আমার_মনপাখি পর্ব ১৯+২০

#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ১৯

_ কিরে তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে আর তুই আমাকে একটি বারো জানালি না।এই তুই আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড মানিস তো নাকি সব নাটক।
_ আমার বিয়ের দাওয়াত আমি নিজেই পাইনি মিম।যদি পাইতাম তবে তোরে একবার হলেও বলতাম।
_ মানে কি, তুই কি বলছিস। আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
_ তোর বুঝে কাজ নাই। আগে বল আমার বিয়ের খবর তুই কার কাছে থেকে পেলি।
_ রাইসা বলেছে আমাকে।
_ তবে বাকি ঘটনা রাইসার কাছ থেকেই শোন। আমার এখন এইসব বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
আর কোন কথা না বলেই রাইফা ফোন কেটে দিল।রাইফা বিরক্ত মুখনিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
_যার বিয়া তার খবর নাই পাড়া পড়শীর ঘুম নাই😏😏।যতসব।

রাইফা মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তার নিজের জিবনের ছন্দ সুর কেটে গেছে। সব কিছু বিষাক্তময় লাগছে।কাছে থাকার মানুষ গুলোকে ও আজ বড্ড অচেনা লাগে।রাইফার দরজায় মিসেস হাবিবা নক করে বলে,
_ আসবো বউমা।
রাইফা বউমা শব্দটি শুনে চকিতে তাকায়।নিজের মুখে বিড়বিড় করে দুই বার উচ্চারণ করে ব- উ – মা।
_ কিরে মা আসবো।
_ দাঁড়িয়ে আছ কেন মামনি। আমার রুমে আসতে তোমার অনুমতি নেওয়া লাগে বুঝি।

মিসেস হাবিবা রাইফার পাশে এসে বসে তার হাতে কয়েকটা গয়নার বাক্স।রাইফার গালে হাত দিয়ে মিসেস হাবিবা বলে,

_কিরে মা কেমন আছিস।
_ এইতো যেমন থাকার কথা।তেমনি আছি।
_এভাবে বলছিস কেন মা।আমি জানি বিয়েটা একটু ঝামেলা ভাবেই হয়েছে তবে সত্যিটা হলো তোর আর আহাদের বিয়েটা তোদের ছোট বেলা থেকেই ঠিক।
_ তোমারা কেউ তো আমাকে আগে কখনো এইসব বেপারে বলো নি।হুট করে সবাই এখন বলছো বিয়েটা ছোট বেলা থেকে ঠিক।নাকি এগুলো লোক দেখানোর জন্য বলছো।
_ এভাবে বলিশ না মা।মামনিকি তোকে কখনো কোন বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছি।আমার ছেলেকি তোকে খারাপ রাখবে।আমি কি তোকে কম ভালোবাসবো।আমি চাই যত তাড়াতাড়ি পারি তোকে আমার ঘরে তুলবো।

মিসেস হাবিবা রাইফার আর কোন কথা না শুনে হাতে থাকা গয়নার বাক্স গুলো খুললো।তিনি দুটো বালা বের করে রাইফার হাতে পড়ান আর বলেন,
_ দেখ রাইফা বালা দুটো কিন্তু সব সময় হাতে রাখবি।তোর দাদিমা এই বালা গুলো আমায় দিয়েছিল।

রাইফা বালা গুলোকে বারবার নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখছে, আর মনে মনে বলে,
_ আল্লাহ, আমি এই গুলো কেমনে হাতে রাখবো কি ভারী।

মিসেস হাবিবা রাইফার গলায় একটি হার দিয়ে বলে,
_ এই হারটি গড়ে ছিলাম কিন্তু তোর জন্য।দেখতো মা পছন্দ হয় কি না।
রাইফা খেয়াল করে এই হারটিও বেশ ভারী।নিখুত কাজ করা।দেখতেও বেশ দারুন।
_ হ্যা মামনি পছন্দ হয়েছে।(তুতলিয়ে)কিন্তু তুমি এসব আমায় দেখাচ্ছ কেন।

রাইফার কথা শুনে মিসেস হাবিবা ভ্রু কুচকে ফেলেন,
_ তোকে দেখাচ্ছি মানে তুই আমার ছেলের বউ তোকে দেখাবো না তো কাকে দেখাবো।
_ মামনি আমায় ক্ষমা করো।তোমার ছেলেকে আমি কখনো ওই চোখে দেখিনি।ঝামেলা মিটে গেলে আমি…………….

রাইফা কথা শেষ করার আগেই মিসেস ডালিয়া ঘরে ডুকে, রাইফার বলা কথা গুলো শুনে তিনি রেগে যান।তিনি রাইফার চুলের মুঠি টেনে বলে,

_ কি বললি, লজ্জা করে না তোর। নিজের মান সম্মান তো কাল ডুবিয়েছিস সাথে আমাদের টাও এখন আবার এইসব কথা বলছিস তোর সাহস তো কম না(দাতে দাত চেপে)

_মা ছেড়ে দাও লাগছে আমার(কান্না করতে করতে রাইফা)

_ডালিয়া ছেড়ে দে মেয়েটাকে এমন করছিস কেন।আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মিসেস ডালিয়া রাইফাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন।আর রুম থেকে চলে যান।
মিসেস হাবিবা ও রুম থেকে যাওয়ার জন্য দরজার সামনে গেলে রাইফা বলে,
_ মামমি দাঁড়াও।এই বালা আর হার টি নিয়ে যাও যদি কখনো তোমার ছেলের উপযুক্ত বউ হতে পারি তবেই এই গুলো আমায় দিও।(ফুঁপাতে ফুঁপাতে)

রাইফার কথা শুনে মিসেস হাবিবা রাইফার মাথায় হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
_ তুই ই আমার ছেলের বউ। আর বউ থাকবি।তুই যেতে চাইলেও আমার ছেলে কখনো তোকে যেতে দেবেনা।

আর কোন কথা না বলে তিনি রুম থেকে চলে যান
এদিকে রাইফা হাটু মুড়ে আবার নিরবে চোখের জল ফেলে।একটু পর রাইফার একটি মেসেজ আসে,মেসেজটি ওপেন করতেই রাইফার চোখ মুখের ধরন পালটে যায়।মেসেজ টি এসেছে সেই অচেনা নাম্বার থেকে। রাইফা মেসেজটি পড়া শুরু করে,
_ বিয়েটাও করে নিলে তুমি। তোমার এতো বড়ো সাহস আসলো কোথা থেকে।😡😡।তুমি কি ভেবেছো আমি খবর পাবো না।তোমার সব খবর আমি রাখি মনপাখি।দেখি তুমি আহাদের সাথে কি করে সংসার করো।আমি তোমাদের প্রতিটি ধাপে বিপদ হয়ে দাড়াবো মনপাখি।আগে আহাদের ব্যবস্থাটা করি😎😎

রাইফা মেসেজটি পড়েই ঘামতে থাকে। তবুও আবার চুপ হয়ে যায়।যা হওয়ার তা হয়েছে। ভাগ্য তো সে নিজের হাতে তৈরি করেনি যে সব কিছু তার মতো হবে এই বিয়েটাও সে চায় নি।নিরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া তার কাছে আর কোন উপায় নেই।রাইফা আগের মতো আবার ফোপাঁতে থাকে।একটু পর রাইসা তার রুমে আসে।

_ কিরে আপু এভাবে বসে আছিস কেন।কি হয়েছে একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।একটু আগে দেখেছি তোর রুম থেকে বেরিয়ে জিজুও গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
_ তুই এখান থেকে যা রাইসা।আমার কিছু ভালো লাগছে না।

রাইসা আর কোন কথা না বলে মন খারাপ করে চলে যায়।

🥀🥀🥀🥀
সন্ধ্যা ছয়টা রাইফা আগের মতোই আছে । আহাদ এখনো বাড়ি ফিরেনি।আগেতো আহাদের সাথে শিহাব ও যেতো কিন্তু এখন যাওয়ার সময় শিহাবকেও নেয় নি।তার উপর ফোন বন্ধ এতে সবার চিন্তা বেড়ে গেল।দুই পরিবারের মাঝেই দম বন্ধ কর পরিস্থিতি।আহাদ বাড়ি ফিরলো রাত ৮ টায়।তার হাতে ব্যান্ডেজ করা।তাকে দেখেই মিসেস হাবিবা দৌড়ে এলেন।
_ কিরে বাবা তোর কি হয়েছে। ( কান্না করতে করতে)
_আহা মা ব্যাস্ত হয়ো না তেমন কিছু না।
_ বলছিস তেমন কিছু না পুরো হাতটাই তো ব্যান্ডেজ করা।
শিহাব আর সামাদ ও আহাদ কে দেখে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে,
_ আহাদ কিভাবে হলো তাড়াতাড়ি বল।আর তুই এই ভাবে কেন পাগলের মতো তখন বেরিয়ে গেছিলি(শিহাব)
আহাদ কিছুটা দম নিয়ে বলে,
_আসলে আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি আসার জন্য ওই নিরিবিলি রাস্তাটা ধরি তখন ছিনতাই কারি আক্রমণ করে।(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)
_ এখন কেমন লাগছে তোর।(মিসেস হাবিবা)
_আমি ঠিক আছি আর মা তুমি এত কেদোনাতো।আমি ঘরে যাচ্ছি।
_ চল আমি তোকে হেল্প করি(শিহাব)
_ হুম
🥀🥀🥀🥀

রাইফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রাত হয়ে গেছে। আজ তার বাবার সাথে একবারো দেখা হয় নি।নিজেকে এই ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছে সে।রাইসা এসে খবর দিয়ে গেল আহাদ নাকি এখনো বাড়ি ফিরেনি। অন্য দিকে লোকটি তাকে মেসেজে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।সব মিলিয়ে জীবনের এই মূহুর্তবগুলো তার কাছে বিষাক্ত লাগছে। তার ফোনে আবার মেসেজ আসে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজে লেখা ছিল,

_আজ আহাদের সাথে যা করেছি তা একটু উদাহরণ দেখালাম।বাকিটা তো আসতে আসতে করবো। দেখি আহাদ কে তুমি আমার হাত থেকে কিভাবে বাচাও।তোমাকে তো আমার করবো মনপাখি।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

রাইফা মেসেজটি পড়েই।তার পুরো শরীর ঘামতে থাকে।রাইফা বিড়বিড় করে বলে
_ কি করেছে লোকটা আহাদ ভাইয়ের সাথে। আহাদ ভাইয়ের আবার কিছু হয় নি তো। চাই না আমি আমার জন্য আহাদ ভাইয়ের কিছু হোক।

রাইফা এইসব ভাবতে ভাবতেই রুমে রাইসা প্রবেশ করে,
_ জানো আপু আজ কি হয়েছে ( জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতেই )
_ ক…..কি হয়েছে।
_ আহাদ ভাই বাড়ি আসার সময় ছিনতাই কারিরা আহাদ ভাইয়ের হাতে জখম করে।আঘাত টা নাকি মারাক্ত হয়েছে। শিহাব ভাই একটু আগে আমায় জানালো।
রাইফা রাইসার সামনে চুপ করে থাকলেও মনে মনে ভয়ে ঘুটিয়ে গেছে।
🥀🥀🥀
_ কিরে শিহাব তোর ভাবির কি খবর।
_ নারে ভাবি তো আজ রুম থেকেই বের হয় নি।রাইসার কাছ থেকে শুনেছি তুই যে যাওয়ার আগে যা খাইয়ে গেসিস তাই খেয়েছে আর পুরো দিনে কিছুই মুখে তুলে নি।
_ কি বলিস। ভেরি বেড তোরা আমার বউ টাকে তো না খাইয়ে মেরে ফেলবি।আচ্ছা শুন আজ আমি রুমে থাকবো না। তুই আজ আমার রুমে থাকবি যেন সবাই বুঝে তুই আর আমি একই রুমে আছি।
_ আচ্ছা ঘুমাবো। কিন্তু কেন।
_আরে বিয়ের পর এটাই তো প্রথম রাত। আর প্রথম রাতে কি হয় জানিস না।
_ আরে ভাই ভাবি কি তোকে মেনে নিয়েছে নাকি।
_সে না মানলে কি হয়েছে আমি তো মানি।আর কিছু উপহার ও তো দিতে হবে নাকি।
_ তাই তুই সকালে বাড়ি থেকে এভাবে বেড়িয়েছিস।
_ হুম৷
_ আচ্ছা আমি রাইসা কে বলে ওই দিকটা মেনেজ করে নেব।
_ ইসসস রাইসার সাথে বুঝি এই কয় দিনে ভালোই ভাব হয়েছে।(অভিনয় করে)
_ এইতো একটু একটু।(লজ্জা পেয়ে)
_ হুম তাড়াতাড়ি মনের কথা বলে দে।পরে আমার মতো আবার কাহিনি করে বিয়ে করতে হবে।
আমার মতো ভাগ্য যেন কারো না হয়।
#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ২০

রাত ১২ টা বিছানায় সুয়ে চুপচাপ চোখের জল ফেলছে রাইফা।চারিদিকে সবকিছু নিরবতা।আগের দিনের মতো কয়েকটি কুকুর রাস্তায় ডাকছে।রাইফা নিজের রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছে।আজ তার বাবার সাথে তার একবারো দেখা হয়নি।মায়ের সাথে সেই দুপুরে দেখা হয়েছে তাও তখনো ঝগড়া ঝামেলা লেগেই ছিলো।শিহাব শুধু একবার এসে দেখা করে গেছে।শিহাবকে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে রাইফা।বিদেশে থেকেও বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কৃতির সাথে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। আর রাইসা কিছু সময় পরপর এসে দেখে যায় তার কিছু প্রয়োজন কিনা।দুপুর থেকে কিছু না খাওয়াতে সে এখন বড্ড ক্ষিদে অনুভব করছে।হঠাৎ বারান্দা থেকে কিছু পড়ার শব্দ পেলো রাইফা।রাইফা ভয়ে গুটিয়ে গেছে তার মনে যানান দিচ্ছে হাজার ভয়।সে বিড়বিড় করে বলে,
_ও…..ওই লোকটা আ.…..বার এসেছে।এবার ক…কি করবে….. আহাদ ভাইয়ের পর কি এবার আমাকে শাস্তি দিবে।

রাইফা ভয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে। কেউ এসে রুমের লাইট জ্বালিয়ে হঠাৎ চোখে আলো পড়ায় রাইফা দু চোখ বন্ধ করে নেয়।
_ কি গো বউ তুমি এখনো কান্না করছো।(মায়াবী কন্ঠে)

বউ শব্দটা শুনেই রাইফা তাড়াতাড়ি চোখ খুললো।চোখ খুলে আহাদকে দেখে মনের মাঝে কিছুটা হলেও সস্তি এলো তার। রাইফা একবার আহাদের হাতের দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করলো।পুরো হাতে ব্যান্ডেজ করা।আহাদ আজ গলায় লাল রং এর হালকা কাজের সাদা পাঞ্জাবি, পড়ে এসেছে।

_ আমার বউ টা চোখ মুখের কি অবস্থা করেছে।(রাইফার চোখের পানি মুছতে মুছতে আহাদ)
রাইফা নিরবে আহাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে,
_ এই লোকটা তবে সত্যি আহাদ ভাইকে আঘাত করেছে।জখম টা কিন্তু বেশিই লেগেছে মনে হচ্ছে।

আহাদ রাইফার হাতে একটি শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়িটি পড়ো। রাইফা বাজ পাখির মতো আহাদের দিকে একবার তাকায়।আরেক বার ব্যাগের দিকে,
_ মানে কি, আমি শাড়ি কেন পড়বো।
_আমি পড়তে বলেছি তাই পড়বে।
_ আমি পারবো না শাড়ি পরতে।
আহাদ কিছু একটা ভেবে মেকি হাসি দিয়ে বলে _আচ্ছা শাড়ি পড়া লাগবে না। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
রাইফা আহাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বল,
_ আমি এখন ফ্রেশ হবো কেন। আর আপনি আমার রুমে কি করছেন।(ভ্রু কুচকে)
_ এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি। যা বলেছি তাই করো
_ আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই(রেগে)

রাইফা কথাটা বলেই আবার চুপসে যায়। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলেছে সে।আহাদ এখন থেকে তার স্বামী। শতভাগ অধিকার আছে এখন তার।নিজের কথার জালে নিজেই ফেসে যায় রাইফা।

_ কি বললে বউ আবার বলো।(ডেভিল স্মাইল দিয়ে আহাদ)
_ ক…. কিছু না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

রাইফা আর কোন কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।এদিকে আহাদ চলে যায় রাইসার কাছে,রাইফার জন্য রাতের খাওয়ার আনতে।

রাইফা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে খেয়াল করে আহাদ রুমে নেই,

_ আহাদ ভাই আবার কই গেল।(বিড়বিড় করে)

রাইফা খেয়াল করে তার ফোনের আলো জ্বলে আছে তাই সে ফোনটি হাতে নেয়।রাইফার ফোনে অচেনা লোকটি আবার মেসেজ করে।রাইফা মেসেজ টি পড়া শুরু করে
_ আহাদ এখন তোমার রুমে তাই না মনপাখি।এখন যদি আমি তোমার রুমে আসি কেমন হবে বলতো।না তোমাকে আমি কিচ্ছু করবো না, যা করার ওই আহাদকে করবো।বি কেয়ারফুল মনপাখি।
_ ন..ন্না….না আহাদ ভাইয়ের কোন ক্ষতি এই লোকটা করতে পারবে না।আমি…. আমি আহাদ ভাইকে আমার কাছে কাছে রাখবো তবেই লোকটি কোন ক্ষতি করতে পারবে না, হ্যা এটাই করবো।(দিশেহারা হয়ে)
রাইফা রুম থেকে বের হতে গেলেই আহাদের সাথে ধাক্কা লাগে,
_ এতো ছোটা ছুটি করছিলে কেন বউ।এমনিতেই হাতে ব্যাথা পেয়েছি তার উপর আবার ধাক্কা দিলে।

রাইফা আহাদ কে দেখে কিছুটা সস্তি পায়।মাথা নিচু করে বলে,
_সরি,
_ কোন ব্যাপার না। দেখি এসো খেয়ে নাও।
রাইফা আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে আহাদ বলে,
_ আমাকে দেখার জন্য আজ সারা রাত আছে এখন এখানে এসে আগে খেয়ে নাও।(চোখ মেরে)
রাইফা গিয়ে সোফায় বসে। আহাদ তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষ হলে আহাদ বলে,
_ যাও শাড়িটা পড়ে এসো।
আহাদের কথা শুনে রাইফা বিরক্ত হয়ে আহাদের দিকে তাকায়।
_ এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই যা বলেছি তাই করো।যাও শাড়িটি পড়ে এসো।
_ কয় বার বলবো আপনাকে আমি, শাড়ি পড়তে পারি না। (বিরক্ত হয়ে)
_ তবে পারো কি।যাও আমি হেল্প করবো
_ কক্ষনো, না প্রয়োজনে শাড়ি পড়বো না তবুও আপনার কাছ থেকে কোন হেল্প নেব না।
_তাই নাকি।তো তুমি শাড়ি পরবেনা
_ না পড়বো না।
_ঠিক আছে আমি শশুর বাবাকে ডাকছি।(সোফার থেকে উঠতে উঠতে)
রাইফা আহাদের কথা শুনে কাদো কাদো মুখ করে বলে,
_ না,, না পড়ছি আব্বুকে কিছু বলিয়েন না
আহাদ রাইফার অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলে,
_ আচ্ছা বলবো না, যাও শাড়িটা পড়ে এসো আর অযু করে এসো।
_ হুম।

আহাদ আপেক্ষার ৩৫ মিনিট হতে চললো কিন্তু রাইফার কোন খবর নেই। আহাদ ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলে
_রাইফা আর তোমায় পাঁচ মিনিট সময় দিলাম যদি তার মধ্যে না বেরোতে পারো আমি কিন্তু দরজা ভাঙ্গবো।সেই কখন থেকে তোমায় ডেকে যাচ্ছি।তুমি কি বের হবে।

রাইফা ভয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে। আহাদ খেয়াল করে রাইফা পুরো শাড়িটা পেচিয়ে ফেলেছে।
_ আমি পারিনা পড়তে আমি আপনাকে আগেই বলেছি।(কাদো কাদো সুরে)
_ আমি আছি না। আমি থাকতে তোমার কিসের চিন্তা।

আহাদ রাইফাকে যত্ন সহকারে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।রাইফা লজ্জায় চোখ মুখ কুচকে রেখেছে।
_ কি ব্যাপার চোখে হাত দিয়ে রেখেছো কেন।
_ আমার খুব লজ্জা করছে।
_ আরে আমার বউয়ের তো দেখি লজ্জাও আছে।তুমি কিন্তু শাড়ি পড়া শিখবে না বউ।
_ কেন কেন,(কপাল কুচকে)
_ কারন এখন থেকে প্রতিদিন আমি তোমায় শাড়ি পড়িয়ে দিবো(রাইফার কানে ফিসফিসিয়ে)

আহাদের কথায় সে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।মনের মাঝে অন্য রকম একটা ভালোলাগা তৈরি হয়! কিন্তু সে তা বাইরে প্রকাশ করে না।সে আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
_আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানিনা আহাদ ভাই আর কতবার এক কথা বলবো আমি।

আহাদ নিচে ঝুকে রাইফার শাড়ির কুচি ঠিক করছিল।রাইফার কথা শুনে সে রাইফার ফর্সা উন্মুক্ত পেটে একটা কামড় বসায়।রাইফা চিৎকার করতে নিলেই আহাদ তার মুখ চেপে ধরে,
_কতবার বলেছি এক কথা বার বার বলবেনা। তুমি আমায় ছাড়লেও আমি কিন্তু তোমায় ছাড়বোনা।আর একদিন যদি তোমার মুখ থেকে এসব কথা শুনি তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা মাইন্ড ইট।(রেগে)

রাইফা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
_দিলো মুড টাই নষ্ট করে(নিজের চুলগুলো টেনে আহাদ)
রাইফা মনে মনে বলে,
_ আহাদ ভাই যদি চলে যায় তবে আহাদ ভাইকে একা পেয়ে, ওই লোকটা আহাদ ভাইয়ের ক্ষতি করে দেবে তার থেকে ভালো আমি আহাদ ভাইকে আমার পাশে পাশে রাখি।

রাইফা আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
_ অযু করতে কেন বলেছেন। আমি অযু করেছি।
_ যাও জায়নামাজ নাও নামাজ পড়বো।
আহাদের কথা শুনে রাইফা কপাল কুচকে বলে,
_ এখন তো রাতের দেড়টা বাজে এখন আবার কিসের নামাজ পড়বো।
_ তুমি কিচ্ছু যান না রাইফা।
_ আমি আবার কি জানবো (কপাল কুচকে)
আহাদ রাইফার সামনে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
_ আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত রাইফা। আর প্রথম রাত মানে কি তুমি তো তা জানই।
আহাদের বলা প্রত্যেক টা কথা রাইফার মনের মাঝে ঝড় বয়ে তুলে।ভয়ে তার কপালে নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করতে থাকে।রাইফার অবস্থা দেখে আহাদ মুচকি মুচকি হাসছে।
_ কি হলো ভয় পেলে নাকি।
_ন্না না ভয় পাবো কেন(তুতলিয়ে)
_ তাহলে ঘামছো কেন।
_ আসলে শাড়ি পড়ে নামাজ কিভাবে পড়বো ত..তাই আর কি।
_ ও এই ব্যাপার সমস্যা নেই। আজ কষ্ট করে পড়ে নাও।

রাইফা আর কোন কথা না বলে আহাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া শুরু করে।চারিদিকে নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে কিছু কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে।চাঁদের আলো আজ মায়াবি ভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।জানালার ফাঁক দিয়ে সেই আলো রাইফার রুমে প্রবেশ করছে।সদ্য বিবাহিত দম্পতির এই একচিলতের হাসির সাক্ষ্যি যেন, ওই মায়াবী চাঁদের আলো।

চলবে……
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

.
চলবে…….
(ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here