আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব -১২+১৩

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১২
#Raiha_Zubair_Ripte

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে আমান, আরাভ, হেফজিবা,ফারাহ্, রত্না বেগম,আর আরাভের বাবা আরমান সাহেব। আরমান সাহেব কপালে এক হাত ঠেকিয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি বেশ বিরক্ত ছেলের এমন সিদ্ধান্তে। আমান বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। তার মতে এসব ব্যাপার কোনো ফ্যাক্টই না। ভালোবাসে যেহেতু তাহলে বিয়ে করলে অসুবিধা কোথায়? আরমান সাহেব একটু নড়েচড়ে উঠল। সামনে মাথা নিচু করে বসে থাকা হেফজিবার দিকে তাকিয়ে নম্র স্বরে বলল,,

” তুমি মুসলিম হতে পারবা?

হেফজিবা মাথা উঁচু করে আরমান সাহেবের দিকে তাকায়। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বলে,,

” না আঙ্কেল আমি মুসলিম হতে পারবো না।

ব্যাস এই একটা কথাই ছিলো আরাভের মনে ঝড় তুফান সুনামি তুলে দেওয়ার জন্য। আরাভ বার বার ছলছল নয়নে হেফজিবার দিকে তাকাচ্ছে। হেফজিবা আরাভের চাহনি কে উপেক্ষা করে। আরমান সাহেব আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” তাহলে আর কি ভুলে যাও আরাভ হেফজিবা কে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই আরাভ বসা থেকে উঠে সোজা হেফজিবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

” হেফজিবা প্লিজ মুসলিম হয়ে যাও না।

হেফজিবা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

” আমিও তো বলতে পারি আপনি মুসলিম থেকে খ্রিস্টান হয়ে যান। কিন্তু আমি কি তা বলেছি আপনায় আরাভ?

আরাভ হেফজিবার হাত ধরে বলে,,

” আমাদের ধর্মে এমন টা হয় না মুসলিম ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে যাওয়া যায় না। লক্ষীটি প্লিজ এমন করে না ভালোবাসি তোমায়।

হেফজিবা আরাভের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,

” আপনি ভালোবাসলেই তো হবে না। আমার তো আপনায় ভালোবাসতে হবে। আমি তো বাসি না ভালো আপনায়।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই দু পা পিছিয়ে গেলো আরাভ। হেফজিবাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,

” ভালোবাসো না তুমি আমায়?

হেফজিবা চোখ ফ্লোরে নিবন্ধন করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,

” ন না ভালোবাসি না।

” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো।

হেফজিবা এবার আরাভের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,,

” না ভালোবাসি না আপনায়। আমায় দেখে কখনো মনে হয়েছে আমি আপনায় ভালোবাসি? সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত দিচ্ছি— একজন মানুষ আরেক জন মানুষকে ভালোবাসবে, এটাই স্বাভাবিক। ভালোবাসা তো আর এতো হিসাবনিকাশ করে হয় না, এটা জাস্ট হয়ে যায়। তখন খেয়াল থাকে না যে, ব্যক্তিটি কোন ধর্মের। আমাদের সমাজের আমজনতা দুটি ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তির ভালোবাসাকে সমর্থন করেনা, তাদের ভালোবাসাকে সমর্থন করলেও তাদের বিয়ে হ‌ওয়াকে ঠিক সমর্থন করতে পারে না। আর যদি তাঁদের বিয়েকে সমর্থন করেও, তখন দুজন ভিন্ন ধর্মের নিরীহ বিবাহিত যুগল স্বতন্ত্র ভাবে নিজ নিজ ধর্ম‌ও পালন করতে পারে না। দুজনের মধ্যে একজনকে নিজের ধর্মের সাথে আপোষ করে অন্য ধর্মকে গ্রহণ করতে হয়। এটা আবার আমার বোধগম্যের বাইরে অর্থাৎ, ভালোবাসার জন্য নিজ ধর্ম ত্যাগের ব্যাপারটি আমি ঠিক ভাল ভাবে গ্রহণ করতে পারিনা।

” বেশ তাই হোক তোমায় ফোর্স করবে না আমি। শুধু বলবো ভালো থেকো। জোর করে সব পাওয়া গেলেও ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আমার লাক টাই খারাপ জানো তো জীবন দ্বিতীয় বার সুযোগ এনে দিলেও সেটাকে আঁকড়ে ধরে নিজের করতে পারলাম না।

কথাটা বলে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো আরাভ। আরমান সাহেব হেফজিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,

” তোমার মতামত কে আমি সমর্থন করি মা। কারো পক্ষেই ধর্ম ত্যাগ করা সম্ভব নয়। ভালো থেকো।

কথাটা বলে আরমান ও চলে গেলো নিজের রুমে।

এনা হেফজিবার সামনে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” আমি সবসময় তোর পাশে আছি দোস্ত। চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। চল রুমে।

আরাভ রুমে এসে মাথা চেপে বসে আছে। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। পারছে না এভাবে। বাহির থেকে এনা দরজায় করাঘাত করে বলে,,

” আরাভ ভাই আসবো?

আরাভ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,

” হ্যাঁ আসে ভেতরে।

এনা ভেতরে এসে আরাভের পাশে বসে বলে,,

” আরাভ ভাই যে চায় না নিজের সাথে তোমায় বাঁধতে তাকে নিয়ে না ভাবাই শ্রেয়। তোমার উচিত মুভ অন করা। হেফজিবা কখনোই তার ধর্ম ছাড়তে পারবে না।

আরাভ অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের জল আড়াল করার চেষ্টা করে বলে,,

” হুমম চেষ্টা করবো। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। পরে কথা বলবো তোমার সাথে।

এনা মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চার্চিল স্কয়ারে বসে আছে এনা আর পিটার। পাশেই খেলছে অ্যাঞ্জেলেকা কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সাথে। এনা এবার পিটারের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ডাকলেন কেনো?

” এমনি।

” এমনি মানে?

” এমনি মানে এমনি।

” ঐ বাচ্চা মেয়েটা কে যাকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন।

” আমার মেয়ে।

এনা এবার কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,

” ফাজলামি করছেন আপনি আমার সাথে? আপনি তো বিয়েই করেন নি তাহলে মেয়ে আসলো কোথায় থেকে।

পিটার এনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,,

” বিয়ে না করলে কি মেয়ে হয় না নাকি।

” অব্যশই না। কারন একমাত্র ওসব করলেই তো বাচ্চা হয়।

পিটার চোখ পিটি পিটি করে বলে,,

” ওসব কোন সব?

” ওসব কোন সব জানেন না? ধাক্কা মে’রে একদম পানিতে ফে”লে দিবো। মেয়েটা কে হয় সেদিন মলের সামনে দেখেছিলাম মেয়েটাকে এক মহিলার সাথে।

পিটার তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,,

” হ্যাভেনের মেয়ে।

কথাটা কর্ণকুহর হতে এনা ভ্রু কুঁচকে বলে,,

” ফাইজলামি করছেন আবার হ্যাভেন কবে বিয়ে করলো। আর করলেও এতো বড় বেবি আসলো কই থেকে।

” হ্যাভেন লুকিয়ে বিয়ে করেছিলো আমাদের না জানিয়ে। তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর দু বছরের বাচ্চা নিয়ে হ্যাভেন একদিন সকালে হাজির হয় বাসায়। হ্যাভেনের স্ত্রী হেলেন গরীব ঘরের মেয়ে ছিলো। আর আমার মা তো স্ট্যাটাস আভিজাত্য ছাড়া মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মানবে না তাই লুকিয়ে সব করে বাচ্চা সহকারে সামনে আসে। কারন তখন তো না মেনে উপায় নেই।

” ও তাই বলুন। হ্যাভেন কে দেখলাম না একবার। হ্যাভেন কোথায়?

” হ্যাভেন কোমায়।

” কিহ!

” হ্যাঁ আজ চার বছর ধরে কোমায় আছে।

” কিভাবে কি হলো?

” চার বছর আগে একদিন হঠাৎ হসপিটাল থেকে ফোন আসে হ্যাভেন হসপিটালে ভর্তি। গাড়ি এক্সি”ডেন্ট করেছিলো।

” এখন হ্যাভেনের অবস্থা কেমন। আগের থেকে একটু ভালো।

” ওহ।

” আচ্ছা এনা একটা কথা বলি?

” বলুন।

” আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি কি রাজি?

কথাটা এনার কর্ণকুহর হতেই এনা ভীষণ রকমের একটা ঝটকা খায়। এ কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না এনা। আজ সকালে হেফজিবা আর আরাভের ঘটনা গুলে দেখে এনার মন বিষিয়ে গেছে। এমনিতেই নিজেকে অনেক টা শক্ত করে তুলছে এই কয়েক বছরে।

” যা ছয় বছর আগে হতে পারে নি তা আজ আর কিভাবে হবে।

” তুমি চাইলেই হবে।

” ছয় বছর আগে তো আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি চান নি। সেই আপনি ভাবছেন আমি চাইবো?
আর তাছাড়া আপনার মা কি মানবে?

” সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও। যতোদিন আছি তোমার সাথে তোমার পাশে থেকে কাটাতে চাই।

” যতোদিন আছেন মানে?

” ও কিছু না। একটা উঠে দাঁড়াও তো।

” কেনো?

” আহা উঠোই না।

এনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে পিটার দৌড়ে গাড়ি থেকে গোলাপের তোড়া টা নিয়ে এসে এনার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বলে,,

” তোমার কি মনে পড়ে? ব্যান্ফ পার্কে আমাদের প্রথম সাক্ষাৎের কথা! সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমাদের হেঁটে চলার কথা!একসঙ্গে বসে থাকা প্রকৃতির সান্নিধ্যে। কবিতার মতো প্রেম। কখনো কৃত্রিম আবহে উড়তে থাকে তোমার চুল। তোমার হাত ছুঁয়ে বন্দী হয় সময়। স্পর্শে থাকে না যৌনতা! না থাকে মুগ্ধতা। সে স্পর্শে থাকে নির্ভরশীলতা। তোমার কাজল চোখ। আমার নির্লিপ্ত কাব্যিক দৃষ্টি। হারানোর ভয়। সে ভয়ে চোখ ভিজে যায়। শক্ত করে ধরে থাকি তোমার হাত।

” না মনে নেই।

এনার এমন বেহুদা কথা শুনে পিটারের ইচ্ছে করছিলে চ”ড়িয়ে গাল লাল করে দিতে। নিজের রাগ কে সংবরণ করে বলে,,

” আমাকে শেষ করতে দাও কাল সারা রাত ধরে এসব কাব্যিক শিখেছি। কথা বলো না চুপচাপ কথাগুলেকে তোমার হৃদকে স্পর্শ করতে দাও।

” আচ্ছা বলেন।

” প্রথম থেকে বলি?

” না না যেখান থেকে থেমে গেছেন সেখান থেকে বলেন।

পিটার বসা থেকে উঠে এনার হাত ধরে হাঁটা ধরলো।

” আরে কই নিয়ে যাচ্ছন।

” নির্জন প্রহরে।

” সেটা কোথায়।

পিটার হাঁটা থামিয়ে এনার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে,,

” নির্জন প্রহর মানে বুঝো না?

” বুঝি তো।

” তাহলে জিজ্ঞেস কেনে করছে চলো আমার সাথে।

কথাটা বলে ফের এনার হাত ধরে হাঁটা ধরলো পিটার। প্রায় মিনিট সাতেকের মধ্যে একটা নির্জন জায়গায় এনে এনার হাত ছেড়ে দিলো পিটার। এনা হাত ছাড়া পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো চারপাশে লম্বা লম্বা গাছপালায় ঢাকা জায়গা টা। বেশ সুন্দর। এনা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে পিটার একটা কাগজ এনার দিকে ধরে রেখেছে। এনা ভ্রু কুঁচকে বলে,,

” কিসের কাগজ এটা?

” দেখে তুমি।

এনা কাগজ টা নিয়ে দেখলো সেখানে স্পষ্ট লেখা ফয়সাল আহমেদ শান লেখা। অপরিচিত নামের সনদ পত্র দেখে এনা বিরক্ত হয়ে বললো,,

” কার সনদ পত্র আমায় দেখাচ্ছেন আপনি?

পিটার স্বাভাবিক হয়েই বলে,,

” আমার।

” আপনার মানে?

” আমার মানে আমার। আমি মুসলিম হয়েছি।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই সারা শরীর বরফের মতো জমে গেলো এনার। মাথাটাও ঝিমঝিম করতে লাগলো। হাত পা কাঁপছে। হৃদপিণ্ড টার স্পন্দন মনে হয় থেমে গেছে। হাত থেকে কাগজ টা পড়ে গেলো। চোখ দুটো ঝাপসা হতে লাগলো।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৩
#Raiha_Zubair_Ripte

এনা একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না পিটার মুসলিম হয়েছে। এটা কি আদৌও সম্ভব? না কেউ তো কারো ধর্ম ত্যাগ করতে পারে না। নিশ্চয়ই পিটার মজা করছে। কই হেফজিবা তো পারলো না নিজের ধর্ম থেকে সরে আসতে। এনা নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,,

” আপনি আমার সাথে মজা করছেন পিটার?

” হঠাৎ এমন টা মনে হলো কেনো?

” মনে কেনোই বা হবে না। নিশ্চয়ই আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন।

পিটার এবার এনার হাত ধরে বলে,,

” আমি না তোমার সাথে মশকরা করছি আর না ফান আমি সত্যি মুসলমান হয়েছি।

” কিন্তু কেনো?

” তোমাকে পাবার জন্য।

” আমাকে পাবার জন্য মানে? ছয় বছর আগেই তো আপনি সেটা নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

” সে জন্য এখন নিজ হাতে সেটা শুধরে নিতে চাইছি।

” সব সময় সব কিছু শুধরে নেওয়া যায় না পিটার।

” জানি তো।

” জেনেও তাহলে এসব করছেন কেনো?

” ভালোবাসি তাই।

” পাগলামি করছেন এখন। আপনার মা জানলে কি হবে ভাবতে পারছেন?

” জানলেই বা কি হবে?

” মানে?

” মানে টানে কিছু না। শোনো মেয়ে বিয়ে করবে কবে সেটা বলো। ছয় বছর অনেক দহনে পু”ড়েছি। আর পু”ড়তে পারবো না। এবার তোমার সংস্পর্শে এসে একটু তোমার সান্নিধ্য পেতে চাই।

” দিবো না আমার সান্নিধ্য।

” তাহলে চ”ড়িয়ে গাল লাল করে দিবো। কোথায় আমি মুসলিম হয়েছি সেটা শুনে আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেটে হয়রান হবে তা না সে আমায় ইগনোর করছে বাহ!

” আমি বলেছি,আপনায় মুসলিম হতে? বলিনি তো তাহলে!

” শোনো মেয়ে এনা “তোমার প্রেমে হয়েছি পাগল
হয়েছি আমি অন্ধ দিশেহারা
ওগো ভিনদেশী,
তোমার প্রেমে হয়েছি কাবু
হলাম আমি সর্বহারা…. তবুও যদি তোমার মন না গলে তাহলে হে আল্লাহ আমায় উঠিয়ে নাও এ পৃথিবীতে থেকে কি লাভ।

এনা ভ্রু কুঁচকায়। সত্যি পিটার মুসলিম হয়েছে। আল্লাহ তাহলে এ ছেলে তো নির্ঘাত বাড়ি ছাড়া হবে। এর মা যে দ”জ্জাল বাপ্রে।

” এই আপনি সত্যি সত্যি মুসলিম হয়েছেন।

পিটারের এবার ভীষণ রাগ হলো দাঁত চেপে বলে উঠে,,

” তোমায় গালে ঠাটিয়ে একটা চ”ড় দিয়ে প্রমাণ করি?

” আরে ধূর সত্যি কথা বলেন।

” হ্যাঁ হয়েছি।

” মুসলমানি করিয়েছেন।

পিটার এবার পারছে না শুধু গর্ত খুঁড়ে গর্তে লুকাতে। আশ্চর্য মুসলিম যেহেতু হয়েছি তাহলে নিশ্চয়ই ওটাও করেছে। এনা পিটারকে কিছু বলতে না দেখে নিজেই বলে উঠে,,

” জানতাম আপনি করেন নি ওটা। এতোক্ষণ ধরে শুধু শুধু মিথ্যা বলছে। আপনি জানেন মুসলমানি না করলে মুসলিম হওয়া যায় না?

পিটার এনার দিকে এগিয়ে বলে,,

” খুলে দেখাই?

এনা পিটারের কথার মানে বুঝলো না আবাক হয়ে বললো,,

” মানে?

” মানে বলছি খুলে দেখাই হয়েছি কি হই নি?

” কি খুলে দেখবেন।

পিটার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

” তোমার মাথা বেয়া”দব। বাসর রাতে দেইখো করেছি কি করি নি মুসলামানি।

” ওহ তার মানে হয়েছেন। কিন্তু কবে হলেন?

” বছর দুয়েক আগে।

এবার এনার অজ্ঞান হবার যো। এই ছেলে দু বছর আগে মুসলিম হয়েছে! এনা পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,

” আপনার মাথা ঠিক আছে? দু বছর আগে মুসলিম কিভাবে হলেন।

” চলো তাহলে সেখানে যাই যেখানে বছর দুয়েক আগে মুসলিম হয়েছিলাম।

কথাটা বলে এনা আর অঞ্জেলেকা কে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো পিটার। এনা বারবার পিটারের দিকে তাকাচ্ছে। আজকে তার সাথে এসব কি হচ্ছে। ভাগ্য কি তাহলে তার ভালোবাসাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে? কথাগুলো ভাবতেই গাড়িটা এসে আল রাশিদ নামের মসজিদ টার সামনে এসে থামলো।

১৯৩৮ সালে আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনে প্রথম মসজিদ ‘আল রাশিদ’ স্থাপিত হয়

১৯৫২ সালে মনট্রিয়েলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রমে ইসলামিক স্টাডিজ অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক মুসলমান শিক্ষার্থী কানাডায় আসে। ১০ বছর পর টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ও একই বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করলে সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্রমান্বয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী, দক্ষ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬০ সালের পর থেকে মুসলমান অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কানাডায় মুসলমানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৮৭০ জন। ১৯৯১ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয় ২ লাখ ৫৩ হাজার। এর এক দশক পর ২০০১ সালে তা বেড়ে হয় দ্বিগুণের বেশি।

কানাডায় মুসলমানদের আগমন শতাধিক বছর আগে। ১৮৭১ সালের কানাডিয়ান আদমশুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই শুমারিতে মাত্র ১৩ জন মুসলমানের উল্লেখ পাওয়া যায়। জানা যায়, কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ে স্থাপনের সময় অনেক মুসলমান দেশটিতে আগমন করে।

পিটার গাড়ি থেকে বের হয়ে অঞ্জেলেকা কে কোলে তুলে নেয়। হাতের ইশারায় এনাকেও গাড়ি থেকে বের হতে বলে। এনা গাড়ি থেকে বের হলে পিটার এনার হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করে। মসজিদে থাকা ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে।

ইমাম সাহেব সালামের জাবাব নিয়ে বলে,,

” আরে শান যে কেমন আছো?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

” আমিও ভালো। সাথে থাকা এনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,, এই মেয়ে কে?

” এই হচ্ছে সেই মেয়ে যার জন্য মুসলিম হয়েছি।

” বাহ! মা তুমি খুব সৌভাগ্যবতী। তোমার জন্য শান খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হয়েছে। তোমাদের প্রমের বিষয়ে সব খুলে বলেছিলো শান আমায়। সব শুনে বলেছিলাম তাকে মুসমান হতে। কারন কেউ ভিন্ন ধর্ম থেকে মুসলিম হতে পারে বাট মুসলিম থেকে অন্য কোনো ধর্মে যেতে পারে না কেউ। অন্য ধর্মের মানুষ শুধু মুসলিম হলেই চলবে না তাকে ইসলামের দিনের পথেও চলতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ শান দু বছর ধরে সব মেনে চলছে।

” হুজুর আমি এনাকে এই মূহুর্তে বিয়ে করতে চাই। আমি হালাল একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই।

কথাটা শুনে এনা কেঁপে উঠে।

” বেশ তো করে ফেলো বিয়ে সমস্যা কোথায়।

” আপনার দোয়া নিতে এসেছি।

” আমার দোয়া সবসময় তোমার সাথে আছে সুখী হও তোমরা।

আরো কিছু টুকটাক কথা বলে পিটার এনা আর অঞ্জেলেকা কে নিয়ে চলে আসে কোর্ট ম্যারেজ করতে। কোর্ট ম্যারেজের অফিসের সামনে বসে আছে এনা আর পিটার। পিটারেরর দিকে চেয়ে বলে,,

” এটা কি ঠিক হচ্ছে পিটার?

” নট পিটার কল মি শান। আর বেঠিকই বা কি করছি?

” এই যে বিয়ে করার জন্য আসলেন।

পিটার এনার গালে দু হাত দিয়ে উঁচু করে বলে,,

” ভালেবাসো আমায় এনা?

” হঠাৎ এ কথা?

” আহা বলোই না ভালোবাসো আমায়?

” ভালো যদি নাই বাসতাম তাহলে এই অব্দি চলে আসতাম?

” তাহলে লক্ষীটি আর কোনো কথা নয়। যা হচ্ছে হতে দাও। সেবার দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারি নি কিন্তু এবার যতোদিন বেঁচে আছি ততোদিন তোমার পাশে থাকবো। কোনো পরিস্থিতিতে তোমার হাত এই ফয়সাল আহমেদ শান ছাড়বে না। ভরসা করে দেখো এবার ঠকবে না বিলিভ মি।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। গল্প কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here