আমার আকাশ জুড়ে তুমি পর্ব ৭+৮

#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(৭)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

দারোয়ান আতিয়াকে বিরবির করতে দেখে বলল,
“-ম্যাডামের সাথে আপনার কোনো দরকার ছিল?’
“-হুম। আমি তো অনি আন্টির কাছেই এসেছিলাম। অনি আন্টি আমার আম্মুর ফ্রেন্ড হয়।’
কপালে ভাঁজ ফেলে দারোয়ান বলল,
“-কোন আন্টি? ‘
লোকটার কথা শুনে রাগ হচ্ছে আতিয়ার। নিজের বাড়ির মালিকের বউয়ের নাম জানে না। ব্যাটা আহাম্মক কোথাকার।
“-অনি আন্টি। আপনার ম্যাডাম। উনার পুরো নাম অনিতা ইসলাম।’
দারোয়ান মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“-আমার ম্যাডামের নাম অনিতা না।’
“-অনিতা না! তাহলে কি? জরিনা! রহিমা! কুলসুম! বিলকিস! কোনটা হ্যাঁ? অদ্ভুত লোক মশাই আপনি।’ এবার আতিয়া অনেকটাই চটে গেল। অনি আন্টিকে পাওয়া না গেলে তাকে রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হবে।
“-দেহেন ম্যাডাম! আপনি উল্টাপাল্টা কী কইতাছেন, আমি কিচ্ছু বুঝতাছি না।’
আতিয়া এবার নিজেকে শান্ত করলো। বড় করে দু’বার দম নিয়ে বলল,
“-রাশেদ ইসলাম। উনার ওয়াইফ অনিতা ইসলাম। এখানেই তো থাকেন। ‘ ঠিকানা লেখা কাগজটা বের করে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে ধরে বলল,
“-এই দেখুন। এই ঠিকানাই লিখা আছে। এই ঠিকানা নিয়ে আমি ঢাকা থেকে চলে এসেছি। এখন আপনি বলছেন আন্টি নাকি এখানে থাকে না। আমার প্রবলেমটা বোঝার চেষ্টা করুন চাচা। ‘
দারোয়ান লোকটা এবার হেসে বলল,
“-এই কথা আগে বলবেন না আপনি! রাশেদ স্যারের বউয়ের কাছে আসছেন আপনি। আমি ভাবছি আমার স্যারের বৌয়ের কাছে আসছেন। রাশেদ স্যাররা তো এই বাড়িতেই থাকত। এটা উনাদের নিজেরই বাড়ি। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে রাশেদ স্যার, আমার স্যারে কাছে এই বাড়ি বিক্রি করে নতুন বাড়ি কিনছেন। ‘
যাক তবুও অনি আন্টির খোঁজ পাওয়া গেছে। আতিয়ার কলিজা ঠান্ডা হলো। লোকটা তো অনি আন্টিকে চিনেই না বলছিল। এখন জানা গেল চিনে অন্তত।
“-উনাদের নতুন বাসার ঠিকানা আপনি জানেন? ‘
“-হ, জানি তো।’
“-আমাকে ওই ঠিকানাটা একটু দিন না প্লিজ।’
দারোয়ান আতিয়াকে দাঁড় করিয়ে একটা কাগজে ঠিকানা লিখে এনে দিল। আতিয়া উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে এলো। সিএনজি ওয়ালা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। আতিয়াকে ফিরে আসতে দেখে বলল,
“-আপা, আপনার আন্টিরে পাইছেন?’
আতিয়া ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিএনজিতে উঠে বসে বলল,
“-না ভাই। উনারা বাড়ি চেঞ্জ করেছে।’
“-ও, তাইলে তো সমস্যা হইয়া গেল।’
“-কোনো সমস্যা না। নতুন ঠিকানা আমি নিয়ে এসেছি। ‘
আতিয়া উনাকে কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“-দেখুন তো, এই ঠিকানা চেনেন কি-না?’
লোকটা কাগজ হাতে নিয়ে দেখে বলল,
“-চিনমু না মানে! আপনি কী যে কন আপা! আমার বাপ, দাদা চৌদ্দ গুষ্ঠীর জন্ম এই সিলেট শহরে। আমি এখানকার কোণা, কোণা আর চিপা চাপা সব চিনি।’
“-তাহলে ভাই যত দ্রুত সম্ভব আমাকে এই ঠিকানায় নামিয়ে দিয়ে আসুন।’
আতিয়া হাত দিয়ে কপাল আর গলার ঘাম মুছলো।
“-উফফ্! কী গরম। বাপের এসি ওয়ালা বাড়িতে বসে বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে কোনো খোঁজই তো রাখিনি এতদিন। মানুষ এই রোদে কত কষ্ট করে কাজ করে। তিনবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত কত যুদ্ধই না করে যাচ্ছে। আর আমি? সামান্য একটা লিপস্টিকের পেছনে হাজার, দু’হাজার চোখ বন্ধ করে খরচা করি। ছি আতিয়া। শেম অন ইউ! পঁচা পানিতে ডুবে মর তুই।’

যত কাজই থাকুক না কেন, সালাম চৌধুরী দুপুরে প্রতিদিন নিজের দুই নাতির সাথে লাঞ্চ করেন। শুধু লাঞ্চ না, ব্রেকফাস্ট ডিনার তিন বেলাতেই দুই নাতিকে চান তিনি। নাহিল মনের সুখে নিজের মত খাচ্ছে। সা’দ দাদাজানকে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। সালাম চৌধুরী দু’জনকেই জিজ্ঞেস করলেন,
“-তোমাদের অফিস কেমন যাচ্ছে।’
সা’দ চিকেন মুখে ফেলে চিবিয়ে চিবিয়ে জবাব দিল,
“-গুড।’
“-আর আপনার? ‘
নাহিল সোজা হয়ে দাদাজানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“-আমি তো অল টাইম গুড। যেকোনো টাইমে,যেকোনো সিচুয়েশানে,যেকোনো প্লেসে। আমার জন্য গুডও গুড। আর ব্যাডও গুড। আসলে আমি মানুষটাই গুড। তাই আমার আশেপাশে সব গুড গুড।’
সা’দ টিটকারি মেরে বলল,
“-দাদাজান, আপনি কিন্তু কাজটা ঠিক করলেন না। ‘
“-আরে কোন কাজ ভাই? ‘
“-এইযে এই অপদার্থকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলেন। অপদার্থ ছেলেটা রোজ রোজ অফিসে কেন যায় বলুন তো? আমার কাজে ডিস্টার্ব করতে যায়। নিজে তো কোন কাজই করে না। উল্টো আমার ক্যাবিনে এসে, কথা বলে বলে আমার মাথা ধরিয়ে দেয়।’
সা’দের কথা শুনে নাহিল এমনভাবে হাসলো যেন সা’দ দাদাজানের কাছে তার প্রশংসা করছে। সালাম চৌধুরীও না হেসে পারলেন না।
“-তোমার ছোট ভাই। তুমি ওকে পথে আনবে। আমি তো এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না ভাই।’
নাহিলও ভাইকে খোঁচা দিয়ে বলে উঠল,
“-দাদাজান, আপনার বড় নাতি যে আমাকে অপদার্থ বলছে। আপনি একবার জিজ্ঞেস করেন তো উনি নিজে কী? আমি তো অন্তত মেয়েদের সাথে ভালো করে কথা বলতে পারি। আর কিছু পারি বা না পারি। এই একটা গুণ আমার মধ্যে ভালো করেই আছে। কিন্তু ভাইজান নিজে তো সামান্য একটা মেয়ের নাম জানতে পারলেন না। তখন আবার বড় মুখ করে আমাকে অপদার্থ বলছে।’
সা’দ চোখ পাকিয়ে নাহিলকে থামার জন্য কয়েকবার ইশারা করলেও, নাহিল সেদিকে পাত্তা দিল না। সালাম চৌধুরী নড়েচড়ে বসে বললেন,
“-কোন মেয়ে ভাই? আমাকেও একটু বলো। আমি তো কিছুই জানি না।’
সা’দ নাহিলের দিকে আগুন চোখে চেয়ে বলল,
“-কোনো মেয়ে না দাদাজান। আপনি তো জানেনই আপনার এই নাতি কত বাজে বকে। এখনও দেখছেন না উল্টাপাল্টা কী সব বকে যাচ্ছে। আপনি ওর কথায় কান দিবেন না।’
নাহিল ভাইয়ের করুণ অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে। দাদা যদি জানতে পারে ভাই কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে তাহলে এক্ষুনি ধরেবেঁধে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিবে।
“-আচ্ছা। ওর কথা শুনলাম না। কিন্তু আমি তোমার উপর এখনও রেগে আছি।’
“-কেন দাদাজান? আমি আবার কী করলাম? ‘
“-কী করলাম মনে নাই তোমার? কাল রাতে তুমি কোথায় ছিলে? কত কল করেছি তোমাকে। আমি নিজে কল করেছি,নাহিলকে দিয়ে কল করিয়েছি। তুমি আমাদের কারো কলই তুলোনি।’
সা’দ আমতা আমতা করে বলল,
“-দাদাজান আসলে নেটওয়ার্ক…
“-হয়েছে, হয়েছে। আর মিথ্যে বলতে হবে না। আমি জানি তুমি কেন এমন করেছ। সিকদার সাহেব উনার মেয়েকে নিয়ে ডিনারে আসবে কথা ছিল। তাই তুমি এমন করেছ তো? আমি সব জানি। আমাকে নতুন করে কিছু বুঝাতে হবে না। আমি অবুঝ নই।’
সা’দ অপরাধী মুখ করে বলল,
“-দাদাজান আপনি জানেন তো এখন আমি…
“-তোমাকে কেউ কিছু করতে বলেনি ভাই। ওরা ডিনারে আসত। দেখতে, কথা বলতে। পছন্দ হলে আস্তে আস্তে সামনে আগাতাম। কিন্তু না। তুমি কী করলে কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গেলে। তুমি জানো, তোমার জন্য আমাকে কতটা লজ্জা পেতে হয়েছে। শেষে বুকে ব্যথার বাহানা দিয়ে উনাদের আসতে বারণ করেছি।’
“-আ’ম সরি দাদাজান। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও আমি এমন করব না। এই আপনার হাত ধরে কথা দিচ্ছি। আমার জন্য আপনাকে আর কখনও লজ্জা পেতে হবে না।’
“-আচ্ছা, আচ্ছা। ঠিক আছে। যখন বোঝার দরকার ছিল তখন বুঝনি। এখন সরি বলে কাজ নেই। তবুও কথা যেহেতু দিয়েছ,তাই শেষ বারের মত মাফ করে দিলাম।’
নাহিল এতক্ষণ নীরব দর্শকের মত দাদা নাতির ভালোবাসা মাখানো ইমোশানাল সিন দেখছিল।
“-হায়! আপনাদের ভালোবাসা, ইমোশন, ড্রামা দেখে চোখে জল এসে গেল।’
দু’বার নাক টেনে হাত দিয়ে চোখ মুছার ভঙ্গি করল নাহিল। দাদাজান, নাহিল হেসে দিলেও সা’দ হাসতে পারল না। এই বৃদ্ধ লোকটাকে সে কষ্ট দিতে চায় না। না চাইতেও দাদাজানকে কাল সে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।

আতিয়ার কাছে সবকিছু অসহ্য লাগছে। ইচ্ছে করছে বাসায় গিয়ে কালনাগিনীর ওই ঢেঁড়সটাকে বিয়ে করে নিতে। তবুও তো রোদে রোদে ঘুরে গায়ের চামড়া কালো করতে হবে না। মাথা ঝাঁকিয়ে উদ্ভব চিন্তাগুলো দূর করে দিল আতিয়া। “- না,না। আমি মরতে রাজি তবুও ওই ঢেঁড়সকে বিয়ে করতে রাজি না। দেশে কত হ্যান্ডসাম ছেলে আছে।’
দুপুরেও ঠিকভাবে খাওয়া হয়নি। এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ওই সিএনজি ছেড়ে দিয়েছে সে। লোকটার মেয়ে নাকি অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে গেছে। স্ত্রী কল করে বলেছে। তখন আতিয়াই ইচ্ছে করে উনাকে ছেড়ে দিয়েছে।
“-ভাই আপনার মেয়ে অসুস্থ, আপনি চলে যান। আমি অন্য কোন সিএনজি নিয়ে চলে যেতে পারব।’
না চাইতেও লোকটার যেতে হলো। যাবার আগে অনেক করে বলে গেল,
“-আপা আপনি যাইতে পারবেন না?’
“-হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঠিক পারব। আপনি আমার জন্য চিন্তা করবেন না।’
আতিয়া লোকটার হাতে দু’হাজার টাকা দিলে উনি নিতে নারাজ হলো।
“-না আপা। আপনার কাছ থেকে এত টাকা কেমনে নিমু?’
“-এটা তো আপনার ভাড়া না। আপনি আমাকে আপা বললেন না। এটা আমার ভাইয়ের মেয়ের জন্য। ও সুস্থ হলে, ওকে খেলনা কিনে দিবেন। বলবেন ওর এক আন্টি দিয়েছে।’
আবেগে লোকটা কেঁদে ফেলছিল প্রায়। আতিয়া অবাক হয়ে ভাবল, ভালোবাসা জিনিসটার কত জোর! অচেনা অজানা দু’টা মানুষকে স্নেহের একটা সম্পর্কে বেঁধে ফেলল। মানুষ সত্যিই ভালোবাসার কাঙ্গাল। এই লোকটাকে সে কখনও দেখেনি। চেনে না। আর কখনও দেখা হবে নাকি তাও জানে না। তবুও কেমন একটা টান অনুভব করছে। পাপার জন্য এবার অনেককিছু শিখতে পেরেছে সে। বাস্তবতা সম্পর্কে জেনেছে।
নতুন একটা সিএনজি নিল আতিয়া। কে জানে এই লোকটা কেমন হবে।

নাহিল ভাইয়ের রুমে এসে দেখে সা’দ কপাল ডান হাত রেখে শুয়ে আছে। নাহিল পাশে শুয়ে পড়ে বলল,
“-ভাবীর কথা ভাবছো?’
“-কে ভাবী?’
“-আরে, নাম না জানা ওই মেয়েটা।’
“-ওটা তোমার ভাবী হলো কখন? আমি কি ওকে বিয়ে করেছি?’
“-করোনি। তবে করলে সমস্যা কি? তুমি কি সারাজীবন চিরকুমার থাকবে? ‘
সা’দ কপালের উপর থেকে হাত সরিয়ে নাহিলের দিকে তাকাল।
“-নাহিল, মেয়েটা সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না। দেখোনি ওকে। তবুও কেন বাজে বকছো?’
“-বাজে বকছি না। আমার মন যা ভাবছে তাই বলছি।’
সা’দ আর তর্ক করলো না। তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। নাহিল উঠে বসে ঝুঁকে পড়ে ভাইয়ের দিকে দেখল।
“-ভাই! ‘
“-হুম।’
“-দাদাজানের কথা ভেবে মন খারাপ করছ তুমি? আরে বুড়ো এমনি ড্রামা করছিল। তুমি তো কাল ছিলে না। আমি ছিলাম। বুড়োর প্ল্যান ছিল কালই তোমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে। এখন তোমার সামনে সেন্টি খাচ্ছে।’
সা’দ উঠে বসল,
“-দাদাজানকে আমি কষ্ট দিতে চাই না। তুমি তো জানো, দাদাজান ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। উনাকে আমি চাইলেও কিছু বলতে পারি না। কিন্তু এখন আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।’
“-আরে ছাড় তো। অনেক ইমোশন ঢেলেছ। এবার চলো। আমার ফ্রেন্ডসরা পার্টি রেখেছে। আজকে তুমি আমার স্পেশাল গেস্ট।’
“-নো ওয়ে! আমি তোমার গেস্ট হয়ে বাদরের বাঁদরামি দেখতে পারব না। আমার অন্য কাজ আছে।’
“-এই সন্ধ্যাবেলায় কী কাজ তোমার? ‘
“-আছে অনেক কাজ।’
“-ভাই প্লিজ। অন্তত আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখো। তোমার আজকের সন্ধ্যাটা আমাকে দাও।’
“-নো। অন্য কোথাও হলে চলো। কিন্তু তোমার ফ্রেন্ডসদের পার্টিতে! কোনোভাবেই পসিবল না।’
নাহিল নাঁকি স্বরে বলল,
“-ভাই তুমি সব সময় এমন করো। ভাল্লাগে না!’

নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে আতিয়ার। লোকটা তিন ঘন্টা ধরে ওকে ঘুরাচ্ছে। কিন্তু অনি আন্টির বাসা আর খুঁজে পাচ্ছে না। ব্যাটা কি ঠিকানা চিনে না? নাকি ইচ্ছে করে দেরি করছে। মতলব কী ব্যাটার? সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। আর কতক্ষণ এভাবে সিএনজি করে ঘুরে বেড়াবে? অনি আন্টিকে না পেলে হোটেলে ফিরে যাবে।
“-ভাই, আপনি আসলে কি চাইছেন বলুন তো?’
লোকটা আতিয়ার কথায় হকচকিয়ে গেল।
“-কী আফা?’
“-রাখেন আপনার আফা! আপনি এই ঠিকানা চিনেন? চিনলে ওখানে নিয়ে যান। নয়তো আমাকে নামিয়ে দিন। আমি হোটেলে ফিরে যাব। সারারাত তো আপনার পাল্লায় পড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে পারব না।’
লোকটা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“-চিনি তো আফা। এইতো আর আধাঘন্টা। আপনি রাগ কইরেন না।’
আতিয়া বিরবির করে বলল,
“-রাগ করব না। তোর ঘাড় মটকাব। রক্ত চুষে খাব।’
লোকটা সিএনজি থামালে আতিয়া জিজ্ঞেস করল,
“-কী হলো আবার? ‘
“-ওই যে আফা একটু… পেটে টান পড়ছে… আমি একটু। ‘
“-হ্যাঁ। যান। যান। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে আসুন।’
গাড়ি থেমে নেমে আড়ালে এসে লোকটা কাকে যেন কল করল।
“-কই তোরা? খাসা মাল পাইছি। তোরা আসতাছি, আসতাছি কইয়া এতো দেরি করতাছোস। পাখি তো উইড়া যাইবার চাইতাছে। হ বাল। তাড়াতাড়ি আয়। আর আটকাইয়া রাখবার পারতাছি না।
#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(৮)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

সা’দ নাহিলের সাথে না গেলেও ওকে ড্রপ করতে ওদিক দিয়েই যাচ্ছে। নাহিল ফুল ভলিউমে মিউজিক ছেড়ে শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে কথা বলছে,
“-তুমি গেলে আরও মজা হতো ভাই। তোমার আগমনে আমাদের পার্টিতে চার চাঁন লেগে যেত।’
সা’দ কোনো উত্তর দিল না। নাহিল ভাইয়ের উপর মনে মনে বিরক্ত হলো।
“-এই সাহেব সাহেব মুড করে থাকতে কত ভালো লাগে তোমার? সারাক্ষণ চোখ, মুখ শক্ত করে রাখো। মুখের মধ্যে এতটা সিরিয়াসনেস ফুটিয়ে না রেখে, মাঝেমধ্যে নরমাল থাকতে পারো তো নাকি?’
গাড়ি থামাল সা’দ।
“-নামো।’
“-অ্যাঁ! এইটুকু কথাতে রাগ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছ! মি.সা’দ চৌধুরী ভুলে যাবেন না। দাদাজান আমাকেও গাড়ি দিয়েছেন। তোমার পাশে বসতে ভালো লাগে বলে তোমার গাড়িতে আসি। নইলে…
সা’দ এবার ধমক দিয়ে বলল,
“-শাট আপ! চোখ খুলে আশেপাশে দেখো অন্ধ। রাগ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছি না। তোমার ক্লাবে এসে গেছি। এখানেই যাবে তো নাকি?’
বাইরের দিকে তাকাল নাহিল। জিভে কামড় দিয়ে বলল,
“-সরি! আসলে আমি ভেবেছিলাম, তুমি রাগ করে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছ।’
“-সবাইকে কেন নিজের মত ভাবো! আমি তোমার মত স্বার্থপর না।’
নাহিল নেমে গিয়ে ঝুঁকে এসে বলল,
“-শোন, পারলে আজও তুমি একবার ওই হোটেলে যেও। মেয়েটা হয়তো এখনও ওখানেই আছে।’
“-মার খাবে তুমি।’
“-এইজন্য কারো ভালো চাইতে নেই। ভালো করতে গেলেই মার খাবার ধমক খেতে হয়।’
সা’দ কার ব্যাক করলো। এই পাগলের সাথে কথা বলে লাভ নেই। যাবার আগে সা’দ বলে গেল।
“-শোন, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ভুলেও ড্রিঙ্ক করবে না। রাত বারোটার আগে বাসায় ফিরে যাবে। আর মেয়েদের থেকে কম করে হলেও দশ হাত দুরত্ব বজায় রাখবে। লাস্ট বারের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি। জেলে যেতে যেতে বেঁচেছিলে। তোমার জন্য সেবার দাদাজানের অনেক বদনাম হয়েছিল। পেপারে তোমার আমার ছবি এসেছিল।’
নাহিল দু’হাতে কান চেপে ধরে বলল,
“-হয়েছে। হয়েছে। আগের কথা আর কত মনে করিয়ে দিবে? এক খোটা শুনতে শুনতে আমার জীবন তেজপাতা। তুমি আর দাদাজান পারলে দিনে হাজার বার আমাকে এই কথা মনে করিয়ে দাও। সেবার যে ভুল করেছি, এমন ভুল এই জীবনে আর করব না। যাচ্ছি আমি। চিন্তা নিও না তুমি।’
“-এবার কোনো গণ্ডগোল পাকালে দাদাজান তো তোমাকে ছাড়বেই না। উল্টো আমার হাত থেকেও বাঁচবে না।’
“-বুঝেছি। বুঝেছি। আর ভয় দেখাতে হবে না।’
“-টেক কেয়ার। রাতে সাবধানে ফিরো।’
“-ওকে বাই।’

এই ড্রাইভারের মতিগতি আতিয়ার কাছে ভালো ঠেকছে না। আর আধাঘন্টা বলেও এক ঘন্টার উপর দেরি করাচ্ছে। তখন গাড়ি থেকে নেমে ফোনেও ফিসফিস করে কার সাথে যেন কথা বলছিল। আতিয়া স্পষ্ট শুনেছে লোকটা কাদের যেন আসতে বলছে। বিপদের গন্ধ পাচ্ছে আতিয়া। এই লোকটাকে কেমন গুণ্ডা বদমাশ টাইপ মনে হচ্ছে। আগের ড্রাইভারের কথাবার্তায় আর এই লোকের কথাবার্তায় অনেক তফাৎ। এ যেন শুরু থেকেই আতিয়াকে কেমন করে দেখছিল। মেয়েরা পুরুষদের দৃষ্টি ভালো করেই পড়তে পারে। প্রথম দেখাতেই বলে দিতে পারে, কে তাদের দিকে নোংরা নজর দিয়েছে আর কে ভালো নজর। আতিয়া লক্ষ করল পেছন থেকে দু’টা সিএনজি ওদেরকে ফলো করছে। ভয়ে গা, হাত, পা কাঁপতে লাগলো আতিয়ার। মাথার মধ্যে বিশ্রী এক ধরণের যন্ত্রণা হচ্ছে৷ অস্বস্তি লাগছে। এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। পাপা এইজন্যই হয়তো তাকে একা কোথাও যেতে দিত না। পাপা কেন তাকে এতো কড়া পাহারার মধ্যে রাখত আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। পাপা চাইত না কোনো নোংরা লোক উনার মেয়ের ধারের কাছেও আসুক। আতিয়া চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল,
“-আমাকে ক্ষমা কোরো পাপা। তোমার উপর আমি অনেক রাগ দেখিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি। তুমি সব সময় আমার ভালোই চাইতে।’
মনের মধ্যে সাহস জুগিয়ে আতিয়া বলল,
“-ভাই গাড়িটা একটু থামান তো।’
“-কেন আপা? এইতো আইসা পড়ছি।’
আতিয়া মনে মনে ভয় পেলেও বাইরে প্রকাশ করলো না। লোকটাকে এটাও বুঝতে দিল না, যে সে সবকিছু আন্দাজ করে নিয়েছে। ব্যাটা বুঝে ফেললেই আর গাড়ি থামাবে না। তখন আতিয়া নামতেও পারবে না। আর এখান থেকে পালানোর পথও বের করতে পারবে না।
“-একটা পানির বোতল কিনব। গলাটা শুকিয়ে গেছে। আপনি গাড়িটা একটু দাঁড় করান। নইলে আমি গাড়িতে বসি,আপনি দোকান থেকে পানি নিয়ে আসুন।’
লোকটা অনিচ্ছা স্বত্বেও গাড়ি থামাল। আতিয়া ব্যাগ থেকে টাকা বের করে লোকটা দিয়ে পাঠিয়ে দিল। লোকটা দোকানের কাছে গেলেই আতিয়া সিএনজি থেকে নেমে উল্টো পথে দৌড় দিল। শরীর কাঁপার কারণে পা চলছে না তার। আতিয়া নিজেকে বুঝাচ্ছে।
“-দৌড়া আতিয়া। আরও জোরে দৌড়া। জীবন বাঁচাতে হলে এদের হাত থেকে পালিয়ে যা।’
প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে আতিয়া। পেছনে ওই লোকটা টের পেয়ে আতিয়াকে ধরার জন্য সে-ও দৌড়াতে লাগল। ওই দুই সিএনজি থামিয়ে ওরাও আতিয়ার পেছনে ছুটে গেল।
“-আল্লাহ বাঁচাও। এখন আমাকে বাঁচানোর একমাত্র মালিক তুমি। তুমি কিছু একটা করো। কাউকে না কাউকে পাঠাও। কেউ যেন এসে আমাকে বাঁচিয়ে নেয়।’
পেছন থেকে ওরা চেঁচাচ্ছে।
“-পলাইয়া কই যাবি শালী! আজ তোরে আমগোর হাতে ধরা দিতেই হইব। সারাদিন তোরে এমনি এমনি ঘুরাইছি নাকি? ‘
এই দুঃখের মাঝেও আতিয়ার মাথায় উদ্ভট উদ্ভট সব খেয়াল আসছে। যখন যদি স্পাইডারম্যান,সুপারম্যান কেউ চলে আসতো। তাহলে ওই বাজে লোকগুলোকে মেরে তক্তা বানিয়ে ওকে বাঁচিয়ে নিত। স্পাইডারম্যানও লাগবে না। হৃত্তিকও যদি ক্রিশ হয়ে চলে আসত তাহলেও হতো।
“-দূর! কী সব চিন্তা করছি। ওরা রিয়েল লাইফে কিভাবে আসবে? ‘
ছুটতে ছুটতে কখন মেন রাস্তায় চলে এসেছে সে নিজেও জানে না। হঠাৎ করে সামনে থেকে ফুল স্পিডে আসা একটা গাড়ির সামনে এসে রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। গাড়ির ভেতরকার লোকটা তাৎক্ষণাৎ ব্রেক না করলে এতক্ষণে আতিয়া পিষে যেত। গাড়িটা ওর উপর দিয়ে চলে গেল। আর এখানেই ওর ইন্নালিল্লাহ হয়ে যেত। হাঁটুর কাছে প্যান্ট ছিড়ে হাঁটু ছুলে গেছে। হাতেও ব্যথা পেয়েছে। উপুড় হয়ে পড়লে সামনের দাঁতও দু’টা ভেঙে যেত।

সা’দ রীতিমত রাগে কাঁপছে। আশ্চর্য রকমের লোক আছে এই দুনিয়াতে। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ চলতি গাড়ির সামনে চলে এলো! এখন কিছু একটা হয়ে গেলে পাবলিক তো তাকেই ধরতো। মিডিয়ার লোকগুলো খবর পেলে অবস্থা কেরোসিন বানিয়ে ফেলত। ওরা তো তিলকে তাল বানাতে উস্তাদ। এর আগেও অনেক ঝামেলায় ফাঁসিয়েছে সাংবাদিক গুলো। সা’দ এখন ওদের দু’চোখে দেখতে পারে না। মিছে খবর ছাপানো ওদের অভ্যেসে পরিনত হয়েছে। সশব্দে দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো সা’দ। সামনে যে-ই হোক কড়া কড়া কিছু কথা বলবে ভাবতে ভাবতে দু’পা এগিয়ে এলো। ততক্ষণে সে সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখে পাথর হয়ে গেল। পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সা’দ ভাবতেই পারেনি আজ এভাবে মেয়েটাকে আবার দেখবে। সে তো ভেবে নিয়েছিল, এই জীবনে হয়তো এই মেয়ের সাথে আর দেখা হবে না। কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছুই চেয়েছিল। তাইতো তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে মেয়েটাকে আবার তার সামনে নিয়ে এলো। কিন্তু সা’দ এটা ভেবে পাচ্ছে না, এই মেয়ে রাতের বেলা মেইন রাস্তায় দৌড়াচ্ছে কেন? এর কি আক্কেল জ্ঞান কিছু নেই? নাকি বেশি সাহস দেখাতে গিয়ে… সা’দ বেশি ভাবতে পারলো না। তার চোখ পড়লো পেছনে দৌড়ে আসা তিনটে লোকের উপর। আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। এই জন্যই মেয়েটা ওভাবে দৌড়ে এসে সামনে পড়েছে। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল সা’দের। দু’হাত মুঠো করে ফেলল সে।
আতিয়া হাত বাকিয়ে কনুইয়ে কেটে যাওয়া জায়গায় ফুঁ দিচ্ছিল।
“-আহ! অনেকটা কেটেছে। জ্বলছে খুব। ‘
পেছনে এসে লোক তিনটা দাঁড়াল। তাদের মধ্যে থেকে একজন বলল,
“-পলাইবা কই? তোমারে আইজ…
আতিয়ার মনেই ছিল না, ওর পেছনে এখনও লোকগুলো পড়ে আছে। ওদের কথা কানে আসতে তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়াল সে। সামনের দিকে তাকাল। গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে দৌঁড়ে গেল। আতিয়া এখনও জানে না লোকটা সা’দ। সা’দকে দেখে আতিয়া প্রথমে অবাক হলেও পর মুহূর্তে ওর মন অজানা এক খুশিতে ভরে গেল। মুহূর্তে মনের মধ্যে থেকে সমস্ত ভয় পালিয়ে গেল। ভরসা পেল,এখন আর তার কিছু হবে না। ওই লোকগুলো তার কিছু করতে পারবে না। এই লোকটা ঠিক ওদের হাত থেকে তাকে বাঁচিয়ে নিবে। এই লোকটা তার সাথে অন্যায় কিছু হতে দিবে না। আতিয়া সা’দকে ঠিক করে চিনে না। তবুও তার উপর এই বিশ্বাস কেন জন্মাল তা সে নিজেও জানে না। সা’দের পেছনে এসে দাঁড়াল আতিয়া। ফিসফিস করে বলল,
“-ওই বাজে লোকগুলোর হাত থেকে আমাকে বাঁচান প্লিজ। ‘
সা’দের সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যেতে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। সে নিজের রাগের উপর থেকে পুরোপুরি ভাবে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। ইচ্ছে মত লোক তিনটাকে মারতে লাগলো। আতিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সা’দের এই ফাইটিং সিন এনজয় করছে। আর মনে মনে বলছে,
“-বাহ হিরো! বাহ! আরও মারো। এই লাফাঙ্গা গুলোকে মেরে মেরে তক্তা বানিয়ে দাও। একটা মেয়েকে একা পেয়ে ভিলেনগিরি দেখাচ্ছিল। এখন হিরোর হাতে মার খেয়ে মরুক। মারো…জোরে জোরে ঘুসি দাও। আরে লাথি দাও। হাত, পা দু’টোই চালাও।’
তিনজন থেকে একজন পালিয়ে গেছে। অন্য দু’জন উঠে দাঁড়ানোর মত অবস্থায় নেই। সা’দও যে এক দু’টা মার খায়নি তেমন না। একা তিন জনকে সামাল দিতে গেলে একটু আধটু মার তো নিজেরও খেতে হবে। আর ওরা তিন জনই সা’দের মতই শক্তিশালী ছিল। বেশি কিছু হয়নি। নাকে বেকায়দায় একটা ঘুসি লেগে রক্ত বের হচ্ছে। তাছাড়া সব ঠিক আছে। হাঁপাচ্ছে সা’দ। বুক ভরে কয়েকবার দম নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কার সাথে যেন কথা বলল। একটু পরেই পুলিশ এসে ওদের দু’জনকে নিয়ে গেল। সা’দ ওই পুলিশ অফিসারকে ভালো করেই চিনে। তাই বাড়তি কোনো ঝামেলা হলো না। সা’দ অফিসারকে বলল,
“-আপনি তো সবই জানেন। এখন আমি ওদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে গেলে এই খবর মিডিয়ায় ছড়াছড়ি হবে। তখন আবার আমাকে আর ওই মেয়েকে কেন্দ্র করে নানান কথা বের হবে। এই সময়ে আমি বাড়তি কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না। তাই আমি নিজে কিছুই করতে চাই না। ওরা তিনজন ছিল। একজন পালিয়ে গেছে। বাকি দু’জন আপনার সামনে। ওরা তিনজন মিলে মেয়েটাকে… সা’দ আতিয়ার দিকে তাকাল, সে নির্বিকার মুখে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সাধারণ মেয়েরই এই পরিস্থিতিতে পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যাবার কথা। কিন্তু এই মেয়েটা সবার থেকে আলাদা। তাই সা’দ তেমন অবাক হচ্ছে না। যে মেয়ে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা এক ছেলের সাথে রুম শেয়ার করে। আবার একই বিছানায় থাকার কথা বলতে পারে। শুধু মুখে না, থেকেছেও। সেই মেয়ে তেলাপোকা দেখে ভয় পেতে পারে। কিন্তু পুলিশ দেখে ভয় পাবে না এটা সা’দ ভালো করেই বুঝে গেছে।
পুলিশ অফিসার ইতস্তত করে বলল,
“-স্যার, মেয়েটা আসলে আপনার কে হয়?’
সা’দ কপাল কোঁচকাল।
“-না মানে, আপনি কি উনাকে চিনেন? আপনার কিছু হয় উনি? ‘
“-অত সব কথা আপনার না জানলেও চলবে। আপনি শুধু এই জানোয়ার দু’টোকে জেলে নিয়ে আচ্ছা করে জামাই আদর করবেন।’
অফিসার সা’দের রাগ বুঝতে পেরে হাসলো। বলল,
“-তা আমরা করব। ওরা তো আর জানে না কার সাথে লেগেছে ওরা। এত সহজে ওদের মুক্তি নেই। আপনি চিন্তা করবেন না।’
“-হুম।’
“-সালাম সাহেবকে আমার সালাম জানাবেন।’
“-হুম।’
অফিসার ওদেরকে জীপে তুলে নিয়ে চলে গেল। সা’দ গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। দেখল মেয়েটার হাতে এখনও তার রক্ত লাগা রুমালটা রয়েছে। পুলিশ আসার আগে পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকের রক্ত মুছতে নিচ্ছিল সা’দ। আতিয়া কিছু না বলে,ওর হাত থেকে রুমালটা নিয়ে বিনা দ্বিধায় নিজেই রক্ত মুছার কাজটা করে দিল। আতিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল সা’দ। কিছু বলল না। আতিয়া রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“-নিন, আপনার রুমাল।’ সা’দ সেটা নিয়ে পকেটে রাখল। গাড়িতে উঠে বসলো সে। আতিয়াও পাশের সীটে উঠে বসেছে। এই মেয়ের কোনো কাজেই সা’দ এখন আর অবাক হচ্ছে না। সে বুঝে নিয়েছে, এই মেয়ে সকল মেয়েদের থেকে আলাদা। গাড়ি স্টার্ট দিল সা’দ। মেয়েটাকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই হোটেলের দিকে যেতে লাগলো। সে জানে এই শহরে এই মেয়ের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। থাকলে আজ সারাদিনে চলে যেত। রাতের বেলা আর এই বাজে লোকগুলোর হাতে পড়তো না। আতিয়াও কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার। সারাদিনের ধকলে আর একটু আগের ঘটনায় মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ক্ষিদে পেয়েছে প্রচুর। সারাদিনে গোসল করার ভাগ্য হয়বি। তাই এখন গা ফ্যাচফ্যাচ করছে। মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে। এখন একটু শুতে পারলে এক সেকেন্ডেই ঘুমিয়ে যেত।

চলবে…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here