি?ওর মতো সুদর্শন পুরুষকে মেয়েলি বলেন!আর নিজে স্ন্যাপচ্যাট দিয়ে ছবি তুলে আপলোড দেন হাহাহা।রামছাগল!”শেষে একটা ছাগলের ইমোজি।
সাথে সাথেই রিপ্লাই এলো,”তো স্ন্যাপচ্যাট কি তোমাদের মেয়েদের একার সম্পত্তি নাকি?”
ফিহা রাগে গিজগিজ করতে থাকে,ফোনের কী-বোর্ডে জোরে জোরে আঙ্গুর দিয়ে টাইপ করে লিখলো,”তা নয় তো কি,লাল,কমলা রঙের লিবিষ্টিক দেয়া ফিল্টার কি পোলাগো লাইগা বানাইসে, হুহ স্যানেপসেট,ব্যা ব্যা ব্যা ব্যা…”

সায়ান ইন্তিকাকে বললো সুন্দরমতো সারাকে রেডি করিয়ে দিতে।লাল টকটকে বেনারসি কিনলো,ম্যাচিং হাতভর্তি চুড়ি,বেলিফুলের গাজরা,গয়না আর যা যা লাগে সব সুন্দরমতো কিনলো সায়ান।কেনাকাটা খুবই সুন্দর হলো,সবার ভারি পছন্দ হয়েছে।সারা ভীষণ খুশি,এই দিনটার জন্য কত বছর অপেক্ষা করছে ও।আজ তা পূর্ণ হতে চললো,আচ্ছা অনুভূতিগুলো কি বাক্সবন্দি করে রাখা যায়?করা গেলে খুব ভালো হতো এরম অজস্র অনুভূতি বাক্সে পুড়তে পুড়তেই তো একটা মহল হয়ে যেত।আচ্ছা মহলটার কি নাম হতো?নামটা সায়ানসহ ভেবে একসাথে দেবো হিহি।এসব অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু কল্পনা করতে সারার খুব ভালো লাগে।
শপিং ব্যাগের সব জিনিস ঘাটতে গিয়ে নূপুর না পেয়ে সায়ানের উপর খেপলো সারা।”এত ভুলোমন তোমার যে বেছে বেছে নূপুরটায় বাদ পড়ল!”

সায়ানের মুখ দিয়ে কোনো কথায় বেরোয় না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সারার দিকে।হঠাৎ করে আর্তনাদ করে উঠলো সায়ান।সারাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।”সায়ান!ছাড়ো,এই কি হলো তোমার?বাচ্চামি করছো কেনো?”সারা অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো,কিন্তু সায়ানকে কিছুই বুঝতে দিলোনা।

সায়ান কিছুতেই থামছেনা।সারা সায়ানকে আলতো করে ধরে, চোখ মুছিয়ে দিলো।ভয়ানক লাল সায়ানের চোখজোড়া।সারা কিছু না বুঝেও কেঁদে ফেললো।কান্নাজড়ানো স্বরে বললো,”এই পাগল,কান্নার কি হলো!”হাত দুটো সায়ানের দিকে বাড়িয়ে বললো,কই দাও নূপুরজোড়া?কি হলো দাও!”
সায়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা।হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, সারাকে নিজের কোলের কাছে শুইয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে ধরা গলায় বললো, জানোতো পাখি,তোমার কিচ্ছু হবেনা।আমি আছি না!কিছু হলেও আমি থাকবো,কিছু না হলেও।বুঝলা!তুমি একদম ভয় পেয়োনা কেমন?সায়ানের দু-চোখ বেয়ে অনর্গল পানি বেয়ে পড়ছে।কথাগুলো শুনে সারার কেমন একটা খটকা লাগলো। কেমন যেন একটা ভয় কাজ করতে লাগলো।
জোরে চেঁচিয়ে বললো,”সায়ান!তুমি এমন করছো কেন প্লিজ বলবে?তোমার নিঃস্তব্ধতা যে আমার আর ভাল্লাগছেনা।”

-“কিছু হয়নি পাখি কিছু না,কিছুক্ষণ চুপ থেকে আটকে আটকে ধরা গলায় বললো,”আর কখনো নূপুর পড়তে পারবেনা তুমি।কিছুই না তো।তোমার তো এমনিও নূপুর অপছন্দ তাইনা বলো?আমিই তো জোর করতাম তোমায় পড়তে,কিচ্ছু হবেনা পাখিটার।”কথা আটকে আটকে আসতে লাগলো।সায়ান আর পারছেনা নিতে।
সারার আকাশ গুমোট হয়ে গেলো।পা জোড়া ছুঁতেই দেখলো,কিছুই নেই।পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগলো।এই আর্তনাদ যেন শোনা যায় না।সায়ান ও কে জড়িয়ে ধরে আর সামলে রাখতে পারছেনা।সায়ানকে জাপটে খুব কাঁদছে সারা।সারার চোখের পানি একদমই সহ্য করতে পারেনা সায়ান।কি বলে সান্ত্বনা দেবে ও কে আজ,আর কি বলবে!কাঁদুক বেচারি,মন উজার করে কাঁদুক..আলতো করে ধরে আছি ও কে, কোনো বিপদ যেন না ছুঁই।
সারা সায়ান একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।তাদের আর্তনাদের চাপা গন্ধ ভেসে ভেসে আসে।প্রকৃতির কোলাহলে আবছা হয়ে যায় ওদের চিৎকার,কষ্ট,আর্তনাদ!প্রকৃতিও চেয়ে রয়,বাধা দেয় না কোনো।
না,ওরা কাঁদুক ,হালকা হোক কিছুটা কষ্ট।ঝেড়ে ফেলুক সব।

আরাদ ঠিক করেছে ইন্তিকাকে সব বলেই দেবে।এভাবে আর কিভাবে থাকা যায়। নাহ,অনেক হয়েছে আর পারবেনা সে।সবটা ওকে বলতেই হবে,ওর ভালোবাসা যদি সত্যি হয় সে আসবে ওর কাছে, যে করেই হোক।আজ না হোক,এক শতাব্দী পর।তবু তো আসবে!শুধু অপেক্ষা করতে জানতে হয়।
ফোন বেজে উঠলো আরাদের।ভাইয়ার ফোন!
তাড়াতাড়ি আসতে বললো ভাবিকে নাকি বিয়ে করছে!কিন্তু এইভাবে?হুটহাট কি হলো হঠাৎ! ধুমসে বিয়ে করার প্ল্যান ওদের।কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।আচ্ছা গিয়েই দেখি।

আরাদ সুন্দর একটা পান্জাবি পড়ে রেডি হয়ে নিলো।আর চুলগুলো হালকা আঁচড়ে নিলো।সিল্কি চুল,বাকা করে একটু আঁচড়ালেই মারাত্মক কিউট লাগে আরাদকে।ধুলোধুলো বাতাসে উড়তে থাকে চুলগুলো,ভারি সুন্দর লাগে!খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকে সবসময়, লম্বা, হ্যান্ডসাম একদম সুদর্শন পুরুষ যেন।”এক দেখাতেই সব মেয়ে ঠুশ করে পটে যাবে”,বাণীতে ওর কাজিন জায়ানা।
নিজেই ড্রাইভ করে পৌঁছে গেল সারার বাসায়।কলিং বেল চাপতেই বুয়াদাদি দোর খুললো। একগাল হাসি দিয়ে বললো,আরে আরে আহো আহো,কি রাস্তায় জাম ছিলো বাবা?এতক্ষণ লাগছে যে!
-না না,তেমন ছিলো না।
“আচ্ছা বাবা আহো ভেতরে আহো।”পান চিবোতো চিবোতে বলতে ভেতরে নিয়ে গেল আরাদকে।
খোঁপায় বেলি ফুলের গাজরা লাগিয়ে দিতে দিতে ইন্তিকার চোখ পড়ল আয়নার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে। স্তম্ভিত হয়ে গেলো!বিড়বিড় করে বললো,এই রামছাগলটা এখানে কেন?
আরাদ শিউরে উঠল,আনমনেই বলতে লাগলো
আর কতবার আসবে তুমি আমার কাছে,এ যে ভ্রম ছাড়া আর কিছুই না।সত্যি সত্যি কবে আসবে বলো তো!এভাবে আর এসো না প্লিজ,আমি যে….

“ঐ ছেমড়া এরম ফাগলের মতন ফ্যাছফ্যাছ করস ক্যান,কিছুই ভর করসেনি হেহেহে!” বুয়াদাদি বলেই এমন একটা ভাব করতে লাগলো যেন অনেক হাসির একটা ঘটনা হয়ে গেছে।

“কি গো দেবর মশাই,এতক্ষণে এন্ট্রি নিলে কি করে চলবে শুনি,হুম?”সারা মিষ্টি হেসে বললো।
ইন্তিকার আর কিছুই বোঝার বাকি রইলো না,”এই তাহলে সারার দেবর।যার এত নাম ডাক করে ও।হাবলা একটা!”

আরাদ কল্পনা থেকে বেরিয়েও থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।আরাদের সব কাল্পনিক লাগছে।কি হচ্ছে এসব?কেন ও এখানে?আমায় কি একটু একাও থাকতে দেবেনা!

ইন্তিকার পরনে পোড়া খয়েরী রঙের একটা জামদানী,খোঁপায় জড়ানো বেলির মালা,চোখজোড়া কাজল রাঙানো,কানে ঝুলছে বড় বড় ঝুমকো,হাতভর্তি ম্যাচিং কাচের চুড়ি,একটা পিচ্চি নোসপিন নাকে আর ঠোঁট রাঙানো লিপস্টিক।
ভয়ানক সুন্দর লাগছে ইন্তিকাকে।আরাদ আর কিছুই যেন দেখতে পাচ্ছেনা।বাকিসব ঝাপসা লাগছে।”এই রূপের জোয়ারে কখন যে ডুবে মরি!”

ইন্তিকা হা হা করে হাসছে সারার সাথে।কিসব ফিসফিস করছে ওরা।প্রাণের বান্ধবী,একবার শুরু হলে ওদের আর থামাথামি নেই।
আরাদ এবার শেষ!কুচি কুচি দাঁতের হাসিতে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।কেমন একটা শিহরণ জেগে উঠছে শরীরে।চোখ সরাতেই পারছেনা।কি ভাববে ও?আমায় নিয়ে নিশ্চিত খারাপ কিছুই ভাবছে!আমি তো কোনো মেয়েদের দিকে তাকাই না,কিন্তু ওর দিক থেকে তো চোখই সরাতে পারছিনা।না না,এটা ঠিক হচ্ছেনা ঘরভর্তি লোকজন,সকলে কি ভাববে ছিঃছিঃ!

লাল টুকটুকে লাগছে সারাকে।একদম ছোট্টখাট্টো একটা পরী যেন বউ সেজেছে।
“এহেম এহেম আহা আহা.. আজ তো সায়ান ভাইয়ার চোখই টেরা হয়ে যাবে হাহাহা,তারপর কানা,টেরা জামাই নিয়ে ঘর করিস!”বলেই ইন্তিকা হাসছে।

” আমি ভূত!”
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here