আমার তুমি পর্ব ২৭

#আমার_তুমি ❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-২৭

—তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আপু একদম হলুদ পরী মতোন।‌

বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিলো আরুশি।

তানিশা হাঁ করে তাকিয়ে আছে সত্যি মেয়েটা খুব সহজ-সরল। একটুতেই আপন করে নেই সবাইকে। ওর সাথে আগে কত বাজে ব্যবহার করছে তাও এমন ভাবে কথা বলছে,মিশছে যেন আমি ওর কত আপন।

—থ্যাঙ্ক ইউ, তোমাকে ও অনেক সুন্দর লাগছে।[বলেই গাল টেনে দিল]
আরুশি গালে হাত দিয়ে হাত সড়িয়ে বলল,,

—-আমি কি বাচ্চা নাকি আমার গাল টানছেন কেন?

—[কথাটা শুনে তানিশা হেসে ফেললো] তুমি তো বাচ্চাই নিজেকে বুড়ি মনে করো নাকি । আমার থেকে কত ছোট হবে জানো সেটা তুমি । কম করে হলেও ৫/৬ বছরের ছোট হবে।

আরু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাইয়্যান ওকে ডেকে উঠে,,,
—আরুওও

—আপু আমি আসি। উনি কিছু বলবেন মনে হয়।

—আচ্ছা যাও।

আরু আবার একটা মন বুলানো এক হাসি দিয়ে স্টেজে থেকে নেমে রাইয়্যানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো ,,,
—কি ?

—সেই আসার পর থেকে এখানে বসে আছো ।কিছুইতো খেলে না বাসায় থেকেও তো কিছুই খেয়ে আসলে না। তাড়াহুড়া করে চলে এলে, এখন কিছু খেয়ে নেবে চলো।

—আমার খিদে পায়নি ! পরে খেয়ে নেব নি এখন এখানে থাকতে দিন আপুর গায়ে হলুদ শুরু হয়ে যাবে।

–কিছু শুরু হবে না তাড়াতাড়ি চলো খেতে টাইম লাগবে না।

—খাওয়া নিয়ে পড়েছেন কেন। আমার সত্যি খিদে পায়নি। খিদে পেলে তো খেয়েই নিতাম । আমি খিদে সহ্য করতে পারিনা জানেন তো এখন খিদে লাগলে কি আমি এখানে বসে থাকতাম।

আরুর খিদে লেগেছে তবুও মিথ্যে কথা বলছে। এতোখন আপুর সাথে গল্প করতে করতে আসলে খাওয়ার কথা ভুলে গেছিল। এখন রাইয়্যান বলাতে খিদে পেয়েছে টের পেল। কিন্তু এখন আর খেতে যেতে চাইছে না কারণ আপুর গায়ে হলুদ এখনই শুরু হয়ে যাবে।

এদিকে রাইয়্যান তো বুঝতে পারেছে আরুর না করার কারণটা। সকাল দশটার দিকে তানিশা ফোন দিয়েছিল বলেছে আগেই সবাইকে নিয়ে চলে আসতে। রাতে লেট করার জন্য ঘুম থেকে দেরি করে উঠেছি আমি বলেছি,,
” আমি যাব না ” তাই আমাকে আর কিছু বলেনি কষ্ট পেয়েছল। আর আমাকে বলে ও লাভ নাই আমি একবার যেটা না করে দেই জোর করে ওকেউ আমাকে সেটা করাতে পারে না।
আমি আবার শুয়ে পড়ি আর ঘুমিয়ে পরি রাতে অনেক সময় ছাদে কাটিয়েছি খুব ভালো একটা সময় ছিল আমার জন্য আরু নিজে থেকে আমাকে ভালোবাসি বলেছে।
বারোটার দিকে তীব্র শব্দে ও দরজা ধাক্কায় ঘুম ভেঙে যায়। কোন সার্ভেন্ট থাকলে আমি হয়তো তার চাকরি আউট করে দিতাম কিন্তু শব্দ টা ছিল আরুর এইজন্য ঘুম নিয়ে উঠে দরজা খুলি আর বলি,,,,

—-কি হয়েছে সাত সকালে ডাকছো কেন?

—আপনি এখনও ঘুমাচ্ছেন যাবেন না।

—ঘুমের মাঝে কিছু বুঝতে পারছি না আমি ফ্যাল ফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কোথায় যাব কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছিনা?

—কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি ! কানে যাচ্ছে না কথা ? এত সময় ঘুমালেন কতক্ষণ ধরে ডাকছি জানেন আপনি? তাড়াতাড়ি উঠুন রেডি হয়ে আসুন। আপু আমাকে কতবার ফোন দিয়েছে জানেন । আপনি নাকি তাকে না করে দিয়েছেন এটা কিন্তু একদম ঠিক করেননি।
আপু খুব কষ্ট পেয়েছে।

এবার রাইয়্যান কিছুটা বুঝতে পারল। আরু কোথায় যাওয়ার কথা বলছে সেটা মাথায় এলো। আসলে এভাবে না করাটা উচিত হয়নি।

—যাবেন না?

–যাব।

আরু খুব খুশী হল আমাকে রেডি হতে বলে নিজে দৌড়ে চলে গেল । আসার সময় মানি আমাদের দেখে খেয়ে যেতে বলে। আরু নাকি এখনো কিছু খাইনি সকাল থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করেছে । আমি উঠলে একসাথে খাবে। আমি উঠিনি এজন্য নিজের‌ও কিছু খাইনি।
আরু কে খেতে বলেছি কিন্তু ও বলে এখন আর খাব না তাড়াতাড়ি চল। নাছোড়বান্দা মেয়ে একটা জোর করে আমাকে নিয়ে এসেছে বলে এখানে এসে খাবে আর এখানে আসার পর থেকে তানিশার সাথে বসে গুজুরগুজুর করে যাচ্ছে গল্প করে যাচ্ছে আর আমি এতক্ষণ আঙ্কেলের সাথে কথা বললাম ।এখন ও সেখানে বসে আছে সকাল থেকে না খেয়ে আছে শরীর খারাপ করবে তো । এখনো নাকি তার ক্ষিদে লাগেনি। আর কিছু না বলে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো রাইয্যান । হলুদের অনুষ্ঠান দেখা যায় এমন স্থানে বসে যাতে খাবার কথা বলল, আর অজুহাত দেখাতে না পারে,,
রাইয়্যান খাবারের প্লেট নিয়ে আসে আরু খাবেনা বলে যে ধরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।

—আচ্ছা তোমার খেতে হবে না আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

—বলে খাইয়ে দিতে লাগলো,,, আরুশি হা হয়ে তাকিয়ে আছে ও ভাবেনি এখানেও রাইয়্যান খাইয়ে দেওয়ার কথা বলবে। এত ভালো কেন বাসে এই লোকটা ওকে,,,,
আরূশি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে এত সুখ আমার কপালে সইবে তো?

—আরু কি হয়েছে তোমার কাঁদছ কেন?

—আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

রাইয়্যানস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আরুর দিকে মাথায় ঢুকছেনা কষ্ট হচ্ছে কেন?
রাইয়্যান ব্যস্ত হয়ে পড়লে একেরপর এক কথা বলেই যাচ্ছে কি হয়েছে কি জন্য কষ্ট হচ্ছে কেউ কিছু বলেছে নাকি।

—বলো আমাকে কে কি বলেছে কেন কষ্ট হচ্ছে। আঙ্কেল এর জন্য কি মন খারাপ তাহলে আঙ্কেলের কাছে নিয়ে যায় চলো ।

—আমার অতি সুখে কষ্ট হচ্ছে এতো সুখ আমি নিতে পারছি না । আপনি আমাকে এত ভালো কেন বাসেন এজন্য আমার ভয় হয়। এই সুখ আমার কপালে সইবে কিনা এটা ভেবে আমার ভয় হয়।

—এসব আজেবাজে কথা একদম ভাববেনা । আর তোমাকে ভালো কেন বাসি বললেনা তুমি তো ভালবাসার মত একটা মেয়ে যাকে শুধু ভালবাসতে ইচ্ছে করে।

ও দূর থেকে একজন এই দৃশ্য দেখছে তারা চোখে পানি সবার আড়ালে চোখের পানিটা মুছে নিল বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে কতটা ভালবাসলে সবার সামনে এভাবে খাইয়ে দেওয়া যায় কতটা কেয়ার করলে এভাবে সবাইকে তোয়াক্কা করা যায়। আমাকে ভালবাসতে পারত না কি কেন ভালোবাসতে পারলো না।আমি তোকে খুব ভালবাসতাম কিন্তু কখনো আমাকে ভালবাসেনি তুই। পাগলামি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাগলামি করে কি হবে আমি কখনোই পাবো না তোকে জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসাটা পাওয়া যায় না
আরুশির অনেক ভাগ্য ভালো তোর মত একজন জীবনসঙ্গিনী পেয়েছি।

ভালোভাবেই তানিশার গায়ে হলুদ শেষ হলো সন্ধার পরে বাসায় চলে এলো। তানিশা থাকতে বলেছিল কিন্তু রাইয়্যান বলল কালকে নিয়ে আসবে থাকা যাবে না এখানে। রাইয়্যার আরুকে হসপিটালে নিয়ে যায় বাসায় আসার আগে।

,,

গভীর রাতে আরুশির ঘুম ভেঙে যায় গেমে সারা শরীর একাকার হয়ে গেছে । খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে। আব্বুকে নিয়ে কেউ একজন আব্বুকে মেরে ফেলেছে। এটা দেখামাত্রই আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে বসে,,,,

চারপাশে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার ডিম লাইটের আলোতে বুঝতে পারল ও রুমে বসে আছে। তাহলে এটা স্বপ্ন ছিল কিন্তু আমি কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম। বাবা ঠিক আছে তো অজানা একটা ভয় গ্রাস করল আমাকে প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে বাবাকে নিয়ে বাবার কোন ক্ষতি হচ্ছে না তো। আর এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম কে বাবার ক্ষতি করবে আমাদের শত্রু বা কে আছে?

প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হাত দিয়ে জগটা কাছে নিয়ে দেখি একফোঁটা পানিও নেই উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না।

কিন্তু এভাবে বসে থাকতে পারছি না তাই বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালাম,,,
সিঁড়ি দিয়ে নামছি আর ভাবছে বাবাকে নিয়ে এমন একটা স্বপ্ন কেন দেখলাম??
খুব মন কেমন করছে সন্ধ্যাবেলা রাইয়্যান আমাকে নিয়ে গেছিল বাবার কাছে। বাবা তো তখন ঠিকই আছে। কিন্তু মন মানতে চাইছে না খুব দেখতে ইচ্ছে বাবাকে এখন।

টেবিলের কাছে এসে পানি ভরে এক গ্লাস চেয়ারে বসে। ডগ ডগ করে পানি খাচ্ছি এখন ও আমার হাত-পা কাঁপছে ভয়ে । অজানা এক ভয় পাচ্ছি এবং কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।

হঠাৎই কারো কথা আওয়াজ কানে আসতেই আমি ভয়ের চোটে হাতের গ্লাসটা ফেলে দেয় আর ঠাস করে একটা বিকট শব্দ হয়ে গ্লাসটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।

কন্ঠটা আমার পরিচিত কিন্তু তবুও খুব ভয় পাচ্ছি আচমকা কথাটা কানে আসতে ভয় পেয়ে যায় ।
কেউ একজন আমাকে কে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞেস করে ,,,
—–কি হয়েছে এত ভয় পাচ্ছ কেন তুমি গ্লাসটা ফেলে দিলে কেন তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে আর এত রাতে নিচে এসেছ কেন?

কথাগুলো রাইয়্যান বলছে।

আমি কথা বলতে পারছি না ভয়ের চটে আমার মুখে কথা বের হচ্ছে না। রাইয়্যানকে দেখে আস্তে আস্তে আমার ভয় কাটতে লাগল,,
আমি নিজেকে অনেকটাই স্বাভাবিক করে বলে
উঠি,,,
—-আমি বাবার কাছে যাব।

রাইয়্যান মাঝ রাতে উঠে এমন একটা কথা শুনে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায়।
বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ও বুঝতে পারছে না আমি এই কথা এত রাতে কেন বলছি। অবিশ্বাসের সুরে আবার জিজ্ঞেস করল,,,,

—হোয়াট

—আমি ঠিকই বলছি প্লিজ আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যান। আমার বাবাকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে মনে হচ্ছে তার কোন ক্ষতি হবে।

—এমনটা তোমার মনে হল কেন??

—আমি খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি খুব ভয়ঙ্কর স্বপ্ন!যদি স্বপ্নের কিছু ঘটে তাহলে আমি সারা জীবনের জন্য বাবাকে হারিয়ে ফেলবো। আর আমি এটা কিছুতেই হতে দেবো না । আমি মাকে হারিয়েছি বাবা কিছুতেই হারাতে চাইনা।

—আর ইউ ম্যাড আরু সামান্য একটা স্বপ্ন নিয়ে তুমি এতটা ডেসপারেট হয়ে গেছো । স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় নাকি এটা নিয়ে তুমি এতটা হাইপার কেন হচ্ছে আমি বুঝতে পারতেছি না?

—আমি কিছু জানিনা আমি কিছু বুঝতে চাই না আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন কিনা সেটা বলেন নাহলে আমি একা চলে যাব।

–হোয়াট এত রাতে তুমি হসপিটালে যাবে হসপিটাল কি তোমার জন্য খুলে বসে আছে ।এখন কয়টা বাজে তুমি জানো?প্লিজ তুমি চল রুমে গিয়ে ঘুমাও সকালে তোমাকে নিয়ে যাব। তোমাকে সন্ধ্যায় নিয়ে গিয়েছিলাম তখন আঙ্কেল সুস্থ ছিল এই টুকু সময়ের মধ্যে কিছুহয়নি তুমি আঙ্কেলকে নিয়ে বেশি চিন্তা করো এজন্য এমন স্বপ্ন দেখেছ।

—আমার সত্যিই খুব টেনশন হচ্ছে আমি ঘুমাতে পারবো না আব্বুকে একবার না দেখতে পেলে আমার মনটা কিছুতেই শান্ত হবে না।

—প্লিজ ঘুমাও কাল তোমাকে নিয়ে যাব এখন পাগলামি কর না প্লিজ।

—ওকে আপনার যেতে হবে না আমি একাই যাবো। আমার বাবা আমি একাই যাব আমায় কাউকে লাগবেনা।

—এত রাতে তুমি হসপিটাল এর দরজা খোলা পাবেনা গেট এখন বন্ধ।

—হসপিটাল সব সময় খোলা থাকে আপনি আমাকে মিথ্যে বলে সান্ত্বনা দিতে পারবেন না।

—এখন খোলার নাই এত রাতে খোলা থাকে না।

—-আরু কিছুতেই কথা শুনতে চাইছে না উঠে চলে যেতে নেয় একাই।
—প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি কি আঙ্কেলের ক্ষতি চায় বল আমার উপর কি তোমার একটুও বিশ্বাস নেই।

—–বিশ্বাস আছে কিন্তু এখন আমি একবারের জন্য হলেও আব্বুকে দেখব। তারপর শান্ত হবো।

—আচ্ছা চলো! কিন্তু আরেকবার ভেবে দেখো সত্যি কি তুমি যাবে এত রাতে নাকি কাল সকালে। সবাই আমাদের পাগল ভাববে স্বপ্নের কথা ভেবে এভাবে পাগলা হয়ে ছুটে যাওয়া মানের নিজেও পাগলামি করা।
স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না এটা বাস্তব বাস্তব আর স্বপ্ন কি তুমি কেন গুলিয়ে ফেলছো আরু।

আরো নাছোড়বান্দা যাই বলুক সে যাবে।
আরু তাড়াহুড়া করে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বসে বসে পা ধরে।
আলু হঠাৎ এভাবে পা ধরে বসতে দেখে বুকটা ধুক করে উঠে।

ড্রয়িং রুম এ লাইট জালানো হয়নি ডীপ লাইট দেওয়া আরু কান্না শুনে তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালায় রাইয়্যান।
গ্লাস পড়ে ভেঙে অনেকটা জায়গা ছিটিয়ে আছে আরু পায়ে একটা কাচের টুকরা ঢুকে গেছে।

চলবে ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here