আমার_শুধু_তুই পর্ব ৫

#আমার_শুধু_তুই
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৫

ধীরে ধীরে চোখ খুললাম নিজেকে কফিশপে দেখে অবাক হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখি ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে জুস খেয়ে যাচ্ছে ফাহিম। চোখে সানগ্লাস পরিহিত।
আমি আশেপাশে পরখ করে নিলাম। মানুষজনের সমাগম কম বেশি আছে। যে যার মত টাইম স্পেন্ড করছে।

—“শুনেন…..গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পানির তৃষ্ণা লেগেছে। আমার কণ্ঠ শুনতে পেতে ফাহিম ম্যাগাজিন রেখে নিজ বসা চেয়ার থেকে উঠে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে।

—“আদ্রু তোমার কি হয়েছে? এভাবে কেনো কথা বলছো?

—“পা….পা..পানি।
ফাহিম আদ্রিয়ার কথায় টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে তার মুখের কাছে নিয়ে খাওয়ায় দিতে থাকে।
তার ব্যবহারটা বেশ ভালো লাগল। সে পানি খাওয়ায় পানির গ্লাসটা রেখে দিয়ে আদ্রিয়ার দিকে ঘুরে মাথায় হাত রাখে।

—“জানো আমার কত টেনশন হচ্ছিল। তুমি যখন অজ্ঞান…..
অজ্ঞান???? উচ্চস্বরে তার দিকে অবাক দৃষ্টি ফেলে বলি।
হুমম অজ্ঞান তুমি মাঝ রাস্তায় আমায় কি যেনো বলতে চেয়ে ছিলে। বলতে গিয়ে তোমাকে খুব চিন্তিতও দেখিয়ে ছিল। তোমার দৃষ্টি ছিল গাড়ির গ্লাসের দিকে। ব্যস এরপর তুমি আমার কোলে ঢলে পড়লা।

শেষ কথায় আদ্রিয়া লজ্জার সাথে অস্বস্তি অনুভব করল। ফাহিম শেষ কথা চটজলদি না বলেও অন্যরকম ভাবেও ইঙ্গিত করে বলতে পারত।
ফাহিম আদ্রিয়ার ফেসের রিয়েকশন দেখে
ঠোঁটে বাঁকা হাসি দেই।

—-“ওও আইম সরি একটু বেশিই বলে ফেললাম।

—-“হুম ইটস ওকে।
—“আচ্ছা তোমার জন্যে কফি অর্ডার করি কেমন!
—-“হুমম।

ফাহিম আমার জন্যে কফি অর্ডার করতে বলে নিজ জায়গায় এসে বসে। এবার আদ্রিয়া চোখ উপরে তোলে তাকায়। এতক্ষণ মাথা নিচু করে রেখেছিল। এখন বেশ স্বস্তি লাগছে।

—-“জানি না তুমি আদৌও আমাকে ভুল ভাবো কিনা।
ঐসময় আমার কোনো দোষই ছিল না তাও আমার উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছিল।
পরিস্থিতি কার না খারাপ থাকতে পারে। আমারটাও হয়তো তেমন ছিল।
ন্যাকা কান্না করার ভান করে বলে।

—“আমাদের ও ভুল বুঝিয়েন না। আমরা সত্য মিথ্যে পরখ করতে পারছিলাম না। সামনে যেই ঘটনা আর প্রমাণ দেওয়া হয়ে ছিল সবই দোষ আপনার দিকে ইশারা করছিল।
ভুল আমাদের হয়েছে তাই আমাদের ক্ষমা……

—“না না প্লিজ ক্ষমা চেয়েও না। দোষ আমাদের কারো না। আমি তোমাকে প্রচুর ভালোবাসতাম
এমনকি আদৌও ভালোবাসি।
আদ্রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে। ফাহিমের কথায় কি বলব ঠিক জানি না। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলি। ফেসের এক্সপ্রেশন কাঁদো কাঁদো। কারণ মহৎ ব্যক্তি কে হেট করলাম।
যাকে ভাবলাম কয়লা সেই হিরা বের হলো আর যাকে ভাবলাম হিরা সে তো কয়লার চেয়েও বাড়ো বাজে বের হলো।
অনূভুতি নিয়ে খেলা করে যে পরে তারই থাকে না কোনো অনূভুতি। আই হেট ইউ আয়মান হেট ইউ।

ফাহিম মুখের উপর তুড়ি বাজাল।
এতে বেশ রেগে তার শার্টের কলার চেপে ধরি। সে হতদন্ড হয়ে গেল। যেনো আমার থেকে এমন রিয়েক্ট আশা করে নি।

—-“দেখ এরকম ধ্যান ফেরানোর উপায় একদমই আমার সামনে ইউজ করবে না না হলে একদম প্রাণে মেরে দেবো। মাইন্ড ইট!

লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

আদ্রিয়ার রুডবিহেভে ফাহিম মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়। নিজেকের কলার থেকে ইশারা করে আদ্রিয়ার হাতটা সরাতে বলে।

তার কথায় ধ্যান ফিরল। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে তুড়ি বাজানোর স্টাইলটা দেখে আয়মান এর কথা মনে পড়ল। ফাহিম ওকে বলে নিরবতা বজায় রাখে।
স্টাফ কফি নিয়ে এসে আসায়। ফাহিম সযত্নে আপ্যায়ন করল।

কফিতে এক চুমুক দিয়ে গাড়িতে আমার সাথে হওয়া কান্ডের কথা ভাবছি। ফাহিম যেমনটা বলল তেমন কিছুই আমার মনের ধারণার সাথে মিলছে না।

—-“আমি কি সত্যি অজ্ঞান নিজ থেকে হয়ে ছিলাম?

ফাহিম আই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে।
—-” হ্যাঁ তু….তুমি অজ্ঞান হয়ে ছিলে।

আপাত নিজ হাতে প্রুভ না থাকায় বিশ্বাস করলাম।
—“আমাদের এখন যাওয়া উচিত?
আদ্রিয়ার কথা শুনে ফাহিম ওর মুখ গোমড়া হয়ে যায়। যেনো সে চাই না তাও মুখ ফুটিয়ে কিছু বলল না।

—“হুমম চল।
ফাহিম উঠে আগে আগে হাঁটা ধরে। সে যাচ্ছে আর আড়চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে আদ্রিয়াকে আসতে দেখে বাঁকি হাসি দিচ্ছে।

—“The game is beginning. খেলায় বিভিন্ন চাল চালাতেও পারি মিটাতেও পারি। তোর উপর হক আমার ছিল আছে আর থাকবে।

ফাহিম মনে মনে ভেবে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।

_____

—-” হ্যালো রুবেল?
—“ইয়েস স্যার।
—-“খবর নে তো রেহান বর্তমানে কোথায়?

—-“রেহান……..স্যার রেহান তো মনে হয় ঐ দিন দেখা ছেলেটা যে ম্যামকে দেখতে এসেছিল?
—“হুম সে কোথায় কি করে ডিটেলস দে।
—“ওকে স্যার।

রুবেল এর সাথে কথা শেষ আয়মান ক্লিপটা খুলে নে।
—-“রেহান এর সামনে তো আদ্রিয়ার ইজ্জত এর ফালুদা বানিয়েছি তাহলে কেন সে আবার আদ্রিয়ার সাথে কথা বলতে বের হল।
কিছু একটা অজানা আছেই; ঘোর রহস্যের আভাস আসছে।
বাট ডোন্ট ওয়ারি আদ্রুপাখি।
তোমার জন্যে যদি মরতে পারি তাহলে মারতেও দ্বিধাবোধ করব না।
শএুর বেমানান আঘাত শুরু ত হয়েছে। এবার খেলা কে চেঞ্জ করে সেটা দেখার পালা।

আয়মান গাড়িতে বসে স্টার্ট দিয়ে সামনের আবাসিক রোড মেন রোডের দিকে গাড়ি ঘুরায়। সেই রোড মূলত ফাঁকা থাকে। পাহাড়ী এলাকার মত দুইপাশেই গাছগাছালিতে ঘেরা। ভেতরে গেলে মনে হয় জঙ্গল পড়বে।
সেই পাশের রোড দিয়ে গাড়ির ওয়াইট লাইট মেরে যাচ্ছে।
রাতের প্রায় বারোটা বাজতে চলেছে।

আয়মান বাসার দিকে যাওয়ার জন্যেই সেই রোড দিয়ে যাচ্ছে। শর্টকাট রোড কিন্তু শর্টকাট নেওয়াটা আয়মান এর পছন্দ না। সে বেশজোড় বড় ধামাকা করতে পছন্দ করে।
আজ শর্টকাট নেওয়ার একটাই কারণ খুব লেট হয়ে গেছে। আদ্রিয়াকে পেল না তার জন্যে মনের মাঝে হাজার বেদনা জমে আছে।

—-“তোকে মারি কাটি বকি অধিকার আছে। কারণ প্রচুর ভালোবাসি। তোর জন্যে ছিলাম আমি একা আদৌ কি ফিরবি না তুই?

গাড়িটা আনমনে চালিয়ে যাচ্ছে তখন সামনের দিকে রাস্তায় কাউকে পরা দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে ফেলে আয়মান।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েটাকে উল্টো দিকে পিঠ দেখিয়ে পড়ে থাকতে দেখে।

আয়মান হাটু গেড়ে বসে মেয়েটার মুখ দেখার জন্যে নিজের দিকে ফেরাতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।

—-” আদ্রিয়াআআআ বলে জোরে হংকার দিলো। আশপাশের ঘুমন্ত পাখিগুলো আয়মান এর হংকার শুনে জোরে চিৎকার দিয়ে পাখা ঝাপটে উড়তে শুরু করে। আদ্রুপাখি কি হয়েছে? এই দেখ তোর আয়মান চলে এসেছে রে তোর মুখে রক্ত কেন?

আয়মান আদ্রিয়াকে পরখ করে দেখে তার জরায়ুর নিচের দিকে কাপড়ে রক্তের দাগ।
—-“কিসের রক্ত ! না এভাবে থেমে থাকলে হবে না।
সে উঠে নিজের গাড়িতে গিয়ে একটা কাপড়ের অংশ এনে আদ্রিয়ার পেট বরাবর বেঁধে দে।
তার কোমর চেপে পাঁজকোলা করে গাড়িতে বসায়।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মেডিক্যাল এ নিয়ে আসে।
এত রাতে মেডিক্যাল এ খুব একটা ডক্টর নেই।
সবাই যার যার বাসায় চলে গিয়েছে। কিছু মেল নার্স কাজ করছে যাদের নাইট শিপট তারাই।

—-“ডক্টরওওওও প্লিজ হেল্প মি।
নার্স সহ বাকিরা ভয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে।
আয়মান স্যার একজন মেয়েকে কোলে করে দৌড়ে আনছে। মেল নার্স তাড়াতাড়ি ওয়ার্ড রুম থেকে স্কেলওয়াইল বেড নিয়ে আসে।
সে আদ্রিয়াকে বেডে শুয়িয়ে দে। নার্সদের দিকে তাকিয়ে বলে।

—-“Call the doctor right now…
নার্স আয়মান এর লাল চোখজোড়া দেখে বুঝতে পারছে। তিনি খুব রেগে আছেন। উনার রাগী নজর আর স্বরে অনেকে ভয়ে রোগীর সেবা করতে থাকে।

ডক্টরও চটজলদি রেডি হয়ে মেডিক্যাল এ চলে আসে।
—-“Check what happened to my wife?
ডক্টর ওকে বলে ওটিতে ডুকে।

আয়মান বাহিরে পায়চারি করতে থাকে।
রাগে তার গা ঘির ঘির করছে।
কখন না জানি তার রাগ নিষ্পাপ নিদোর্ষ মানুষের উপর পড়ে যায়। সে নিজেকে কন্ট্রোল করে মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ওটির পাশেই একটা চেয়ারে বসে গা হেলিয়ে দে।

রুবেলকে কল দিয়ে সবটা জানায়। সে শকড হওয়ার সাথে আয়মান আর আদ্রিয়াকে দেখতে আসবে বললে সে বারণ করে কাজের দিকে ফোকার্স করতে বলে।

—-“তুই যেই হইস আমার কলিজার সাথে তুই যা করেছিস তার দ্বিগুণ শাস্তি যদি তোকে না দিলে আমার নামও আয়মান রায়াজ না।

_____

—-“ওগো শুনছেন।
মিসেস রোকসানা কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে আরফাজ সাহেবকে ডাক দেই।
কিন্তু আরফাজ সাহেব সেভাবেই চোখ খুলে তাকিয়ে আছে।
কোনো কথাই বলছে না। একদম নিরব চুপচাপ যেন কোনো মরা লাশ সামনে শুয়ে আছে।

ডক্টর বলে গেছে উনি শকড সামলাতে পারেন নাই বলে উনার হার্ট ব্লক হয়ে গিয়ে ছিল। এখন ঠিক আছে তবে কয়েকদিন খুব নিরব থাকবে কারো সাথে কোনো কথাই বলবে না।
আপনার থেকেই কথা বলার চেষ্টা করতে হবে।

—-“আম্মু আম্মু।
আহিরা এসে নিজের আম্মুর কোলে বসে।
—“আপ্পি এখনো আসে নি। রাতের একটা বেজে যাবে।

মিসেস রোকসানা হতদম্ভ হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আহিরাকে আরফাজ সাহেব এর কাছে বসিয়ে টেলিফোন দিয়ে আদ্রিয়ার ফোনে কল দেই।
ফোনে রিং বেজে উঠল আদ্রিয়ার রুম থেকে। মিসেস রোকসানা টেলিফোন লাইন হোল্ড করে রুমে এসে দেখে আদ্রিয়ার ফোন ড্রয়ারের উপর রাখা।
মিসেস রোকসানা ভয় পেয়ে যায় মেয়ের সাথে কোনো কিছু হয় নি তো।

তিনি ফাহিম এর নাম্বারে ডায়লগ করে। তার কল আনরির্জআবেল আসছে।

—-“আল্লাহ আমার মেয়ে যেখানেই আসে সহি সালামাতে রাখিয়েন। আমার মেয়েকে পাওয়ায় দেন।
উনি থানায় যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছিলেন।
তখন টেলিফোন লাইনে কল আসে।
উনি কল কানে ধরে……

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here