আমার তুমি শেষ পর্ব

#আমার_তুমি ❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#শেষ পর্ব ❤️

আব্বুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
চোখ বন্ধ করে আছি চোখ দিয়ে ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। খুব মিস করছি আব্বুর কথা গুলো চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আব্বু আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে । হয়তো চোখের পানি দেখতে পেয়েছে। আমি তাকাতেই আব্বু হাত উঠিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কাঁদছি কেনো?

সাথে সাথে উঠে আব্বুকে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম।
—আব্বু তুমি কথা বলো না একটু প্লিজ কথা বলোনা?

—আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
অনেক সময় আব্বুর সাথে কাটি য়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।

—কিরে তোর চোখ ফোলা ফোলা লাগছে কেন?

—আমি কিছু না বলে বাথরুমে গিয়ে চোখে পানি দিয়ে আসলাম। সোনালী আমার দিকে তাকিয়ে রইল হয়তো ভাবছে আমি এভাবে কথা না বলে চলে গেলাম কেন,,,
বেরিয়ে আসার সাথে সাথে হাত ধরে বলল,,
— তুই কান্না করছি তাই না?

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি বুঝলা কিভাবে কান্না করছি?
—ভাবছিস আমি বুঝলাম কিভাবে?আমি কেন যে দেখলে বুঝবে তুই কান্না করছিস ফর্সা মুখ লাল টকটক হয়ে আছে চোখদুটো দেখ ফুলে গেছে।

সকাল থেকে ভেতর থেকে চাপা কষ্ট হচ্ছে।মাকে খুব মিস করছি আজকে আমার বিয়ে মা থাকলে কত খুশি হত। সব সময় বলতো আমার মেয়েকে বিয়ে তো আমি নিজের হাতে সাজাবো। বাবাও কত খুশি থাকতো কিন্তু এখন তো সেই খুশি বাবার মধ্যে নেই।

সোনালী আমাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেও মুখ থেকে কিছু বের করতে পারল না। আমি বললাম কাঁদিনি রাতে ঘুম কম হয়েছে এজন্য হয়তো।

একটু পর মামী এল রুমে হাতে খাবারের প্লেট।
এসে আমার পাশে বসে আমার মুখে দিতে লাগল,,,
আমিতো অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে মামীর দিকে তাকিয়ে আছে ‌। মামী হয়তো বুঝতে পারছি আমাকে আমি অনেক অবাক হয়েছি।
মামী হাসিমুখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,

—কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন বেশি অবাক হয়েছি তাই না?
আমি কিছু বলছি না ওইভাবে তাকিয়ে আছি মামী আমার সামনে খাবার ধরে ছিল সেটা নিচে রেখে বলল,,,
—তার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছি । কখনো ভালোবাসি নি কিন্তু যখন জানলাম তোর মামা তোদের সাথে এত খারাপ কিছু করেছে জানি না ভেতর থেকে আমার একটা অন্যরকম টান অনুভব করলাম। তখন পদে পদে তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য নিজে অনুতপ্ত হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করিস না মা আমি অনেক ভুল করেছি।

একটু আগেই আরসি বাবার কাছে গিয়ে কান্না করছে আমার কথা খুব মনে পড়ছে। মামির এমন আদর মাখা কথা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা মামীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
মামি পরম যত্নে খাওয়াবে দিল আজকে মামিকে মায়ের মত লাগছে মায়ের মত ভালবেসে খাইয়ে দিল।

,,

স্টেজে বসে আছি একটু আগেই বিয়ে পড়ানো হয়েছে।অবাক হওয়ার মত সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছিল হয়তো একটা কারণের জন্য। বিয়ে পড়ানোর সময় সব মেয়েরা প্রচুর কান্না করে কিন্তু আমার ক্ষেত্রে উল্টা আমি একটু কান্না করি নাই। শুধু যখন কবুল বলবো তখন আমার চোখে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছিল। এছাড়া আমি কান্নাই করি নাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বলেছিলাম।

হয়তো আমার কোথাও কাউকে ছেড়ে যাওয়ার নাই এজন্য আমি কান্না করি নাই।সবাই বাপের বাড়িতে কি কষ্ট সবাইকে ছেড়ে আসবে শ্বশুর বাড়ি থাকবি এইজন্য কান্না করে কিন্তু আমার তো আর বাবার বাড়ি নাই এখন শ্বশুরবাড়ী আমি অনেকদিন ধরে আছি এখানে আমার বাবা আমার সাথে থাকবে কষ্ট কিসের।

ইস্টেজে বসে আছি পাশে রাইয়্যান ও আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে বিয়ে পড়ানোর পর থেকে এভাবেই তাকিয়ে আছি।
আমি সবার নাচ গান দেখছিলাম অবশ্যই বিরক্ত হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।

—কি হয়েছে আপনি সেই কখন থেকে দেখছি এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ব্যাপারটা কি??

—আরু তুমি তাই একটু কান্না করলে না।আমি জাস্ট এমনটা নিতে পারতাছি না । আমার কতো আশা ছিল জানো আমার বউ বিয়ের পরে কান্না করতে করতে ভেঙে পড়ড়ে আমি তারে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো। সান্তনা দিব।আমি আফসোস অবাক সবকিছু নিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি তুমি কিভাবে না কান্না করে বিয়েটা সেরে ফেললে।

আমি রাগী চোখের ওনার দিকে তাকালাম,,,
—সব বর্ডার চাই যাতে তার বউ কান্না না করুক আর আপনি চাইতাছেন আমি যত কান্না করি! আর কান্না করি নাই দেখে আপনি আফসোস করতাছেন?

বড় বড় চোখ করে রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে,,
—একটু কাঁদো না সোনা তোমার কান্না মুখটা আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করতেছে?

—অসম্ভব আমি কেনো কাঁদবো আমার তো কোন দুঃখ নেই? আপনাদের এতো আফসোস আপনি বসে বসে আমার হয়ে কাঁদেন ।

—আমি কাঁদবো আমি কেনো কাঁদবো আমি কি মেয়ে নাকি ? কোন দিন দেখেছো কোন ছেলে বিয়েতে কেঁদেছে?

—দেখিনি তাইতো আপনাকে কেদে দেখাতে বলছি।

–আরু তুমি আবার আমার সাথে ঝগড়া করছো । আমি কিন্তু তোমার হাজবেন্ড। হাজবেন্ডের সাথে কেউ এই ভাবে ঝগড়া করে কথা বলে। না সুন্দর করে কথা বলতে হয় ভালোবাসা দিয়ে?

—বয়েই গেছে আমার আপনাকে ভালোবাসা দিয়ে কথা বলার।

,,,

বুকের ভেতর টিপটিপ করছে যেন এই হার্টবিট টা বের হয়ে যাবে। অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর ফিলিংস হচ্ছে যা আগে কখনো হয়নি। হ্যাঁ রাইয়্যানের সাথে আজকেএক সাথে থাকতে হবে ভাবতে আমার গা শিউরে উঠছে।
সোনালী, রুমি আপু জেসমিন আপু আমাকে রাইয়্যানের রুমে এনে বসিয়ে দিয়ে যায়।

তারপর থেকে এমন হচ্ছে।গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে এক হাত খামচে ধরে আছি। মামী এসে নানা কথা বলে গেছে রাইয়্যান আসলে নাকি আগে সালাম করতে হবে দুধ দিয়ে গেছে এটা নাকি খাওয়াতে হবে। আমার এদিকে খেয়াল নেই ।

ঘোমটা টেনে বসে আছি।
বাইরে থেকে হাসির আওয়াজ হচ্ছে রাইয়্যান ওর ফ্রেন্ডের সাথে হাসি তামাশা করছে মনে হয়।
দরজা বাইরে থেকে লাগবে এবার দরজায় মনে হয় সোনালী আছে কি জানো চিল্লাচিল্লি করছে জানিনা।
তারমানে এখন রাইয়্যানের রুমে আসবে এটা ভাবতেই তো আমি কি করবো না আমি এখানে থাকতে পারবো না মনে হচ্ছে।এত লজ্জা ভয় কেন করছে আমার আগে তো আমি কত বার ওর সামনে গিয়েছি। সারাদিন আমি একটু লজ্জা পাই নাই তাহলে এখন কেন এত লজ্জা করছে।আজকে থেকে এই রুমটা আমার এসব
ভাবতে ও একটা ভাললাগা কাজ করছে বিয়ের বন্ধনে সারা জীবনের জন্য আমরা একসাথে গেথে গেছে। ভালোবাসার মানুষটাকে আজকে আমি নিজের করে পেয়েছি। সেখানে কেন এত লজ্জা ভয় কেন হচ্ছে সেটাই আমি বুঝতে পারছিনা ।

—বউ এমন ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছো কেন?

রাইয়্যানের কণ্ঠ কানে আসতে আমার সারা শরীরে লোম খাড়া হয়ে গেল। আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়ে এই গেলাম আসলো কখন আমি পা গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে মাথানিচু করে বসলাম।

কোন ভাবে মাথা উঁচু করতে পারছি না। সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে,,
থর থর করে কাঁপছে মনে হচ্ছে আমি জ্ঞান হারাবো ।

রাইয়্যানের হাতের স্পর্শ আমার মাথায় পরতে আমি ছিটকে দূরে সরে বসলাম।
রাইয়্যানএগিয়ে এসে আরুশির মাথায় ঘোমটা খুলছিল এমন সময় আরুশি ওকে ধাক্কা দিয়ে আরও পেছনে একবারে খাটের কোনায় গিয়ে পড়ে।রাইয়্যান অবাক হয়ে ওর ‌ দিকে তাকিয়ে আছে।

আরুশি হাতে দিকে তাকিয়ে দেখে এই গাধার না হাত খামচে ধরে আছে হাতগুলো থর থর করে কাঁপছে।

রাইয়্যান ভয় পেয়ে যায় আর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে নি আবার।

এগিয়ে এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করে,,

—আরু আর ইউ ওকে। তুমি ঠিক আছো তো। তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন এত কাঁপছো কেন?

—আরুশি কিছু বলতে পারছেনা ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না‌
আচমকা আরুশির মনে পড়ে গেল। রাইয়্যানকে মামী সালাম করতে বলছিলাম।

হাত ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরুশির দিকে রাইয়্যান।
—দাঁড়ান!

আচমকা দাঁড়াতে বলায় রাইয়্যান হতভম্ব হয়ে যায়। এত খন কাঁপছিল কথা বলল না আবার এখন হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়াতে বলছে কেন?

—কেন?
আরুশির মাথা নিচের দিকে রেখেই আবার দাড়াতে বলল আর কিছু না বলে রাইয়্যান দাঁড়ায় আরুশি নিচু হয়ে রাইয়্যানে পা ধরতে যায় রাইয়্যান অবাক হয়ে পিছিয়ে গেল।

–কি করছো বা ধরছ কেন? ওঠো উঠে দাঁড়াও পাগল হলে নাকি।

—আপনি সরে গেলেন কেন?
মাথা নিচের দিকে রেখে ই।

—কী হয়েছে তোমার তুমি এমন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কেন । আমার দিকে দেখো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বল।

—কি হলো কথা কানে যায় না?

কিছু না বলে আবার নিচে হয়ে ফট করে সালাম করে নিল।

—এটা কি হলো আরু তুমি তবুও সালাম করলে করতে না কইলাম না।

–মামি বলেছে এটা করতে হয়!

—মানে

—আমরা তো মানে টানে জানিনা।

—উফফফ

রাইয়্যান এগিয়ে আসে আরুশির দিকে আরূশি পিছে আসে। রাইয়্যান শক্ত করে হাত ধরে কাছে টেনে আনে।

—হোয়াট হ্যাপেন্ড আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না তুমি এমন মাথা নিচু করে কেন? তাকাও আমার দিকে!

—আমি তাকাতে পারবো না?

—রাইয়্যান ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাও ছোট্ট করে বলে মানে

—আমার প্রচণ্ড লজ্জা করছে আমি তাকাতে পারবো না প্লিজ আমাকে তাকা তে ব‌ইলেন না।

রাইয়্যান কি বলবে কী করবে বুঝতে পারছে না ও আরুশির নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা হালকা কপালে দিকে তাকিয়ে আছে।

তারপর ও হো হো করে হেসে ওঠে।

—ওরে আমার লজ্জাবতীরে। সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া কইরা এখন তুমি লজ্জায় এইভাবে বিড়াল হয়ে বসে আছো।

রাইয়্যানের হাসি দেখে আরুশি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে রাইয়্যানের মুখে দিকে তাকায়।

—বাপরে আমার এক কথাই তোমার সব লজ্জা চলে গেল।

—সাথে সাথে আরুশির রাগ কমে এলো,,, কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
— আপনি সাথে মজা করছেন?

–না একদমই না আমি কি আমার আলু সোনার সাথে মজা করতে পারি।

বলে আর নাক টেনে দিল। হাত সরিয়ে দিয়ে

—-গালে নাকি একদম ধরবেন না তো সবাইকে খালি আমার গালে নাকি ধরে অসহ্য।

বলে রাইয়্যানে হাত ছুটে সরে আসতে চায়।

—কি হল ছাড়ছেন না কেন?

–রোমান্স করব তাই ছারছীনা!

—আরুশি চোখ বড় বড় হয়ে যায়,,,
—কি
আরুশি এটা শোনার সাথে সাথেই ছোটাছুটি করতে লাগে।
–নাথিং
বলে আরুশিকে ছেড়ে দেয়।

—এখন কিছু করবো না যাও ফ্রেস হয়েছ কি পড়ে আছ আমার গরম লাগছে না।

—হ্যাঁ প্রচন্ড গরম লাগছে?

—যাও এসব চেঞ্জ করে আসো!

—আচ্ছা।

রাইয়্যান‌ খেয়াল করেছে আরূশি আয়নার সামনে বসে কি যেন করছে?

–কি হয়েছে?

–খুলতে পারছিনা?

রাইয়্যান দেখে গলার হার খুলতে পারছেনা পেছনে চুলের সাথে আটকে আছে সেটা নেই ঘটর মটর করছে
আরুশি।

–আচ্ছা দাঁড়াও আমি খুলে দিচ্ছি।

রাইয়্যান চুল থেকে হার ছারিয়ে দেয়।

—ধরো এই শাড়িটা পড়ে এসো।

একটা সাদা রঙের শাড়ি আরুশি হাতে দেয়। শাড়িটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এত সুন্দর শাড়ি সাদা পাথর দিয়ে কাজ করা ঝিকিমিকি কাপড় একটা পাতলা একদম হালকা। ব্লাউজ দিয়ে যায়।

–এইটা পড়বো কেন?

—পরে আসতে বলছি এটা পড়ে আস।

—কিভাবে পড়ব আমি কি শাড়ি পড়তে পারি নাকি?

—তুমি কি করতে পারো শুনি?

—কিছুই করতে পারিনা?

—আচ্ছা তোমার কিছুই পারতে হবে না তুমি ছায়ার ব্লাউসটা পরে আসো আমি তোমাকে শাড়ি পরাবো আজকে।

—কি আপনি আমাকে শাড়ি পরাবেন। আপনি শাড়ি পাড়াতে পারেন।

—পারিনা কিন্তু শিখে নেব সমস্যা নেই। তোমার মত অকর্মা না আমি।

–কি আমি অকর্মা? লাগবেনা আপনার শাড়ি পরানো আমি নিজেই পড়ে আসবে দেইখেন?

—আচ্ছা পরে এসো?

আমি জিদ করে শাড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়। শাড়ি পরা সব বিপদে পরলাম কোনোভাবেই ভালো করে কচি উঠাতে পাচ্ছিনা। একদিক দিয়ে গুচ্ছি তো আরেকদিক দিয়ে খুলে যাচ্ছে।

এমন সময় দরজা ধাক্কা শব্দ পেলাম।
—আর কতক্ষণ থাকবে এভাবে আধাঘন্টা হতে চলল সামান্য একটা শাড়ি পড়তে এত সময় লাগে কখন।

—সামান্য আপনার শাড়ি পরা সামান্য মনে হয়। নিজের পড়া লাগলে বুঝতেন কত কষ্টে একটা কাজ এটা।

—নিজেদের পাড়াতে চাইছিলাম তুমি তো জেদ করে একাই চলে গেলে এখন পরে আসো।

—পড়ে তো আসবো।
বলেই ভেংচি কাটলো,,,,,

রাইয়্যান আরও আধা ঘন্টার মত বসে থেকে আবার দরজা ধাক্কা দিল আরোশী সেই এক কথা এখনো পড়া হয়নি। ও নাকি খুব চেষ্টা করছে করেই যাচ্ছে না পরে আজকে বের হবে না। কোন ঝামেলায় পারলাম এই মেয়ে আমার বাসর করতে দেবেনা বাথরুমেই আজকে সারা রাত কাটাবে মনে হচ্ছে।

আমার বসে 10 মিনিট পর আবার ধাক্কা আরোশী দরজা খুলে বেরিয়ে এলো হ্যাঁ পড়েছে শাড়ি। আমি একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করলাম । মনে হচ্ছে দুই কদম হাঁটলে শাড়ি খুলে যাবে। শাড়ি তার পড়া হয়নি খালি পেছিয়ে এসেছে। রাইয়্যান কিছু বলল না সে তাকিয়ে দেখল।
যেরকম ভাবে ই পড়ুক আরুশি অপ্সরা লাগছে ।

একদৃষ্টিতে আরুশির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কোন সাজ নেই মুখে চুলগুলো পিছনে খোপা করা আছে।
রাইয়্যান এগিয়ে এসে ওর চুলের খোপা টান মেরে খুলে দিল।
আরুশি সাথে সাথে রাইয়্যানের মুখের দিকে তাকালো।
রাইয়্যান কিছু না বলে ওকে নিয়ে ডেসিন টেবিলের সামনে নিয়ে গেল।
বসিয়ে দিয়ে একটা বক্স বের করল। আরুশি জিজ্ঞেস করছে এ বক্সে কি আছে রাইয়্যান কিছু না বলে বক্স খুলে দিল। আরুশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চোখের মুগ্ধতা।
তাজা গোলাপের গয়না। রাইয়্যানের দিকে তাকাতেই একটা হাসি দিল তারপর গয়না গুলো একে একে পরিয়ে দিল।

গয়না পরানো শেষে আয়নার দিকে তাকিয়ে রাইয়্যান পেছন থেকে আরুষি জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—-নাইস কাপেল তাই না জান?

আরুশি সে লজ্জায় মাথা নিচের দিকে দিয়ে আছে।

রাইয়্যান আচমকা আরুশিকে কোলে তুলে নেয়।
দুটি হৃদয়ে আজকে এক হবে। দুটো ভালোবাসার মানুষ তাদের ভালোবাসা দিয়ে একে অপরকে নিজের করে নিবে।

তিন বছর পর

রাইয়্যান হসপিটাল করডিটরে পায়চারি করছে।
চিন্তায় ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ভয় পাচ্ছে রাইয়্যান আজকে হারানোর ভয় যদি কিছু হয়ে যায় না এটা কিছুতেই হতে দেবে না ও থাকতে আরুর কিছু হতে দেবে না।

কাঁদে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সে দিকে তাকিয়ে দেখে রায়হান চৌধুরী রাইয়্যান বাবা।
রাইয়্যান বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়।

—আব্বু আরুর কিছু হবে নাতো।

—পাগল ছেলে আমার এত কষ্ট পাচ্ছিস কেন কিচ্ছু হবে না আরুশি মার। সাথে তার সন্তান সুস্থ থাকবে দেখিস।

জেসমিন জেসমিন এর বর জোনায়েদ ওরা হসপিটালে ছুটে আসেন। কোলে আড়াই বছরের একটা ছেলে শিশু। নাম জাহেদ।

—ভাই এত চিন্তা করিস না আরুশির কিচ্ছু হবে না।

এই তিন বছরে জেসমিনের সাথে রাইয়্যানের সম্পর্ক খুব ক্লোজ হয়েছে এখন তুই করে কথা বলে।

—আমার খুব চিন্তা হচ্ছে জেসমিন। জানিস তুই ও আমার হাত ধরে কেমন কাদছিল ওর এত কষ্ট হবে বলে আমি বাচ্চা নিতে চাই নাই তবু ও জোর করে

বলেই কেঁদে উঠলো। রাইয়্যানক কাঁদতে দেখে সবারই কষ্ট হচ্ছে ছেলেটা সত্যি খুব ভালোবাসে আরুশিকে একটু কিছু হলে পাগল হয়ে যায়।

হসপিটালের আরমান, রায়হান চৌধুরী, আরুশির মামী, জেসমিন , জেসমিনের বর, সবাই আছে।
অবশেষে ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসে। রাইয়্যান ছুটে তার কাছে যায়।

—ডক্টর আমার আরু সুস্থ আছে তো আর কিছু হয়নি তো। কি হলো ডাক্তারঃ চুপ করে আছেন কেন? কথা বলছেন না কেন বলেন আমার আরু ঠিক আছে তো।

ডাক্তারকে ঝাকিয়ে একের পরে এক কথা বলেই যাচ্ছে।

ডাক্তার বলার চান্স‌ই পাচ্ছে না।
রায়হান চৌধুরি কাছে এসে রাইয়্যানকেসরি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল তারপর ডাক্তার হাসিমুখে বলে উঠলো,,,,
—মিস্টার রায়হান চৌধুরী ছেলের বউ একদম সুস্থ আছেন সাথে তার সন্তানরা।
সন্তানরা শুন্তেই সবাই এগিয়ে এলো।

দুই জন নার্স দুইটা বাচ্চাকে কুলে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসে হাসিমুখে। বাচ্চাগুলো কাঁদছে বাঁচ্চা গুলোর দিকে তাকিয়ে রাইয়্যানের অদ্ভুত একটা অনুভুতি হলো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে মনে আলাদা একটা ভাললাগা তৈরি হচ্ছে।
কাছে আসতেই রায়ান প্রথম নার্সের কুলে থেকে
নিজের কোলে নিলো। নার্স হাসিমুখে বলল এটা আপনার ছেলে।

রাইয়্যানের হাত কাঁপছে কোলে নিতেসাহস করে তুলে নিল সাথে সাথে বাচ্চাটা হেসে উঠলো,,
রাইয়্যানের মুখে হাসি ফুটে উঠে,, ও ছেলের মাথায় চুমু খায়। এত ভালো কেন লাগছে আমার এটা বাবা হওয়ার অনুভূতি। আমার সন্তান আমার নিজের ভাবতাম ভাবতে আমার শরীর কাটা দিয়ে উঠছে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে ছেলে কে।

মেয়েটা নার্সের কাজ থেকে রায়হান চৌধুরী কোলে নেয়।
রাইয়্যান ছেলেকে জেসমিনের কোলে দিয়ে মেয়েকে একবার কোলে নিয়ে আরুশি রুমে ঢুকে যায়।

আরুশি চোখ বন্ধ করে আছে রাইয়্যান আরুশির পাশে বসে ওর হাত ধরে হাতে চুমু দেয়।
সাথে সাথে আরুশি চোখ মেলে তাকায়।

—আই এম সো হ্যাপি আরু।সত্যি তুমি ভাবতে পারবে হ না আমি কতটা খুশি হয়েছি আমাদের জমজ বাচ্চা হয়েছে একটা ছেলে একটা মেয়ে কত কিউট। আমি আগে এত খুশি ছিলাম না আর আমি ওদের চাইছিলাম না।কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল আমি ভুল করেছি আর ওরা আমার জীবন সুখ আর সেই সুখ তুমি আমাকে এনে দিয়েছে। লাভ ইউ সো মাচ জান আমাকে বাবা হয় সাদ দেওয়ার জন্য।
বলে আরুশির কপালে চুমু দেয়।

সবাই এসে আরুশিকে দেখে যায় বাচ্চা দুটো আরুশির পাশে শুইয়ে দেয় ।

—আমি কিন্তু বাচ্চাদের নাম ভেবে ফেলেছি?
আরশি বলল,,

—তাই নাকি ম্যাডাম তা কিন নাম ভেবেছেন?

—ছেলের নাম আয়ান আর মেয়ের নাম আরোহী।

রাইয়্যান মেয়ের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।
—আরু সোনা দেখো মেয়েটা একদম তোমার মত হয়েছে।

—হুম আর ছেলেটা আপনার মত হয়েছে যেমনটা আমি চেয়েছিলাম।

রায়ান মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে বলে উঠে,,
—লাভ ইউ মাম্মা তুমি মাম্মার মত হয়েছে মাম্মার মতো দুষ্টু কেমন?

—কি বলতে চাইছেন আমি দুষ্টু?

রেগে থাকি কথা বলল,,,
—-নাতো আমার আরু সোনা কি দুষ্টু হতে পারে তুমি তো আমার লক্ষী সোনা ব‌উ।

–মেয়ের কানের কাছে গিয়ে বলে,,,,, দেখছিস তোর মাম্মা পাপাকে কেমন ধমকায় বড় হয়ে বাবার পক্ষ নিবি বুঝছিস।
রাইয়্যান আর আরুশির সংসার এভাবেই চলতে থাকে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা আছে ঝগড়া রাগ অভিমান। আর প্রচুর ভালোবাসা। সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন যাতে ওরা সুখে-শান্তিতে একসাথে সারাটা জীবন পথ চলতে পারে।
(রুমি আপুর সাথে জিসান ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মামা এখনো জেলখানাতে আছে। আরূশি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। এর মাঝেই বাচ্চা। তানিশা আপু লন্ডনে আছে। আর সোনালী এনগেজড এখনো বিয়ে হয়নি। আরুশির আব্বু এখনো কথা বলতে পারে না।)
‌[সমাপ্ত]

জানিনা আপনাদের কাছে আরুশি রাইয়্যানকে কেমন লেগেছে।গল্পটা কেমন লেগেছে আরো বড় করতে চাইছিলাম কিন্তু আর জা মেলা করতে ইচ্ছা হল না এজন্য শেষ করে দিলাম। পুরো গল্পটি আপনাদের কেমন লেগেছে ভালো খারাপ ভুল ত্রুটি সব তুলে একটা বড় করে কমেন্ট করবেন আশা করি। আর পুরোটা গল্পে যারা আমার পাশে থেকেছেন উৎসাহ দিয়েছেন তাদেরকে আমার পক্ষে থেকে এতো এত ভালোবাসা ❤️সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।
❤️মিষ্টি ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here