আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -৩৭

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(37)

“আপাতত বিয়ের প্ল্যান ক্যান্সেল করে বর্ষার সাথে প্রেমের কাহিনী আরোও গভীর করি। একটু একটু করে ওকে বোঝাতে থাকি ওকে পাগলের মত ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই মেয়েটা প্রেমে পাগল তার উপর আমার কথাগুলো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো। দেখা করার জন্য ছটফট করে শুরু করলো। বাহানা দিয়ে আমি না না করে কাটালাম আরোও কিছু দিন। অবশেষে আসলো সেই দিন, বর্ষা কান্না করতে করতে আমাকে কল দিলো। আমি কোনো কথা বলে চুপচাপ শুনছিলাম ওর কান্না আর পৈশাচিক হাসি হাসলাম”

“দেখো বর্ষা, আমি এসব তোমাকে এখন বলতে চাইছিলাম না। আমাকে খারাপ ভাববে অনেক তুমি। তাই দেখা করতে চাইছিলাম না। কিন্তু তুমি এভাবে কান্নাকাটি করলে আমি যে আরও কষ্ট পাচ্ছি। তোমার কান্না শুনলে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। প্রেমিক হিসেবে ব্যার্থ মনে হয়।”

“তুমি আমার কাছে যা চাইবে আমি দেবো। বাট প্লিজ দেখা করো একবার। কতোদিন তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখিনি। খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে যে আমার।”

“আমিও তো দেখতে চাই খুব কাছ থেকে সবকিছু।”

“মমমমানে?”

“আমি তোমাকে কাছে পেতে চাই বর্ষা। দেখো এমন ত নয় যে তুমি আমাকে চেনোনা? খুব ভালো করে চেনো আমাকে। তবে কিসের এত ভয়। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি সোনা। পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে তুমি আমাকে কাছে।”

“কিন্তু আদাভান…”

“আমি জানতাম তুমি ভুল বুঝবে। ধুর, কেনো যে বলতে গেলাম। আচ্ছা, আই অ্যাম সরি। আমাকে একা ছেড়ে দাও একটু। ভালো লাগছেনা কিছুই। ভালোবাসার মানুষ যখন অবিশ্বাস করে তার থেকে বেশি কষ্টের আর কিছুই হয়না। ভালো থেকো।”

“ব্যাস আরকি লাগে। কয়েকঘন্টা শুধু ফোনটা অফ রেখেছিলাম। মেয়ে একেবারে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলেছে। বর্ষা প্রথমে যদিও অনেক অবাক হয়েছিলো আমার প্রস্তাবে। ভাবতে পারেনি আদাভান এরকম প্রস্তাব রাখতে পারে। পরে যেহেতু অনেক দিনের ফ্রেন্ড, বেশ ভালো করেই চেনে তাই রাজি হয়ে যায়। আমার জয়ের শুরুটা এখানেই।”

অরুনিকার অবস্থা প্রায় কাহিল। কোনোরকম দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। একসাথে এত ধাক্কা কোনমতে নিতে পারছেনা। লোহা দিয়ে লোহাকে পেটানো হয় তাই লোহা বেশি আওয়াজ করে। কারণ আপন মানুষের দেওয়া যন্ত্রণা সহ্য করা বেশ কঠিন। সেই আঘাতের যন্ত্রণা যে কতটা ভয়ানক হয় সেটা যারা সহ্য করে তারাই জানে। ছোটো থেকে অগাধ আদরে বড়ো হওয়া অরুনিকা একের পর এক ধাক্কায় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ভেতরের ক্ষতগুলো দেখানোর জন্য এতদিন থাকলে সে গুরুত্ব দেয়নি। অথচ এখন খুব সুন্দরভাবে আদাভান উপেক্ষা করে চলে অরুনিকাকে।

“তারপর আর কি, ওয়েটারকে মোটা অঙ্কের টাকা খাইয়ে বর্ষার পানির গ্লাসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিলাম। টেবিলে রাখা পানির গ্লাস থেকে পানি খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ঢলে পড়লো টেবিলে। মাস্ক পরে বর্ষাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম সেখান থেকে। একটা হোটেলের রুমে ঢুকে আমাদের প্রাইভেট পিকচার তুললাম কিছু। এমনকি প্রাইভেট টাইমের পুরোটা ভিডিও বানালাম। হোটেল থেকে বেরিয়ে আসার আগে টেবিলের উপর একটা কাগজ রেখে বর্ষার ফোনে ভিডিও আর ফটোগুলো পাঠালাম। সাথে ছোট্ট একটা মেসেজ পাঠালাম। যাতে লেখা ছিল, যদি এই পেপারে সাইন না করে তাহলে এগুলো আমি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেবো। তারপর দেখবো কথায় মুখ লুকায়। হা হা হা।”

হাসতে হাসতে কথাগুলো বলে মুহুর্তেই অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন ঘটলো কাব্যের। রাগী কণ্ঠে গর্জে উঠলো,

“কিন্তু ওই মেয়ে আমার এতদিনের প্ল্যানে পানি ঢেলে প্রপার্টি পেপারে সাইন না করে সুইসাইড করলো। আমি জাস্ট কল্পনাও করিনি এই মেয়ে এমনভাবে হারিয়ে দেবে আমাকে। আর এরপরে কি হলো সবতো তুমি জানোই ড্যাড। মামনিকেও মেরে দিলে কেনো? ড্যাড ওইদিন মামনি আমার লকারে থাকা বর্ষার ডাইরি পড়ে নিয়েছিলো আর সবকিছু জেনে আমাকে যা নয় তাই বলেছিল। তাই তোমার কথায় মামনিকে মেমোরি লস ইনজেকশন দিলাম। অথচ আমি জানতামই না ওটা পয়েজন ছিলো। কেউ জানতেই পারলোনা মামনিকে আমি মেরেছি। কিন্তু ড্যাড আমাকে দিয়ে এই কাজটা কেনো করালে? উই নো ড্যাড হাও মাচ আই লাভ অরুনিকা। সেই ছোট্ট থেকে…..”

কাব্যের বলা ড্যাড শব্দটা শুনে চমকে ওঠে অরুনিকা। অনেক ছোট ছিল যখন কার অ্যাক্সিডেন্টে খাদে পড়ে যায় কাব্যের বাবার গাড়ি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও দেহের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি পুলিশ। তাহলে কি সেদিন তিনি মারা যাননি! পিছনে থেকে এসবের ঘুটি সাজাচ্ছেন কাব্যকে দিয়ে! নিজেকে সামনে নিয়ে কোনরকমে ছুটে পালাতে গিয়ে অরুনিকার হাত লেগে পড়ে যায় একটা গ্লাস। ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা নিয়ে পালাতে গেলেই ধরে ফেলে কাব্য।

“একদম ছোঁবেনা আমাকে। তোমার ঐ পাপী হাত আমার শরীরের যে অংশে লাগবে তা যেনো ভষ্ম হয়ে যাক।”

“অরু তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমার কথাটা….”

“কি শুনবো আমি? কিভাবে বর্ষা আপুকে মেরেছেন? নাকি কিভাবে খালামনিকে মেরেছেন? আর কিছু বলার বাকি থাকলে বলে দিন। একসাথে সব ধাক্কা খেয়ে মরে যাই আমি। আর সহ্য করতে পারছিনা আমি। আপন মানুষের মুখোশ পরে থাকা এই বহুরূপী মানুষটাকে কিভাবে আমি চিনতে পারলাম না বলুন তো? বলতেই হবে দারুন মানুষ আপনি। কি সুন্দর আমাদের মাঝে থেকে এক এক করে আমার সব আপন মানুষগুলোকে শেষ করে দিলেন। এর পরের টার্গেটটা নিশ্চই আমি ছিলাম? তো নিন আমি আপনার সামনে আছি। মেরে ফেলুন আমাকে। আপনার এই চেহারা দেখেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। কতো ভালো ভাবতাম আমি আপনাকে। নিজের ভাই ভাবতাম। বন্ধুদের যখন দেখলাম বড়ো ভাইয়ার সম্পর্কে কথা বলতে তাদের নিয়ে গর্ব করতে, আমিও বলতাম আমারও বড়ো ভাইয়া আছে। কাব্য ভাইয়া আমাদের ওনেক ভালোবাসেন। কোনোকিছু চাওয়ার আগেই এনে দেন। আমার সব আবদার ওনার কাছেই থাকে। তখন তো আর বুঝিনি ভালো মানুষের মুখোশ পরে এক নোংরা মানুষের এত প্রশংসা করে যাচ্ছি আমি। বিশ্বাস করুন আমার ইচ্ছে করছে আপনার ওই মুখে একদলা থুতু দিয়ে পুরো দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে কেউ যেনো কোনো আপনকে বিশ্বাস না করে। অতিরিক্ত বিশ্বাস করা কাছের মানুষগুলোই পিছন থেকে ছুরি মারে। এতো জঘন্য কাজ আপনি কিভাবে করতে পারলেন? একটুও বুক কাঁপলো না? শেষ পর্যন্ত নিজের মা কেও মেরে ফেললেন? ছিঃ ছেলে নামের কলঙ্ক আপনি।”

“আমি আমার মাকে মারিনি। ওনাকে মারার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলোনা। আমি তো শুধু গত কিছু বছরের স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভুলবশত মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। অরু তুইও দেখেছিলিস আম্মুর মৃত্যুতে আমি কতোটা ভেঙে পড়েছিলাম।”

“আপনার করা দোষে আমি আদাভানকে দোষী ভেবে এসেছি বারবার। আমার মন বলেছে আদাভান এমন কিছু করতে পারেনা কিন্তু আমি শুনিনি। আপনার পাতা জালে আমিও পা দিয়ে গিয়েছি দিনের পর দিন। অথচ প্রতিটা মুহূর্তে ছায়ার মতো পাশে থেকেছে আদাভান। কখনও কোনো আঁচ লাগতে দেয়নি আমার। আমি অনেক বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি আদাভানের কাছে আমাকে মাফ চাইতে হবে। আমাকে এখুনি যেতে হবে।”

“হা হা হা! ভাবলি কিভাবে এতকিছুর পর আমি তোকে এখান থেকে যেতে দেবো? আমাকে কি পাগল কুত্তায় কামড়েছে নাকি?”

“দেখো অলরেডি অনেক খারাপ কাজ করে ফেলেছ তুমি। আর অন্তত এমন কিছু করোনা যাতে নিজেকে নিজে আর ক্ষমা করতে না পারো। আয়নায় দাড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবির সাথেই নজর মেলাতে না পারো। যেতে দাও বলছি আমাকে।”

আজ দুইদিন অরুনিকার কোনো খোঁজ নেই। আদাভান এদিক সেদিক সব সম্ভাব্য জায়গায় পাগলের মতো খুঁজছে অরুনিকাকে। পাগলের মত অবস্থা হয়েছে।

চেয়ারে বাধা অবস্থায় পড়ে আছে অরুনিকা। ঠোঁটের কোণে কেটে গিয়ে রক্ত শুকিয়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে মারের চিহ্ন স্পষ্ট। মুখের উপর ঠান্ডা পানি পড়ায় হকচকিয়ে যায় অরুনিকা। সামনে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখে তাচ্ছিল্য হাসি হাসলো।

“কিরে আমাকে দেখে ভয় করছেনা?”

“এই কয়েকদিনে তোমার করা অত্যাচারে ভয়টা ভেঙ্গে গেছে। তোমাকে খালু বলে ডাকতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। তোমার মতো নিচ চরিত্রের লোক এসব ছাড়া আর কি বা করতে পারে। বিয়ের পর খালামনিকে পেটাতে, দিনের পর দিন সব অত্যাচার সহ্য করেছে খালামনি কাব্য ভাইয়ার জন্য। অথচ সে তো জানতোই না যে ছেলের জন্য সারাজীবনে এই অমানুষটার মার সহ্য করেছে সে নিজেই এত অমানুষ হবে। জানলে হয়তো জন্মের পরেই গলা টিপে শেষ করে দিত এমন সন্তানকে।”

সামনের লোকটা রেগে অরুনিকার ঝুটি ধরে চেয়ারের হাতলে ঠুকে দেয়। কপাল কেটে গলগল করে পড়া রক্তে মুখের একপাশ ভিজে যায় অরুনিকার।

“ড্যাড প্লিজ অরুকে ছেড়ে দাও। ওকে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাব। তোমাকে প্রোপার্টি দিয়ে আমি ওকে নিয়ে চলে যাবো প্লিজ ওকে মেরোনা। অরুর কান্না আমি ছোটো থেকে কখনও সহ্য করতে পারতাম না সেখানে ওর এতো রক্ত দেখে আমি মরে যাচ্ছি ভেতরে ভেতরে। অরু যেনো কোনো কষ্ট না পায় তাইতো আদাভানকে ভালোবাসে জেনে নিজেই সরে গেছিলাম।”

“কাব্য তুমি এই মেয়ের জন্য আমার কাছে এসে হাত জোড় করছো ভাবতেই রাগ লাগছে আমার। তুমি আমার ছেলে হয়ে এসব মানায় না। এসব মেয়েকে ইউজ করতে হয়, লাইফে রাখতে হয়না।”

“আপনি ভাবলেন কিভাবে মিষ্টার কাব্য। আপনার মত জঘন্য লোকের সাথে আমি সংসার করবো। আপনাকে দেখলেই আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আর আমি কিনা আপনার সাথে দূরে কোথাও চলে যাবো? হা হাসালেন। আই হেট ইউ। শুনেছেন আপনি? ঘৃণা করি আমি আমার বর্ষা আপুর খুনিকে। আপনার লজ্জা করা উচিত এসব বলার আগে।”

কাব্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনের আওয়াজে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে পকেটে থাকা ফোনটা বের করতেই রহস্যময়ী হাঁসে। অরুনিকার মুখের কাছে ফোনটা নিয়ে দেখাতেই স্ক্রিনে লেখা নামটা দেখে করুন চাহনিতে তাকায় অরুনিকা।

চলবে?
#Fiza Siddique

গল্পের রহস্য কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু। আজকে আমার সাইলেন্ট রিডারদের কমেন্টও চাই আমার। নাহলে কিন্তু অনেক রাগ করবো হু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here