আমার গল্পে তুমি পর্ব -১৮+১৯

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#১৮_পর্ব
,
ইয়ানা সকালে ঘুম থেকেই উঠেই তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে খেতে বসে গেছে কেননা কালকে রাতে দেরি করে ঘুমানোর জন্য আজকে সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেছে, আজকে আবার অফিসে অনেক কাজ একেতে দুইদিন মতো অফিসে ছিলো না তারপর আবার বিকেলের দিকে অফিসে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান আছে , কেননা এতো বড় একটা ডিল হলো তাতে তো স্টাফদের একটা ট্রিট দিতেই হবে। ইয়ানা খাওয়া শেষ করে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য চলে গেলো।

ওহ এতো চকলেট খেতে হয় না ডার্লিং দাঁতে পোকা হবে , তখন তোমায় দেখতে অনেক পঁচা লাগবে।
,, ওফ লিজা পিজ্জা তোমাকে কতবার বলেছি আমার নাম পরশ ডার্লিং নয় বুঝেছো??
,, ওহ রিয়েলি ইউ নটি বয়, তোমার চাচ্চু কোথায়??
, কেনো জানো না চাচ্চু এখন তার রুমে রেডি হচ্ছে।
ওকে তুমি থাকো তাহলে আমি দেখে আসছি, লিজা সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে উঠে আর্দ্র রুমে চলে গেলো গিয়ে দেখলো আর্দ্র খালি গায়ে গা মুছছে তারপর শার্ট গায়ে দিয়ে উপরে কোর্টটা পড়ে নিলো, , ওদিকে লিজা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়েই আর্দ্রর জিম করা বডিতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে ,, তারপর বাঁকা হেসে রুমের মধ্যে প্রবেশ করল।

তা আর্দ্র স্যার বুঝি রেডি হচ্ছে?? অফিসে যাবি?? কারো গলার আওয়াজ শুনে আর্দ্র পিছনে তাকালো দেখলো লিজা ,, আরে লিজা যে তা কেমন আছিস?
ভালো আর থাকবো কীভাবে আসার পর থেকে তো তোকে পাচ্ছিই না এখন যাও বা পেলাম তাও আবার তুই অফিসে যাচ্ছিস চল আমিও যাবো তোর সাথে।
তুই কি করতে যাবি আর আমি তো অফিসে যাচ্ছি , আচ্ছা তুই তো আমার অফিস চিনিসই বিকেলে অফিসে একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠান আছে তুই বরং বিকেলে যাস , ওকে।
ওকে।
ঠিক আছে তাহলে থাক আমি যায়।
ইস কবে যে তোকে নিজের করে পাবো সেই ছোট্ট থেকে অপেক্ষা করে আছি, , কবে যে তোর বুকে মাথা রাখব আর তুই তোর ওই শক্ত পোক্ত হাত দিয়ে আমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরে রাখবি লিজা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে যে আর্দ্র ওকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে আছে,, উফফ স্বপ্নেই কেমন সারা শরীল শিহরিত হয়ে যাচ্ছে , না জানি বাস্তবে সেই মহুর্তটা কতটা সুখকর হবে।
,,,,,
মোটা মোটা অনেক গুলি ফাইল নিয়ে ইয়ানা স্টোর রুম থেকে আর্দ্রর কেবিনে যাচ্ছে , ফাইল গুলোর জন্য ভালো করে দেখতেই পাচ্ছে না একেবারে চোখের উপর পর্যন্ত তাও আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে সবগুলি ফাইল নিচে পরে গেলো , ইয়ানা রেগে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো সামনে আর্দ্র দাঁড়িয়ে আছে, হয়ে গেলো এখন শুরু হবে ওনার জ্ঞান দেওয়া, দেখে চলতে পারো না ইডিয়ট এতোগুলো ফাইল নিয়ে এভাবে যাচ্ছো কেনো ব্লা ব্লা ইয়ানা বসে বসে ফাইল তুলছিলো আর এগুলো ভাবছিলো কিন্তু আর্দ্র ইয়ানাকে অবাক করে দিয়ে নিজেও নিচে বসে ফাইল গুলো উঠিয়ে ইয়ানাকে সাহায্য করলো, ইয়ানা তো অবাক চোখে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে ।

এভাবে তাকিয়ে না থেকে ফাইল গুলো নিয়ে যলদি রুমে আসো।
আমি কি স্বপ্ন দেখলাম মিষ্টার আর্দ্র আমায় কিছুই বলল না? আবার এতো মিষ্টি সুরে কথা বলল কি জানি মাঝে মাঝে যে ওনার কি হয়।
ইয়ানা ফাইল গুলো নিয়ে আর্দ্রর কেবিনে গেলো তারপর আর্দ্র কে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে হল রুমে গেলো যেখানে বিকেলে মিটিং মানে অনুষ্ঠানটা হবে , অনেক বড় হল রুম সারি সারি চেয়ার দেওয়া দুপাশে আর মাঝখানে ইয়া বড় একটা টেবিল আর প্রতিটা চেয়ারের সামনে একটা করে পানির বতল রাখা ইয়ানার হল রুমে এসে দেখলো সবকিছু সুন্দর করে সাজানো কিন্তু আর্দ্র নামের ওখানে ডি জায়গায় বি লিখা।

হায় হায় এরা দেখি বড় আকারে ভুল করেছে এটা যদি এখন মিষ্টার আর্দ্র দেখতো তাহলে তো হয়ে যেতো,, ইয়ানা একটা চেয়ায়ে উঠে বি লেখা বেলুনটা সরায়ে ডি দিয়ে দিলো কিন্তু যেই নামতে যাবে ওমনি চেয়ারটা নড়ে উঠলো আর ইয়ানা পরে যেতে গেলো,,, আআআআআ এবার আমি শেষ কিন্তু না ইয়ানা নিচে পরার আগেই একটা শক্ত হাত ওর কমর জরিয়ে ধরে কোলে নিয়ে নিলো, ইয়ানা যখন বুঝলো যে ও নিচে পড়েনি কেউ ওকে ধরেছে তখন আস্তে করে চোখ খুলে দেখলো যে কে ওকে ধরেছে চোখ খুলে দেখলো আর কেউ নয় বরং আর্দ্র ওকে ধরে রেখেছে ইয়ানা অবাক চোখে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে তখনি পিছন থেকে কেউ আর্দ্র নাম ধরে ডাকলো।

আর্দ্র এখানে কি হচ্ছে এসব ,, লিজা রেগে চিৎকার করে বলল।
আর্দ্র ইয়ানাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে বলল,,আরে লিজা তুই?? এতো তারাতারি চলে আসলি যে।
ওহ এই তাহলে পরশের সেই লিজা পিজ্জা।
কেনো এসে কি ভুল করলাম?? আর তুই এখানে কি করছিলি??
আমি দেখতে এসেছিলাম হলরুম সাজানো কতদূর আর এসে দেখি ইয়ানা পরে যাচ্ছে তাই ওকে ধরলাম,, আর লিজা তুই ভালো করেই জানিস আমি কাওকে কৈফত দিই না তুই আমার অফিসে প্রথম আসলি তাই তোর যেনো কোনো অসম্মান না হয় তাই বললাম এরপর থেকে আমার সাথে এভাবে কথা বলার আগে দশবার ভাববি,, আর্দ্র রেগে বেরিয়ে গেলো,, লিজাও ইয়ানার দিকে রাগী একটা লুক দিয়ে বেরিয়ে গেলো আর পুরোটা সময় ইয়ানা চুপ করে দাড়িয়ে ছিলো কেননা ওর কিছু বলার ছিলোই না।

বিকেলে অনুষ্ঠানটা ভালো ভাবেই মিটে গেলো পুরোটা সময় লিজা আর্দ্রর সাথেই ছিলো,, ইয়ানা অফিস থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে গেলো গিয়ে দেখলো সুহাগ এসেছে।

এতোক্ষণে তোর আসার সময় হলো সেই কথন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি জানিস??
কেনো আমার সাথে আবার আপনার কি দরকার?
তোকে ওতোকিছু বুঝতে হবে না এখন ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
,, সরি ভাইয়া আমি যেতে পারবো না আপনি তো জানেনই আমার এখন একটা টিউশনি আছে এমনিতেই তিন দিন পড়াতে যায়নি আজকে যেতেই হবে আমরা না হয় অন্য একদিন যাবো।
,, ওকে মহারানি তুই যেটা বলবি, তাহলে তুই তৈরি হয়ে নে আমি বরং তোকে যাওয়ার সময় নামিয়ে দিয়ে আসবো।
ওকে।
,,,,,
কিউটিপাই তুমি এসেছো জানো এ কয়দিন তোমায় অনেক মিস করেছি।
,, ওহ তাই ওলে বাবা তাহলে এখন চলে পড়তে বসতে হবে তো।
,, হুম পড়তে তো বসবোই তার আগে চলো তোমায় একটা জিনিস দেখায়।
কি??
আগে আসো তো তাহলেই বুঝতে পারবা ,,, পরশ ইয়ানার হাত ধরে টেনে উপরে চলে গেলো তারপর লিজার রুমের সামনে নিয়ে গিয়ে বলল দাখো৷, ইয়ানা ভিতরে তাকিয়ে দেখে লিজা মুখে প্যাক লাগিয়ে চোখে শশা দিয়ে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে চেয়ারে বসে আছে।

দেখেছো কেমন দেখাচ্ছে আমার তো অনেক হাসি পাচ্ছে।
,,এভাবে বলতে হয় না সোনা ওনি তোমার বড় না?? আর ওনিতো রুপচর্চা করছে এখন চলো আমরা পড়তে বসি।
,,, ওকে চলো।
ইয়ানা পরশকে নিয়ে পরশের রুমে চলে গেলো তারপর পরানো শুরু করলো পরানো শেষে ইয়ানা নিচে নেমে দেখলো লিজা সোফায় বসে আছে তাই ইয়ানা অন্তরার থেকে বিদায় নিয়ে যেই যাবে তখনি লিজা ইয়ানা কে ডাক দিলো।। এই শোনো??
জি বলেন?

তোমাকে তো আমি অফিসে দেখেছিলাম তাহলে তুমি এখানে কি করছো??

আসলে আমি তো চাম্প মানে পরশকে পড়াই তাই আর কি।

ওহ ভালো ,, আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো।

ইয়ানা ভদ্রতার খাতিরে লিজাকে পানি দিলো আর তৃষ্ণার্থকে পানি পান করানো সোওয়াব এর কাজ তাই ইয়ানা লিজা কে পানি দিয়ে গ্লাসটা রেখে যেতে যাবে তখন লিজা বলল,, শোনো আমি হাতে নেল পলিশ লাগিয়েছি এখনো শুকায়নি তুমি এই ব্যাগটা আমার রুমে দিয়ে আসো তো। ,, আমার আর্দ্রর পাশে দেখেছি তোমায় ,, এতো সহজে তো তোমায় ছাড়বো না ,, মনে মনে বলল লিজা

ইয়ানা এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার ও বুঝতে পেরেছে লিজা মেয়েটা ওকে জ্বালানোর জন্য এমন করছে তাই ও দু হাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে থাকলো।

কি হলো কথা কানে যানে যাচ্ছে না?? কি বললাম তোমায়??

ম্যাম আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি পরশের টিচার এই বাড়ির কাজে লোক নয়, আর কাজের লোক হলেও আমি আপনার কাজ করতাম না কেননা নিজের কাজ নিজে করাই ভালো।

এই শোনো তোমাকে আমায় জ্ঞান দিতে হবে না তোমাকে যেটা বললাম সেটা করো আর তাছাড়া তুমি তো টাকার জন্যই কাজ করো এই কাজের জন্যও না হয় আমি তোমায় কিছু টাকা দেবো।

এতোক্ষণ আমি আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি বলে আপনি কিন্তু আপনার সিমানা অতিক্রম করছেন ম্যাম,, আমি আবারো বলছি আমি পরশের টিচার।

তো?? আমি যখন তোমাকে বলেছি তুমি এই ব্যাগটা আমার রুমে দিয়ে আসবে, তখন তোমাকে দিয়ে আসতেই হবে।

যদি না দিই তো???

এখানে কি হচ্ছে ,, পিছন থেকে আর্দ্র বলল।
#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#১৯_পর্ব
,
কথায় বলে সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় জন আসলে সম্পর্ক ভেঙে যায় তবে কিছু কিছু সময় সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় কেউ আসলে মনের না বলা অনুভূতি গুলো বেরিয়ে আসে , ইয়ানার ক্ষেএে ও তাই হয়েছে তখনকার কথাগুলো গুলো মনে করে বিছানায় শুয়ে মিটমিট করে হাসছে ইয়ানা। বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে বলল ,, এই কি হ্যাঁ এমন করে হাসছিস কেনো?? প্রেমে পরেছিস?? আচ্ছা সত্যি কি আমি প্রেমে পড়েছি তাও আবার ওই গাম্বাট রাগী লোক টার এও সম্ভব?? না না আমি এমন টা কখনোই করতে পারি না ওই লোকটাকে কীভাবে আমার ভালো লাগতে পারে ,, তবে ওনি তখন ওভাবে আমার পক্ষে কথা বলায় কেমন যেনো লাগছে মনে হচ্ছে আমি এবার সত্যি সত্যি ওনার প্রেমে পড়ে যাবো , ইয়ানা তখন কার ঘটনা মনে করতে লাগল।

—- কি হচ্ছে এখানে?? আর ইয়ানা তুমি এখনো বাড়ি যাওনি কেনো?? রাত হয়ে যাচ্ছে তো।
—-বাড়িই তো যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনার বান্ধবীর জন্য আর যেতে পারলাম কই।
—মানে?? ইয়ানা কি বলছে লিজা।
—দেখ না আর্দ্র আমি শুধু ওকে বলেছি আমাকে একটু হেল্প করতে কিন্তু ও আমায় কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো, , আচ্ছা তুই বল আমি তো একটা মেয়ে এই এতোবড় ব্যাগ আমি নিতে পারি?? ওকে শুধু একটু বলেছি আমাকে সাহায্য করতে আর ও উল্টে আমায় অপমান করলো, , এ কেমন টিচার রেখেছিস পরশের জন্য যায় নিজের কোনো শিক্ষা নেই সে কি করে পরশকে ভালো কিছু শিক্ষা দেবে বল।
—-লিজার কথা শুনে ইয়ানার মন চাচ্ছিলো মুখের উপর সব সত্যি কথা গুলো বলে দিতে কীভাবে একের পর এক মিথ্যা বলে মিস্টার আর্দ্রর কাছে ভালো সাজছে ,, তবে না আমায় শান্ত থাকতে হবে আগে দেখি মিস্টার আর্দ্র কি করে সব ক্ষেএে ধর্য ধারণ করতে হয়।
—সেকি ইয়ানা এটা তোমার কেমন ব্যাবহার আমার জানা মতে তুমি তো এমন নও আর লিজা তো শুধু তোমার কাছে একটু সাহায্য চেয়েছে আর তুমি ওকে অপমান করলে এটা মোটেও ঠিক নয়।
—সব সময় এক পক্ষের কথা শুনে বিচার করা ঠিক নয় মিস্টার আর্দ্র আমি এতোক্ষণ চুপ ছিলাম বলে ওনার বলা কথাগুলো সত্যি এটা কিন্তু নয়৷ আর ওনি যদি সত্যি আমার কাছে সাহায্য চাইতো তবে আমি নিশ্চয়ই ওনাকে সাহায্য করতাম কিন্তু ওনি তা করেননি উল্টে আমাকে হুকুম করেছে যেনো আমি এই বাড়িতে কাজ করি ,, এখন হয়ত আপনি আমার বলা কথাগুলো বিশ্বাস করবেন না কেননা আমি তো এবাড়ির কেউ নয় আর লিজা ম্যাম আপনার বন্ধু আপনি ওনার কথায় বিশ্বাস করবেন।

—- আমি কখনই মিথ্যাকে সমর্থন করি না সেটা তুমি ভালো করেই জানো আর লিজা যদি এমনটা করে থাকে তাহলে অবশ্যই ওকে তোমার কাছে মাফ চাইতে হবে ,, লিজা মিস ইয়ানা যা বলল তাকি সত্যি?? কি হলো চুপ করে আছিস কেনো বল।

—- এই মেয়েটার জন্য আর্দ্রর কাছে খারাপ হওয়া যাবে না নিজেকে আর্দ্রর সামনে ভালো প্রমাণ করতেই হবে ,, আ ,,আসলে আমি আমার ব্যাবহারের জন্য সত্যি অনেক লজ্জিত ,, সরি।

—ইট’স ওকে যে নিজের ভুল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত , , ওকে আমি আসি তাহলে।

,,,,বর্তমান,,,,

–কিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওভাবে একা একা হাসছিস কেনো??
— ক,,কই আম্মু আমি হাসছি কই এমনিতেই চুল আচঁড়ায়।
–আচ্ছা আয় এখানে বস, , এখন বলত সোহাগ কে তোর কেমন লাগে।
—ভালোই তো দেখতে শুনতে ভালো আর ব্যাবহার ও ভালো কেনো বলোত??
–নাহ কিছু না এমনিতেই তোর পছন্দ হয়েছে এটাই অনেক , আচ্ছা এখন তাহলে শুয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে বেশি রাত জাগা ঠিক নয়।
—ওকে আম্মু।
,,,,,,,,
—আমার মুখে কি হাসার মতো কিছু আছে?? ওভাবে আড়ে আড়ে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছো কেনো??

—-এইরে ওনি কি দেখে ফেললো নাকি ,, ক, কই নাতো আমি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসবো কেনো আমি তো এমনি।

—এমনি কি হুমম?? তোমার কিন্তু কাজের প্রতি তেমন মন দেখছি না তোমার ব্যাপারটা কি, বলোত কথাটা বলে আর্দ্র চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে ইয়ানার দিকে যেতে লাগল আর ইয়ানাও ভয়ে পিছাতে লাগল পিছাতে পিছাতে দরজার সাথে লেগে গেলো।

—আপনি এভাবে আমার দিকে আগাচ্ছেন কেনো??

–তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো তাই ,, আর তুমি এভাবে পিছাচ্চো কেনো?? কথাগুলো বলতে বলতে আর্দ্র আরো ইয়ানার দিকে এগিয়ে গেলো আর্দ্র আর ইয়ানার মধ্যে এখন মাএ এক হাত ফাঁকা তখনি বাইরে থেকে কেউ দরজায় ধাক্কা দিলো আর ইয়ানা তাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে আর্দ্রর গায়ের উপর পড়ল ইয়ানার দু হাত আর্দ্রর কাঁধে আর ভুল বসত ইয়ানার ঠোঁট গিয়ে আর্দ্রর ঠোঁটে ছোঁয়া লাগে।

—এই ইডিয়ট দেখে দরজা খুলতে পারো না এরপর থেকে দেখে শুনে দরজা খুলবে যাও এখন।

—-সরি স্যার।

—মিস ইয়ানা তুমিও এখন যেতে পারো ,, আর্দ্র গিয়ে চেয়ারে বসল, আর ওদিকে ইয়ানা চোখগুলো বড় বড় করে এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ,, আর্দ্র কি বলছে সেটা যেনো ও শুনতেই পাইনি।

—মিস ইয়ানা তোমাকে কি যাওয়ার জন্য কার্ড দেওয়া লাগবে?? দাঁতে দাঁত চেপে জোরে বলল আর্দ্র।

— জ ,,, জি হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাচ্ছি , কোনো মতে ওখান থেকে পালিয়ে এলো ইয়ানা, নিজের ডেস্কে এসে তখনকার ঘটনা টা ভাবতে লাগল ,, ছিঃ ওনি কি ভাববে শেষ মেষ কিনা ওনার সাথে আমার লিপকিস হয়ে গেলো ওহ নো এতো দিন যাও আমার ঘুম হতো এখন তাও হবে না৷ আচ্ছা হঠাৎ করে আমার এতো লজ্জা লাগছে কেনো,, কি জানি অফিসে থাকা কালিন ইয়ানা লজ্জাই আর আর্দ্রর সামনে যায়নি যাও বা গেছে তবে ওনার দিকে তাকাইনি পুরো টা সময় নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর আর্দ্র এমন ভাবে আছে যেনো কিছুই হয়নি ।

সন্ধ্যায় ,,,,

— আরে ইয়ানা তুমি এসো পড়েছো কিন্তু আজকে তো পরশ বাসায় নেই।

— কেনো আপু চাম্প কোথায় গেছে??

— পরশ আজকে একটু আমার মায়ের বাসায় গেছে, , আমার ভাই এসে ওকে নিয়ে গেছে।

— ওহ তাহলে তো আজকে আর পড়ানো নেই আমি তাহলে আসি এখন।

— আরে কই যাচ্ছো কোথায়ও যাওয়া হবে না বসো আমার কাছে আর শোনো কালকে সকাল সকাল আমাদের বাসায় চলে আসবা ওকে।

— সেকি কেনো আপু কালকে তো শুক্রবার ছুটির দিন তাহলে আবার আমি আসবো কেনো??

— আরে কালকে পরশের জন্মদিন তাই বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে তুৃমি সকাল সকাল চলে আসবা বুঝেছো, তুমি হলে পরশের একমাএ কিউটিপাই তুমি সকাল সকাল চলে আসবা নইলে কিন্তু তোমার চাম্প অনেক রাগ করবে বুঝেছো।
— ওকে আপু।

–লিজা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখল ইয়ানা অন্তরার সাথে বসে গল্প করছে,, এই মেয়েটাকে তো আমার প্রথম থেকেই পছন্দ নয় এসব মেয়েরা বড় লোকের ছেলে দেখলেই হামলে পড়ে কেমন বাড়ির সবাইকে হাত করে নিয়েছে তবে আর্দ্র শুধুই আমার ওকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবো না, আমি শিওর এই মেয়েটা আর্দ্রকে পছন্দ করে ,, লিজা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো তখনি আর্দ্র আর অনিক অফিস থেকে আসল আর্দ্র কে দেখেই লিজা পায়ে হাত দিয়ে সিঁড়িতে বসে চিৎকার করতে লাগল,,, আহ আমার পা মনে হয় একেবারে ভেঙ্গে গেছে আহ আমি তো হাঁটতেই পারছি না।

–আরে লিজা ম্যাম কি হলো আপনার।

ইয়ানাকে এগিয়ে আসতে দেখে লিজা রাগে ফুসতে লাগল তবুও জোর করে ওখানেই বসে থাকল,, আরে আমার হাত ধরুন আমি আপনাকে উঠতে সাহায্য করছি।

নাহ তুমি পারবে না আহ অনেক বেথ্যা করছে আর্দ্র প্লিজ হেল্প মি।

দেখি কি হয়েছে?? আর্দ্র গিয়ে লিজার হাত ধরে ওকে দাঁড় করালো তারপর লিজা আর্দ্রর হাতটা চেপে ধরে আর্দ্রর সাথে হেঁটে যেতে যেতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো ,, ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে লিজার দিকে তাকিয়ে আছে কেননা ওহ ঠিকই বুঝতে পেরেছ এটা লিজার নাটক ইয়ানা রেগে মুখটা ফুলায়ে তাকিয়ে থাকল।
,,,,,,
সবাই টেবিলে খেতে বসেছে লিজা গিয়ে আর্দ্রর পাশের চেয়ারে বসে পড়েছে আর্দ্রর মা আর বাবা আগেই খেয়ে ঔষুধ খেয়ে রুমে চলে গেছে ইয়ানা এখনো যায়নি অন্তরা যেতে দেয়নি বলেছে খেয়ে যেতে।
আরে আপু তোমাকে যেতে হবে না তুমি বসো আমি রান্নাঘর থেকে তরকারি আনছি,, এই বলে ইয়ানা রান্নাঘরে চলে গেলো তারপর তরকারির বাটিতে একটা আঙুল চুবিয়ে দেখলো ওটা তেমন গরম নাহ প্রায় ঠান্ডা হয়ে গেছে তখনি ইয়ানার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো,, তখন আর্দ্রর লিজার হাত ধরাটা কেমন যেনো ভালো লাগছে না ইয়ানার এটা জেলাসি নাকি অন্যকিছু সেটাও বুঝতেছে ইয়ানা ওর শুধু রাগ হচ্ছে আর্দ্র লিজার হাত কেনো ধরবে,, ইয়ানা তরকারির বাটি থেকে কিছুটা ঝোল পায়ের উপর ফেলে দিয়ে ফ্লোরে বসে কান্না করতে লাগল।

আহ আমার পা ইস মনে হয় ফুসকা পড়ে গেছে আহ অনেক জ্বলছে এখন কি করবো,, পা ধরে ইয়ানা কান্নার নাটক করতে লাগল।

আরে মিস ইয়ানার আবার কি হলো তোমরা থাকো আমি দেখে আসছি,, আর্দ্র গিয়ে দেখল ইয়ানা ফ্লোরে বসে আছে। কি হয়েছে এভাবে ফ্লোরে বসে আছো কেনো??

দেখুননা পায়ে তরকারিটা পড়ে গেছে অনেক গরম আহ পায়ে মনে হয় ফুসকা পড়ে গেছে উফ অনেক জ্বলছে।

কই দেখি,, আর্দ্র দেখলো সত্যি ইয়ানার পায়ে তরকারি আর্দ্র নিচু হয়ে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে ডয়িং রুমে গেলো,, লিজা ডাইনিং টেবিলে বসে রাগি চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছিলো ইয়ানা লিজাকে দেখে আর্দ্রর গলাটা জরিয়ে ধরল, তাই দেখে লিজা তো রেগে মেগে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেছে,, আর্দ্র ইয়ানাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর পা পরিষ্কার করে দিয়ে ওখানে মলম লাগাচ্ছে আর এদিকে ইয়ানা হুদাই গালে হাত দিয়ে বসে আছে কেননা ওর তো পায়ে লাগেইনি।

অন্তরা আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে তরকারির বাটিতে হাত দিয়ে দেখলো ওটা ঠান্ডা তেমন গরম না কিছু একটা ভেবে অন্তরা নিজের মনেই হেসে উঠল।

চলবে,,,,,???
চলবে৷ ,,,,??

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here