আমারে দিলোনা ভুলিতে পর্ব ৭

#আমারে_দিলোনা_ভুলিতে।

#পর্ব_৭।

#লেখা_আরজুমান_তাশা।

“নিবেদিতা খুব সূক্ষ্ম আর নিখুঁত ভাবে নতুন ক্যান্ডিডেটদের উপর নজর রাখছে। আজ উল্লাসের সহযোগীর দায়িত্ব নিবেদিতার। উল্লাস তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিবেদিতাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে৷ এই অবধি উল্লাস নিবেদিতার দিকে শত কয়েকবার হবে হয়তো তাকিয়েছে। কিন্তু নিবেদিতা এমন শক্ত পাথরের মূর্তির মতো এক জায়গায় একই পজিশনে দাঁড়িয়ে ট্রেইনারদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ উল্লাস বুঝে কূল করতে পারছেনা নিবেদিত তাকে প্রয়োজনের থেকেও বেশি ইগনোর কেন করছে? নিবেদিতা এমন করলে সে উল্লাস তার সাথে কথা কি করে বলবে! সেটা ভাবতে উল্লাসের মাথা কয়েক গুন ভারী হয়ে যাচ্ছে৷ উল্লাস কিছুটা হাঁফসাঁফ করে নিবেদিতার আড়ালে চলে যায়৷ উল্লাস চলে গিয়েছে বুঝতে পেরে নিবেদিতা বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। উল্লাসের একমনে চেয়ে থাকাটা নিবেদিতা লক্ষ্য করেছে প্রথবারই৷ উল্লাসে তার দিকে এমন তাকিয়ে তাকাতে নিবেদিতা নিজেকে আটকাতে পারছিলোনা উল্লাসের আকৃষ্টতা থেকে৷ নিবেদিতার মনে হচ্ছিলো উল্লাসের দৃষ্টি তা যেনো কোন টুপ আর সে হলো সে টুপে গাল দেওয়া মাছ৷ উল্লাস যদি আর একটু সময় এখানে দাঁড়িয়ে বারবার তাকে দেখে যেতো তবে নিবেদিতা নির্ঘাৎ হ্যার্টএ্যাটাকে মারা যেতো!

” ট্রেনিংয়ের কার্যক্রম আজকের মতো শেষ হয়েছে৷ক্যান্ডিডেটরা নিজেদের ক্লান্তি মুছে বাইরে উনুন জ্বালিয়ে মজা মাস্তি করছে৷ আজ সবাই মিলে বারবিকিউ করবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে তারা একা না তাদের সাথে উল্লাস নিবেদিতা আরো কয়েকজন সেনা অফিসার রয়েছে৷ এই মুহূর্তে এখন কোন সিনিয়র জুনিয়র ভেদাভেদ নেয়৷ সবাই এক সমান। ক্যান্ডিডেটদের আনন্দ মুহূর্ত দেখে উল্লাস নিবেদিতার তাদের পুরনো দিনের কথা মনে পরছে৷ এমনই একটা দিন ছিলো৷ নিবেদিতা অনেক আনন্দ করছিলো৷ সবাই মিলে পার্টি করছিলো অনেক হৈ-হুল্লোড় আর গলা ছেড়ে গান যার যা ইচ্ছে সে তাই করছে৷ আর তার এসব আনন্দের বেঘাৎ ঘটে যখন উল্লাসকে কোন মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখছিলো৷ নিলীমা উল্লাসের ব্যাচমেট ছিলো। উল্লাস আর নিলীমার ঘনিষ্ঠটা একটু বেশি৷ তাদের রসায়ন দেখে কমবেশি সবাই মনে করে তাদের মাঝে কোন প্রনয় চলছে৷ আর তা দেখে
নিবেদিতাদ পায়ের রক্ত মাথায় উঠার উপক্রম৷ পারছেনা উঠে গিয়ে উল্লাসের পাশে দাঁড়ানো নিলীমার চুল চিড়ে দিতে৷নিলীমা মেয়ে হিসেবে খারাপ না। ভালো মনের একটা মানুষ৷ তার সুন্দর আর মিষ্টভাষী আচরণে সবাই নিলীমাকে অনেক পছন্দ করে৷ কিন্তু নিবেদিতা নিলীমাকে তার সতীন ভাবে মনে মনে৷ নিবেদিতা রাগে ফুলছিলো আর তখন তাদের ব্যাচের দুই একজন উল্লাস আর নিলীমাকে নিয়ে চর্চা করাতে তারা যেনো আগুনে ঘি ঢেলে দিলো৷সবাই এটা অনুমান লাগাচ্ছে, উল্লাস আর নিলীমা তারা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা। এবং তাদের জুটি’টাও বেশ মানান সই।এসবে নিবেদিত তার রার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেনা বুঝতে পেরে ধাম করে উঠে সবার সামনে থেকে চলে যায়৷ নিবেদিতার হঠাৎ এহেন কান্ডে উপস্থিতি সকলে আশ্চর্য হয়ে যায়৷ সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ভালোই তো হাসিখুশি আনন্দ করছে হুট করে কি হয়ে গেলো! নিবেদিতার এমন করে চলে যাওয়াতে উল্লাস আর নিলীমা বেশ অবাক হয়। উল্লাস চিন্তিত হয়ে নিবেদিতার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে। তার মাথাতেও একই প্রশ্ন হুট করে কি হয়ে গেলো? নিবেদিতা চলে যাওয়াতে উল্লাসের মুখের যে এক্সপ্রেশন তৈরি হয়েছে সেটা নিলীমার চোখের আড়াল হলোনা৷ নিলীমা উল্লাসে উদ্দীপনা দেখে সহজ গলায় বলে,
“মেয়েটা কিন্তু তোমার থেকে ছোট৷
নিলীমার এমন কথায় উল্লাস চমকে উঠে৷ ঘাবড়ানো গলায় বলে,
“ম..মানে?
নিলীমা আলতো হেসে শান্ত গলায় বলে,
“তোমার চোখমুখ বলে দিচ্ছে তুমি তাকে পছন্দ করো৷
উল্লাস ভীষণ রকমের অবাক হয়ে যায়। অনেকটা বিব্রত নিয়ে বলে,
” কি যা তা বলছো? আমি ওকে পছন্দ করতে যাবো কেন?

উল্লাসের হীন্যমনতা মুখ দেখে নিলীমার মায়া হলো খুব। আলতো হেসে বলে,
” নিবেদিতার প্রতি তোমার আলাদা টান সেটা তুমি নিজেও জানো।
“এমন কিছুই না। ও আর বাকিদের মধ্যে কোন তফাৎ নেই আমার কাছে৷

উল্লাসের কথায় নিলীমা উল্লাসের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে কনফিডেন্সের গলায় বলে,
“আমি যা বলছি সেটা সত্য। আর সেটা তোমার মন জানে। কিন্তু তুমি যা বলছো তা মিথ্যে আর সেটা তোমার মুখের আভা বলে দিচ্ছে৷ তোমার চোখ অস্থির আর কথা বলার সময় কথাগুলো আটকে যাচ্ছে৷ কথাগুলো তুমি সময় নিয়ে গুছিয়ে বলছো। সত্য বলতে সময় লাগেনা।আর মিথ্যে বলতে সময় লাগে কারণ সেটা গুছিয়ে নিতে হয়৷ তুমি নিজের অজান্তে নিবেদিতাকে পছন্দ করো৷ তুমি ওর কথা সবসময় ভাবো৷ তুমি নিবেদিতার প্রতিটা পদক্ষেপ লক্ষ্য করো৷ তুমি সবসময় ভাবো নিবেদিতাকে নিয়ে৷ আমি যা বলছি তা সত্য কিনা তা তুমি নিজেই নিজের হৃদয়কে প্রশ্ন করো৷

নিলীমার কথার পিঠে উল্লাস আর কিছু বললোনা৷ নিলীমার কথাগুলো সত্য আর সেটা তার হৃদয় জানান দিয়েছে। কিন্তু কি করে সম্ভব? সে তো নিবেদিতাকে সবসময় এড়িয়ে চলেছে ।যে মানুষটাকে সবসময় চোখের আড়াল করে এসেছে সে কিভাবে মনে জায়গা করে নিতে পারে? নিবেদিতার কাজকর্ম উল্লাসের মাথায় ঘুরঘুর করে। তার জন্য সবসময় চিন্তা করে৷ যেদিন নিবেদিতাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো উল্লাস সেটা পুরো সময় ধরে দেখেছিলো৷ আর সেদিন রাতে নিবেদিতার কাছে ওষুধ নিয়ে যে গার্ড এসেছিলেন সেটা উল্লাস পাঠিয়েছিলো। যেটা কিনা রুলসের বিরুদ্ধে ছিলো। তবুও সিক্রেটলি সে নিবেদিতার সাহায্য করেছিলো৷ আর সেদিন প্রথম নিলীমার কথায় উল্লাস উপলব্ধি করে উল্লাস নিবেদিতাকে চোখে হারায়৷ সবসময় নিবেদিতার জন্য তার মন উৎসুক হয়ে থাকে৷
নিবেদিতা উঠে চলে আসলে তার পিছন পিছন চন্দ্রাও আসে।আর কেউ না জানলেও চন্দ্রা জানতো নিবেদিতা উল্লাস স্যারকে পছন্দ করে৷ নিবেদিতাকে একটা গাছের ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেখে চন্দ্রা ধীর সুস্থে নিবেদিতার পাশে গিয়ে বসে। কারো উপস্থিত টের পেয়ে নিবেদিতা মাথা তুলে চন্দ্রার মুখের দিকে তাকায়৷ অস্পষ্ট আলোতেও চন্দ্রা বুঝে গিয়েছে নিবেদিতা কাঁদছে। চন্দ্রা আলতো করে নিবেদিতার কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বলে,
“তুই এমন কেন করছিস? তোর স্বপ্ন কি আর তুই কি করছিস? উল্লাস স্যারের উপর তুই তোর সব ধ্যান জ্ঞান লাগিয়ে দিচ্ছিস।তোর কি উল্লাস স্যারকে নিজের করে পাওয়া লক্ষ্য ছিলো নাকি একজন সাকসেস সোলজার হওয়ার কথা ছিলো? তুই উল্লাস স্যারের প্রতি এতো এটাচ হয়ে যাচ্ছিস তুই জানিস’ই না তুই কি করছিস। এখনো সময় আছে তুই নিজেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আন। ভুলে যাস না তুই তোর ফ্যামিলির সাথে অনেক সংগ্রাম করে এখানে এসেছিস নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে৷ তোর স্বপ্ন তোর থেকে কয়েক কদম দূরে আর তুই এখন সেদিকে ফোকাস না করে অন্য কিছুতে ফোকাস দিয়ে বসেছিস৷ নিবি এখনো সময় আছে উল্লাস স্যারের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।

নিবেদিতা কিছু বলেনা। নিঃশব্দে চন্দ্রার বলা কথাগুলো শুনে যায়৷

“নিবেদিতা!

ডাকটা শুনে নিবেদিতা কিছুটা ঘাবড়ে যায়৷ অতীতে এমন ভাবে হারিয়ে গিয়েছিলো তাকে যে কেউ ডাকছে সে ডাক নিবেদিতার কর্ণ অবধি পৌছায়নি এতক্ষণ৷ নিবেদিতা উৎসুক চোখে পাশে তাকালে দেখে উল্লাস তার দিকে একটা ড্রিংকসের বোতল এগিয়ে রেখেছে৷উল্লাসকে দেখে নিবেদিতা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কাঁপা হাতে উল্লাসের হাত থেকে বোতলটা নেয়৷উল্লাস নিবেদিতার ঘাবড়ানো মুখ দেখে স্বাভাবিক গলায় বলে,
” তুমি ঠিক আছো?
জবাবে নিবেদিতা স্মিথ হেসে বলে,
“জ্বি,আমি ঠিক আছি।

নিবেদিতার জবাবে উল্লাস চুপ মেরে যায়৷উল্লাসের মনে হচ্ছস শব্দের ভাণ্ডার যেন ফুরিয়ে গিয়েছে তার৷ দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে সময় নিয়ে উল্লাস নিবেদিতাকে বলে,
” তোমার সাথে আমার আমার কিছু কথা ছিল। তোমার কি সময় হবে?

উল্লাসের কথায় নিবেদিতা ফ্যালফ্যাল করে উল্লাসের মুখের দিকে চেয়ে থাকে৷ নিবেদিতার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে সে উল্লাসের কথা বুঝতে পারেনি৷নিবেদিতা কিছুটা সময় উল্লাসের মুখের দিকে চেয়ে বুঝার চেষ্টা করছে উল্লাস কি বললো! উল্লাস হুট করে এমন কথা নিবেদিতার বোধগম্য হলোনা৷কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
” জ্বী,বলুন!

নিবেদিতার কথায় উল্লাস একটু নড়েচড়ে নিজেকে প্রস্তুত করে৷কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছেনা৷নিবেদিতা তার সব মনোযোগ উল্লাসের উপর লাগিয়ে দিয়ে উল্লাসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ উল্লাসে কিছুটা দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব নিয়ে নিবেদিতার দিকে চেয়ে আছে৷

“চন্দ্রার সময় খুব ব্যস্ততার মাঝে কাটছে৷ দিনরাত এক করে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। অনেক জেলা থেকে ডাক্তার নার্স এসেছে।সবাই সেচ্ছায় চিকিৎসা দান করছে।শ্রম দিচ্ছে কিন্তু বেতন নিচ্ছেনা৷ ক্যাম্পিং থেকে নতুনদের অনেক কিছু শেখার আছে৷ইংল্যান্ড থেকেও একটা গ্রুপ এসে এখানে জয়েন করে৷ চন্দ্রা তার ডিউটি শেষ করে তাঁবুতে আসে বিশ্রামের জন্য।তখন তাকে তাদের দলের একজন সদস্য এসে বলে,
” চন্দ্রা তোমার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।

কথাটা শুনে চন্দ্রা ভারি অবাক হলো।এখানে তার সাথে কে দেখা করতে আসবে!সাঁতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চন্দ্রা ক্লান্ত শরীর নিয়ে তাঁবু থেকে বের হয়ে আসে। তাঁবুর সামনে এসে চন্দ্রা বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে চলে যায়। হা করে তাকিয়ে আছে সে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে খুব৷ অবাক গলায় বলে,
“তুমি? এখানে! কি করে?

চন্দ্রার থেকে কয়েক কদম দূরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে উশান। চন্দ্রার অবিশ্বাস্য চাহনি দেখে উশান আলতো হেসে চন্দ্রাকে বলে,
” হ্যাঁ, আমি৷
চন্দ্রা আর কিছু চিন্তাভাবনা না করে উশানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে৷ চন্দ্রা বোধহয় খুশিতে পাগল হয়ে যাবে৷ চন্দ্রা আনন্দে হাসছে৷ উশান চন্দ্রার সান্নিধ্য পেয়ে চন্দ্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবেশের গলায় বলে,
“আই মিস ইউ সো মাচ।

চন্দ্রা নিজেকে উশানের বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উশানের হাতটুকু আকড়ে ধরে আনন্দিত গলায় বলে,
” আই মিস ইউ টু।

উশান চন্দ্রার হাত শক্ত করে ধরে ব্যতীত গলায় বলে,
“তোমার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি অনেক দুশ্চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম৷ আমার এক একটা দিন এক একটা বছরের সমান করে কাটছিলো৷তাই থাকতে না পেরে চলে এসেছি৷

উশানের কথায় চন্দ্রা উশানের মাথা টোকা মেরে বলে,
“আমার মোবাইল চুরি হয়ে গিয়েছিলো। আর তাই আমি তোমাকে ইমেইল করেছি তিন চারদিন পরপর৷ তুমি ইমেইল চ্যাক করোনি দেখে আমি ভাবলাম তুমি হয়তো ব্যস্ত।

উশান নিজের ভুলে জিভ কাটে। একহাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে আফসোসের স্বরে বলে,
“আমি এমন গর্দভ কিভাবে হতে পারি? কেন ইমেইল চ্যাক করলাম না একবারের জন্যেও৷

উশানের কান্ডে চন্দ্রা শব্দ করে হেসে বলে,
” যাক ভালোই হলো ইমেইল তুমি চ্যাক করোনি। তা না হলে আমার জন্য দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে এখানে আসতেনা৷ আর আমিও জানতে পারতাম না আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা কতখানি৷
কথাটা বলে চন্দ্রা প্রানখুলে হাসে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে জরুরি গলায় বলে,
“আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে আমি এখানে?
” তোকে বান্ধবীর কাছ থেকে।
“কে? নিবেদিতা?
” হ্যাঁ।

চন্দ্রা অবাক হয় ভীষণ। অবাক গলায় বলে,
“তুমি নিবেদিতাকে কোথায় পেলে?

” সে অনেক লম্বা কাহিনি। তবুও শর্টকাটে বলি তা না হলে জানবে কিভাবে তোমার ভালোবাসা আমায় কতোটা দেওয়ানা বানিয়ে দিয়েছে৷
উশানের কথায় চন্দ্রা হাসে। উশান তখন বলে,
” আমার বন্ধু উল্লাস। তাকে তুমি চিনবে। যার আন্ডারে তুমি ট্রেনিং নিয়ে ছিলে৷

উল্লাস নামটা শুনে চন্দ্রার মুখের হাসিটা মুহূর্তে উড়ে যায়৷ মুখে চিন্তার চাপ বসে যায়। চিন্তিত গলায় বলে,
” উল্লাস স্যার তোমার ফ্রেন্ড?
“হ্যাঁ।
উশান আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে চন্দ্রা উশানকে থামিয়ে দেয়। কারণ চন্দ্রা যা বুঝার বুঝে নিয়েছে।কথা ঘুরিয়ে চন্দ্রা বলে,
” চল তোমাকে ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখায়৷ ”

উশান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়৷ উশান চন্দ্রার পাশাপাশি হেটে সবকিছু দেখছে৷ সেচ্ছায় অনেকে রক্ত দান করছে৷ কেউ বুড়ো, কেউ শিশুকে দেখছি। উশান চারপাশ দেখে চন্দ্রাকে প্রশ্ন করে,
“যদি ইমার্জেন্সি আর ক্রিটিকাল কোন সিচুয়েশন তৈরি হয় তখন? ”
চন্দ্রা উশানের চেহারার দিকে চেয়ে আলতো হেসে বলে,
“তার জন্য জরুরি বিভাগের ব্যবস্থা করা আছে৷চল তোমাকে এখানের ইনচার্জের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। জবাবে উশান হেসে বলে,
” ওকে৷

উশানের ও বেশ আগ্রহ জমেছে এই ক্যাম্পিং নিয়ে। উশান আরো জানতে চাই এই ক্যাম্পিংয়ের ব্যাপারে। উশান ইনচার্জের মুখোমুখি হয়ে হতভম্ব হয়ে যায়৷মুহূর্তে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে,
“আংকেল?

উশানের মুখে আংকেল শব্দটা শুনে চন্দ্রা চোখ বড়বড় করে উশানের মুখের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
” আংকেল!

উশানকে দেখে ইনচার্জ ভদ্রলোক একনিমিষে বেজায় খুশি হয়ে উশানকে গলায় লাগায়।অধ্যাপক ডঃ মিঃ তারেক আনন্দিত গলায় বলে,
“তুমি এখানে কি করে?

উশান তখন চন্দ্রাকে দেখিয়ে বলে,
” আমার ফ্রেন্ড চন্দ্রা’র সাথে দেখা করতে আসছিলাম। কিন্তু সৌভাগ্য ক্রমে আপনার সাথেও দেখা হয়ে গেলো।

মিঃ তারেক চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে অভিযোগের গলায় বলে,
“তুমি উশানের পরিচিত আগে বলোনি কেন?
চন্দ্রা হাবাগোবার মত দাঁড়িয়ে আছে।মুখ দিয়ে তো কথায় বের হচ্ছেনা।চন্দ্রা কিছু বলার আগে উশান চন্দ্রার পাশ নিয়ে বলে,
” আংকেল চন্দ্রা তো আর জানতো না আপনি আমার আংকেল হোন।
মিঃ তারেক আলতো হেসে উশানের কথায় সাই দিয়ে বলে,
“তাও ঠিক।
উশান অনেকটা এক্সাইটেড হয়ে মিঃ তারেক’কে বলে,
” আংকেল এই উদ্যোগটা আসলেই মন কাড়ার মতো। সব ডাক্তার নার্সদের দেখে তাদের জন্য আমার মনে সম্মান বেড়ে দিগুণ হয়ে গিয়েছে৷ উদ্যোগটা মহান।

জবাবে মিঃ তারেক ঈষৎ হেসে বলে,
“দোয়া কর। যাতে আগামীতে আরো ভালো সেবা দিতে পারি বিনামূল্যে।
উশান হেসে বলে,
” ইনশাআল্লাহ৷

উশান আর মিঃ তারেক পাশাপাশি হেটে ক্যাম্পিং নিয়ে নানান আলোচনা করছে। আর চন্দ্রা তাদের সাথে সাথে হেটে নিরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করছে৷

রাত আনুমানিক দশটা বাজতে চলেছে। উশান আর নিবেদিতা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে৷ উশানের ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে৷ ব্যস্ততার মাঝে একদিনের ছুটি নিয়ে চন্দ্রার কাছে ছুটে এসেছে। চন্দ্রাকে যতক্ষণ না কাছ থেকে দেখতে না পাচ্ছে ততক্ষণ উশানের মন শান্তি পাচ্ছেনা।তাই আর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ঢাকার ফ্লাইট ধরে চন্দ্রার কাছে চলে আসে। এখন উশান শান্তিতে তার কাজে মন দিতে পারবে৷ চন্দ্রা উশানের হাত ধরে মনমরা করে উশানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“পৌছে ইমেইল করিও। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
উশান জবাবে আলতো হেসে চন্দ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
” বাই।
তারপর উশান চন্দ্রার কপালে আলতো চুমু দিয়ে ইমেগ্রেশনের ভিতর চলে যায়৷ আর চন্দ্রা বাইরে থেকে উশানের যাওয়ার পথপানে চেয়ে ভারী একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷ চন্দ্রার জন্য আজকের দিনটা অনেক স্পেশাল। উশানকে নিয়ে চন্দ্রার মনে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিলো৷চন্দ্রা সবসময় এটা চিন্তা করতো উশানকে কি তাকে৷ আদৌ ভালোবাসে নাকি চন্দ্রা একপাক্ষিক ভালোবেসে যাচ্ছে। কিন্তু উশান আজ চন্দ্রাকে ভুল প্রমাণ করে উশান তার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে গেলো৷ একেকজনের ভালোবাসার ধরন একেক রকম। কেউ তার ভালোবাসা ব্যক্ত করে আর কেউ গোপন করে রাখে৷

(#চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here