আমার তুমি পর্ব৩১ +৩২

#আমার_তুমি ❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-৩১

রাইয়্যানের মাথায় ব্যান্ডেজ, হাতে ব্যান্ডেজ, জুনায়েদ ভাইয়ের মাথায় ব্যান্ডেজ পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। অনেক জায়গায় খোঁজ খবর দেওয়া হয় কিন্তু কোন ভাবে আমরা ভাইয়া রাইয়্যানের খোঁজ পায় না ।
দুটোর সময় সবাই চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে ভাবতে থাকি। কোথায় গিয়েছে রাইয়্যান, ভাইয়া কিভাবে পাব এসব চিন্তা করা হচ্ছিল। এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে চাচি গিয়ে দরজা খুলে চিৎকার করে ওঠে তার চিৎকার শুনে বোঝা যায় রাইয়্যানরা চলে এসেছে ।
সে বলে,,,
— রাইয়্যান জুনায়েদ তোমরা চলে এসেছে কোথায় গেছিলে তোমরা। সবাই তোমাদের কি হয়েছে ভেবে চিন্তা শেষ। আর তোমাদের হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ করা কেন।
চাচির কথা শুনে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যায়।
আমি দৌড়ে দরজার কাছে চলে আসি। এ যে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় অবস্থা দেখে কিভাবে হলো এসব ওদের এই অবস্থা কেন কোথায় গিয়েছিল কিভাবে এসব হলো?
আমি রাইয়্যানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,,,
—কি হয়েছে আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন আপনি ব্যথা কিভাবে প্লেন আপনি কি এক্সিডেন্ট করেছিলেন?
—আরু ব্যস্ত হয় না ভেতরে চলো আমার মাথা ব্যথা করছে।
—রাইয়্যান মাথা ব্যাথা করছে বলাতে আরু আর কিছু না বলে ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে সোফার বসায়।
জেসমিনা আপু ও দৌড়ে আসে ভাইয়া কে দেখে জড়িয়ে ধরে নানা রকম প্রশ্ন শুরু করে দেয়। আপু তো কেঁদে কেঁদে একাকার সকাল থেকেই কান্না করছে।

—রাইয়্যান তুমি যাও এখন রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও একটি সুস্থ হয়ে তারপরে সবকিছু বলো।
সোহায় থেকে ধরে রাইয়্যানকে রুমে নিয়ে আসি।
রুমে আসার সাথে সাথে রাইয়্যান বলে ওঠে,
—আরু এখন আমাকে কোনো প্রশ্ন করো না আমি একটু ঘুমিয়ে নেই ওঠে তোমাদের সবাইকে সবটা জানাবো।
—আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানাই।
—-একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে!
আরুশি তাড়াতাড়ি উঠে রাইয়্যানের মাথায় কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
—থ্যাংকু জান পাখি!
বিনিময় একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয় আমি!
মাথায় আকাশ সমান চিন্তা নিয়ে রুমে বসে আছি ।
কি অবস্থা হয়েছে ওনাদের। আরুশি চিৎকার করে কাঁদি নি কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়েছে ।লোকটাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে একটু সময় এ মনে হয়েছিল আমি মনে হয় ওনাকে হারিয়ে ফেলেছি।
আমারে কি হলো জানিনা আমি ওনার ব্যান্ডেজ হাতটা ধরে সেখানে আচমকা চুমু খেয়ে বসলাম। হ্যাঁ কাজটা করে আমার খারাপ লাগছে না ভালো লাগছে।
কাল থেকে আজকে সারাটা দিন আমি যতটা চিন্তা করেছি তার জন্য কষ্ট হয়েছে এমনটা আগে কখনো হয়নি আমার সাথে।
—ওই ভাবে বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা।
রাইয়্যানের ডাকে ঘুম থেকে জেগে ওঠে,
তাকিয়ে দেখি আমি সেই ভাবে বসে খাটে দেয়ালে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে আছে হাত ধরো ওনার।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
—ঘুম হল মাথা ব্যথা করবে তো এখানে ঘুমিয়েছো কেন? খারাপ লাগলো চলে যেতে।
—আমার খারাপ লাগছে না। আর এখানে বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমার নিজেই মনে নাই।
—আচ্ছা!
—–আপনারা এখন কেমন লাগছে না।
—ভাল আমি গোসল করে আসি।
বলেই রাইয়্যান উঠে বাথরুমে ঢুকে,

,,

—এবার বল তোমাদের এই অবস্থা কেন কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?(আঙ্কেল)
—সে অনেক কথা আব্বু;
—বলো,
—-কাল আমি আর জুনায়েদ আরুর মামির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
—হোয়াট তোমরা আরুশির মামির খোঁজ কোথায় পেলে ?
—দুইদিন আগে আরুশির মামি আমাকে ফোন দিয়েছিল। হঠাৎ আমার ফোন একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে‌। আর আমি অচেনা নাম্বার হলেই রিসিভ খুব কম করি অনেক ফ্যানেরা এমন অচেনা নাম্বার দিয়ে আমার পার্সোনাল নাম্বার জোগাড় করে কল করে ডিস্টার্ব করে। এজন্য আমি নাম্বারটা রিসিভ করি না।
পরপর অনেকবার কল আসলো আমি রিসিভ করলাম না। ওই নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে যা দেখে আমি অবাক হয়ে যায় কারণ মেসেজটা লেখা ছিল।
” আমি মেশমি আরুষির মামী প্লিজ কলটা একবার রিসিভ করো তোমার সাথে আমার খুব জরুরি কিছু কথা আছে।”
এটা দেখে তো আমি অবাকের চরম সীমায় পৌছে যায়। উনাদের কিছুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর সেটা নিয়ে আরু অনেক আপসেট আছে আর হঠাৎই দুদিন আগে এমন একটা মেসেজ পেয়ে আমি অবাক হই ।কোথায় গেছেন আবার বলছেন আমার সাথে জরুরী কথা বলবে। আমি সঙ্গে সঙ্গে কোথায় আছে জানার জন্য ফোন দেই।

—হ্যালো আসসালামু আলাইকুম মামি? কেমন আছেন আপনারা আর আপনারা সবাই কোথায় আছেন? আরু তো আপনাদের জন্য খুবই চিন্তিত আছেন?
—জানি বাবা কিন্তু আমার কিছু করার নাই! আমাকে তো আরুশির মামা আটকে রেখেছে।
—মানে কি বলছেন আপনি আটকে রেখেছে মানে কি?
—সে অনেক কথা সেসব বলার জন্যই তো তোমাকে ফোন দিয়েছি! আরুশিকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তুও খুব ইমোশনাল মেয়ে ওকে বলার থেকে তোমাকে বলাটা থআমার মনে হলো ভালো হবে।
—আচ্ছা বলেন!
— বাবা শোনো আরুশির মামা আরুশির বাবাকে মারার চেষ্টা করেছে আরে যে দুই বছর আমাদের এখানে এসেছিল ওর বাবা কোথায় ছিল সবাই ভেবেছে ওর বাবা হয়তো নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে বউ মারা গেছে বলে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।আরুশির মাকে আরুশির বাবা সম্পত্তির জন্য মেরে ফেলেছে আরুশির মা আমাদের এখান থেকে সম্প্রতি পেতো তার ভাগ ছিল বেশি । আমার শ্বশুরের আদরের মেয়ে ছিল নিরু তাই তার বাবা তাকে বেশি সম্পত্তি দিয়েছিল আর আরুশির মামাকে দিয়েছিল কম। এজন্যই সম্পত্তির জন্য তার বোনকে মেরে ফেলেছে আর সেই কথাটা আরুশির বাবা জানার পর আরুশির মামাকে পুলিশের হাতে দিতে চায়। আরুশির মামা সেটা কোনভাবেই জেনে যায় যে আরুশির বাবা জেনে গিয়েছে যে সে তার বোনকে মেরেছে এটা জানার পর সে নিজের জীবন বাঁচাতে আরুশির বাবাকে কিডনাপ করে আটকে রাখে আর আরুশিকে নিজের কাছে রেখে বলে তোর মার জন্য পাগল হয়ে তোর বাবা তোকে ছেড়ে চলে গেছে।কিন্তু হঠাৎই আরুশির বাবা সেই গুদাম ঘর থেকে পালিয়ে আসে এটা জানার পর আরুশির মামার মাথায় হাত সে কি করবে।
আরুশির বাবা পুলিশের কাছে গিয়েছে তার বিরুদ্ধে কিছু বলে তাহলে তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে এ জন্য সে পাগল হয়ে চারপাশে আরুশির বাবাকে খুঁজতে লাগে। আর আরুশির বাবাকে পেয়েও যায় রাস্তায় পেয়ে তাকে নিজেই টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে আবার এক্সিডেন্ট করায়। সে শান্তির নিশ্বাস ফেলে কিছুদিন পর আবার তুমি আসো আরুশিকে বাসা থেকে নিয়ে যাও তারপর আবার তুমি তাকে বিশ্বাস করে আরুশির বাবার কথাটা বলে দাও। এটা জানার পর এসে আবার তাকে মারতে চায়। কিন্তু হসপিটালে এসে জানতে পারে আরুশি বাবার অবস্থা খুব খারাপ বাঁচবে কি মরবে ঠিকানা নেই। এজন্য সে হাত-পা গুটিয়ে নেয় আধমরা হয়ে বেঁচে থাক আর মারার ঝামেলা করতে যাব না।
কিন্তু তার সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে আরুষির বাবা আবার স্বাস্থ্য ভালোর দিকে ফিরে আসে সে নিজের লোক লাগে জানতে পারে যে আরুশির বাবা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে‌ এটা জানার পরে সে আবার তাকে মারতে উদ্যম হয় কয়দিন রাতে তাকে মারতে যায় কিন্তু কেন জানি আবার সে ফিরে আসে হয়তো মারতে পারে না সারাদিন লাগছে এটা ভেবে চলে যে কিভাবে মারবে এর মাঝে আমি ওসব টা জেনে যায়। আমি জানার পথ বিশ্বাস করতে পারছিনা আমার স্বামী এমন একজন একজন খুনিমানুষ। আমি তার বিরুদ্ধে সবকিছু আরুশিকে জানাতে চাই কিন্তু সে আমার কাছ থেকে ফোন কেড়ে ভেঙ্গে ফেলে আমাকে ঘরে আটকে রাখি আরে ও হুমকি দেয় যদি আমি তবুও বলি তাহলে আমার ছেলে মেয়ের ক্ষতি করবে সেটা শুনে সে আমি তো আরো অবাক হয়েছি নিজের ছেলে মেয়ের ক্ষতি করতে পারবেন একথাটা মুখে আনে কিভাবে ? তবুও ভাবি বলবো কিন্তু বলার সাহস পায় না বাসা থেকে পালিয়ে তোমাদের বাসার উদ্দেশে যেতে লাগলাম একদিন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাস্তা দেখা আবার তার সাথে তখন আমি বুঝতে পারি সে আমাকে মনে হয় ফলো করার জন্য লোক রেখেছি। বাসায় আমাকে খুব মারধর করে তারপর আমাদের সবাইকে নিয়ে সে চলে আসে সিলেটে এখানে এসে আমাকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখে ছেলেমেয়েরা এসব কিছুই বুঝতে পারেনা। মেয়ে টা আছে একটু চালাক দুদিন আগেই বুঝে ফেলেছে তার বাবা ব্যাপারটাযে তার বাবা কতটা খারাপ হয়নি জানা বয়সে আমাকে সাহায্য করে আর বাবার বিরুদ্ধে যায় এজন্য সে আমার মেয়েকে মারধর করে ঘরে বন্দি করে রেখেছে কতটা খারাপ ভাবো।
আরুশির বাবার যে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে এটাও আরুশির মামার জন্যই হয়েছে সেই তাকে ওই ড্রাগস দিতো।
সে ভেবেছিল আরুশির বাবা মরে যাবে কিন্তু আরমান ভাই সুস্থ হয়ে আসে। আর তুমিও মনে হয় কিছু একটা বুঝে ফেলো যার জন্য গার্ড রাখো।
যার জন্য সে আর যাইতে পারে না এ জন্য সে সিলেট গা ডাকা দিয়ে আছে।
তুমি তাকে শাস্তি দাও বাবা আমি তোমাকে ঠিকানা মেসেজ করে পাঠাচ্ছি।
আরেক টা কথা আজকে এসোনা আজকে যে বাসায় নাই হয়তো কোন কাজে গেছে দুই দিন আসবে না পরশুদিন আইসো পুলিশ নিয়ে।
আর আমি যে তোমাকে এত কিছু বললাম এই সবকিছু এখনই কাউকে জানাইও না আরুশিকেও না।

সেদিন অনেকক্ষণ আমার কথা হয় আমি তো এসব জানার পরে থ মেরে বসে থাকি এত কিছু হয়েছে । আমরা তো তাকে চিনতেই পারি নাই কত ভালো ভেবেছিলাম। আরুশি তো তাকে খুব বিশ্বাস করে খুব ভালোবাসে । দুইদিন আমার সাথে তার যোগাযোগ হয় না বলে আমার মনে সন্দেহ হয়। তাই জুনায়েদ কে জানিয়ে আমি আর ও পরের দিন সে এড্রেসে ছদ্মবেশে যায়। ঘটনা সত্যি তাই ওনার কথায় কাল পুলিশকে নিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হই।
কাল রাতে,
ওইখানে যেয়ে দেখি আরুশির মামার সাথে আরও কিছু গুন্ডাপান্ডা আছে । আরুশির মামা নিজের বউয়ের মাথায় বন্ধুক ধরে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো তিনি কোন ভাবে জেনে গেছি উনী‌ আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ সামনে এগোতে পারছে না মামির মাথায় বন্দুক।
কিভাবে কি করে বুঝতে পারছি না সবাই তো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ আমার পায়ে কিছু বাজে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা ইটের টুকরো আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে এতে টুকরোটা আড়ালে উল্টিয়ে মামার আমার হাতে ছুড়ে মারি সাথে সাথে বন্ধুর নিচে পড়ে যায় আমি মামীকে ঠেকে উঠি আমাদের এখানে আসার জন্য। মনি তোর আসতে চান মামা ওনার হাত ধরে ফেললেকিন্তু এখন আর পুলিশ থেমে নেই কারণ এখন তার বন্ধুক হাতে নেয়। পুলিশ গিয়ে সব কটাকে অ্যারেস্ট করে মামা তবুও মামীর হাত ছাড়ে না পুলিশ তাকে ধরে কেন হাত ছাড়িয়ে নেয়।
তারপর আমরা সবাই ঢাকায় চলে আসি রাতে আর আসা হয়না ভোর হয়েছে। প্লেনে করে যাওয়া হয়েছে এই জন্য দু ঘন্টা লাগে যাইতে আসার সময় প্লেনে করে আসি।
একদমই কথাগুলো বলে রাইয়্যান থামল পরিবেশ থমথমে সবাই অবাক হয়ে আছে বিশেষ করে আরুষি সে তো পাথর হয়ে বসে আছে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। এসব কি শুনলো কানের ঠিক শুনলাম নাকি ভুল মামা মাকে মেরেছে। সামান্য সম্পত্তির জন্য মামা মা কে মারতে পারল,
মামা না কত ভালবাসতো আমাকে আর সেই এসব করছে সে আমার মাকে আমার বাবাকে মারতে চেয়েছে। এতক্ষণ পাথর হয়ে থাকলেও হঠাৎ জোরে আর্তনাদ করে চিত্কার করে কেঁদে উঠলো কেউ কিছু বলছে না,,
কি বা বলার আছে একজন বিশ্বস্ত মানুষকে এভাবে যে ধোকা দেবে কে ভেবেছে। আরুশি ওর মামাকে খুব ভালবাসো বিশ্বাস করে তার থেকেও এমনটা মেনে নিতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক।

দুইদিন পর
আজকে আরুশির গায়ে হলুদ পুরো বাসা আজ জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে।
আত্মীয়-স্বজনের ভরপুর মামি কে আনতে গিয়েছিল রাইয়্যান সকালে গিয়ে নিয়ে এসেছে লজ্জায় আসতে পারেনি আগে।
সোনালীও সকালে চলে এসেছে ।তানিশা আপু আসেনি তারা নাকি কালকে আসবে।
পালার থেকে লোক এসেছে তার আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে আমার পাশে রুমি আপু আর সোনালী জেসমিনা আপু আছে শেষ আছে আর রুমি আপু আর সোনালী আমার সাহস দিচ্ছে বলে দিচ্ছে কিভাবে সাজাবে।এটা কিন্তু তাদের পছন্দ না রাইয়্যান তাদের বলে দিয়েছে কিভাবে আর পালার লোকদের বলছে।

সাজানো শেষে সোনালী আর আপু সাজতে বসে যায়। আমি বসে আছি আর ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে একটার পর একটা ছবি তুলতে হচ্ছে তারপরে সেটা রাইয়্যানকে সেন্ড করতে হচ্ছে কারন সে দেখছে ভালো হয়েছে কিনা ঠিক আছে কিনা কিছু ভুল হয়েছে কিনা।
—আরুশি চল এবার নিচে যায় আমাদের সবার সাজ কমপ্লিট।আজকে তোকে যা লাগছে না আরুশি ভাইয়া তো হা করে তাকিয়ে থাকবে আর কোন দিকে ফিরবে না।
—কি যে বলিস না তুই !
—যা সত্যি তাই বললাম এতো লজ্জা পাস কেন দেখিস তুই ভাইয়া কি ভাবে তাকিয়ে থাকে!
ওদের সাথে নিজের যাবার জন্য দরজা দিয়ে বের হব এমন সময় এসে সামনে দাঁড়ায় রাইয়্যান।
—বাবা আপনি দেখি তোর সয়না বউকে দেখার জন্য।
—সয়না তো শালীকা জি মনে চায় সবসময় বউকে সামনে বসে রেখে হা করে তাকিয়ে থেকে।কিন্তু তোমাদের জন্য তো আমি সেটাও পাচ্ছিনা সারাদিন একবার আমার বউটাকে দেখতে পারলাম না!
—দেখছোস আরুশি কি বলে ভাইয়া। আমরা নাকি তাকে তাকে দেখতে দিচ্ছেনা।
—এবার আমি বললাম; আপনি কি করছেন?
-+-কি আর করব বউকে দেখতে এলাম তুমি তো তোমার বরকে কে দেখতে চাও না কি রোমান্টিক বউ আমার।
আমি ওনার দিকে রেগে তাকালাম,,,
—এইযে শালিকা আপু আপনারা নিচে যান আমি আমার বউকে নিয়ে আসবো নি?
—বাব্বাহ নিজেই নিজের বউকে নিয়ে যাবেন আচ্ছা নিয়ে আইসেন দুলাভাই আমরা জাই গা।

রুমি আপু আর জেসমিন আপু রাইয়্যানকে দেখেই চলে গিয়েছে। সোনালী একাই ছিল এখন সোনালীও বকবক করতে করতে চলে গেল।
একটু দূরে গিয়ে আবার ফিরে থেকে আমাকে চোখ মারা।
এবার আমি রাইয়্যানের দিকে রেগে তাকিয়ে বললাম,, —-এটা কি হলো?
—যা হলো তারা দেখতে পেলে?
—এমনটা করলেন কেন মানেন এর জন্য পরে আমাকে ও কি কে পচাবে খ্যেপাবে
—কে আমার ব‌উকে পচাবে খেপাবে শুনি।
—বলে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে?
—কি হচ্ছে এসব ছাড়োন!
—উফ নড়াচড়া করো নাতো একটু ভালো করে তোমাকে দেখতে দাও সারাটা দিন আমার জান টাকে দেখি নি ভালো করে।
ধাক্কা দিয়ে ওনাকে ছাড়িয়ে হাটা দিলাম। ওনিও দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে নিচে নামতে লাগলো,
চলবে ❤️
#আমার_তুমি ❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব-৩২

রাইয়্যান দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে হাটতে লাগল,,,
আমি তীক্ষ্ণ চোখে ওর দিকে তাকালাম তার সেদিকে হেলদোল নেই সে নিজের মত হেটে যাচ্ছে সিঁড়ির কাছে আসতে আমার লজ্জা লাগলো সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এভাবে আমার হাত ধরে আছে রাইয়্যান নামতে খুব লজ্জা লাগছে মাথা নিচু করে আছি।
ফিসফিসিয়ে রাইয়্যানকে বললাম,,,

—হাতটা ছাড়ুন না আমার খুব লজ্জা লাগছে এভাবে নামতে।

—হোয়াট?

—সত্যি সবাইকে ভাবে তাকিয়ে আছে দেখান?

—তাকিয়ে থাকবে না বলছো!আমাদের জন্য ই তো
সবাই বসে আছি আমাদের দিকে তাকাবে না।

—তবুও;

—নামতো চুপচাপ লজ্জা কিসের আমি যে তোমার বর।
রাইয়্যান হাত ছারল না ওভাবে সিঁড়ি শেষ হয়ে গেল।

আমি মাথা আর উঁচু করতে পারলাম না আর।আশেপাশে শুধু ক্যামেরার শব্দ হচ্ছে ছবি তোলা হচ্ছে সেটা টের পেয়েছি।আমি একটু পরপর রাইয়্যানের দিকে রাখি দৃষ্টি অগ্নি ভাবে।
কিন্তু কিছুই দেখতে ইচ্ছে করছে না লজ্জায় আমি উপরের দিকে তাকাতে পারছিনা নিচে দিকে তাকিয়ে আছি স্টেজে রাইয়্যানের সাথেই আসলাম । হলুদের অনুষ্ঠানের একসাথে হবে ।
বসার পরও এখনো হাত ছাড়ে নাই তাই আমি জামটা মেরে হাত ছারিয়ে নিলাম। একটু পর আমার পাশে এসে দাঁড়াল সোনালী,,,রাইয়্যানকে কিছু কড়া কথা শোনাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা হলোনা সোনালী এসে আমার পাশে নিয়ে কানে কানে বলতে লাগল,,,

—বাব্বাহ হাউ রোমান্টিক তোরা দুজন কিভাবে আসলি খুব সুন্দর লাগছে একেবারে হিরো হিরোইন। তোদের যা মানিয়েছে না একদম পারফেক্ট কাপেল আমারতো চোখই শর্তা ছিল না। ভাইয়া কিভাবে তোর হাত ধরে আসল একটুর জন্য ছাড়লো না। কত ভালোবাসি তোকে। এমন একজন যদি আমি পেতাম।
বলে মুখ টা কালো করে ফেলল,,,,
আমি এখন রেগে আছি এসবকিছুই শুনতে আমার ভালো লাগছে না।

—তুই যাবি এখান থেকে নাকি এসব কথা বন্ধ করবি।
সোনালী বুঝেছে আমি রেগে আছি তাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে চলে গেল গটগট করে !

—আরু জান একটি সুন্দর করে তাকাও ছবিগুলো না হলে একটু ভালো আসবেনা।

—আরোশী কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা হাসবে না কাঁদবে ও রেগে আছে তার মধ্যে আবার ছবি তোলা সামনে তাকিয়ে দেখে ওরকম দশ জন মানুষের ওদের ছবি তুলছো। রাইয়্যান হেসে হেসে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

একটু পরে সব ক্যামেরাম্যানরা চলে যায় খেতে যাবে মনে হয় । আশেপাশে কেউ নাই স্টেজে আমি আর রাইয়্যান এখন বসে আছি । রাইয়্যানের সাথে কথা বলছি না একটু পর পর একটা করে কথা বলছে নিজেই কিন্তু আমি প্রতি উত্তরে কিছুই বলছি না।
আমি দূরে আঙ্কেল আর বাবার দিকে তাকিয়ে আছি তারা কি বিষয় যেন কথা বলছে আর হাসছে।

—আরু দেখো,
সবার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম হঠাৎ রাইয়্যানের ডাক শুনে তার দিকে ফিরে তাকায় সাথে সাথে এমন একটা কান্ড করে বসে আমি গালে হাত দিয়ে মুখ হা করে ফেলেছি । চারপাশে তাকিয়ে দেখি না তেমন কেউ আমাদের লক্ষ্য করছে না । সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।
রাইয়্যানের মুখে দুষ্টু হাসি আমি তাকাতে চোখ টিপে দিল।

—আসলে আপনি একটা অসভ্য লোক!

—কি অসভ্যতা করেছে আমি যে এই উপাধিটা দিলে এখনো তো কিছু করলাম‌ই না।সামান্য একটা চুমুর জন্য তুমি আমাকে অসভ্য বানিয়ে দিলে। বাসর রাতে তো আরো অনেক জায়গায় ই,,,,
—-আরুশি কানে হাত দিয়ে বলে,,, চুপচুপচুপ আর একটা কথা বলবেন না আপনি।

,

সন্ধ্যার পর গায়ে হলুদ দেওয়া শুরু হয়।
সবাই একটু একটু করে দিলেও জেসমিন আর সোনালীর হলুদ দিতে এসে একদম আরুশিকে ভূত বানিয়ে ফেলে।রাইয়্যান কে কম‌ই দিয়েছে কিন্তু আরুশির মুখের একটু পরিমাণ জায়গা নেই আরুশি দু গালে একটু জায়গা নাই। রাইয়্যান তো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে পাশে বসে। এমন অবস্থা হইছে আরুশি কাঁদো কাঁদো হয়ে সোনালী বলে,,

— একটু কম করে দে!

—আজকে তোর মাফ নাই দোস্ত আমার খুব ইচ্ছে ছিল আমি হলুদ দিয়ে তোকে ভূত বানাবো।
আরুশির মাথা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে ও হলুদ নিয়ে সোনালীর
মুখে লাগিয়ে দেয় সোনালী হলুদ আর আরুশি মুখে না দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
সোনালী গিয়ে জেসমিন আপা লাগিয়ে দেয়।জেসমিন আপু রুমি আপু এভাবে সবাই হলুদ নিয়ে ছোড়াছুড়ি করতে থাকে।
সবাই হলুদ নিয়ে ছোড়াছুড়ি করছে।
রাইয়্যানের মুখে দিকে তাকাই তার মুখে হলুদ নেই বললেই চলে। খুব একটা হলুদ নাই ওকে সবাই কমই দিয়েছে আমি শুধু একা ভূত হইছে।
আমি একা কেন থাকবো মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে রাইয়্যানের মুখেও হলুদ লাগানোর,,,
আরুশি শয়তানি হাসি দিয়ে রাইয়্যানের মুখের দিকে তাকায় আস্তে করে বাটি থেকে নিজের হাতের মুঠোয় হলুদ নেই।
রাইয়্যান ফোনে কী যেন করছিলো আরুশি তাকাতে রাইয়্যান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সেদিকে তাকাই।
আরু এমন ভাবে তাকিয়ে আছে কেন ও বুঝতে পারছি না। ব্রু নারিয়ে জিজ্ঞেস করে কি আরুশি ভাবে এতক্ষণ আমাকে দেখে হাসা হচ্ছিল না এবার তোমাকে কেউও ভূত বানাবো রাইয়্যান বাবু তারপর দৌড়ে চলে যাবো কেউ আমাদের দিকে এখন খেয়াল করছে না। পালাতে সুবিধাই হবে শাড়ির কুচি ধরে আরুশি রাইয়্যানে মুখের কাছে চলে যায় একদম দুজনের নিঃশ্বাস দুজনের মুখে বাড়ি খাচ্ছে। রাইয়্যান তো হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ও বুঝতে পারছে না আরুশি কি করছে?
হঠাৎই বুঝে গেল মুখের ঠান্ডা কিছু দেওয়া হয়েছে । এবার রাইয়্যান বুঝে গেল আরুশির এত কাছে কারণ সাথে সাথে চোখ বন্ধ ছিল চোখ খুলে ফেলল
আরুশির উপরে যাওয়ার জন্য হাটছে দৌড়াতে পারছে না শাড়ি পড়েছে যা সিঁড়ি দিয়ে উঠছে,,,
রাইয়্যান কিছুনা ব্যবহার পিছু হটে।

আরুশি তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করবে এমন সময় দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে রাইয়্যান ভেতরে ঢুকে।
আরুশির আত্মা কেঁপে ওঠে এখন কি করবে আল্লাহ এই লোকটা চলে এলো রাইয়্যান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে কি করবে আরু আবার দরজার দিকে যেতে চাই কিন্তু পারে না। রাইয়্যান হাত ধরে টেনে দেয়ালে চেপে ধরে।
আরুশি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। রাইয়্যানের গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। আমি চোখ টিপি টিপি করে একটু তাকিয়ে দেখি ও আল্লাহ এ আমি কি দেখছি হলুদ দিয়ে কি ফেলেছি । আমি ইনোসেন্ট মুখ তাকিয়ে আছি ।
—আই আম সরি আর কোন দিন এমন করবো না ছেড়ে দিন প্লিজ।
—নো এতো সহজে ছাড়া যাবে না । এর জন্য তোমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
শাস্তির কথা শুনেই আরুর আত্মা কেঁপে উঠলো কি শাস্তি দেবে।
—আপনি আমাকে শাস্তি দিবেন?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,,,
—ইয়েস,
— সত্যি,
—তোমার কি মনে হয় আমি মজা করছি।
— আপনি আমাকে মারতে পারবেন।
—পারবো না কেন?
আরুশি সরু চোখে তাকিয়ে আছে রাইয়্যানের দিকে।
আচমকা রাইয়্যান আরুশির কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় । আরুশি চোখ বড় বড় হয়ে যায় কি হচ্ছে এসব,,
—কি করছেন এসব?
—শাস্তি দিচ্ছি!
আরুশি কিছু বলবে তার আগে রাইয়্যান নিজের গালে ঘষতে লাগে আরুশির গালে।
আরুশি বিষ্ময়ে চোখগুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়।
বুকের ভেতর ধুকবুকানি ফেলেই চলেছে।
রাইয়্যানের এমন স্পর্শ কেঁপে কেঁপে উঠছি আমি।
রাইয়্যানকে সারাতেও পারছিনা স্থির ও থাকতে পারছিনা‌। ধাক্কা দিয়ে রাইয়্যানকে সরানোর চেষ্টা করছি পারছি না!
—এবার সমান সমান।
বলেই বেরিয়ে যায় দরজা খুলে আমি হাঁ হয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,
কি থেকে কি হলো সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
চলবে ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here