আবছায়া পর্ব ১১

আবছায়া
writer ::প্রিয়া
১১

ইনায়া বারান্দা থেকে রুমে এসে বসলো। আইজান দ্রুত বাসার ভিতরে এসে কারো সাথে কথা না বলে রুমে চলে গেলো।

-আসলে ইনায়া আমার বাইক নষ্ট হয়ে গেছিলো তাই উনি আমার ড্রপ করেন। ওই মহিলা আমাদের এলাকার আয়েশা উকিল সবাই উনাকে চিনে আমাদের একটা জায়গার মামলা উনার সাথে পরিচয়।

‘এতো এক্সকিউজ দিচ্ছো কেনো আইজান আমি কি কিছু জানতে চেয়েছি।
দুপুরে খেতে আসলেনা এখন ভাত খাবে না কি কফি।

-বিয়ে করেছি বন্ধুরা মিলে সবাই ট্রিট ট্রিট করছিলো তাই ট্রিট দিলাম সবাইকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে খেলাম।
চা হলে মন্দ না অজান্তাকে বলো দু কাপ বানিয়ে দিতে।

‘আমিই বানিয়ে আনছি তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।

আইজান ফ্রেশ হতে চলে যায়। ইনায়া রান্নাঘরে গিয়ে গিয়ে দু কাপ চা বানায়।
অজান্তা এসে দেখে ইনায়া চা বানাচ্ছে।

-আমাকে বললে বানিয়ে দিতাম তুমি কষ্ট করতে গেলে কেনো।

‘চা ই তো সমস্যা নেই।

-আইজান চায়ে চিনি বেশী খায়।

‘হুম জানি আমি ওক আগে ও অনেকবার বানিয়ে খাইয়েছি।

অজান্তা আর কিছু বললো না চলে গেলো।ইনায়া চা নিয়ে যায়।
আইজান ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চেয়ারে বসে ফোন টিপছে।

-তোমার চা।

‘বসো।

ইনায়া চায়ের কাপ হাতে দিয়ে আইজানের পাশে বসলো।
-আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পরের দিন সকালে তুমি হয়তো শাড়ি পড়বে।

‘আমি শাড়ি পড়ে হাটতে পারিনা।

-আজ রাতে আমার জন্য শাডি পড়বে প্লিজ।

‘আচ্ছা পড়বো।

আইজান ইনায়াকে কথাগুলো বলে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে অজান্তা গাছে পানি দিচ্ছে আর ওদের দিকে তাকাচ্ছে।
আইজান উঠে রুমে চলে গেলো।
ইনায়া গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে,ভাবছে কলেজের সেইদিন গুলোর কথা।
*ইনায়া কলেজ গেইটে ঢোকার পর শুরু হতো ছোট বড় সকলের সালাম দেয়া।
প্রথম প্রথম বিরক্তি লাগলে পরে বেশ এনজয় করতো।

ইনায়া ক্লাসে থাকলে আইজান বাইরে অপেক্ষা করে ক্লাস থেকে বের হলো ইনায়ার পাশেপাশে যায়।
ইনায়া বলে দিয়েছিলো আইজান ওক কোনোরকম বিরক্ত করলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে দিবে।

সেদিনের পর থেকে আইজান ওকে আর বিরক্ত করেনি শুধু তাকিয়ে থাকে আর পিছে পিছে হাটে।

ইনায়া প্রায়দিন লক্ষ্য করে দেখতে পায় আইজান গরীব দুঃখীদের সাহায্য করে।
কলেজের গরীব ছাত্র ছাত্রীদের ফিস দিয়ে দেয়।এমনকি আগের চাইতে অনেক শান্ত ভদ্র হয়ে গেছে।

কলেজের সকলে আড়ালে আইজানকে মজনু বলে ডাকে।ইনায়াকে ভালোবেসে আইজানের এই পরিবর্তন।

ইনায়ার ও দিনদিন আইজানকে ভালো লাগতে শুরু করে।
কিন্তু বয়সের ব্যবধান এই লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলেনা।

সেদিন ইনায়ার কাছে একটা চিঠি আসলো।

প্রিয় ইনায়া

তোমাকে দেখার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটা রাত ঘুমাতে পারিনি।
তোমার কাজল কালো টানা দুটো চোখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে।আঁকাবাঁকা দাঁতগুলো যেনো হিরে দিয়ে আল্লাহ বানিয়েছেন।
আমার খুব ইচ্ছে জানো বর্ষার বিকেলে একগুচ্ছ কদম হাতে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াই, তোমার পড়নে থাকবে হলুদ শাড়ি। কদম গুলো এগিয়ে দিয়ে আমি বলবো তুমি কি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে।
লজ্জা রাঙ্গা মুখে আঙ্গুলে আঙ্গুল চেপে ধরে গোলাপি ঠোঁটে লজ্জার আভা ফুটিয়ে তুমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলবে।
মেয়ে আমার কল্পনার আকাশে তোমার বিচরণ,
হবে কি আমার প্রিয়তমা আগলে রাখবো সারাজীবন।
ইতি তোমার পাগল

এই চিঠি পাওয়ার পর থেকেই ইনায়া কম হলেও ১০বার পড়ছে।
কি যে মাধুর্য আছে চিঠিতে।

কলেজে যাওয়ার পর থেকেই আবেগ বারবার ইনায়ার দিকে তাকায়। ইনায়া তখন আবেগ আর অরিত্রিকে বলে।
-আইজান আমাকে চিঠি দিয়েছে কি সুন্দর চিঠির কথাগুলো। অরিত্রি আবেগ আমি আইজানকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি কি করবো

আবেগ-তুই শিউর আইজান চিঠি দিয়েছে নাম লেখা ছিলো।

-আমার জন্য এতো পাগল আইজান ছাড়া আর কে হতে পারে।

আবেগ আর কিছু বলেনি।
সেদিনই রাস্তা পার হতে ইনায়া এক্সিডেন্ট করে অরিত্রি আবেগ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তেমন কিছু না হলে মাথায় অনেক আঘাত পায়।রক্তের প্রয়োজন হয়। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে পুরোরাত ওকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়।

সকালে উঠে ওর মাকে দেখতে পায়। ওর মা,বাবা বিল পরিশোধ করতে যায় তখনি আইজান রুমে আসে।
-ঠিক আছো তুমি কেউ এভাবে পাগলের মতো রাস্তা পার হয়।কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো ভাবতে পারছো তুমি কেয়ারলেস কোথাকার।

ইনায়া মা আসছে দেখে আইজান চলে যায়।তখনি নার্স আসলো
-কি ভাগ্য করে এরকম একজন পাগল পেয়েছেন ম্যাম।কাল যখন আপনার রক্তের দরকার তখনি ছোটাছুটি করে রক্ত ম্যানেজ করতে না পেরে নিজের রক্ত দিয়ে দেয় বারবার বলে সব রক্ত নিয়ে নাও তা ও আমার ইনায়াকে বাঁচাও।

ইনায়ার চোখে জল চলে আসে এতো ভালোবাসে আমায়।

ইনায়া বাসায় যাওয়ার পর আবেগ আর অরিত্রি আসে।
-তোরা আমায় ফেলে চলে গিয়েছিলি।

‘সরি রে তুই ঘুমানোর পর আন্টি বললেন চলে যাওয়ার জন্য।

-জানিস আইজান আমার জন্য কি কি করেছে রক্ত পর্যন্ত দিয়েছে।

‘আইজান রক্ত দিয়েছে।

আবেগ-তোকে কে বললো আইজান রক্ত দিয়েছে।

-নার্স বললো।

অরিত্রি-কিন্তু।

আবেগ’আচ্ছা অরিত্রি চল আজ উঠি আমার কিছু কাজ আছে।

এক সপ্তাহ ধরে ইনায়া কলেজ যায় না আইজান প্রতিদিন বিকেলে বাসার পাশের ঢং দোকানে এসে পুরো বিকেল বসে থাকে।
ইনায়া ততোক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে।দুজনের চোখে চোখে কথা হয়।

আরো কিছুদিন পর আইজান ইনায়াকে মেসেজ করে। মেয়ে আসবে কি হলুদ শাড়ি পড়ে আমি কদম নিয়ে অপেক্ষায় আছি।

ইনায়া সেদিন আর আইজানের ডাক উপেক্ষা করতে পারেনি।ছুটে যায় আইজানের হাতে থাকা কদম গুলো নিয়ে ওর বুকে ঝাপিয়ে পরে।
শুরু হয় ওদের পথচলা কলেজে লাভ বার্ডস বলে সবাই জানে।
কিছুদিন পর আবেগ কোথায় যেনো চলে যায়।আর ফিরে ইনায়ার বিয়ের সময়।

আইজান ইনায়ার মনে এমনভাবে জায়গা করে নিয়েছে আইজানের কোনো দোষ ওর চোখে পড়েনা।
অরিত্রি অনেকবার ইনায়াকে বুঝিয়েছিলো ভালোবাসা ভালো তবে অন্ধ ভালোবাসা ভালো না।
ইনায়া তখন বলতো আইজান ওর বিশ্বাস কখনোই ভাঙ্গবে না।

অজান্তার ডাক শুনে ধ্যান ভাঙ্গলো ইনায়ার।

-বড় মা তোমাকে ডাকছেন।

‘ঠিক আছে আসছি।

অজান্তা যেতেই ইনায়া রুমে আসলো আইজান ঘুমিয়ে গেছে।
দরজা আটকে আইজানের ফুফুর রুমে গেলো।

উনি শুইয়ে আছেন।

-আম্মু ডেকেছিলে।

‘হ্যাঁ মা আয়।

ইনায়া উনার পাশে বসলো।

-তোদেরকে হানিমুনে যাওয়ার জন্য বলছিলাম কিন্তু তোরা কিছুদিন পর যা।অজান্তার বিয়ে পরের সপ্তাহে আজ ওর বাবা ফোন দিয়ে জানালেন।
আইজানের আপন চাচাতো বোন আমি চাই তোরা সবাই ওর বিয়েতে যা তাহলে মেয়েটার ভালো লাগবে। মা মরা মেয়ে আমাদের জন্য অনেক করেছে।

-ঠিক আছে আম্মু আমরা সবাই যাবো। ও তো এখানে পাত্র কি আগে থেকে ঠিক করা ছিলো।

‘হতে পারে।ওর বাবা কাল ওকে নিতে আসবে

অজান্তা আড়াল থেকে সব শুনে ছুটে রুমে চলে যায়।বালিশে মুখ গুজে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

ইনায়া ওর পাশে বসে পিঠে হাত রাখে।অজান্তা উঠে বসে।

-সব মেয়েদের বিয়ে করে পরের ঘরে যেতে হয়।
এই যে আমি আসলাম তোমাদের এখানে।দেখো তুমি অনেক সুখী হবে।

অজান্তা কিছুই বলে না কিন্তু ওর চোখ বলছে ও অনেক কিছু বলতে চায়।
-অজান্তা তুমি কি আমায় কিছু বলতে চাও।

অজান্তা মাথা নাড়ে।

-নির্ভয়ে বলো।

‘হ্যাঁ বলতেই হবে তোমাকে।

তখনি আইজান চলে আসে দরজায় দাঁড়িয়ে

-ইনায়া রুমে আসো তো।

‘তুমি যাও আমি আসছি।

-খুব দরকার এখন আসো।

ইনায়া উঠে আইজানের পিছন পিছন রুমে চলে যায়।

পরেরদিন অজান্তার বাবা আসেন।অজান্তা হাউমাউ করে কান্না করছে এতো কান্না মনে হয় কেউ মারা গেলে ও কাঁদে না।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অজান্তা আইজানের রুমে যায়।
ইনায়া তখন পিছন পিছন যায়।

-আইজান বড্ড নির্মম খেলা খেললে আমার সাথে।
আমার জীবন ধ্বংস করে এখন নিজেই বিয়ে ঠিক করে দিলে।

‘আমি বিয়ে ঠিক করেছি কে বললো।

-আমার সেটা বুঝতে বাকি নেই।তোমার মুখোশ ইনায়া আর বড় মার সামনে ঠিক একদিন প্রকাশ পাবে।
অজান্তা কথা বলে বাইরে এসে ইনায়াকে দেখতে পায়।অজান্তার এটা মুচকি হাসি না কি বিদ্রুপের হাসি ইনায়া বুঝলো না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here