আমার_শুধু_তুই পর্ব ৩

#আমার_শুধু_তুই
#লেখিকা_তামান্না (আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩


ছেড়ার ঢং কত! আমি ওয়াশরুমে তো মিয়া সাহেব ফ্লাটিং এ ব্যস্ত বাহ্ বাহ্! বেশ ভালোই তো এরে নাকি আমার বর বানাবে। এর চেয়ে তো ভালো হবে এরে পিংক বিষ খাওয়ায় আমি যায় সাজেক।
জানালার আয়না দিয়ে দেখে পিছে ঘুরে ওয়াশরুমে আবার ঢুকে গেলাম। লোকটার সাথে থাকতে অসহ্য লাগে। উফ! বেশি গা ঘেষে যেনো আমি তার পশমওয়ালা কম্বল।
ব্যাগ থেকে ব্লেক আই ভ্রু নিয়ে কাজল এঁকে নিলাম। কিন্তু যখন চোখের নিচে আই ভ্রু এঁকে দেবো তখনই লাইটস অফ হয়ে যায়।

ঠাসস দরজা বন্ধের আওয়াজ পেয়ে পিছে তাকিয়ে জটপট ফোন বের করে ফ্লাশলাইট অন করি। পুরো দরজার কোণা চেক করে দেখি কেউ নেই।
আশেপাশে অনেকক্ষণ নাড়িয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগি। তাজব ব্যাপার তো কিছুই নেই তো সাউন্ড কিসের এটা তো কারো পায়ের সাউন্ড!
আমি সামনে ফ্লাশলাইট দেবো তার আগেই কে যেনো আমার হাত থেকে ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নে।
নিয়েই ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। আমি রেগে দুঃখে চিল্লিয়ে বলি।

—“What the hell?
কে আপনি হ্যাঁ? আমার শখের ফোনটা ভেঙ্গে দিলেন ! Who the hell are you?

আমার চিল্লানি হয়তো সামনের জনের কান ফাটাতেই পটু মনে হচ্ছে। কিন্তু সেটা ছিল আমার মনের ভুল ধারণা। আমার চিল্লানির মাঝেই আমার ঠোঁটের উপর আক্রমণ হলো। কেউ যেনো খুব শক্তভাবে আমার ঠোঁটজোড়া চেপে ধরে রাখে।

আমি ছাড়া পেতে তার বুকে হাত দিয়ে খুব কড়াঘাত করি।
—“মাইরি কি বডি রে ভাউ? এত মাইর মারার পরও যদি রেসপন্স না দে তাহলে তো গন্ডালের বডি বলতে হবে।
দশসেকেন্ড পর মনে হলো আমি ছাড়া পেয়েছি। সামনে কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি না। লাইটস অন হয়ে গেল।
আয়নার সামনে এসে দেখি আমার ঠোঁটের পিংক লিপবাম খেয়ে দেয়ে উধাও করে দিসে।
রাগ যেনো চওড়া হয়ে গেল।

—“বাল যে কামটা করছে! তার এতই খিদা লাগছে আমার লিপবাম খেয়ে ফেলল।
তাকে তো আমি ছাড়ছি না।
বিরবিরিয়ে বললাম।
এখনই ম্যানেজার এর কাছ থেকে খরব নিবো। মনের মধ্যে ভেবে বেসিনের কাছে এসে টিউব ছেড়ে ভালোভাবে ঠোঁট ধুয়ে নিলাম।
সুন্দর ভাবে আবার লিপবাম লাগিয়ে ঠোঁটে পুরুষ মানুষটার স্পর্শ মুছে দিলাম।
তাও মনের কোনো এক কোণে কেনো যেনো স্পর্শটা ছিল চিরচেনা।
মনের কথা মনেই গেঁতে ভাঙ্গা ফোনটার দিকে একবার তাকিয়ে কাঁদো গলায় বলি।
—“আমার স্মৃতিময় ফোনটা কোন কুওা যে ভেঙ্গে দিল। তার কপালে যেনো বউ না জুটে হু।
ফোনটা সেখানেই ফেলে ম্যানেজারের কাছে আসলাম।

—-” স্যার আপনার কাছে সিসি ক্যামেরা আছে?
—“ইয়েস ম্যাম অবশ্যই আছে কিন্তু কেনো জানতে পারি?

ম্যানেজারকে হওয়া ঘটনাটা বললাম। উনিও বেশ রেগে গেলেন কোনো কাস্টমার বা স্টাফ এরকম করলে উনি বহিষ্কার করবে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্টের স্টাফগুলোকে যদি ওদের মধ্যে থেকে কেউ এমন করে থাকে।
উনার সাথে সিসি রুমে আসলাম।
তিনি ল্যাপটপ অন করে কিছুক্ষণ আগের টাইমলাইন প্লে করল ওয়াশরুমের সাইডের।
সিসি রুমটা বড় সাথে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট এর মত ক্যামেরা ডট পয়েন্ট লাইট সেট আছে প্রায় পাঁচটার মত। সবগুলো ক্যামেরায় চোখ বুলিয়ে ওয়াশরুমের সাইডে প্লে করতে বললাম।

—“একি এটা কে?
ম্যানেজারের উক্তি।
আমি শুনে বলি।
—“আপনি চেনেন না?
—-“না ম্যাম একদম চিনি না।
ম্যানেজারকে আর কিছু বললাম না। চলে এলাম বাহিরে ইদুঁরচানার কাছে।
সে আমায় দেখতে পেয়ে গাড়ির হেলান দেওয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
—“আদ্রু এতক্ষণ লাগল কিছু হয়েছে?
রাগতো চওড়ায় ছিল তাও বললাম না। এখন বললে বেডা নিশ্চিত আব্বুকে বলে দিবে।

—-“নাথিং চলো যাওয়া যাক।
গাড়িতে বসতে গেলে সে আমার হাত ধরে ফেলে। আমি তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলব তার আগেই সে বলে।

—“জাস্ট ফ্রেন্ডের মত। তোমার হাত ধরে তোমাকে ফ্রন্ডসিটে বসাতে চাই বসাতে দিবে কি আদ্রু?

—“এমা পাগলে কি বলে? রোমান্টিকনেজ উতলায় পড়ল নাকি?
যাই হোক বেডার শখ লাগছে যখন মেনে নি। না হলে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবে। ভেবে ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে নিজের মাথা নাড়লাম।
সে হাত ধরে আমায় গাড়ির ফ্রন্ড সিটে বসালো।

গাড়ি রওনা দিল। উদ্দেশ্য একটায় ভ্রমর।

আমাদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল হুডী পরা লোকটা। চোয়াল শক্ত করে গাড়ির হ্যান্ডেলে হাত রেখে চেপে ধরে বলে।
—-“আমার জিনিসে হাত দেওয়া মোটেও পছন্দ করি না। সেটা যে কেউই হোক।
লোকটা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ব্যাক রোডের দিকে যায়।

বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। আমরা বুক করা হোটেলে চলে আসলাম। নিজ নিজ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে নিলাম। রাতের চাঁদটা সূর্যের চেয়ে এতটা সুন্দর কেনো?
আচ্ছা চাঁদ যেমন ভালোবাসার চন্দ্রবিলাস দে ঠিক তেমনি কি সূর্যের উষ্ণতা ভালোবাসার রোদবিলাস ফুঁতি করে।
বেলকনির মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি। কিন্তু মাঝরাতে কেউ সুইসাইড করতে বেরুবে তা জানতাম না। রাস্তার মোড়ে এক লোক হাত খোলা রেখে আকাশের পানে চেয়ে আছে।
বহুদূরে একটা ট্রাক কে আসতে দেখি। জোরে জোরে লোকটাকে ডাক দিলাম।
আশ্চর্য তো ড্রামা চলছে নাকি? এভাবে দাঁড়িয়ে ফিল্মের মত এক্টিং করার মানে কি?
বুঝলাম লোকটা এভাবে সরবে না। মরুক গে ফিল্মের হিরোদের মত বাঁচাতে পারব না।
আরে ধুর আমি তো মেয়ে কিন্তু ফিল্মের মধ্যে হিরোকে হিরোইন বাঁচিয়ে এসেছে এমন কোনো ফিল্ম দেখলাম না।

এত ঘাঁটলাম না ভেতরে এসে বসে পড়লাম। তাও মনুষ্যত্বের কাতিরে যেতে হবে।
এই ভেবে গলায় উড়না জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
ঠিক যা ভাবলাম লোকটা সত্যি সুইসাইড করতে চাইছে।
ট্রাক খুব কাছে যেতে লাগে। আমি দৌড়ে এসে ডাক দিলাম। লোকটা আকাশের দিক থেকে মুখ সরিয়ে চোখ খুলে আমাকে দেখতে পেল। তার চেহারার অবস্থা দেখার আগেই ট্রাক যখনই তার পিছে আছে তখন তাকে ধাক্কা দিলাম।
সে পড়তে গিয়ে আমার হাতও শক্ত করে চেপে ধরল।
নিজে পড়ার সাথেই আমাকে ও নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঘাসের উপর। রোডের ডান সাইডে সবুজ ঘাসে ভরা। তার সাথে হিচকে পড়ে গেলাম। পড়েও যে থেমে যাবো তা আর হলো না গড়িয়ে যেতে লাগলাম দুইজন দুইদিকে। আমি গিয়ে গাছের খুব কাছে আঘাত পাবো তার আগেই আমার মাথা চেপে ধরে।
আমি তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ বলে স্মরণ করতে লেগেছিলাম। এই আমার আজ মৃত্যু ভেবেই নিয়ে ছিলাম। কিন্তু যাক আমি ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আবহাওয়াও গরমের মাঝে ঠান্ডা হতে শুরু করে। ঠান্ডা যেনো গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। নিজেকে শান্ত করতে মুখ তুলব তার আগেই মাথায় আসল আমি অপরিচিত একজনকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছি। জট করে ছেড়ে দিলাম। দাঁড়িয়ে গেলাম লোকটাও দাঁড়িয়ে গেল। সে আমার উড়নাটা নিচ থেকে উঠিয়ে গায়ে পেঁচিয়ে দিল।
প্রথমে লাগছে খারাপ হবে তবে সে আমায় সম্মানের নজরে দেখল ভেবে ভালোই লাগল।
লোকটা প্রস্থান করতে চাইলে আমি তাকে ডাক দিয়ে থামিয়ে দিলাম।

—-“শুনেন…
আমার কথায় সে থেমে যায়। আমি উড়না ঠিক করে তার সামনে এসে বলি।
—“আপনি সুইসাইড কেন কর ছিলেন?
লোকটা আমার কথায় মুখপানে চাই।
আমি নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারছি না। এই তো নীলচে চোখের সেই চাহনী জোড়া মায়া।
আমি মনের মাঝে থতমত খেয়ে বলি।
—“আরে ভাই আপনি তত সেই ক্রিকেটার না?
যে মুশফিকুর রহিম এর মত ব্যাট চালায়। চালিয়ে আবার মাথা ফাটিয়ে দে।
লোকটা অগ্নি দৃষ্টি ফেলল যেনো আমি তাকে কৌটা মেরে কথা বললাম।
—“দেখেন আবারো আপনাকে আঘাত করার জন্যে ক্ষমা করবেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কিছু করি নি।
এই বলে লোকটা চলে যেতে লাগলে।
আমি গিয়ে আবারো থামিয়ে দিলাম।
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় চেপে হাত মুঠো করে বলি।
—“এই ছেলে আপনি নিজেকে পাইছেন কি?
আমাকে কি লাইফ সাপোর্টটার মনে হয় নাকি খারাপ মেয়ে?
একবার মেরে রোগী বানিয়ে দিলেন তো আরেকবার বাঁচিয়ে মহান? আমি যে আপনাকে বাঁচিয়েছি এর শুকরিয়া কি আপনার শ্বাশুড়িআম্মা দেবে?

লোকটার চাহনি সেইভাবে ছিল যেনো আমার কথা উনার কর্ণপাত হচ্ছেই না।
—“হু আমার শ্বাশুড়িআম্মার এড্রেস জানা থাকলে বলবেন দেখা করব বউ আর শ্বাশুড়ি আম্মার সাথে।

তার কথায় বকা বনে গেলাম বলে কি ছেলেটা? আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিল।
—“এই আপনি কিন্তু আমার সাথে তর্ক করছেন আপনাকে যা জিগ্গেস করেছি তার উওর দেন।

লোকটা হাত দেখিয়ে বলে।
—-“ওকে কুল বি কুল। অতিরিক্ত রাগ হওয়া স্বাস্থ্যের জন্যে হুমকিস্বরুপ।
আপনার সব প্রশ্নের উওর দেবো। এখন আগে আমার সাথে চলেন।
—“ও আল্লাহ এত রাতে এর সাথে যাবো বাজে উদ্দেশ্য নেই তো।
তার কথায় চুপ করে ভাবলাম।

—“ভয় নেই কিছু করছি না বিশ্বাস করতে পারেন। আমার বাসা দূরে কিন্তু এখানে ফ্লাটে থাকি চলেন।
তার কথায় ভরসা করতে মন চাইলো। তাই চলে এলাম।
এসে আরেক দফা শক খেলাম। সে যে একিই হোটেলে থাকছে তা একদম অজানা।
সে আমায় থেমে থাকতে দেখে কাছে এসে বলে।
—“ভয় হচ্ছে বেশি?
—“না না আসলে এখানে আমিও থাকি।

লোকটা মুচকি হাসি দিল।
তার হাসিমাখা চেহারার এক্সপ্রেশন দেখে বুকের মাঝে ঢোল পিঠানি শুরু হলো। মায়াবী চেহারায় হাসির রেখাটা ছন্দময়।
এখন তো শুধু হোটেলের লাইটের সামনে হাসিটা মায়াবী লাগছে চন্দ্র রোদের সামনে তো হাসিটা আলোকিত হয়ে পরিবেশ চমকিয়ে দিবে।

—-“ঠিস ঠিস তুড়ি বাজিয়ে। ম্যাম মাঝ মধ্যে কোথায় উড়ে যান? চারপাশ সহ ভুলে যান।
—“না কিছু না ওপাশে কেউ আছে কিনা দেখছিলাম।
লোকটা সেদিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে চেয়ে বলে।

—“ঐদিকের সাথে আপনার কি কাজ?
—“না মানে রাত বেশি। মাঝরাতে কফি খেতে বেশ ভালো লাগে।
আমতা আমতা ভঙ্গিতে বললাম।

সে মুচকি হেসে তৎক্ষণাৎ কফিশপে গিয়ে দুই কাপ কফি নিয়ে এলো। আমাকে দিয়ে নিয়ে গেল তার রুমে।
বসেন একসাথে কফি খেয়ে কথা বলি।
আমিও সাড়া দিলাম।
সে কফিটা রেখে বেলকণির পর্দা সরিয়ে দে। সাথে সাথে চাঁদের আলোকিত রশ্নি ভেতরে চলে আসে। কারণ সে যে রুমে থাকে সেটা একদম উপরের তলা। চাঁদের আলো উপরের রুমগুলো থেকে ভালো ভাবেই বুঝা যায়। দেখতে লাগে খুব
কাছে চাঁদটা। সে গিয়ে লাইট অফ করে দিল।
লাইট অফ করায় চাঁদের রশ্নিটা আরু বেগে পড়ছে বেশ ভালো লাগছে।
লোকটা কাপে এক চুমুক দিল।
মনের মাঝে অগ্রীম ইচ্ছা জাগছে প্রশ্নের বাহার ছুঁড়ে ফেলার। তাও ভয় সংকোচ আসায় মুখ ফুটিয়ে কিছু বলতেও পারছি না।

লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

—“শুধু নিজের মুখ ব্যথা কেনো করেন আপনি? মুখ খুলে বললেই পারেন।
—“আ….আমি কি কবে?
—“হয়েছে আর বাহানা করতে হবে না আমিই বলি।
—“হু নিজের দোষ বললেই চুপাচারি !
বুঝি সব। মনের মধ্যে বলেছি কিন্তু বেডা শুনলো কি করে কে জানে সেই বলে।
—“চুপাচারি আমি করি না ম্যাম।
এখন শুনেন আপনার প্রতিটা প্রশ্নের উওর দেই।
আমি আয়মান রায়াজ। একজন রাস্তার পথিক এতিম ছেলে। রাস্তায় ঘুরাঘুরি করা ছাড়া আমার কোনো কাজ নেই। টাকা পয়সা যা পাই কিনে খাই না হলে ডাস্টের খাবার তত আছেই। এখন যে আপনি কফি খাচ্ছেন এই কফির দাম কত হবে বলেন তো?
—“কফির দাম ১৮০ থেকে ৩৭৫টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এখানে কত?

সে ঠোঁটজোড়া চেপে হাসার চেষ্টা করে বলে।
—“হুম ঠিক বলেছেন। এই কফির দাম ২০০টাকা।
কিছুদিন আগেই আমি একজনের বাসায় ঝাড়ু দেওয়ার চাকরী করেছিলাম।
সেখান থেকে বেতন পেলাম ১০,০০০টাকা। সেই টাকায় হোটেলে ফ্লাট নিলাম সাথে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস। আমার রুমটা দেখছেন?

তার কথায় আমি পুরো রুম খেয়াল করলাম। সত্যিই তো লোকটা নিরহ নিশ্রয় একা একা পুরো ফ্লাটে থাকে। রুমের মধ্যে তেমন জাঁকজমক কিছু নেই আছে শুধু একটা বেড, দুইটা চেয়ার একটা ছোটখাটো টেবিল। টেবিলে কিছু বইপএ দেখা যাচ্ছে। আমি কৌতূহলী বললাম।
—“আপনি বই পড়েন?

—“হুম কিন্তু পাঠ্যপুস্তক না এগুলো সব গল্পের বই।
—-“রিয়ালি?
—“হু চাইলে দেখতে পারেন।
তার কথায় কফিটা রেখে টেবিলের কাছে এসে দেখি।
—“মাশাআল্লাহ কি বলব? আপনার এখানে তো আমার প্রিয় রাইটারদের গল্প ঠাঁই পেয়েছে।
—“ওও আপনার প্রিয় রাইটার কারা জানতে পারি?

—” হ্যা।
হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ, হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর…. ব্যস ম্যডাম বুঝছি আপনার মাথায় রাইটারের বন্যা বয়ে আছে।
উনার কথায় হেসে দিলাম।
উনি বলেন।
—-“কারো গল্প পড়েন নি এমন অাছে?

উনার কথায় মুখটা ভার হয়ে গেল আমি বাচ্চাদের মত করে বলি।
—“হুমম আমার ফেভারিট রাইটার হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ আর হুমায়ুন আহমেদ এর গল্প।

—“ওও তো কোনগুলি?
আমি দিতে পারি।
—” সত্যি?
উওেজিত হয়ে বলি।
সে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। আমিও খুশি হয়ে বলি।
—-” খুনের নেশা ফাহাদ স্যার এর বই আর হিমু সমগ্র-১ম খন্ড হুমায়ুন আহমেদ এর বই পড়তে চাই।

আয়মান তার গল্পের বই গুলি থেকে সেই দুটি বই নিয়ে আমায় দিতে গিয়ে থেমে যায়। আমি কাঁদো ভাব করে বলি।
—“দিচ্ছেন না যে?
—” আপনি না কোনো অপরিচিত লোক থেকে কিছু নেন না বা তার দেওয়া কিছু ইউজ করেন না।

তার কথায় থতমত খেয়ে যায়। আমতার ভঙ্গি আঁটলেও আশ্চর্যভাবে তার দিকে সরু নয়ন ফেলি।
সে ভ্রু কুঁচকে আমার চোখে নিজের দৃষ্টি ফেলে বলে।

—“এভাবে কি দেখছেন?
—“দেখছি আর জানার চেষ্টা করছি। আপনি কিভাবে জানলেন? আমি অপরিচিত দের দেওয়া কিছু নেই না বা ইউজ করি না?

আয়মান স্বাভাবিক নয়নে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে। মনে হয় আমার প্রশ্নের উওর খুঁজার চেষ্টা করছে। তার কথায় আমার গতকাল পার্সেল করা লোকটার কথা মনে পড়ে। সেই লোক যে আয়মান তা নিয়ে সন্দিহান।

কোমরে হাত রেখে উনার দিকে এগোতে লাগি।
উনি আমার আগানো তে পিছিয়ে যেতে থাকে।
—“বাহ্ সিনটা দারুণ তো। আমার কথায় মানুষ ভয়ও পাই আগে জানতাম না। আজ প্রথম ইতিহাসে লেখা হবে মেয়ের ভয়ে ছেলে পিছিয়ে দেওয়ালে আঁটকে গেল।
মনের মধ্যে কথাগুলো ভেবেই হাসিতে লুটিয়ে পড়তে মন চাচ্ছে। তার দিক এগিয়ে এসে সে ঠিকিই দেওয়ালের সাথে আঁটকে গেল।

—“আপনি কি আননোন পার্সন যে আমায় ধমক দিয়ে ছিল?
তার চাহনী অবাকের মত হয়ে আছে। যেনো আমার কথা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

—“দেখেন একজন সাধারাণ লোককে হ্যারেজ করার মানে কি?
ওরেএএ আল্লাহ ছেলেটা বলে কি? আমি মেয়ে হয়ে ছেলেকে হ্যারেজ করব?
হ্যা তাই-ই তো করছেন দেখি।
এই ছেলে একদম মিথ্যে বলবেন না। আমি আপনাকে কবে হ্যারেজ করলাম হুম?

—“তাহলে আপনার মাথায় দেমাগ নেই বুঝলাম।
আমার দেমাগ নেই তাই না? আপনার মাথায় তো গিলুভরা।
জি না আপনার মাথার চিকিৎসা করান। একজন অপরিচিত লোকের থেকে কিছু নেওয়া কি ঠিক বলেন? এটা স্বাভাবিকতর সবার মাঝেই থাকে। আমি এ কারণেই বলেছিলাম মিস বেদেমাগ।
কি-ইইই? আমার অপমান করছেন আপনি?
এখন অপমান লাগলে তাতে আমার কিছু করার নেই।
ধুর! আপনার থেকে কিছু নিতামই না বায়।

উনার সাথে তর্ক না বাড়িয়ে উনার ফ্লাট থেকে বেরিয়ে নিজের ফ্লাটে চলে আসি।
দরজা লাগিয়ে রাগ ঝাড়ছি নিজের বালিশের উপর। বালিশকে নখ দিয়ে চেপে ছিঁড়ে ফেলতেছি নিজেরই অজান্তে।

—-“কি গাধা চৌড়া মানুষ রে! অপরিচিত কোথায়? পরিচয় দিয়েছিল আমিও মেনেছিলাম। আচ্ছা আদৌ তার পরিচয় দেওয়া কি ঠিক? ওওও নো ঠিকিই তো তার কাছ থেকে পুরো পরিচয় কবে পেলাম?
তার থেকে তো জানতেও পারলাম না সে কেনো সুইসাইড করতে চেয়েছিল শীট!
নিজের জেদে নিজেই বোকামি করে বসলাম।
খাম্বা লুম্বুটুসকে কথা বলার সুযোগও দিলাম না।

—“ঠুকঠুকঠুক। এখন কে এলো?
দরজায় বারি লাগায় আমি এসে দরজার কুলগর্ত থেকে দেখি কেউ নেই। একটু আলগা করে দরজা খুলে দেখি কার্পেট এর উপর পার্সেল।
আরেকটা পার্সেল? অবাক হয়ে বলি।

চলবে….?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here