আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব ১

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
সিজন-২

০১
কিছুক্ষণ আগেই ইউসুফ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছে। অনেকটা সিনেমেটিক টাইপ বলতে পারেন। বউ সাজে আমাকে সং সাজিয়ে বসিয়ে রেখে গেছে আমার ভাই-বোনরা । এখন আমি বসে আছি তার রুমটিতে।বিশাল ব্যয়বহুল এই রুমটিতে কখনো আসতে দেননি উনি আমাকে। আজ এলাম তাও তার বউ হয়ে। চারিদিকে নিভু টিমটিম আলো। কাঁচা ফুল গুলোর সুভাসে মৌ মৌ করছে পুরো ঘর জুড়ে।ঘরটি কতই না রোমান্টিক করে তুলেছে। অথচ আমার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নেই এসবে কোনো হেলদুল। আমি খাটের এক কোনে “দ” ভঙ্গিমায় বসে ফুপাচ্ছি। আজ দিনটি অন্য রকম হতো! হতে পাড়তো সুন্দর সুশ্রী দিন। আমি আজ থাকতাম আশিকের বাহু ডোরে। হাতে হাত রেখে পালিয়ে যেতাম দূর বহু দূর।কিন্তু সব পাল্টে গেলো। ঠোঁটের হাসি কেঁড়ে নিয়ে বিষাদের ঘুর্ণিপাকে ফেলে দিলো ইউসুফ ভাই। কেন করলেন উনি? উনি কি জানেন না? নাকি বুঝতে চান না? আমি তাকে ভালবাসি না।উহু হুম একদম-ই না। আমার সবটা জুড়ে যে আশিকের বসবাস।ভেবেই বুক ফেঁটে কান্না আসতে লাগলো। ভেসে উঠলো কিছু ঘন্টা আগের ঘটনা গুলো চোখের পাতায়….!

আজ সকালেই জানতে পারি ইউসুফ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পা থেকে মাটি সরে গেছে যেন। আমি দৌড়ে উপরে এলাম। আশিককে কল করে বললাম,,,

—” আশিক আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও! আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

আমার কন্ঠ কাঁপচ্ছে। চোখের জল টপ টপ করে বলি হচ্ছে। কঠিন শীতের মাঝেও ভ্যাপসা গরম লাগচ্ছে। ওপাশের মানুষটির উত্তরের কি হবে জানার জন্য চাতক পাখির মতো অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। আজ ছয় মাস চলছে আমাদের সম্পর্কের। দেখা হয়েছিলো ফাগুনের সেই দিনটিতে। ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান চলছিলো তখন। চারিপাশে মানুষে গিজ গিজ করছিলো।দূর থেকে মাইকের আওয়াজ আসচ্ছিলো। হুট করে আশিক সেদিন সকলের সামনে প্রাপোজ করে বসে। মনে মনে তখন আমিও চাইতে লাগি। সেদিন ফিরিয়ে দি নাই তাকে। হাত হাত রেখে পথ চলার স্বপ্ন আঁকি বুকে। ওপাশ থেকে আশিক উতলা কন্ঠে বলে উঠলো,,

—” কি বলছো এসব? হুট করে কিভাবে কি হলো? তুমি তোমার পছন্দের কথা জানাও নি!”

আমি চোখের জল টুকু মুছে নিলাম। ঠোঁট ভিজিয়ে কন্ঠ স্বাভাবিক রাখতে চাইলাম। বললাম,,

—” মা সব জানে! বলেছিলো বাবাকে বলবে। কাল-ই কথা হলো মার সাথে। আর আজকেই..!”

আর স্বাভাবিক রাখতে পারলাম না নিজেকে। হাউ-মাউ করে কেঁদে দিলাম। আশিক আমাকে থামাতে চাইলো,,

—” কান্না করো না। আমি কিছু প্লেন করে তোমাকে টেক্সট করছি। চিন্তা করো না আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।”

আশিকের কথায় কিছুটা শান্ত হলাম। ধাতস্থ করে নিলাম আর যাই হোক এ বিয়ে কখনো করবো না আমি। মরে গেলেও না।

মিনিট দশেক পর আশিকের টেক্সট আসে। আশিক নামটি দেখেই মুখে হাসি ফুঁটে উঠে আমার। সময় নষ্ট না করে মেসেজ ওপশেন ওন করতেই খুশিতে চক চক করে উঠলো আমার চোখ জোড়া। ১০ মিনিটের মাথা সব গুছিয়ে বের হয়ে যাই লুকিয়ে বাসা থেকে।বাস স্টেশনে যথা সময় অপেক্ষা করতে থাকি আশিকের। নিজেকে এক মুক্ত পাখি মনে হচ্ছিল আমার। মনে হচ্ছিল আর কিছুটা সময় তারপর আমি স্বাধীন। ঘন্টা খানেক পার হতেও যখন আশিক এলো না, মাথায় দুটি ভাজ পড়লো চিন্তার। কেন আসচ্ছে না সে…! বিপদ হলো না তো তার? ফোন বের করে লাগাতার কল করতে থাকি আমি, কিন্তু ওপাশ থেকে বলে যাচ্ছে ” নাম্বারটি বন্ধ আছে”। হু হু করে উঠলো বুক। সূর্য তার সময় মত লুকিয়ে গেছে। রেখে গেছে অন্ধকারময় এক রাতের সুচনা। কি করবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না। বাসায় ফিরবো? নাকি চলে যাবো অন্য কোথাও? মাথায় আসচ্ছিলো না। শুধু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,,

—” কেন আসচ্ছো না তুমি আশিক? ধোকা দিলে আমায়? মিথ্যে হয়ে গেলো আমাদের ভালবাসা? ”

কিন্তু কোনো প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারলাম না আমি। কি করবো কোথায় যাবো? দিশেহারা হয়ে গেলাম। পর পর চারটি বাস চলে গেছে। আশেপাশের উৎসুক জনতা দেখে নিজেদের মাঝে কথা বলে যাচ্ছে। কেউ কেউ এগিয়ে এসে জানতে চাইছে,,” কি হয়েছে! কান্না করছো কেন? তোমার সাথে কেউ নেই? ”

মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারছি না আমি। মাটিতে বসে সকলের দিক তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে চলছি। ধীরে ধীরে সবাই চলে গেলো। খালি বাস স্টেশনে বসে রইলাম। চোখ দুটি শূন্য আমার। নিষ্প্রাণ – নিশ্চল দেহ খানা টেনে উঠাতে পড়লাম না। মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছে এ মুহূর্তে।
তখনি কোথা থেকে ইউসুফ ভাই এসে হাজির হয়।
ইউসুফ ভাই আমার মাথায় বন্দুক তাক করলেন। চোখ-মুখে তার উত্তপ্ত আগুনের ফুলকি ভেসে উঠেছে। হিংস্রের মতো তিনি টেনে হিচরে নিয়ে এলেন বাসায়। সকলের সামনে বললেন,,

—” এই মুহূর্তে কবুল বলবি। এক মিনিট সময় তোর হাতে। নয়তো এ বন্দুকের গুলিতে তুই আগে মরবি তার পর মরবে তোর সেই নাগর!”

আমি কাঁদতে লাগলাম। আকুতি-মিনতি করে বললাম,,

—” এমন কেন করছেন ভাইয়া? কি ক্ষতি করেছি আমি? কেন এত বড় শাস্তি দিচ্ছেন?”

উনি আমার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন। সে হাসিতেও হিংস্রতা পুটে উঠেছে। ভয় কাঁপছি আমি থর থর করে। উনি বললেন,,

—” সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা তুই করেছিস আমার! সারা জীবন গোলাপ গাছ চাষ করলাম। গোলাপ ফোটার অপেক্ষা বছরের পর বছর করলাম। সেই ফুল ফুটতেই অন্য কেউ নিয়ে বলবে ফুল তার? তা তো হচ্ছে না? কখনো না? আমি তা হতেও দেব না।”

আমি কাঁদতেই লাগলাম। তার কথা বোধগম্য হলো না এ মুহূর্তে। আর বুঝতে চাইছি আমি শুধু পালাতে চাই।পালাত চাই বহু দূর। ইউসুফ ভাইয়ের নাগালের বাহিরে…!

খট খট শব্দ করে দরজা খুলে গেলো। ভাবনার জগত সেখানেই কেঁটে গেলো। সামনে এসে দাঁড়ালেন ইউসুফ ভাই। তার ঠোঁটে বিজয়ের বাঁকা হাসি। গা জ্বলে যাচ্ছিলো আমার। আমি ঠাই বসে রইলাম। উনি ভ্রু কুঁচকালেন। ঠোঁটের হাসি আরেকটু টেনে বললেন,,

—” বাসর রাতে স্বামীকে সালাম করতে হয় জানিস না? উঠে আয়! ”

আমি তার কথায় আরো রাগতে লাগলাম। এমানুষটিকে আমি যেখানে ভালবাসি না! যার জন্য আমার মনের কোণে সম্মানের ছিঠা ফোঁটাও নেই। তাকে করবো সালাম? নো নেভার!

ইউসুফ ভাই এবার রাগী কন্ঠে বললেন,,

—” কি বলছি? কথা কানে যাচ্ছে না?”

আমি তাকাল তার দিক। উনার মুখ খানা গম্ভীর।কিছু মুহূর্ত আগের হাসি মিলিয়ে গেছে। আমি উঠে এসে দাঁড়ালাম তার দিক। চোখে চোখ রেখে আমার ভেজা কন্ঠে বললাম,,

—” এমনটি না করলে হতো না ইউসুফ ভাই? কেন করলেন? বলুন না..! আপনি জানতে না? আমি আশিকে ভালবাসি! তাহলে? এত বড় শাস্তি কেন দিলেন আমাকে?”

আমার কথায় ইউসুফ ভাইয়ার কোন পরিবর্তন দেখতে পেলাম না। উনি গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছেন আমার দিক। আমি কিছুটা দূরে পিছিয়ে এলাম। আবার বলা শুরু করলাম,,

—” জানি কোনো উত্তর দিবেন না আপনি। আমার চাইও না আপনার উত্তর। আমি শুধু আশিকে ভালবাসি, তাকেই ভাসবো। আপনি চাইলেও তার নাম মুছতে পারবেন না কখনো না বুঝলেন??”

ইউসুফ ভাইয়ার চেহারা এবার পরিবর্তন হতে লাগলো। শুভ্র মুখ খানা মুহূর্তে লাল হয়ে গেলো। চিকন লাল পাতলা ঠোঁট জোড়া কাঁপতে লাগলো। তার বিলাই চোখ জোড়া রক্তিম ধারণ করলো। তার সেই তিরিক্ষি নজরে ভস্ম করে দিতে চাইলো যেন এই মুহূর্তে। আমি ভয়ে পিছিয়ে যেতে নিও গেলাম না। উল্টো তার কাছে এসে। তার প্যকেট থেকে বন্দুকটি হাত নিয়ে বললাম,,

—” এটি দেখিয়ে সবাইকে দমাতে পাড়লেও আমাকে পারবেন না। আমি আজ হোক কাল হোক পালিয়ে যাবে এখান থেকে। আমার আশিকের কাছে। সুখের সংসার করবো আমরা। আর আমাদের ফুটফুটে বাচ্চা..”

বলতে পাড়লাম না আর। ইউসুফ ভাই এবার আমার গায়ে হাত তুলেই ফেললেন। তার পুরুষালী শক্তপোক্ত হাতে থাপড় খেয়ে মাথা ভো ভো করতে লাগলো যেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমার চুলের মুঠি ধরে কাছে টেনে নিলেন। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি। তার থেকে ছুটার আসায় কাতরাতে লাগলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ। উনি আমার দিকে এবার ঝুকলেন।রাগে ক্ষোভে তার ঠোঁট জোড়া কাপচ্ছে। উনি হিসহিস করে বললেন,,

—” তুই মানিস আর নাই মানিস তুই আমার বউ। আমার বাবুইপাখি। যতদিন এ দেহে প্রান আছে। ততদিন তোর আমার হাত থেকে মুক্তি নেই। সো দোয়া কর মরে যাই তাড়াতাড়ি। নয়তো তোর ইচ্ছে এ জীবনে ইচ্ছেই থাকবে। দুনিয়ার যে প্রান্তেই চলে যাস না কেন। ঘুরে ফিরে এ ইউসুফকেই পাবি কথা দিলাম!”

আমি ইউসুফ ভাইয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। এই কি ছিল আমার ভাগ্য? যার থেকে দূরে বহু দূর থেকেছি সেই হয়ে উঠলো আমার অর্ধাঙ্গ? আগে কি হবে আমার…….!

চলবে,

#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

(খুশনূর গল্পটা আমি সাজাতে পারছিলাম না। তাই শেষ করে দিয়েছি। আপনাদের অনেক ভাল লাগেনি তাতে আমি জানি। তার জন্য দুঃখিত। এমন যেন আর না হয় চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here