আমার সংসার পর্ব ৯

#আমার _সংসার
পর্ব-০৯
Sara Mehjabin

অতীত অংশ

বয়স্ক মহিলার মতো মাথায় বড় ওড়না দিয়ে ঢাকা, ঢিলে সালোয়ার কামিজ স্পন্জের স‍্যান্ডেল পড়া, ছেঁড়া ব‍্যাগ কাঁধে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আজমী আর রাস্তার লোক ওর দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন ও মানুষ না; চিড়িয়াখানার জীব। সবাই বুঝতে পারছে আজমী শহরে একেবারে নতুন; শহরের কিছুই চেনে না বা কিভাবে শহরে চলাফেরা করতে হয় কিছুই জানে না। তাই ওকে দেখে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে সবাই মজা নিচ্ছে।

আজমী ভয়ে ভয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। শহরের রাস্তাঘাট ও এখনো ভালোমতো চেনে না। যেতে যেতে একটা গলি পড়ল। গলিটা বেশ নির্জন। কোনো মানুষ নেই। গলির ভিতর ঢুকতেই হঠাৎ একটা লোক আজমীর ব‍্যাগটা টান দিয়ে দৌড় শুরু করে। আজমী বোঝার সময়টাও পায় না। তাকিয়ে দেখে তার ব‍্যাগ হাতে নেই। লোকটা এর মধ্যেই ব‍্যাগ নিয়ে অনেকদূরে চলে গেছে। আজমীর পাগল হওয়ার অবস্থা। ব‍্যাগের মধ্যে দুই হাজার টাকা ছিল; বাবার কাছ থেকে এনেছিল বই কেনার জন্য। আজমীর বাবা টাকাটা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছিলেন। আজমী জানে তার বাবার পক্ষে দ্বিতীয়বার টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। আর এতগুলো টাকা হারিয়ে বাসায় কি জবাব দেবে সে? এই টাকা ছাড়া বাসায় ফিরলে আজমীর মা জ‍্যান্ত জবাই করবে। সবচেয়ে বড় কথা বইগুলো আজমীর খুব প্রয়োজন। টাকাটা হারিয়ে গেলে সে আর বই কিনতে পারবে না।

আজমী জানপ্রান নিয়ে লোকটার পিছনে দৌড়াতে শুরু করল। লোকটা খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছে। আজমী তার সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না। “দাঁড়ান,,,আমার ব‍্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? আমার ব‍্যাগে টাকা আছে। ব‍্যাগ ফেরত দিন।” আশেপাশে কোন মানুষ নেই। তাই আজমীর চিৎকার কেউ শুনছে না। লোকটা ঘুরিয়ে পেচিয়ে এক গলি থেকে আরেক গলিতে ঢুকে নিমেষে উধাও হয়ে গেল। আজমী লোকটাকে ধরতে পারা দূরে থাক্ অলিগলি ঘুরে নিজেই রাস্তা হারিয়ে ফেলল।

টিউশনি শেষে একটা সরু গলির পথ দিয়ে বাসায় যাচ্ছিল ফারহান। আচমকা মেয়েকন্ঠে
কান্নার শব্দ শুনে চমকে উঠল। ভাবল মেয়েটি।কোন বিপদে পড়েছে। আরেকটু সামনে এগোলেই আজমীকে চোখে পড়ে। একলা দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আজমীর মুখটা দেখামাত্র ভয়াবহ রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। এটাই তাহলে সেই মেয়েটা? সিফাতের বলা কথাগুলো মনে পড়তেই ইচ্ছা করে মেয়েটাকে এখনি মেরে ফেলতে। কিন্তু ফারহান নিজেকে শান্ত করে নেয়। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু একটা ভাবে। তারপর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওর।

আজমীর কাছে এসে বলে, আপু তুমি কাঁদছ কেন? কোনো সমস্যা কি? আমাকে বলতে পারো।”

“সমস্যা আমার-আমাকেই বুঝে নিতে দেন। আপনের ভাবতে হবে না। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। যান আপনি।” বলেই ফারহানের থেকে একশো হাত দূরে সরে দাঁড়াল। কালকের ঘটনার পরে ছেলেমানুষ দেখলেই ভয় লাগছে আজমীর। কাল ওর সঙ্গে যা ঘটেছে তা ও কোনদিন ভুলতে পারবে না। কালকে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড সিফাতকে বলেছিল একটা জিনিস বুঝতে পারছে না। সিফাত ওকে লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়েছিল। কোনার দিকে একটা টেবিলে পাশাপাশি চেয়ারে দুইজন বসেছে। আশেপাশে আর কেউ নেই। যারা আছে সবাই নিজেদের মধ‍্যে ব‍্যস্ত। তখনই সিফাত ওর কামিজের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেয়।
“এ্যাই সিফাত এগুলা কি করছিস? ছিঃ, ছাড়্,,,ছাড় আমাকে।”

ছাড়ার বদলে ওকে আরো জোরে চেপে ধযল,, ছাড়ার জন‍্য তো ধরি নি। বলেই কামিজের ভেতর দিয়ে হাত নিচের দিকে নামাতে শুরু করে।

“সিফাত থাম্। তুই না আমার বন্ধু? এমন কেন করছিস? প্লিজ ছাড়।”

“আরে বোকা আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না? ফ্রেন্ডরা এরকম একটু করেই। আমি তোর ফ্রেন্ড না? আমি তোকে টাচ করতেই পারি।”

এরপর আজমীর মুখের দিকে মুখ এগোতে থাকে। “বুঝিস না কেন আমি তোকে ভালবাসি আজমী। তোকে আমার চাই। বুঝেছিস?” বলেই আজমীর ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এগোতে থাকে। আজমী আর সহ‍্য ক‍রতে না পেরে সিফাতকে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় টা এতোই জোরে মেরেছিল লাইব্রেরি তে সবাই ওদের চারদিকে জড়ো হয়ে যায়। কিন্তু আজমীর মাথায় তখন আগুন। সিফাতকে অনেকগুলো কথা শুনিয়ে ওর সঙ্গে সব বন্ধুত্ব শেষ করে বেরিয়ে আসে। আজমী এখনো ভাবতেই পারছে না যে সিফাত এরকম করল। অথচ আজমী ওকে কত ভালো বন্ধু মনে করত। সিফাতের জন্য মনটা ঘৃনায় ভরে ওঠে।

“আরেহ্ কি হলো কি ভাবছ? কথাই যে বলছ না।”

ফারহানের কথায় আজমীর ধ‍্যান ভাঙে।

“আমি যাই ভাবি আপনাকে বলতে হবে?”

“হা হা। তুমি আমার ওপর এতো রেগে আছ কেন? যাই জিগ্যেস করছি তাতেই রেগে যাচ্ছ। বিষয়টা কি? আমার দোষটা কি জানতে পারি?”

“আপনার কোন দোষ নাই। আপনি এখান থেকে যান। আমার ভাল্লাগছে না।”

“হ‍্যা আমি তো যাব। বাট তুমি কাঁদছিলে কেন সেটা তো বলো। এত মিষ্টি মেয়ে রাস্তার মধ্যে একা কাঁদছ আমার তো মনটাই খারাপ হয়ে গেছে।”

“ভাইয়া আমি হারিয়ে গেছি। বাসায় যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। বুঝতে পারছি না কিভাবে বাসায় যাবো।”

বলতে বলতেই আজমী হাউমাউ কান্না শুরু করল। এবার ওর সত্যিই খুব ভয় লাগছে।

“আচ্ছা ঠিক আছে। কাঁদতে হবে না। শান্ত হোও। নাও পানি খাও। তারপর সব বলো।”

আজমীর দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে ফারহানের হাত থেকে পানি খেয়ে নিল। অনেকক্ষণ ধরে এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। পিপাসায় গলাটা ফেটে যাচ্ছিল। পানি খেয়ে যেন জীবন ফিরে পেল।

“এইবার আস্তে ধীরে বলো কি হয়েছে। পথ হারালে কিভাবে?”

কোনমতে কান্না আটকিয়ে সম্পুর্ন ঘটনা ফারহানকে জানাল। সব শুনার পর ফারহান বলল, আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি। চিন্তা করো না তুমি। আসো আমার সাথে।

বলেই আজমীর হাতটা ধরল এবং ওর ঠোঁটের কোনে একটি রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here