#আমার_তুমি❤️
#লেখিকা:তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-২৫
গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছি ।
সোফার রুমে একটা বড় ঘড়ি আছে যেটা দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা দশ বাজে এখনো রাইয়্যান বাসায় আসেনি। সেই যে তানিশা আপু চলে গেছে।
এরপর আমিও উপরে যায় তার সাথে কথা বলার জন্য সরি বলার জন্য রায়ান আমাকে পাত্তাই দিল না। আমি কিছু বলবো তার আগে সে রুমে থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে সোজা বেরিয়ে পরলো,,,,
সেই যে বেরিয়েছে এখন অব্দি বাসায় আসেনি।
কোথায় আছে কে জানে চাচির কাছে থেকে জানতে পেয়েছি। রাইয়্যানের পছন্দের খাবার কি?
তারপর রান্না করেছি কিছুটা যাতে রাগ ভাঙাতে সুবিধা হয় ।কিন্তু এখন অব্দি বাসায় আসলো না রাগার কি ভাঙ্গা ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
এদিকে যার জন্য বসে আছি তার পাত্তা নাই খবর নাই।
সোফাই পা উঠিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি কলিং বেল বাজালে তো জাগানা পাবই। এখন একটু চোখ বন্ধ করে থাকি ততক্ষণ না আসা পর্যন্ত।
ঘুম ভাঙলো চাচির ডাকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি চাচী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি আমার রুমে শুয়ে আছি।
হঠাৎ কালকে রাতের কথা মনে পড়ল আর সাথে সাথেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম,,,, এটা কি করে সম্ভব আমি এখানে কি করে এলাম আমিতো সোফায় ছিলাম।
রাইয়্যানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বাইরে চলে গেল জানালা দিয়ে সূর্যের আলো আসছে। তারমানে এখন সকাল আমি রুমে আসলাম কিভাবে আর সারারাত পারি বা করলাম কিভাবে?
—-চাচি আমি রুমে আসলাম কিভাবে আমি যে সোফায় বসে ছিলাম?
—-তাতো জানিনা।
—রাইয়্যান এসেছে?
–হ রে আমিতো কফি দিয়ে আসলাম। তুই তো আজ ওঠলি না আগে তাই আমি কফি করে দিয়ে আসলাম বড় সাহেব ও । এখন উঠ হাতমুখ ধুয়ে নিচে আয় খাবি না কিছু। রাতে অত কিছু খেলি না।
—চাচি তুমি কি রাতে জেগে ছিলে ! তুমি কি দেখেছো রাইয়্যান রাতে খেয়ে ছিল কিনা।
—নারে আমি তো জেগে ছিলাম না। তরে খেতে বলে গেলাম তারপর ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে উঠে দেখলাম তোদের খাবার সব সেইভাবেই ডাইনিং টেবিলে । তাই বুঝতে পারলাম কেউই খাচ্ছ নাই।
—আচ্ছা তুমি যাও আমি আসতাছি
—চাচি আর কিছু বলল না চলে গেল আর আমি ভাবছি তার মানে রাইয়্যানই আমাকে ঘরে এনেছি রুমে শুয়েছে দিয়ে গেছে। নিজেও খাইনাই আর আমাকে ও খেতে দিলো না ডাকলে দুজনে খেতে পারতাম এখন খুব খিদা লাগছে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলাম। আঙ্কেল নিচেই আছে পেপার পড়ছে ।
চাচি খাবার বারছে। আমি ও হাতে হাতে কাজ করছি,
আঙ্কেল কে দেখে খেতে বসতে বললাম একটু পরে রাইয়্যান ও এসে বসে পরলো ফোনে কি যেন করছে আর একটু একটু খাচ্ছেন। আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাকে থাকতে ভালো লাগছে অন্য রকম একটা ফিলিংস আছে। দুঃখের বিষয় রাইয়্যান একবারের জন্য আমার দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা সত্যি খুব দুঃখিত বার বার চাইছি আমার দিকে তাকাও একটু কিন্তু তবুও তাকাচ্ছে না।
আমি তার খাবার বেড়ে দিচ্ছি শব্দ করে বারছি যেন আমার দিকে তাকাক কিন্তু সে আমার সব আসায় জল ফেলে দিয়ে ফোনে দিকে রইল।
ব্যথিত চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি রাইয়্যানের দিকে,,,
—-রাতে না খেয়ে ছিলি তাড়াতাড়ি খেতে বসে তুই ও আমি তো আছি বেরে খাওয়ানো জন্য ।
চাচি কথাটা বলে,,
আমাকে বসার জায়গা করে দিল।
—–চাচী আমি পরে খাব তোমার সাথে এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
কথাটা বলতে দেরি হল কিন্তু ধমক শুনতে দেরি হলো না।
রাইয়্যান অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল ,,,,,
তারপর আমার সাথে কথা না বলে চাচী কে অনুসরণ করে বলল, ” আমি যদি এখন খেতে না বসি তাহলে আমার খবর আছে। ”
কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে রাইয়্যানের দিকে তাকালাম ,,,
আমি ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি রাইয়্যানের দৃষ্টি নিচের দিকে এখন নিচের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে। চেয়ার টেনে বসলাম আমাকে বললে,,, কি হতো না তার আরেকজনকে বল আমাকে বোঝাতে হবে হূ।
রাইয়্যানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি দুই হাত ঘষা ঘষি কারছি একহাত দিয়ে আরেক হাতে।
বুঝতে পারছিনা কি বলব যে য়ে কিভাবে কি বলে কথা শুরু করবো।
এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে কোন সমস্যার সমাধান হবে না।নিজেকে স্বাভাবিক করে ঘরে ঢুকার জন্যে দরজার দিকে হাত বাড়ালাম একটু ঝুঁকে পড়লাম এমন সময় একাই দরজা খুলে গেল দরজা। খোলার জন্য আমি হাত বাড়িয়ে ঝুঁকে ছিলাম আচমকা খুলে যাওয়ার পরে যেতে নেই।
ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি এই যে আমার মাজা টা গেল।
কিন্ত একি আমি পড়ছি না কেন? কেউ আমাকে ধরে রেখেছে শক্ত করে তাকিয়ে দেখি রাইয়্যান রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
—ডিসকাস্টিং দেখে চলাফেরা করতে পারে না এখনই তো পড়ে যাচ্ছিলে। এই জন্যই তোমার প্রতি আমার এত রাগ হয় এখানে কি করছিলে? কি হলো হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন সব সময় এমনটা কিন্তু আমি পছন্দ করিনা। আগে তোমার মুখে কথার কৈ ফুটত আর এখন একদম বোবা হয়ে গেলে ।
–আমি আসলে,,,,
রাইয়্যানের আমাকে ছেড়ে দিয়েদূরে গিয়ে দাঁড়াল আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আংগুলে আংগুল পেচিয়ে ভাবছি কিভাবে সরি বলা যায়।
কিভাবে বললে ক্ষমা করে দেবে,,
ভেবেই যাচ্ছি ভেবেই যাচ্ছি হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি রাইয়্যান বেরিয়ে যাচ্ছে।
আমি তারাতারি তার পেছনে ছুটলাম ।
—আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন ?আমরা আপনার সাথে কথা আছে খুব ইম্পর্টেন্ট দাঁড়ান প্লিজ।
—আমার সময় নাই ভিতরে যাও তুমি।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি রাইয়্যান সোজা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল ।আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে সেই দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এখন হাত পা ছড়িয়ে কাদতে ইচ্ছে করছে ।এতটাই ইগনোর আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি যে খুব ভালোবাসি রাইয়্যানকে সেটা কি ও বুঝতে পারছে না । এভাবে আমায় কেন এড়িয়ে চলছে। আমি যে কষ্ট পাচ্ছি সেটা কি ও বুঝতে পারছিনা। সরি বলার সুযোগ পাই দিচ্ছে না সব সময় পালায় পালায় করে। আগে তো সবসময় আমার পিছনে পড়ে থাকতো আর এখন আমি যেই পেছন পড়েছি সেই নিজে ভাব দেখাচ্ছে।
সোনালী থেকে দারুন একটা আইডিয়া নিয়েছি ।এবার আমার সরি বলা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। যতোই ইগনোর করো না কেন রাইযয়্যান বাবু তোমাকে তো এবার আমি সরি বলবই।
দুপুরের পরে রাইয়্যান বাসায় আসে এদিকে ওদিকে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজছে।
সামনে কথা না বললেও না তাকলেও পেছনে পেছনে সব সময় রাইয়্যানের চোখ সবসময় আরুর ওপর এই থাকে।
ইচ্ছে করেই রাইয়্যান এরকম রাগ করছে ওর ওপর ও বোঝাতে চায় আরুশিকে যে ভালবাসার মানুষকে ইগনোর করলে কতটা খারাপ লাগে এখনো ও বুঝবে হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
আশেপাশে কোথাও আরশির দেখলো না সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার পর আরশির রুমে উঁকি দিতে ভুললো না কিন্তু আরোশী রুমেও নাই গেল কোথায় মেয়েটা।
একটু সময় না দেখলে ই কেমন জানি লাগে সব সময় চোখের সামনে দেখতে চাই। কত সময় ধরে দেখিনা সকালে সরি বলতে চাইছিল আমি জানি এজন্য এভাবে চলে গিয়েছিলাম। সরি বলতে দিলেই তো সব মিটে যাবে আরুশী মুখটা মলিন করে সরি বললে তো আমি আর রাগ করে থাকতে পারব না । এজন্যই তো আমি ওকে সরি বলার সুযোগ দিচ্ছি না।
খুব জ্বালিয়েছো তুমি আমাকে। একটু ভালবাসি সেটা বোঝার চেষ্টা করনি এখন দেখো নিজে কেমন লাগে। আমার তো মজাই লাগছে তুমি ভাবছো আমি তোমাকে ইগনোর করছি কিন্তু তুমি তো জানো না আমি তোমার উপর একটু রেগে নেয়। তোমার উপর কি আমি রেগে থাকতে পারি আমি শুধু তোমাকে একটু এড়িয়ে চলছি তোমাকে বোঝাচ্ছি ভালোবাসা কি?
ভালোবাসার মানুষ ইগনোর করলে কতটা কষ্ট লাগে যা তুমি আমাকে করেছো। বুঝনি আমার ভালোবাসা টা সবসময় ভুল বুঝেছ ।তানিশাকে নিয়েও তোমার মনে আমাকে নিয়ে ভুল ধারণা ছিল সেটা তো আমি সেই দিনই বুঝতে পেরেছি যেদিন তোমার মুখে আমি রাগ দেখেছিলাম সেদিনই তোমাকে আমার মনের কথা জানিয়ে দেবো ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি কি করলে আমাকে এড়িয়ে চললে। কথা বলার সুযোগ দিলে না খুব খারাপ লাগছিল।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে নিচে খাবার খেতে এল।
এখন ও আরুকে দেখছি না কোথায় আছে কে জানে চিন্তা হচ্ছে কিন্তু সবাই জানে ওর উপর রেগে আছি। এজন্য কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে ও পারছি না। মনটা আনচান আনচান করছে একবার দেখার জন্য চোখ ব্যাকুল হয়ে আছে।
হালকা কিছু খেয়ে রুমে চলে এলাম ভালো লাগছেনা।
—-আরো কে দেখেছ কোথাও তোমরা?
—দুইজন গার্ড কে জিজ্ঞেস করল রাইয়্যান দুজনে মাথা নাড়িয়ে না বলল,, তারা দেখেনি।
–আর না পেরে মানিকেই জিজ্ঞেস করল,,
মানি বলল,, আরু নাকি জেসমিনের বাসায় গেছে?
—কখন ফিরবে?
–তা তো আমাকে বলে যায়নি!
রাইয়্যান রাগে ফায়ার হয়ে রুমে এসে বসল,,
প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। কি আর করা একটা ঘুম দিল।
চায়ের কাপ শব্দ করে রাখায় ঘুম ভেঙে গেল রাইয়্যানের চোখ মেলে তাকাল ও ভেবেছে আলু এসেছে তাড়াতাড়ি আশেপাশে তাকালো আছে কিন্তু না কেউ নেই রুমে ।
উঠে বসে কফির কাপটা হাতে নিতে যাবে । এমন সময় কফির কাপের নিচে একটা চিরকুট দেখতে পেল। ব্রো কুঁচকে চিরকুট টার দিকে তাকিয়ে আছে । লাল একটা কাগজের টুকরা খুব একটা বড় না ভেতরে দুই তিনটা শব্দ লেখা যাবে।
বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে।
এটা কি ওর জন্য কে দিল নাকি অন্য কারো। কে দেবে আরু? কফির কাপটা টি টেবিলের উপরে রেখে কাগজটা হাতে নিল একটা ভাঁজ করা।
কাগজটা খুলে তাকিয়ে আছে লেখাটা দেখে হেসে ফেললো ,,
এটা যে আরু কাজ তা বুঝতে বাকি রইল না রাইয়্যানের। কাগজে লেখা আছে ইয়া বড় করে একটা
“ সরি “আর একটা মেয়ের ছবি আঁকা যেখানে হাত কানে ধরে সরি বলছে এটা দেখে হেসে ফেললো রাইয়্যান। অস্পষ্ট স্বরে বলল ,,,,,, পাগলী একটা
ট্রের উপরে আরেকটা কাগজ দেখতে পেল সেখানে লেখা আছে। আপনার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছি।
খাটের উপর একটা সাদা শার্ট দেখতে পেলাম সাথে প্যান্ট আর সবকিছু আছে। এগুলো আরু রেখে গেছে
আরুও মাথায় চলছেটা কি? কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছে। ভেবে খুশি মনে হতে লাগলো,,,
একটা পরী হ্যাঁ লালপরী দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। যার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে চুরির ঝনঝন শব্দ কানে আসছে অন্ধকারে হালকা ডিম লাইট তাকে হালকা দেখা যাচ্ছে। রাইয়্যান এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে চোখে তার মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে। কানে গোলাপ ফুল আরুর এটা দেখিয়ে রায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এটাতো শুকনো শুকনো লাগছে গোলাপ তাও চেনা চেনা লাগছে। ওহে এটাতো যেটা আমি দিয়েছিলাম আরু রুমে ফুলটা হালকা শুকিয়ে গেছে কিন্তু অতটাও শুকায়নি খারাপ লাগছে না।
রাইয়্যান একদম আরু ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো একটুর জন্য গা ঘেঁষে নি একটু ফাঁকা রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
—আরু রাইয়্যানের উপস্থিতি বুঝতে পেরেছে তাকাতে পারছে না। ওর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে এইসব কিছুর প্ল্যান সোনালি আর জেসমিন আপু থেকে নিয়েছি।
—এত লজ্জা কেন লাগছে হাত পা অবশ হয়ে আসছে ঘাড় ঘোরানোর শক্তিটুকুও পাচ্ছি না মনে হচ্ছে আমার শরীরে এক ফোঁটা শক্তিও নেই পরে যাব। সত্যি আরেকটু দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না পরে যেতে নিলাম রাইয়্যান আমার পেছনে ছিল দুই হাতে আমাকে শক্ত করে ধরে ফেললো,,,
—আরু আর ইউ ওকে তুমি ঠিক আছো তো!!
#আমার_তুমি❤️
#লেখিকা:-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-২৬
—আর ইউ ওকে আরু তুমি ঠিক আছো??
আরুশির চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। এমন লাগছে কেন আজকে বুকের ধুকধুকানিটা এত জোরে হচ্ছে যেন বাইরে শোনা যাবে। হাত পা অবশ হয়ে আসছে একটু শক্তি ও নাই দাড়িয়ে থাকার রাইয়্যান আমাকে ধরে রেখেছে। আর একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে কী হয়েছে আমার চোখ খুলছে না কেন? অসুস্থ কিনা কিন্তু আমি তো নিজেকে স্বাভাবিক করতে ব্যস্ত।
সোজা হয়ে রাইয়্যানের থেকে দূরে দাঁড়ালাম,,,,
দুই হাত মোচরা মোচরি করছি কিভাবে বলব কথাটা ভাবছেন সোনালী বলেছে বেশি ভাববি না সোজা আই লাভ ইউ বলে দিবি। তোর বেশি ভাবাভাবির মানে নার্ভাস হয়ে তখন দেখবি আসল কথাটাই বলতে পারিস নি।
—-আরো কি হল তোমার কথা বলছো না কেন তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? আমার দিকে তাকাও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কেন?
—আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি আপনি এত চিন্তা কইরেন না।
–আচ্ছা তাহলে এত ঘামছ কেন?
—আমি কপাল থেকে ঘাম মুছে বললাম,,
আমার না খুব গরম লাগছে শাড়ি পড়েছি তো এজন্য।
—শাড়িটা তো জর্জেট আর এখানে কত বাতাস আছে। বাতাসেও তোমার গরম লাগছে![অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল]
তাকে তো আর বলতে পারছি না ।আমার কেন এমন হচ্ছে এটাতো আর তাকে বলতে পারছিনা। সত্যি অনেক বাতাস ছাদে এমনিতেই অনেক বাতাস থাকে। আমি বেশি নার্ভাস হয়ে গেলে তখন আমার এমনি হয় তা তো আর রাইয়্যান জানেনা।
–জানিনা কিন্তু আমার খুব গরম লাগছে।
—আচ্ছা তাহলে শাড়ি চেঞ্জ করে ফেলো।
—আমি মাথা উঁচু করে রাইয়্যানের দিকে তাকালাম যার জন্য শাড়ি পরেছে সে তো বলবেই না কেমন লাগছে এখনি খুলে ফেলতে বলছে কি অসভ্য লোক উনি কি বুঝেনা নাকি কিছু।
লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে প্রশ্ন করেই ফেললাম,,, আর প্রশ্ন করবই না কেন তার জন্যই তো পরেছি।
—আমাকে শাড়ীতে কেমন লাগছে বললেন না তো। আমি কি দেখতে খারাপ লাগছে কিছু না বলেই খুলে ফেলতে বলছেন কেন?
—কি বলবো তুমি তো বললে তোমার গরম লাগছে গরম লাগলে শাড়ি পড়ে থাকার কি আছে খুলে ফেলো? তোমার ভালোর জন্যই তো বললাম!
—আপনি কে আমার এত ভালো চাইতে হবে না আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দেন। এত কষ্ট করে সাজলাম , শাড়ি পড়লাম যাতে আপনার পছন্দ হয়। আর আপনি আমার একটুও প্রশংসা করলেন না সুন্দর বললেন না। শাড়ি খুলে ফেলতে বলছেন গরম লাগছে বলেই কি শাড়ি খুলে ফেলতে বলবেন। গরম জাতে না লাগে তেমন কিছু তো করতে পারেন।
—রাইয়্যান হা করে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে আরু এতকিছু বলছি ওর খুব মজাই লাগছে,,, আরুকের রাগাতের পেরে আপুকে আর ও রাগাতে ইচ্ছে করছে।
—কি হলো কিছু বলছো না যে আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে তাইনা এইজন্য আমি শাড়ি পরতে চাইছিলাম না ।শয়তান সোনালীর জন্য ও বলল আমি শাড়ি পরলে নাকি আপনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবেন আর সব রাগ উবে যাবে । আর এখন সব উল্টো হচ্ছে আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন ও না ভালো করে।
মুখটা কালো করে আর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আরুর খুব খারাপ লাগছে আমাকে এতটাই খারাপ লাগছে যে রাইয়্যান ভালো করে আমার দিকে তাকাল না একটু প্রশংসা ও করল না । এতবার জিজ্ঞেস করলাম তবুও কিছু বলল,,
শাড়ি আরএক মুহূর্ত পড়ে থাকবো না। আমার তোমন রক্ষার্থে ও তো একটু প্রশংসা করতে পারত।
এখন এই ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলব, কথাটা ভেবে আরু গেটের দিকে এগোতে লাগে সাথে সাথে কেউ ওর হাত টেনে ধরে।
তাকিয়ে দেখে রাইয়্যান ও ভ্রু কুচকে তাকায় কিছু বলবে তাঁরা আগে রাইয়্যান বলে ওঠে,,,,,
—কোথায় যাচ্ছ?
—অসহ্য লাগছে আরুশির এখন সব কিছু। রাইয়্যানের কথাটা শুনে আর ও রেগে অগ্নিদৃষ্টি করে রাইয়্যানের দিকে তাকালো ,,তারপরে বলল,,,
—- জানেন না কোথায় যাচ্ছি শাড়ি চেঞ্জ করে ফেলব যার জন্য পড়েছে তারই যদি ভালো না লাগে এটা পড়ে থেকে আর কি হবে? আপনি হাত ধরে রেখেছেন কেন হাত ছাড়ুন চেঞ্জ করে আসি।
–রাইয়্যান আরুশির অভিমানটা ধরতে পারল ,,
থাক আর বেচারিকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই । অনেকটাই কষ্ট দিয়েছি আর দিতে চায়না। আরোশী হাত ছুটানোর জন্য ছোটাছুটি করছে। রাইয়্যান হাত না ছেড়ে আর ও শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো আলু কে তারপর কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,,,
—বাপরে তোমার কি রাগ ?রাগ একদম নাক-মুখ লাল করে ফেলছো । তোমাকে কিন্তু রাগলে মারাত্মক সুন্দর লাগে মন চায় কিছু একটা করে ফেলি। আজকে তো আর বেশি সুন্দর লাগছে একদম লাল পরী। চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ছে।
— একদম মিথ্যে কথা বলবেন না বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছেন তাই না। আমি জানি আমাকে একটু সুন্দর লাগছে না । আমার মন ভালো করার জন্য আপনি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন মিথ্যা প্রশংসা করছেন। আমি এখনই ড্রেস চেঞ্জ করে আসব আর কোনদিন আমি শাড়ি পড়বো না।
বলে আরুশি হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চায় । রাইয়্যান আরো শক্ত করে ধরে রাখে।
—আমার ঠেকা পড়েছে মিথ্যে কথা বলে তোমার প্রশংসা করার।
—আপনি বলতে চাইছেন আপনি মিথ্যে বলছেন না।
—আমি মিথ্যা বলি না ওকে আর মিথ্যা বলে তোমার মন ভালো করার কোন দরকার আমার।
—তাহলে এতক্ষণ আমার দিকে ভালো করে তাকালেন না কেন আর আমি জিজ্ঞেস করার পরও কিছু বললেন না কেন? এতই যদি সুন্দরী লাগতো তাহলে তো আগেই বলতেন।
—আরুশির দুই হাত রাইয়্যান ধরে রেখেছে এই জন্য আরোশী নিজের চুল সরাতে পারছে না। বাতাসে আরশির খোলা চুল বারবার চোখ মুখের উড়ে আসছে। যা দেখে রাইয়্যান ফূ দিয়ে চুল সরিয়ে দেয়।আরু লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। আচমকা রাইয়্যান কো দেওয়ায় আরূশি ভিমড়ি খেয়ে যায়।
শরীরে আলাদা এক শিহরণ বয়ে যায়।
—-তাকাবো কেন তুমি কি আমাকে তাকাতে বলেছ। যে আমি তাকাবো ।
—কি বললেন আমি তাকাতে কেন বলব?
— তুমি না বললে আমি কেন তাকালো। আর তুমি কি আমার জন্য শাড়ি পড়েছ মে আমি তাকিয়ে থাকব, তোমার প্রশংসা করবো।
এবার আরুশির চোখ বড় বড় হয়ে অসভ্য লোকটা কি বলতে চাইছে। যে আমি অন্য কারো জন্য সেজেছি শাড়ি পড়েছি । রাইয়্যাকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে আবার এগিয়ে আঙ্গুল উঠিয়ে বলতে লাগলো,,,
—কি বলতে চাইছেন আপনি আমি অন্য কারো জন্য এ সেজেছি।
রাইয়্যান বলল ,,,
—–হ্যাঁ তাইতো আমি জানি আচ্ছা, তুমি কি আমার জন্য সেজেছো ।[অবাক হওয়ার মত করে]
এবার আরো আরো রেগে গেল আরুর মন চাইছে রাইয়্যানের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে,,
–আমি কিন্তু আপনাকে মেরে ফেলবো বলতেছি আর একটা বাজে কথা বলবে।
—আচ্ছা মেরে ফেলো। তোমার হাতে মরতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
আরুর এখর নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে । উনি আমাকে পাগল করে ফেলবে কি বলতে এসেছিলাম আর কি হচ্ছে চোখ বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
—-বললে না তো কার জন্য শাড়ি পড়েছ।
—আপনি থামবেন প্লিজ। আমি কার জন্য শাড়ি পরেছি সেসব কি আপনি বুঝতে পারছেন না ।
এখানে আপনি আর আমি ছাড়া কি আর কেউ আছে ।
মে তার জন্য পড়েছি ভাববেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম , আমাকে কেমন লাগছে দেখতে আপনার জন্য শাড়ি না পড়লে কি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম ? অন্য কারো জন্য পড়লে তো তাকে যেয়েই জিজ্ঞেস করে আসতাম। আপনি কেন এমন করছেন আমার ভুল হয়েছে সেটা তো আমি বললাম স্যরি তো আমি লিখে দিয়েছি এবার কি পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।
আরুশির খুব খারাপ লাগছে কথাটা বলতে দিচ্ছেনা রাইয়্যানন বারবার ইচ্ছে করে আমাকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। এতটা রেগে আছো আমার উপর যে আমান মুখে ভালবাসি কথাটা শুনতে চাইছে না।আরুশি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ওর আর রাগ হচ্ছে না কষ্ট হচ্ছে চোখ দিয়ে পানি পরছে।
কেউ কাছে এসে চোখের পানি মুছে দিতেই আরুশি চোখ তুলে তাকায় রাইয়্যান ওর মুখে দিকে তাকিয়ে আছে আমি তাকাতেই রাইয়্যান সরি বলল,,
একহাতে কান ধরে সরি বলেছে যেটা আমি করেছিলাম। গান ধরেছে রেখে আমার হাসি চলে আসে আমি হেসে উঠি,,
—সরি রাগ করো না প্লিজ আরু সোনা তোমাকে রাগানোর জন্য এতক্ষন এমন করেছি।
–করবোই আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসে না। কতদিন কথা না বললে থাকলেন আর এখন কত মজা করলেন ।ইচ্ছে করে ঝগড়া করলেন সব সময় তো আমাকে ঝগড়ুটে বলেন আর এখন ঝগড়াটা কে করলো আপনি তো করলেন।
—আচ্ছা বাবা আচ্ছা আর কখনো ঝগড়া করবো না এতো ভালোবাসো। এখন ক্ষমা করে দাও।
—আরু কিছু বলল না গাল ফুলিয়ছ অন্যদিকে তাকালো,,,
—-রাগলে কিন্তু তোমাকে মারাত্মক সুন্দর লাগে মন চায় চুমু খায়।
এটা শুনতেই আরু বড় বড় চোখ করে রাইয়্যানের দিকে তাকালো তাড়াতাড়ি দূরে সরে দাঁড়ালো,,,
—ছি ছি ছি কি সব বলছেন আপনি? আমি কিন্তু এগুলো একদম পছন্দ করি না ভুলে ও এসবের চেষ্টা করবেন না।
—তাহলে আর এত সুন্দর করে সেজেগুজে আমার সঙ্গে কখনো এসো না। তখন কিছু করে ফেলি
লে কিন্তু আমার দোষ না।
—-আপনি না বললেন আমার কি খারাপ লাগছে দেখতে?
—(রাইয়্যান অবাক হয়ে) এটা কখন বললাম আমি???
—মুখে সরাসরি বলেন নি কিন্তু আপনার কথায় বুঝা গেছে।
—আমার কোন কথায় তোমার এটা মনে হল?
—মনে হয়েছে সব কথাই এটাই মনে হয়েছে । আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি যদি ভালো লাগে অবশ্যই বলতেন আপনি কিছুই বলেনি।
—— উফ আরু তুমি সব সময় বেশি বোঝো । তুমি জিজ্ঞেস করছো আমি বলিনি কেন জানো?
—আরু মাথা নাড়ি না বোঝাল ও বোঝেনি,,
—তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে আমি সেটা মুখে বলে বোঝাতে পারবো না।ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আর তুমি কি বলছিলে আমি তোমার দিকে তাকাই নি তুমিইতো আমার দিকে তাকাও নি তুমি তাকালে দেখতে পারতে আমি কিভাবে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।যখন তুমি রেগে যাও তোমার নাকটা লাল টকটকে হয়ে যায় গালে লাল আভা পরে দেখতে এতটা সুন্দর লাগে যে আমি হা করে তাকিয়ে থাকি। তার উপরে লাল শাড়ি পড়েছ চুল খোলা আমি তো চোখ সরাতে পারছি না । আর তুমি বলছো তোমার দিকে তাকাই নি তোমাকে ভালো লাগছে না তোমাকে এতটা সুন্দর লাগছে যে আমি চোখ সরাতে পারছি না।
তোমার নতুন নতুন রূপে সব সময় নতুন করে তোমার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে আমাকে।
যত দেখি তত আরো বেশি করে দেখতে ইচ্ছে করে এ দেখার শেষ নেই। তৃপ্তি হয়না। আম্মুর কাছে আমি তোমার কথা জানতে পারি তখন থেকেই মনে মনে তোমার ছবি আমি নিজের হৃদয়ে এঁকে ফেলেছিলাম। আমার হৃদয় আকা মেয়েটির সাথে আচমকা ভাবে তুমি মিলে গেছো । তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিন আমার তোমার প্রেমে পড়ে যায় সেই ঝগড়াটে রাগি মেয়ে যখন ঠান্ডা হয় একদম শান্ত একটা মেয়ে বোঝা যায় না এ মেয়েটাএ তো ঝগড়া করতে পারে।কিন্তু কষ্ট পেয়েছি তুমি আমার ভালোবাসা বোঝো নি। আমাকে ভুল বোঝো আমাকে যখন ইগনোর করো আমার সাথে কথা না বলে থাকতে, কতো কষ্ট পেয়েছি তুমি জানো আমার বুকটা খালি খালি লাগছে তুমি ঝগড়া না করলে কথা না বললে,, আমার দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে আসে। তোমাকে যত কাছে থেকে দেখে আসছি ততই তোমার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি। তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছি একটু সময় তোমাকে না দেখলে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসে। পাগল হয়ে যায় যদি তোমার কিছু হয় আমি বাঁচবো না । বাবার পরে তুমি আমার আপনজন। তানিশাকে নিয়ে তুমি আমাকে ভুলবুঝেছিল একবারও জিজ্ঞেস করনি ।তাই ইচ্ছে করেই এই কয়দিন তোমার সাথে কথা বলিনি। তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি যে ভালোবাসার মানুষকে সন্দেহ করে , তাকে ইগনোর করলে তার কতটা খারাপ লাগে ।
আশিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রাইয়্যানের দিকে। শান্ত হয়ে রাইয়্যানের সব কথা শুনেছে সত্যিই খুব অন্যায় করে ফেলেছি। আর কষ্ট দেব না উনাকে ।রাইয়্যানের মত ভাল কেউ আমাকে বাসতে পারবেন নারী। আমাকে খুব ভালোবাসে আর কিছু না ভেবে,,,,
দৌড়ে রাইয়্যান কে জড়িয়ে ধরে। একটা কথাই বলে,,,
—–” ভালোবাসি আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি খুব ক্ষমা করে দেন আমাকে আর কখনো কষ্ট দেবো না।
এই মানুষটাকে আমি যদি ভালো নাও বাসতাম তবুও আমি এর সাথেই থাকতাম। কিন্তু এই মানুষটাকে তো আমি ও ভালবাসি খুব ভালোবাসি। এই মানুষটার সাথেই থাকতে তে চাই সারাটা জীবন।
আমি ভেবেছিলাম উনি তানিশা আপুকে ভালোবাসে এজন্য তানিশা আপুর সাথে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যদি জানতাম তানিশা আপু কে না আমাকে ভালোবাসে তাহলে কখনোই এতটা কষ্ট আমি ওনাকে দিতাম না।
চলবে❤️
চলবে❤️