আমার আকাশে তারা নেই ২ পর্ব -০৬

#আমার_আকাশে_তারা_নেই ২
#লাবিবা_আল_তাসফি

৭.
প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলো প্রগাঢ় হয়। আর সেটা যদি বৈধ হয় তবে পাগলামির মাত্রা কয়েকশো গুণ বেড়ে যায়। আজকাল ইহান ইচ্ছের সম্পর্ক অনেক গভীর হয়েছে। সদ্য প্রেমে পড়া কিশোরীর মতো ইচ্ছের পাগলামি ইহানের প্রেমিক হৃদয়কে আরো গভীর ভাবে আঁকড়ে ধরছে যেন। এত কাছাকাছি থাকার পরও ইহানের অফিস আওয়ারে প্রতি ঘন্টায় কল করে টুকটাক মিষ্টি আলাপ না করলেই নয় যেন। ইহানকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকাও যেন ইচ্ছের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সদ্য প্রস্ফুটিত হৃদয় কেবল ইহানেই বদ্ধ যেন।

প্রসন্ন বিকেল। থেকে থেকে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। বাতাসে শীতলতার ছোঁয়া। থেকে থেকে কম্পিত হচ্ছে ইচ্ছের শরীর। শরীরে বেশ তাপ অনুভব করছে। কিন্তু এই সামান্য অসুস্থতা এমন প্রেমময় প্রহরে তাকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারলো না। ব্যস্ত শহরের ফুটপাথ ধরে হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হেঁটে চলছে ইচ্ছে-ইহান। ইচ্ছের গায়ে পাতলা চাদর। চুলগুলো হাতখোপা করা। সামনে থেকে কয়েকটা অবাধ্য চুল মুখের উপর ছড়িয়ে পড়েছে। দেখতে বেশ লাগছে। ইহান ইচ্ছের গায়ে জড়ানো চাদর তুলে ইচ্ছের মাথা সহ জড়িয়ে দিল। কোমল কন্ঠে বলল,
“এভাবে থাকুক। ঠান্ডা লেগে যাবে।”

প্রতিউত্তরে ইচ্ছে মিষ্টি করে হাসলো। এই ছোট্ট ছোট্ট কেয়ার গুলো বড্ড আদুরে। একরাশ ভালোলাগা ছুঁয়ে যায় হৃদয়। প্রেমময় তুফান সৃষ্টি হয় বুকে। উফফফফ্ এত মুগ্ধতা কেন তার মাঝে?
এরপর বেশ কিছু সময় নিরবতায় কেটে গেল। কথা না হলেও তাদের ভালোবাসার আদান প্রদান হলো দৃষ্টির মাধ্যমে। চোখে চোখে বলা হলো কতশত না বলা কথা। নিরবতা ভাঙলো ইচ্ছের কথার মাধ্যমে।

“শুনুন না? আইসক্রিম খেলে কেমন হয়? আমার খুব ইচ্ছা আপনার সাথে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খাওয়ার। খাবেন?”

খুব উৎসাহ নিয়ে অফার করলো ইচ্ছে। চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে যেন। মেয়েটাকি জানে না এই সামান্য ইচ্ছা পূরণ তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে? একটু খুশির জন্য কয়েকটা দিন নষ্ট হবে। তবে ইহান মুখে কিছুই বলল না এসবের। নিঃশব্দে হেসে দুষ্টুমির ছলে বলল,

“আমার তথাকথিত বৈধ প্রেমিকা কি তার প্রেমিকের সেবা যত্ন পাওয়ার প্লান করেছে? যদি তাই হয় তবে আগেই বলে রাখি সেবা যত্নের জন্য অফিস ছেড়ে সারাদিন বাড়িতে বসে থাকলে প্রেমিক মনোভাব থেকে আমার অতীব রোমান্টিক হাসবেন্ডে কনভার্ট হতে সময় লাগবে না। সে ব্যাপারে আমার প্রেমিকা রেডি তো?”

ইহান এভাবে তাকে লজ্জায় ফেলবে সেটা ভাবতে পারেনি ইচ্ছে। লজ্জায় ফর্সা মুখে লাল লাল আভা ছড়িয়েছে। ইহান তা দেখে তৃপ্তির হাসি হাসলো। এই ঠান্ডায় আইসক্রিম খেলে নির্ঘাত মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়তো। সরাসরি না করলে মোন খারাপ করতো। হয়তো মুখে লেগে থাকা হাসিটাও মিইয়ে যেত। তাইতো লজ্জা নামক হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। যাকে বলে সাপ ও মরলো লাঠিও ভাঙলো না।

“প্রেমিকা চাইলে কিন্তু আমি তাকে ফুচকা, চটপটি খাওয়াতে পারি। সে কি খাবে?”

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছে রাজি হলো না। লোকটার উপর বিশ্বাস নেই। যদি আবার লজ্জা দেয়? এমন লজ্জির সম্মুখীন সে আর হতে চায় না। অগ্যতা এমন লোভনীয় অফার অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যেতে হলো।
ফুটপাথের এক ছোট্ট অংশ নিয়ে বসেছে বাহাড়ি চুড়ির দোকান। ইচ্ছেকে সামনে আগাতে বলে ইহান চুড়ির সে দোকানটিতে গেলো। অনেক পছন্দ করে লাল সাদা দু মুঠো চুড়ি নিল। সে দেখেছে ইচ্ছেকে এধরনের চুড়ি পড়তে। কলেজের সেই ফাংশনেও ইচ্ছে দু হাত ভরে চুড়ি পড়েছিল। হাত থেকে টুংটাং শব্দ হচ্ছিল। ইহান মুগ্ধ হয়ে দেখেছিল সে দৃশ্য।
বছর সাতেকের একটা বাচ্চা এসে ইচ্ছের সামনে দাঁড়িয়েছে। হাতে ছোট বালতি ভারা গোলাপ ফুল। উষ্কখুষ্ক চুল, ময়রা জামা পরিহিত বাচ্চা মেয়েটা খুব অনুনয়ের সুরে বলল,

“একটা ফুল নেবেন? দশ ট্যাকা। দেই?”

ইচ্ছের মায়া হলো বাচ্চাটার জন্য। সে ভেবেছিল তাদের গ্রামেই কেবল হতদরিদ্র মানুষের চলাচল। শহরের জীবন বিলাসিতায় ভরপুর। কিন্তু না এখানের পথ ঘাট তাকে অন্যকিছু দেখালো। ইচ্ছে বাচ্চা মেয়েটাকে বলল,

“ফুল তো আমার লাগবে না। তবে এটা নাও তুমি কিছু খেও এটা দিয়ে।”

পাঁচশত টাকার একটা নোট এগিয়ে দিল। কিন্তু বাচ্চাটা নিল না। বলল,

“অতবড় ট্যাকাতো ফুলের দাম না। ” ওর কাছে থাকা দশ টাকার নোটটা তুলে ইচ্ছেকে দেখিয়ে বলল, ” ফুলের দাম এই দশ ট্যাকা।”

ইচ্ছে বাচ্চটার সরলতায় মুগ্ধ হলো। তখনি পাশ থেকে শব্দ এলো।

“তুমি চাইলে তোমার প্রেমিকের জন্য ফুল নিতেই পারো। সে কিছু মনে করবে না।”

দারুণ শোনালো ইহানের কন্ঠ। ইচ্ছে পাশ ফিরতেই দেখলো হাসিহাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ইহান। কালো রঙেরস লেদারের জ্যাকেট পরিহিত ইহানের নজর কাড়া সৌন্দর্য এসে ধরা দিল ইচ্ছের চোখে। ইহান এগিয়ে এলো। বাচ্চাটার থেকে সবকটি ফুল নিয়ে খুব সুন্দর করে হিসেব বুঝিয়ে দিল তাকে। সব ফুল বিক্রি করতে পারার খুশিতে লাফাতে লাফাতে সে স্থান ছেড়ে প্রস্থান করলো মেয়েটা।

“রুমে বসে একান্তে আমাকে দেখো। এখন পা বাড়াও। বাড়িতে যেতে হবেতো নাকি?”

চকিত তাকালো ইচ্ছে। সে যে রাস্তায় আছে বেমালুম ভুলে বসেছিল। অবশ্য তার পাশের মানুষটা সাথে থাকতে সে নিজেকে ভুলতেও রাজি।
ফেরার পথে তারা রিকশা নিল। একে অপরের গা ঘেঁষে বসে পড়লো। শীতবিলাস করতে করতে তারা গন্তব্যের দিকে ছুটলো। অল্প পরিসরে গল্পও হলো। চলতি পথে ইহান ইচ্ছের হাত টেনে নিজের কাছে নিল। এক এক করে নিজ হাতে চুড়ি পরিয়ে দিল প্রেয়সির হাতে। কয়েকটা ভেঙেও গেলো। ব্যাথিত হলো প্রেমিক হৃদয়। সামান্য চুড়িও সে পড়াতে পাড়লো না ঠিক করে! কিন্তু পরক্ষণে প্রিয়সির হাস্যজ্জল মুখ দেখে মন খারাপ নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে আওড়ালো,
“এগুলো আমার?!”

ইহান নিঃশব্দে হাসলো। একটুতেই মেয়েটা অনেক খুশি হয়। এই ছোট্ট জিনিসে যদি এত ভালোলাগা থাকে তবে সে রোজ তাকে এক মুঠো চুড়ি দেবে। বিনিময় এই ভুবন ভোলানো হাসির অধিকারিণী কে চাইবে। আরো গভীর ভাবে।

“তোমার কেন হবে? ওটাতো আমার বউ এর। তুমিতো বউ না। সিল করা প্রেমিকা তুমি আমার।”

________________

সময়টা পৌষের মাঝ বরাবর। প্রকৃতিতে তখন শীতল ছোঁয়া বিরাজমান। বাতাসের সাথে মিশে আছে হিমধারা। কুয়াশার আস্তারনে ঢাকা পড়েছে মাঠ ঘাট রাস্তাপাট। সূর্যের দেখা পাওয়া যেন অষ্টম আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের শুরুটা হয় কুয়াশা মোড়ানো চাদর দিয়ে আবার শেষটাও কুয়াশাকে মুঠো করেই হয়।
বেলা তখন নয়টা কি দশটা। আকাশ তখনো মেঘলা। মেঘের আস্তারণ চিরে সূর্যের স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়েছে মাত্র। শীতল পরিবেশে ঘুমটা বড্ড জ্বালাতন করে। শীতের সকালে একটু বেলা না গড়ালেই নয়। ইহান বেরিয়ে পড়েছে আরো আগে। তাকে ঠিক নয়টায় অফিসে পৌঁছাতে হয়। বাড়ি থেকেই অফিস বেশ দূরে হওয়ায় সময়ের আগেই তাকে বেরিয়ে পড়তে হয়।
ইচ্ছে তখনো গভীর ঘুমে বিভোর। তখনই বালিশের পাশে রাখা ফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠলো। তন্দ্রা কেটে গেল খানিকটা। অর্ধ নিবন্ত নয়নে বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতরে তুলে নিল। ফোন স্কিনে “বর মহাশয়” নামটা জ্বলজ্বল করছে। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সুমিষ্ট সুরের আওয়াজ ভেসে এলো।

“শুভ সকাল মিসেস।”

হৃদয় ছুঁয়ে গেল যেন। ইচ্ছে শব্দহীন ভাবে হাসলো। মিষ্টি করে উত্তর দিল,

“শুভ সকাল প্রিয়।”

ওপাশে থূকে ইহান ও হাসলো বোধহয়। কিন্তু কোন শব্দ হলো না। অলস ভঙ্গিতে সময়ের ঘরের চোখ বোলাতেই চক্ষু চড়কগাছ। ঘড়িতে তখন নয়টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট! এত বেলা হয়ে গেছে? সেদিক থেকে নজর সরিয়ে ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আপনি ভিষণ আনপাংচুয়াল।”

“কিভাবে?”

“এইযে আমি এত বেলা করে ঘুমালাম একবার ডেকে দেয়ার প্রোয়োজন মনে করলেন না। আমাকে ডেকে তোলা আপনার দায়িত্ব নয় কি?”

চলবে…………

(গল্পটার প্লট আমি চাইলেও বদলাতে পারছিনা। এভাবেই সাজানো আমার প্লটটা। ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here