আমারে দিলোনা ভুলিতে পর্ব ৯

#আমারে_দিলোনা_ভুলিতে।

#পর্ব_৯।

#লেখা_আরজুমান_তাশা।

“বাথটবে পানি ভর্তি করে তার মধ্যে ঢুব দিয়ে বসে আছে নিবেদিতা। তার মস্তিষ্কে নিলীমার বলা কথা গুলো চরকির মত ঘুরতে থাকে৷ উল্লাসের মুখটা মস্তিষ্কে ভেসে উঠতে নিবেদিতা পানি থেকে উঠে বসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। এসব কি হচ্ছে তার সাথে নিবেদিতা বুঝতে পারছেনা। চন্দ্রাও নেই। থাকলে চন্দ্রা তাকে কোন না কোন সমাধান দিতো৷ কিন্তু নিবেদিতা এতো পরিমাণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যা আসলে বলার বাইরে৷কি করবে,কি বলবে বুঝতে পারছেনা। উল্লাসের সাথে সে রাতে নিবেদিতা কি কথা বলেছে তার কিছুই নিবেদিতা মনে করতে পারছেনা৷ সবকিছু আবছা এবং অনেক ফ্যাকাসে। তবে নিবেদিতার কানে একটা কথা বাজতো সবসময়। আর সেটা উল্লাসের বলা, ‘আই লাভ ইউ’ শব্দটা৷ তবে কি সত্যি উল্লাস সেদিন এই কথা বলেছিলো৷ নাকি সেটা নিবেদিতার ভ্রম! সেদিন লাস্ট কি কথা হয়েছে তাদের মাঝে তা নিবেদিতা অনেক মনে করার চেষ্টা করেছিলো আর বার বার ব্যর্থ হয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছিলো৷ নিবেদিতা মস্তিষ্কে আরো জোর লাগাতে যাবে তার আগে নিবেদিতার মোবাইল বেজে উঠে। বাথটাব থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সেনাবাহিনীর ট্রেনিং সেন্টার থেকে কল৷ নিবেদতা শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করে বলে,
” হ্যালো।

“বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এই মাত্র ল্যান্ড করেছে৷ চন্দ্রা চেক আউট হতে যাবে তখন তখন একজন এয়ার হোস্টেস চন্দ্রার হাতে একটা গোলাপ ধরিয়ে দেয় হাসিমুখে। গোলাপটা দিয়ে এয়ার হোস্টেস চলে যায়৷চন্দ্রা কিছুই বুঝতে না পেরে তার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ বোকার মত চেয়ে থাকে৷ এরপর কিছুটা সামনে আসলে এয়ারপোর্টের একজন স্টাফ এসে চন্দ্রাকে গোলাপ এগিয়ে দেয়৷ চন্দ্রা আশ্চর্য হয়ে হাসে। বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে তার সাথে। এয়ারপোর্টের দরজার সামনে আসলে সিকিউরিটি চন্দ্রার দিকে গোলাপ এগিয়ে দিয়ে গেইট খুলে দেয়৷ চন্দ্রা আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে। আর তার সাথে কি হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হবার পরেও আরো কয়েকজন চন্দ্রার হাতে গোলাপ ধরিয়ে দেয়। চন্দ্রা উৎসুক নয়নে চারপাশ তাকিয়ে সামনে এগোলে তখন একগুচ্ছ গোলাপ দিয়ে মুখ দেখে একজন এসে দাঁড়ায়৷ হুট করে আসাতে চন্দ্রা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়৷ মুখের সামনে থেকে ফুল সরিয়ে চন্দ্রার দিকে এগিয়ে ধরলে চন্দ্রা তার কাঙ্ক্ষিত মানুষের মুখ দেখতে পেয়ে আনন্দে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হেসে উঠে৷ চোখে জলের কণা চিকচিক করছে। আনন্দে বাকহারা চন্দ্রা। উশান জনসম্মুখে চন্দ্রার সামনে হাটু গেড়ে বসে চন্দ্রার দিকে ফুলের তোরা এগিয়ে দেয়৷ চন্দ্রার মুখে হাসি আর চোখে জল৷ কাঁন্না মাখা মুখে চন্দ্রা ফুলের তোরা হাতে নিলে উশান তার বুক পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স বের করে চন্দ্রার দিকে মেলে ধরে৷বাক্সে এনগেইজ রিং। চন্দ্রা অবিশ্বাস্য চোখে উশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। চন্দ্রার কাছে সবকিছু স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।ঘুম ভাঙলে স্বপ্নটাও ভেঙে যাবে৷ চন্দ্রা ছলছল চোখে উশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। উশান একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বলে,
“আমার বাকিটা পথচলার সঙ্গী হবে?

উশানের কথায় চন্দ্রা কেঁদেই ফেললো। মাথা দুলিয়ে জবাব দেয় চন্দ্রা।যার অর্থ সে রাজি। চন্দ্রা তার হাত এগিয়ে দিলে উশান খুশিমনে রিং পড়িয়ে দেয়। উপস্থিতি অনেকে তাদের এই ভালোবাসার সাক্ষী হয়েছে। অনেক কপোত-কপোতীর চন্দ্রা-উশানের ভালোবাসার প্রকাশ দেখে তাদের চোখে অশ্রু চলে আসে৷ কেউ কেউ হাত তালি দিয়ে তাদেরকে অভিনন্দন জানায়। ”

“নিবেদিতা তার বুট জুতার ফিতা বাঁধছিলো তখন উল্লাস নিবেদিতার কাছে এসে প্রশ্ন করে,
” ইউ রেডি?

উল্লাসকে দেখে নিবেদিতা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে পরে৷ বিব্রত গলায় বলে,
“ইয়েস, স্যার।

উল্লাস নিবেদিতার দিকে নির্বাক চোখে চেয়ে থাকে৷ মুখে কোন প্রসাধনীর চাপ নেই৷ ঘন পাপড়ি ওয়ালা চোখ কাজল বিহীন যেনো অপরুপ লাগছে৷ প্রাকৃতিক যার চোখ কাজল কালো তার অবশ্য আলাদা করে আর সময় খরচ করে চোখে কাজল দেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ নিলীমার বলা কথাগুলো শুনার পর উল্লাসকে নিজের সামনে দেখে নিবেদিতার ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে৷ উল্লাসের সামনে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট নিবেদিতার। নিবেদিতা চোরের মত নজর লুকাচ্ছে উল্লাসের দিকে। নিবেদিতা মনে হচ্ছে সে তার নিজের উপর নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা৷ উল্লাসের চোখের দিকে তাকালে কোন এক অঘটন ঘটে যাবে৷ তবে কোন অঘটন ঘটার আগে সেখানে সৈন্যরা এসে হাজির হয়। সবাই উচ্চ বাক্যে বলে,
” উই আর রেডি স্যার।

কথাটা শুনে উল্লাস কিছুটা চমকে যায়। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সবাইকে লক্ষ্য করে বলে,
“আজকের টাস্কটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তোমাদের জন্য। প্রতি পদে পদে সেখানে তোমাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করবে। আর তাই তোমাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য৷ না ঘাবড়ানো যাবে , না পিছু হাটা যাবে আর না থামা যাবে। কি কোন পরিস্থিতিতে তোমাদের টাস্ক পূরণ করতে হবে৷ তা না হলে একজন ধৈর্যশীল,শক্তিশালী, কঠোর পরিশ্রমী সেনা হওয়ার স্বপ্নটা ভুলে যেতে হবে তোমার৷ সো ইউ অল রেডি টু টাস্ক?

সবাই শিনা টান টান করে দাঁড়িয়ে পুরো কনফিডেন্সের সাথে একসুরে উচ্চস্বরে বলে,
” ইয়েস স্যার৷

উল্লাস স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে হাত পিছনে নিয়ে মাথা উচু করে উচ্চ গলায় প্রশ্ন করে,

“সো গাইজ আমাদের নীতি কি?
উল্লাসের প্রশ্নে তারা উচু গলায় জবাব দেয়,
” বিনা স্বার্থে, বিনা দ্বিধায়,একনিষ্ঠতার সাথে দেশের তরে নিজেকে উৎসর্গ করে দেওয়া৷

“আমাদের মূল ধর্ম কি?
” দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা।
“আমরা কার জন্য বাঁচবো?
” আমরা দেশের জন্য বাঁচবো।
“কার জন্য মরবো?
” দেশের জন্য মরবো।
“আমাদের মূলমন্ত্র কী?

” সমরে আমরা,
শান্তিতে আমরা,
সর্বত্র আমরা দেশের তরে। ”

প্রতিটা কথা, প্রতিটা শব্দ প্রতিধ্বনি হতে থাকে৷ তাদের প্রতিটা কথা হৃদয়ে এসে ধাক্কা লাগে৷ আর্মিতে যোগ দিতে পারা সেট অনেক সৌভাগ্য আর গৌরবের কথা। আর দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারাটা হচ্ছে সম্মানের৷

“উশান আর চন্দ্রা একে অপরকে আষ্টেপৃষ্ট করে জড়িয়ে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকে৷ হিমশীতল বাতাস গায়ে এসে লাগতে শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে৷ চন্দ্রা বাতাসের কাঁপনে গিরগির করে উশানের গায়ের সাথে ঘেঁষে বসে৷ চন্দ্রার ঠান্ডা লাগছে বুঝতে পেরে উশান বলে,
” ভিতরে চল।
উশানের কথায় চন্দ্রা নাক কুঁচকে বলে,
“কেন?
উশান কৈফিয়ত দিয়ে বলে,
“তোমার ঠান্ডা লাগছে তাই।
চন্দ্রা উশানকে ঝাড়ি মেরে বলে,
” কে বলছে আমার ঠান্ডা লাগছে৷

উশান চন্দ্রার কথার পিঠে আর কিছু না বলে চন্দ্রার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“এক মিনিট আমি আসছি।
কথাটা বলে উশান ভিতরে চলে যায়৷ উশান চলে যেতে চন্দ্রা তার দুহাত দিয়ে তার বাহু আকড়ে ধরে ঠান্ডায় অদ্ভুত শব্দ করে৷ চন্দ্রার আসলেই ঠান্ডা লাগছে। কিন্তু উশানের সঙ্গ ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা একটুর জন্যেও। উশান মিনিট দুইয়েকের মাথায় একটা চাদর আর সাথে দুইকাপ গরম ধোঁয়া উঠা চা।উশান চন্দ্রাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে নিঃশব্দে হাসলো৷ এরপর চা’য়ের কাপ টেবিলের উপর রেখে চাদরটা চন্দ্রার গায়ে ভালো করে মুড়িয়ে দিলো৷ তারপর চন্দ্রার দিকে চা’য়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে উশান চন্দ্রা’র পাশে গিয়ে বসে। উশানের কাজে চন্দ্রা বেশ উপভোগ করছে৷ উশান পাশে বসতে চাদরের একপাশ মেলে উশানের গায়ে এলিয়ে দেয়। উশান তাতে স্মিথ হেসে চাদর ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে চন্দ্রাকে বুকে আগলে নিয়ে চন্দ্রার মাথায় আলতো করে চুমু বসায়৷ চন্দ্রা উশানের বুকে হেলান দিয়ে বসে চা’য়ের কাপে মনোযোগ দেয়৷ উশান এক আঙুল দিয়ে চায়ের কাপের উপর ঘুরাতে থাকে৷ চিন্তিত হয়ে উল্লাস আর নিবেদিতার কথা ভাবছে৷ দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে চন্দ্রাকে কিছু বলবে কিনা সেটা! সাথে এটাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ওদের ব্যাপারে কি চন্দ্রা কিছু জানে? এদিকে একই চিন্তা চন্দ্রাও করছে? উশানের সাথে উল্লাস-নিবেদিতার ব্যাপারে ডিসকাসড করবে কি করবেনা।দু’জনেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন৷ একসময় আর থাকতে না পেরে চন্দ্রা খুব সাবধানে উশানকে ডাকে।
“উশান?
উশান অন্যমনস্ক হয়ে জবাব দেয়,
” হু! ”
“তোমার আর উল্লাস স্যারের ফ্রেন্ডশিপ কতদিনের?

উশান ভারি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
” হাইস্কুল থেকে৷
“তাহলে তো তোমাদের ফ্রেন্ডশিপ অনেকদিনের।

উশান ছোট করে বলে,
” হু।
তারপর দুজন চুপ হয়ে যায়। কিছুটা সময় নিয়ে চন্দ্রা আবার প্রশ্ন করে,
“তাহলে তো তোমাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর৷
উশান এবার নড়েচড়ে বসে সিরিয়াস হয়৷ চন্দ্রার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলে,
“হুম।
চন্দ্রা মাথা তুলে উশানের মুখের দিকে চেয়ে বলে,
“স্যার মানুষ হিসেবে কেমন?

উশান ভ্রুঁ কুঁচকিয়ে চন্দ্রার মুখের দিকে চেয়ে সন্দিহান গলায় বলে,
” তুমি উল্লাসের প্রতি এতো ইনট্রেস্ট দেখাচ্ছো কেন?

চন্দ্রা উঠে বসে স্মিথ হেসে বলে,
“এমনি?

উশান চন্দ্রার মুখোমুখি বসে চন্দ্রাকে সরাসরি বলে,
” তুমি কি জানতে চাও বল?

চন্দ্রা ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে,
“স্যার কি কোন মেয়েকে পছন্দ করে?
উশান কোন ভনিতা না করে বলে,
” হুম। আর সে তোমার অনেক ক্লোজ একজন।

চন্দ্রা কিউরিয়াস নিয়ে জানতে চায়,
“কে?
” নিবেদিতা।

নিবেদিতার নাম শুনে চন্দ্রা কিছুক্ষণের জন্য তব্দা খেয়ে যায়।হতবিহ্বল গলায় বলে উঠে,
“কী!
উশান চন্দ্রার হতবিহ্বল মুখ দেখে চন্দ্রার দিকে ঘুরে বসে শান্ত গম্ভীর গলায় বলে,
“হ্যাঁ এটাই সত্য। তোমার ধারণায় নেই উল্লাস নিবেদিতার জন্য কী কী করেছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে উল্লাসকে নিজের জন্য এপোয়েটমেন্ট করে কিন্তু উল্লাস সেটা প্রত্যাখ্যান করে সেনা ক্যাম্পে আসে। সে চাইলে পারতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে কাজ করতে। অনেক বড় একটা সুযোগ ছিল তার জন্য৷ কিন্তু সে সেটা করেনি কারণ নিবেদিতা। তুমি কি ভাবছো? উল্লাস আর নিবেদিতা আবার দেখা হওয়া কোন কাকতালীয়! একদম না। উল্লাস নিবেদিতাকে খুঁজে বের করে এখানে এসেছে৷ উল্লাস অনেক ডেঞ্জারাস,ডেঞ্জারাস মিশনে ছিলো। সব কিছুর মুখোমুখি সে হয়েছে৷ অনেকবার তো মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে। কিভাবে বেঁচে ফিরেছে জানো? একটাবার নিবেদিতাকে স-চোক্ষে দেখার আকাঙ্ক্ষা উল্লাসকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো৷ নিবেদিতার প্রতি উল্লাসের ভালোবাসা অনেক গভীর৷ নিঃশব্দে নিজের ভিতর ধারণ করে খুব যত্ন করে হৃদয়ের গহীনে সে নিবেদিতাকে লালন করে৷ ”

উশানের কথা শুনে চন্দ্রা জমে বরফ হয়ে গিয়েছে৷ চন্দ্রা হতবিহ্বল মুখ করে উশানের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। কথাগুলো হজম করতে অনেক বেগ পোহালো চন্দ্রার। চন্দ্রা নিজেকে সামলে নিয়ে উৎকন্ঠা কন্ঠে বলে,
” তাহলে সে তার মনের কথা নিবেদিতা কেন বলছেনা৷ এভাবে মনের ভিতর দমিয়ে রাখলে তার সামনে থাকা মানুষটা কিভাবে বুঝবে তাকে কেউ ভালোবাসে।”

চন্দ্রার কথায় উশান গভীর নিঃশ্বাস ফেলে হতাশ গলায় বলে,
“উশান ভাবছে নিবেদিতা হয়তো তাকে চায়না। এটায় ধরে নিয়েছে নিবেদিতা উল্লাসকে ভুলে গিয়েছে৷

উশানের কথায় চন্দ্রা অবিশ্বাস্য চাহনিতে উশানের মুখপানে চেয়ে উপহাসের হাসি দিয়ে বলে,
” দিস ইজ টু মাচ।
তারপর তেঁতিয়ে উঠে বলে,
“তার তো কোন ধারণায় নেই নিবেদিতার সম্পর্কে৷ ওর জন্য তো মেয়েটা পাগল হয়ে গিয়েছে৷ প্রতিটা ক্ষণ প্রতিটা মুহূর্ত সে তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনে গিয়েছে। দিনরাত এক করে মেহনত করে সেনাবাহিনীতে ঠিকিয়ে রেখেছে যাতে উল্লাসের খোঁজ সে করতে পারে৷ যে স্ট্যান্ড গুলো ছেলেরা করতে দশবার ভাবতো। সেটা নিবেদিতা কোন চিন্তা ভাবনা না করে স্ট্যান্ড গুলো করে গিয়েছিলো৷ যাতে সে সেনাবাহিনীতে ঠিকে থাকতে পারে। আর কোন একদিন উল্লাসের সাথে দেখা হয়ে যেতে পেরে কাকতালীয় ভাবে হলেও। তুমি কি জানো নিবেদিতার সম্পর্কে, সে কতবার পেনিক এ্যাটাকের স্বীকার হয়েছে জানো! সব তার জন্য৷ আসছে বলতে,নিবেদিতা তারে ভালোবাসেনা। আসলেই ভালোবাসা উচিত না তাকে৷ নিবেদিতা পাগল বলে তারে ভালোবাসছে। আমি হলে অনেক আগেই টাটা, বাই, বাই, করে দিতাম। শেষ বার যখন তার সাথে দেখা হয়েছিলো, বলেছিলো আমি যাতে নিবেদিতার খেয়াল রাখি। সে কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাবে। কিছুদিনের মধ্যে ফিরে আসবে। তার কিছুদিন মানে যে কয়েকটা বছর আমি তো কল্পনায় করতে পারিনি৷

চন্দ্রার রাগ দেখে উশানের বুকটায় কেঁপে উঠেছে৷ চন্দ্রার মুখের দিকে শ্বাস আটকে ভয়ার্ত চোখে উশান তাকিয়ে থাকে৷ চন্দ্রা এক নাগাড়ে কথা বলা শেষ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। উশান মিনমিন গলায় চন্দ্রাকে প্রশ্ন করে,

“আর ইউ ওকে?

চন্দ্রা বুক জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে উশানের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখে। কিছুটা সময় নেওয়ার পর চন্দ্রা শান্ত হয়ে উশানেত দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলে,
” স্যরি। উল্লাস স্যারের বোকামি মার্কা কথা শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। স্যরি। ”

উশান নিঃশব্দে চন্দ্রাকে নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে বাহুতে মাসাজ করতে থাকে৷ চন্দ্রা চুপ হয়ে উদাস মুখ করে বসে থাকে৷ যদি দেখা যায় তবে উল্লাস আর নিবেদিতার সম্পর্কটা অদ্ভুত৷ দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে ঠিকই। কিন্তু একজন আরেকজনের কাছে প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে৷ দুজনের মাঝে অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়ে গিয়েছে। উশান-চন্দ্রা দু’জন নিবেদিতা-উল্লাস নিয়ে বেশ চিন্তিত। দু’জন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছে। কি হবে পরবর্তীতে দুজনের তাদের কারোর জানা নেই।

(#চলবে……)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here