আমার তুমি পর্ব ২৯+৩০

#আমার_তুমি ❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-২৯

২ দিন পর
রাইয়্যান আরুশিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। আরুশি গাড়ি থেকে নেমে কোচিং এ চলে যায়। টেস্ট পরীক্ষা শেষ এখন আর ক্লাস হবে না সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত কোচিং ক্লাস হবে সোনালী এখনো আসেনি। আরুশি এসে পড়ছে আগেই ক্লাসে বসে বই বের করে পড়তে থাকে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল হাতে নিয়ে দেখে রাইয়্যান ফোন দিয়েছে।
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!
—ওয়ালাইকুম আসসালাম কি করতাছে আমার আরু জান পাখিটা?
—আপনি আবার এখন ফোন দিছেন কেন ! কেবল না গেলেন আমি এখন ক্লাসে আছি সেটা কি আপনি ভুলে গেছেন?
–না গো ভুলি নাই।
—তাহলে এখন আবার ফোন দিসেন কেন ফোন রাখেন এখন।
—ফোন দিচ্ছি কেন আমার আরু জানটা এই মিষ্টি কন্ঠটা শোনার জন্য ফোন দিছি বুঝছো!! তোমার কথা মনে পড়তেছিল । তোমার কন্ঠ না শুনলে তো আমার একটুও ভালো লাগে না!
–আপনার ঢং দেখলে কিন্তু আমার রাগ হয়। সারারাস্তা না আপনার সাথে কথা বলতে বলতে আসলাম ১০ মিনিটে আবার কন্ঠ শোনার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছেন না উফ!
বিরক্ত হয়ে কথাটা বলল আরুশি…..
—-১০ মিনিট কি তোমার কাছে কম মনে হয়। আমার প্রতিটা সেকেন্ডে প্রতিটা মিনিটে তোমার সাথে কথা বলতে মন চায়।
—আরুশি মুখ বাকালো ওর কথা শুনে,,,
হাসির শব্দ শুনে তাকে দেখে সোনালী হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে ,,,
—-এই‌ তুই এভাবে হাসছিস কেন পাগলের মত করে!
—কি বললি আমি পাগলের মত করে হাসছি?
—হ্যাঁ পাগলের মতো করেই তো হাসছিস বলা নেই কওয়া নেই হেসে যাচ্ছিস একা একা।

ফোনের অপর পাশ থেকে তো রাইয়্যান একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে আর আরুশি তো ফোন নিচে নামিয়ে সোনালীকে বকছে।
—আমি এক হাসছি না আমি তোর কান্ড দেখে আসছি তুই যে ফোনে বসে বসে প্রেম করছিস এটা তো আমি বিশ্বাসই করতে পারতেছিনা ।
–তুই কিন্তু,,,
—আমাকে পরে বকিস আগে তোর ফোনের জন কে সামলে নে সে তো পাগল হয়ে গেল।

বলেই সোনালী ফোন আরুশির কানে ধরল,,
—-হ্যালো আরু তুমি কি লাইনে আছো কথা বলোনা কেন, কার সাথে কথা বলছ আরু আমাকে রেখে ।
—ফোন রাখছি বাই।
—আরে আরে শুনো তো।
—কি শুনব কিছু কি বলবেন?
–আরেকটু কথা বলোনা রাখবে কেন?
—আমি আজাইরা বইসা র‌ইনাই আপনার সাথে কথা বলার জন্য। ফোনটা রাখেন স্যার এসেছে।
—আচ্ছা সাবধানে থেকো নিজের খেয়াল রেখো ওকে।

আরুশি আর এসব কিছুই শুনলো না মুখের উপর ফোনটা কেটে দিলো। তারপরে সোনালী সাথে তুমুল ঝগড়া এর মাঝে স্যার চলে এসেছে তাই ঝগরা বেশিক্ষণ চলল না দুজনে ভদ্র মেয়ে হয়ে ক্লাস করতে লাগলো।

বাসার ভিতরে ঢুকতেই জেসমিন আপু আমার মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিল। আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না ইয়া বড় করে হা করে আছি। মিষ্টি পুরো আমার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার মুখটা বন্ধ করতে পারছিনা। পুরো মিষ্টি আমার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। আপুর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।

অনেক কষ্টে মিষ্টি টা শেষ করলাম আমি সাথে সাথে আবার ভাইরা আরেকটা মিষ্টি পর আমার মুখে দিতে লাগল। আল্লায় এরা কি আমাকে মেরে ফেলবে নাকি অনেক কষ্টে মুখের মধ্যে হাত দিয়ে সরে দাঁড়ালাম,,,

—কি হচ্ছে এসব ভাইয়া আপু তোমরা আমাকে মেরে ফেলারও প্ল্যান করেছো নাকি?এভাবে একটার পর একটা মিষ্টি আমার মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছ কেন ? আমি এমনি মিষ্টি জাতীয় জিনিস পছন্দ করিনা তার ওপর আবার আপু দিয়েছে আবার ভাইয়া আসছে এসব কি হচ্ছে?
—তুমি তো তোমার আপুর মিষ্টি খেলে এবার আমার থেকেও একটা খাও আমার তরফ থেকে দেওয়া হয়নি?
—কিন্তু এত মিষ্টি কেন দেওয়া হচ্ছে কি উপলক্ষে মিষ্টি?

এটা জিজ্ঞেস করতে ভাইয়া-আপু দুজনেই লজ্জা পেল মনে হয় আমি তাদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া গিয়ে আবার সোফায় বসে পরলো সবার সাথে।
আপু লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আমি চারিদিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম চাচিকে চাচি যা বলল তাতে তো আমার আনন্দের সীমা রইল না চিৎকার করে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।
—আপু আমি খালামনি হব সত্যি আপু চাচি সত্যি বলছো তো। আমার যে কি খুশি লাগছে তুমি ভাবতে পারবেনা। ছোট বাচ্চা আমার খুব ভালো লাগে নরম নরম হাত নরম শরীর ও গুলুমুলু তোমার বাচ্চাকে কিন্তু আমার কাছে দিবি আমি একে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবো ।
আপু মাথার নেরে জানালো যে কথাটা সত্যি,

আজকে আপু, ভাইয়া এখানে থাকবে অনেক জোর করে রাখা হয়েছে। ভাইয়া তো থাকতে চাইছিল না কিন্তু সবাই বলাতে থাকবে আমরা বললাম এখন আপুকে নিয়ে এখানে থাকার জন্য ভাইয়া বললে এখন না আরো কিছুদিন যাক তারপরে নাকি আসবে এখানে থাকবে।

এক সপ্তাহ পর
চিন্তিত হয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে আরুশি ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে এক সপ্তাহ ধরে কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা।
মামি সেদিন হুট করে ফোন দিয়ে বলে কি একটা জরুরী কথা বলবে,,,
কিন্তু এক সপ্তাহে আর মামীর সাথে আমার কথা হল না। মামাকে বলে মামীর কাছে একদিন ফোন দিয়ে কথা বললাম কিন্তু মামী তেমন কিছুই বলল না।
আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম ,
,—মামি আমাকে কি যেন একটা বলতে চাইছিল কিন্তু এখন বলছে না কেন?
মামা বলল এমন কিছুই না
সবকিছুই কেমন একটা গোলমাল লাগছে ।
আজকে সারাদিন ডক্টরের কাছে যাওয়া হয় নাই কালকে গেছিলাম ডক্টরের কাছে আব্বুর অবস্থা নাকি আবার খারাপের দিকে যাচ্ছে ।
এইতো সেদিন বলল উনি,,, বাবা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ।
এখনি আবার কেন খারাপের দিকে যাচ্ছে চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল আরুশির হাতে।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিল।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো আরুশি বাবার অবস্থা আবার কেন খারাপের দিকে যাচ্ছে বাবা কি তাহলে কখনই ভালো হবে না। আমাকে বলবেনা, আরু মা বলে ডাকবে না আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে না তোর বাবা তো তোর সাথে আছে তোর কিসের চিন্তা তোর সাথে তোর বাবা আছে তো।
আরুশির চোখ দিয়ে জল পরছে ও দূর আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে মনটা বড় অশান্ত হয়ে আছে।

গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালাম আরুশি রাইয়্যান ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে।
–আপনি এখানে কখন এলেন ?
—আরু তুমি আবার কাঁদছো?
—কই নাতো!
–আমার চোখে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করো না তোমরা চোখে পানি গুলো কিসের?
—ওই এমনি!
—বল কি হয়েছে কেন কাঁদছো?
—আরুশি চুপ করে আছে দেখে রাইয়্যান আবার জিজ্ঞেস করল,,,
—কি হলো কিছু বলছো না কেন আমাকে কি তুমি বিশ্বাস করো না। তোমার মনে এসব কথা কি আমি জানতে পারি না। তোমার কষ্টের কারণটা কি জানার অধিকার আমার নাই।
—আব্বুকে নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে! আব্বুর অবস্থা আবার কেন খারাপের দিকে যাচ্ছে?
—রাইয়্যান আরুশির হাত ধরে বারান্দায় সোফায় বসলো তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
—টেনশন করো না আরু একদম ঠিক হয়ে যাবে আঙ্কেল দেখো। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তো খারাপের দিকে যাচ্ছে তাতে কি হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে আঙ্কেল দেখ। এটা ভেবে কান্না করো না প্লিজ তোমার চোখের জল আমি সহ্য হয়না সেটা তো তুমি জানো।
—আমি টেনশন মুক্ত থাকতে পারছি না। আমার খুব টেনশন হচ্ছে আব্বুকে হারানোর ভয় হচ্ছে। আমি বাবাকে হারাতে পারবোনা বাবা কিছু হলে বাঁচতে পারব না।
—কিছু হবে না কিছু না আমি আছি তো দেখো সব ঠিক হয়েছে।

আরু যে নিজেকে সামলাতে পারছে না।
ওরাইয়্যানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে রাইয়্যান আরু মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রাইয়্যানের ও টেনশন হচ্ছে , ডাক্তার বলেছিল আঙ্কেল খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে । কিন্তু হঠাৎ করেই চার পাঁচ দিন আগে বললে, নাকি আবার খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে আগে যা হাত নাড়াতে পারতো সে তা অফ হয়ে গেছে । এখন তাকিয়ে থাকে না শ্বাসকষ্ট হয় এ নিয়ে খুবই অবস্থা খারাপ। আরুকে এতো কিছু বলেনি একটু খারাপের দিকে গিয়েছে এটা শুনে আরু এসে কান্নাকাটি করে একদম বসে গেছে । এতটাই জানলে হয়তো পাগল হয়ে যাবে এজন্য আরুশিকে সবটা জানা নি কিন্তু রাইয়্যানের টেনশন হচ্ছে আঙ্কেলকে কেউ ইচ্ছে করে অসুস্থ রাখছে।
কড়া পাহারা রাখা হচ্ছে ।আরুশিকে না জানিয়েই রাইয়্যান একাই বেশি যায় আংকেল কে দেখতে। আরুকে দেখতে এখন নিয়ে যাই কম কারণ ও বাবার অবস্থা দেখলে আরো ভেঙে পড়বে।

২ সপ্তাহ পর হসপিটাল থেকে ফোন আসে রাইয়্যানের ফোনে।
—হ্যালো মিস্টার রাইয়্যান চৌধুরী আপনি দ্রুত হসপিটালে চলে আসুন।
—ডক্টর কোন সমস্যা,
–আপনি দ্রুত আসেন আপনার জন্য গুড নিউজ আছে।
রাইয়্যান কিছু বুঝতে পারতেছি না কি ভালো খবর দ্রুত চলে আসে হসপিটালে।
—ডক্টর কি খবর?
—একটা ভালো খবর আছে সাথে একটা খারাপ খবর আপনি কোনটাকে আগে শুনতে চান।
—বুঝলাম না ডক্টর ভালো খারাপ খবর মানে? আচ্ছা ভালো খবরটাই না হয় আগে বলেন?
—ডক্টর বলতে লাগলেন আরমান সাহেব সুস্থ হয়ে গেছে?
রাইয়্যান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রক্তের দিকে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না । কি শুনছো কানেকশন সে আবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,
—-কী বললেন ডাক্তার? এটা কিভাবে সম্ভব এই তো কিছুদিন আগে আপনি বললেন আঙ্কেল এর অবস্থা খুব খারাপ বাঁচানো সম্ভব হবে কিনা মুশকিল হয়ে পড়ব।
—হ্যাঁ বলেছিলাম ওনার অবস্থা সত্যি খুব খারাপ ছিল কিন্তু আল্লাহ ওনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
—এটা কিভাবে হলো ডাক্তার আমার মাথায় কিছু ঢুকছে?
—ওনাকে অ্যালকোহলজাতীয় ইনজেকশন দেয়া হয়েছে । যার জন্য শরীর আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ করেই বেরিয়ে এসেছে আমার বিশ্বাস এমন কিছু দেখেছে উত্তেজিত হয়ে ওনার শরীর কাজ করা শুরু করে দিয়েছে । উনি দাঁড়াতে পারছেন হাঁটতে পারছেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওনার খুব বড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
—-হাটতে পারছে সিরিয়াসলি ডক্টর আপনি কি বলছেন তো?
—একদম ঠিক কিন্তু,,,
বলে ডক্টর মুখটা মলিন করে ফেলল,,,
রাইয়্যানের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল এতক্ষণ খুশি হলে কিন্তু ওর মুখটা কালো দেখে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,,,,,,

—-কিন্তু কি ডক্টর?
—উনি ওনার কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন চিরকালের জন্য?
—হোয়াটটট
চিৎকার করে কথাটা বলল,,,
—কি বলছেন আপনি?
—ইয়েস মিস্টার রাইয়্যান উত্তেজনার পুরা শরীর কাজ করলেও ওনার একটা অক্ষমতা থেকে গেছে উনি আর কখনো কথা বলতে পারবেন না । একদম পুরা ড্যামেজ হয়ে গেছে ওনার কন্ঠনালী । ওনার পুরা শরীর কাজ করা শুরু করে দিয়েছে উনি এখন একটু দুর্বল আছে আপনারা দুদিন পর উনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু কথা কখনোই বলতে পারবেন না ।
গাড়িতে উঠে বসারআই এম সরি। আমরা ওনাকে পুরোপুরি সুস্থ করতে পারলাম না।
রাইয়্যান কি বলবে ডক্টরাতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছে । এতে কোন দোষ নেই তারা তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছে আঙ্কেলকে সুস্থ করার জন্য। কপালে এটাই ছিল হয়তো আমি আরু কে কিভাবে বলব ওখুব কষ্ট পাবে । ও বাবার সাথে কথা বলবে কবে এসব ভেবে বসে থাকে প্রতিটা সময়।
সত্যি খুব কষ্ট পাবে আমি এই কথাটা কিভাবে বলবো।

শত কষ্ট হলেও খবরটা আরুকে জানাতেই হবে কিছু করার নাই । যাওয়ার আগে আঙ্কেলের সাথে দেখা করে আংকেলকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সে এখন ঘুমিয়ে আছে ।
বাসায় গিয়ে কিছু না বলেই আরু কে গাড়িতে এনে বসায়।
—আমরা কোথায় যাচ্ছিস এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?
—চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে এই সারপ্রাইজটা পেলে তুমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে!
—-সারপ্রাইজ!
—ইয়েস ম্যাডাম।
—কি সারপ্রাইজ বলেন না প্লিজ আমার তো তোর সইছে না?
—একটু অপেক্ষা করো নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবে কী সারপ্রাইজ?
—আগে বললে সমস্যা কি প্লিজ আগেই বলেন না?
—-আগে বলিকার সারপ্রাইজ থাকে!
—ধুর ভালো লাগেনা?
আরুশি গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল,
রাইয়্যান এই কাণ্ড দেখে হেসে ফেলে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগে ও জানে ওর বাবাকে সুস্থ দেখলে আর খুশীতে আত্মহারা হয়ে যাবে । কথা বলতে পারেনা এটা জানার পর একটু কষ্ট পাবে কিন্তু তবুও সুস্থ হয়েছে এটা ওর কাছে বেশি ইম্পর্টেন্ট হয়ে দাঁড়াবে।

হসপিটালে সে গাড়ি থামে আরুশি অবাক হয়ে হসপিটালের দিকে তাকিয়ে আছে এখানে আবার কি সারপ্রাইজ দেবে।
অবাক হয়ে রাইয়্যানের দিকে তাকাল কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে এসে দরজা খুলে বের করে আনল আরুশিকে হাত ধরে।
বাবার কেবিনের সামনে এসে রাইয়্যান থামল শুয়ে বাবা আছে।
দুই দিন পর আসলাম।
ধরে বাবার কাছে গিয়ে বসলো আরুশি বাবার হাত ধরে কিছু বলবে তার আগে বাবা চোখ মেলে তাকায় এটা দেখেই আরশির চোখ বড় বড় হয়ে যায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে বাবা তাকালে কি করে বাবার অবস্থা খারাপ ছিল হ্যাঁ আরেকটা জিনিস খেয়াল করলো বাবার হাতে কিছুই নয় অক্সিজেন খুলে রেখেছে । স্বাভাবিকভাবে ছিল চোখ মেলে তাকিয়ে বাবা উঠে বসলো অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেল আরু সাথে সাথে। একি দেখছে বাবা বসলে কি করে আরুশির পেছন দিকে তাকাল রাইয়্যান মুখে হাসি নি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না বাবাকি সুস্থ হয়ে গেছে ২ দিন আমি আসিনি দুই দিনের মাঝে বাবা কি করে সুস্থ হয়ে গেল।
#আমার_তুমি ❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-৩০

এক মাস পর
আরুশির বাবা এখন কথা বাদে সবদিক দিয়ে সুস্থ। প্রথমে আরুশির মন খারাপ থাকলেও বাবা ওর সাথে আছে এটা ভেবে অনেক খুশি দিনকাল ভালোই যাচ্ছে লেখাপড়া সবকিছুই। গল্প করতে না পারলেও বাবার সাথে বসে আড্ডা দেওয়া যায় হাতের ইশারায়। ভালোই কাটছে দিন আরুশির কিন্তু এর মাঝে একটা বিষণ্ণতাও আছে। গম্ভীর হয়ে ছাদে বসছ একদৃষ্টিতে সামনের ফুলের দিকে তাকিয়ে ফুল দেখছে না । ফুলের দিকে তাকিয়ে অন্য একটা চিন্তায় মগ্ন আছে। এই এক মাসে মামা মামির কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি আরুশির। একজ্যাক্টলি তারা কোথায় আছে এটাই জানে না। বাসায় গিয়েছিল বাবা সুস্থ হয়ে গেছে এই খবরটা জানানোর জন্য তারা মিসিং হঠাৎ এমন মিসিং হাওয়াটা আরুশিকে অবাক করেছে অনেক।চিন্তা হচ্ছে তাদের কোনো বিপদ হয়নি কিন্তু কি বিপদ হবে এমন ফ্যামিলির সবাই মিলে কোথায় চলে গেল । বাবাকে একদিন দেখতে ও
গেল না সেই যে একবার দেখতে এসেছিল আর গেলনা। তারাও কোথায় উধাও হয়ে গেল সবাই মিলে কোথায় চলে গেল আমাকে কেন বলে গেল না । আমাকে তো তারা খুব ভালোবাসে তাহলে তারা কি জানেনা তাদের জন্য আমার চিন্তা হবে।হুট করে সবাই একসাথে হওয়া কি করে হতে পারে ফোন নাম্বারে শত শত ফোন দিয়েছে নাম্বার অফ রাইয়্যান কেউ বলেছেন খুঁজতে রাইয়্যান খোঁজ চালাচ্ছে কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শে পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে রাইয়্যান দাড়িয়ে আছে।
—আযান দিচ্ছে এই সময় ছাদে একা বসে আছো কেন?
—মামা-মামীর কোনো খোঁজ পেয়েছেন?
—না তুমি চিন্তা করো না খুব তাড়াতাড়ি তাদের পেয়ে যাব!
—আমার মাথায় কিছু ঢুকছে ওনারা হঠাৎ করে এভাবে দাও কি করে হয়ে গেল?
—এত চিন্তা করো না তো তুমি দিনদিন নিজের কি হাল হয়েছে দেখতে পেয়েছ।সামনে তোমার পরীক্ষা এখন তোমার পড়া বাদ দিয়ে এভাবে এত চিন্তা করা ঠিক হচ্ছে না!
—চিন্তা বলে আসে না দুই বছর আমি তাদের সাথে ছিলাম তারা আমাকে দেখে রেখেছেন হ্যাঁ মামী আমাকে দেখতে পারত না তবুও তাদের আশ্রয় ছিলাম হঠাৎ তারা এভাবে উদাও হয়ে গেল আমি কি তাদের নিয়ে চিন্তা করবো না।
—-তুমি চিন্তা করলে তারা তারা ফিরে আসছে না আমিতো লোক লাগিয়েছে পুলিশের ইনফর্ম করেছি খুব তাড়াতাড়ি তাদের পেয়ে যাব আমার উপর বিশ্বাস রাখো।
—আপনাকে ছাড়া আর কাকে বিশ্বাস করব আপনি তো আমার একমাত্র ভরসার জায়গা!
—চলো নিচে চলো!

আরু রাইয়্যান ছাদ থেকে নিচে নেমে যায়। নিজের রুমে এসে নামায পড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ।
বাবা কি করছে দেখার জন্য বাবার রুমে আসে বাবা রুমে নাই। তাহলে মনে হয় ড্রইংরুমে আঙ্কেলের সাথে আছে হ্যাঁ ঠিকই ধরেছি। তারা দুজন কি যেন কথা বলছে হ্যাঁ বাবা কিছু বলছে না শুধু মাথা নেড়ে সায় জানাচ্ছে আর হাত দিয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে ।আর আংকেল কি যেন বলছে তারপরে কি যেন বলে দুজনেই খুশি হয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরল ।আমাকে নিচে নামতে দেখে দুজনই মুখ বন্ধ করে ফেললে হয়তো আঙ্কেলের করতে বলছে।

আমি ব্রু কুঁচকে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি এটা কি হলো কখনো তো আমাকে দেখে তারা গল্প অফ করে না। আজকে আমাকে দেখে দুজনে চুপ হয়ে গেল কেন আমি পুলিশের মত তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম দুজন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আমার দিকে তাকাল আমি বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
—কি হলো বাবা তোমরা চুপ হয়ে গেলে কেন?
—বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল মাথা নেড়ে জানালো কিছু হয়নি?
—আংকেল কি হয়েছে বলুন তো কি নিয়ে কথা বলছিলেন আপনারা আমাকে দেখে দুজন চুপ হয়ে গেলেন কেন?
—কই তেমন কিছু না আমাদের গল্প শেষ কি বলিস আরমান তাই না।
সাথে সাথে বাবা আবার হ্যাঁ জানান মাথা নেড়ে তারপর তদুজনে উঠে উপরে চলে গেল। আমি তাদের যাওয়ার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি এটা কি হলো আমাকে এড়িয়ে চলে গেল।

চাচী আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কে এসে ধাক্কা দিয়ে বলল,
—- কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
—কি হলো বল তো বাবার আর আঙ্কেল কি যেন গল্প করছিল আমাকে দেখে দুজনেই কথা অফ করে উপরে চলে গেল কেন?
—-হয়তো তোমাকে কথাটা জানানো যাবে না।
—কেমন কথা যে আমাকে জানানো যাবে না?
—আমি কি করে জানব!
—হ্যাঁ ঠিকই তো তুমি কিভাবে জানবে আচ্ছা তুমি যাও আমি ভাবতে থাকি!
আরুশি ভাবনায় পড়ে সোফায় নিজে বসে বসে ভাবতে লাগলো,
খাবার টেবিলে বসে আছি আমি, বাবা, রাইয়্যান আর আঙ্কেল আর চাচী সার্ভ করছে।
—রাইয়্যান আরুশি তোমাদের নি আমরা একটা ডিসিশন নিয়েছি।
আঙ্কেল কথাটা বলে আব্বুর দিকে তাকালো তারপর কি যেন একটা ইশারা করে আবার আমাদের তাকে বলবে,
—-কিসের ডিসিশন আব্বু?
—তোমার আর আরুশির বিয়ে নিয়ে?
কথাটা শুনেই আমার খাবার গলায় আটকে গেল কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি বেড়ে গেছে রাইয়্যান তারাতারি করে আমাকে পানি এগিয়ে দিল।
বড় বড় চোখ করে আমি একবার আয়নার দিকে একবার আঙ্কেলের দিকে তাকালাম ।

হ্যাঁ রাইয়্যান তো খুশিতে আত্মহারা হইয়া আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে তারপর বলল,,
— সত্যি আব্বু!
—হ্যাঁ আমি আর আরমান মিলে ডিসিশন নিয়েছি তোমাদের বিয়ে তাড়াতাড়ি দেবো‌। ছোটবেলার তো শুধু বিয়ে পড়ানো হয়েছিল তখন কোন রেজিস্ট্রি কিছুই করা হয়নি আর সেটা নিয়ে তো আর তোমরা সংসার করতে পারবে না। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছুদিনের মধ্যেই সব নিয়ম কারণ মেনে বড় করে অনুষ্ঠান করে তোমাদের বিয়ের আয়োজন করবো।
তোমরা দুজন রাজি আছো তো।
—আব্বু তুমি যে কি বল না আমরা রাজি না মানে ১০০ বার রাজি!তাই না আরু।
—আরুশি রেগে রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে আছে কি নির্লজ্জ বিয়ে করতে রাজি সেটা কি এভাবে বলে কেউ একটু লজ্জা ও নাই‌।
আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে অসভ্য লোক একটা। আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে হেঁসে তাকিয়ছ আছে বাবা ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়। আর কোনো দিকে না তাকিয়েই দৌড়ে চলে আসি উপরে পেছন থেকে আমাকে ডেকেই যাচ্ছে।
—আরু কোথায় যাচ্ছ বলে যাও না হলে বাবা বুঝবে কিভাবে । উপড়ে যাচ্ছো কেন কি হল তোমার?
উপরে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অসভ্য ডাকছে তুই একাই বল আমি কিছুই বললাম না।

রাইয়্যান ওপর এসে সোজা আরুশির রুমে আসে আরুশির খাটের কোনায় বসে আছে মুখে স্পষ্ট রাগ রাইয়্যান ওর পাশে বসে।
—আরু তুমি এভাবে চলে এলে কেন?
আরুশি অগ্নিদৃষ্টিতে রাইয়্যানের মুখের দিকে তাকায়,
—এ ভাবে তাকাচ্ছ কেন চলে আসার আগে বলতে তুমি বিয়েতে রাজি বাবা আমাদের জিজ্ঞেস করলে এখন যদি বাবা ভেবে নেই তুমি রাজি না আমি একাই তোমাকে বিয়ে করতে চাই তাহলে তো বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।
—আপনি বলতেছেন আমার ঔখানের নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলে আসবো!
—হ্যাঁ বলবে সমস্যা কি!!
—আপনি আসলে একটা পাগল ! আপনার কথায় রাগ হচ্ছে জানেন আপনি আমার মন চাইছে প্রাণ মাথাটা ফাটিয়ে ফেলি।
—হোয়াট?
—আমার লজ্জা করে না বাবা আঙ্কেলের সামনে বিয়ে নিয়ে কথা বলতে । আপনি আবার তাদের সামনে জিজ্ঞেস করলেন কেন? নিজে তো লজ্জা নাই আমাকে নির্লজ্জ ভাবেন।
—ওরে আমার লজ্জাবতিরে আমরা আমরাই তো এতো লজ্জা কি আছে?
—আমরা আমরা বলে কি লজ্জা পেতে পারি না?
—-আচ্ছা পাও বসে বসে লজ্জা!

বিয়ে ঠিক করা হলো দশ দিন পর।
—রাত দুপুর নাই আপনি কোথায় যান ।
—-দরকার আছে আরু।
–+কি দরকার আমাকে বলেন!
—-সময় হলে সব জানতে পারবে এখন যাও শুয়ে পড়ো আমার আসতে লেট হবে বসে থেকো না?
—দশটা এখন এমনি বাজে দেরি হবে মানে কত দেরি হবে!
—২ ঘন্টাখানেক।
—কোথায় যান বলেন না?

আর আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছে কোথায় যেন যায়। একটা ফোন এলেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
আর দুইদিন পর আমাদের গায়ে হলুদ।
আমার পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি নাই কিন্তু বিয়ছ পরীক্ষার আগেই পরেছে।জেসমিন আপা এখন বাসাই আছে তানিশা আপু কে ফোন দিয়ে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তারা যেন আসি। সোনালী কেউ খবর দেওয়া হয়েছে ও বলেছে গায়ে হলুদের দিন আসবে।
ইদানিং রাইয়্যান আমার সাথে ভালো মতো সময় কাটাচ্ছে না বেশি সময় বাসার বাইরে থাকে । কি একটা ফোন আসে না দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

অজান্তে অনেক কষ্ট লাগছে । রাইয়্যান এমন করছে কেন আগে তো কখনো এমন করে নাই।

—কিরে এখানে কি করছিস এত রাতে না ঘুমিয়ে।
—আপু তুমি ঘুমাওনি এখনও।
—হ্যা ঘুমিয়ে ছিলাম তোর ভাইয়ের কল এসেছে সে নাকি কোথায় যাবে এজন্য আমি জেগে গেলাম।
—ভাইয়া আবার কোথায় যাবে।
—–জানিনা রে
—-রাইয়্যান ও গেল।
–বলিস কি রাইয়্যান আবার কোথায় গেল।
—জানিনা আমাকে কিছুই বলে না কি যেন হয়েছে।
—-চিন্তা করিস না সময় হলে সব বলব ঘুমিয়ে পড়ো রুমে যা।

সকালে রাইয়্যানের রুমে গেলাম।
—-এখনো রুমে নাই এত সকালে কোথায় গেল।
কালকে রাতে যে ড্রেস পড়ে গেছিল সেই ড্রেসটা খুজতে লাগলাম না ড্রেসও নাই ফোনে নাই কিছুই নাই আচ্ছা রাতে ফিরে ছিল তো।
নিজে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম রাতে বাসায় ফিরে ছিল কিনা রাইয়্যান দারোয়ান বলল গাড়ি ঢুকে নাই।
—বলেন কি ঢুকে নাই মানে কি?
—আমি ঠিকই বলছি রাতে কোন গাড়ি আসে নাই বাসায় আসে নাই ছোট স্যার।
আরুশি চিন্তিত হয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে আঙ্কেল কে জিজ্ঞেস করল,,,

সব গার্ড দে জিজ্ঞেস করা হলো কেউ জানান কোথায় আছে রাইয়্যান।একটু পরে জেসমিন আপা নিজে এসে সে সবাইকে বলতে লাগলো জুনায়েদ ভাইয়া নাকি রাতে বাসায় ফিরেনি।

সবাই এখানে নিশ্চিত রাইয়্যান আর জুনায়েদ ভাইয়া অনেক জায়গায় আছে। দুজনের নাম্বারে ট্রাই করতে লাগলাম কিন্তু দুজনের নাম্বার বন্ধ।

চলবে ❤️
চলবে ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here