আমার সংসার পর্ব ১১

#আমার_সংসার
পর্ব-১১
Sara Mehjabin

স্তব্ধভাবে ফারহানদের দরজায় দাঁড়িয়ে রইল আজমী। তার হাত-পা কাজ করছে না; কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। সামনে ঘটা ঘটনাটা সে কল্পনাও করতে পারছে না। কিভাবে হয় এটা? ফারহান আনিকাকে বিয়ে করবে কেন? ফারহান তাকে ভালবাসে। বিয়ে করলে তাকেই করবে।

আজমীকে দেখে ফারহান আর আনিকা ভয়ের মধ্যে পড়ে যায়। আনিকা ভয় পেয়ে ফারহানের দিকে তাকালো। এই বিয়েতে বাধা আসুক সে কোনভাবেই চায় না। এইখানে আনিকা ও ফারহানের দুইজনের পরিবার-ই উপস্থিত আছে। দুই পরিবার জানে ফারহান এতোদিন আনিকার সঙ্গে সম্পর্ক করেছে। ওরা দুইজনে দুইজনকে ভালবাসে। এখন যদি জানে যে ফারহান প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আনিকারই বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিল আর আনিকা তার বান্ধবীর এতদিনের প্রেমিককে বিয়ে করছে তাহলে দুই পরিবার কখনোই এই বিয়ে মেনে নেবে না। অন্তত আনিকার পরিবার আজমীকে খুব ভালবাসে। তারা এই বিয়ে কিছুতেই হতে দেবে না। কিন্তু বিয়ে তো হতেই হবে। ফারহান আনিকাকে সত‍্যিকার অর্থেই ভালবাসে। ওকে ছাড়া নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না।

“ফারহান কিছু একটা করো। ও চলে এসেছে। ও যদি সবাইকে সব কথা বলে দেয়। বিয়েটা যদি ভেঙে যায়। আমার কি হবে ফারহান!” ফারহানের হাত ধরে অসহায় কন্ঠে কথাগুলো বলল আনিকা।

ফারহান আনিকার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর মুখে কোন চিন্তার ছাপ না রেখে আনিকার চুল কানের পাশে গুজে দিয়ে বলল, আজকে তোমাকে অন‍্যরকম লাগছে। একদম বৌ বৌ। আচ্ছা তোমরা মেয়েরা বৌ সাজলে এতো মিষ্টি কেন হয়ে যাও বলোতো- তখন নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়ে যায়।”

ফারহানের হাসি হাসি চেহারা দেখে আনিকা আশ্চর্য হয়ে যায়। দুই চোখ গোল করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আনিকার অদ্ভুতভাবে তাকানো দেখে ফারহান হেসে ওর গাল ধরে জোরে টিপে দেয়, “আরে চিন্তা মাত মেরি বিবি। তোমার জামাইয়ের জন্য আজকের দিনটা খুব শুভ। আমি যা যা চেয়েছি তাই হচ্ছে। আজ আমি প্রতিশোধের খেলা এখানেই শেষ করব; এরপর তো শুধু ভালবাসার খেলা। রেডি ফর দ‍্যাট বেবি।” বলেই আনিকার গালজোড়া আরেকদফা টিপে সামনে এগিয়ে আসে।

ফারহানদের বাসার দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে আজমী। অনেকেই ওকে অনেক কথা প্রশ্ন করছে। কিন্তু আজমী একদম চুপ হয়ে আছে। শক্ত পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে।

ফারহান এসে বিরক্ত গলায় বলল, “কি সমস্যা তোমার? এখানে এসেছ কেন?”

ফারহানের কথায় আজমী মুখ তুলে তাকায়। কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আচমকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

“কোথায় ছিলে এতদিন? কেন আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখো নি? তোমার ফোন বন্ধ, সিম অফ-ভাবতে পারছ আমার কি অবস্থা হয়েছিল! এতোই ব‍্যস্ত ছিলে তুমি একটাবার ফোন করতে পারো নি? তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়েছি।”

ফারহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

” বান্ধবীর হলুদের অনুষ্ঠানে এতো মানুষের সামনে নিজের বান্ধবীর হবু স্বামীকে জড়িয়ে ধরছ। তোমার লজ্জা করে না? ছাড়ো।”

আজমীকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দেয়।

“ফারহান এসব হতে পারে না। তুমি আনিকাকে কেন বিয়ে করবে? তুমি তো আমাকে ভালবাসো। বলো আমাকে ভালবাসো না তুমি? বলো না আমাকে ভালবাসো।”

ফারহানের দুই হাত ধরে অস্থিরভাবে ঝাকাতে থাকে। আজমী চোখভর্তি পানি নিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকাল। আজমীর চোখের পানি দেখে ফারহানেরো চোখে পানি আসে। তবে এই পানি কষ্টের নয়; আনন্দের। সিফাতের কষ্টের প্রতিশোধ নিতে পেরেছে সে। যে তার সিফাতকে কষ্ট দিয়েছিল তাকে কষ্ট দিতে পেরেছে। আজমীকে কাঁদতে দেখে মনে পড়ে একদিন আজমীর জন্য সিফাত তাকে জড়িয়ে ধরে এইভাবে কেঁদেছিল। আজ আজমী তার জন্য কাঁদছে।

“ভালবাসো,, না? আমাকে ভালবাসার কোন যোগ্যতা আছে তোমার? একটা গাইয়া মেয়ে,,,গ্রামে চাষবাস করে খাও। তোমার ফ‍্যামিলি আমার ফ‍্যামিলি স্ট‍্যাটাসের সাথে কোনদিন এ্যাডজাস্ট করতে পারবে? আমাকে পাওয়ার কি যোগ্যতা আছে তোমার?”

“আমি তোমাকে ভালবাসি ফারহান। ভালবাসায় কোন যোগ্যতা হয় না-তুমিই তো বলেছিলে। তোমার চোখে আমিই সেরা। আমি বাদে কারো কথা তুমি ভাবতেও পারো না। আমাকে নিয়ে যদি তোমার এতোই সমস‍্যা এতদিন সম্পর্ক কেন রাখলে?”

“ও আচ্ছা, ভালবাসায় কোন যোগ্যতা হয় না? লাইক সিরিয়াসলি? কথাটা আগে কখনো মনে হয় নি, না? যখন অন‍্য কাউকে বলেছ সে তোমার যোগ্য নয় তখন কথাটা শুনতে কেমন খারাপ লাগে মনে পড়ে নি?”

ফারহানের কথাগুলো শুনে আজমীর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এই সেই ফারহান যে তাকে সবসময় আগলে রাখত; তার সব চাওয়া না বলাতেই বুঝে যেত- সেই ফারহান তাকে আঘাত দিয়ে এইরকম কথাগুলো বলছে। ওর বলতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না? তবে ফারহানের শেষ কথা ও বুঝতে পারল না। “যোগ্য নয়” এমন কথা সে কাকে বলেছে? ফারহান কার কথা বলছে? এমন কিছু তো সে কাউকে কোনদিন বলে নি। আজমী স্বপ্নেও কোন মানুষকে এভাবে অপমান করার কথা ভাবে না।

“শোনো আজমী আমি তোমাকে কোনদিন ভালবাসি নি। কোনদিন দূরে থাক্ এক সেকেন্ডের জন‍্য-ও ভালবাসি নি। তোমাকে নিজের পাশের মানুষটার জায়গায় ভাবাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর এতদিন সম্পর্কের কথা বলছ সেটার কারন ছিল দুইটা। এক. তোমার অজুহাতে আনিকাকে কাছে পাওয়া দুই.প্রতিশোধ নেওয়া। ধরে নাও আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি এমন কাউকে তুমি খুব কষ্ট দিয়েছ যাকে আমি চিরকাল আগলে বড় করেছি নিজে আঘাত পেয়েও তাকে আঘাত থেকে বাঁচিয়েছি সবসময় তার সঙ্গে তুমি বেইমানি করেছ। তার ইমোশন নিয়ে খেলেছ। সো আমি প্রতিশোধ নিয়েছি। নাও দ‍্য গেম ইজ ওভার, তুমি যেতে পারো।”

উল্টোঘুরে হলুদের স্টেজের দিকে পা বাড়াতেই আজমী ফারহানকে পেছন থেকে ধরল

“প্লিজ ফারহান যা বলছ সব মিথ্যা বলে দাও। তুমি আমাকৈই ভালবাসো বলে দাও ফারহান প্লিজ। আমি পারব না তোমায় ছাড়া থাকতে।”

ফারহান পেছনে ফিরে আজমীর দিকে তাকায়। ঠিক এই মুহুর্তের অপেক্ষাই করছিল সে। আজমীর দিকে তাকাতেই “আমাকে পাবলিক প্লেসে সবার সামনে ও থাপ্পড় মেরেছিল ভাইয়া” সিফাতের কথাটা কানে যন্ত্রের মতো বাজতে থাকে। “ঠাস” শব্দে আজমীর গালে চড় মারল। তারপর উল্টোদিকে ঘুরে বলল, “মেয়েটাকে বের
করার ব‍্যবস্থা করো। এ একটা অসভ্য খারাপ মেয়ে। আমি আনিকাকে ভালবাসি জেনেও আমার পিছন পিছন ঘোরে। নিজের বান্ধবীর হবু স্বামীকে বান্ধবীর সামনে জড়িয়ে ধরছে। ওকে এক্ষুনি বের করে দাও। আমি চাই না একটা বাইরের মেয়ের জন্য আনিকা আমাকে ভুল বুঝুক। আমি শুধু আনিকাকে ভালবাসি। শুধুই আনিকাকে।”

“তারপর কি হয়েছিল?” আজমীর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চাইল রিফান। এতক্ষণ আজমী তাকে নিজের অতীত জীবনের ঘটনা বলছিল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here