#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ১৭
আরুশি আর জেসমিন গল্প করছিল এর মাঝে তানিশা নিচে নেমে আসে।
এসেই রেগে আরুশির সামনে দাড়ায়,
তা দেখে জেসমিন আরুশিকে ফিসফিসিয়ে বলে,
— কি রে আরুশি এই মেয়ে এভাবে এসে দাড়ালো কেন?
আরুশি তানিশাকে দেখেই মনে পরে গেছে তখন কি যেন বলবে বলছিল।
এজন্য কি রেগে আছে হয়তো।
–আপু তখন আপনি ফোন এ কথা বলছিলেন তাই চলে এসেছিলাম।
–হোয়াই, কেন চলে এসেছো? আমার কথা না শুনে আর ফোনে কি আমি সারাদিন কথা বলতাম নাকি। তোমার অনেক সাহস তাই না রাইয়্যান তোমার ফ্রেন্ড বলেছে তাই।
–কি বলবেন বলেন? আর আমি এখানে সাহস কোথায় দেখালাম?
–সাহস না দেখালে এভাবে আমার কথা না শুনে চলে আসতে নাকি। এই জন্য কাজের মেয়েদের এইভাবে রাই দেওয়া উচিত না।
আরুশি আর কিছু বলল না শক্ত করে জেসমিনের হাত ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
জেসমিন রেগে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলাদ সাহস নেই।
— তানিশা আর ও কিছু কথা বলে ডায়নিং টেবিলে গিয়ে বসলো আন্কেল আজ নিচে আসবেনা। রাইয়্যান ও আসে নি জেসমিন আপু আর ভাইয়া একপাশে বসে পরলো। তানিশা আরেক পাশে, চাচি খাবার এনে সবাইকে দিলো।
–আরুশি তুই ও বস
–না আপু আন্কেল কে খাবার দিয়ে আসি। তোমরা খাও আমি পরে খাবো।
— আচ্ছা যা।
আন্কেলের খাবার নিয়ে তার রুমে দিয়ে এলাম।
আসার সময় রাইয়্যারের রুমে যাওয়ার কথা মনে পরলো খেতে ডাকবো।
ভেতরে ঢুকে দেখি রাইয়্যান কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। বারান্দায় দাড়িয়ে,
আমি দাড়িয়ে আছি কথা শেষ হওয়ার জন্য। সাথে কফির কাপ নেওয়ার কথা মনে পরলো, ট্রি টেবিলের উপর থেকে কাপ নিতে যাই।
” একি কফি কেন? খাই নাই নাকি সব তো রয়েছে ঠান্ডা হয়ে আছে। ”
রাইয়্যান এসেই ফোন রেখে ফ্রেশ হতে যেতে যায়। আরুশিকে দেখেও কিছু বলে না আরুশি নিজেই বলে উঠে,
–আপনি কফি খাননি কেন?
প্রশ্ন ছুরে আরুশি রাইয়্যানের দিকে কিছু না বলে রাইয়্যান বাথরুমে ঢুকে দরজা অফ করে দেয়।
আরুশি হা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে কি হলো এটা,
একটু বাদেই রাইয়্যান দরজা খুলে বেরিয়ে এলো দেখলো আরুশি সেই ভাবেই দাড়িয়ে আছে।
আরুশি রাইয়্যান কে দরজা খুলে বাইরে আসতে দেখে নিজেকে সামলে আবার জিগ্যেস করে।
–কথা বলছেন না কেন?
রাইয়্যান নিজের মতো আয়নার দাড়িয়ে নিজেকে দেখছে চুল ঠিক করছে, মুখ মুচছে।
–উফফ কি হয়েছে বলবেন একটু? কি হলো এমন করছেন কেন? আমি কিছু বলছি আপনার কানে যাচ্ছে না।
বিরক্ত নিয়ে একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে আরুশি।
–আমি ঠান্ডা কফি খাইনা।
–হুম জানি তো। আমি তো গরম কফি রেখে গেছিলাম তাহলে খাননি কেন?
–আমি ঠান্ডা পেয়েছি তাই খাইনি।
— কি ঠান্ডা কেন পাবেন? দিলাম গরম কফি পেলেন ঠান্ডা এটা কি করে সম্ভব।
বলেই ভাবতে শুরু করে দেয়।
— আচ্ছা আপনি উঠছেন কখন?
–এখানে উঠার কি কানেকশন।
–আছে আমি কফিটা আধা ঘন্টা আগে মনে হয় রেখে গেছি।
–হোয়াট?
–হ্যাঁ।
–ডাকো নি কেন তাহলে আগে।
–আমি তো ডেকেছি, না না ডাকি নি কিন্তু শব্দ করেছি দরজা দিয়ে যাতে উঠে পরেন কিন্তু আপনি তো উঠেন ই নি আচ্ছা সমস্যা নাই। আপনাকে আবার কফি করে দিচ্ছি। থাক কফি না নিচে যান খেয়ে আসুন পরে কফি খেয়েন।
–তোমাকে এতো কথা বলতে বলেছি একাই নিজে নিজে কথা বলে যাচ্ছো কেন?
–কি হলো আপনার রেগে যাচ্ছেন কেন? কফির জন্য ওকে এখনই করে আনছি কিন্তু তার জন্য আমাকে মামার সাথে কথা বলিয়ে দিতে হবে।
–ইউ তুমি আমাকে শর্ত দিচ্ছো। কথা বলিয়ে দেবো না তাহলে কি কফি করে আনবে না।
–এভাবে রেগে কথা বলেছেন কেন আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে।
–না আমার রাগ হচ্ছে প্রচণ্ড তুমি যাও এখানে থেকে।
–রাগ হচ্ছে কিন্তু কেন? [ অবাক হয়ে ]
–তুমি কাল আমার সাথে ছিলে না কেন ওইভাবে কেন হলে? হোয়াই,
–এই জন্য আপনি রেগে আছেন?
–জানিনা যাও এখানে থেকে।
আরুশি কিছু না বলে চলে এলো রুমে থেকে।
নিচে নেমে সোজা রান্না ঘরের দিকে গেল।
–কিরে রান্না ঘরে যাচ্ছিস কেন খাবি না।[ জেসমিন]
–একটু দরকার আপু তোমরা খাও আমি পরে খেয়ে নেব।
–এখন আবার রান্না ঘরে কি দরকার তোর![ চাচি] আমাকে বল আমি করে দিচ্ছি।
–না না তুমি যাও খেয়ে না ও আমি করতে পারবো সমস্যা নাই।
আরুশি সোজা রান্না ঘরে চলে গেল।
আরেক কাপ কফি করে আবার রুমের দিকে যেতে লাগল এবার তানিশা আপুর এন্টি নিলেন,
–এইযে আরুশি তুমি কফি কার জন্য নিচ্ছো।
–রাইয়্যানের জন্য
–এখন কেন আগে দাও নি আর এখন ব্রেক ফাস্টের টাইম এখন কফি কেন দিচ্ছো। ওকে খেতে ডাকো যাও।
–উনি এখন খাবেন না বলেছেন।
–খাবে না কেন যাও বলো আমি ডাকছি কফি রেখে যাও
–কফি টা নিয়ে যাই।
–না।
উফ কোন মুশকিলে পরলাম। কি করবো এখন?
সবাই খাওয়াতে মন দিয়েছে দেখেই কফি নিয়ে বড়বড় পা ফেলে সিড়ি দিয়ে উঠে গেলাম।
এদিকে রাইয়্যান আর ও রেগে আছে যেতে বলল আর ইডিয়েট মেয়েটা চলে গেল।
কোথায় রাগ করেছি বলেছি রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবে তা না চলে গেল। রাগ এখন নিজের উপর হচ্ছে এ আমি কার সাথে রাগ করলাম এখন আমার রাগ কে ভাঙাবে।
বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কেউ কফি আমার সামনে ধরে তাকিয়ে দেখি আরুশি ।
–ধরেন কফি খান আর রাগ কমিয়ে ফেলুন।
–হোয়াট?
–ধরেন। কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
–আমি রেগে আছি তুমি জানা সত্ত্বেও এভাবে কথা বলছো একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না। আর আমি রাগ করেছি যিনে ও চলে গেলে কিছু না বলে।
আরুশি হাবার মতো তাকিয়ে আছে।
আরুশি হাতে থেকে রাইয়্যান কফি নিয়ে নেয়।
–কি হলো এখন তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
–আপনার কথার আগামাথা কিছু আমার মাথায় ঢুকছে না।
–ঢুকতে হবে না।
–রেগে থেকেন না প্লিজ আচ্ছা আজকে আপনার সাথে ছাদে বসে অনেক সময় গল্প করবো যান। মামার সাথে একটু কথা বলিয়ে দেন না
–সব কিছু তে শর্ত দিতেই হবে
–প্লিজ,
কি আর করায় এতো করে বললে কি আর বসে থাকতে পারে। রাইয়্যান আরুশির মামাকে কল করে আরুশির হাতে দিলো।
আরুশি কেদে কেটে একাকার হয়ে কথা বলছে। নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছে ফোন রাইয়্যানের হাতে দিয়ে ধন্যবাদ দিলো।
— আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলেন তো।
–কি?
–আপনি মামাকে চিনলেন কি করে?
রাইয়্যান কিছু বললো না,
–কি হলো বলেন?
–আমার খিদে পেয়েছে আরু এসব নিয়ে পরে কথা বলি কেমন।
বলেই রুম ত্যাগ করলো রাইয়্যান।
আরুশি এই কয়দিন এই বিষয়ে কথা বলার কথা মনেই ছিলো। আচ্ছা রাইয়্যান কি আমাকে আগে থেকেই চিনে। কিন্তু কিভাবে মামার সাথে যোগাযোগ করে কেন কি সম্পর্ক। মামা ও তো কিছু বলছে না।
একবার মামার সাথে দেখা করতে পারলে ভালো হতো রাইয়্যান কিছু বলবে না এটা সিউর।
সবার খাওয়া শেষ নিচে এসে দেখে আরুশি রাইয়্যান টেবিলে একা বসা আর তানিশা সোফায় বসে আছে।
আমি গিয়ে দাড়াতেই,
রাইয়্যান বলে উঠে,
–আরু তুমি কি খেয়েছো?
–আমি বলার আগেই চাচি বলে উঠে, না রে ও তো খায় নাই। তোকে না ডাকতে গেল।
–ওকে তাহলে আমার সাথে বসে পরো।
বলে পাশের চেয়ার দেখিয়ে দিলো।
আমি কিছু না বলে খেতে বসলাম। খিদে পেয়েছে অনেক রাগ নিয়ে না খেয়ে থেকে কি হবে।
–আপনি এমন কেন বলেন তো?
ফিসফিসিয়ে বলল খাওয়ার সময়,
–আমি আবার কি করলাম?
–বলছেন না কেন এমন রহস্য করে রেখেছন কেন?
–আমি আবার কি রহস্য করলাম।
–দূর আপনার সাথে কথা বলায় বেকার।
সারাদিন আর রাইয়্যান বাসার ছিলো না।
তানিশা মেয়েটাও কোথায় যেন গেছে রাইয়্যানের সাথে সাথেই বেরিয়ে গেছে।
সারাদিন এটা ওটা বসে কাটিয়ে দিয়েছি। রাত আটটার সময় রাইয়্যান বাসার ফিরে আমি তার আসার ছিলাম। আর একবার জিগ্যেস করবো মামার বিষয়ে।
রাতের খাবার খেয়ে রাইয়্যানের রুমে গেলাম। ল্যাপটপে কাজ করছে।
–তুমিইই,
–আপনি কি বিজি?
–খুব না একটু কেন কিছু বলবে?
–ছাদে যাবেন না।
–কি ব্যাপার বলো তো নিজে থেকে যাইতে চাইছো এমনে তো শত বলে ও নেওয়া যায় না।
–এমনি ভালো লাগছে নি ছাদে গেলে মনটা ভালো হয়ে যায় তাই।
–ওকে চলো।
ল্যাপটপ অফ করে উঠে দাঁড়িয়ে পরে দুজন ছাদে গিয়ে বসি।
— তানিশা আপু কি চলে গেছে।
–হ্যা,
–কোথায় গেছে!
–ওর বাসায় এখানে আর কতো থাকবে আগে চলে যেত বিয়ে বলে থেকেছে।
— উহ,
কিভাবে জিগ্গেস করবে ভাবছে,
–কি হলো আজ এতো চুপচাপ কেন?
–আমার মনে অনেক প্রশ্ন প্লিজ উওর টা দিননা।
–কিসের উওর দেবো?
–দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে ফ্রেন্ড বলেছেন।
–হুম বলেছি তো।
–ত বলেন মামার সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে?
–আবার এক প্রশ্ন উফ আরু এটা তোমার মাথায় থেকে যায় নি।
–কখনো যাবে না, না জানা পযর্ন্ত।
–সময় হলে জানতে পারবে এখন সময় টা উপভোগ করো।
–আপনারা এমন করছেন কেন আমার সাথে।
–মানে,
–মামাকে চিনেন কিভাবে এটা বলছেন না কেন প্রথম দিন ত চোর বানিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। সামান্য একটা ফুলেয জন্য। আচ্ছা মামার নাম্বার কোথায় পেলেন।
— তোমার বিষয়ে খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি।
–আমার খোজ নিয়েছেন।
–হুম।
চাদেঁর দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরলো আরুশির অনেকদিন পর মাকে খুব মিস করছি। কাঁদতে মন চাইছে কিন্তু আরুশি তো কাদঁতে চায়না মার উপর খুব অভিমান তার। আজ মা এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে না গেলে বাবা ও আমাকে ফেলে হারিয়ে যেত না। তাহলে মামির কটু কথা শুনতে হতো না।
এভাবে পরিচিত কারো বাসার পরে থাকতে হতো না।
অন্য দশটা মেয়ের মতো নিজের একটা বাসা হতো যেখানে আমার আপন মানুষের থাকতো বাবা মা আমি। খুব সুখে থাকতাম এমন কেন হলো না।
মুখ শব্দ নেই কিন্তু মনে কেদে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
গালেঁ কারো ছোয়া পেয়ে চমকে তাকায় রাইয়্যান ওর এক আঙুল দিয়ে আরুশির পানি ছিটকে সরিয়ে দিলো গাল থেকে।
হালকা টাচ লেগেছে। একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছে মনে হলো কারেন্টে শক লাগলো।
–কাদঁছো কেন?
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
–কাদঁতে মন চাইছে তাই।
–এটা কেমন কথা কাদঁতে আবার মন চাই নাকি কারো।
–আমার চায়।
রাইয়্যান কিছু বলল না আর শুধু তাকিয়ে রইল,
কিছুক্ষণ পর,
–আরু,
–কি?
— কান্না হয়েছে।
আরুশি রেগে তাকালো মজা করছে এখনো আমি কষ্ট পাচ্ছি আর উনি মজা করছে।
— কি হলো কথা না বলে রেগে তাকিয়ে আছো কেন?
— আপনি আসলেই অসভ্য লোক।
–কি অসভ্যতামি করেছি আমি যে এটা বললে।
— কান্না হয়েছে কিনা জিগ্গেস করলেন কেন?
–এটা জিগ্গেস করলে অসভ্য হয়ে যায়।[ অবাক হয়ে ]
–না কিন্তু আমি কাদঁছি দেখলেন কান্না করতে না করবেন তা না জিগ্গেস করেছেন হয়েছে কিনা।
–ঠিকই তো বলেছি আমি বললেই কি কান্না অফ করতে।
–তাই বলবেন ও না।
–ওকে বলছি কান্না করো না তোমার জন্য গিফট আছে।
–গিফট?
–হুম।
–কই দেখি কি গিফট?
–এখন তো নাই কাল দেব নি।
–তাহলে এখন বললেন কেন? আমার কান্না অফ করতে গিফট দিলে ও আমি কান্না অফ করব না।
–কি জন্য কাদছো বলবে তো।
— আম্মুর কথা মনে পরছে খুব।
কেদে বলল কথাটা,
আম্মু কথা শুনতেই রাইয়্যান ও নিজের মার কথা মনে পরে যায় রাইয়্যানের। দুজনই দুকোনা বসে নিজেদের আপন মানুষ কে ভেবে যাচ্ছে।
–নিচে চলো অনেক রাত হয়ে গেছে।
আরুশি সোজা নেমে গেল।
পরদিন
রাইয়্যান আরুশিকে কলেজে নামিয়ে দেয়। সাথে হাতে একটা ফোন দেয়।
–এটা দিচ্ছেন কেন?
–এটা তোমার গিফট।
–ফোন,
–হুম নাম্বার সেভ আছে আমার দরকার হলেই ফোন দিয়। ওকে আর দাড়াতে পারছি না তুমি ভেতরে যাও
বাই।
–আরে আরে শুনেন তো।
কে শুনে কার কথা রাইয়্যান তো উধাও ।
–কি রে আরুশি এখানে দাড়িয়ে আছিস কে ভেতরে চল।
পেছনে তাকিয়ে দেখে সোনালী।
#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ১৮
–হুম চল,
–এই তোর হাতে এটা কি ফোন? তোকে কি নিউ ফোন কিনে দিচ্ছে দেখি।
বলেই হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিলো,
–ও মাই গড আই ফোন। এতো দামি ফোন তোর আববু তোকে আই ফোন কিনে দিছে। আর আমাকে দেখ কতোদিন ধরে বলছি এখনও কিনে দেয়নি।
— আববু না।
— কি বলছিস আববু না মানে আবার কি? আরুশি তুই কিন্তু এখন ও নাম ছাড়া আর কিছু বলছিস নি তোরা কি অনেক ধনী বলনা। তোর বাবা কি অনেক নামীদামী কেউ কতো বড় গাড়িতে এলি দেখলাম।
–ওইটা আমার গাড়ি না।
–তোর গাড়ি না আন্কেলে ওই একই হলো তোদেরই তো।
আরুশি ওর ব্যাপারে কিছু বলেনি সোনালীকে। তাই সোনালী জানে না ওর বাবা মা নেই। অন্যের বাসায় থাকে।
–আরুশিইই, পরে তোর ব্যাপারে শুনবো এখন ক্লাসে চল ঘন্টা দিয়ে দিচ্ছে।
দুজনে গেটের ভেতরে ঢুকে গেল।
সোজা ক্লাসে গিয়ে থেমেছে।
.
রাইয়্যান আরুশির মামার সাথে দেখা করতে গেছে। একটা রেস্টুরেন্টে ওর মামা বসে আছে। রাইয়্যান গাড়ি র্পাক করে ভেতরে গিয়ে তার সামনের সিটে বসে একটা হাসি দেয়।
–কেমন আছেন?
–আছি কোনরকম বাবা, বাড়িতে কি জামেলা হয় তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আরুশির মামি তো সব সময় আমাকে চোখ চোখে রাখে কোথায় যাই কি করি। তার বিশ্বাস আমি জানি কোথায় আরুশি আছে তাই আমাকে ফলো করে। ওই যে আছে না একটা ছেলে সে তো আরুশিকে সব জায়গা হন্যে হয়ে খুজছে।
— চিন্তা করবেন না আন্কেল আরু আমার কাছে একদম সেভ থাকবে। কিন্তু প্রবলেম ও বারবার আমাদের যোগাযোগ কিভাবে হলো, আমি আপনাকে কি করে চিনলাম বলে বলে পাগল করে ফেলছে?
–তুমি একটু ওকে দেখো আগেই আমাদের সম্পর্কটা বলো না ও মেনে নিতে পারবে না। একটু সময় নিয়ে বলতে হবে।
— হ্যাঁ জানি এই জন্য আমি ওকে কিছু বলিনি।
–ঠিক করেছো বাবা। এবার আমাকে উঠতে হবে। আরুশিকে একটু দেখে রেখো খুব চিন্তা হয়। নিজের কাছ ছাড়া করতে চাইনি কিন্তু ওর মামির জন্য পেরে উঠলাম না। এখন তুমিই ভরসা।
–ডোন্ট ওয়ারি আন্কেল। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন আমি থাকতে আরুর কোন প্রবলেম হবেই না।
আরুশির মামা চলে গেল রাইয়্যান ও নিজের চোখে সানগ্লাস টা চোখে পরে বেরিয়ে গাড়িতে চরে চলে গেল।
এদিকে একজন কঠিন দৃষ্টি দিয়ে তাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
ক্লাস শেষে আরুশি আর সোনালী একসাথে বেরিয়ে পরে। মাঠে আসতেই সোনালী একটা বয়ষ্ক লোক দেখেই দৌড়ে লাগায়।
আরুশি বুঝতে পারছে না লোকটা কে, ওর আববু নাকি, কিন্তু এতো বয়ষ্ক দেখে ভনে হচ্ছে দাদা হবে হয়তো।
আরুশি এ এগিয়ে গেলো, এবার ওদের কথা শোনতে পেলো তাতে বুঝতে পারলো এটা সোনালীর দাদা
আমার দিকে তাকিয়ে জিগ্গেস করলো আমি কে সোনালী আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। খুবই ভালো একজন মানুষ কতো সুন্দর হেসে হেসে কথা বলে। অন্যের পরিবার দেখলে নিজের কষ্টটা আর তীব্র হয়ে উঠে,
–আরুশি আজ আর দাড়াতে পারছি না আমি যাই দাদু আসছে নিতে। কাল কথা হবে ওকে আর আমার নাম্বার তোর ফোনে সেভ করে দিয়েছি কল করব নি রাতে। বাই,
আমি ও হাত উঠিয়ে বাই জানালাম। দাদুটা আমাকে ও একদিন যেতে বললো সোনালীর সাথে।
গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি অটোর জন্য। রাইয়্যান বলছিলো আসবে আসুক গা অটো পেলে চলে যাবো আর যদি অটোর আগে আসে তাহলে তো তার সাথেই যেতে হবে।
হঠাৎ মনে হচ্ছে কেউ আমাকে দেখছে কিন্তু কে এখানে আমাকে দেখবে খেয়াল করবে। সামনে পেছনে দোকান আছে। সামনের দোকানে চেনা জানা কেউ তো নেই। পেছনে তাকাতে যাবো তার আগেই রাইয়্যানের গাড়ি এসে থামে সামনে।
জানালা দিয়ে আমাকে ডেকে উঠে,
–আরুওও উঠে এসো,
পেছনে আর ফিরলাম না। গাড়িতে উঠে বসলাম[ পেছনে ফিরলে সর্তক হতে পারতো ওর জন্য কতো বড় বিপদ অপেক্ষা করছে]
–সো সরি লেট হয়ে গেল। অনেক সময় দাড়িয়ে ছিলে তাই না আসলে,
–কৈইফত দিতে হবে না।
হাত দিয়ে থামিয়ে।
–তোমাকে আমার কৈইফত দেওয়ায কোন ইচ্ছে নেই ওকে।
–তাহলে দিচ্ছেন কেন? আর আপনি এতো চেন্জ হলেন কিভাবে বলেন তো। সত্যি আমি শক খাচ্ছি শুধু।
–আমি চেন্জ হয়েছি তোমার জন্য [ ফিসফিসিয়ে বললো]
আরুশি বড় বড় চোখ করে রাইয়্যানের দিকে তাকালো,
–কিহ বললেন?
–থতমত খেয়ে, কই কিছু না তো।
–বিরবির করে কি যেন বললেন?
–তুমি কানে বেশি শুনো আমি কিছুই বলিনি।
আরুশি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে,
–এভাবে তাকাও কেন?
আরুশি মুখ ভেংচি দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর,
–কোথায় যাচ্ছেন এটা তো বাসার রাস্তা না।
–হুম।
–তাহলে এদিকে যাচ্ছেন কেন?
–এখন তো বাসায় যাব না তাই।
–মানে [ অবাক হয়ে] বাসায় যাবো না তো কোথায় যাবো।
–তোমার মনে নেই! [ অবাক হয়ে]
–কি মনে থাকবে?
–কাল রাতে না বললাম আজ ঘুরতে যাবো।
–এখন আমার ভালো লাগছে না। বাসায় চলেন।
–নো এসে গেছি নামো।
আরুশি ভাবছে এতো তারাতারি কোথায় এলাম। তাকিয়ে দেখি কলেজ থেকে একটু দূরের রেস্টুরেন্টে।
মাথায় হাত আরুশির ঘুরতে যাবে বললো এখন আবার রেস্টুরেন্টে গাড়ি থামিয়ে বলছে এসে গেছি ইনি কি পাগল হয়েছে আল্লাহ জানে।
–আরু নামো।
–না
–না মানে কি আছ ঘুরতে যাবোই। নামো তারাতারি?
–আপনার মাথায় কি প্রবলেম আছে বলেন তো?
–হুয়াট তুমি আমাকে মাথা খারাপ বলছো, আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইছি আর তুমি আমার মাথা খারাপ বলছো। তুমি আসলেই একটা ঝগড়ুটে মেয়ে।
–ও হ্যালো একদম আমাকে ঝগড়ুটে বলবেন না বলে দিচ্ছি। আমি মুটে ও ঝগড়ুটে না ওকে।
–একশ বার বলল তুমি ঝগড়ুটে, ঝগড়ুটে।
–আপনি এসব বলতে এখানে নিয়ে এসেছেন তাই না। নিজে ঝগড়া করে আমাকে ঝগড়ুটে বলা আপনি ঝগড়ুটে সাথে পাগল।
–হোয়াট ইউ আমাকে পাগল বলছো।
–হুম বলছি।
–কোন দিক দিয়ে তোমার আমাকে পাগল মনে হয় শুনি।
–আপনাকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না এইটা। কিন্তু আপনার সাথে কিছু সময় কাটালে আপনার কান্ড কারখানা বুঝে যাবে আপনার মাথায় সমস্যা আছে।
–হোয়াটটটট, [ চিৎকার করে বলল।]
–ইয়েস, আপনি আমাকে রেস্টুরেন্টে ঘুরতে নিয়ে এসেছে। এটা কোন ঘুরার জায়গা এতে আপনাকে পাগল বলবে না বলেন।
মাথা খারাপ করে দেবে এই মেয়ে উফফ,
–নামো, আর একটা ও বাজে কথা বলবে না নামো।
— কিন্তু এখানে,
–নামতে বলেছি।
রেগেই বলল,
আরুশি কিছু না বলে নেমে এলো ভয় করছে রাইয়্যানের এমন কথা শুনে। এভাবে রেগে যাবে ভাবেনি এই রেগে উঠে এই মজা করা কিছু বুঝি না উনার মতি গতী।
–রাইয়্যান আগে আগে হাটছে আমি পেছনে পেছনে যাচ্ছে। একটা টেবিলে গিয়ে বসলো রাইয়্যান আরুশি গিয়ে দাড়িয়ে চারপাশ দেখছে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে হা করে।
এবার বুঝলাম আমাদের দিকে না রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। রাইয়্যানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নাই
–কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো,
–হুম।
আরুশি গুটিশুটি মেরে বসে পরে।
–এভাবে মুখ ঘোমরা করে আছো কেন?
–তো কি আপনার ধমক খাবো।
–না বুঝে উল্টো পাল্টা বললে তো ধমক দেবোই।
–আমি না বুঝে বাজে কি বকলাম শুনি।
–বাজেই তো বক না হলে রেস্টুরেন্টে এসেছি দেখে এটা বেরানোর জায়গা ভাবলে কিভাবে? আমরা এখানে খেতে এসেছি না খাইয়ে ঘুরতে গিয়ে তোমাকে অসুস্থ করতে চাইনা বুঝছো।
আরুশি হা হয়ে তাকিয়ে আছে রাইয়্যানের দিকে। ও এটা একটু ভাবে নি ছি ছি আমি কি ভুল ভাবি। নিচের দিকে তাকিয়ে নিজে কে বকে যাচ্ছি হঠাৎ চেচামেচি হতেই আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টের সবাই রাইয়্যান কে ঘিরে আছে।
বসে বসে তাকিয়ে আছি। দশমিনিট পর সবাই গেল রাইয়্যান বড় একটা দম নিয়ে চেয়ারে বসলো,
–উফফ মাক্মটা নিয়ে আসিনি জামেলায় পরতে হলো।
আরু তুমি আমাকে একবার ও কল করলে না কেন? আমার ফোন ও রিসিভ করলে না
— আপনি ফোন দিছিলেন।
-হুম দিছিলাম ধরলে না তো।
–আমি তো দেখিই নি।
–তোমার ফোন কোথায়?
–ব্যাগে,
— আচ্ছা,
খাবার আসতেই খেয়ে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসি।
ইংলিশ একটা গান ছারছে,
–উফ গান অফ করেন মাথা নষ্ট করে ফেললেন তো।
–গান শুনে মাথা নষ্ট হয়। কি সব বলো তুমি আরু?
–এটা কোন ধরনের গান অফ করেন আমার মাথা ব্যাথা করছে।
আসলেই আরুশির মাথা ব্যাথা করছে এখন চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিলো।
রাইয়্যান আরুশির মুখের ভঙ্গিতে বুঝলো ব্যাপার টা ও গান বন্ধ করে।
আরুশির দিকে তাকিয়ে বলল,
–আরু,
আরুশি চোখ খুলে বলল, কি?
–তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে তাহলে চলো বাসায় চলে যাই ঘুরতে অন্য দিন যাবো নি।
খারাপ লাগছে কিন্তু রাইয়্যানের মুখটা মলিন দেখে আরুশি বলল, না অামি ঠিক আছি চলেন।
— সত্যি তো খারাপ লাগলে বলো।
— সত্যি।
রাইয়্যান খুশি হয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো,
গাড়ি থামতেই আরুশি রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো,
–এসে গেছি নামো।
বলেই রাইয়্যান নেমে গেল আরুশি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।
এতো সুন্দর জায়গা মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছে।
–কি হলো ম্যাম আপনি ওইখানেই বসে থাকবেন নাকি নেমে আমাকে ধন্য করবেন।
— আপনার কথা শুনে কি মনে হচ্ছে জানেন।
–কি?
–আমি মালকিন আর আপনি আমার সেক্রেটারি?
বলেই আরুশি হাহাহা করে হেসে উঠলো, সাথে নেমে ও পরলো,
এমন হাসি দিলে আমি তোমার সেক্রেটারি হয়ে সারাজীবন থাকতে চাই আরু,।
–বিরবির করে কি এতো বলেন?
–কই কিছু না না চলো।
–জায়গা টা অনেক সুন্দর।
চারপাশে দেখছে আর হাটছে। মুখে হাসি যা একজন মুগ্ধ হয়ে দেখছে এই হাসি মুখ দেখার জন্য এখানে নিয়ে আসা।
হঠাৎ আরুশি রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে দেখে রাইয়্যান ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেমন করে যেন?
আরুশি ভ্রু কুচকায়,
–আপনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
সন্দেহ চোখে রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে।
সাথে সাথে রাইয়্যানের কাশি উঠে যায় এভাবে ধরা খাবে ভাবেনি।
–কই কখন তাকালাম?[ কাশতে কাশতেই]
–এই মাএ আমি দেখেছি আপনি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছেন। আপনার মতলবটা কি বলেন তো এমন নিরিবিলি জায়গার নিয়ে এসেছেন কেন আমাকে?
রাইয়্যান হা আরুশি এমন কথা শুনে।
–তুমি কি বলতে চাইছো আরু। আমার তোমাকে এমন মনে হয়।
–নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করিনা ওকে। তাই এসব বলে লাভ নাই।
–তুমি ভাবলে কি ই রাইয়্যান চৌধুরী যার জন্য হাজার মেয়ে বসে আছে সে তোমাকে নিয়ে ভাবতে যাবো। এসব ফালতু কথা মাথা থেকে ঝেযে ফেলে দাও ওকে আমি জাস্ট তোমাকে ফ্রেন্ড ভাবি ওকে।
–ওকে।
বলেই আরুশি ঘুরতে লাগলো।
চলবে❤
Tanjina Akter Misti
চলবে ❤
Tanjina Akter Misti