আমার_একটাই_যে_তুই❤️ পর্ব ১৭+১৮

#আমার_একটাই-যে-তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১৭
হসপিটালের সাদা চাদরে মুড়ানো বিছানায় নিস্তেজ ভাবে শুয়ে আছে। রাগ, তেজ নেই দাম্ভিক মুখখানা গাম্ভীর্য হারিয়ে গেছে। সুশ্রি মুখখানা ফ্যাকাশে লাগচ্ছে। চোখের নিচে পড়া কালো দাগ জানান দিচ্ছি ইউসুফে নির্ঘুম কটানো রাত গুলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কুহু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ইউসুফের ঘুমন্ত মুখখানা। ছোট বাচ্চাসুলভ মুখখানায় আজ কেমন প্রাণহীন। কি এমন ভাবে তার নেতা সাহেব? পর পর কবার মনের মাঝে প্রশ্নটি উঁকি দিচ্ছে কুহুর।

ইউসুফ হাত দুটি তার হাতের ভাঁজে ভরে নিলো কুহু। উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে ফিসফিস করে বলল,,

—” আপনার কি হয়েছে নেতা সাহেব? আপনার কিসের এতো টেনশন?? ”

ইউসুফ নড়ে,চড়ে উঠলো। পিটপিট করে চোখ জোরা মেললো। ডান হাতে তীব্র ব্যাথায় কুকিয়ে উঠতেই কুহু বলল,,

—” আস্তে ব্যথা পাবেন। আপনার হাতে ক্যানুলা লাগানো স্যালাইন চলছে। এতটা দূর্বল হলেন কিভাবে বলুন তো?”

ইউসুফ প্রতিউত্তর হাসলো। কুহুর লাল মুখখানি দেখে বুঝতে বাকি নেই মেয়েটি কেঁদে কুটে এ হাল করছে। ইউসুফের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। ম্লান হেসে বলল,,

—” খুব কাঁদাই তোরে তাই না বাবুইপাখি? ”

কুহু চেয়ে রইলো ইউসুফ দিক। ইউসুফ আবার বলল,,

—” তোকে কষ্ট দিলে আমার বুকটাও না বন্দুকের গুলির মতো ঝাঝড়া হয়ে যায়! ”

কুহুর কান্না পেলো লোকটি তাকে কত ভালোবাসে। আর কুহু কত অভাগা লাথি মেরে ঠেলে দিচ্ছিলো ইউসুফের ভালোবাসাকে। লোকটি তার ভালবাসায় কতটাই না কাতর? এই যে নিজে শয্যাশায়ী অথচ কুহুর চিন্তায় মরে যাচ্ছে?

ডাক্তার আয়ান রুমে ঢুকলেন হালকা কেশে। লোকটি মুখে চকচক হাসি। বয়স ৪৫ এর কোঠায় হলেও বোঝার উপায় নেই। তিনি ইউসুফের চেক আপ করে বললেন,,

—” কি ইয়ং মেন? এখন কি হাল? খেলার মাঠে নামলেই মাত্র পরপর ছক্কা না মেরেই নিজেই ছিটকে গেলে হবে?? তোমার মতো নওজোয়ানের খুব প্রয়োজন আমাদের দেশে।”

ইউসুফ হাসলো। বলল,,

—” আমি সব টাইমটেবল মেনেই করি! তারপরেও যে কেন এমন হলে বুঝতে পারছি না। ”

ডাক্তার ইউসুফের রিপোর্ট চেক করতে করতে বলল,,

—” আপনি ঘুম কম ঘুমাচ্ছেন! আর টেনশন করছেন প্রচুর। বিপি একদম লো!প্রপার বেড রেস্ট দরকার একটা আপনার।”

ইউসুফ মাথা নাড়ালো,,

—” হে চেষ্টা করবো!”

ডাক্তার আয়ান এবার উপদেশ দেয়ার মতো করে বলল,,

—” শুনো ছেলে! আগে শরীর পরে সব। শরীর, মনে বিস্বাদ থাকলে কোনো কাজেই ঠিক করতে পাড়বে না। তাই বলি কি কদিন রেষ্ট করে নাও বরং!”

ডাক্তার আয়ান আরো কিছু হেলথ বিষয় কথা বলে চলে গেলেন। এতক্ষণ নিরবতা পালন করা কুহু কথা বলল। মুখটি তার থমথমে বিরাশ কন্ঠে বললো,

—” আপনি কি নিয়ে এতো চিন্তিত ইউসুফ ভাই?”

ইউসুফ কুহুর দিক তাকিয়ে হেসে ফেললো। কৌতুক সুরে বলল,,

—” তুই দিন রাত আমায় ভাই ডেকে মাডার করার পাঁয়তারা করছিস। সেই টেনশনে আমি মারা যাচ্ছি। কবে প্রাণ বেরিয়ে যায়!”

ইউসুফ শব্দ করে হাসতে লাগলো। কিন্তু কুহুর মুখে রা নেই! ইউসুফ কুহুর বিমর্ষ মুখ দেখে চুপ হয়ে গেলো। কুহু তাকিয়ে রইলো ইউসুফের দিক। তার চোখ বাহিরে। ইউসুফ হা করে শ্বাস ছাড়লো। কুহু বলল,,

—” আপনি কি আমার থেকে কোনো কিছু লুকাচ্ছেন??”

ইউসুফ তার ভাবনার ভুবনে ডুবে ছিলো। কুহুর কথায় চকিতে তাকালো। ভাবলো কুহু কিছু আঁচ করতে পেরেছে নাকি??ইউসুফের চোখ মুখে অস্থিরতা। কুহুর হাতটি তার বুকের মাঝে রাখলো ইউসুপ। কুহুর মুখপানে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,

—“আমাকে বিশ্বাস করিস কুহু? ”

কুহু মাথা নাড়ালো “হে” বুঝালো। ইউসুফ এবার উঠে বসতে চাইলো। কুহু ধরে উঠলো। পিছনের সাইডে বালিশ চাপিয়ে আরম করে বসলো। ইউসুফ কুহুর চোখে দিক তাকিয়ে বলল,,

—” বাবুইপাখি একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, তোর ইউসুফ ভাই এক মাত্র তোকে, আর তোকেই ভালোবাসি। জম্ম যেমন সত্য, মৃত্যু যেমন সত্য আমি তোকে ভালবাসি একথাটি তেমন সত্য। আমাকে ভালো নাই বাসিস আমি সয়ে নিবো। কিন্তু আমার উপর অবিশ্বাস করিস না তাহলে আমি বাঁচবো নারে কুহু!”

কুহু আত্মাকে উঠলো। হঠাৎ এমন কথায় বুকের মাঝে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করলো কুহু। মনের মাঝে আগাম জানান দিচ্ছে কিছু হবে, হচ্ছে, হতে চলেছে..??

———————–

ইউসুফ আজ দুদিন যাবত বাসায় এসেছে। কুহু ইউসুফ যত্নের কোনো ত্রুটি রাখছে না। ইউসুফ তো পুরো দমে অবাক হচ্ছে। আজ থেকে দু মাস আগেও যে কুহু তার সাথে থাকবে না বলেছে? সে আজ ইউসুফের জন্য এতোটা পাগল??যে রাত, দিন এক করে তার সেবা করে যাচ্ছে। বাচ্চা মেয়েটি মাঝে বড় বড় একটা ভাব চলে এসেছে যেন।

ইউসুফ ঠিক করলো।এ বাচ্চা মেয়েটি সে প্রপোজ করবে। খুব ঘটা করে করবে। এবার আর বাচ্চা মেয়েটি তাকে ফিরে দিতে পারবেনা। ভালবাসা টা এমনি হয়তো? মাখো মাখো। ইউসুফ প্ল্যানিং শুরু করলো। কবিরকে ফোন দিয়ে সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে বললো।

এভাবেই আরো তিনটে দিন কেঁটে গেলো। ইউসুফ তার কাজেও যেতে শুরু করছে এখন। একদিন সন্ধ্যা কুহু পড়তে বসেছে। তখন কবির এসে হাজির। কুহু হাতে কত গুলো ব্যাগপত্র ধরিয়ে দিয়ে বলল,,

—” স্যার পাঠিয়েছে। ভিতরে একটি খাম ও আছে। আপনাকে পড়তে বলেছে!”

কুহু অবাক হয়ে গেছিলো। মাথাটা কাত করে বুঝালো আচ্ছা।

ইউসুফ দেয়া ব্যাগ গুলো দেখে কুহু এবার খুশিতে আত্মহারা হয়ে লাফিয়ে উঠলো। ইউসুফের দেয়া কালো শাড়িতে নিজেকে জড়িয়ে নিলো কুহু। ইউসুফ দেয়া খামটি খুলতেই গোটা গোটা অক্ষরে মেলা ভেসে উঠলো,,

বাবুইবউ,

জানি আমার চিঠি পেয়ে খানিকটা অবাক হচ্ছো। ভাবচ্ছো ফোন থাকতে চিঠি কেন? আসলো মনের কথা বুঝানোর মতো ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে কম দিয়েছেন। তাই লিখিত ভাষা মনে ভাব, আবেগ, অনুভূতি ঢেলে এই চিঠি লিখা। আজ আমার জন্য একটি বিশেষ রাত। এ রাত তুমি ছাড়া ফিকে। আমার হযবরল জীবনের এক মাত্র “আমার একটাই যে তুই!” আমার পাশে, সুখ, দুঃখে প্রতিটি পদক্ষেপে তোকে চাইরে বাবুইপাখি। আই নিড ইউ। আই মেডলি নিড ইউ। ইউ আর মাই হার্ট। তোকে ছাড়া আমার হৃদয় হৃদছন্দ তুলতে ভুলে যায়। তোর আসায় এ পরাম পাখি ডুবে যাচ্ছে অতল সাগরে? আসবি তো? আয় না আমার কাছে? একটি বার আয় আমার বুকের মাঝে দেখবি কানের মাঝে গুঞ্জন তুলে বলছে ” আমার একটাই যে তুই”

ইতি,
তোর আশায় প্রহর গুনা তোর
নেতা সাহেব

কুহুর চোখো জল ভড়ে গেলো। চিঠিতে বার কয়েক চুমু খেয়ে ইউসুফের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নিলো। কালো শাড়ি সাথে কালো চুড়ি মাথার খোপায় সাদা গাজরা পরে নিলো। কঁপালের কাছে কিছু চুল বের করলো। ঠোটে হালকা লাল লিপস্টিক। কুহু নিজেকে আয়নায় দেখলো। ভাব ধরে বলল,,

—” কি আয়না হিংসে হচ্ছে তোমার? ”

আয়না যেন হেসে বলছে,,

—” হে হচ্ছি বড্ড সুন্দর লাগচ্ছে তোমায়!”

কুহু হাসলো। ইউসুফ তাকে দেখে কি বলবে? তাই ভেবে লজ্জা পেলো। যখন টং টং করে ঘন্টার কাঁটা জানান দিচ্ছে ৭ টা বেজে গেছে তখনি তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেল কুহু। গাড়িতে উঠতেই আনানোন নাম্বার থেকে একটি মেসেজ এলো কুহুর ফোনে। কুহু ভ্রু কুচকে তাকাতেই…..
#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১৮
হলদে টিমটিম আলো পিটপিট করে জ্বলছে। আশেপাশের যত্ন গড়া বাগান থেকে ফুলের সুবাস ভেসে আসচ্ছে। গোল আকৃতির টেবিলের এক পাশে বসে কালো পাঞ্জাবি পড়া ইউসুফ অধির আগ্রহে চেয়ে আছে দূরে থাকা মেইন গেইটির দিক। বার বার হাতের ঘড়ির দিক তাকিয়ে সময় মাপার চেষ্টা করছে ইউসুফ। তার বাবুইপাখিটা এত দেড়ি কেন করছে? কিছুক্ষণ আগেই ইউসুফ কুহুকে টেক্সট করেছে,,

—” বাবুইবউ?এই অধমের প্রাণ পাখি উড়ে গেলে বুঝি তোর পদার্পণ ঘটবে আমার এই ছোট আসরে?আমি যে ক্ষন গুনতে গুনতে মারা যাচ্ছি? গলার কন্ঠ নালি যে শুকিয়ে যাচ্ছে তৃষ্ণায়? আমি কি তবে তৃষ্ণা না মিটিয়ে পরলোক গমন করবো বল না? বল প্লীজ? ”

টেক্সট টি করেই ফোনের দিকে চেয়ে রইলো ইউসুফ। চোখে মুখে তার অস্থিরতার ছাপ। ইউসুফ এবার সামনের চুল গুলো দু হাতে ঠেলে পিছনে সরালো। চোখ দুটি আরো এক বার দরজার দিক বুলিয়ে ফোনের দিক তাকালো। ফোনের আলো জ্বলে উঠলো। ইউসুফের ঠোঁটের কোনেও হাসি ফুঁটে উঠলো। ফোন স্ত্রল করতেই ভেসে উঠে কাঙ্ক্ষিত মেসেজটি,,

—” আর একটু ধৈর্য ধরুন। সাত দরিয়ার পানিতে ডুবিয়ে আপনার পিপাসা মিটাবো।”

ইউসুফ হেসে দিলো। তারপর আবার ফোনটা তুলে লিখলো,,

—” আপেক্ষায় থাকলাম। সাত দরিয়া নয় তোর মাঝে ডুবেই পিপাসা মিটিয়ে নিবো!”

ওপাশ থেকে আর উত্তর এলো। বুঝলো ইউসুফ তার বাবুইবউ লজ্জায় হাবুডুবু খাচ্ছে। গাল দুটি নির্ঘাত টমেটো হয়ে গেছে? ইশ! এ মুহূর্ত টা মিস করে ফেললো ইউসুফ। তবে বা কি? আজ সারা রাত তো রয়েই গেছে কিনা ইউসুফের হাতে!

ঘন্টা খানেক পার হয়ে যেতেই ইউসুফ উঠে দাঁড়ায় এতো সময় কেন নিচ্ছে? উফ! ধৈর্য হারা হচ্ছে ইউসুফ। এত সময়ে তো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও মানুষ চলে যায় । ইউসুফ সুইমিংপুলের দিক এগুলো। সুইমিংপুলে টিমটিম করে হাজারো বাতি জালিয়ে আলোকিত করা। মাঝে মাঝে আসা দমকা হওয়ায় নিভে নিভে যাবে ভাব। পিট পিট করে জলে থাকা বাতির তাকিয়ে মুচকি হাসলো ইউসুফ। ছোট বেলা থেকে করা কুহুর এটি সবচেয়ে পছন্দের কাজের মধ্য একটি। পানির মাঝে দিয়া জালিয়ে ভাসিয়ে দিতো সে। মুগ্ধকর এক হাসি দিয়ে বলতো,,

—” যা দিয়া যা। আমার মনের মানুষের কাছে। তাকে যেয়ে ছোট একটি বার্তা দিবি। তার জন্য অপেক্ষায় আছি আমি। সে যেন তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আসে!”

কুহু দিয়া বাতির চলে যাওয়া দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে। বাতাসের সাথে হারিয়ে যেতেই ফিরে যেতো। দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে ইউসুফ। কুহু চলে যেতেই ঝাপ দিত পানিতে। আর তুলে আনতো কুহু বার্তা ওয়ালা দিয়া বাতি। এমন শতশত দিয়া ইউসুফ আলমারির সিন্দুক ভর্তি আছে।

এক যুগ আগের স্মৃতি চোখে ভাসতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল ইউসুফের। বাবুইপাখির মনের মানুষটি যে সে হতেই পেরেছে তা যে সব থেকে বড় পাওয়া এ তুচ্ছ জীবনে। ইউসুফ আকাশের দিক তাকিয়ে চোখ বুঝলো। ফিসফিস করে বলল,,

—” আল্লাহ্! তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত বাবুইপাখিকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করার জন্য। এভাবেই জীবন মরণেও আমাদের এক সাথে রেখো তুমি!”

ইউসুফের মুখে সন্তুষ্টির হাসি। ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ ইউসুফকে আলতো করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ইউসুফে শরীরে এক ঢেউ খেলে গেলো।সেই ব্যক্তিটির হাতে হাত রেখে চোখ বুজে থেকেই বলল,,

—-” আমার কলিজা ছিন্নভিন্ন করে শেষ পর্যন্ত তোমার পায়ের ধুলি ফেললে?”

ও পাশ থেকে কোনো সারা পাওয়া গেল না। ইউসুফ ভ্রু কুচকালো। ব্যক্তিটি স্পর্শ অপরিচিত লাগছে ইউসুফের কাছে। কুহুর শরীরের ঘ্রাণ সে পাচ্ছে না। ইউসুফ চট চলদি ঘুরে দাঁড়ালো। সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে ইউসুফ হতবুদ্ধি। মাথা যেন করা বন্ধ হয়ে গেছে তার। বহু কষ্ট নিচেকে সামলে বলল,,

—” তুমি?”

মেয়েটি হাসচ্ছে। ইউসুফকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,,

—” কেমন দিলাম সারপ্রাইজ? ”

ইউসুফ রাগ লাগলো এবার। এই মেয়েটা এত পরিমাণ বেহায়া কেন? এত কিছুর পর কিভাবে সামনে আসতে পারে ভেবেই পাচ্ছে না ইউসুফ। ইউসুফ ক্রুদ্ধ হলো। চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চাঁপলো। মেয়েটির বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,,

—” এখানে কেনো এসেছো?”

মেয়েটি হাত ছাড়াতে চাইছে। হাত যেন ভেঙ্গে ফেলবে ইউসুফ সেই অবস্থা। কিন্তু মুখে হাসি। ছলছল চোখে তাকিয়ে ইউসুফ বিলাই চোখে। বলল,,

—” তোমাকে এক পলক দেখতে। আর তোমার বাচ্চার প্রথম ছবি দেখাতে!”

ইউসুফ নিভলো। তবুও তেজি গলায় বলল,,

—-” ফালতু কথা বলবে না আখি! আমি তোমার কথা একদম বিশ্বাস করি না!”

আখি কলার চেপে ধরলো ইউসুফের। কান্না মাখা কন্ঠে বলল,,

—” আমার সাথে রাত কাটানোর সময় মনে ছিলো না তোমার? এখন বাচ্চা এলো দায়িত্ব নিতে চাইছো না?বাহ….!”

ইউসুফ চোখ বুঝলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে! ইউসুফ গম্ভীর হয়ে গেলো। অতি শান্ত কন্ঠে বললো,,

—“এভয়েট ইট!”

আখির মাথা যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ইউসুফ সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো। মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,

—” তুমি বাবা হয়ে এমন কথা বলছো ইউসুফ? আমি মা হয়ে এমনটি কখনো করতে পাড়বো না। একটি প্রাণ আমি কিভাবে শেষ করে দি বলো…? বলো না প্লীজ!”

ইউসুফ মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। এ মুহূর্তে তার কি করা উচিত ভেবে পেলো না। দু হাত মাথা চুল চেপে ধরে শ্বাস ছাড়লো ইউসুফ। ঘামার্ত মুখখানা মুছে দরজার পাশে তাকাতেই লোম দাঁড়িয়ে পড়লো ইউসুফের। কালো শাড়িতে, সুন্দর সাজ সজ্জায় দাঁড়িয়ে আছে কুহু। চোখ দিয়ে অবিরাম জল গড়িয়ে কাজল লেপ্টে গেছে। শরীরটাও যেন কাঁপছে তার। ইউসুফ এগিয়ে গেলো। কুহু টলমল চোখে ইউসুফের দিক প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো। যার অর্থ,,

—” নেতা সাহেব? যা শুনেছি! সব মিথ্যা। একটি বার বলুন। শুধু একটি বার! আমি আপনার মুখের কথাই বিশ্বাস করে নিবো! ”

কিন্তু কুহু ভুল প্রমানিত হলো। ইউসুফ চোখ ফিরিয়ে নিলো। কুহুর বুকে তখন কাচ ভায্গার মতো শব্দ করে ভিতরের সব ভেঙ্গে চুরমার হতে লাগলো। অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইলো।জোড়ালো কন্ঠে বলল,,

—” আমার স্বপ্ন গুলো এভাবে না ভেঙ্গে দিলে হতো না নেতা সাহেব? রাজনীতি করতে করতে আমরা লাইটাকেও রাজনীতি ভেবে খেলে নিলেন? আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না। কখন-ও না!”

কুহু দাঁড়ালো না কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। ইউসুফ ধম মেরে রইলো। কত স্বপ্নের তাজমহল আজ গড়েছিলো ইউসুফ।ভেবেছিলো খোলা আকাশের নিচে আজ সারা রাত হাতে হাত রেখে গল্প করবে৷মনের সব লুকনো কথা বলবে। এক বুক ভালোবাসার চাদরে মুরাবে তারা।সুইমিংপুলে পা ভিজিয়ে দিয়া বাতির গল্প শুনে বলবে,,” তোর মনের মানুষ কিন্তু আমি ছিলাম, আছি, আর থাকবো বাবুইবউ! অথচ কি হলো? ঘুমন্ত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। নিজের দোষে। কিন্তু আদোও কি এই দোষ সে করেছিলো?

আর কিছু ভাতে পাড়ছে না ইউসুফ মাথা ফেঁটে যাচ্ছে ব্যথায়।

——————

সেদিনের পর দুটো দিন অগ্রসর হয়ে গেলো। কুহু চলে গেছে বাবার বাড়ি। ইউসুফের ও সাহস হলো না কুহুর সাথে কথা বলার মতো। ফোনের মাঝে ডায়েলে বার কয়েক বার নাম্বার তুলে কেঁটে কুঁটে দিচ্ছে ইউসুফ। কিন্তু ফোন করতে পাড়ছে না।

ইউসুফের অস্থিরতা দেখে কবিরের বড্ড আফসোস হচ্ছে। তার স্যারের এমন কি হয়েছে ভেবে দিশেহারা। সেদিন এত সব আয়োজন করার পর যখন কুহুকে কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখলো তখন কবির যেন আকাশ থেকে পড়েছিল। কিছু মুহূর্ত পর যখন আবার ইউসুফ ফিরে এলো এক রাশ বিষন্নতা নিয়ে তখন খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কবিরের। কিন্তু ইউসুফের বিমর্ষ মুখ দেখে আর টু শব্দ করতে পারেনি সে।

ইউসুফের চোখ দুটি অস্থির । বাহিরে তাকিয়ে অানমনা হয়ে। মহসিন তখন রুমে ঢুকলো। গম্ভীর মুখখানা তার। কোনো ভনিতা ছাড়াই ইউসুফকে আদেশ করলো,,

—-” আখিকে বিয়ে করতে হবে তোমার। দ্যাটস ফাইনাল! ”

ইউসুফ চমকে তাকালো বাবার দিক। বলল,,

—” কি সব বলছো তুমি বাবা? আমি বিবাহিত! ”

—” তা আমিও জানি! আখিকে বিয়ে না করলে তোমার রেপুটেশন ছিন্নভিন্ন হবে ইউসুফ! ”

ইউসুফ শক্ত গলায় কাট কাট ভাবে বলল,,

—” আই ডোন্ট কেয়ার। আমি কুহুকে ছাড়া কাউকে মানতে পাড়বো না। নো নেভার। আখিকে আমি বিয়ে কখনোই করবো না। যেখানে আমি সিউর না সে যা বলছে তা সত্যি! ”

মহসিন হতাশ গলায় বললেন,,

—” ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ইউসুফ! বিয়ে করলেই সে তোসার বউ হয়ে যাচ্ছে না। আর বাচ্চা হবার পর না হয় তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে?”

ইউসুফ সাফ সাফ না করে দিলো। কিন্তু লাভ হলো। আখির একটি পাঠানো ভিডিও দেখে পিলে চমকে গেলো ইউসুফে। ধপ করে চেয়ারে বসে বাবার তিক তাকিয়ে বলল,,

—-” এত দূর করবে এ মেয়েটি ভাবতেই পাড়ছি না আমি!”

মহসিন এবার শান্ত হয়ে বসলেন।বললেন,,

—” ইসলামে জায়েজ আছে কিন্তু প্রয়োজনে চারটি বিয়ে করার!”

ইউসুফ ক্ষানিকটা চুপ থেকে বলল,,

—” বাবা বিয়ে আমি একবারিই করেছি। বউ একটাই আমার। তারপর যা আসবে সব ঝঁড়া পাতা। আখির করা কাজে ও ছাড় পাবে না বাবা। এর জন্য ওকে শাস্তি আমি দিবো। নিজ হাতে দিবো।”

চলবে,
বিঃদ্রঃ প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি পরিবার গতো সমস্যায় ভুক্তভোগী। যার জন্য গল্প লিখার সময় টুকু পাচ্ছি না। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আর ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here