আমার_একটাই_যে_তুই❤️ পর্ব ১৫+১৬

#আমার_একাটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১৫
কাল রাতের ঝড়ের তান্ডব সকাল হতে হতে হারিয়ে গেছে। সকালের মিষ্টি এক মুঠো রোদ হেসে খেলে যাচ্ছে চারিদিকে। দূর থেকে ভেসে আসা পাখিদের গানটুকু জানান দিচ্ছে নতুন সকালের সূচনা হয়ে গেছে। চারিদিক ফকফকা। নীল আকাশে থেকে থেকে সাদা তুলোর মেঘ ভেসে ভেসে যাচ্ছে। বিছানায় বসেই আড়মোড়া ভেঙ্গে চারপাশ দেখছে কুহু। ঘুম কিছুক্ষণ আগেই ছুটেছে তার। কিন্তু বিছানা এখনো ছাড়েনি।

চা নিয়ে রুমে ঢুকে টুনি। কুহু সেদিকে খেয়াল নেই। সে বারান্দায় জমে থাকা পানির দিক তাকিয়ে আছে। টুনি কুহুকে ডাকলো,,

—” আফা আপনার চা!”

কুহু চমকে তাকালো। রাতের করা কুহু সেই ভয়ানক ধরনের কাজে লজ্জা লাগচ্ছে। কি হয়ে গেছিলো তার রাতে? এখন ইউসুফের সামনে কিভাবে যাবে? কুহুর ভাবার মাঝে টুনি আবার ডাকলো,,

—” আফা আপনি ঠিক আছেন?চা নেন ঠান্ডা হইয়া যাইতেছে!”

কুহু চা হাতে নিলো। ঘুম থেকে উঠার পর ইউসুফকে আর দেখেনি। গেলো কই মানুষটা? আজ কি তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেছে? তাহলে ডাকেনি কেন কুহুকে? নাকি রাতে কাজে ইউসুফ কষ্ট পেয়েছে?

—” তোর ছোট সাহেব কই? ”

—” ভাই সেই সক্কাল বেলা তাড়াহুড়া কইরা কই জানি গেলো।”

কুহু ভ্রু কুচকে এলো। কি এমন কাজ পরলো আবার। তাও এই শুক্রবারে?” পরক্ষণেই নিজের মনকে ঠান্ডা করে। ভাবে নেতা মানুষ কাজ থাকতেই পারে। সেই মুহূর্তে চট করে মাথায় আসে কুহুর, ইউসুফের জন্য কিছু করলে কি হয়? নামাজ পরে সে তো দুপুরেই খাবে বাসায়। তাহলে ইউসুফের জন্য কিছু রান্না করলে কেমন হয়? যা ভাবা তাই করা। নগ্ন পা জোরা নিয়ে দৌঁড়ে রান্না ঘরে ছুটলো কুহু।

———–
দুপুরের দিক ইউসুফ বাসায় আসে। কুহু ইউসুফের গাড়ির হর্ন শুনেই দৌড়ে সদর দরজায় আসে। আজ ইউসুফের পছন্দ মতো সেজেছে সে। কলা পাতা রঙ্গের শাড়ি পড়েছে। মাথায় খোপা করে গাজরা পড়েছে। ঠোটে হালকা লাল লিপস্টিক। ইউসুফকে আসতে দেখে লজ্জায় কাচুমাচু করছে। কাঙ্ক্ষিত মানুষটির অপেক্ষায় আজ সে কাতর। কিন্তু ইউসুফকে দেখে কুহু চুপসে গেলো। কেমন ক্লান্ত, উস্ক খুস্ক হয়ে আছে সে।চোখে গুলো এক রাতে যেন গর্তে চলে গেছে। কুহু বুক ধক করে উঠলো। ইউসুফ কাছে আসতেই কুহু কৌতূহল নিয়ে বলল,,

—” আপনার কিছু হয়েছে নেতা সাহেব?এমন দেখাচ্ছে কেনো?”

ইউসুফ কুহুর দিক তাকলো। ইউসুফের বিলাই চোখ জোড়া প্রানহীন মনে হলো কুহুর। ইউসুফ ম্লান হেসে শুধু বলল,,

—” আই নিড এ স্লিপ! ”

ইউসুফ আর দাঁড়ালো না চলে গেলো উপরের। কুহু ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ জোড়া দিয়ে উপচে পানি পড়তে শুরু করলো। কুহুর এতো আয়োজন সব বৃধা গেলো। মানুষটি কুহুকে একবার দেখলোও না! তার রঙ্গেই তা রাঙ্গাতে চাইছিলো কুহু। কুহুর কেন কষ্ট হচ্ছে এতো?

———–

ইউসুফে ঘুম ভাঙ্গে সন্ধ্যা৷ চারিদিকে তখন আজানের মিষ্টি ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। খাটে উপর হয়ে শুয়ে থেকে কর্ণপাত করছে আল্লাহর ডাক। আজ সারাদিনের নামাজ কাজা হয়েছে তার। নামাজ পড়া আবশ্যক।ভেবেই উঠে বসে। উল্টো দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে ডিভানে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা কুহুর দিক। কুহুর চোখের কোনা চিকচিক করছে। ইউসুফে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ জানান দিচ্ছে তার বাবুইপাখি কান্না করেছে, কিন্তু কেন?

ইউসুফ কুহুকে বিছানায় শুয়ে দেয়। সকাল থেকে এখনো কিছুই খায়নি ইউসুফ। পেটের ভিতরে ইদুর এদিক ওদিক ছুটছে। দ্রুত পায় ওয়াশরুমের দিক। ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে খাবার টেবিলে এসে চেঁচিয়ে ডাকে,,

—” মা! কই তুমি ভাত দাও খুব খুদা লাগচ্ছে!”

ইউসুফ চেয়ার টেনে বসলো। টুনি এসে দাঁড়ালো ইউসুফের বাম পাশে। হাত দুটো কচলাতে কচলাতে ভয়ে ভয়ে বলল,,

—” আম্মা বাসায় নাই ছোট সাহেব গ্রামে বাড়ি গেছেন আপনাদের!”

ইউসুফ ভ্রু কুচকে ফেলে ফোন চাপতে থাকে ইউসুফ। গম্ভীর কন্ঠে বলে,,

—” আচ্ছা আমার খাবার বেড়ে দে! তোর আপা কিছু খেয়েছে?”

টুনি আগের মতোই বলল,,

—” না আপা কিছু খায় নাই সক্কাল থেইক্কাই।”

ইউসুফের রাগ উঠলো। বলল,,

—” খায়নি কেন ও?কতদিন বলছি তোদের? না খাইতে চাইলেও জোর করে খাওয়াবি? ”

টুনির এবার কাঁদার অবস্থা। ইউসুফকে সে অজানা কারনেই ভয় করে খুব। ইউসুফ নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইলো। টুনিকে শান্ত স্বরে আদেশ করলো,,

—” আমার আর তোর আপার খাবার গুলো ঘরে দিয়ে যা!”

কুহু বাহিরের দিক তাকিয়ে আছে। ইউসুফের ছোঁয়া পেতেই তার ঘুম ভেঙে গেছিলো। কিন্তু অভিমানে সে ঘুমের ভান করেছে। ইউসুফের সাথে কোনো কথাই তার বলতে ইচ্ছে করছে না তখন। কেন বলবে? তার একটি খবর-ও নিলো না সে।

ইউসুফ রুমে ঢুকলো। কুহুকে দেখে রাগ ধেই ধেই করে বাড়লো। কুহুর দিক এসে ধমকে উঠে বলল,,

—” খাস নি কেন? দু দিন পর অসুস্থ হলে তোর বাপ আমায় দোষ দিবে। মেয়েকে না খাইয়ে কাঠি বানিয়ে দিচ্ছি আমরা!”

ইউসুফের কথা কুহু অাহত হলো। কিছুক্ষণ ইউসুফের রাগী চোখ জোড়ায় তাকিয়ে বলল,,

—” খাবো না!”

ইউসুফ তেতে উঠলো। তার মুখে উপর কথা? কত বড় সাহস?

—” খাবি না মানে? এসব নতুন কি শুরু করেছিস? আমার এসব একদম পছন্দ না। খাবার দাবারের সাথে রাগ কিসের? তোর? জানিস এসব খাবারের জন্য কত মানুষ আক্ষেপ করে? আর তুই পাচ্ছিস এতো সহজে তাই দাম নেই?”

কুহু চুপটি করে রইলো। এ লোক শুধু তাকে কেন কথা শুনাচ্ছে? সে কি বুঝতে চাইছে না? কুহু তার জন্যই বসে ছিলো না খেয়ে? খাবে না কিছুতেই না। যা পারে করুক ইউসুফ।

ইউসুফ খাবার নিয়ে বসলো কুহু সামনে। ভাত মাখিয়ে কুহুর মুখের সামনে ধরলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল,,

—” এখন আর ন্যাকামো করবি না চুপচাপ খা!”

কুহুর এবার হাত পা ছুড়ে কাঁদতে মন চাইলো। সে ন্যাকামো করছে? সত্যি? ঠিক আছে ন্যাকামোই করবে হু! কুহু মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। ইউসুফের রাগ দিগুণ বাড়লো। এক হাতে কুহু মুখ চেপে ধরে খাবার ঢুকিয়ে দিলো মুখে। কুহু ইউসুফের কাজে হতবিহ্বল। ইউসুফ দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,

—” দেখ মাথা এমনিতেই ঠিক নেই! আমাকে রাগাস না বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নে। ”

কুহু খাবার মুখে পুড়েই ফোপাঁতে লাগলো। কুহুর কান্না দেখে ইউসুফের রাগ উধাও। সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,,

—” বাবুইপাখি আম সরি! আমার আজ কি হয়ে বুঝতে পাড়ছি না। প্লীজ কাঁদিস না। খেয়ে নে না। তুই না খেলে আমিও খেতে পারবো না যে। তোকে খাইয়ে তারপর আমি খাবো!”

কুহু এবার হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো। বলল,,

—” আপনি খুব খারাপ নেতা সাহেব। ”

কুহুর কথাটা ইউসুফের লাগলো খুব। বাম হাত কুহু মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,,

—” হে রে বাবুইপাখি! আমি খুব খারাপ। ”

ইউসুফের বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। নিজের করা পাপে সে ধংস হচ্ছে। কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আচ্ছা বাচ্চা মেয়েটি যখন সব জানবে তখন কি হবে? থাকবে তো তার পাশে?

——

কুহু আবার ভার্সিটি যেতে শুরু করেছে। ইউসুফ অনুমতি দিয়েছে। নিয়ম করে দু বেলা ইউসুফ কুহুকে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। কুহু এখন তার বান্ধবী রূপার সাথে বসে আছে মাঠের শেষ দিকে। রূপার মন প্রচুর খারাপ। সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,,

—” আমি তোর দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র দোস্ত। আর তুই তোর বিয়েতে আমারে কইলি না। নিষ্টুর মাইয়া!”

কুহু চোখে মুখে বিরক্তি এ নিয়ে রূপা এ কথা হাজার বার বলে ফেলেছে!কুহু বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে বললো,,

—” আল্লাহর ওয়াস্তে মুখ বন্ধ কর এবার। সেই কখন থেকে এক ঘ্যান ঘ্যান ভালো লাগচ্ছে না দোস্ত। ”

—” তা লাগবে কেন? নেতা সাহেবকে সব ভুলে বসেছিস যে!”

কুহু হাসলো। রূপা আবার জিগ্যেস করলো,,

—” হে রে আশিকের পরে কোনো খবর পেয়েছিলি!”

আশিকের নাম শুনে চোখ-মুখ শক্ত হয়ে এলো কুহুর। বলে,,

—” ওই ফালতু মানুষটার কথা আমায় বলবি না। ”

রূপা এবার নড়েচড়ে বসে কিছু বলবে ঠিক সেই মুহূর্তে একটি কন্ঠ ভেসে উঠলো। সেই চিরো চেনা কন্ঠ,,

—” কায়নাত?
#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১৬
ভার্সিটির কেন্টিনের এক কোনায় জালানার ধারে বসে আছে কুহু। সূর্য তখন মাথা বরাবর। জানালা দিয়ে তপ্ত রোদ প্রবেশ করে ঝিলমিল দিচ্ছে। মাথার উপর ফ্যানটি প্যাচ প্যাচ করে চলছে। সূর্যের তাপে ঘাম পড়চ্ছে কুহুর ঘাড় গলা বেয়ে। ওড়নার আঁচল টেনে মুছে নিলো কুহু। সামনের ব্যক্তিটির দিক কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। সামনের ব্যক্তটিও দু হাত বুকের মাঝে ভাজ করে সুক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে কুহুকে।

বেশ কিছু সময় যাবার পর প্রথম কথা বললো ব্যক্তিটি।

—” কেমন আছো? কায়নাত?”

কুহুর চোখে মুখে বিরক্তি ফুটলো। কাট কাট গলায় বলল,,

—” কেন এসেছ আবার ফিরে? দেখতে? আমি তোমার শোকে মারা যাচ্ছি কিনা! তো বলে দিচ্ছি আমি পুরোটাই ভালো আছি। ফিট এন্ড ফাইন!”

আশিক হেসে ফেললো। আশিকের হাসি শব্দে কুহুর মনে পড়লো ইউসুফের কথা। ইশ! লোকটা কি নয়নাভিরাম হাসি।কুহু তো তাকিয়েই থাকে শুধু বেহায়ার মতো। আহারে ইউসুফের হাসিটা যদি মাখনের মতো হতো না জানি কবেই খেয়ে ফেলতো।
কুহু হাসলো। আশিক ভ্রু কুচকে বললো,,

—” আর ইউ ওকে?”

কুহু গম্ভীর রূপ নিলো সাথে সাথেই। এ ব্যক্তটির সাথে কোনো রকম কথা বলার ইচ্ছে নেই তার। অনেক জোড়াজুড়ির পর সে এখানে এসেছে। পাঁচ মিনিট কি কথা যেন বলবে। কুহু হালকা কেশে গলা পরিস্কার করে বলল,,

—” পাঁচ মিনিট শেষ হতে আর কিছু সেকেন্ড বাকি।”

আশিক এবার অনুনয় করে বলল,,

—” আমি তোমার বেশি সময় নিবো না কুহু। আমি শুধু আমার দিকটা তোমার কাছে তুলে ধরতে চাইছি।”

—” আমি জাজ নই! যে আমাকে সাফাই দিতে হবে।”

চকিতে বলল কুহু।আশিক আহত স্বরে বলল,,

—” একটি বার আমার কথা শোনো!”

কুহু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। আশিকও দাঁড়ালো। কুহু দুকম এগিয়ে গিয়েও কাঁধ কাত করে মিষ্টি করে হাসলো।বলল,,

—” যা করেছো ভালো করেছো। তোমার জন্য আজ আমি আমার কাঙ্খিত মানুষটিকে পেয়ে গেছি। তোমার প্রতি থাকা রাগ, অভিমান, অভিযোগ আমি কবেই ভুলে গেছি। তুমি সেদিন না এসে আমার অনেক বড় উপকার করেছে। এর বদলে তোমার সাত খুন মাফ!”

কুহু কেন্টিনের দরজা অতিক্রম করে হারিয়ে গেলো। আশিক হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুতেই বুঝতে পাচ্ছে না। যে মেয়েটি তার একটি ফোন কলের জন্য কেঁদে কুটে এক করতো। অথচ আজ দেখে মেয়ে কি সাবলীল ভাবে কথা বলে চলে গেলো। আশিক মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখের কোনের জল চিকচিক করছে। কুহুকে না চাইতেও সে ভালবেসে ফেলেছে।এই মেয়েটি ধীরে ধীরে তার নেশায় পরিনত হচ্ছে। কি করবে আশিক? এভাবেই যেতে দিবে কুহুকে? ইউসুফের কাছে কি তাহলে সে হেরে গেলো?

—————–

কঁপালের রগ দুটি ফুলে উঠেছে ইউসুফে। ডান হাতে দু আঙ্গুল দিয়ে কঁপাল ঘসে যাচ্ছে সে। চারিদিক তখন গিজ গিজ করছে মানুষ। একটি স্কুলের প্রধান অতিথি হিসেবে ডাকা হয়েছে তাকে। স্কুলে ছেলেপুলে সহ এলাক না-ও জোয়ানরাও ভির করেছে চারপাশে। সবাই ইউসুফকে আইডল ভাবে।ইউসুফ না চাইতেও এখানে উপস্থিত হয়েছে।

কবির দূর থেকে ইউসুফের অবস্থা দেখে এগিয়ে এলো। পানির বোতল ইউসুফের দিক এগিয়ে দিয়ে নতজানু হয়ে বলল,,

—” স্যার আপনার শরীর কি বেশি খারাপ লাগচ্ছে?”

ইউসুফ তার আসনে হেলে বসলো। ডান হাতে এক গাছি চুল মুঠ করে বলল,,

—” মাথাটা ধরেছে খুব।”

কবির কি করবে ভেবে পেলো না। এদিকে ইউসুফে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে খুব। ঘাবড়ে গিয়ে ইউসুফকে বলল,,

—“স্যার চলুন ফিরে যাই।”

ইউসুফ নড়লো না। উলটো ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,,

—“এত গুলো মানুষ আমায় ভালোবেসে এখানে এসেছে৷ এদের রেখে চলে যাওয়াটা ভাড়ি অন্যায় আমার কাছে।”

কবির মনে মনে গর্ব বোধ করলো। তার স্যার যেমনি হোক। জনগণের জন্য তার অসীম ভালোবাসা সে জানতো। এতোটা যে নিজের অসুস্থের কথা ভুলে যাবে তা তার অজানা ছিলো।

অনেকক্ষন অতিবাহিত হওয়ার ইউসুফকে কিছু মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করলো। ইউসুফ ঘেমে নেয়ে একাকার। শরীরের বল যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। পা দুটো কোনো রকম টেনে মাইকের সামনে এলো। শরীর তখন থর থর করে কাঁপছে। তার সামনে থাকা অসংখ্য মানুষের মিষ্টি করে হাসলো ইউসুফ। শরীর খারাপের কথা ভুলে দু তিন মিনিট এক নাগাড়ে স্পিচ দেয়ার পর চোখের সামনে সব ঘোলাটে হয়ে গেলো। পুরো পৃথিবী গোল গোল করে ঘুরছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে ইউসুফ সেখাই পড়ে গেলো। চারিদিকে তখন হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিছে। কবির তাত্ক্ষণিক ইউসুফকে নিয়ে হসপিটালে রওনা দেয়।

——-

কুহু আজ অনেক খুশি। আজ তার সব ভালো লাগচ্ছে। গুন গুন করে গান গাইছে। দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের ডাকের সাথে তাল মিলিয়ে কুহু কু কু ডাকচ্ছে। কুহু বাচ্চামো দেখে রূপা বিস্মিত। ভ্রু কুচকে বলল,,

—” দোস্ত তোর কি হয়েছে? গেলি তুই রণচণ্ডী হয়ে ফিরে এলি এত খুশি খুশি হয়ে? তোদের মাঝে সব ঠিকঠাক?”

কুহু হেসে ফেললো। বলল,,

—” আমি মরতে রাজি তবুও ওই বেটার কাছে ফিরতে রাজি নই!”

রূপা কুহুর সাথে আরো ঘেঁষে বসল। সন্ধিহান দৃষ্টিতে বলল,,

—” তাহলে এতো কেলাচ্ছিস কেন? ”

কুহুর মুখে এবার লজ্জার আভা ফুটলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।ওড়নার আঁচলের কোনা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,,

—” আমি নেতা সাহেবকে আমার মনের কথা জানাবো ভাবছি!”

রূপা খুশিতে লাফিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরলো কুহু। বলল,,

—” আমি খুব খুশি কুহু তোর জন্য। ও আশিক বেটাকে কোনো কালেই আমার পছন্দ ছিলো না। তুই মন খারাপ করবি বলেই কিছু বলি নাই। কিন্তু তুই এবার সঠিক পথেই এসে গেছিস ভেবেই বুকের মাঝে শান্তি শান্তি লাগচ্ছে!”

কুহু রূপার মাথায় চাটি মরে বলল,,

—” এত উতলা কেন তুই!”

রূপাও হাসলো। তাদের আরো কিছুক্ষণ কথা চললো। কথার মাঝে কুহুর ফোন বেঁজে উঠলো। আননোন নাম্বার দেখে দ্বিধায় পরে গেলো। এই ফোনটি ইউসুফ তাকে দিয়েছে। হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া এ নাম্বার কেউ জানে না। তাহলে?
কুহু ভাবতে ভাবতেই কল কেঁটে আবার বেজে উঠলো। রূপা বলল,,

—“তুলছিস না কেন?”

—“অপরিচিত নাম্বার যে?

রূপা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,,

—” দরকারি কলও আসতে পারে তুলে দেখ।”

কুহু ফোন তুললো। ওপাশ থেকে কারো কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। রূপার দিক তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

—-” নেতা সাহবে…!

চলবে,

বোরিং হচ্ছে খুব? আপনাদের রেসস্পন্সে দেখে কষ্ট লাগচ্ছে। এই পর্ব আরো আগে পেয়ে যেতেন। ফেবুতে ঢুকতেই পারছিলাম না। তাই দেড়ি হলো সরি!”
চলবে,,

রাতে আরেক পার্ট দেয়ার ট্রাই করবো ইন্ন শা আল্লাহ ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here