আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব -১৮+১৯

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৮(বোনাস)
#Raiha_Zubair_Ripte

রাতে ডিনার করে চলে গেছে শানরা। এনা বেলকনিতে বসে আছে তার পাশেই হেনা। হেনা থেকে থেকে এনার পানে চাইছে। এনার মুখে লেগে থাকা হাসিটা দেখেতে পেয়ে তার ভালো লাগছে। কতোগুলো বছর পর তার বোন কে এভাবে হাসতে দেখছে। ছয় বছর আগে যখন দেশে ফিরেছিল তখন একদম চুপচাপ শান্তশিষ্ট হয়ে। হাস্যজ্বল মেয়েটাকে হঠাৎ এমন চুপ হতে দেখে বাবা মা ও ভীষণ চিন্তিত হয়ে গেছিল। শানের জন্য প্রায় রাতেই কেঁদে উঠতো তার বোন। বাবা মা শানের ব্যাপারে জানত না। হেনা জানত। মাঝেমধ্যে তো কখনো হেনা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে রাত পার করে দিত। সেই সময় বোন কে নানান ধরনের কথা বলে বুজ দিতো।

” এনা এখন অনেক খুশি তুই তাই না?

এনা হেনার দিকে না তাকিয়েই সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,,

” আজ হয়তো পৃথিবীর সবচাইতে খুশি ব্যাক্তিগুলোর তালিকায় সবার আগে আমি জানিস তো হেনা। আমি উনাকে পেয়েছি আর কি চাই আমার।

” এভাবেই হাসি খুশিতে থাক সেটাই চাই। আচ্ছা আসি অনেক রাত হলে যা ঘুমিয়ে পড় আমি গেলাম ঘুম ধরছে খুব।

এনা মাথা ঝাকায়। হেনা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

আরহাম বাসায় এসে ফোন চেক করে দেখে তার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার থেকে বিশ টা মিসড কল উঠে আছে। আরহাম কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। এই মেয়েটা একদম আঠার মতো পেছন পড়ে আছে। আর বাকি গার্লফ্রেন্ড গুলল এতো প্যারা দেয় না আরহাম কে। আরহাম এনাদের বাসায় থাকাকালীন ফোন টা সাইলেন্ট করে রেখেছিল। তপ্ত একটা শ্বাস ফেলে ভেরোনিকা কে ফোন করে।

” হ্যালো বেবি ফোন করছিলে কেনো।

ভেরোনিকা আরহামের ফোন পেয়ে ন্যাকি কান্না করে বলে,,

” হ্যালো আরহাম বেবি তুমি কোথায় তোমাকে ফোন করে পাচ্ছিলাম না।

আরহাম কান থেকে ফোনটা সামনে এনে বিরক্ততে ঠোঁট কামড়ে ধরে।

” আসলে জান আমি তো একটু বিজি ছিলাম তাই ফোনটা ধরতে পারি নি। রাগ করো নি তো বেবি।

” না জান আমি কি রাগ করতে পারি নাকি তোমার উপর।

” তাহলে রাখি ফোনটা আসলে আমি খুব টায়ার্ড বেবি কাল দেখা করবো নি ঠিক আছে।

” আচ্ছা বেবি আই লাভ ইউ।

” আচ্ছা টু বেবি বাই।

কথাটা বলে ফোনটা কে’টে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কবে যে এই মেয়ের থেকে পিছু ছুটবে কে জানে।

***

সকাল থেকে তিন চার বুমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে ফারাহ্। শরীর তার নেতিয়ে গেছে। রত্না বেগম খুব চিন্তিত। আমান বাসায় নেই, পরিচিত ডক্টর কে কল করে বাসায় আসতে বলে আরমান সাহেব।

ডক্টর এসেছে ফারাহ্ কে দেখছে। আরমান ফারাহ্-র খবর শুনে চলে এসেছে। সোফায় বসে বারবার বলছে,,

” বলেছিলাম মেয়েটাকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে শুনে নি। নিশ্চয়ই আবার প্রেশার লো হয়ে গেছে।

ডক্টরকে ফারাহ্-র রুম থেকে বের হয়ে আসতে দেখে আমান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” ডক্টর ফারাহ্-র আবার প্রেশার লো হয়েছে তাই না? মেয়েটা কে নিয়ে আমি আর পারি না।

ডক্টর আমানের কাঁধে হাত দেয়।

” জাস্ট রিলাক্স ইয়াং ম্যান। বাবা হতে যাচ্ছ এতো রাগ মাথায় থাকলে কি চলবে। এখন তো আরো সহ্য করতে হবে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই আমানের সারা শরীর বরফের মতো জমে যায়। এনা দৌড়ে ফারাহ্-র কাছে চলে যায়। আরমান আর এনামুল একে ওপরের দিকে তাকায়। রত্না বেগম ডক্টরের সামনে এসে বলে,,

” সত্যি ডক্টর আমার বউমা প্রেগন্যান্ট।

” হ্যাঁ।

রত্না বেগম দৌড়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এনে ডক্টর সহ সবাই কে মিষ্টি মুখ করায়।

আমান নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছে না। কতোগুলো বছর মাস চেষ্টা করে আজ এই সুখবর টা পেলো। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নিঃসন্দেহে এটা ছিলো প্রাপ্তির অশ্রু।

এনা ফারাহ্ কে জড়িয়ে ধরে।

” ভাবি তুমি প্রেগন্যান্ট আমি ফুফু হচ্ছি। আমার যে কি আনন্দ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।

ফারাহ্ এনার মাথায় হাত দিয়ে বলে,,

” তোমার ভাইয়া আসে নি?

” এসেছে তো। দাঁড়াও আমি ভাইয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কথাটা বলে ফারাহ্ কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে দরজার সামনে আমান।

” ভাবি দেখো ভাইয়া চলে এসেছে।

আমান কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমে ঢুকে। ফারাহ্-র পাশে বসে। মুখে কোনো কথা নেই দৃষ্টি তার জানালার দিকে।

ফারাহ্ আমানের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

” খুশি হও নি?

আকস্মিক আমান ফারাহ্ কে জড়িয়ে ধরে। ফারাহ্ কাঁধে গরম কিছু অনুভব করতেই বুঝতে পারে মানুষটা নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

” কাঁদছো কেনো?খুশি হও নি?

আমান ফারাহ্ কে ছেড়ে দেয়।

” লাইফের বেস্ট একটা মূহুর্ত যখন ডক্টর জানালো আমি বাবা হতে চলছি। কতো প্রত্যাশার পর আমরা এই দিনটা পেলাম। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই এই মূহুর্ত টা আমাদের এনে দিয়েছে।

দরজার বাহির থেকে ভাই ভাবির এমন ভালোবাসা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো এনার। নিজের রুমে এসে ফোন করে শান কে সুখবর টা জানায় এনা।

*★★*

বিকেলের দিকে হঠাৎ করে দমকা হাওয়া বইতে শুরএ করেছে। হেনা এসেছে মার্কেটে কিছু দরকারী জিনিস কিনতে। হঠাৎ করে আবহাওয়ার এমন অবস্থা দেখে মনে মনে নিজেকে শ’খানেক গালাগাল করে। কেনো যে আসলো আজ মার্কেটে। কাল এনার সাথে আসলে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। তড়িঘড়ি করে জিনিসপত্র কিনে গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। দেরি করলে আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। যে কোনে সময় বৃষ্টি নামবে।

বাড়ির সামনে এসে সদর দরজা পার হতেই অচেনা এক যুবক কে সোফায় বসে থাকতে দেখে ভ্রুকুটি করে তাকায়। এখন আপাতত অচেনা লোকটাকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। ড্রয়িং রুম ক্রস করে যেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিবে আর তখনই ভেসে আসে অচেনা লোকটার থেকে কিছু কথা।

” হেই মিস এনা কেমন আছেন?

হেনা পিছে ঘুরে তাকায়।

” আমাকে বলছেন?

” হুমম আপনি তো মিস এনা। আপনাকে ছাড়া আর কাকে বলবো।

” সরি আমি এনা নই হেনা। বাট আপনি কে?

” ও আমার ভাই হেনা ফাইয়াজ। আর ফাইয়াজ ও এনা না হেনা। এনার জমজ বোন।

কথাটা বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে ফারাহ্। হেনা ফারাহ্ কে ধরে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।

” আচ্ছা ভাবি থাকো আমি উপর থেকে প্যাক গুলে রেখে আসতেছি।

কথাটা বলে হেনা উপরে চলে যায়। ফাইরাজ বোনের দিকে চেয়ে বলে,,

” এনারা টুইনস আপু?

” হ্যাঁ। মম আসলো না যে?

” মম আর ড্যাড আসছে আমি খবর টা শুনে আর থাকতে পারি নি তাই চলে এসেছি। আচ্ছা এনা কোথায়?

” এনা তো বাহিরে গেছে হাঁটতে।

” ওহ সেদিন হাসপাতালের সামনে এনার সাথে দেখা হয়েছিল। এনা চিনে না আমায় আমি ঠিক চিনে ফেলছিলাম।

” ওহ্ ঐ দেখ এনা চলে এসেছে।

কথাটা বলে ফারাহ্ সদর দরজার দিকে তাকাতে বলে। এনা একটু ফ্রেশ হাওয়া খেতে বাহিরে গিয়েছিল। সোফায় সেদিন হাসপাতালের সামনে দেখা লোকটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। ফারাহ্-র পাশে বসে বলে,,

” ভাবি ইনি কে?

” আমার ভাই। দেখোনি কখনো আসলে ও তো এখানে ছিলো না।

” ওহ্ সেদিন বললেই পারতেন উনি তোমার ভাই।

ফাইরাজ স্মিত হাসে। হেনা এসে এনার পাশে বসে। এনার হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠে। এনা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে শান ফোন করেছে। ফোন টা রিসিভ করে,,

” হ্যালো এনা আমি আরহাম কে দিয়ে একটা পার্সেল পাঠিয়েছি একটু কষ্ট করে বাসার পাশের মাঠটায় এসে কালেক্ট করো। আসলে আমি একটু দরকারে বাহিরে এসেছি।

” আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

ফোনটা রেখে হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হেনা একটু হেল্প কর। সামনের মাঠটায় গিয়ে দাঁড়া আরহাম একটা পার্সেল নিয়ে আসতেছে ওটা নিয়ে আয়।

হেনা মাথা ঝাকায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই ফাইয়াজ বলে উঠে,,

” আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি?

হেনা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ভদ্রতার খাতিরে বলে,, আসুন।

শান আজ এসেছে ডোস্টারলিম্যাব ডোজ নিতে। এনার সাথে বাকিটা পথ চলতে হলে আগে নিজেকে সুস্থ হতে হবে। ডক্টর জেলেক্স ডোস্টারলিম্যাব ডোজ টা শানের শরীরে প্রয়োগ করে।

হেনা আর ফাইয়াজ মিনিট দশেকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আরহামের আসার নাম গন্ধ নেই। বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে আরহাম তার তেড়াবেকা দাঁত গুলো দিয়ে হাসতে হাসতে এদিকে আসতেছে। লোকটার হাসি মারাত্মক সুন্দর।

” ভাবি এই নিন আপনার পার্সেল।

পার্সেল টা হেনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

” আমি আপনার ভাবি নই।

” ওহ্ তাহলে বেয়াইন সাহেবা এসেছেন। দেখুন কি কপাল আমাদের আপনি ভাবির জন্য এসেছেন আর আমি ভাইয়ের জন্য। আচ্ছা উনি কে আপনার বয়ফ্রেন্ড?

” না ভাবির ভাই ভাইয়া লাগে আমার।

আরহাম মুখটাকে কালো করে বিরবির করে বলে,,

” ভাইয়া মানেই তো আজকাল ছ্যাইয়া ছ্যাইয়া।

হেনা আরহামের বলা কথাটা ভালো ভাবে শুনতে পায় নি দেখে বলে উঠে,,

” কিছু বললেন?

” না কিছু বলি নি। আসি আর একটু থাকলে রূপের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো।

হেনা হা হয়ে যায় কিসের রূপ আর কিসের ছাই। ফাইয়াজ হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” চলুন তাহলে বাসায় ফেরা যাক।

” হুমম।

ফাইয়াজ আর হেনা পার্সেল টা নিয়ে চলে যায়। আরহাম গাড়িতে বসে সেই দৃশ্য দেখে। কেমন যেনো লাগছে তার। আগে তো এমন অনুভূতি হয় নি। কিসের জন্য হচ্ছে এমন বুজতেছে না আরহাম। হয়তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করলে মন মেজাজ দুটোই ফুরফুরে হয়ে যাবে।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৯
#Raiha_Zubair_Ripte

রাত বাজে তিনটা। এতো রাতে মোবাইলে টুংটাং আওয়াজে নিদ্রা ভাব কে’টে যায় এনার। বিরক্তিতে চোখ মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ বের হয়। বিছানা হাতরে ফোন টা খুঁজে দেখে শানের মেসেজ। মূহুর্তে জমে থাকা অভিমান টা আরে প্রখর হলো। লোকটা পাঁচ টা দিন ধরে আগের ন্যায় কথা বলে না। ফোন দিলে মিনিট দুয়েকের মতো কথা বলে ফোন রেখে দিতো। এনা মেসেজ ফাইলে ঢুকে দেখে তাকে ইমিডিয়েটলি নিচে নামতে বলছে। মেসেজের রিপ্লাই দিতে নিবে এমন সময় শানের কল আসে। এনা দেরি না করে ফোনকল টা রিসিভ করে। রিসিভ করে হ্যালো বলতে নিবে আর ওমন সময় ওপাশ থেকে গুরুগম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসে,,

” ইডিয়েট তাড়াতাড়ি নিচে আসো। কখন থেকে ফোন, মেসেজ দিচ্ছি।

এনা কি বলবে ভেবে পায় না। একে তো লোকটা আজ পাঁচ দিন ধরে এভাবে ইগনোর করছে তার উপর আবার এভাবে গম্ভীর মুখে কথা বলছে,যাবে না নিচে। এতো রাতে নিচে কেনো যাবে উহু যাবে না এনা। এনা ফোন কানে নিয়েই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাতেই দেখে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শান। এতো রাতে লোকটা এখানে এসেছে কেনো? এনার ভ্রু কুঁচকে আসে। শান নিচ থেকে এনার পানেই চেয়ে আছে। জানালা দিয়ে স্পষ্ট এনাকে দেখা যাচ্ছে। আজ পাঁচ দিন পর এনা কে দেখলো। এই পাঁচ দিন শুধু ফোনেই যা একটু কথা হয়েছে। এনাকে দেখার জন্য তৃষ্ণার্তক চাতক পাখির ন্যায় ছিলো। এখন যেনো সে তৃষ্ণা কিছুটা লাঘব হলো। শানের রাগ লাগছে সে এতো রাতে তার জন্য এখানে এসেছে আর সে জানালার ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।

” কি হলো আসতেছো না কেনো? আমি উপরে আসবো?

এনার ধ্যান ভাঙে, লোকটা আবার থ্রেট ও দিচ্ছে। ফোনটা কে’টে আলতো পায়ে হেঁটে নিচে চলে আসে।

শানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এনা। শানের চোখ লাল রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। কিন্তু কেনো? আজ হঠাৎ এতো রাতে আসলো কেনো?

” আসতে এতোক্ষণ লাগে ইডিয়েট। কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।

” আপনি এতো রাতে এখানে কেনো?কোনো দরকার?

শান এনার কথা শুনে দাঁত কামড়ে ধরে।

” হুম দরকার তোমাকে আমার দরকার।

” মানে?

” এদিকে আসো তো,দূরে দাঁড়ায় আছো কেনো?

এনা শানের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আকস্মিক শান এনাকে জড়িয়ে ধরে। ভরকে যায় এনা। প্রিয় মানুষটার আলিঙ্গন পেয়ে কেঁপে উঠে এনা। শানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,

” ছাড়ুন বলছি জড়িয়ে ধরছেন কেনো। এতোদিন মনে ছিলো না আমার কথা এখন এসেছেন আমার কাছে।

” রাগিয়ো না শান্ত মতো থাকো তা না হলে তুলে আ”ছাড় দিবো।

এনার রাগ হয়। লোকটা কয়েকদিন ধরে তার সাথে কিভাবে যেনো কথা বলে। কই আগে তো এভাবে কথা বলতো না।

” আজ হঠাৎ মিস্টার ফয়সাল আহমেদ শান এতো ভালো হলো কি করে?

ভ্রু কুঁচকে ফেলে শান।এনাকে জড়িয়ে ধরেই বলে,,

” মানে? আমি খারাপ ছিলামই বা কবে?

” না খারাপ ছিলেন না কিন্তু কখনো তো এভাবে কথা বলতে দেখি নি।

” কিভাবে কথা বললাম?

” জানেন না কিভাবে কথা বলছে। এভাবে রাগী কন্ঠ নিয়ে আমার সাথে কথা বলছেন কেনো?

” উফ কথা বলো না,পাঁচ দিন পর তোমায় দেখলাম মনে হচ্ছিল কতোগুলো বছর পর দেখছি।

” ভালোবাসা এখন উতলে পড়ছে? আপনার চোখ গুলো অতো লাল কেনো?

শানের সোজাসাপটা উত্তর,,

” পাঁচ টা দিন ঘুম হয় নি তাই।

” ঘুম হয় নি কেনো? আমাকে পিড়া দিয় ঘুম কেনো হবে না?

শান ছেড়ে দেয় এনা কে। শানের ছেড়ে দেওয়া দেখে আমতাআমতা করে ফের বলে,,

” না মানে ঘুম হয় নি কেনো?

শান দু হাত বুকে গুঁজে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়।

” এই পাঁচ টা দিন ধরে নিজেকে গোছালাম।

” মানে?

শান এনার হাত টেনে উল্টো করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। এনার পিঠ শানের বুকের সাথে লেপ্টে আছে। দু হাত দিয়ে এনার কোমর ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকায়।

” নিজের একটা বিজনেস দাঁড় করালাম। সেখানেই খাটাখাটুনি করলাম পাঁচ টা দিন। তোমাকে নিজের করে নিচ্ছি তোমাকে ভালোভাবে রাখার দায়িত্ব তো আমার তাই না!

” আগে বলেন নি কেনো?

” আগে বলার মতো কিছু ছিলো নাকি। যাইহোক আমার প্রচুর খিদে লাগছে।

সহসা শানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। শানের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” খান নি আপনি?

শান দু দিকে মাথা নাড়ায় যার অর্থ সে খায় নি।

” কতক্ষণ ধরে না খেয়ে আছেন?

” সকালে খেয়েছি আর খাওয়ার সময় পাই নি। এই তো কাজ শেষ হওয়া মাত্রই তোমার কাছে চলে এসেছি।

এনার রাগ হয়। লোকটা না খেয়ে এসেছে। আসার পথে কিছু খেয়ে আসবে না।

” ভেতরে চলুন।

” না।

এনা তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।

” চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন আমি না আসা অব্দি এক পা ও নড়বেন না। কথাটা বলে ছুটে বাড়িতে চলে আসে এনা। ফ্রিজ থেকে মাংস,মাছ,ভাজি গরম করে ভাতের প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে মিনিট বিশেকের মধ্য চলে আসে। এনার হাতে খাবারের প্লেট দেখে মুচকি হাসে শান। পানির বোতল টা গাড়ির মধ্যে রেখে খাবারের প্লেট টা শানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,

” খাবার এনেছি চুপচাপ খেয়ে নিবেন। ফারদার যদি না খেয়ে থাকতে দেখছি তাহলে আপনার খবর আছে।

শানের সেই লেভেলের খিদে লেগেছে।

” খাইয়ে দাও। নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না।

পানি দিয়ে হাত ধুয়ে শান কে টেনে গাড়িতে বসায়। নিজেও গাড়ির ভেতর ঢুকে তরকারি দিয়ে ভাত মাখিয়ে শানের মুখে তুলে দেয়। শান বিনাবাক্যে চুপচাপ খেয়ে নেয়। এনার খুব মায়া হলো। ইশ লোকটা এমন খাটাখাটুনি করছে যে খাবার খাওয়ার ও টাইম পাচ্ছে না। এনা শানের মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে,,

” শুনুন এরপর যতোই কাজের চাপ থাকুক না কেনো আগে টাইম টু টাইম খেয়ে তার পর কাজ করবেন।

শানের মাঝে ভাবান্তর না দেখে এনা আবার বলে,,

” কি হলো শুনেছেন? কি বলেছি।

শান মাথা ঝাকায় সে শুনেছে।

” মনে যেনো থাকে আমার কথাটা।

প্লেট থেকে অর্ধেক খাবার ফুরালে শান বলে উঠে,,

” এবার বাকি খাবার টুকু তুমি খেয়ে ফেলে এনা।

” আরে না আমি খেয়েছি। আমি কি আপনার মতো নাকি?

” খেতে বলেছি খাও। এতো কথা কেনো বলো। জানো না স্বামীর এঁটো ভাত খেলে মোহাব্বত বাড়ে।

এনা ভ্রু কুঁচকোয়।

” কি হলো খেতে বলছি না? খাচ্ছো না কেনো?

এনা আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে বাকি খাবার টুকু।

————

এডমন্টনের একটা বারে বসে আছে আরহাম। একটার পর একটা বোতলে চুমুক দিচ্ছে । আজ কাল নিজের অনুভূতি নিয়ে সে নিজেই বিপাকে। হেনার পাশে ফাইয়াজ কে দেখলে কেমন যেনো লাগে। রাগ হয় ভীষণ, বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হয়। কিন্তু কেনো হয় তার জানা নেই। এই তো সেদিন একটা রেস্টুরেন্টে হেনা আর ফাইয়াজ কে দেখলো। আরহমের সাথে ভেরোনিকা ও ছিলো। মূলত তারা ডেটের জন্য গিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে খিদে পাওয়ায় তারা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। সেদিন শুধু হেনার দিকেই চেয়েছিল। হেনা হয়তো দেখে নি তাকে। দেখলে নিশ্চয়ই ডাক দিতো। হেনা যখন হেসে হেসে ফাইয়াজের সাথে কথা বলছিল তখন আরহামলর মনে হচ্ছিল কেউ তার বুকের ভেতর হাতুড়ি দিয়ে হৃদপিণ্ড টাকে খুদাই করছে।

” বেবি আর কতো ড্রিংকস করবা।

ভেরোনিকার কথায় ঘোর থেকে বের হয় আরহাম। ঘাড় ঘুড়িয়ে ভেরোনিকা কে দেখে। তাকাতে পারছে না ভালো করে। সব কেমন যেনো ঘোলাটে লাগছে। একটা ঘোরে চলে যাচ্ছে আরহাম। আস্তে আস্তে মুখটা ভেরোনিকার মুখের সামনে নিয়ে যায়। ভেরোনিকার চুল ধরে তাকে কাছে এনে অধরে অধর ছোঁয়াতে যাবে এমন সময় হুট করে হেনার হাস্যজ্বল মুখটা আবার ভেসে উঠে। রাগ হয় আরহামের প্রচুর। ভেরোনিকা কে ছেড়ে দিয়ে পাশ থেকে কাঁচের বোতল তুলে আ”ছাড় দেয়। ভেরোনিকা কেঁপে উঠে। হঠাৎ এমন রেগে গেলো কেনো আরহাম। ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না আরহাম পড়ে যেতে নিলে দু হাত দিয়ে ধরে ফেলে ভেরোনিকা। আরহাম ভেরোনিকার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,,

” ডোন্ট টাচ মি। একদম ছোঁবে না আমায়।

কথাটা বলে এলোমেলো পায়ে বার থেকে বেরিয়ে যায় আরহাম। ভেরোনিকা আরহামের যাওয়ার পানে চেয়ে রয়। হঠাৎ কি হলো আরহামের।

সকাল সকাল হেনার ডাকে ঘুম ভেঙে যায় এনার। ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখে দশটা বেজে গেছে। কাল রাতে অনেক দেরি করে এসেছিল রুমে এনা। এনাকে বিছানায় এখনো বসে থাকতে দেখে হেনা বলে উঠে,,

” কিরে তুই এখনো বসে আছিস তাড়াতাড়ি উঠ শপিংয়ে যেতে হবে তো। ভুলে গেছিস কাল তোর গায়ে হলুদ।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় এনা। বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। বাম হাত দিয়ে ডান গালে হাত রাখে। প্রিয় মানুষটির প্রথম দেওয়া চুমু। যাবার সময় দিয়েছিল। এনা কে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে এনার পাশে দাঁড়ায়।

” কিরে ভুতে ধরেছে নাকি হাসছিস কেনো একা একা।

ভরকে যায় এনা। মুখটা চুপসে আসে। ফ্রেশ হবার কথা বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। এদিকে হেনা এনার কর্মকাণ্ড দেখে ভ্রু কুঁচকায়।

শপিং মলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে এনা,হেনা আর ফাইয়াজ। শানের জন্য অপেক্ষা করছে। ফারাহ্ আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমান আসতে দেয় নি এই অবস্থায়। এ নিয়ে ভীষণ মন খারাপ ফারাহ্ র। আরাভ একটা কাজ থাকায় আসতে পারে নি। এনা হাত ঘড়িটায় সময় দেখে নেয়।

” অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাই না?

সামনে তাকিয়ে দেখে ঘামার্তক শরীর নিয়ে এগিয়ে আসছে শান। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অফিস থেকে এসেছে। পেছনেই আরহাম। ফাইয়াজ কে দেখে মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ করলো। এখানেও এই উটকো ঝামেলা কে আনতে হবে?

হেনা স্মিত হাসে।

” না না ভাইয়া কোনো সমস্যা হয় নি। কিন্তু আপনি তো ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছেন। সূর্যের তো তেমন উত্তাপ নেই।

আরহাম এগিয়ে আসে মুখটাকে থমথমে রেখে বলে,,

” আপনার মতো তো আমার ব্রো এক জায়গায় বসে থাকে না। তাকে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। সেখানে ঘেমে যাওয়াই স্বাভাবিক।

হেনার মুখ চুপসে যায়। সে তো সিরিয়াস হয়ে বলে নি। এমনি মজা করেছিল জাস্ট। হেনার চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে একটু মজা পেলো আরহাম। শান এনার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,

” যাওয়া যাক তাহলে?

এনা মাথা নাড়ায়। শপিংমলে ঢুকতে ঢুকতে বলে,,

” মুনিয়া আসলে না যে?

” ওর ভার্সিটিতে ক্লাস আছে তাই আসে নি । ক্লাস শেষ হলে আসবে। আরহাম আসলো না যে?

” ভাইয়া আমার জন্য ভার্সিটি তে গেছে সাপ্তাহ খানেক বাদেই তো আমার ক্লাস শুরু।

” আমাকে বলতা আমি যেতাম। শুধু শুধ আরহাম কে খাটাচ্ছ।

” আমার বর মশাই টাও তো কম খাটছে না আমার জন্য। আজ ও খুব প্রেশার ছিলো অফিসে তাই না?

শান ঘাড় কাত করে হাতের ভাঁজে থাকা এনার হাত টায় অধর ছুঁয়ে বলে,,

” ছিলো ম্যানেজ করে এসেছি তাই একটু লেট হলো।

” না আসলেই তো হতো। শুধু শুধু কষ্ট করলেন

” এতো বেশি বুঝো কেনো চলো চুপচাপ।

এদিকে আরহাম হেনার পেছন পেছন হাঁটছে। মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো। ভীষণ গিল্টি ফিল হচ্ছে আরহামের। সে কি হেনা কে হার্ট করে কথা বলেছে। ফাইয়াজ কেবলই হেনার হাতটা ধরতে নিবে আর তখনই আরহাম খপ করে হেনার হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। ফাইয়াজের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এনার দিকে বিরক্তি নিয়ে বলে,,

” এভাবে পিপড়ার মতো হাঁটছেন কেনো? দেখুন তো ব্রো আর ভাবিপু কত আগে চলে গেছে। চলুন তাড়াতাড়ি।

কথাটা বলে হেনা কে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে আরহাম। হেনা তাকিয়ে রয় আরহামের দিকে লোকটা হুটহাট করে তাকে স্পর্শ করে। লোকটা কি জানে তার এমন হুটহাট স্পর্শে হেনার ছোট্ট হৃদয় টা তড়িৎ গতিতে লাফালাফি করে। যেদিন আরহাম এসেছিল দ্বিতীয় বার তাদের বাসায়।
সেদিন ও হুট করে হাত টেনে ধরেছিল, কিছু একটা বলতে চেয়েও বলেনি সেদিন। সেদিন ও ঠিক এমনই অনুভূত হয়েছিল।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here