আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব -১০+১১

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব৯
#Raiha_Zubair_Ripte

হসপিটালের কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে এনা, পিটার,ক্লো। ভেতরে ডক্টর হেফজিবার চিকিৎসা করছে। থেকে থেকে কেঁদে উঠছে এনা। সে কিছুতেই মানতে পারছে না তার প্রানপ্রিয় বান্ধবীর এমন করুন অবস্থা। মেয়েটার সংসারে এতো অশান্তি আর মেয়েটা মুখে মিথ্যে হাসি নিয়ে ঘুরিয়ে বেরিয়েছে। এনা স্যামিয়ুল কে হাতের কাছে পেলে খু’ন ই করে ফেলবে।

পিটার এগিয়ে এসে এনাকে বাহুডোরে আগলে নেয়। এনা একটা ভরসা যোগ্য আশ্রয় পেয়ে এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। একহাত দিয়ে পিটারের বুকের দিকটায় শার্ট খামচে ধরে। পিটার এনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,,

” কাঁদে না লক্ষীটি। সব ঠিক হয়ে যাবে। হেফজিবা সুস্থ হয়ে যাবে।

এনা পিটারের বুক থেকে মাথা উঁচু করে বলে,,

” পিটার আপনি ভাবতে পারছেন হেফজিবা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো। ওর স্বামি কি করে পারলো জা’নোয়ারের মতো এভাবে মা’রতে।

” হেফজিবার সাথে যা হয়েছে তা অন্যায়। স্যামিয়ুল কে তো ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। তার করা অন্যায়ের শা’স্তি সে পাবে।

ক্লো এসে এনার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,

” ভাগ্যিস হেফজিবা ফোনটা গাড়িতে ফেলে গিয়েছিল তাই সেটা ফেরত দিতে গিয়ে বিষয়টা দেখতে পেলাম। তা না হলে ওভাবেই পড়ে থাকতো। আচ্ছা এনা হেফজিবার চাচি বাসায় থাকতে কিভাবে পারলো হেফজিবার সাথে এমন টা করতে স্যামিয়ুল?

এনা ভ্রু কুঁচকে ফেলে সত্যি ই তো হেফজিবার চাচি বাসায় থাকতে কি করে এতো সাহস স্যামিয়ুল। হেফজিবার বাবা মা হেফজিবার বয়স যখন পনেরো তখনই গাড়ি এক্সি”ডেন্টে মা’রা যায়। সেই থেকেই চাচা চাচির কাছে মানুষ হয় হেফজিবা। চাচা অবশ্য হেফজিবা কে ভালোবাসলেও তার চাচি তাকে একটু ও দেখতে পারে না। প্রায় সব সময়ই কটুক্তি শোনাতো। এনা কিছু একটা ভেবে সেটা বলার জন্য উদ্ধত হলে তখনই ঝড়ের বেগে হাসপাতালে প্রবেশ করে আরাভ। এনাকে দেখতে পেয়ে এনার বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,,

” এনা হেফজিবা কোথায় ও ঠিক আছে তো।

এনা আরাভের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে,,

” না আরাভ ভাই ডক্টর এখনো কিছু বলেনি। হেফজিবার পুরে শরীরে মা’রের দাগ।

কথাটা শোনা মাত্রই আরাভ সামনে থাকা বেঞ্চটাতে সজোরে লা’থি মা’রে। চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,,

” হেফজিবার এই অবস্থা কি করে হলো? কে করছে?

পিটার আরাভের পিঠে হাত দিয়ে বলে,,

” হচ্ছে কি আরাভ এটা হসপিটাল চিৎকার করিস না।

আরাভ পিটারের হাত তার পিঠ থেকে সরিয়ে বলে,,

” তুই জানিস না আমি কেনো চিৎকার করছি। আমাকে শুধু বল কে করছে ওর এমন অবস্থা।

এনা আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আরাভ ভাই হেফজিবার স্বামি স্যামিয়ুল হেফজিবা কে এভাবে মে’রেছে।

কথাটা আরাভের কর্ণকুহর হতেই চোখ জোড়া রক্তিম হয়ে উঠে। দাঁত চেপে বলে,,

” ঐ জা’নোয়ারের বা’চ্চা টা কোথায় এখন?

” পুলিশের কাছে। পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

” কোন থানায়?

” “আলবার্ট শ পুলিশ বিভাগে।

” আমি আসছি ততোক্ষণ হেফজিবার খবরাখবর সব আমায় মিনিটে মিনিটে জানাবে এনা,এই টুকু হেল্প আমায় করো।

কথাটা বলে আরাভ যেতে নিলে পিটার কিছু একটা আঁচ করতে পেরে আরাভের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,

” আরাভ তুই কিন্তু কিচ্ছু করবি না ওখানে গিয়ে। যা করার এরিক করবে।

আরাভ কথাটা শোনামাত্রই পিটার কে হুংকার দিয়ে বলে,,

” তুই আমার সামনে থেকে সর ওর কতোবড় কলিজা আমার ভালোবাসার শরীরে আঘাত করে ওর কলিজা কে”টে টু’করো টুকরো করে কাক কে খাওয়াবো। নিরদ্বিধায় নিজের ভালোবাসা সুপ্ত অনুভূতি টাকে নিজের মনে কবর দিয়ে চুপচাপ ওর সাথে হেফজিবার বিয়ে হতে দিয়েছি তাই বলে স্যামিয়ুল ওকে মার”বে আর আমি চুপচাপ মেনে নিবো।

কথাটা এনার কর্ণকুহর হতেই এনা অবাক হয়। তার ভাই হেফজিবা কে পছন্দ করে কিন্তু কিভাবে সম্ভব? কখনো তো তেমন কিছু আরাভের দিক থেকে দেখে নি বা শুনে নি যা বোঝাবে সে হেফজিবা কে ভালোবাসতো।

পিটার আরাভের হাত ধরে অবাক হয়ে বলে,,

” ভালোবাসতি হেফজিবা কে তুই?

আরাভ পিটারের দিকে ছলছল নয়নে তাকায়।

” এখন ও ভালোবাসি আমি হেফজিবা কে।

” তোদের ধর্ম আলাদা তুই সেটা জেনেও!

” সবাই কি পিটার উইলসন নাকি যে ধর্ম ভিন্ন দেখে ভালোবাসার রং ও বদলে যাবে। আমি সেদিন ও হেফজিবা কে ভালোবেসেছি আজ ও ভালোবাসি।

কথাটা এসে পিটারের বুকে তীরের মতো বিঁধে। সে তো জানে সে কোনো অন্যায় করছে না। পিটার নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে,,

” ওর বিয়ে হয়ে গেছে জানিস তো তবুও,,

” বিয়ে হয়েছে সো হোয়াট। স্যামিয়ুল যদি হেফজিবা কে এমন অত্যা”চার না করতো তাহলে কখনে আমার এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশ করতাম না। এখন যখন প্রকাশ করে ফেলছিই তখন আমি আমার ভালোবাসা কে আমার করেই ছাড়বো স্যামিয়ুলের সাথে হেফজিবা কে আর থাকতে দিবো না।

” হেফজিবা যদি স্যামিয়ুলের সাথে থাকতে চায় তখন?

আরাভ আর কিছু বলতে পারলো না যদি সত্যিই হেফজিবা স্যামিয়ুলের সাথে থাকতে চায় তখন। কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা ভেবে বলে,,

” তাহলে স্যামিয়ুলের একটা ব্যাবস্থা করব আমি।

” তোর কিছু করতে হবে না। যা করার আমি করবো আমার উপর ভরসা আছে তো?

এর মধ্যে ডক্টর ওটি থেকে বের হয়। আরাভ হন্তদন্ত হয়ে ডক্টরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

” ডক্টর হেফজিবা কেমন আছে।

” হ্যাঁ সি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার বাট,,

” কিন্তু কি ডক্টর বলুন না।

” তার পেটের বাচ্চা টা কে বাঁচাতে পারি নি। পেটে জোরে আঘাত লাগায় মিসক্যারেজ হয়ে গেছে।

কথাটা শুনে সবাই আহত হয়। আরাভ অবাক হয়ে তাকায় ডক্টরের পানে অবিশ্বাসের সাথে বলে,,

” হেফজিবা প্রেগন্যান্ট ছিলো?

” হ্যাঁ। পেশেন্টের সাথে ঘন্টা দুয়েক পর দেখা করতে পারবেন। কথা টা বলে ডক্টর চলে যায়।

আরাভ বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে হেঁটে এনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,

” এনা হেফজিবা প্রেগন্যান্ট ছিলো? তুমি জানতে?

” না আরাভ ভাই হসপিটালে এসে জেনেছি আমি। ডক্টর যখন হেফজিবার এমন অবস্থা দেখে ট্রিটমেন্ট করার জন্য ওটিতে নিয়ে গিয়েছিল তখন বেশ কিছুক্ষণ পর তাদের এক নার্স এসে বলে,, আপনাদের পেশেন্ট প্রেগন্যান্ট ছিলো এমন অবস্থায় তাকে এভাবে জা”নোয়ারে মতো কে মে’রেছে অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল।

তখন কথাটা শুনে আমিও অবাক হয়েছিলাম। ওর সাথে তো মিট করলাম কই তখন তো এই সুখবর টা দিলো না আমাদের।

আরাভ এবার পিটারের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আমি কিন্তু স্যামিয়ুল কে ছাড়বো না পিটার বলে রাখলাম। একদম আটকাবি না।

হেফজিবা কে ওটি থেকে ক্যাবিনে শিফট করা হয়েছে। এলোমেলো পায়ে হেঁটে আরাভ হেফজিবার সামনে গিয়ে পাশে রাখায় চেয়ার টায় বসে পড়ে। হেফজিবার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকাতেই আরাভের বুক টা মোচড় দিয়ে উঠলো। ইস সেদিন যদি একটু সাহস করে মনে কথাটা হেফজিবা কে বলে দিতো তাহলে আজ তাদের জীবনটা অন্যরকম হতো। হেফজিবার হাতের দিকে চোখ পড়তেই হাতের উপর থাকা আঘাত গুলো দেখে চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়। মেয়েটা কতোই না কষ্ট পেয়েছে। আঘাতের দাগগুলোর উপর হাত ছুঁয়ে দিয়ে হেফজিবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,

” আর তোমায় কষ্ট পেতে দিবো না হেফজিবা তোমার চাচির বলা সেদিনের সেই মিথ্যা টার জন্য আজ এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে তোমায়। সেদিন যদি বিশ্বাস না করতাম তোমার চাচির কথা। জানোতো সেদিন ঝড়ের মধ্যে গিয়েছিলাম ছুটে তোমার বাসায় তোমায় মনের কথাগুলো বলার জন্য। কিন্তু গিয়ে দেখি তুমি ততক্ষণে অন্য কারোর বউ। জানো তো সেদিন তোমাকে অন্য কারোর পাশে কিছুতেই মানতে পারছিলাম। খুব কষ্ট হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো আমার গ”লা কেউ চে”পে ধরেছে। তোমার চাচির কাছে গিয়ে যখন তোমার কথা জিজ্ঞেস করলাম তখন তোমার চাচি বললো তুমি নাকি ভালোবেসে স্যামিয়ুলকে বিয়ে করছো। তোমাদের এক বছরের সম্পর্ক ছিলো। কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। আমার আট বছরের লুকায়িত ভালোবাসার প্রাপ্তি পেলো না। তোমার চাচি আমায় কেনো মিথ্যা বলেছে জানি না। কিন্তু শুনে রাখো ঐ জা”নোয়ারের সাথে আমি তোমায় সংসার করতে দিবো না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো। ভালোবাসি খুব তোমায়।

ক্যাবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে এনা আর পিটার আরাভের কথা গুলে শুনছিলো। এতোটা ভালোবাসে এখনো হেফজিবা কে। পিটার এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আচ্ছা এনা আমি যখন থাকবো না তখন কি আমায় ভুলে যাবে। মুছে ফেলবে মন থেকে। আমি কিন্তু দূর থেকেও রোজ ভালোবাসবো তোমায়।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই এনার সারা শরীর বরফের ন্যায় জমে গেলো। অজানা ভয়ে ধুক করে উঠলো বুকটা। সরসা পিটারের দিকে তাকিয়ে অবাকের ন্যায় প্রশ্ন করলো ,,

” মানে?

পিটার হালকা হেঁসে বলল,,না কিছু না।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন হ্যাপি রিডিং)#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১০
#Raiha_Zubair_Ripte

সবেই চোখ মেলে তাকিয়েছে হেফজিবা। সারা শরীর এখনে ব্যাথা করছে। হালকা মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় আরাভ ঘুমাচ্ছে এক হাত মাথায় ঠেকিয়ে। আরাভ কে দেখে ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো হেফজিবার। হালকা একটু নড়েচড়ে উঠতেই ধরফরিয়ে তাকায় আরাভ বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,,

” কি হয়েছে কোথাও ব্যাথা লাগছে? ডক্টর কে ডাকবো?

হেফজিবা আরাভের এমন বিচলিত দেখে বলে,,

” না ডক্টর ডাকতে হবে না। আমহ ঠিক আছি।

” আর ইউ সিউর?

” হুমমম।

” আচ্ছা তুমি কি সাইন করতে পারবে।

হেফজিবা আরাভের কথার মানে বুঝলল না। না বোঝার ভঙ্গিতে বলল,,

” হুমমম?

” বলেছি কিছু পেপার দিবো সাইন করতে পারবে?

” কিসের পেপার?

” ডিভোর্স পেপার।

হেফজিবা অবাক হয়।

” ডিভোর্স পেপার মানে কার?

” তোমার আর স্যামিয়ুলের। আমি আর চাইছি না তুমি স্যামিয়ুলের সাথে সংসার করো।

” হুমম পারবো দিন এখনই সাইন করবো। ওর মতে জা”নোয়ারের সাথে আমি আর সংসার করতে রাজি নই।

আরাভ স্মিত হেসে ডিভোর্স পেপার আর কলম এনে হেফজিবার হাতে ধরিয়ে দিতেই হেফজিবা তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। অনেক সহ্য করেছে আর না। আমার সন্তান কে হ”ত্যা করেছে। যখন স্যামিয়ুল পেটে লা”থি মেরেছিলো তখনই বোঝা শেষ এ বাচ্চা আর বাঁচবে না। আফসোস হচ্ছে না বাচ্চার জন্য বরং রাগ লাগছে নিজের উপর। কেনো সে তাদের অন্তরঙ্গতার সময় সতর্কতা ছিলো না। যদি সতর্কতা থাকতাম তাহলে বাচ্চাটার এই করুন অবস্থা হতো না। বাচ্চা টাকে নিয়ে অতো টা প্রত্যাশা ছিলো না। তবুও খারাপ লাগছে প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি পাচ্ছিলাম তার মাধ্যমে। এক সপ্তাহ হয়েছিল জেনে ছিলাম মা হচ্ছি। যেখানে নিজেরই সঠিক ভবিষ্যৎ নেই সেখানে এই বাচ্চার ভবিষ্যৎ কি? তবুও চাইছিলাম বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসলে হয়তো স্যামিয়ুল শুধরে যাবে কিন্তু কি হলো। নিজের বাবার হাতেই প্রা”ণ টা চলে গেলো তার।

হেফজিবা চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল টুকু মুছে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেয়।

আরাভ পেপার টা নিয়ে হেফজিবার করা সাইন দেখে প্রশান্তির একটা হাসি দেয়।

হসপিটালের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে এনা। পিটার গিয়েছে খাবার কিনতে। তখনকার পিটারের বলা সেই কথাটা খুব ভাবাচ্ছে এনা কে। অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খাওয়ায় এনার ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে। এনা ধাক্কা খাওয়া ব্যাক্তিটাকে না দেখে সরি বলতে নিবে আর তখনই গুরুগম্ভীর হয়ে ভেসে আসে,,

” চোখে দেখে হাঁটতে পারেন না ইডিয়েট।

কথাটা বলে লোকটা চলে যায়। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই লোকটা ফের ঘুরে এসে বলে,,

” আপনার নাম এনা না?

আকস্মিক নিজের নাম অচেনা এক ছেলের মুখে শুনে চমকে উঠে এনা। পেছন ঘুরে দেখে সেই লোকটা।

” আপনি কি আমাকে বলছেন?

বিরক্তিতে কাপলে দু ভাজ পড়লো লোকটির।

” আপনি ছাড়া কি এখানে আর কেউ আছে?

এনা আশেপাশ টা একবার চোখ বুলিয়ে দেখে এনা আর লোকটা ব্যাতিত এখানে কেউ নেই।

” আমি আর আপনি ছাড়া তো আর কেউ নেই এখানে।

এনার কথা শুনে গম্ভীর মুখে থাকা লেকটার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।

” আপনি এনা?

” হ্যাঁ আমি এনা কিন্তু আপনি কে?

” কানাডা এসেছেন কবে?

” আপনাকে কেনো বলবো? হু আর ইউ?

লোকটা আর কিছু বললো না মুখে গম্ভীরতা এনে উল্টো ঘুরে চলে যায়।

এনা লোকটার যাওয়ার পানে চেয়ে সামনে তাকায় দেখে পিটার খাবার নিয়ে আসতেছে। এতোক্ষণ পিটার দূর থেকে সব পর্যবেক্ষণ করছিলো। এনার কাছে এসে বলে,,

” লোকটা কে ছিলো এনা?

” আমি চিনি না। লোকটা আমার নাম বললো।

” তাহলে লোকটা তোমায় চিনে।

” হতে পারে।

” আচ্ছা খাবার গুলো নিয়ে যাও আমি আসছি কাজ আছে।

এনা মাথা নাড়িয়ে খাবার টা নিয়ে হসপিটালে ঢুকে পরে।

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পিটার। সামনে কয়েকদল প্রেমিক প্রেমিকা হেঁটে যাচ্ছে তার ভালেবাসার মানুষটির হাত ধরে। এনাকে তখন লোকটার সাথে কথা বলতে দেখে কেনো জানি পিটারের খুব রাগ হচ্ছিল। দূরে থাকা এক বেঞ্চে বসে পড়ে পিটার। তার পাশের বেঞ্চে বসে আছে এক তরুণ-তরুণী। তাদের বলা কথোপকথন গুলো পিটারে কানে আসছে। মেয়েটা বারবার ছেলেটাকে বিয়ে করার জন্য বলছে আর ছেলেটা বারবার নাকচ করছে।

” দেখো আলিশা আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।

” কিন্তু কেনো।

” আমি মাইশা কে ভালোবাসি। মাইশা কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি কোনো পরিস্থিতিতেই আমি তার হাত ছাড়বো না।

” তোমার মা তো মেনে নিবে না জেকি।

” না মানলে নেই। মায়ের মানা না মানার জন্য আমি আমার ভালেবাসা কে ছাড়তে পারবো না। আমার স্বাধীনতা আছে আমি কাকে বিয়ে করবো কি করবে না সেটা ঠিক করার। তোমাকে এজন্যই এখানে নিয়ে এসেছি তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না তোমার স্বামীর মনে অন্য মেয়ের বসবাস থাকুক। তাই বলছি তুমি তোমার মা বাবাকে বলে দিয়ো তুমি আমায় বিয়ে করবে না।

মেয়েটা ছেলেটার কথা শুনে হনহন করে চলে যায়। ছেলেটা মেয়েটার যাওয়া দেখে উঠে চলে যেতে নিলে পাশ থেকে পিটার ডেকে বলে,,

” এই ছেলে শুনো।

ছেলেটা পিটারের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আমাকে বলছেন?

” হ্যাঁ তোমাকে।

ছেলেটা এগিয়ে এসে পিটার সামনে দাঁড়াতেই পিটার বলে,,

” বসো এখানে তোমার সাথে কথা আছে।

ছেলেটা পিটারের পাশে বসে বলে,,

” জ্বি বলুন।

” তোমাদের সব কথপোকথন আমি শুনে ফেলেছি। তুমি এই মেয়েটাকে ভালোবাসো না?

” না এই মেয়েকে বাসা থেকে দেখেছে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য।

” তোমার বয়স তো তেমন বিয়ের উপযুক্ত হয় নি।

” হ্যাঁ কিন্তু আমি যাকে ভালোবাসি তাকে আমার মায়ের পছন্দ না। কারন মেয়েটা মুসলিম।

” তাহলে তুমি এখন কি করবে?

” আমি মেয়েটাকে বিয়ে করবো।

” পরিবারের অমতে।

” হ্যাঁ।

” তোমাদের ধর্ম যে ভিন্ন।

” তাতে কি সে তার ধর্ম পালন করবে আর আমি আমার ধর্ম। এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে।

” সেটা হয় নাকি?

” কেনো হবে না। সবাই যার যার ধর্ম মনে প্রানে মানে আর বিশ্বাস ও করে। কারোর পক্ষেই সম্ভব না তার ধর্ম পাল্টানো। আর আমি তো ধর্মের দোহাই দিয়ে তার হাত ছেড়ে দিতে পারবো না। মেয়েটাকে আমায় ভালেবাসতে রাজি করিয়েছি আমি। এখন যদি তার হাত ছেড়ে দেই তাহলে তার সাথে সেটা অন্যায় করা হবে না?

” হুমম বেস্ট অফ লাক। নতুন জীবনের জন্য অগ্রীম শুভেচ্ছা।

” ধন্যবাদ। বলে ছেলেটা উঠে চলে যায়। পিটার ছেলেটার যাওয়ার দিকে তাকায়। পকেট থেকে ফোনটা বের গ্যালারি তে গিয়ে একটা রিপোর্টের পিক দেখে। রিপোর্ট টা দেখে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। এই একটা রিপোর্ট যা তার সব হাসি খুশি গুলোকে মা’টি চে’পে হ’ত্যা করেছে। আর পাঁচটা মানুষের মতে স্বাভাবিক থাকলে এতেদিনে নিশ্চয়ই তার আর এনার একটা সুন্দর সংসার হতো।

মূহুর্তেই আকাশের বুক চিঁড়ে বৃষ্টি নামলে। সব লোক ছোটাছুটি করে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে বৃষ্টির নাগালের বাহিরে যেতে চাচ্ছে। পিটার নিরালয়ে বসে থাকে বেঞ্চে। হয়তো প্রকৃতিও বুঝতে পেরেছে পিটারের মনের অবস্থা। পিটার বসা থেকে উঠে নির্জন জায়গায় গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। এতোক্ষণ আটকে থাকা কান্না এবার উপচে পড়ছে। ছেলেরা তো কম কষ্টে কাঁদে না। ছেলেরা তো পারে না যখন তখন মেয়েদের মতো কেঁদে ফেলতে। ছেলেদের তো কাঁদতে মানা। যতোই কষ্ট হোক তা নিরবে সহ্য করা। পিটার এবার চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,, সবাই ভাবছে ধর্মের জন্য এনাকে ঠকিয়েছি আমি। কিন্তু আমি তো জানি আমি কেনো এনাকে নিজের সাথে জুড়তে চাই না। যেখানে আমার জীবনেরই নিশ্চয়তা নেই সেখানে এনাকে কি করে আমার জীবনে জড়াই। আজ ছয়টা বছর ধরে মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত আমি। কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমি যাচ্ছি তা কেবল আমিই জানি। ভালোবাসা যে এত কষ্ট তা আগে জানা ছিল না, তোমার প্রতি ভালবাসা ও মোহ আজকে আমায় এতটা বিষন্ন করে তুলেছে যে নিজেকে আজ বড় অসহায় লাগছে।

কথাগুলো বলে পিটার বসা থেকে উঠতেই পকেটে থাকা ফোনটা বের করে দেখে ডক্টর জেলেক্স ফোন দিয়েছে পিটার ফোন কল রিসিভ করে কানে দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ডক্টরের কথা শুনে আমাবস্যা ঘন কালো মেঘের মধ্যে একফালি আলোর দেখা মিললো পিটারের।

#চলবে?

(ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here