আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব -১৬+১৭

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৬
#Raiha_Zubair_Ripte

ড্রয়িং রুমে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে এনা। হাতে তার হেফজিবার চিঠি। হেফজিবা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। ইভেন এই দেশ ছেড়েও। আমেরিকা থেকে ভালো একটা জবের অফার এসেছে তাই আর দ্বিমত না করে চলে গেছে। এবার তো নিজের খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। এতো ভালো অফার কি ছাড়া যায়!

প্রিয় এনা,,

শুরুতেই বলে রাখি রাগ করিস না। তোর ভাইকে ভালোবাসলেও তাকে পাওয়ার অধিকার আমার নেই। ফাস্ট অফ অল আমি বিবাহিত ছিলাম তার উপর অন্য ধর্মের। তোর ভাই তো আমাকে ডিজার্ভ করে না। আমার থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। আশা করি তোর ভাইয়ের জীবনে তেমন কেউ আসবে যে তাকে আমায় ভুলে নতুনত্ব কে গ্রহন করতে সাহায্য করবে। আর চিন্তা করিস না। সারা জীবন তো আর একা কাটানো যাবে না। এখানে ভালো ছেলে পেলে খ্রিস্টান ধর্মের তাহলে বিয়ে করে ফেলবো। স্যার তো পেরেছে নিজ ধর্ম ত্যাগ করতে কিন্তু আমি পারি নি আর পারবোও না। তোকে মিস করবো ইয়ার। মাঝে মাঝে ফোন দিবো। ভালো থাকিস।

চিঠিটা পড়ে এনা বাকরুদ্ধ কি বলবে জানা নেই। তবে শুরু থেকেই হেফজিবার মতামত কে সে সমর্থন করেছে এখনো করবে আর ভবিষ্যতে ও করবে। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই দেখে দরজার সামনে তার বোন হেনা। এনা চিঠিটা সোফায় ফেলে দৌড়ে হেনা কে জড়িয়ে ধরে। হেনা এতো গুলো মাস পরে বোন কে পেয়ে আবেগে উৎফুল্ল হয়ে উঠে।

” কেমন আছিস এনা।

” ভালো তুই।

” ভালো।

এনা হেনা কে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে বাবা মা কে জড়িয়ে ধরে। এনামুল সযত্নে মেয়েকে আগলে নেয়। ভীষণ আদরের দু মেয়ে।

” কেমন আছো এনা?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা তুমি।

” তুই চলে আসার পর থেকে তোর বাবার ঘুম নির্ঘুম হয়ে গেছে তোর চিন্তায়।

কথাটা বলতে বলতে এনার মা ফরিদা বেগম এগিয়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। এনা মা’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় এবার। পেছন থেকে হেনা বলে উঠে,,

” হয়ে গেলো ছেড়ে দিছে বন্যার মেশিং। আরে বোইন কাঁদছিস কেনো। ভেতরে যেতে দে আমাদের।

এনা ফরিদা কে ছেড়ে দিয়ে বাবা মা কে নিয়ে ভেতরে ঢুকে। আরাভ ল্যাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকার সময় হেনা কে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,

” ভেতরে যাচ্ছ না কেনো? তোমাকে কি আলাদা করে ইনভাইট করতে হবে। দেখো অতো সময় নেই।

” যাচ্ছি তো আপনি যান না। একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন না। চাচি কি আপনায় জন্মের সময় মধু না দিয়ে করলার রস দিয়েছিলো?

” তোমার চাচি কে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। এখন ভেতরে আসো।

হেনা আরাভের সাথে ভেতরে ঢুকে। সোফায় বসে আছে সবাই। আরমান তার ছোট ভাই এনামুলের সাথে কুশল বিনিময় করছে। আর রত্না বেগম ফরিদা বেগমের সাথে। এতোদিন পর দুই জা মিল হয়েছে। ফারাহ্ এসে ফরিদা আর এনামুল কে সালাম দিয়ে সোফায় বসে হেনার পাশে।

” কি গো ননদীনি কেমন আছো?

” এই তো ভাবিপু ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

****

সকাল সকাল রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে মারুয়া। শান এসেছে যে। ছেলেটাকে তার বেশ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আফসোস হয় নিজের পেটের ছেলে নয় বলে। শান মাঝে মাঝেই আসে এ বাড়িতে কিন্তু থাকে না। আসলেই দু এক ঘন্টা থেকে চলে যায়।

শান বিছানা ছেড়ে উঠে। মাথা ব্যাথা করছে প্রচুর। সারা রাত ঘুম হয় নি। সকল চিন্তা মাথায় এসে ভর করেছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে রান্না ঘরে ঢুকে। এখন এক মগ কফি দরকার।

” আরে শান তুমি। তোমায় কে বলছে সকাল সকাল রান্না ঘরে আসতে আমাকে ডাকলেই তো হতো।

শান মুচকি হাসে।

” ছোট মা তোমার শরীর কেমন আছে এখন?

” এই তো ভালো। তা কিসের জন্য রান্না ঘরে এসেছো।

” এক কাপ কফির জন্য।

” তুমি যাও গিয়ে বসো আমি কফি নিয়ে আসতেছি।

শান চুপচাপ চলে আসে।

মারুয়া কফির মগ নিয়ে শান আর মুনিয়াকে দিয়ে হাক ছেড়ে আরহাম কে ডাকে। দু এক ডাকেও যখন আরহামের আশার কোনো নাম গন্ধ দেখলো না তখন অগ্যতা মারুয়া উঠে কফির মগ টা নিয়ে ছেলের রুমে চলে যায়। কাল রাত করে বাড়ি ফিরেছে আরহাম অফিসে প্রচুর কাজ এসেছে। হঠাৎ সূর্যের আলো চোখে পড়ায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। শরীরের থাকা চাদর টা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। রত্না বেগম আরহামের মুখ থেকে চাদর সরিয়ে বলে,,

” আরহাম উঠো এতো বেলা অব্দি কেউ ঘুমোয় নাকি।

আরহাম আড়মোড়া ভেঙে বলে,,

” উফ মা ঘুমাতে দাও। কাল অনেক রাত করে বাসায় ফিরছি।

” উঠো তুমি শান এসেছে দেখেছো?

কথাটা কর্ণকুহর হতেই ধরফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে। চোখ পিটপিট করে বলে,,

” সত্যি ব্রো এসেছে?

” হুমম কাল রাতেই এসেছে জানো না?

” না আমি তো সোজা বাসায় ঢুকে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছি। তুমি আমাকে আগে ডাকবা না।

আরহাম বিছানা ছেড় উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। সোফায় বসে থাকা শানের পাশে বসে বলে,,

” হেই ব্রো কেমন আছো? তুমি তো ভুলেই যাও মাঝে মাঝে আমাদের।

” যদি ভুলেই যেতাম তাহলে আসলাম কি করে?

” সে তো তুমি জানো।

এর মধ্যে আব্রাহাম এসে বসে শানের ওপর পাশে। শান কফির মগ টা টেবিলল রেখে বলে,,

” বাবা বিকেলে এনাদের বাসায় যেতে হবে। ওর বাবা মা এসেছে।

” বেশ তো যাবো তাহলে।

” তারা তোমাদের কথা জানে না বাবা।

” মানে?

” মানে হচ্ছে এই যে তারা জানে আমি জ্যাকেল্স বাবার ছেলে।

কথাটা শুনে আব্রাহামের খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ না করে বলে,,

” আচ্ছা সমস্যা নেই।

” আমি যদি এখন থেকে এখানে থাকি তাহলে কি কোনো সমস্যা হবে তোমাদের?

মারুয়া শানের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” এটা কেমন কথা শান সমস্যা হবে কেনে আমাদের। এটা তোমার বাবার বাড়ি। আরহাম মুনিয়া যেমন এ বাড়িতে আছে তুমি ও থাকবে সমস্যা হবে না আমাদের। আর তাছাড়া এনাও তো থাকবে। আমি অন্তত একটা বউমা পাবো।

মুনিয়া এবার শানের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ভাইয়া ভাবিপুর কি একটা ছবি দেখতে পারি?

মুনিয়া সচারাচর কারো সাথে কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া। শান স্মিত হেসে ফোন থেকে এনার একটা পিক বের করে মুনিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয় ফোন টা। মুনিয়া চোখের চশমা টা ঠেলে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে ছবিটা দেখে বলে,,

” মাশাল্লাহ ভাবিপু খুব সুন্দর।

কথাটা তে দেরি কিন্তু আরহামের ফোনটা কেঁড়ে নিতে দেরি নেই। স্কিনে থাকা ছবিটা দেখে বলে,,

” সত্যি ই তো ভাবিপু তো দেখতে সেই। ব্রো তোমার কোনো শা”লি নেই আমার জন্য ।

কথাটা বলে সামনে তাকাতেই দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আরহাম মেকি হাসি দিয়ে বলে,,

” আশ্চর্য ওভাবে তাকায় আছো কেনো তোমরা? আমি কি ভুল কিছু বলছি?

মুনিয়া বেশ বিরক্ত হয় তার ভাইয়ের প্রতি।

” উফ ভাইয়া ভাবিপুর বোন দিয়ে তোমার কাজ কি। শান ভাইয়া ভাবিপুর বোন থাকলেও ভাইয়া কে বলবা না।

আরহাম মুনিয়ার মাথায় চাটি মে’রে বলে,,

” এই চুপ কর তো তুই।

মুনিয়ার এসব একদম পছন্দ না সে বড় হয়েছে এভাবে যখন তখন মা”রলে তার রাগ উঠে।

” মম তোমার ছেলেকে বলো কথায় কথায় আমায় মা’রতল না। এসব আমার পছন্দ না। আমি বড় হয়েছি।

মারুয়া ছেলের দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকায়। আরহাম মুনিয়াকে ভে”ঙচি কে’টে বলে,,

” হুহ্ এসেছে বড় হতে, আমি আরো মা”রবো মা”রতে মা”রতে মাথার চু”ল গুলো তোর টেনে ঝাড়ু বানাবো। তবুও মা”রবো বুঝছিস। আসছে মায়ের কাছে বিচার দিতে।

মারুয়া আর কিছু বললো না ছেলে কে জানে এখন তার ছেলের ভাঙা রেডিও বাজতেই থাকবে।

————

এনাদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে বাড়ির সকলে সাথে শানের বাবা আর ছোট মা ও তার ছেলে মেয়ে। রত্না বেগম জুশ স্ন্যাকস এনে তাদের সামনে রাখলো। এনামুল সাহেব গলা পরিষ্কার করে বলে,,

” ভাই আপনি তো বললেন আপনি শানের বাবা। কিন্তু আপনার ছেলে ছোট থেকে তাহলে কেনো খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী ছিল।

” কারন হিসেবে যদি বলি তাহলে বলতে হয় সে তার মায়ের কাছে ছিল। সে অনুযায়ী সে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী ছিল। বাট এখন সে মুসলিম।

” আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য মুসলিম হয়েছে?

” না আঙ্কেল আমি এনা কে বিয়ে করার জন্য মুসলিম হই নি। আমি তো তাহলে ছয় বছর আগেই পারতাম মুসলিম হতে । আসলে ছোট থেকেই আমার ইসলাম ধর্মের প্রতি একটা ঝোঁক ছিলো। কারন আমার বাবা ছিলো মুসলিম আর মা ছিলো খ্রিস্টান। আপনারা তো জেনে গেছেন আমার মা দু বিয়ে করেছিলেন। আমি আমার মা কে ভীষণ ভয়+শ্রদ্ধা করি। তার অমতে আমি কখনো কিছু করি নি। একবার আমি ছোট থাকাকালীন মুসলিম হবার জন্য বায়না ধরেছিলাম মায়ের কাছে সেদিন মা খুব বকেছিল। আর আরাভ তো দেখেছে আরাভ যখন মসজিদে নামাজ পড়তো তখন আমি মাজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে দেখতাম। মাঝে মাঝে ভেতরে ঢুকে হুজুর দের কথা গুলো ও শুনতাম। মাঝে মাঝে ছোট থাকতে বাবার সাথে নামজ ও পড়েছি, ঈদের সময় বাবার সাথে থেকে ঈদ পালন করেছি। তখন এতো পার্থক্য বুঝতাম না ধর্মের। যখন এনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো আমার সম্পর্ক ও হলো তখন ভেবেছিলাম বাবার সাথে কথা বলে কোনো একটা রাস্তা বের করবো। কিন্তু তার আগেই মা এনাকে অপমান করে বলে বসলো আমাদের ধর্ম আলাদা দেখে আমি তাকে আর বিয়ে করতে চাইছি না। আর এনা দেশ ছেড়ে চলে গেলো কিন্তু তখন আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। যখন দ্বিতীয় বার আবার মায়ের কাছে মুসলিম হবার প্রস্তাব রাখি তখন মা আবার আমায় কসম কাটিয়ে সেটা থেকে বিরত রাখেন। আমি মুসলিম হলে সে আমার মুখ দেখবে না। তখন অপ্রাপ্ত বয়স ছিলো মা যা বলেছে মেনে নিছি। কিন্তু সময় যতো যাচ্ছিল ততো বুঝতে পারলাম ভুল করেছি মায়ের কথা মানতে গিয়ে। আগেই বাবার সাথে চলে যাওয়া উচিত ছিল আমার।

” সে না হয় বুঝলাম কিন্তু তুমি কি এখন প্রোপারলি মুসলিম। আবার নিজের ধর্মে ব্যাক করবে না তো?

” না আঙ্কেল আমি এখন প্রোপারলি মুসলিম। নামাজ কালাম পড়ি রোজা ও রাখি। আর আমি আমার বাবার সাথেই থাকবো।

” তোমার মায়ের কি হবে?

” মায়ের কিচ্ছু হবে না। মা যেহেতু আমার মুখ দেখতে চায় না সেক্ষেত্রে তার সামনে যাবো না। দূর থেকেই মায়ের খেয়াল রাখবো।

” বিয়ে তো করেই ফেলছো এখন আর কি করার। তাই তুমিও যেহেতু মুসলিম তাই একেবারে সামান্য আয়োজন করে মেয়েকে আপনাদের কাছে পাঠাতে চাই ভাই। আপনি কি বলেন।

আরমান সাহেব তার ভাইয়ের কথা শুনে বেশ অবাক হয়। তার ছোট ভাই এতো ইজিলি বিষয় টা নিবে ভাবতে পারে নি। আব্রাহাম বেশ খুশি হন, এনামুল সাহেবের এমন সিদ্ধান্তে।

” আমাদের কোনে সমস্যা নেই ভাই। দিনক্ষণ তাহলে ঠিক করুন।

আরহাম ফোনের রিংটোন পেয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে অফিস থেকে ফোন করেছে। এখানে কথা বলা টা ঠিক হবে না বলে ফোনটা নিয়ে বাহিরে বের হয়ে গার্ডেনে যায়। ফোন রিসিভ করে কথা বলার এক পর্যায়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ছবিতে দেখা তার এনা ভাবি সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথ বলতেছে। আরহাম কথা বলে ফোন কে’টে তার এনা ভাবির সামনে গিয়ে বলে,,

” আসসালামু আলাইকুম ভাবিপু। আপনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে আর আপনি এখানে বাহিরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন।

হঠাৎ আকস্মিক ভাবিপু ডাক শুনে চমকে উঠে হেনা। পেছনে ঘুরে অচেনা ছেলে কে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।

” কে আপনার ভাবিপু?

” ভাবিপু আমি আপনার হ্যান্ডসাম দেবর। শান ভাইয়ার ছোট ভাই। আপনি আমার ভাইয়ের স্ত্রী।

” কোন শান?

” আল্লাহ কি বলেন ভাবিপু আপনি আমার ভাইকে চিনতেছেন না। আপনারা না বিয়ে করছেন।

” আরে ধূর তখন থেকে কি বলতেছেন। কাকে বিয়ে করছি আমি। আর আপনার ভাই শান না কি তাকে চিনি না আমি।

” ভাবিপু আপনাকে নিশ্চয়ই ভূতে ধরছে আর তা না হলে মাথা খা”রাপ হয়ে গেছে। আপনার আর শান ভাইয়ের বিয়ের জন্য এসেছি আমরা আর আপনি কি না এমন কথা বলছেন?

হেনা এবার বুঝলো আসল কথা। তাকে এনা ভেবে ভুল করছে ছেলেটা। আর শান কেনো বলছে তার নাম তো পিটার।

” আপনার ভাইয়ের নাম তো পিটার।

” ভাবিপু দেখি আপনি কি মাথায় কোথাও আঘাত পাইছেন? স্মৃতিশক্তি কি হারায় গেছে। পিটার ভাই যে মুসলি হয়ে নাম বদলিয়ে শান করছে।

হেনা জানে না যে পিটার মুসলিম হয়েছে আর নাম ও বদলিয়েছে।

” আপনি ভুল করছেন আমি এনা না হেনা। এনার জমজ বোন। এনা ভেবে যে আমায় এসব বলেছেন বুঝতে পারি নি।

হেনার কথা শুনে আরহাম হা হয়ে যায়।

কই তার ভাই তো বলে নি তার ভাবিপুরা টুইনস।

” সত্যি আপনারা টুইনস।

” হুম বিশ্বাস না হলে এই দেখুন আমাদের দু বোনের ছবি।

ফোন থেকে তাদের দু বোনের একটা ছবি বের করে আরহাম কে দেখায়। আরহাম হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ওহ মিস্টেক তাহলে বেয়াইন সাহেবা। আপনারে ভাবি বানায় ফেলছিলাম। আপনি ভাবি না আপনি তো আমার দুই টা পাঁচ টা না একটা মাত্র ভাইয়ের শা”লি মানে আমার।

” আপনার মানে?

” নাহ কিছু না আসি।

কথাটা বলে আরহাম চলে যায় ভেতরে আর হেনা আরহামের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৭
#Raiha_Zubair_Ripte

ফাইনালি দুই পরিবারের সম্মতিতে আগামী সপ্তাহে তাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো। উপর থেকে খবর টা পেয়ে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলো এনা। ফরিদা আর রত্না বেগম ডিনারের ব্যাবস্থা করছে। দুই পরিবার এক সাথে ডিনার করবে,সেই অনুযায়ী তোড়জোড় শুরু করে দিছে রত্না আর ফরিদা। মারুয়া বিষয় টা খেয়াল করলো,তিনি বসা থেকে উঠে রান্না ঘরে চলে গেলো। ফরিদা আর রাত্না বেগম রান্না ঘরের সামনে মারুয়া কে দেখে জিজ্ঞেস করে,,

” আরে আপা আপনি এখানে। কোনো কিছুর দরকার?

মারুয়া রান্না ঘরের ভেতরে ঢুকে বলে,,

” হুমম আপা আসলে আমার কাজের দরকার।

” মানে?

” মানে হচ্ছে এই,আপনারা দুজন খেটে ম’রছেন আর আমি সোফায় আরাম আয়েশে বসে থাকবো এটা হয় নাকি? তাই আর না পেরে চলে আসলাম।

” আপা চিন্তা করবেন না আমরা দুই জা মিলে সব করে ফেলতে পারবো। আপনি গিয়ে বসুন।

” আমি ও তো আপনাদের বেয়াইন হই মানে বোন-ই আমি ও তাহলে পারি সাহায্য করতে। আর তাছাড়া তিনজনে মিলে করলে তাড়াতাড়ি হবে।

” তা হয় না আপা। আপনি আমার মেয়ে শাশুড়ি।

” শাশুড়ি মানে মা। আমি আপনার মেয়ের আরেক মা। আচ্ছা কোনো কাজ না করতে দিলেন খাবার গুলো তো টেবিল পর্যন্ত নিয়ে যেতে তো পারি? নাকি সেটাও করতে দিবেন না।

রত্না বেগম এবার হেসে ফেললেন।

” আচ্ছা তাহলে কষ্ট করে খাবার গুলো টেবিল পর্যন্ত নিয়ে যান।

মারুয়া খুশি হয় খুব। মারুয়া মিশুক প্রকৃতির এক মেয়ে। সবার মনে এক নিমিষেই জায়গা করে নিতে পারে। মারুয়া খাবার গুলো টেবিলে নিয়ে সাজায়।

আব্রাহাম, আরমান,এনামুল তিন বেয়াই গেছে বাহিরে একটু হাটাহাটি করতে। সোফায় বসে আছে আরহাম, মুনিয়া,হেনা,শান। ফারাহ্ এর শরীর টা আজ ভালো নেই তাই উপরে গিয়ে এনার রুমে শুয়ে আছে। এতোক্ষণ ধরে নিচেই ছিল। শরীর টা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছিল দেখে এনার রুমে যায়।

আরাভ কোনো একটা কারনে বাহিরে গিয়েছিল একটু আগে। এখন ফিরল। চোখ তার লল রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। সবাই আরাভের দিকে তাকালো। হেনা কিছু বলতে উদ্যত হবে আরাভ সবাই কে উপেক্ষা করে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। মুনিয়া এক ঝলক আরাভের দিকে তাকিয়েছিল লোকটাকে এই প্রথম সামনা-সামনি দেখলো। এর আগে শুধু শানের ফোনেই দেখেছে। সবাই বেশ অবাক হয় আরাভের ব্যাবহারে। হেনা ভ্রু কুঁচকে বলে,,

” আরে এই আরাভ ভাইয়ের কি হলো। চোখ মুখ লাল কেনো?রেগে আছে? কিন্তু কেনো?

আরহাম টেবিল থেকে জুশ টা মুখে নেয়।

” উনি কি ছ্যাকা ট্যাকা খাইছে নাকি। না মানে আমার বন্ধ ফ্লেক্স যখন ছ্যাকা খেতো তখন ওর চোখমুখ ও এমন হয়ে যেতো।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই মুনিয়ে বিষম খায়। মুখ থেকে জুশ ছিটকে তার জামা তে পড়ে। সবাই মুনিয়ার দিকে তাকায়। হঠাৎ তার বিষম খাওয়ার ব্যাপার টা হজম হলো না কারোরই। মুনিয়া চশমা টা ঠেলে হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আপু ওয়াশরুম টা কোন দিকে?

” চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি।

” না থাক তুমি বলে দাও আমি যাচ্ছি।

” আচ্ছা সিঁড়ি বেয়ে ডান দিকে গিয়ে বামের তিন রুমের পড়ে ওয়াশরুম আছে।

মুনিয়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ডানে গিয়ে বামে থাকা রুম গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তিন রুমের পরে থাকা রুমটার ওয়াশরুমে ঢুকে জামাটা পরিষ্কার করে আসে। জামা থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে দ্বিতীয় রুম ক্রস করতেই সজোরে কিছু ভাঙার শব্দ আসে মুনিয়ার কানে। মুনিয়া সরসা দাঁড়িয়ে যায়। দরজার কাছে যায়। দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে থাকে দরজায় টোকা দিবে কি দিবে না। কারন শব্দ টা আবার ও ভেসে আসতেছে। মুনিয়া ভয়ডর নিয়েই দরজাটা হালকা ফাঁক করে। সামনে তাকাতেই দেখে ফ্লোরে র”ক্ত ছুপছুপ করছে। আরাভের হাত দিয়ে টপটপ করে র”ক্ত পড়ছে। মুনিয়া ভয় পেয়ে যায়। র”ক্ততে তার ফোবিয়া আছে। সরসা মুনিয়া ঘুরে চলে আসতে নিলে দরজার সাথে বারি লাগে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই দরজার পানে চেয়ে দেখে শানের বোন। মুনিয়াও ফিরে তাকায় আরাভের দিকে ভীতি চাহনি নিয়ে। আরাভ ভ্রু কুঁচকে ফেলে মুনিয়া কে দেখে। একপা একপা করে মুনিয়ার দিকে এগোতে নিলে মুনিয়া আরো ভয় পেয়ে যায়। আরাভের হাত বেয়ে এখনো র”ক্ত পড়ছে। মুনিয়া সেটা দেখে থরথর করে কাঁপতে থাকে। মুনিয়াকে এভাবে কাঁপতে দেখে আরাভের ভ্রুকুটি সটান হয়।

” কি হয়েছে তুমি আমার রুমের সামনে কেনো? আর এভাবে কাঁপছ কেনো?

মুনিয়া কথা বলতে পারছে না। ভয়ে যেনো তার গলার স্বর দিয়ে যেনো কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। মুনিয়াকে কিছু বলতে না দেখে আরাভ মুনিয়ার হাত ধরে।

” হেই তোমায় বলছি কথা কানে যাচ্ছে না? আমার রুমের সামনে কেনো তুমি।

মুনিয়া তার ধরে রাখা হাত টার দিকে তাকায়। শরীরের কাঁপুনি যেনো আরো বেড়ে গেছে মুনিয়ার।

” এই মেয়ে এতো কাঁপছো কেনো? ভয় পেয়েছো কিছু দেখে?

কাঁপা কাঁপা গলায় এবার মুনিয়া বলে,,

” আ আপনার হ হাতে র র”ক্ত। আ আমার ভয় করছে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই আরাভ মুনিয়ার হাত ছেড়ে দেয়।

” তুমি র”ক্ত দেখে ভয় পাচ্ছ?

মুনিয়া মাথা ঝাকায়। আরাভ নৈঃশব্দ্যে হাসে। মুনিয়া কে টেনে রুমে নিয়ে আসে। বিছানায় বসিয়ে নিজেও তার থেকে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে বসে।

” ড্রয়ারে দেখো ফাস্টএইড বক্স আছে বের করো।

মুনিয়ার ভেতর কোনো ভাবান্তর না দেখে এবার কিছুটা জোরেই আরাভ বলল,,

” এই মেয়ে কথা কানে যায় না? বললাম না ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করতে। শীগ্রই বের করো।

মুনিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,

” আ আমাকে বলছেন?

” তুমি ছাড়া কি আর কেউ আছে এই রুমে। দেখো তো কেউ আছে কি না।

মুনিয়া পুরো রুমে চোখ বুলায়। ফ্লোরে ফুলদানি কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

” কুইকলি ফাস্টএইড বক্স আনো।

মুনিয়া ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে আরাভের দিকে বাড়িয়ে দেয়।

আরাভ সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।

” আমাকে দিতে বলছি আমি?

মুনিয়া তাকায় আরাভের মুখের দিকে।

” আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে হাত টা ব্যান্ডেজ করে দাও।

মুনিয়ার এবার রাগ হয়। লোকটা এখন তাকে দিয়ে হাত ব্যান্ডেজ করাবে। দেখতেই পাচ্ছে র”ক্ততে সে ভয় পাচ্ছে।

” কি হলে দিচ্ছো না কেনো? এক কথা একবার না বললে সেটা কানে ঢুকে না নাকি?

” আমার ভয় করছে ভাইয়া। আপনি করুন না ব্যান্ডেজ।

” তোমার চোখ নেই নাকি মাথায় বুদ্ধি নেই। আমি এক হাত দিয়ে অন্য হাতে ব্যান্ডেজ করবো কিভাবে?

” তাহলে হেনা আপু কে ডেকে দেই।

” এই মেয়ে তোমাকে বলেছি না করে দিতে। না করতে পারলে আমার রুম থেকে বের হতে পারবে না।

মুনিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে তুলায় স্যাভলন ভরিয়ে আরাভের হাত নিজের কোলের উপর নেয়। সযত্নে তুলো দিয়ে কা”টা জায়গা টা স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে। আরাভের বেশ ভালে লাগছে মুনিয়ার ভয়ার্ত চেহারাটা দেখে। মুনিয়াকে আরো একটু ভয় দেখানোর জন্য এবার আরাভ ইচ্ছে করে একটু ব্যাথা পাওয়ার ভান করে আহ্ শব্দ করে উঠে।

শব্দ টা কর্ণকুহর হতে মুনিয়া ছিটকে উঠে। আরাভের হাতে ফু দিতে দিতে বলে,,

” সরি সরি আমি বুঝতে পারি নি আপনি ব্যাথা পাবেন।

” ইচ্ছে করেই তো ব্যাথা দিচ্ছ। কি মনে করেছো আমি বুঝি নি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটু ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছ দেখে এভাবে ব্যাথা দিবে।

এবার মুনিয়া কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা একে তো র”ক্ত গুলো তার পরিষ্কার করতে হচ্ছে তার উপর আরাভ বলছে সে ইচ্ছে করে ব্যাথা দিচ্ছে।

আরাভ মুনিয়ার মুখটা দেখে এবার শব্দ করে হেসে উঠে। হঠাৎ এমন হাসির শব্দ শুনে মুনিয়া মাথা তুলে তাকায়। লোকটার হাসির কারন কি?

” হয়েছে মেয়ে যাও আর কষ্ট করতে হবে না। সামান্য র”ক্ত দেখেই এতো কাঁপা-কাঁপি। তোমাকে দেখলে তো মনে হয় না এতো ভীতু তুমি।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় কোনো দিকে না চেয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সোফায় বসে থাকা আরহাম মুনিয়াকে আসতে দেখে বলে,,

” কিরে ওয়াশরুমে গিয়ে কি ঘুমিয়ে পড়ছিলি নাকি।

মুনিয়া কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় বসে পড়ে।

” কিরে সত্যি সত্যি কি ওয়াশরুমে ঘুমায় পড়ছিলি।

কথাটা বলে আরহাম মুনিয়ার বাহুতে হাত দিয়ে দেখে তার বোন থেকে কাঁপতেছে।

” কিরে মুনিয়া তুই এভাবে কাঁপতেছিস কেনো।

মুনিয়া হাসার চেষ্টা করে বলে,,

” না ভাইয়া এমনি আসলে শীত শীত লাগছে তাই।

” ওহ্ এসির পাওয়ার টা কমিয়ে দেই তাহলে?

মুনিয়া মাথা ঝাকায়। আরহাম হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” বেয়াইন সাহেবা কষ্ট করে একটু এসির পাওয়ার টা কমিয়ে দিন। আসলে আমার বোনের শীত লাগছে।

হেনা এসির রিমোট নিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে দেয়।

শান আর এনা দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদে। শানের দৃষ্টি পূর্ণাঙ্গ এনার পানে। ফাইনালি তার ভীনদেশী তারা এবার নিজের একান্ত তারা।

” কি দেখছেন এভাবে?

” আমার ব্যাক্তিগত তারা টার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখছি আর ভাবছি তাকে এতো স্নিগ্ধ কেনো লাগছে!

এনা লজ্জা পাওয়ার ভান করে এক হাত দিয়ে চুল গুলো কানের গুঁজে দিতে দিতে বলে,,

” ইশ ওভাবে বলবেন না আমি লজ্জায় ম”রে যাচ্ছি।

কথাটা শানের কর্ণকুহর হতেই শব্দ করে হেসে উঠে শান।

” আরেকটু করি প্রশংসা।

এনা হেসে জবাব দেয়,,

” করুন।

“তোমার ঐ ঠোঁটের হাসি যত বার দেখি ঠিক ততো বারই প্রেমে পড়ে যাই।
তুমি এতো সুন্দর যে তোমার রূপের প্রশংসা করে শেষ করে যাবে না, তাই তোমাকে যতই দেখি ততই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি। ভালোবাসি ভীনদেশী তারা তোমায়।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। আট আজ বড়সড় করে একটা কমেন্ট করবেন। আপনাদের বড় বড় কমেন্ট পড়তে ভালো লাগে🥺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here