আবেগময় সম্পর্ক পর্ব -২১+২২

#আবেগময়_সম্পর্ক
#২১তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

আজকে সবাই সিলেট থেকে আবার ঢাকায় ফিরে এসেছে। আকাশের অফিসে একটা গুরুত্ব পূর্ণ কাজ থাকার দরুণ মূলত সবাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই জলদি ফিরে এসেছে। এদিকে রায়ানের মনটা খুব খারাপ। কারণ সে আরো বেশি বেশি ঘুরতে চেয়েছিল। তার উপর আজকে যে রায়ানের জন্মদিন তবুও এখন অব্দি কেউ তাকে উইশ করে নি। এটা নিয়েও তার মন খারাপ।

রায়ান সিলেট থেকে ফিরেই মন খারাপ করে শুয়ে পড়েছে। মেহুল দুপুরের রান্না শেষ করে রুমে আসতেই রায়ান মেহুলের দিকে তাকিয়ে বলে, “নতুন মা তুমি জানো আজকে কিসের দিন?”

মেহুল ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজকে তো শুক্রবার।”

রায়ান হতাশ হয়ে যায়। সে ভেবে ছিল মেহুল হয়তো জানবে আজ তার জন্মদিন। তবে রায়ান এটা নিয়ে বেশি মন খারাপ করল না। কারণ মেহুল তো নতুন এসেছে, রায়ানের জন্মদিনের কথা তো তার আর জানার কথা নয়। রায়ানের রাগ হচ্ছে আকাশের উপর। কারণ আকাশ তো রায়ানের জন্ম দিন কবে সেটা জানে। কিন্তু তবু ও সে রায়ানকে উইশ করে নি, কিংবা জন্মদিন সেলিব্রেট করবে বলেও মনে হচ্ছে না। রায়ান হতাশ হয়ে পুনরায় বিছানায় শুয়ে পড়ে। মেহুল বুঝতে পারে কোন একটা কারণে রায়ানের মন খারাপ। তাই সে রায়ানের পাশে বিছানায় বসে পড়ে। রায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “তোমাকে এত ডিপ্রেসড লাগছে কেন? তোমার কি মন খারাপ? ও বুঝতে পেরেছি সিলেট থেকে তাড়া তাড়ি ফিরে আসায় তোমার মুড অফ। কিন্তু কি করবো বলো তোমার আব্বুর অফিসের এত এত কাজ ছিল সেইজন্য আমাদের তাড়াতাড়ি আসতে হলো।”

রায়ান বলে, “সেই কারণে আমার মন খারাপ না।”

“তাহলে মন খারাপ কেন? তুমি কি কিছু খেতে চাও? আমাকে বলো আমি তোমার পছন্দের খাবার তৈরি করে দেব।”

রায়ান এবার মেহুলকে সব সত্য বলে দেয়। সে বলে, “জানো নতুন মা আজ আমার জন্ম দিন। কিন্তু কেউ আমায় উইশ করে নি।”

মেহুল তৎক্ষনাৎ রায়ানকে কোলে তুলে নেয়। রায়ানের গালে আদর করে দিয়ে বলে, “হ্যাপি বার্থডে রায়ান। ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অব দা ডে। আসলে আমি জানতাম না আজ তোমার জন্মদিন। তুমি কোন চিন্তা করো না। আজ আমি তোমার জন্মদিন অনেক বড় করে সেলিব্রেশন করব।”

রায়ান মুখ গোমড়া করে বলে, “আমি তোমার উপর রাগ করে নেই নতুন মা। আমার রাগ তো আব্বুর উপর। আব্বু তো আমার জন্মদিন জানে। তাও আমাকে উইশ করলো না।”

“তুমি মন খারাপ করে থেকো না। তোমার আব্বুর অফিসের কত কাজ। তাই হয়তো ভুলে গেছেন। তুমি হ্যাপি থাকো। আজ তোমার জন্মদিন অনেক সুন্দর করে পালন করা হবে।”

❤️
রায়ান নিজের ঘরে বসে অন্তরার ছবি দেখছে। এই বাড়িতে অন্তরার কোন ছবি নেই। আমিনা আক্তার সব ছবি সরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আকাশ এই একটা ছবিই যত্ন করে রেখেছে। রায়ানকে আকাশই এই ছবিটা দেখিয়ে বলেছিল এটা তার জন্মদাত্রী মায়ের ছবি। রায়ান নিজের মায়ের ছবির উপর হাত বুলিয়ে বলে, “তুমি কোথায় আছ আম্মু? আমি তোমাকে অনেক বেশি মিস করি জানো। তুমি কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে বলো তো? তুমি এক বার ফিরে এসো না। আমি খুব খুশি হবে। সবাই তো নিজের জন্মদিনে একটা করে উইশ করে। আমি উইশ করলাম, আমার বার্থডে গিফট হিসেবে তোমাকে চাই। তুমি আসবে তো আম্মু?”

রায়ান নিজের মায়ের ছবি বুকে জড়িয়ে নেয়। মেহুলেরও আগমন ঘটে রুমে। মেহুল রায়ানকে বলে, “এটা তোমার আম্মুর ছবি তাইনা?”

রায়ান সম্মতি দিয়ে বলে, “হু এটা আমার আম্মু।”

মেহুল আর কিছু বলে না। শুধু গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মায়ের প্রতি প্রত্যেক সন্তানেরই টান থাকে। রায়ানেরও তেমনি টান রয়েছে তার মায়ের প্রতি। মেহুল রায়ানকে বলে, “আচ্ছা তোমার আম্মু যদি কোন দিন ফিরে আসে আর তোমাকে নিয়ে যেতে চায় তাহলে কি তুমি তার সাথে চলে যাবে? নাকি আমাদের কাছে থাকবে?”

রায়ানের ছোট মস্তিষ্ক এত প্যাচ বোঝে না। তাই তো সে বলল, “আমি আম্মুকেও চাই, আবার তোমাদের সবাইকেও চাই। আমরা সবাই মিলে এক সাথে থাকব।”

মেহুল সাথে সাথে রায়ানকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। ছেলেটার প্রতি অনেক বেশি মায়া তৈরি হয়ে গেছে। রায়ানকে দেখেই তার মাতৃত্বের সাধ অনুভব হয়। মেহুলের চোখে বিন্দু বিন্দু অশ্রু কণা জমা হয়। সে দ্রুত নিজের চোখের জল মুছে নিয়ে বলে, “তোমার বার্থডে সেলিব্রেটের সব ডেকোরেশন প্রায় কমপ্লিট। তোমার আব্বুকেও আমি কল করেছি সে একটু পরেই আসবে। তোমার জন্য গিফটও নিয়ে আসবে। তুমি তাড়াতাড়ি সুন্দর ভাবে রেডি হয়ে নিচে চলো। আমি তোমাকে তৈরি করে দিচ্ছি।”

রায়ান সাথে সাথেই লাফিয়ে ওঠে। বলে যে, “হ্যাঁ নতুন মা তুমি আমাকে একদম প্রিন্সের মতো সাজিয়ে দেও।”

মেহুল মুচকি হেসে বলে, “আচ্ছা তাই হবে।”

মেহুল নিজের হাতে রায়ানকে সাজিয়ে দিতে থাকে। দরজার বাইরে পিহু ও আশিক দাঁড়িয়ে সেটা দেখছে। পিহু আশিককে অনুরোধের সুরে বলে,“দেখছ তো আপি কত ভালো বাসে রায়ানকে। তুমি প্লিজ মিস অন্তরাকে এখানে আসতে মানা করো। নাহলে একটা সাজানো সংসার নষ্ট হয়ে যাবে।”

আশিক বলে, “আমি সেটা করতে পারবো না। অন্তরা ভাবি আমার কোন বারণ শুনবেও না। সে তো রায়ানের জন্মদাত্রী মা। এত দিন নিজের সন্তানের থেকে দূরে থেকেছে। তোমাকে তো আমি সবই বলেছি যে ভাবি ভাগ্যের কত বড় নিষ্ঠুরতার স্বীকার। বিনা দোষে নিজের সব কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। এখন নিজের সন্তানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন। তাকে আমি কিভাবে মানা করবো?”

পিহুর চোখে জল চলে আসে। পিহু বলে, “কিন্তু মেহুল আপি যে রায়ানকে নিজের সন্তানের মতোই ভালো বাসে। মানছি মিস অন্তরা রায়ানকে জন্ম দিয়েছে। তার সাথে রায়ানের রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু রক্তের সম্পর্কই কি সব? মায়া, ভালোবাসা দিয়ে যে আবেগময় সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার কি কোন দাম নেই?”

আশিক আর বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। সত্যি বলতে এখন আর তার বলার মতোও কিছু অবশিষ্ট নেই। আশিক শুধু একটা গভীর শ্বাস ফেলে বলে, “আমি জানি,আমি বুঝতে পারছি সবটাই। কিন্তু ভাগ্যের কাছে আমরা সবাই অসহায়। পরিস্থিতি যে কোনদিকে মোড় নেবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি আমাদের জীবনের মোড় খুব শীঘ্রই পালটে যাবে।”

❤️
আকাশ অফিস থেকে ফিরেছে। মেহুলও রায়ানকে তৈরি করে নিয়ে নিচে নেমেছে। বাড়ির সবাই উপস্থিত হয়েছে। তাছাড়া আশেপাশের কিছু পাড়া প্রতিবেশী এবং রায়ানের বন্ধু বান্ধব রাও এসেছে তার জন্মদিন উপলক্ষে। সবাই রায়ানকে উইশ করছে। রায়ানকে খুব খুশি লাগছে।

রায়ানের সামনে তার জন্মদিনের কেক আনা হয়েছে। মেহুল একটি বড় মোমবাতি কেকের সামনে রেখে বলে, “এই মোমবাতি ফু দিয়ে নিভাও। আর চোখ বন্ধ করে একটা উইশ করবে।”

রায়ান তাই করে। মোমবাতি ফু দিয়ে নেভায় এবং উইশ হিসেবে নিজের মাকে চায়! সে চোখ বন্ধ করে বলে,“আমি চাই আমার আম্মু আমার কাছে ফিরে আসুক।”

এরপর রায়ানকে কেক কা*টতে বলা হয়। রায়ান কেক কা*টতে যাবে এমন সময় কেউ বাড়ির গেট থেকে বলে ওঠে,
‘দাঁড়াও। আমার ছেলের জন্মদিন আর আমাকে ছাড়াই তার কেক কা*টা হচ্ছে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমি আসছি রায়ান।’

আকাশ বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে, “অন্তরা….”

#চলবে#আবেগময়_সম্পর্ক
#২২তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

অন্তরা রায়ানের পাশে চলে আসে। রায়ান অবাক নয়নে অন্তরার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে তার মা ফিরে এসেছে। রায়ান অন্তরাকে জড়িয়ে ধরা বলে,“তুমি কি সত্যি আমার আম্মু? তুমি ফিরে এসেছ? আর আমাকে ছেড়ে যাবা না তো?”

অন্তরা রায়ানকে আদর করতে থাকে। আজ কত দিন পর নিজের ছেলেকে ফেরত পেল সে। অন্তরা রায়ানকে বলে, “আমি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। তোমার আম্মু এবার তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।”

অন্তরার কথা শুনে মেহুলের বুক কেপে ওঠে। অন্তরা দেখামাত্রই সে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেছে। এমন দিন যে কখনো আসবে সেটা কল্পনাও করে নি মেহুল। এখন তার কি হবে সেই চিন্তাতেই মগ্ন সে। মেহুল একবার আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের দৃষ্টি অন্তরার দিকেই স্থির ছিল। প্রচণ্ড চমকিত হয়েছে আকাশ। শুধু আকাশ নয়, আমিনা আক্তার এমনকি বার্থডে পার্টিতে উপস্থিত থাকা বাকি সবাইও অনেক বেশি পরিমাণে অবাক।

অন্তরা সেসব দিক খেয়াল না করে রায়ানকে বলে, “চলো আমরা একসাথে কেক কা*টি।”

রায়ান মাথা নাড়ায়। তারপর তারা দুজনে মিলে কেক কা*টে। এতক্ষণ চুপ থাকলেও আর চুপ থাকে না আকাশ। সে অন্তরার কাছে এসে তার হাত শক্ত করে ধরে বলে, “এত দিন কোথায় ছিলে তুমি? আজ ফিরেই বা এলে কেন?”

অন্তরা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,“তোমাকে কোন কিছু বলতে বা জানাতে আমি বাধ্য নই। আমি এখানে তোমার কাছে ফিরেও আসিনি। তুমি নিজের বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে থাকো। আমি শুধু নিজের ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

আকাশ কিছু বলার আগেই আমিনা আক্তার এগিয়ে আসেন সামনে। তিনি অন্তরাকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলেন,“কোন মুখে তুমি এই কথা বলছ? এত দিন নিজের ছেলের কোন খোঁজ রেখেছ তুমি? ছেলেটা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে সেই খবরও তো রাখো নি। আর আজ হঠাৎ ছেলের প্রতি মায়া তোমার উতলে উঠছে।”

অন্তরা বলে, “আমি এত কথা শুনতে এখানে আসিনি। আমি রায়ানের জন্মদাত্রী মা। তাই ওর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। আমি ওকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো আর এটাই আমার ফাইনাল ডিশিসন।”

আকাশ রায়ানের হাত শক্ত করে ধরে বলে, “রায়ান তোমার একার সন্তান নয় যে তুমি ওকে এভাবে নিয়ে যেতে পারবে। রায়ান কিন্তু আমারও সন্তান।”

অন্তরা বাঁকা হেসে বলে, “কি বললে তুমি? রায়ান তোমার সন্তান। হাহ্ রায়ান তোমার কেউ নয়। রায়ানের আসল বাবা হলো আমার বয়ফ্রেন্ড আদিত্য। আদিত্য এবং আমি দুজনেই এখন বিদেশে সেটেলড। আদিত্যই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে রায়ানকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য। রায়ানের বায়োলজিকাল ফাদার কিন্তু আদিত্যিই
তাই আশা করি তুমি এ বিষয়ে কোন রাইট রাখো না। আর হ্যাঁ, আমাদের ডিভোর্স হওয়া এখনো বাকি আছে। আমি ডিভোর্স পেপারস সাথে করেই নিয়ে এসেছি। তুমি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সুখে থাকো। শুধু আমাকে নিজের সন্তানকে নিয়ে যেতে দাও।”

আকাশ কি বলবে বুঝতে পারছিল না। একসাথে এত ধাক্কা তার সহ্য হচ্ছিল না। এর মাঝেই আমিনা আক্তার বলে ওঠেন, “কেমন মা তুমি? জন্ম দিয়ে নিজের বাচ্চাকে রেখে চলে গেছ। এখন এত দিন ধরে আমার ছেলে তোমার বাচ্চাকে মানুষ করল, আর এখন তুমি এসেছ নিজের বাচ্চার অধিকার নিয়ে! লজ্জা করে না তোমার?”

অন্তরা রায়ানের হাত ধরে বলে, “রায়ান তুমি যাবে তো আমার সাথে?”

রায়ান কোন উত্তর দেওয়ার পূর্বেই মেহুল এসে রায়ানের অপর একটি হাত ধরে। সে অন্তরাকে বলে, “আমি জানি আপনি রায়ানের মা হন। কিন্তু তাই বলে এভাবে হঠাৎ করে আমাদের সবার থেকে রায়ানকে নিয়ে যাওয়ার কোন অধিকার আপনার নেই। রায়ানের নিজস্ব মতামত রয়েছে। এক্ষেত্রে রায়ান যা বলবে সেটাই হবে।”

এরপর মেহুল রায়ানকে জিজ্ঞাসা করে, “রায়ান তুমিই বলো তুমি কি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে চাও?”

রায়ান মাথা নাড়িয়ে বলে, “না নতুন মা আমি তোমাদের সবার সাথেই তো থাকতে চাই। কিন্তু আমি আম্মুর সাথেও থাকতে চাই। আমার সবাইকে লাগবে।”

অন্তরা রায়ানকে বলে, “না রায়ান। এখানে কেউ তোমার আপন নয়। আমি তোমার মা। তাই আমি তোমাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যাবো। তুমি আমার সাথে চলো। জানো আমাদের অনেক বড় একটা সুন্দর বাড়ি আছে। সেখানে অনেক খেলনাও আছে।”

রায়ান অন্তরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “না আমি যাবো না। আমি এখানে সবার সাথে থাকব। তুমিও এখানে থাকো না আম্মু।”

অন্তরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মেহুল বিজয়ীর হাসি হেসে বলে,“দেখলেন তো রায়ান নিজেই চাইছে না এখান থেকে যেতে। আপনি নিশ্চয়ই একটা বাচ্চার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে নিয়ে যেতে পারবেন না। রায়ানের সাথে এই বাড়ির কারো রক্তের সম্পর্ক নাই থাকতে পারে কিন্তু আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। সেই আবেগ, মায়া কা*টিয়ে রায়ানকে নিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়।”

অন্তরা বেশ দাম্ভিকতার সাথে বলে,“একজন মায়ের শক্তিকে তুমি খাটো করে দেখো না। আমি যদি খুব ভুল করে না থাকি তাহলে তুমি আকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহুল। তো যাই হোক তুমি একটা কথা শুনে রাখো রায়ান আমার ছেলে। আর আমি ওকে আজ হোক, কাল হোক আমার নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবোই।”

কথাটা বলেই অন্তরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে। তখন রায়ান তার শাড়ির আঁচল ধরে তাকে আটকে বলে,“আম্মু তুমি চলে যাচ্ছ কেন? আমাদের সাথে থাকো না।”

অন্তরা ঝুকে বসে রায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় রায়ান। কিন্তু আমি একেবারের মতো চলে যাচ্ছি না। আমি আবার আসবো তোমাকে নিতে। তখন কিন্তু তোমাকে আমার সাথে ফিরতেই হবে।”

অন্তরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার চোখে জল চিকচিক করছিল। যেটা আর কারো চোখে না পড়লেও মেহুলের দৃষ্টি এড়ায় না। মেহুল ভাবতে থাকে, “অন্তরা কাঁদছিলে কেন? আমার মনে হয় বড় কোন রহস্য আছে। আমাকে সব কিছু জানতে হবে।”

❤️
আশিক অন্তরার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে অন্তরাকে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি কেন মিথ্যা বললে অন্তরা ভাবি? কেন তুমি কাউকে বললে না যে রায়ান তোমার আর আকাশ ভাইয়ারই ছেলে?”

অন্তরা নিজের চোখের জল লেপন করে বলে, “আমি সত্যটা কাউকে বলতে পারবো না আশিক। আমি যদি সত্যটা সবার সামনে আনি তাহলে আমার জন্য মেহুলের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আকাশ আগে আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু এখন তো ও মেহুলকে ভালোবাসে। তাই আমি চাই ও মেহুলকে নিয়ে ভালো থাকুক। আমার সম্পর্কে ওর নেগেটিভ ভাবনা যদি বজায় থাকে তাহলেই কেবল এটা সম্ভব। আমি কোন মেয়ের সংসার ভাঙার কারণ হতে চাই না। আমি শুধু নিজের ছেলেকে নিজের কাছে পেতে চাই ব্যস।”

আশিক বলে, “কিন্তু এখানে তোমার তো কোন দোষ নেই অন্তরা ভাবি। তুমিও তো পরিস্থিতির স্বীকার।”

“কার কি দোষ আছে নেই, সেটা বড় কথা না। আমি তো নিজের জীবনের সব কিছু হারিয়েই ফেলেছি। আমি চাইনা মেহুলও ওর সবকিছু হারাক। ও নিজের স্বামীকে নিয়ে ভালো থাকুক। আমি আকাশকে ডিভোর্স দিয়ে ওর জীবন থেকে দূরে সরে আসবো। ক’দিন পর মেহুলের নিজের সন্তান হবে তখন ওরা রায়ানকে ছাড়াই ভালো থাকবে। আমি তাই শুধু রায়ানকে চাই।”

“তুমি ভুল ভাবছ অন্তরা ভাবি। মেহুল ভাবি রায়ানকে অনেক বেশি ভালোবাসে। রায়ানকে ছাড়া সে ভালো থাকতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তোমাদের দুজনের মাঝে দ্বন্দ্ব হওয়াই স্বাভাবিক।”

অন্তরা এবার বেশ ধমকের সুরে বলে,“নিজের স্বামীর অধিকার তো আমি ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু সন্তানের অধিকার ছাড়ব না। রায়ানকে নিজের কাছে আনার জন্য যা যা করা লাগে সবকিছুই আমি করব।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here