#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ১৩
রাইয়্যান দরজা বাইরে দাড়িয়ে ডেকে চলেছে আরুশিকে।
–আরু ওপেন দি ডোর,
–না আমি কিছুতেই দরজা খুলবো না।
–আরু দরজা খুলো না হলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
–ভালো হওয়া লাগবে না। আমি দরজা খুলবো না আপনি যান যেছে আমি বাঘের কাছে ধরা দেবো নাকি।
–কতোক্ষণ দরজা আটকে বসে থাকবে আমি ও দেখবো। এখন না হও বের তো তোমাকে হতেই হবে তখন বুঝাবো।
–যখনকার টা তখন দেখা যাবে এখন আপনি যান তো।
রাইয়্যান রেগে দরজায় আরেকটা বারি দিয়ে সরে আসে এই ভাবে আর নিচে যাওয়া যাবে না অনুষ্ঠান ও শেষ কিন্তু সবাই আমাকে খুজবে এভাবে আরুশির পেছনে আসছি। চেন্জ করে যেতে হবে।
রাইয়্যান নিজের রুমের দিকে যেতে লাগে পেছনে থেকে তানিশা ডেকে উঠে,
তানিশা রাইয়্যানকে আরুশির পেছনে আসতে দেখে নিজে ও ওদের পিছু নেয়। এই মেয়েটাকে তো আগে খেয়াল করি নি এটা আবার কে। রাইয়্যান এই মেয়ের পেছনে কেন এলো জানতেই হবে। ডয়িং রুমে কেউ নেই
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে আসে। হাতে কুচি ধরে উপরে এসেই চোখ পরে রাইয়্যানের উপর। রুমের দিকে যাচ্ছে কিন্তু ওই মেয়েটা কই। এদিক ওদিক চেয়ে খুজলো নাই গেল কোথায় মেয়েটা বাইরে তো যায়নি দরজা দিয়ে তো আমিই এলাম।
–রাইয়্যান, তুই একা ওই মেয়েটা কোথায় গেল?
রাইয়্যান পেছনে ফিরে তাকায় তানিশা এখানে কেন?
–কি কোন মেয়ের কথা বলছিস?
–একটু আগে একটা মেয়ে দৌড়ে এলো যে। কোথায় মেয়েটা তুই তো তার পেছনেই আসলি।
–আমি কারো পেছনে আসি নি।[ রাইয়্যান ইচ্ছে করে মিথ্যে বলল]
তানিশা কিছু বলবে হঠাৎ ওর চোখ আটকে যায় রাইয়্যান পান্জাবিতে হলুদ লেগে আছে। এটা কি করে লাগলো এতো ক্ষণ তো ছিলো না বাইরে তো ও হলুদের আশেপাশে ও যায় নি লাগলো কিভাবে?
–কি হলো ওইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
–তোর পান্জাবিতে হলুদ লাগলো কি ভাবে রাইয়্যান?
চমকে উঠলো এটার কথা তো মনেই ছিলো না এখন কি বলবো তানিশা তো একশ কথা শুনাবে।
–কি ভাবছিস বল হলুদ লাগল কি করে তুই তো হলুদের আশে পাশে ও যাস নাই।
–হুম আসলে,
–কি আসলে বল কি ভাবে লাগল?
তানিশার মনে আছে যে মেয়েটা ভেতরে এসেছে তার মুখ ভর্তি হলুদ ছিলো আর রাইয়্যান ও ভেতরে এসে হলুদ লাগালো ওই মেয়ের কান্কেশন আছে।
–কি ভাবে লেগেছে আমি কি করে জানবো আমি তো এখন ই খেয়াল করলাম ও গড এই হলুদ কিভাবে আমার শরীরে এলো।
এমন একটা ভাব করছে রাইয়্যান যেন ও জানেই না কিভাবে লেগেছে হলুদ?
–[ তানিশা ভেবেছে কিছু কিন্তু এ তো বলছে জানে না তাহলে কি অন্য কোন ভাবে আর মেয়েটাও তো নেই। অন্য কোন ভাবে হয়তো ] জানিস না আচ্ছা আমি আর ও কতো কি ভাবছিলাম।
–কি ভাবছিলি?
–কিছুনা তুই কি নিচে যাবি নাকি চেন্জ করবি?
–এভাবে কি নিচে যাওয়া যায় চেন্জ করে যাবো।
— আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি।
ওকে বলে রাইয়্যান রুমে চলে আসে।
তানিশা আবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। ওর মাথায় এটাই আসছে না মেয়েটা গেল কোথায়? আসলো ভেতরে কিন্তু এখন সে ভেতরে নেই। রাইয়্যানের রুমের পাশে এই রুমে আবার কে থাকে ভেতরে থেকে লক লাগছে। আমাকে তো ওই পাশে দিয়েছে এই রুমটাই দিলেই তো রাইয়্যানের পাশে থাকতে পারতাম পরে বলে দেখবো।
সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে সোজা বাগানে চলে আসে।
আরুশি ড্রেস চেন্জ করে খাটে এসে ঠাস করে শুয়ে পরলো মাথা ধরছে এখন বের হবো না আর বের হলেই রাইয়্যান আমার পিছু নিবে।
চোখ বন্ধ করে কিছু সময় থাকতেই ঘুম ধযে যায়। ঠাস ঠাস শব্দে ধরফরিয়ে উঠে বসি চোখ কচলিয়ে চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারি আমি রুমে শুয়ে আছি।
তাহলে এমন শব্দ কোথায় থেকে আসছে আবার শব্দ হতেই বুঝতে পারি দরজা ধাক্কার শব্দ। উঠে দরজা খুলতে যাবো ওমনি মনে যায় রাইয়্যানকে হলুদ দেওয়ার কথা ও মাই আল্লাহ এখন কি হবে?
আমি সিউর রাইয়্যান ই এমন করে ধাক্কা দিচ্ছে আমাকে শাস্তি দিতে। দরজা খুলা যাবে না কিন্তু অনবরত ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে উফফ ভেঙে ফেলবে রে আজ দরজা টা ভেঙেই ফেলবে আমি সিউর।
এভাবে কেউ ধাক্কায় যওসব হঠাৎ আপুর মানে জেসমিন আপুর কথা শুনে চমকায় আরুশি ?
–আরুশি দরজা খুল কি হলো কতো সময় দাড়িয়ে থাকবো খুলবিনা যাবো গা নাকি আজ তোর সাথে ঘুমাতে চেয়েছিলাম আচ্ছা যাই আমি।
আপু তার মানে এতো সময় দরজা ধাক্কা দিচ্ছিলো আর আমি কিনা কি ভাবলাম। তারাতারি দরজা খুলে ডাক দেয় আপু বকতে বকতে রুমে ঢুকে। এতো সময় কারো লাগে দরজা খুলতে বাপরে উফ।
–সরি আপু আসলে আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ?
–অন্য কেউ আবার কাকে ভাবছিস।
থতমত খেয়ে গেল। না আপু কে এটা বলা যাবেনা।
–ওই আসলে,
–আর সাফাই গাইতে হবে না তুমি যে পরে পরে ঘুমাচ্ছিলে আমি জানি। আমি গোসল করে আসি।
ঘড়ির কথা মনে পরলো রুমে ঘড়ি আছে এখন এটা রাইয়্যান ই কিনে এনেছে। ১১ টা বাজে কতো সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। এখন খিদে পেয়েছে তখন তো না খেয়েই চলে এসেছিলাম খাবো কি? রাইয়্যান এখন ঘুমে থাকবে নিশ্চয়ই এই সুযোগ যাই কিছু খেয়ে আসি।
উঠে দরজায় কাছে গিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম আশেপাশে কেউ নেই সবাই ঘুমে মনে হয়। অনুষ্ঠান কখন শেষ হয়েছে?
আরুশি সোজা নামতে লাগলো নেমে রান্না ঘরে ঢুকে গেল বিরিয়ানী নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পরলো যেইনা এক লোকমা মুখে দিতে যাবে এমন সময় কেউ আমার মুখে কিছু দিয়ে দিলো। ঠান্ডা কিছু গালে লেগেছে হাত দিয়ে দেখি হলুদ কে দিলো রেগে পেছনে তাকাতেই দেখি রাইয়্যান দাড়িয়ে হাসছে।
–এটা কি করলেন আপনি এভাবে কেউ হলুদ দেয়। পুরো মুখ আবার লাগিয়ে দিলেন আমি কি আপনার মুখে দিয়েছিলাম।
একটু রেগেই বলছে আরুশি খেতে আসলো কতো ভয়ে ভয়ে মুখে দেওয়ার আগেই আবার এসে উপস্থিত। এখন না এলে কি চলতো না একটু না হয় হলুদ দিয়েছি তাই এভাবে দিবে।
রাইয়্যান হলুদ এনে রেখেছিলো আরুশিকে পেলেই দিয়ে শোধ তুলবে তাই। আর এখন হঠাৎ আরুশি কে বের হতে দেখেই পিছু নেয় আর সুযোগ বুঝে গালে লাগিয়ে দেয়।
— মুখে না দিলে দিতে তো চেয়েছিলে মুখে পান্জাবি সব নষ্ট হয়েছে তোমার জন্য ওইটা ধুয়ে দিবে কাল।
–ধুয়ে যেহেতু আমিই দেব তাহলে আমাকে দিলেন কেন আমার গাল তাহলে ধুয়ে দিবে কে বলেন।
–তুমি চাইলে আমি ধুয়ে দিতে পারি। যেহেতু আমি দিয়েছি আচ্ছা আসো আমি ধুয়ে দেয়।
— অসভ্য লোক যান ধুয়ে দিতে হবে না।
–না আসো আমি করেছি আমি পরিষ্কার করে দেয়।
–লাগবে না।
ওরনা দিয়ে হলুদ মুছতে লাগলো।
–বাহ কি বুদ্ধি তোমার মুছা তো শেষ। কিন্তু রং টা লেগেছে কিন্তু ভালোই হলুদ হয়ে আছে।
–আপনার গালে ও আছে।
–হুয়াট সত্যি? [ গালে হাত দিয়ে অবা হয়ে ]
–রুমে গিয়ে দেখুন।
রাইয়্যান দেখতে চলে গেল কাল ওর শো আছে এখন হলুদ লেগে থাকলে তো সর্বনাশ।
আরুশি ওর যাওয়া দেখে হাহাহা করে হেসে উঠে মিথ্যে বলেছে। এখানে থাকলে আর তো দশকথা বলবে সাথে আকাম করবে। তাই মিথ্যা বলে তারিয়েছে নিজের প্লেট নিয়ে রুমে চলে আসে। সাথে দরজা অফ করে দেয় বিশ্বাস নেই আবার রুমে আসতে পারে।
খাওয়া মাঝে আপু বেরিয়ে এলো।
–কিরে এখন খাচ্ছিস কেন নিচে খাচ্ছ নি।
–না আপু মাথা ব্যাথা করছিলতো তাই না খেয়েই চলে এসেছি।
–অহ আচ্ছা।
জেসমিন আপু শুয়ে ফোন নিয়ে কথা বলতে লাগলো ভাইয়ার সাথে বোঝা যাচ্ছে।
ভিডিও কলে আমি খাওয়া শেষ করে প্লেট রুমেই রেখে দিলাম। তারপর শুতে যাবো কিন্তু যাচ্ছি না দাড়িয়ে আমি।
–কিরে দাড়িয়ে আছিস কেন শুয়ে পর।
–একটু পর তোমার কথা শেষ হোক।
–আমার কথা শেষ হলে তাহলে আর শুয়া লাগবে না বুদ্ধু, শুয়ে পর। আমাকে কি কিছু বলবি তাহলে ফোন রাখি।
–না আসলে,
–কি হয়েছে বল তো।
আরুশি শুয়ে পরছে না কারণ ভিডিও কলে কথা বলছে তাই ওকে যদি দেখে তাই লজ্জা দাড়িয়ে আছে।
জেসমিন কে বলতেই হাসতে হাসতে বলে,
–এই জন্য উফ আমি তো ভেবেছি কি না কি?
আচ্ছা আয় আমি কল কেটে অডিও ভাবে কথা বলছি।
বলেই কল কেটে দিলো। আরুশি শুয়ে পরে কিন্তু ঘুম আসছে না কতো সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছ। এখন কি আর ঘুম আসবে।
–কি রে ঘুম আসছে না বুঝি?
–হ্যাঁ ঠিক ধরেছো।
চল তাহলে বারান্দায় গিয়ে বসে গল্প করি।
–তুমি না কথা বলছিলে।
–হ্যাঁ এখন কেটে দিছি চল যাই।
আপু উঠে বসেছে।
–কি হলো উঠ?
–ভাইয়ার সাথে কথা বলবে না।
–বলবো একটু পর।
–অহ।
দুজনে বারান্দায় গিয়ে বসলো কথা বলছে কাল পার্লারে কখন যাবে কিভাবে সাজবে। এই কথা ছাড়া আর কথা নেই এর মুখে আজকে কেমন লেগেছে ভাইয়া কি বলেছে?
সব বলছে আমি শুনে যাচ্ছি শুধু হঠাৎ আপু কথা কমিয়ে লজ্জা পেতে লাগলো। আমি তো শক আমাকে দেখে আবার লজ্জায় কি আছে?
কিন্তু আপু তো আর চোখে কাকে যেন দেখছে আমি ও সেদিকে তাকিয়ে হা ভাইয়া জুনায়েদ নিচে দাড়িয়ে আছে বাগানে সেখানে থেকে আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
এর জন্য এখানে আসা আর আমাকে কি বলল,
গল্প করবে কি মিথ্যুক রে বাবা।
আমি উঠে রুমে চলে এলাম। কিছুক্ষণ বাদে আপু ও এলো,
–চলে এলি কেন রাগ করেছিস?
–আমাকে বললে কি হতো?
–বললে তো তুই যেতি নি তাই। সরি রাগ করিস না।
–আমি রাগ করিনি।
–থ্যাংকিউ।
বলেই হালকা ভাবে জরিয়ে ধরে। আমি শুয়ে পরি।
পরদিন
ঘুম থেকে উঠে দেখি আপু ঘুমিয়ে আছে সাতটা বাজে উঠে পরি। বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে সবাই উঠেছে বোধহয়। আপু তো রাত ভর কথা বলেছে এখন ডাকা ঠিক হবে না।
বেরিয়ে নিচে আসে সকালের নাস্তা রেডি হচ্ছে। আমি কফি করে আন্কেলের জন্য নিয়ে যাই।
তাকে দিতে নিচে আসতেই চাচি রাইয়্যান এর জন্য ও নিয়ে যেতে বলে।
উফ আমাকে কেন বারবার বাঘের কাছে যেতে বলে কাল মিথ্যা বলেছি তা নিয়ে আবার কি করে কে জানে।
#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ১৪
আরুশি জেসমিনের মাকে গিয়ে বলল,
–আমি না গেলে হয় না তুমি বা অন্য কেউ যাও না।
–একটু যা না আমি তো রান্না করছি আর অন্য সার্ভেন্টরা গেলে বকবে সবাইকে তো যেতে দেয় না। একটু কষ্ট করে যা।
— আচ্ছা।
মুখটা মলিন করে কফি আরেক কাপ করে নিলো।
চুপি চুপি রুমে ঢুকে কফি রেখেই দৌড়ে চলে আসবো আজ আর সামনে যাবো না। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছে আমার রুম পেরিয়ে যাবো হঠাৎ কেউ পেছনে থেকে ডেকে উঠে।
পেছনে ফিরে দেখি ওই তানিশা মেয়েটা। এই মেয়ে আমাকে ডাকছে কেন?
কেমন করে তাকিয়ে আছে মন হয় চোখে ভুল দেখছে চোখ কচলিয়ে আবার তাকালো বড় বড় করে উফ আমি কি ভূত নাকি এমন আশ্চর্য হচ্ছে কেন?
–আপু কিছু বলবেন?
প্রশ্নটা আমিই করলাম কতো সময় এভাবে দাড়িয়ে থাকবো !!
–তুমি কালকের ওই মেয়েটা না !!
কালকের কোন মেয়ের কথা বলছে আল্লাহ জানে।
–বুঝলাম না আপু…!!
–কালকে যাকে দেখেছিলাম তুমি কি সেই?
আমি ভীতু চোখে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা পাগল আমি হয়েছি নাকি উনি হয়েছে। নাহ আমি না,এমন প্রশ্ন তো আমি করিনি আমি পাগল হব কেন তার মানে উনি।
বিদেশ ফিরত মেয়ে সে শেষে পাগল হলো আগে কথা হয় নি আচ্ছা উনি কি পাগলই কিন্তু আগে মনে হয় নি তো।
নিজে কাকে না কাকে দেখেছে এখন আমাকে জিগ্গেস করছে সেই মেয়ে আমি কিনা না অদ্ভুত?
–কি হলো চুপ করে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তোমাকে কিছু কথা জিগ্গেস করেছি বলছো না কেন? ওকে বলা লাগবে না মনে পরেছে আমারই তুমিই সেই মেয়ে কিন্তু তুমি আসলে কোথা থেকে এই সকালে !
–কোথা থেকে আসলাম মানে কি বলছেন আপু। আমি তো এখানেই থাকি কোথা থেকে আবার আসবো।
–এখানে থাকো [ একটু অবাক হয়ে ] এখানে থাকো কেন? কে তুমি রাইয়্যানের কি হও?
–কিছুই হয় না।
–হোয়াট তাহলে এখানে থাকো কেন?
তোমার হাতে কফি কেন কফি কার জন্য নিয়ে যাচ্ছ?
–রাইয়্যানের জন্য।
–তাহলে তুমি ও কাজের মেয়ে তাই না। আর আমি ভাবলাম কতো কি আচ্ছা যাও?
আরুশি কাজের মেয়ে বলাতে একটু কষ্ট পেয়েছে কিন্তু বুঝতে দেয়নি।
চলে যাবে আবার তানিশা পেছন ডাকে?
— তোমাকে কাল ভেতরে আসতে দেখেছি কিন্তু পরে আর পেলাম না কেন কোথায় ছিলে?
–আমার মাথা ব্যাথা করছিল তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
–তোমার রুম কোনটা?
আরুশি দেখিয়ে দিলো রুম তানিশা রুমের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইয়্যানের পাশের রুম এই কাজের মেয়েকে দিয়েছে। অবাক হয়ে রুমের দিকে তাকিয়ে আছে দরজা চাপানো একটু ফাকাঁ কেউ শুয়ে আছে অহ এইটা তো জেসমিন মেয়েটা।
কি অবস্থা সব কাজের লোককে মাথা তুলে রেখেছে এরা যওসব!!
আরুশি দরজা খুলে ঢুকার আগে রুম চেক দেয় কেউ নেই। রাইয়্যান কে তো বাইরে দেখলাম না গেল কোথায় বাথরুমে আছে মনে হয় এই সুযোগ আরুশি তারাতারি কফি রেখেই পালা যদি বাচঁতে চাচ্ছ।
বড় বড় পা ফেলে রুমে ঢুকে গেল খাটের কাছে ট্রি টেবিলে উপর কফির কাপ রেখে একটা বড় শ্বাস নিলো। এবার এক দৌড়ে দিবো ভেবেই পেছনে ফেরার আগেই দরজা আটকানোর শব্দ পেয়ে চমকে উঠে?
পেছনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়। রাইয়্যান শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর দরজা বন্ধ আল্লাহ কি করবে আমাকে এখন কি শাস্তি দিবে কেন যে কাল মিথ্যা বলতে গেলাম।
অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি।
–আপনি দরজা আটকেছেন কেন?
–কি যেন বলেছিলে কাল আমার গালে হলুদ তাই না?
–হুম সত্যি আমি দেখেছিলাম হলুদ কিন্তু এখন তো নাই গেল কিভাবে আমাকে একটু বলেন আমার মুখে কতো আছে দেখেন। আমিও ট্রাই করে যাওয়াবো।
–আবার মিথ্যা বলছো আরু। আমি মিথ্যা বলা একদম লাইক করি না। কাল মিথ্যে বলে রুমে পাঠিয়েছো তুমি জানো তোমার মিথ্যা শুনে কতো ভয় পেয়েছিলাম আজ আমার শো আছে না দেখে কান্সেল ও করে দিচ্ছিলাম। কিন্তু পরে আয়নার সামনে গিয়ে তো আমি হা এটা কি একটু লেগেছিলো সাথে সাথে ধুয়ার ফলে চল ও গেছে আর আমি তোমার কথা বিলিভ করে কি করছিলাম?
আরুশি হা হয়ে আছে ওর একটু মিথ্যে বলায় এতো কিছু হবে জানলে কখনো মিথ্যে বলতো না।
ও তো এমনিই মিথ্যে বলেছে তার জন্য এতো টেনশনে ফেলেছিলো মানুষটাকে খারাপ লাগছে।
–সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি একটু মিথ্যে বলায় আপনি এতো কিছু করে ফেলবেন?
মাথা নিচু করে কথাটা বলল আরুশি।
–বুঝতে পারনি ভালো। এখন যাও আমার পান্জাবী টা ধুয়ে দিয়ে এসো।
–এখন!
–হ্যাঁ তারাতারি যাও আর তোমার জন্য আজকে শাস্তি ওয়েট করছে কিন্তু সেটা এখন দিতে পারছিনা কারণ আমাকে বের হতে হবে শো আছে।
–বের হবেন এখন।
–হুম এই তো এক ঘন্টার মাঝে কিন্তু তোমার তার আগে আমার ড্রেসটা ধুয়ে রেখে যেতে হবে।
— জেসমিন আপুর বিয়ে আপনি চলে যাবেন থাকবেন না বিয়েতে।
–থাকবো।
–কিভাবে থাকবেন আপনি না শো তে যাবেন।
–এই জন্যই তো এখন যাচ্ছি বিকেলের আগেই চলে আসবো। তুমি আমাকে নিয়ে ভাবছো কেন আমাকে কি মিস করবে?
–মিস করতে যাবো কেন? আর করলে ও বা কি আপনি না আমার ফ্রেন্ড মিস তো করতেই পারি।
–হুম তা ঠিক। যাও কাজ করো।
–কিসের কাজ?
–কেবল না বললাম এখন ই ভুলে গেছ।
–মনে আছে কিন্তু আমি করবো না।
–হোয়াট কেন?
–কাল রাতের কথা ভুলে গেছেন আপনি ও আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছেন তাই এটার কোন দরকার নাই।
–ও রিয়েলি কাল যে মিথ্যে বললে,
–তার জন্য ও শাস্তি ভেবে রেখেছেন তাহলে এটা কেন করবো?
–করবে কারণ আমি জাস্ট তোমার গালে লাগিয়েছি জামায় না সেজন্য এটা বাড়তি এটা তোমাকেই ধুতে হবে যাও তারাতারি।
–নাহ যাবো না।
–সিউর তুমি যাবে না।
–হ্যাঁ
–ওকে তাহলে এভাবেই থাকো।
–মানে
–রুমে বন্ধি হয়ে থাকো আজকে তুমি এখানে বন্ধি হয়ে থাকবে আমি বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে যাবো।
–কিহহ
–জি,
–করবে কিনা বলো শেষ সুযোগ।[রাইয়্যান]
বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে গেল সাথে বিরবির করে একশ কুড়ি বকা দিয়ে যাচ্ছে।
ওয়াশিংমিশিন থাকতে ও শাস্তি দিতে এগুলো আমাকে ধুয়ায় হূহ।
আরুশি আগে থেকে ধূয়ে অবস্থ আছে। কিছুক্ষণের মাঝে ধুয়া শেষ কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে হলুদ সম্পূর্ণ উঠে নি একটু একটু আছেই।
এতো ঠললাম তাও পরিষ্কার হলো না। ওই ভাবেই বেরিয়ে এলাম যদি কিছু বলে তাহলে আমি বলবো নিজে ধুয়ে নাও। জোর করে করিয়েছে এতো ভয় কিসের সাহস নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
রাইয়্যান রেডি হয়ে আছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল নারাচ্ছে।
আমাকে বের হতে দেখি বারান্দা দেখিয়ে দিলো ওইখানে শুকিয়ে দিতে।
ভালোই হলো চেক করে নি খুশি হয়ে শুকা দিলাম।
রুমে পা বারাবো তানিশার কথা কানে এলো।
–রাইয়্যান তুই শো তে যাচ্ছি আমি একা বাসার কি করবো?
–একা কোথায় সবাই তো আছে।
–সবাই আর তুই এক হলি নাকি। ওরা থাকলেই বা কি? না থাকলেই বা কি? তোর সাথে আমাকে ও নিয়ে চল। বাসায় আমার একটু ও ভাল লাগবে না।
–আর ইউ ম্যাড তুই আমার সাথে গিয়ে কি করবি? আর বাসার বিয়ের অনুষ্ঠানে সব রেখে আমার সাথে যেতে চাইছিস কেন হোয়াই?
–এই সব ভালো লাগে নাকি আমার।
— আববু আছে জেসমিন, আরু মানি সবাই তাদের সাথে থাক বিকেলের আগেই আমি চলে আসবো।
–আরু আবার কে?
–আছে…..
ওয়েট আরু, বলে ডেকে উঠলো,
আরুশি বারান্দায় থেকে রুমে এলো তানিশা ভাবছে এই মেয়ে এখন ও এই রুমে কি করছে।
–এই মেয়ে এখানে কেন?
–এই তো আরুশি।
–আরুশি এই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তানিশা লন্ডন থেকে এসেছে। ওর সাথে থেকো কেমন আমি আসছি আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
ঘড়ি দেখে বেরিয়ে যেতে লাগে। আরুশি রাইয়্যানকে পিছু ডাকে।
–এখনই যাবেন মানে কি না খেয়ে যাবেন নাকি?
–আরু এখন খাবো না আববুর সাথে দেখা হয় নি তুমি বলে দিও। বাই
রাইয়্যান চলে যায়।
আরুশি আর কিছু বলার সুযোগই পেল না।
–এই মেয়ে তুমি এতো সময় এখানে কি করছিলে?
–কেন আপু?
–যা জিগ্গেস করেছি তাই বলো। কফি নিয়ে এসে আর বের হওনি তাই না।
–জি একটা কাজ করছিলাম।
–কি কাজ করছিলে?
নিচে থেকে ডাক পরে আরুশির চাচি ডাকছে।
উওর না দিয়ে সোজা নিচে নেমে আসে।
–হ্যাঁ বলো।
–বড় স্যার এসেছে খেতে দে সবাইকে।
— আচ্ছা আপু উঠে নি এখন ও আমি ডেকে আনি।
— আচ্ছা যা।
রুমে এসে আপু কে ডাকতে লাগলাম উঠছেই না।
–আপু উঠো নয়টার উপরে বাজে খাবে না।
–আরুশি আমাকে ডাকিস না যা তুই।
–খাবে না আজ তোমার বিয়ে ভুলে গেলে নাকি।
তাও উঠছে না উনি নাই দশটায় নাকি পার্লারে যাবে এটাই বলি।
–আপু দশটা বাজে।
সাথে সাথে উঠে পরে।
–বলিস কি এতো বেলা হয়ে গেছে।
ঘরির দিকে তাকিয়ে রেগে উঠে,
–তুই আমাকে মিথ্যে বললি।
— মিথ্যা না বললে উঠতে নাকি নিচে আসো আমি গেলাম।
নিচে এসে খাবার দিতে লাগল সবাই আছে।
সবাইকে দিয়ে আমি ও বসলাম জেসমিন আপু ও এসে পরেছে। আন্কেল, জুনায়েদ ভাইয়া আর তানিশা।
–রাইয়্যান কোথায় আরুশি মা?
–আরুশি বলতে যাবে তার আগে তানিশা বলে উঠে,
–আন্কেল রাইয়্যান তো শো করতে গেছে সকালে আমাকে বলেছিল।
— আচ্ছা।
তানিশা একটু ইচ্ছে করেই উওর দিয়েছে।
চলবে❤
চলবে❤