আবেগময় সম্পর্ক পর্ব -২৫+২৬

#আবেগময়_সম্পর্ক
#২৫তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

অন্তরার মৃত্যুর পর অতিবাহিত হয়েছে কয়েক মাস। জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। জীবন তার আপন গতিতেই চলতে থাকে। জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই সবাই এগিয়ে গেছে।

রায়ান প্রথম প্রথম নিজের মায়ের জন্য কান্না করলেও এখন সামলে নিয়েছে নিজেকে। আর কাঁদে না সে। আকাশও অন্তরার মৃত্যুর পর অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল তবে এখন সে স্বাভাবিক হয়েছে। মেহুল ও রায়ানকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।

মেহুলও সংসারটা সামলে রাখার চেষ্টা করছে। এখন রোজার সময় চলছে। তাই মেহুল সকাল সকাল উঠল। সাথে আকাশকেও ডেকে দিল সেহরির জন্য। এর পর দুইজনে মিলে সেহরি করে নিল। আমিনা আক্তার, পিহু,আশিক ওরাও করে নিল সেহরি।

মেহুল কয়দিন থেকে একটা ব্যাপার খুব লক্ষ্য করছে। তার মাথা ব্যাথা করছে, বমি বমি ভাব, এবং নিজের পেটেও কিছু অনুভব করছে। মেহুল ক্লান্ত শরীর নিয়ে রায়ানের জন্য নুডলস তৈরি করছিল। একটু পরেই তার স্কুলে যাওয়ার টাইম হয়ে যাবে। আকাশও অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। হঠাৎ করেই নুডলস তৈরি করতে গিয়ে মেহুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

আমিনা আক্তার রান্নাঘরর এসে মেহুলকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে যান। তিনি চিৎকার করে সবাইকে ডাকেন। আমিনা আক্তারের ডাক শুনে আকাশ, আশিক, পিহু সবাই চলে আসে। আকাশ মেহুলকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে নিজের কোলে তুলে নেয়। এরপর তাকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। এবং বিছানায় শুইয়ে দেয়। পিহু কান্না করতে থাকে নিজের বোনের জন্য। এরমধ্যে ডাক্তারকে ডাকা হয়। ডাক্তার চলে আসে। ডাক্তার মেহুলের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বলেন,“ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খুশির খবর আছে মিস্টার আকাশ । আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছে। তাড়াতাড়ি মিষ্টি আনার ব্যবস্থা করুন।”

মেহুলের মা হওয়ার খবর শুনে সবাই খুব খুশি হয়ে যায়। পিহু চোখের জল মুছে বলে, “এটা তো দারুণ খবর। আমি একসাথে খালামনি আর ছোট চাচি হতে যাচ্ছি। আমার তো খুব ভালো লাগল কথাটা শুনে।”

আকাশ মেহুলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। ততক্ষণে মেহুলের জ্ঞানও ফিরে এসেছে। মেহুল নিজের মা হওয়ার কথা শুনে অনেক বেশি খুশি হয়৷ কারণ প্রত্যেক মেয়ের কাছে মা হতে পারা অনেক বড় একটি আনন্দের মুহুর্ত৷ একজন মা তার সন্তানকে নিজের থেকেও বেশি ভালো বাসে। তাই তো দশ মাস দশ দিন শত কষ্ট সহ্য করে সন্তানের জন্ম দেন। আকাশ মেহুলের হাতে হাত রেখে বলে, “শুনলে তুমি আমি…আমি আব্বা হতে চলেছি। আমার যে কি খুশি আর আনন্দ হচ্ছে এটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তুমি আমাকে অনেক খুশি দিয়েছ। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”

মেহুল মৃদু হেসে বলে, “আমিও অনেক খুশি হয়েছি। আমাদের নতুন অতিথি আসতে চলেছে।”

_________________
৯ মাস পর,
মেহুল বিছানায় শুয়ে আছে। গত কয়েক দিন থেকে বেশ অসুস্থ বোধ করছে সে৷ ডাক্তার বলেছে সম্পূর্ণ রেস্ট নিতে তাই সেই কথা অনুযায়ী চলার চেষ্টা করছে মেহুল।

পিহু সেমাই নিয়ে চলে এসেছে। মেহুলকে বলে, “আপি তুই এই সেমাই খেয়ে নে। সকাল থেকে তো কিছু খাসনি।”

মেহুল বলে, “আমার এখন কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না রে বোন। তুই এই সেমাই নিয়ে যা প্লিজ।”

পিহু মেহুলকে জোর করতে থাকে কিন্তু মেহুল খেতে চায় না। তারপর একটু পর মেহুল পিহুকে আবদার করে বলে,“আচ্ছা আমি খেয়ে নিবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে। তুই আমাকে একটা গান গাইয়ে শোনা। আমার গান শুনতে খুব ইচ্ছা করছে।”

পিহু তখন একটু কেশে নিয়ে গান গাইতে শুরু করে,
“কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন

নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
দূরে গেলেও এটাই সত্যি, তুমি আমারই
শুধু আমারই

রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না

জলে ভেজা, চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর
নিশানা তির, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘরদোর

জলে ভেজা, চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর
নিশানা তির, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘরদোর

মেঘ আসে এলোকেশে
ছুঁয়ে দিলেই সব চুপ

সেই মেঘবালিকার গল্প হোক
শহরজুড়ে বৃষ্টি হোক
রোদ্দুর হোক আজ শুধুই তার ডাকনাম
পাতাভরা শব্দ টুকরোরা
কালবৈশাখীর মতো মুখচোরা
সব ভিজে যাক, শুধু বেঁচে থাক অভিমান

নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
বেঁধে রাখতে পারলে তুমিও হতে আমারই
শুধু আমারই”

পিহুর গান শেষ হতে না হতেই মেহুলের খাওয়া শেষ হয়ে যায়। পিহু বলে, “এই তো ভালো মেয়ের মতো সব খেয়ে নিলি।”

এমন সময় রায়ান দৌড়ে এসে মেহুলের পাশে বসে। আচমকা মেহুলকে জড়িয়ে ধরে। তখন পিহু বলে,“কি করছ রায়ান? আপি তো অসুস্থ তাকে এভাবে ধরছ কেন?”

মেহুল বলে, “তুই কিছু বলিস না ওকে। ও তো ছোট মানুষ।”

রায়ান তখন বলে,“জানো আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে তার ভাই হওয়ার পর তার মা তাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না। আচ্ছা নতুন মা, তোমার বাচ্চা হওয়ার পর কি তুমিও আমায় ভালোবাসবে না?”

মেহুল আলতো করে রায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমি সব সময় তোমাকে এভাবেই ভালোবাসব রায়ান। তুমি কোন চিন্তা করো না।”

রায়ান খুশি হয়ে যায়। এমন সময় আচমকা মেহুলের পেটে ব্যাথা শুরু হয়। সে পেট ধরে ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে। পিহু বলে,“আপি কি হয়েছে? তুই এমন করছিস কেন?”

মেহুল বলে, “আমার পেটে খুব ব্যাথা হচ্ছে রে বোন পিহু। আমি সহ্য করতে পারছি না এই ব্যাথা।”

পিহু বাড়ির সবাই কে ব্যাপারটা জানায়। আকাশ বাইরে থাকায় আশিক এম্বুলেন্স ডেকে আনে। মেহুল কে তড়ি ঘড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আকাশের কাছেও খবর পৌঁছে যায়। সে ছুটে আসে হাসপাতালে।

ডাক্তার সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে, “রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ। আমাদের সিজারই করতে থাকে। সেইজন্য আপনাদের সই য়ের প্রয়োজন।”

আকাশ বন্ড সই করে। এরপর মেহুলের সিজার শুরু হয়। কক্ষের বাইরে সবাই পায়চারি করতে থাকে। আমিনা আক্তার সমানে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকেন। আকাশেরও খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।

কিছু সময় এভাবেই অতিবাহিত হয়। একটু পর ডাক্তার বেরিয়ে আসেন। ডাক্তারকে দেখে সবাই জিঘাংসু দৃষ্টিতে তাকায়। ডাক্তার শান্তভাবে এগিয়ে এসে বলে, “খুশির খবর আছে। ওনার ছেলে হয়েছে। কংগ্রাচুলেশনস।”

সবাই খুব খুশি হয়ে যায়। ডাক্তার বলে মা এবং বাচ্চা দুজনেই ভালো আছে। বাচ্চাকে এনে আকাশের কোলে দেওয়া হয়। আকাশ বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলে, “আমার ছেলে।”

সব কিছু ভালো ভাবেই যাচ্ছিল। মেহুলের ছেলেও বড় হতে থাকে। তবে মেহুলের নিজের ছেলে হওয়ার পর সে তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে রায়ানকেও যথেষ্ট সময় দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোট বাচ্চাকে রেখে রায়ানের আর আগের মতো যত্ন নিতে পারে না। এই নিয়ে রায়ানের মন খারাপ হয়ে যায়।

মেহুলের ছেলের নাম রাখা হয়…

#চলবে

(মেহুলের ছেলের জন্য ‘ম’ দিয়ে কিছু সুন্দর নাম সাজেস্ট করুন তো প্লিজ।)#আবেগময়_সম্পর্ক
#২৬তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল ও আকাশের ছেলের নাম রাখা হয় মায়ান। রায়ানের সাথে মিলিয়েই নামটা রাখা হয়। ধীরে ধীরে মায়ানকে সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে মেহুল। তবে রায়ানের উপরেও নজর রাখে। যথেষ্ট চেষ্টা করে মায়ানকে সামলেও রায়ানের খেয়াল রাখার। কিন্তু রায়ানের যেন এসবে মন গলে না। মেহুল যখন মায়ানকে কোলে নিয়ে রাখে তখন রায়ানের খুব হিংসা হয়। সে ভাবে,“আগে তো নতুন মা আমাকে সব সময় কোলে রাখত। আর এখন ভাইকে কোলে রাখে।”

এভাবেই হিংসা জন্ম নিতে থাকে রায়ানের মনে। রায়ানের মনে মায়ান এবং মেহুল প্রতি বিতৃষ্ণার জন্ম হতে থাকে। এই বিতৃষ্ণা যে কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটাই এখন দেখার!

৪ বছর পর,
অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। মায়ান এখন ৪ বছরে পদার্পন করেছে। আজ তার জন্মদিন। এইবছর স্কুলেও ভর্তি হয়েছে মায়ান। অন্যদিকে, রায়ানের এখন দশ বছর হয়ে গেছে। তবে মেহুল ও মায়ানের প্রতি তার ক্ষোভ এত বছরে অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ মায়ানের জন্মদিন উপলক্ষে যখন সব কিছু ডেকোরেট করা হচ্ছিল তখন রায়ান ফোনে গেমস খেলতে ব্যস্ত ছিল। আকাশ রায়ানের কাছে এসে তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে,“সারা দিন এত ফোন নিয়ে থাকো কেন? জানো না ফোন টিপলে চোখের ক্ষতি হয়? আজ না তোমার ভাইয়ের জন্মদিন। যাও ঘর সাজাতে সাহায্য করো।”

রায়ান আকাশের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে, “আমি যা ইচ্ছা করব। আমার ফোনে একদম হাত দেবে না। তোমার ছেলের জন্মদিন তুমি পালন করো৷ আমায় কেন বলছ?”

আকাশ রেগে গিয়ে রায়ানের গায়ে হাত তুলতে যায়। তখন মেহুল এসে আকাশের হাত ধরে বলে,“এটা কি করছ? রায়ান তো ছেলেমানুষ৷ ওকে এভাবে মা*রলে ওকে বোঝানো যাবে না। ওকে ভালো কথায় বোঝাতে হবে।”

এরপর মেহুল এসে রায়ানকে বলে,“রায়ান তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি এখন ঘরে নিয়ে রেস্ট নাও। সারাদিন ফোন দেখা ভালো না।”

রায়ান মেহুলকে মুখ ভেংচে বলে,“এখন কি আমাকে তোমার কথা শুনে চলতে হবে? আমার যা ইচ্ছা আমি করব। তুমি আমার কেউ নয়। যাও নিজের আসল ছেলের কাছে যাও।”

কথাটা বলেই রায়ান দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। মেহুল রায়ানের কথায় কষ্ট পেলেও সেটা প্রকাশ করে না। এখন রায়ানের এমন ব্যবহারেই মানিয়ে নিয়েছে সে। মেহুলের কেন জানি নিজেরই ত্রুটি মনে হয়। তার মনে হয়, সে হয়তো রায়ানকে প্রোপারলি মানুষ করতে পারে নি। তাই হয়তো রায়ান এমন হয়ে গেছে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমিনা আক্তারের রুমে যায় মেহুল। এই রুমে আমিনা আক্তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থেকেছেন। কিন্তু আজ থেকে এক বছর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর মেহুলই একা হাতে গোটা সংসারটা সামলাচ্ছে। পিহুও এখন আশিককে সাথে নিয়ে কাজের সূত্রে সিলেটে থাকে। আশিক সিলেটেই চাকরি করে।

মেহুল আমিনা আক্তারের রুমে এসে তার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,“আপনার সংসারটা আমি একা হাতে সামলানোর যথেষ্ট চেষ্টা করছি। জানি না কতটুকু কি পারছি। আমার মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক বেশি ব্যর্থ মনে হয়।”

___________
মায়ানের জন্মদিন উপলক্ষে আজ পিহু ও আশিকও এসেছে। পিহু এই বাড়িতে এসে সোজা মেহুলকে জড়িয়ে ধরে। তারপর লজ্জা লজ্জা মুখে মেহুলকে বলে, “আপি একটা খুশির খবর আছে।”

মেহুল ভ্রু কুচকে জানতে চায়, “কি খুশির খবর?”

“আমি মা হতে চলেছি। তুই বড় খালা হতে চলেছিস।”

মেহুল খুব খুশি হয় একথা শুনে। পিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, “সুখী হ বোন। তোর জীবনে আরো সুখের আগমন ঘটুক।”

মায়ানের সামনে কেক আনা হয়েছে। আজ সে কেক কে*টে জন্মদিন পালন করবে। কেক কা*টার সময় মায়ান মেহুলকে বলে,“আম্মু বাইয়া(ভাইয়া) কই? বাইয়া না এলে কিন্তু আমি কেক আটবো(কাটবো) না।”

মেহুল বলে, “আচ্ছা তুমি অপেক্ষা করো, আমি রায়ানকে ডেকে নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলেই মেহুল দ্রুত পায়ে হেটে উপরে যেতে থাকে। সে রায়ানের রুমের বাইরে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পায় রায়ান বই পড়ছে। মেহুল রায়ানের পাশে গিয়ে বলে, “রায়ান তোমার ভাই তোমাকে ডাকছে। বলছে তুমি না গেলে ও কেক কা*টবে না। চলো আমার সাথে নিচে।”

মেহুলের কথা শুনেও রায়ান কোন প্রতিক্রিয়া জানায় না। বাধ্য হয়ে মেহুল এসে রায়ানের পাশে তাকে টেনে তুলে বলে, “চলো রায়ান।”

রায়ান মেহুলকে ধা*ক্কা দেয়। মেহুল চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে নেয়। রায়ান রাগী গলায় বলে, “কেন আমাকে বিরক্ত করছ? যাও তো এখান থেকে। তোমাদের ছেলে জন্মদিন তোমরা পালন করো। আমায় কেন টানছ এর মধ্যে?”

মেহুল বলে, “তুমি আমায় ধা*ক্কা দিলে রায়ান? আমি তোমার…”

মেহুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই রায়ান বলে ওঠে, “তুমি আমার সৎমা। আর এটাই তোমার পরিচয়। আমি আগে ছোট ছিলাম জন্য বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন ঠিকই সব বুঝতে পারি।”

মেহুল আর বলার মতো কিছু খুজে পায়না। এতদিন ধরে সে রায়ানকে নিজের ছেলের মতোই দেখেছে। কখনো তাকে সৎছেলের মতো ট্রিট করেনি। কিন্তু রায়ান আজ যা করলো তা অবিশ্বাস্য। এভাবে মুখের উপর তাকে সৎমা বলতে পারল!

এরমধ্যে পিহু রুমে চলে আসে। দরজায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সে সব দেখেছে। পিহু ভেতরে এসে রায়ানকে শাসিয়ে বলল,“এটা কেমন ব্যবহার তোমার রায়ান? আপির কাছে ক্ষমা চাও তুমি। আপি তোমাকে নিজেদের ছেলের থেকে কম ভালো বাসে না আর তুমি…”

রায়ান বলে ওঠে, “আমি কারো কথা শুনতে চাইনা। সবাই বেরিয়ে যাও এই রুম থেকে।”

পিহু আর কিছু বলতে চাইলে মেহুল তাকে টেনে বাইরে নিয়ে গিয়ে বলে,“তোকে কিছু বলতে হবে না। এখন ঝামেলা করে লাভ নেই। আকাশ বাড়িতে আছে। ও এসব জানলে খুব রেগে যাবে রায়ানের উপর। তুই কাউকে এসব কিছু বলিস না।”

পিহু বিস্ময়ের সাথে বলে, “তুই রায়ানকে শাসন করিস না কেন?”

“আমি ওকে কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে। ওর আমার প্রতি ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পাবে। জানিস মায়াএর জন্মের পর থেকেই রায়ানের সাথে আমার দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। মায়ান ছোট ছিল,ওকে সামলাতে আমাকে অনেক সময় দিতে হয়েছে, যার ফলে রায়ানকে বেশি সময় দিতে পারিনি। যদিও যথেষ্ট চেষ্টা করেছি কিন্তু…এভাবেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ওকে অনেক বুঝিয়েও ওর সাথে দূরত্ব দূর করতে পারিনি।”

পিহু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, “আসলে কি জানিস তো আপি, মানুষ ঠিকই বলে, এক গাছের ছাল, কখনো আরেক গাছে লাগে না। তুই যতোই রায়ানকে নিজের ভাবিস ও তোকে সৎমা ছাড়া কিছুই ভাবে না। বুঝলি?”

মেহুল বলে, “আমাদের সম্পর্ক তো আগে ভালো ছিল।”

“সময় পরিবর্তনশীল আপি। সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলে যায়। আর রায়ানও এখন বদলে গেছে। হয়তো তোদের সম্পর্ক কখনো আর আগের মতো হবে না।”

মেহুল দুঃখী মন নিয়ে নিচে নেমে আসে। নিচে এসে মায়ানকে বলে,“রায়ান পড়াশোনা করছে। ওর অনেক জরুরি পড়া আছে। তুমি কেক ওকে ছাড়াই কা★টো।

কিন্তু মায়ান জেদ ধরে রায়ানকে ছাড়া সে একা কা★টবে না। আকাশও বলে,“কি এমন জরুরি পড়া ওর? সারাদিন তো ফোন নিয়ে বসে থাকে। কোনদিন তো বই নিয়ে বসতে দেখিনি।”

মেহুল এবার রেগে গিয়ে বলে,“যদি তোমাদের জন্মদিন পালন করতে হয় করো আর না হলে না করো। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।”
কথাটা বলে সে নিজের রুমে চলে যায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here