আধার রাতের আলো পর্ব -০২

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব- ২

হুরের মা হুরের রুমে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। দু’জনেই নিশ্চুপ। কিছুক্ষণ নিরবতায় কাটিয়ে সালমা বেগম বললেন, মারে আমরা গরীব মানুষ আমাদের কপালে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করাও ভুল।তুই যদি বিয়েটা করেনিস তাহলে,তোর ভাইয়ের কিডনি পাল্টাতে পারবা। পোলাডারে বাঁচাইতে পারমু। তোর বড় বইনেরে যৌতুকের জন্য ঘরে ফিরাইয়া দিয়া গেছে তারেও আবার তার শ্বশুর বাড়ি পাডাইতে পারমু। তোর ছোট ভাইডারেও ভালো পড়া লেখা করাইতে পারমু। এহন তুই ক তুই কি চাস।

হুরের চোখ দিয়ে নিরব অশ্রু গড়িয়ে পরছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,মা আমাদের ভাগ্য উপর থেকে ঠিক করা। যখন মাদ্রাসায় কালিমায়ে পড়ছি ঈমানে মুফাসসাল সেখানে ছিলো….

ঈমানে মুফাসসাল :

امنت بالله وملئكته وكتبه ورسله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت

উচ্চারণঃ-
আমানতু বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহী ও কুতুবিহী ও রুসূলিহী ওয়াল ইয়াওমিল আখিরী ওয়াল ক্বাদরী খইরিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহি তা’আলা ওয়াল বা’ছি বা’দাল মাউত।
অর্থঃ-

প্রথমত- আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ তা’আলার উপর;

দ্বিতীয়ত- ঈমান আনলাম তাঁর ফেরেশতারগণের উপর;

তৃতীয়ত- ঈমান আনলাম তাঁর কিতাব সমূহের উপর;

চতুর্থত- ঈমান আনলাম তাঁর রাসূলগণের উপর;

পঞ্চমত- ঈমান আনলাম আখিরাতের উপর;

ষষ্ঠত- ঈমান আনলাম তাক্বদীরের উপর;(তাক্কদীরের ভালো মন্দ আল্লাহ তায়ালা পক্ষ থেকে হয়।)

সপ্তমত- ঈমান আনলাম মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর।

তোমাকে অর্থ সহ শুনালাম। তার কারণ এখানে স্পষ্ট বলা আছে তাক্কদীরের ভালো মন্দ আল্লাহ তায়ালা পক্ষ থেকে হয়। আর আমি এসবে পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছি।তাই আমি এসব নিয়ে চিন্তিত না।চিন্তিত আমার আমল নিয়ে কারণ একমাত্র নেক আমল পারে ভাগ্য পরিবর্তন করতে। তোমরা তোমাদের যা ভালো মনে হয় কর।আমি আমার সৃষ্টি কর্তার উপর নিজেকে সোপর্দ করলাম। কথা শেষ করার আগেই মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের মধুর কন্ঠে আজান ভেসে আসতে লাগলো।

হুর আজানের উত্তর নিয়ে বলল, তুমি আমাকে একটু নামাজ পড়ার সময় দাও।

– সালমা বেগম বললেন ঠিক আছে মা তুই নামাজ শেষ কর আমি ওই বাড়ি থেকে তোর জন্য আনা কাপড়ের লাগেজ নিয়ে আসছি। সালাম বেগম যেতে যেতে ভাবলেন তার মেয়ের বিশ্বাস কত মজবুত আল্লাহ তায়ালার উপর। আর সে সামান্য বিশ্বাস রাখতে পারছেনা। ভরসা করতে পারছে না। মনে মনে ঠিক করলো তার হ্যাসবেন্ডের সাথে কথা বলবে এই বিষয়ে।

হুর চোখের পানি মুছে নিয়ে জায়নামাজ পেতে নামাজে দাঁড়ালো। মাগরিবের ফরজ তিন রাকাআত আর সুন্নত দুই রাকাআত পড়ে আরো ছয় রাকাআত আউয়াবিন নামাজ পড়ল।

______________________________________________
ফুয়াদ বাসায় প্রবেশ করতেই নুর এসে সুন্দর করে হেসে বলে, আসসালামু আলাইকুম। নাহিদও সাথে ছিলো ফুয়াদের। ফুয়াদ নিজের পকেট থেকে চকলেট বের করে নুরের হাতে দিয়ে বলে, ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আম্মি জান।

নুর বলল,আচ্ছা বাবা তোমার মুখ থেকে দুর্গন্ধ কেন আসে? তুমি কি ব্রাশ করো না।

নিজের মেয়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে, ফুয়াদ বলে,আম্মিজান তুমি দাদু মনির কাছে যাও আমি এক্ষুনি ব্রাশ করে আসছি।

নূর কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,দাঁড়াও বাবা।

ফুয়াদ বলে, আবার কি হলো আম্মিজান।
– ঊফ বাবা তোমাকে কত বার বলেছি বাসায় প্রবেশ করার সময় ডান পা দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে প্রবেশ করবে।তোমার ম্যাম তোমাকে শেখায়নি?

– না আম্মি জান শেখায়ানি। কোন ব্যপার না আম্মি জান। আপনি তো আছেন আমাকে শেখানোর জন্য।
এই আমি ঘরের বাহিরে বের হলাম আর এই যে ডান পা ‘দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে, প্রবেশ করলাম। এবার হয়েছে?

– হয়েছে হয়েছে। আচ্ছা বাবা আরবি ম্যাম যদি আমার মা হয়। তাহলে সেও কি খারাপ মা হয়ে যাবে!সেও আমাকে ঘুম পারিয়ে রেখে চলে যাবে?

নুরের কথা শুনে অবাক হলো না ফুয়াদ। তার মা মাস খানিক আগে থেকেই তাকে হুরের ব্যপারে বলে আসছে।ফুয়াদ নুরকে কোলে তুলে নিয়ে সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলে, আম্মি জান আমরা তো ভালোই আছি তাইনা। তাহলে আবার নতুন কাউকে কেন আনতে যাবো?

– বাবা তুমি তো জানোনা আরবি ম্যাম কত্তগুলা ভালো। ধরো একদম ক্যাটবেরির মতো ভালো আবার সুইট। কি সুন্দর আমাকে আদর করে। কোলে নেয়।

– আচ্ছা তুমি এখন যাও পড়তে বস। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।

নূর চলে গেলে নিজের রুমে। আলো বেগম আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন। তার কিছু বলার নেই। খুব শখ করে নিজের বোনের মেয়েকে ছেলেে বউ করে ঘরে এনেছিলেন। তখন ফুয়াদ ডাক্তারি পড়ে। ফুয়াদ বলেছিল, মা পড়া শেষ হলে আমি বিয়ে করতে চাই। ছেলের কথারসেদিন মেনে নিলি তার পরিবারে হয়ত এখন এই কাল নেমে আসতো না।ফুয়াদের ফাইনাল এক্সাম ছিলো। পড়ালেখার চাপ ছিলো প্রচুর রাত দিন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে। এনিয়ে বিথীর ছিলো নানা অভিযোগ। ফুয়াদ তাকে বলতো আর কয়েকটা দিন তারপর তো আমরা ঘুরতে পারবো। তোমাকে সময় দিতে পারবো। পরিক্ষা শেষ হতেই ডিগ্রি অর্জন করতে ফুয়াদ পারি জমায় আমেরিকায়। নতুন বউ রেখে ফুয়াদেরও যেতে ইচ্ছে করছিলো না।বিথীকে কত আদরে বুঝিয়ে রেখে গেলো। বিথীর গর্ভে তখন ছোট নুর বেড়ে উঠছে। এসব ভাবতেই আলো বেগমের চোখ ভরে উঠলে। নুর আলে বেগম কে বলতে লাগল,দাদুমনি দাদুমনি এই দেখো আরবী ম্যামের ছোট ব্যাগ রেখে গিয়েছে। চল এটা দিয়ে আসি।

– এটা আমার কাছে দাও আর তুমি পড়তে বস। কাল যখন আরবি ম্যাম আসবে তখন দিয়ে দেবো। কেমন।

– আচ্ছা দাদুমনি আমরা কেন যেতে পারবো না ম্যামের বাসায়।

– কারণ বাবা রাগ করবে এখন বাসা থেকে বের হলে।

– বাবা এতো রাগ করে কেন?বাবা কি জানেনা রেগে যাওয়া ভালো না।
আলো বেগম জানেন নূর প্রশ্ন করা শুরু করলে প্রশ্ন করতেই থাকে করতেই থাকে। তাই নূরের প্রশ্ন এরিয়ে যেয়ে বলে,তুমি পড়তে বস। আমি তোমার জন্য মিল্ক শেক বানিয়ে নিয়ে আসি।

– সাথে একটা চিপস নিয়ে এসো।
– আচ্ছা তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি।

আলো বেগম হুরের ব্যাগটা খুলে দেখলেন তাতে টাকা। আলো বেগম বেশ চিন্তিত হলেন। হুর টাকা গুলো তার থেকে চেয়েছিল। হয়তো খুব প্রয়োজন টাকাগুলো হুরের। এখন কি ভাবে হুরের কাছে টাকাটা পৌঁছে দেবে।দাঁড়িয়ে সেই চিন্তাই করছিলেন আলো বেগম। ফুয়াদ এসে বললো,মা আমার খুদা পেয়েছে খাবার দাও।

আলো বেগম বললেন,টেবিলে আয় দিচ্ছি।
ফুয়াদ বললো, তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত মা?

– সেসব তোমাকে বলে, লাভ নেই তুমি খেতে আসো। আর হ্যাঁ নিজে তো বিপথে গেছোই এখন নাহিদ ছেলেটাকেও বিপথগামী করছো!তুমি তো ভালো করে জানো আদিয়া নাদিহ কে পছন্দ করে। আশকারি নিজের বোনের জন্য হলেও নাহিদকে তোমার পথে আনবে না।

ফুয়াদ বলল,এসব চিন্তা বাদ দিতে বলো আদিয়াকে আমি ওই পরিবারে ওকে কিছুতেই বিয়ে দিবো না।

– আমি তোমাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছি। তাই এই ভূল দ্বিতীয় বার করবো না। আমি চাই আদিয়া ওর নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করুক।

– এটা কিছুতেই হবে না। কারন নাহিদের বাবা মাহতাব সাহেব নিজের হাঁটুর বয়সি একটা মেয়েকে বিয়ে করছে। এতো নিচু আর ক্যারেক্টার লেস মানুষের বাসায় কিছুতেই নিজের বোনকে বিয়ে দেবো না।

আলো বেগম আর কথা না বাড়িয়ে খাবার দিয়ে। নিজের রুমে যেয়ে বোরখা পরে নিচে এসে বলে,আমি একটু নূরের ম্যামের বাসায় যাচ্ছি। তুমি নূরের খেয়াল রেখো।

______________________________________________
নামাজ শেষে করে জায়নামাজ উঠিয়ে রাখতেই। হুরের। মা সালমা বেগম বললেন,এই নাও পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়ে আসো।
নূর বিনাবাক্যে সেগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

মাহতাব সাহেব দাঁত বের করে রুহুল সাহেবকে বললেন,একটা ফ্লাট,আপনার ছেলের চিকিৎসা আর মাসিক খরচ সা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।আপনার চাঁদের টুকরো মেয়েকে আপনি আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন। আমি এতেই মহা খুশি।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। দু’এক পর্ব পড়েই জাজ করতে আসবেন না। গল্পে ইসলামিক কথা থাকবে। ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন। আর যারা ইসলামিক গল্প পছন্দ করেন তারা অবশ্যই সাথে থাকুন। আশা করি ভালো লাগবে।
হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here