আষাঢ়ি পূর্ণিমা পর্ব ১০+১১

#আষাঢ়ি_পূর্ণিমা
#পর্ব_১০
#খাদিজা_আক্তার

বারান্দায় অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রাত্রি। মুখ ফিরিয়ে দেখল, অভি তাকে ডাকছে। অথচ অন্তর যেন আদীর গলা শুনতে পেল।

—কিছু বলবি?

—সবাই তৈরি হয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি যাবে না?

আজকে শপিং করতে যাওয়ার কথা; বিয়ের শপিং। কিন্তু বিয়ে করার ইচ্ছা যার নেই, সে কীভাবে শপিং নিয়ে মাতামাতি করবে? কিন্তু অমত থাকলেও সেটি প্রকাশ করার সাহস রাত্রির নেই। তাই নিরস গলায় জবাব দিলো,

—যাব।

—তাহলে চলো শীগগির।

—তুই যা। আমি আসছি।

—ঠিক আছে।

এ বলে অভি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে, কিন্তু হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই বলল,

—আমি তো বলতেই ভুলে গেলাম। নীচে যাওয়ার আগে আদী ভাইয়া বলেছে একবার ছাদে যেতে।

রাত্রি অবাক হলো,

—ছাদে!

—হুঁ

—তুই যা।

—ঠিক আছে।

অভি চলে গেল। এখন সকাল ছাদে যেতে রাত্রির কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ছাদে গিয়ে আদীর মুখোমুখি হওয়ার কোনো ইচ্ছেও তার নেই। তবে নিজের অজান্তেই রাত্রির মনে প্রশ্ন এলো,

—জ্বর মাথায় করে তুমি আবার এ বাড়িতে কেন এলে? আমাকে সেদিন আঘাত করে আজ তোমার কী চাই?

রাত্রি ভাবল আর চট করে সিদ্ধান্ত নিলো আদীর সাথে সে দেখা করবে না। শপিং করতে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল রাত্রি; প্রস্তুতি অতি সাদামাটা। ফোন আর ছোট্ট একটি ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতে শুরু করল। কিন্তু দু’টি সিঁড়ি পার হতে গিয়ে তার মন কেমন ওঠল। রাত্রি আর সামনে পা বাড়তে পারল না। উলটো দিকের সিঁড়ি দিয়ে হঠাৎ ছুটতে শুরু করল। এক ছুটে আদীর সামনে এসে দাঁড়াল। এমন পাগলের মতো ছুটোছুটি করার অভ্যাস তার নেই। কিন্তু আজ এমন আচরণ করে নিজের কাছে অবাক হচ্ছে রাত্রি।

আদী আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। তাই রাত্রির ছুটে আসার বিষয়টি তার দেখা হয়নি। কিন্তু টের পেয়েছে আর এখন পাচ্ছে; রাত্রি হাঁপাচ্ছে।

—এখনো ডাকলে এমন করে ছুটে আসবে— এ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এতকিছুর পরও আমাকে পর করে দিতে পারো না কেন?

কথাগুলো বলে রাত্রির দিকে মুখ করে দাঁড়ালো আদী। রাত্রির নিশ্বাস এখনোও স্বাভাবিক হয়নি। তবে তার মুখ ভর্তি রাগ আর নত দৃষ্টি আদীর চোখ এড়ায়নি।

—মনের মধ্যে এত ঘৃণা নিয়েও আমার ডাকে ছুটে এলে কেন?

রাত্রি জবাব দিলে না। আদী রেলিঙে ভর দিয়ে হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

—জ্বরে মরে যাচ্ছিলাম। দেখতে যাবে সে তো অনেক দূরের ব্যাপার। একটিবার আমাকে ফোনও করলে না। এ অসুস্থ শরীরে আমিই এলাম তবুও তুমি আমায় তাকিয়ে দেখছ না রাত্রি।

—দশ দিন পর যার বিয়ে, তার কাছ থেকে কী আশা করছ তুমি?

শান্ত গলায় প্রশ্ন করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাত্রি। আদী স্মিত হেসে বলল,

—যদি বলি আস্ত তাকে আশা করি।

—স্বর্ণালির সুই””সাইডের বিষয়ের পর তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নয়তো এমন উদ্ভট কথা তুমি মুখেও আনতে না। আমার বিয়ে নিয়ে যখন প্রথম কথা শুরু হয়, তখন তুমি একটি কথাও বলোনি। আজ এতগুলো মাস তুমি আমার সাথে যারপরনাই ব্যবহার করেছ যেন আমি তোমার থেকে দূরে সরে যাই। আমার নোংরা কথা শোনাতে একটুও বাকি রাখোনি। ভেবেছ আত্মসম্মানের ভয়ে হয়তো তোমাকে আমি ইগনোর করব। কিন্তু আমি সেসব কিছু করিনি বলে তুমি অন্য মেয়েদের সাথে ফূর্তি করা শুরু করলে। ভাবলে এতে হয়তো আমি রেগে গিয়ে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। আমি সেসবেও কিছু করিনি। কিন্তু একের পর এক আঘাতে আমার ভেতরে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তাই মুখের কথায় বলেছি সম্পর্ক শেষ। কিন্তু আদোও কি আমি শেষ করেছিলাম?

—ইদানীং অনেক কথা শিখে গেছ। কত কথা আজকাল বলতে পারো।

হাসার চেষ্টায় কথাগুলো বলে রাত্রির মুখপানে চেয়ে রইল আদী। তার বুকের ভেতর এখন কষ্ট টগবগিয়ে ওঠছে, কিন্তু তা চেপে রাখতে হচ্ছে খুব কষ্ট।

—আমি অবাস্তব কোনো কথা নিশ্চয়ই বলছি না। বলো আমায় যে এগুলো মিথ্যে।

মাথা নামিয়ে আদী বলল,

—পুরাতন বিষয় এখন না-ই বা টানলে। আমি তো তোমায় সরি বলতে এসেছি রাত্রি।

—সরি! তুমি তাহলে সরি বলতেও শিখেছ? আর এত দিনে তোমার মনে হয়েছে যে আমাকে সরি বলা উচিত?

—রাত্রি, তুমি কিন্তু আমার মতো বিহেভ করছ। আমি বদলে গিয়েছি রাত্রি। Please, trust me.

বলেই দুই কদম এগিয়ে এলো রাত্রি আর তখনই নিচ থেকে ডাকাডাকি শুনতে পেল তারা। কেউ অনবরত রাত্রিকে ডাকছে। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করে রাত্রি জবাব দিলো,

—আমৃত্যু আমি তোমায় বিশ্বাস করব, কিন্তু কখনো ক্ষমা করব না।

বলেই রাত্রি নিচে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু আদী রাত্রির দুই বাহু শক্ত করে চেপে কাছে এনে জিজ্ঞাসা করে,

—এত অভিমান কেন আমার প্রতি?

রাত্রি শক্ত চোয়ালে বলে ওঠল,

—অভিমান নয়, আমি তোমায় ঘৃণা করি আদী।

আদী শব্দ করে হেসে ওঠল,

—তাই? আমি জানি তুমি আমায় ঘৃণা করো। কিন্তু যাকে ঘৃণা করো, তার ডাকে এমন অন্ধ হয়ে ছুটে কেন আসো?

রাত্রি কোনো উত্তর দিলো না। আদী আবার বলল,

—ঘৃণা করো আর অভিমান করো। সেটি তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমার চাওয়া অপূর্ণ রেখে তুমি বিয়ের পিঁড়িতে বসবে? এটি কী আমায় মানতে বলছ?

আদীর হাতের আঙুল শক্ত হয়ে ওঠছে আর বাহু ব্যথায় রাত্রির চোখে পানি জমছে। সেসব পাত্তা না দিয়ে রাত্রি বলল,

—তোমার অবাস্তব চাওয়া মানতে আমি বাধ্য নই। আমায় যেতে দাও। সবাই খোঁজাখুঁজি করছে। তাছাড়া এ অবস্থায় দেখলে…

রাত্রির মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে আদী বলল,

—কী ভাববে? আমরা দু’জনে পিরীতি করে মরছি।

—ছিঃ! এমন জঘন্য কথা বলতে তোমার বুকে বাঁধে না?

—আমার বুকে যে ব্যথা হয় সে খবর রাখো তুমি? আমি পাগল যাচ্ছি। আগেই ভালো ছিলাম। কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। কিন্তু রাত্রি এখন আমার এমন কেন লাগে? আমার মনে হয় সমস্ত পৃথিবীতে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আর সে আগুনে আমি দিবারাত্রি জ্বলেপুড়ে মরছি।

—তোমার জ্বর। তুমি ডাক্তারের কাছে যাও আর এখন আমায় যেতে দাও। Leave me.

—হুঁ, ছেড়ে দিবো। কিন্তু বলো আমার পাওনা আমায় বুঝিয়ে দিবে।

—তোমার মাথা ঠিক নেই আদী। তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ।

রাত্রি উত্তেজিত হয়ে বললেও আদী শান্ত গলায় বলল,

—আমি শুরু থেকেই পাগল ছিলাম। এখন হয় তুমি আমার পাওনা বুঝিয়ে দিবে নয়তো তুমি নিচে গেলে আমি সবার সামনে থেকে তোমায় তুলে নিয়ে যাব৷ এটি করলে অবশ্য তেমন কিছু হবে না, কিন্তু তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে তোমায় জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলব আমি তোমার ভালোবাসি।

আদীর মুখে এমন ভয়ংকর কথা শুনে রাত্রির চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। এ কী বলছে আদী!

—তুমি এসব কী বলছ আদী? তোমার সাথে এমন কোনো সম্পর্ক আমার কখনোই ছিল না। তাহলে কেন আমার সর্বনাশ করতে চাইছ? এমনটি করলে আমি যে…

—মুখ দেখাতে পারবে না। তাই তো? I don’t have any problem. তুমি আমার পাওনা শোধ না করলে আমি এসবই করব। বিয়ের এখনো দশ দিন বাকি। কিন্তু আমি তোমাকে ভাবার জন্য দুই দিন সময় দিলাম। পরশু রাত বারোটার আগে আমাকে জানিয়ে দিয়ো৷ নয়তো বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আমার প্রেমিকরূপ দেখার জন্য তৈরি থেকো।#আষাঢ়ি_পূর্ণিমা
#পর্ব_১১
#খাদিজা_আক্তার

রাত্রি স্তব্ধ হয়ে গেল রাত্রির সমস্ত কথা শুনে। আদীর এ কোন রূপ দেখতে পারছে রাত্রি? এমন আদীর সাথে তো তার পরিচয় ছিল না। তাহলে এসব কী হচ্ছে?

—আ… আদী

রাত্রি কাঁপা গলায় আদীকে কিছু বলতে চাইল, কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে আদী বলল,

—নিচে যাও। সবাই ডাকছে। যা হওয়ার তা পরশু রাত থেকেই হবে। আমাকে তো তুমি চেনোই। চেনো না?

কেমন ঘোর লাগা কণ্ঠে আদী প্রশ্ন করে রাত্রির দিকে তাকিয়ে রইল। রাত্রিও নিষ্পলক চোখে তাকে দেখতে লাগল। কিছুকাল নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল, কিন্তু আবারও রাত্রিকে ডাকাডাকি করছে কেউ। তাই রাত্রি নিজেকে সামলে নিচে চলে এলো।

—রাত্রি, কখন থেকে ডাকছি আমি।

ময়না বেগম প্রশ্ন করলও রাত্রি কোনো জবাব দিলো না। ফলে তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন,

—সবাই বসে আছে। তুমি কি যাবে না?

—হুঁ।

—তাহলে এসো।

—আমার একটু কাজ আছে। ওয়াশরুমেও যাব। এরপর…

—ঠিক আছে। শীগগির এসো।

রাত্রি ধীর পায়ে রুমে চলে এলো। রুমের দরজায় অভিকে দেখতে পেয়ে বলল,

—অভি, সবাইকে বলে দিস আমি আজকে শপিঙে যাব না।

—কেন আপু?

—এমনি। তুই বলে দিস।

—ঠিক আছে।

অভি চলে যেতেই রাত্রি রুমের দরজা বন্ধ করে মেঝেতে বসে পড়ল। দুই মিনিট আগেও সে বলেছিল যাবে, কিন্তু হঠাৎ করে তার মন বিষিয়ে ওঠেছে। হয়তো আদীর ওসব কথায় তার মন এখন তেঁতো হয়ে গেছে। আদী যা বলেছে, তা সে করবেই। কিন্তু রাত্রি এখন কী করবে? আদীর পাওনা মিটিয়ে দিতে গেলে যদি তার পরিবার তাকে অন্য কিছু ভেবে বসে? তখন মৃত্যু ছুঁয়ে দেওয়া ছাড়া তো অন্য উপায় থাকবে না।

*

—বারবার ঘড়ি দেখছ কেন? আমার সামনে বসেছ পাঁচ মিনিটও হয়নি। তাহলে এত ঘড়ি দেখার কী আছে?

বেশ গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করল ইব্রাহিম। মনের মধ্যে খচখচানি নিয়ে বসে থাকা রাত্রি কোনোমতে জবাব দিলো,

—কিছু না।

সোফায় হেলান দিয়ে বসা ইব্রাহিম একমনে রাত্রিকে দেখে যাচ্ছে। রাত্রির প্রতি তার চরম রাগ হলেও কেন জানি কষিয়ে একটি চড়ও দিতে পারে না। অথচ মেয়েটি কত অবাধ্য। সেদিন এত করে বলে যাওয়ার পরও শাড়ি পরেনি। ইব্রাহিমের হুটহাট বড়ো অদ্ভুত ইচ্ছে হয় আর সেটি পূরণ করতে না পারলে জীবনকে ব্যর্থ মনে হয়। রাত্রিকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে চাওয়া তার সেরকম একটি ইচ্ছে।

—শাড়ি পরা হয়নি কেন? সেদিন এত করে বলে গেলাম আর আমায় দেখলে এমন পালিয়ে পালিয়ে থাকো কেন? এক সপ্তাহ পর বিয়ে অথচ তোমার ভাব দেখলে… শাড়ি পরোনি কেন?

ইব্রাহিম নাছোড়বান্দা হয়ে যেন প্রশ্ন করল। এদিকে রাত্রি শুধু সময় দেখে চলেছে কারণ আর দুই ঘণ্টা পরেই আদীর দেওয়া সময় শেষ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত সে নিতে পারেনি আবার ইব্রাহিম বাসায় এসে তার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। শরীর খারাপ বলে পাশ কাটাতে চাইলেও ময়না বেগম আপত্তি করে বলেছিলেন,

—জামাই কতদিন এসে ঘুরে গেছে। আজকে না গেলে ভালো দেখাবে না।

রাত্রি আর কিছু বলতে পারেনি। অগত্যা ইব্রাহিমের সামনে এসে বসেছে। কিন্তু এ লোক সর্বদা কেমন নোংরা কথার দিকে ইঙ্গিত করে। রাত্রির বড্ড ঘেন্না হয়, কিন্তু নীরবে সহ্য করা ছাড়া তো অন্য উপায় নেই।

—বিয়ে হয়নি। তাই বেশি কিছু বলছি না। কিন্তু বিয়ের পর যদি মুখে তালা এঁটে বসে থাকো। তবে ঠোঁট ছিঁড়ে দেয়ালে লেপ্টে দিবো। ডাক্তার মানুষ আমি। এসব কাটাকুটি করা আমার জন্য কোনো বিষয়ই না। নেক্সট টাইম যখন আসব, তখন কালো রঙের শাড়ি পরে সেজেগুজে আসবে। আমার মদ সিগারেটের নেশা নেই, অন্য নেশা আছে। এসব বলা ঠিক না সেটি আমি জানি। কিন্তু আমি যাকে বিয়ে করব তার কাছে নিজের সমস্ত রূপ প্রকাশ করতে চাই যেন সে বুঝতে পারে। আমার মতো মানুষের চোখের নেশা হয়ে সে জীবনে কী পরিমাণ দুর্ভোগ টেনে এনেছে।

তাচ্ছিল্যের সুরে আবার বলল ইব্রাহিম,

—জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি। ডাক্তার তো সেজন্যে দেখা হয়। তাছাড়া আমার কাছে মহিলা পেশেন্টই বেশি আসে। But trust me. তাদের দেখেও চোখে এত নেশা হয়নি তোমাকে দেখে যতটুকু হয়।

ঠোঁট কামড়ে হেসে ওঠল ইব্রাহিম। ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে রাত্রি বলে ওঠল,

—রাস্তার আবর্জনা দেখলেও আমার এত ঘৃণা হয় না। আপনাকে দেখলে যতটুকু হয়।

রাত্রির কথা শুনে এবার শব্দ করে হেসে ওঠল ইব্রাহিম। বলল,

—Grand! প্রতিবাদ করছ? প্রতিবাদ করতে পারো? তাহলে ব্যাপার যে জমে গেল। কারণ এক হাতে তো তালি বাজে না। Oh god! তোমায় বিয়ে করলে না জীবন পুরো ঘোর আর নেশায় কেটে যাবে। এমন জানলে বিয়ের বিষয় আজকেই সেরে ফেলতাম।

আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে রাত্রি। তার এ মুহূর্তে ইচ্ছে করছে রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে ইব্রাহিমের জিহ্বায় বসিয়ে দিতে কারণ ওই জিহ্বা নড়ছে নোংরা শব্দ খরচ করতে।

ইব্রাহিম উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

—রাত হচ্ছে। আজকে আসি। বাকি হিসাব পরে করা যাবে। তবে নেক্সট টাইম শাড়ি পরার কথা মাথায় রাখবে।

এ বলে হাসতে হাসতে ইব্রাহিম চলে গেল। এদিকে রাত্রি রাগে দুমদাম পা ফেলে নিজের ঘরে চলে এলো। ফোন হাতে আদীকে কল করল। আদী রিসিভ করতেই রাগে-দুঃখে রাত্রি বলল,

—তুমি তোমার পাওনা চেয়েছিলে। তাই তো? কালকে সকাল দশটা থেকে পরশু সকাল দশটা পর্যন্ত আমি তোমার সাথে থাকব। তোমার সমস্ত পাওনা তুমি বুঝে নিয়ো। যদি ইচ্ছা হয় তবে খু””ন করে আমাকে নদীর জলেও ভাসিয়ে দিতে পারো।

আদী শুরু থেকে একটি কথাও বলেনি। আদী জানত রাত্রি রাজি হবে। তবে এমন করে বলবে সেটি আদী ভাবেনি। তাই জিজ্ঞাসা করল,

—কী হয়েছে, রাত্রি? তুমি এভাবে কেন কথা বলছ?

চিৎকার করে ওঠল রাত্রি,

—তাহলে কীভাবে কথা বলব? তোমরা ছেলেরা আমাদের কী ভাবো? আমরা টিস্যু পেপার? আমাদের শুধু ব্যবহারই করা যায়? আর ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলবে বলেই কি আমাদের জীবনে তোমরা আসো?

—রাত্রি…

—আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না। পুরো চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম তোমাকে। যা ইচ্ছা হয় আমার সাথে কোরো। আমি কিচ্ছু বলব না। কিন্তু এরপর আর কোনোদিন তুমি আমাকে তোমার চেহারা দেখাবে না। সেদিন তোমার জন্য আমি অনেক খুশি ছিলাম। তাই খোলা মনে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আমি আজকে অনেক খুশি। তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে তুমি চাইতে পারো আদী।” তখন তুমি আমাকে বলেছিলে, “তোমার জীবন থেকে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আমাকে দিবে? এ চব্বিশ ঘণ্টা আমি তোমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ডের মতো খুব বেশি আগলে রাখতে চাই।” আমি অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু তবুও মেনে নিয়ে বলেছিলাম, “ঠিক আছে। কোনো একসময় তোমাকে চব্বিশ ঘণ্টা দিয়ে দিবো।” এখন সেই চব্বিশ ঘণ্টা কালকে থেকে শুরু হবে। আমাকে কোথায় থাকতে হবে টেক্সট করে দিয়ো। আমি ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে আসব। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা শেষ হওয়ার পর ভুলেও তোমার মুখ আমাকে দেখাবে না এমনকি আমার সাথে কোনো সম্পর্কও রাখবে না।

—ঠিক আছে। এটি পাওয়ার জন্য আমি তোমার সব দাবি মেনে নিবো। কিন্তু আমি কী করব না করব তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি করতে পারবে না।

রাত্রি হেসে ওঠল; বিষাদের হাসি। বলল,

—জীবন আমার কাছে এখন এক পেয়ালা বিষ। হয় নিজে গিলব নয়তো অন্যকে গিলতে সাহায্য করব। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। কথা বলতে পারে এমন রাত্রি কাল যাবে না তোমার কাছে। যার বাকশক্তি লোপ পেয়েছে এমন একটি মেয়েকেই কাল দেখতে পাবে।
(চলবে)
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here