আবছায়া
writer::প্রিয়া
শেষপর্ব
ইনায়াকে পাওয়ার জন্য আইজানের পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে।প্রতিদিন বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বারবার চিঠি লেখা। আইজানের মা-বাবার ও ইনায়ার বাবার কাছে এসে ক্ষমা চাওয়া।সবকিছুতে ইনায়া অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে
**দু সপ্তাহ হয়ে গেছে অরিত্রির সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না আবেগ। ইনায়ার কথা ফেলতে পারেনি তাই অরিত্রিকে মাফ করে দিয়েছে তবে মন থেকে মানতে পারছে না।
সাদা রঙে লাল পাড়ের কাজ করা শাড়ি পরেছে অরিত্রি। কানে বড় ঝুমকো, গলায় হার,হাত ভর্তি চুড়ি কপালে লাল টিপ, খোঁপায় গুজেছে বেলী ফুলের মালা।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো তখনি মনে হলো ইনায়াকে ভিডিও কল দেয়ার কথা।
ইনায়া ভিডিও কলে অরিত্রিকে দেখে
– আজ আর আবেগ তোর কাছে থেকে দূরে যেতে পারবে না।অপূর্ব লাগছে তোকে।
-সত্যি বলছিস আজ আবেগ আমায় আগের মতোই ভালোবাসবে। ইনু আমি যে আর আবেগের থেকে দূরে থাকতে পারছিনা।
‘আবেগ নিজেও কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে তুই আজ আবেগের কাছাকাছি যা ওকে নিজের করে নে।
-তুই এতো ভালো কেনো ।
‘আচ্ছা আরু আমি রাখছি একটু কাজ আছে সকালে কথা হবে।
রাত ১০টা আবেগ বাসায় ফিরে দেখে দরজা খোলা,অন্ধকার চারপাশ ফোনে টর্চ জ্বালিয়ে অরিত্রিকে ডাকছে।
অরিত্রি কোথায় তুমি।কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবেগ ঘাবড়ে যায় অরিত্রির কোনো বিপদ হয়নি তো।
দ্রুত রুমে যেতেই পায়ে কিছু একটা লাগে লাইট দিয়ে দেখে ফ্লোরে হাজারটা বেলুন।
ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে লাইটের সুইচড অন করে রুমের চারপাশ সুন্দর করে সাজানো ফ্লোর জোড়ে বেলুন খাটের ফুলের বিছানা এরকম দৃশ্য দেখে যে কোনো পুরুষ ঘায়েল হয়ে যাবে আবেগের ও মন খুশি হলো।
অরিত্রি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে মুখ করে।ব্যাকলেস ব্লাউজে স্পষ্ট খোলা পিঠ আবেগ তাকিয়ে আছে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় অরিত্রির দিকে।আবেগের পায়ের শব্দ অরিত্রির বুকে গিয়ে বিঁধছে ভয়,সংকোচ, ভালো লাগা সব ঘিরে ধরছে ওকে।
আবেগ অরিত্রির পিঠে হাত রাখতেই ও কেঁপে উঠলো পরম যত্নে আদূরে হাত বুলিয়ে দিতেই অরিত্রি বরফের মতো জমে যাচ্ছিলো।
মূহুর্তের মধ্যেই অরিত্রির সব কল্পনায় জল ঢেলে আবেগ চিৎকার করে উঠলো।
-এসবের মানে কি দরজা খোলা ঘরে এতো সাজসজ্জা কার বাসর রাত।
‘আবেগ মাফ করে দাও আমায়।আমি আর পারছি না আবেগ তোমার এতো কাছে থেকেও হাজার মাইল দূরে মনে হচ্ছে। আমি কি পারবো আবেগ তুমি বলো আমি তোমার ভালোবাসা ছাড়া থাকতে পারবো না।
-এই যে মুখে মেকাপের আবরণ দিয়েছো না তাতে ও তোমার প্রতারকের চেহারা স্পষ্ট। আমি যখনি তোমার মুখ দেখি তখনি না মনে হয় এতো বিশ্বাস করেছিলাম তোমায় সেই তুমি কি করে পারলে বিশ্বাসঘাতকতা করতে।
অরিত্রির আবেগের পায়ের কাছে বসে ওর দু পা জড়িয়ে ধরে।
-তুমি আমাকে মারো কাটো যা খুশি করো তবুও আমাকে মাফ করে দাও।
‘পা ছাড়ো অরিত্রি।
-আমি আজ আর তোমাকে ছাড়বো না।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
‘তুমি আর কখনোই আমাকে পাবে না।এভাবেই সারাজীবন বাঁচতে হবে যদি না পারো চলে যাও।
আবেগ অরিত্রির কাছ থেকে পা ছাড়িয়ে চলে গেলো।অন্যরুমে গিয়ে সিগারেট টানছে পাশের রুম থেকে অরিত্রির চিৎকার করে কান্না শোনা যাচ্ছে।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় মেয়েটার কান্না আসছে না কেবলি আর্তনাদের সুর শোনা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর সবকিছু থেমে গেলো আবেগ ফ্রেশ হয়ে এসে সবকিছু শান্ত দেখে ভয় পেয়ে যায়।
অরিত্রির রুমে উঁকি দিতেই দেখে পড়নের কাপড় দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলছে অরিত্রি চেয়ার ফেলে দিতেই আবেগ গিয়ে ওর পা জড়িয়ে ধরলো। এক হাত দিয়ে চেয়ার টেনে এনে অরিত্রির পা আটকালো।
অরিত্রির গলা থেকে কাপড় খুলে রাগে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে দেয় অরিত্রির গালে।এবার আর অরিত্রি কাঁদছে না চুপ করে বসে আছে।
-কি করছিলি তুই তোর মরার স্বাদ জাগছে।
মর এবার মর।
শান্ত কন্ঠে অরিত্রি জবাব দিলো।
-তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমি বাঁচতে চাই না।মরে যাবো আমি মরে যাবো।
‘কি তুই মরে যাবি এতো শখ মরার।
-বাঁচালে কেনো ভালোই যখন বাসো না তাহলে মরতে দিলে না কেনো।
না দিচ্ছো বাঁচতে আর না দিচ্ছো মরতে।
আবেগ অরিত্রিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।
-তোকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে তুই বুঝতে পারিস আমার কষ্টটা।তুই তো চিৎকার করে কাঁদতে পারিস আমি তো তা ও পারি না।
আমার ভিতর কি হচ্ছে সেটা কেউ বুঝবে না।
‘আবেগ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি খুব সত্যি বলছি খুব ভালোবাসি।
-আমি জানি আমি সব জানি।
আবেগ অরিত্রিকে বুকের মধ্যে নিয়ে ওর গালে কপালে হাজার চুমু দিচ্ছে।
-আর কষ্ট দিবো না তোকে অতীতে কি হয়েছে না হয়েছে সব ভুলে যাবে।
অতীতের কষ্ট বুকে পুষে রেখে লাভ নেই অতীতের ভুল আঁকড়ে ধরে বর্তমান চলবে না।
এখন থেকে তুই আমার সব তোকে আঁকড়ে আমি বেঁচে থাকবে।
আবেগের বুকের মাঝেই অরিত্রি চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে।
-আজ কাঁদতে থাক যতো পারিস কাঁদ আর তোকে কোনোদিন কাঁদতে দিবো না।
**দেখতে দেখতে ৬মাস কেটে গেলো ইনায়া বাসা চেঞ্জ করেছে। আইজান বিরক্ত করছিলো প্রচুর ইনায়া বুঝতে পারে একসময় না একসময় আইজানের পাগলামি তে সাড়া দিয়ে ফেলবে।
এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে ভালোই দিন কাটছে ইনায়ার।
বাসায় আজ সবাই খুশি ইকরাম, ইসহাকের বিয়ে।ইনায়ার বাবা পছন্দ করে নিজের ভাইয়ের মেয়েকে ইকরামের বউ বানাচ্ছেন।ইসহাক বিয়ে করছে নিজের প্রেমিকা রাবিনাকে।
একসাথে দুটো বিয়েরসব ঝামেলা সামলাতে হয় ইনায়াকে।সব কিছু শেষ করে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে যায় ইনায়া।
সকালে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে শো খানিক মিসকল।
এতো ফোন কে দিয়েছে নিশ্চয় জরুরি কিছু ভাবতে ভাবতে ফোন ব্যাক করলো।
ফোনের কন্ঠ শুনে ইনায়া চমকে উঠে আইজানের মা কান্না করছেন।
-আপনি কি জন্য ফোন করেছেন আর এভাবে কাঁদছেন কেনো।
‘তুমি কি একবার আসবে মা আমার আইজান শেষবারের মতো তোমায় দেখতে চাইছে।
-শেষবারের মতো মানে।
‘এসো না মা আমি হাসপাতালের এড্রেস বলে দিচ্ছি।
-বুঝতে পারছি না হাসপাতাল শেষবার কিসব বলছেন।
‘আমি তোমার পায়ে ধরি মা একবার আসো আসলে সব দেখতে পাবে।
উনি এড্রেস বলে ফোন রেখে দিলেন ইনায়ার মন কেমন জানি করছে।ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো নতুন দুই বউ নিজেদের সংসার বুঝে নিয়েছে সবাইকে নাস্তা দিচ্ছে।
তখনি ইনায়া কথা তুললো।
-বাবা,বড় ভাইয়া,ছোট ভাইয়া মা একটা কথা বলার ছিলো।
‘কি কথা বল।
-আইজানের মা ফোন করে একটা এড্রেস দিলেন হাসপাতালের আর বলছেন আইজান শেষবারের মতো আমায় দেখতে চাইছে।
বড় ভাইয়া-এদের কোনো বিশ্বাস নেই তোর ক্ষতি করতে পারে।
-না ভাইয়া আমার মনে হচ্ছে ওরা ক্ষতি করার জন্য বলছে না।আইজানের মায়ের কান্না বলছে আইজানের কিছু হয়েছে।
বাবা-তোর মন স্বায় দিয়ে তুই যা আমি বলবো তোর যাওয়া উচিত।
ছোট ভাইয়া-তুই নাস্তা করে রেডি হয়ে আয় আমি তোকে নিয়ে যাবো।
সকালের নাস্তা শেষ করে ইনায়া আর ইসহাক বেড়িয়ে যায়।হাসপাতালে পৌছে ইনায়া আইজানের মাকে ফোন দিলো উনি জানালেন তিনতলায় যাওয়ার জন্য।
ওরা তিনতলায় যেতে উনি এগিয়ে আসলেন।
ইনায়াকে জড়িয়ে কান্না করছে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আইজানের বাবাকে দেখা যাচ্ছে অপরাধবোধ নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে আড়ালেই দাঁড়িয়ে আছেন।
-কি হয়েছে আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো।
উনি ইনায়ার হাত ধরে একটা কেবিনের সামনে নিয়ে গেলেন।
দরজা খুলে ইনায়া দেখলো আইজানের অক্সিজেন চলছে সুঠাম দেহের আকর্ষণীয় ছেলেটা রোগা-পাতলা হয়ে গেছে চোখ ফুলে গেছে কেমন জানি দেখে মায়া হচ্ছিলো।
-আইজানের কি হয়েছে।
আইজানের মা কথা বলতে পারছেন না কেবলি কাঁদছেন।
তখনি ডিউটিরত ডাক্তার কেবিনে ডুকলো পিছন পিছন ইনায়া গেলো আইজান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ডাক্তার অক্সিজেন চলছে চেক করে চলে যাচ্ছিলো ইনায়া ডাক দিলো।
-উনার কি হয়েছে ডাক্তার।
‘আপনি উনার কে হন।
প্রাক্তন স্ত্রী।
-কি?কত আগে শেষ উনার সাথে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।
‘কি সব প্রশ্ন করছেন আপনি।
-ম্যাম আপনার ভালোর জন্য জানতে চাইছি আমি একজন ডক্টর প্লিজ বলুন।
-প্রায় দেড় বছর আগে।
‘যাক বেঁচে গেছেন উনার এইডস হয়েছে।
-কি?
‘জ্বি ম্যাম উনার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন উনার কি জন্য এই রোগ হয়েছে।উনার এই পৃথিবীতে হয়তো আর সপ্তাহ খানিক।
-মানে ও কি মরে যাবে।
‘এই রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই সাথে উনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা।
একটা কথা বলি আপনারা উনাকে অবহেলা করবেন না এই রোগ ছোঁয়াচে না তাই বলছি যতো সম্ভব শেষ কয়েকটা দিন ভালো আচরণ ভালো ব্যবহার করুন।
হাজার ঘৃণা মূহুর্তে পানি হয়ে গেলো ইনায়ার চোখে জল চিকচিক করছে। ইনায়া কখনোই চায়নি আইজান দুনিয়া ছেড়ে চলে যাক।
আইজানের পাশে বসে আছে ইনায়া। কিছুক্ষণ পর আইজানের ঘুম ভাঙলো পাশে ইনায়াকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।ওর মনে হচ্ছিলো লাফ দিয়ে উঠে যেতে।
অক্সিজেন খুলে নিলো।
-তুমি এসেছো সত্যি তুমি এসেছো।
‘হ্যাঁ কখনো ভাবিনি তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে।
-পাপের শাস্তি পাচ্ছি। ইনয়া আমার ছেলেটাকে দেখতে দিবে একবার ওকে দেখতে চাই।
তোমার কাছে কিংবা আমার ছেলের কাছে মাফ চাওয়ার মুখ নেই আমার।
‘দেখাবো আমি মারজান কে নিয়ে আসবো।
-আরো একটা রিকুয়েষ্ট করবো রাখবে।
‘বলো।
-আমাকে তুমি নিজ হাতে রেঁধে খাসির মাংসের বিরিয়ানি খাওয়াবে।জানো কত দিন হলো ভাত খাই না।
ইনায়ার চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।হুট করেই আইজানের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলো অক্সিজেন লাগিয়ে ইনায়া বাইরে চলে আসে।
আইজানের মায়ের কাঁধে হাত রাখে।
-আইজানের এই অবস্থা কতদিন থেকে।
‘তিনমাস। তোমাকে অনেক খুঁজেছি কোথাও পায়নি শেষমেশ অনেক কষ্টে কাল ফোন নাম্বার জোগাড় করি।
আইজান রূপসার বিয়ে থেকে ওদের নিঃস্ব হওয়ার সব গল্প উনি বললেন।
-ওর চিকিৎসার সব টাকা আমি দিবো।
আইজানের মা মাথা নিচু করে কাঁদছেন পাশে থেকে আইজানের বাবা ইনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
বাসায় ফিরে সব শুনে সবারই আইজানের উপর থেকে রাগ কমে গেলো।
দু দিন পর ইনায়া খাসির মাংসের বিরিয়ানি রেঁধে মারজান আর ওর মা-বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যান।
মারজানকে দেখে কান্না করে আইজান খুব ইচ্ছে করছিলো ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করার কিন্তু এখন আর সেই শক্তি অবশিষ্ট নেই।
ইনায়া ওর মুখে তুলে দু চামচ বিরিয়ানি খাওয়ায় এরপর আর খেতে চায় না আইজান।
সারাদিন হাসপাতালে থেকে বিকেলে বাসায় চলে যায় ওরা।রাতে ফোন আসে আইজানের অবস্থা খুব খারাপ।আবার গাড়ি নিয়ে ছুটে যায় ইনায়া পিছন পিছন ইসহাক ছুটে যায়।
ইনায়াকে দেখা মাত্রই আইজান ওকে কাছে যাওয়ার ইশারা করে।কথা বলার শক্তি নেই সীটের পাশে চেয়ার টেনে বসে আছে ইনায়া আইজানের কষ্ট কাছ থেকে দেখছে।
আইজান বারবার হাত তুলতে চাইছে ইনায়া লক্ষ্য করে দেখলো আইজান ওর হাত ধরতে চাইছে হয়তো একবার হাত স্পর্শ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা। ইনায়া আলতো করে আইজানের হাতের উপর নিজের হাত রাখলো।মুহূর্তে আইজান শান্ত হয়ে গেলো মুখে বিজয়ের হাসি।
এই হাসি ওর জীবনের শেষ হাসি ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলো।
আকাশপাতাল ভারী করে সেদিন কান্না করলেন আইজানের মা।
ইনায়ার কান্না ছিলো চাপা কান্না চিৎকার করে কাঁদতে পারছিলো না।তবে চাপা কান্নায় কষ্ট বেশি হয়।
আইজান খারাপ জেনে নিজেকে দূরে সড়িয়ে নেয় তবে এক আকাশের নিচে তো ছিলো।কখনোই চাইনি মানুষটা মাটির ঘরে জীবনের মতো চলে যাক।
নার্স এসে একটা চিঠি দিলো ইনায়ার হাতে।
উনি এক সপ্তাহ আগে আমায় দিয়ে চিঠি লেখান আপনার জন্য।
সেদিন আর ইনায়ার সাহস হয়নি চিঠি পড়ার।লাশ দাফন কাপন করার সব দায়িত্ব পালন করে ইনায়ার ভাইয়েরা।
রাতে বাসায় ফিরে ছেলেকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদে ইনায়া।
দু দিন পর চিঠি খুলে পড়তে বসে।
-এই চিঠি যখন তুমি পড়বে আমি তখন পৃথিবীতে নেই।জানো ইনায়া আমি সত্যি ভালো হয়ে গিয়েছিলাম সারাদিন পরিশ্রম করতাম। আমার মা-বাবা আমার অল্প আয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন।
আমি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখতাম মারজানকে নিয়ে আমাদের সুখের সংসারের।অনেকবার তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি বুঝোনি তুমি। একদিন তুমি বাসা ছেড়ে দিলে তা ও আমি আশা ছাড়িনি। কত খুঁজেছি পায়নি চলে তিনমাস শরীরের লক্ষ্মণ খারাপ দেখে ডাক্তারের কাছে যায় অবেক টেস্ট করানোর পর ধরা পড়লো এইডস বাসা বেঁধেছে। কত খারাপ মেয়ের সঙ্গে রাত কাটিয়েছি হিসাব নেই হয়তো কারো শরীরে এইচ,আইভি ভাইরাস ছিলো।
আমার যে শাস্তি পাওনা ছিলো তোমার মতো মেয়েকে কষ্ট দিয়েছি।সেদিন আমি চিৎকার করে কেঁদেছিলাম বারবার আল্লাহকে বলেছিলাম আমাকে সুস্থ করে দাও আল্লাহ আমি ভালো হয়ে যাবো।আমি আবার আমার ইনায়াকে ফিরে পেতে চাই।
অনেকবার টেস্ট করানোর পর ও সেম রেজাল্ট আসলো বাঁচার আশা ছেড়ে দিলাম।
দিন দিন শরীর খারাপ বাড়তে লাগলো একসময় মা-বাবাকে জানিয়ে দিলাম।
উনারা খুব কেঁদেছিলেন আমি মরার আগে একবার তোমার কাছে আমার ছেলের কাছে মাফ চাইতে চাই।সেই সুযোগ পাবো কি না জানিনা।ইনায়া যদি কখনো জানো আমি মরে গেছি মৃত মানুষটা মাফ করে দিও।আর পারলে আমার মা-বাবাকে দেখে রাখো।
মৃত্যশয্যায় আমি আল্লাহর কাছে একটা জিনিস চাইছি পরের জন্মে যেন আমি ভালো মানুষ হয়ে জন্মাতে পারি আর স্ত্রী হিসাবে যেনো আমি তোমাকেই পাই।
ইনায়া চিঠি পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে।
আমাদের ছোট সংসার হতে পারতো আইজান।আমি তো লোভী ছিলাম আমি অল্পতে তুষ্ট থাকতাম।তুমি ছিলে পরনারী আসক্ত আমি তোমাকে ভালো করতে পারিনি।যখন তুমি ভালো হলে ভাগ্য সহায় হলো না।ওপারে ভালো থেকো।
দেখতে দেখতে মাস কেটে গেলো ইনায়া ভাইদের কাছ থেকে নিজের ব্যবসা আলাদা করে নিয়েছে আপন মানুষ বদলে যেতে দেখেছে খুব কাছে থেকে তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়।
আলাদা বাসায় গিয়ে উঠেছে আইজানের মা-বাবা কে নিয়ে উনাদের এই জগতে কেউ নেই।
সবকিছু চলছে ভালো সবাই ইনায়াকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো ইনায়া বিয়ে করতে নারাজ দুই সন্তান নিয়ে ওর সুখের পৃথিবী ইকরাম মেয়েকে নিতে চাইলে ইনায়া দেয়নি ভাবিকে দেয়া কথা রাখতে হবে যে।
১২বছর পর
আইজানের ১২তম মৃত্যু বার্ষিকী মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে কয়েকটি এতিমখানা থেকে হাজার খানিক বাচ্চা দাওয়াত করে এনে খাওয়াচ্ছে।মারজান সবাইকে নিজ হাতে খাবার তুলে দিচ্ছে।
ইনায়া আড়ালে থেকে সব দেখছে মারজান জানেনা ওর মা-বাবার মাঝে কেমন সম্পর্ক ছিলো ইনায়া জানতে দেয়নি কখনো।
বাচ্চার কাছে বাবাকে ছোট করতে চায়নি। বাবার স্থান সবার উপরেই থাকুক।
আইজানের মা ইনায়ার পাশে এসে দাঁড়ালেন মা রে সত্যি তুই অতুলনীয়। এরকম মানুষ হয় না।
-আমিও এরকম হতে পারতাম না যদি ছায়া হয়ে আমার পাশে আমার পরিবার না থাকতো।
‘আমার ছেলে তোকে এতো কষ্ট দিলো আর তুই সেই ছেলের জন্য এতোকিছু করলি।
জীবিত আইজান খারাপ ছিলো মৃত মানুষটা খারাপ না।আমি জীবিত আইজান কে ঘৃণা করতাম মৃত আইজানকে না।
-নতুন জীবন কেনো শুরু করলি না।
‘কাকে বিশ্বাস করবো কারো প্রতি আর বিশ্বাস জন্মাবে না তাই।
যেরকম আছি ভালো আছি আবছায়া হয়ে সবার পাশে আছি এইতো বেশ।
সমাপ্তি।
পরিশেষে
((একজন বিধবা মেয়ে কিংবা ডিভোর্সি মেয়েকে কখনোই বুজা মনে করবেন না ওদের বাঁচতে দিন।পরিবারের সবাই যদি একটু সাপোর্ট করেন ও পরিবারের বুজা না পরিবার তৈরি করবে ওদের ভালোবাসুন পাশে থাকুন))
Something that touches the heart