আমারে দিলোনা ভুলিতে পর্ব ৫

#আমারে_দিলোনা_ভুলিতে।

#পর্ব_৫।

#লেখা_আরজুমান_তাশা।

“চন্দ্রাকে এয়ারপোর্ট অবধি এগিয়ে দিতে তার সাথে উশান সহ আসে৷ এয়ারপোর্টের ভিতর প্রবেশ করতে গেলে উশান চন্দ্রার হাত ধরে থামিয়ে তার কাছাকাছি গিয়ে ভারাক্রান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
“কবে ফিরবে?

উশানের দুঃখী মুখ দেখে চন্দ্রা আলতো হেসে উশানের দুইহাত ধরে শান্ত গলায় বলে,
“একমাস পর। বা তার থেকে বেশি সময় লাগবে৷

উশান কিছুটা সময় চুপ করে থেকে দুঃখী গলায় বলে,
” আই লাভ ইউ।

উশানের কথায় চন্দ্রা হাসে৷ হেসে উশানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে। এরপর উশানের গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
“আই লাভ ইউ টু।

চন্দ্রা ভিতরে প্রবেশ করে মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা ফুটিয়ে উশানকে হাত নেড়ে বিদায় জানায়। উশান প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে স্থির হয়ে চন্দ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ এই প্রথম চন্দ্রা তার থেকে দূরে যাচ্ছে৷ তাও লম্বা সময়ের জন্য৷ এই প্রথম চন্দ্রার থেকে দূরে থাকার কষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে সে৷ কেমন যেনো নিজের মাঝে একটা শূন্যতা উপলব্ধি হচ্ছে৷ চন্দ্রা উশানকে লক্ষ্য করে ফ্লাইং কিস দিয়ে ইমেগ্রেশনের দিকে এগিয়ে যায়৷ আর উশান তার যাওয়ার পানে চেয়ে রয়৷

রাতের মধ্যভাগে আর্জেন্ট কলে নিবেদিতা খুব দ্রুত সেনানিবাসে ছুটে আসে। নিবেদিতা সহ আরো বেশ কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা উপস্থিত রয়েছে। নিবেদিতা এসে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
” এ্যানি প্রবলেম?

তখন একজন বলে,
“আই ডোন্ট নো।

তখন তাদের মাঝে উপস্থিত হয় উল্লাস এবং আরো দুজন সিনিয়র অফিসার৷ তাদের দেখে সবাই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। একজন সিনিয়র অফিসার বলে উঠে,
” সরি গাইস তোমাদের ইমার্জেন্সিতে ডাকার জন্য৷ তারজন্য কিছু করার নেই। এখন আসি মূল কথায়৷ আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন আপনারা সবাই আপনাদের জায়গা থেকে বেস্ট। আর আপনাদের সবাইকে একটা মিশনের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে৷ আর অপারেশন টা আজকেই। তাই বুঝতে পারছেন আপনাদের হাতে সময় খুব কম। আর এই অল্প সময়ে আপনারা আপনাদের তৈরি করে নিন। সব কিছুর নির্দেশনা আপনাদের মেজর উল্লাস দিয়ে দিবেন৷ সো, গাইস আর ইউ রেডি ফর এ মিশন?

সব কিছু শুনে তখন সব সেনা একসাথে একই সুরে বলে,

“ইয়েস স্যার।

জবাব শুনে সিনিয়র অফিসার সন্তুষ্টি অনুভব করেন। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“অল দ্যা বেস্ট গাইস।

” সবাই খুব তোরজোড় দিয়ে নিজেকে মিশনের জন্য তৈরি করে নেয়। যার যা প্রয়োজন তা সে সংগ্রহ করে নেয়। একটা দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় তাদের প্রবেশ করতে হবে। পুরো জায়গা জুড়ে রিস্ক। অস্ত্র আর নারী ও শিশু পাচারকারীর উপর আক্রমণ করতে হবে৷ উল্লাস একটা ম্যাপ সবাইকে দেখায়।আর কিভাবে প্রবেশ করতে হবে সেটাও সবাইকে বলে দেয়। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে তা দেখছে। রাতের অন্ধকারে সবাই দূর্গমের কাছাকাছি এসে পৌছায়৷ উল্লাস হাতের ইশারায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যেতে বলে দলের সবাইকে৷ একদলে উল্লাস আরেক দলে নিবেদিতা৷ দুইদল দুইদিক থেকে ছড়িয়ে পরে। রাতের নিস্তব্ধতা চারপাশ ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। গা ছমছমে পরিবেশ। দূর থেকে হুতুম পেঁচা থেমে থেমে ডাকছে। খুব সাবধানে সবাই নিজের পা ফেলছে। একটু উনিশ বিশ হলে সব কছু ভেস্তে যেতে পারে। আধাঘন্টার পর তারা তাদের টার্গেটের কাছাকাছি এসে পোছায়৷ দুর্গমের চারপাশ আলো জ্বলছে। একদম কাছে গিয়ে আক্রমণ করা সম্ভব না। তাই দূর্বিন দিয়ে দূর থেকে উল্লাস চারপাশ দেখে পাচারকারীদের অবস্থান বুঝে নেয়৷ তারপর সবাইকে নির্দেশ দেয় যে যার পজিশনে চলে যেতে৷ চারদিক থেকে ঘিরে নিয়ে সেনারা এগোতে থাকে৷ সবাই খুব সাবধানতা অবলম্বন করে দূর্গমের খুব কাছাকাছি এসে পৌছায়। উল্লাস এবার ফ্যায়ার করার নির্দেশ দেয়। সাইলেন্ট ট্রিগারের মাধ্যমে শুট করা হয়। বাইরে যারা পাহারা দিচ্ছিলো তাদের সবাইকে একে একে শেষ করে একদম দূর্গমের কাছেই পৌছে যায়৷ নিবেদিতা তার গ্রুপকে হাতের ইশারায় থামতে বলে৷ নিবেদিতা দাঁড়িয়ে ভিতরের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করে৷ দরজার হাল্কা ফাঁক দিয়ে ভিতরের লোকের সংখ্যা দেখে নিয়ে দলে তাকায় সবাইকে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেয় কে কোন পজিশন থেকে আক্রমণ করবে। সবাই তাদের স্থান নিয়ে নিলে নিবেদিতা আস্তে আস্তে করে, ১,২,৩ বলার পর শ্যূট করা শুরু করে৷

এই ঘরে যারা উপস্থিত ছিলো হঠাৎ আক্রমণে বেপরোয়া হয়ে যায়৷ কিছু বুঝে উঠার আগে তারা একজন একজন করে ঢলে পরতে থাকে৷ সবাইকে শ্যূট করার পরে তার কাপড়ে থাকা মাইক্রোফোনের কাছে মুখ নিয়ে নিবেদিতা বলে,
“টার্গেট ক্লিয়ার। আমরা ভিতরে যাচ্ছি।

উল্লাস আর তার দল একটা অন্ধকার গলির মধ্যে দিয়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে হাটছে। তারা একটা ঘরে প্রবেশ করে৷ ঘরটাতে অনেক খাটের বাক্স জমা করা৷ কিছু বড় বড় ড্রাম। খুব অল্প আলো। উল্লাস এবং তার দলের সবাই চারপাশ চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলো। আর তখনই তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি নিক্ষেপ হয়৷উল্লাস চেঁচিয়ে সৈন্যদের বলে,
” জলদি পজিশনে যাও।

যে যার পজিশনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গুলির থেকে আড়াল করে নেয়৷ কিছুটা সময় পর গুলির আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। যথাসাধ্য সকল সেনা তাদের আড়াল করে নিয়েছে। তাদের কানে পায়ের শব্দ ভেসে আসছে৷উল্লাস তার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে হাত দেখিয়ে ডান বলে ইশারা করে৷ ইশারায় তার সহকর্মী বুঝতে পেরে সে মাথায় দুলিয়ে হ্যাঁ বলে জবাব দেয়। আর তারপর সে শুট করে একজনকে। শুট করে সে নিজেকে আড়াল করে নেয়৷

নিবেদিতা আর বাকিরা ভিতরে প্রবেশ করতে নিলে নিবেদিতা চিৎকার দিয়ে সবাইকে সাবধান করে বলে,
“দাঁড়াও।
নিবেদিতার কথায় সবাই দাঁড়িয়ে যায়৷ নিবেদিতা আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে বসে পরে৷একটা খুব সরু তার। যেটা দূর থেকে বুঝা মুশকিল। আর অসাবধানতায় যদি এটার সাথে পা লাগে তবে তার মৃত্যু অনিবার্য। নিবেদিতা সেটা ভালো করে দেখে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
” গাইজ সাবধানে। এখানে বোম আছে৷ আশপাশে সাবধানে পা ফেলো।

নিবেদিতার কথায় সবাই মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে সামনে এগোতে থাকে। নিবেদিতা এবং বাকিরা সামনে এগোতে এগোতে বলে,
“এরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে৷ যেকোনো পরিস্থিতির জন্য৷

অন্য আরেকটা রুমে চ্যাক করতে থাকে তারা। রুমটা খালি৷ খড়কুটোতে ভরা।একটা ভ্যাবসা বিশ্রী মদের গন্ধ নাকে এসে লাগে সবার৷কারো উপস্থিতি না পেয়ে রিভেলবার নিচে নামিয়ে ফেলে৷ তখন একজন বলে,
“ঘরটা তো খালি।

কিছু না পেয়ে নিরাশ হয়ে চলে যেতে নিলে কিছু একটার সাথে হুচট খায় নিবেদিতা। পিছন ফিরে নিচের দিকে তাকায়।পা দিয়ে খড় সরায়৷ তারপর পা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। দুইতিন বার আঘাত করে নিবেদিতা বুঝতে পারে এখানে সিক্রেট রুম আছে৷ নিবেদিতা নিচু স্বরে বলে,
” গাইজ পথ খুঁজো।

কথাটা শোনামাত্র সবাই হন্য হয়ে পথ খুঁজতে থাকে। খোঁজাখুঁজির পর দরজা পেয়েও যায়৷ একেক করে সাবধানতা অবলম্বন করে সিক্রেট রুমে প্রবেশ করে৷ রুম থেকে গুহা বলা ভালো। ভিতরে ঢুকতেই তাদের সামনে পরে পাচারকারীর একজন। তার হাতে ছুরি ছিলো সেটা সে ছুড়ে মারে। ছুরিটা গিয়ে নিবেদিতার হাতে লাগে। বাহুতে ভালোই জখম হয়ে যায় নিবেদিতা। নিবেদিতা আক্রমণের ফলে একজন গুলি চালায় আক্রমণ কারীর উপর৷ নিবেদিতা নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে এগোতে থাকে৷এবং পেয়ে যায় যা তাদের লক্ষ্য ছিলো৷ নয় বছর থেকে শুরু করে বিশ বছরের মতো বয়স হবে মেয়েগুলোর৷ সবার গাল কাপড় দিয়ে বাঁধা যাতে তারা শব্দ করতে না পারে। হাত পিছন দিকে করে বেঁধে রেখেছে৷ সবার অবস্থা করুণ৷ সেখানে সাথে আরো পায় কিছু বেশ ভয়ানক অস্ত্র।

নিবেদিতা জয়ের হাসি হেসে তার দলের উদ্দেশ্যে বলে,
“মিশন সাকসেস।

কথাটা বলা শেষ করতে পারলোনা তার আগে গুলাগুলির শব্দ কানে আসে তাদের। নিবেদিতা বিচলিত হয়ে গ্রুপের উউদ্দেশ্যে বলে,
” দুজন এখানে থাকো। বাকি দুজন আমার সাথে আসো।

দুইজন মেয়েগুলোকে পাহারা দিয়ে বাকি দুজনকে নিয়ে নিবেদিতা উপরে চলে আসে। বন্দুক তাক করে ধরে সিরিয়াস গলায় বলে,
“পজিশন ঠিক করে নাও৷

পাচারকারীদের সাথে উল্লাসদের ভালোই হাতা পায় হচ্ছে৷ একজনের হাতে অলরেডি গুলি লেগেছে। পাচারকারীর সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। কোন দিকদিশা দেখছেনা। এমন ভাবে গুলি করছে সবকিছু তছনছ হয়ে গিয়েছে৷ উল্লাস পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। নিবেদিতা আর তার সঙ্গীরা পাচারকারীর পিছনে এসে পজিশনে দাঁড়ায়। পাচারকারীরা বুঝে উঠার আগে তাদেরকে গুলি করতে থাকে। পিছন থেকে আক্রমণের ফলে তা বে-দিশা হয়ে পড়ে৷ আর তখন সুযোগ পেয়ে উল্লাস এবং তার সঙ্গীরা গুলি নিক্ষেপ করতে তাকে৷ গুলাগুলির শব্দে গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ পুরো ঘরে কালো ধোঁয়া উঠছে৷ অনেক্ষণ গুলি বর্ষণ হতে থাকে৷ ঠিক কতটা সময় এমন চলেছে তার হদিস কারোর কাছে নেয়৷

” ভোরের আলো উদয় হতে এক এক করে কাঠের তৈরি বাংলোটা থেকে বের হয়ে আসে। সবাই ক্লান্ত। কিন্তু সবার মুখে বিজয়ের হাসি৷ বারোজনের একটা দল গঠন করা হয়েছে। সবাই বের হয়ে একজন আরেকজনের সাথে হাত মিলিয়ে জড়িয়ে ধরে। এই বারোজনের দলের মাঝে তিনজন মেয়ে৷ নিবেদিতা বিজয়ের তৃপ্তিতে ভুলেই গিয়েছে ছুরির আঘাতে তার হাত জখম হয়েছে৷ নিবেদিতার ড্রেসের হাত রক্তে লাল হয়ে রয়েছে৷ সবাই গোল হয়ে দাঁড়ানোর ফলে নিবেদিতার রক্তে রাঙা হাত উল্লাসের চোখে পড়ে। উল্লাস সূক্ষ্ম চোখে নিবেদিতা দেখে নিজের গাম্ভীর্য ধরে রেখে নিবেদিতাকে বলে,
“নিবেদিতা আর ইউ ইনজুর। প্লিজ টেক অফ ইউ সেল্ফ।
উল্লাসের কথা শুনে নিবেদিতা তার হাতের দিকে তাকায়৷ হাতাটা একটু আলগে ধরে সে তার ক্ষতটা দেখে নিয়ে সৌজন্যতায় হেসে উল্লাসকে বলে,
” ডোন্ট ওয়ারি ক্যাপ্টেন।ইট’স নরমাল।

নিবেদিতার কথায় কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে নিবেদিতার কাছে এগিয়ে গিয়ে উল্লাসের কাছে থাকা রুমালটা নিবেদিতার বাহুতে বেঁধে দেয়৷ উল্লাসের এমন কান্ডে নিবেদিতা থঁ মেরে উল্লাসের মুখের দিকে চেয়ে থাকে৷উল্লাসের কাছে আসার সাথে সাথে নিবেদিতার হার্টবিটের গতি দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করে৷ উল্লাস রুমালটা বেঁধে দিয়ে একপলক নিবেদিতার মুখের দিকে চেয়ে চুপচাপ তার পাশ থেকে সরে যায়৷ তাদের দলে যার হাতে গুলি লাগে উল্লাস তার কাছে যায়। যার হাতে গুলি লেগেছে তার নাম নয়ন। নয়নের হাতের গুলি বের করে দেওয়া হয়েছে৷ এখন আর তেমন রিস্ক নেয়৷বাকি চিকিৎসাটা ফিরে গেলে তারপর মিলবে। প্রাথমিক চিকিৎসার যতটুকু প্রয়োজন ততোটুক করেছে। উল্লাস তার কাছে গিয়ে তার দিকে হাত এগিয়ে দেয়। নয়ন উল্লাসের হাতের দিকে চেয়ে স্মিথ হেসে উল্লাসের হাতে তার হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়৷ উল্লাস নয়নের কাঁধে হাত রেখে গর্ব করে বলে,
“গুড জব৷
জবাবে নয়ন শুধু হাসে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here