আড়ালে অনুভবে পর্ব ১৩+১৪

#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১৩

রাগে গজগজ করতে করতে বারবার আরচোখে নিরব কে দেখছে প্রভা।তার পাশেই দিপ্তি বসে আছে। বারবার কথার ছলে নিরব এর গায়ে পরছে।আর সেও হাসিমুখে গল্প করছে,কিছুই বলছে না।
কিছুক্ষন আগে—
“নিররর..”কথাটা বলেই দিপ্তি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে নিরবকে।দিপ্তি হলো প্রভার ফুফাতো বোন। অঙ্কিত এর সঙ্গে ও বিদেশেই থাকতো।সেইম এজ ওরা,কয়েক মাস এর ডিফারেন্স মাত্র।
হুট করে এসে জড়িয়ে ধরায় নিরব ও খানিকটা ঝটকা খায়।পরক্ষনে মেয়েটিকে ছাড়িয়ে তার মুখ দেখতেই চিনতে পারে তাকে।

নিরব:What a pleasant surprise!দিপ্তি তুই কবে এলি?

দিপ্তি:দু দিন আগেই তো এলাম।ভাবলাম তোর সামনে গিয়ে একেবারে চমকে দেবো।কি চমকাতে পেরেছি তো?

নিরব:প্রচুর!আমিতো নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিনা।এটা কি আদতেও সেই দিপ?

দিপ্তি:কেনো রে?আমি কি একটু বেশি ই সুন্দরি হয়ে গেছি নাকি?

নিরব:তা তো হয়েছিস ই।কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা।তোকে এতো বছরে যতবার ভিডিও কল এ দেখেছি কখনো এই ড্রেসাপ এ দেখিনি।

দিপ্তি:হাহ,অটা বিদেশ।আর এটা বাংলাদেশ। সো, নিজের দেশে এসে তো এই দেখের মতোর ই ড্রেস পরবো তাই না।

অঙ্কিত:বাহ,কেয়া বাত।নির কে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলি?আরে তোর তো আমাকে ট্রিট দেওয়া উচিৎ,আমি বিয়ে না করলে তোর দেশে আসাও হতো না।

দিপ্তি:ওওও মাইইইইইই অঙ্কুউউউউউউ বেইবি। রাগ করেছিস বুঝি?আচ্ছা এই দেখ কান ধরছি, হয়েছে এবার? (অঙ্কিত এর পিছনে জ্ঞিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো)

দিপ্তি:আরে ভাবিইইই।মাই ডিয়ার কিউটি মিউটি সুইট ভাবি কেমন আছো বলো। (সুপ্তির পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে)

সুপ্তি:ভালো আছি আপু।তুমি কেমন আছো?

দিপ্তি:ওয়েট ওয়েট।আপু টাপু কি হ্যা?বয়সে বড় হলেও সম্পর্কে তোমার ছোট আমি।তাই আমাকে নাম ধরেই ডাকবে বুঝেছো?

সুপ্তি:আচ্ছা ঠিক আছে।

সিনথিয়া:কিন্তু দিপ্তি আপু,তুমি নিরব ভাইয়াকে কি করে চিনো?

দিপ্তি:বা রে,বেস্ট ফ্রেন্ড কে চিনবোনা?

প্রভা:বেস্ট ফ্রেন্ড?

অঙ্কিত:হুম বেস্ট ফ্রেন্ড।এটা না হয় আমি ই ক্লিয়ার করি।আমি,দিপ,নির সেইম ব্যাচ এর স্টুডেন্ট।সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ।ইচ্ছে ছিলো তিন জন ই বিদেশে যাবো কিন্তু নির দেশেই থাকতে চায় তাই আমরা দুজন ই চলে যাই।

নিরব:ঠিক তাই।তবে সবকিছু এখনো আগের মতোই আছে।

দিপ্তি:মোটেই না।

নিরব:মানে?

দিপ্তি:মানে টা হলো তুই আগের চেয়ে আরো বেশি হ্যান্ডসাম আর কিউট হয়ে হেছিস বেবি।

নিরব:আই নো দ্যাট বেইবি…

(প্রভা এতক্ষন চুপচাপ দেখছিলো।কিন্তু নিরব এর বেবি বলাটা মেনে নিতে পারলো না।ওর পাশে নিশাত বসে ছিলো।নিশাত এর হাতেই জোড়ে চিমটি দিয়ে দেয়)

নিশাত:আউচ!এই হারামি তুই আমারে চিমটি দেস কেন?

প্রভা:কি,আ আমি চিমটি দেই নি।তোর হাতে মশা পরছিলো।ওটাই তো ধরতে গেছিলাম।

(প্রভা আবারো নিরব এর দিকে রাগী লুক এ তাকায়।নিরব একবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবারো গল্পে মন দেয়)

ফ্লাসব্যাক ওভার—–
প্রভা আর সজ্য করতে পারলো না।উঠে দাড়ালো সেখান থেকে।
সুপ্তি:সাদু,তুই কোথায় যাচ্ছিস?

প্রভা:ভিতরে

নিশাত:কিন্তু কেনো?

প্রভা:ভালো লাগছে না।মাথা ব্যাথা করছে।

রোদেলা:কিন্তু তুই তো অন্ধকার এ ভয় পাশ।আর বাড়ির সবাই ও নেই এদিকে।একা একা যেতে পারবি?

প্রভা:পারবো আপু।তুমি চিন্তা করোনা।

সিনথিয়া:চল আমই যাচ্ছি তোর সঙ্গে।

নিরব:তোর যেতে হবেনা সিনথু।আমি যাচ্ছি।

প্রভা:তার কোনো প্রয়োজন নেই। (বেশ চেঁচিয়ে বলে কথাটা)
নিরব এবার কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়ায়। প্রভার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগে।

রোদেলা:এদের কিন্তু বেশ মানিয়েছে।

রোদ্দুর:ঠিক ই বলেছো।

সুপ্তি:একদম রাবনে বানাদি জোড়ি।

দিপ্তি:মানে?কিসব বলছিস তোরা?

অঙ্কিত:একটু সবুর কর।নিজে থেকেই জেনে যাবি।আমাদের আর বলতে হবে না।

______🌺
রাত ২:০০–
রাতে দেড়ি হয়ে যাওয়ায় আজ সকলে এ বাড়িতেই থেকে গেছে।রাতের বেলা প্রতিদিন দু একবার ঘুম ভাঙে প্রভার।আজও তেমন টাই হলো।ঘুম ভাঙতেই পাশে থাকা টেবিল থেকে পানির বোতল হাতে নিলো কিন্তু সেটাতে একটুও পানি নেই।একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাধ্য হয়ে বিছানা থেকে নেমে যায় সে।পানি ভরার উদ্দেশ্যে ড্রইং রুমের দিকে যেতে নেয়।সিড়ির পাশে ঘড়টাতেই দিপ্তি আছে আজ।দূর থেকে রুমে দড়জা খোলা এবং লাইট জলতে দেখায় খানিকটা খটকা লাগে প্রভার।কিন্তু রুমের সামনে যেতেই তার চেয়েও বড় ঝটকা খায় সে।
নিরব দিপ্তি কে জড়িয়ে ধরে আছে।দিপ্তিও নিরবের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।এমন কিছু দেখার জন্য প্রভা মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।অবাধ্য চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পরে তার।
দড়জার দিকে তাকাতেই প্রভা কে দেখে থমকে যায় নিরব।নিরব তাকে দেখে ফেলেছে সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত মুখ চেপে ধরে দৌড়ে রুমে চলে যায় প্রভা।
রুমে গিয়ে যেই দড়জা লাগাতে যাবে তখন ই নিরব এসে আটকে দেয়।নিজে ভিতরে ঢুকে দড়জা আটকে দেয়।

প্রভা:আ আপনি এখানে এসেছেন কেনো?যান না, যা করছিলেন তাই করুন গিয়ে।

নিরব:আমার যা ইচ্ছে হবে আমি অবশ্যই তাই করবো।কিন্তু তুমি কাদছো কেনো?

প্রভা:আপনি জিজ্ঞেস করছেন আমি কেনো কাদছি? (বেশ অবাক হয়ে)

নিরব:অবশ্যই।কারণ তোমার কান্নার কোনো কারণ আমি খুজে পাচ্ছি না।

প্রভা:আ আপনাকে অন্য একজনের সাথে ওভাবে দেখার পর আমি কেনো কাদছি আপনি জানেন না?

নিরব:ওয়েট ওয়েট।আমি যার সাথে যেভাবেই থাকি না কেনো তাতে তোমার কি?হ্যা ফ্রেন্ড হিসেবে জিজ্ঞেস করতেই পারো।

প্রভা:নিরব সবাই প্রায় সিওর হয়ে গেছে আমার আর আপনার মধ্যে অন্যরকম সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।আর আপনি বলছেন জাস্ট ফ্রেন্ড?

নিরব:বাকি সবার চিন্তা আমি আটকাতে পারবোনা।কিন্তু তোমাকে তো আমি বুদ্ধিমতী ভেবেছিলাম।

প্রভা:(অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)

নিরব:আচ্ছা বেশ,আমি কি তোমায় কখনো বলেছি যে আমি তোমায় ভালোবাসি?

প্রভা:ত তাহলে আপনার এতদিনের সব ব্যাবহার শুধু জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে ছিলো?

নিরব:অভিয়াসলি।আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা না,জাস্ট ডিসগাস্টিং।দু দিন একটু ভালো ভাবে কথা কিনা বললাম তাতেই ভেবে নেয় এটা ভালোবাসা!লাইক সিরিয়াসলি?

প্রভা:নিশ্চুপ

নিরব:শোনো মিস প্রতিভা,এসব ফালতু চিন্তা ভাবনা যত তাড়াতাড়ি মাথা থেকে মুছে ফেলবে ততটাই তোমার জন্য ভালো।বাকিটা তোমার ইচ্ছা।
কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নিরব।এদিকে প্রভা এখনো আগের জায়গায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পরছে তার।নিরব এর বলা কথাগুলো এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১৪

সারাটা রাত নির্ঘুম কাটলো প্রভার।ঘুমোবে কি করে?বারবার শুধু কানের কাছে একটা কথাই বাজছে, “আমি কি কখনো বলেছি যে আমি তোমায় ভালোবাসি?”
প্রভা:সত্যি ই তো,উনি তো কখনো আমায় এই কথা বলেনি।তবে আমি কেনো নিজের মতো করে সবকিছু ভেবে বসলাম?না না ভুলটা তো আমারি, তার তো কোনো ভুল নেই।তবে ভুল যেহেতু করেছি তার মাশুল ও তো আমাকেই দিতে হবে। ভু ভুলে যাবো আমি।এই সবকিছু ভুলে যাবো। কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা আমি ভুলে যাবো,ভুলে যাবো। (নিজে নিজে কথাটা বলে আবারো ডুকরে কেঁদে ওঠে প্রভা)

প্রভার এমন কান্না দেখে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো নিরব এর।আর তাকিয়ে থাকতে পারলোনা।চলে গেলো দড়জার আড়াল থেকে।

নিরব:আমি তো তোকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি দিয়াপাখি।তবে কি চমক দিতে গিয়ে আমি তোর হৃদয়ে আঘাত দিয়ে ফেললাম?একটা মেয়ের কাছে তার চরিত্র সবচেয়ে বেশি মর্যাদার বিষয়।আর আমি কিনা সেই চরিত্র নিএই,ওহ শিট!এটা তুই কি করলি নির?না বুঝেই তোকে কতটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম দিয়াপাখি।ক্ষমা করে দিস আমায়, আর একটু সজ্য করো দিয়াপাখি,তোমার ঐ চোখের জল আমি নিস হাতে মুছিয়ে দিবো। কথা দিলাম,
(মনে মনে কথাটা বলেই স্থান ত্যাগ করলো নিরব)

______🍂
আরো একটা সপ্তাহ কেটে গেছে।অঙ্কিত আর সুপ্তির বিয়েটাও বেশ ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। এই কয়েকদিনে বাকিরা সবাই নিরব আর দিপ্তির ব্যাপার টা নিয়ে সন্দেহ করছে।
তবে প্রভা সেদিনের পর থেকে এই বিষয়ে কোনো কথা বলেনি,নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বললেই চলে।কারোর সাথে তেমন একটা কথা বলেনা। নিরব যেখানেই যায় প্রভা সেখান থেকে দূড়ে সরে আসে।এতদিনে একবারো নিরব এর সাথে কথা হয়নি তার,আর নাই নিরব কথা বলতে চেয়েছে। প্রভা প্রথম দু তিন দিন বেশ অবাক হয়ে যেতো। মানুষ এক দিনে কি করে এতওটা বদলে যেতে পারে!যেই মানুষ যথাসম্ভব সারাদিন প্রভা কে জালাতন করে বেড়াতো সেই লোক ই এখন এমন বিহেভ করছে যেনো তাকে চেনেই না।
তবে এরপর থেকে প্রভাও ভাবা বন্ধ করে দিয়েছে এই ব্যাপারে।নিজের মনকে বুঝিয়েছে সে।মেনেই নিয়েছে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে গেছে নিরব।এখন আর বন্ধু হিসেবেই বা তাকে কি প্রয়োজন?
,,
সবে মাত্র ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে বসে গল্প করছিলো প্রভা,নিশাত আর সুপ্তি,অঙ্কিত ও সেখানে উপস্থিত হয়।চার জন একসাথে বেশ ভালোই জমিয়ে গল্প করছিলো।প্রভাও বাধ্য হয়ে মিথ্যে খুশির ভান করছিলো।
ঠিক তখনি সেখানে উপস্থিত হয় দিপ্তি আর নিরব।দুজনেই হাসি মুখে আসে সেখানে।প্রভা কেনো যেনো ওখানে থাকতে পারলো না।দৌড়ে চলে গেলো হোস্টেল এর ভিতর।প্রভার অবস্থা বুঝতে পেরে নিশাত আর সুপ্তিও ওর সাথে ভিতরে গেলো।অঙ্কিত যেতে গিয়েও একবার ঘাড় বাকিয়ে নিরব এর দিকে তাকায়।

অঙ্কিত:কাজটা তুই ঠিক করলিনা নির।একদিন নিজের ভুলটা বুঝিতে পারবি।বুঝতে পারবি তুই কি হারালি।

চলে গেলো অঙ্কিত।নিরব এবার কিছুটা সামনে গিয়ে বেঞ্চিতে বসে পড়লো।দিপ্তিও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো।

দিপ্তি:আমার জন্যই এতো কিছু হচ্ছে।তুই আমার জন্য এসব কেনো করছিস নির?

নিরব:আহহ দিপ!আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইনা।

দিপ্তি:তোর মনে হয়না তুই মেয়েটাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছিস?

নিরব:নিশ্চুপ

দিপ্তি:তুই তো চাইলে ওকে সবটা জানিয়ে দিতে পারিস দোস্ত!

নিরব:ভুল যেহেতু করেই ফেলেছি।তাই ভুল টা শোধরাবো ও আমি।যেই চোখ থেকে অশ্রু আমি ঝরিয়েছি,সেই চোখে খুশির ঝলক ও আমি ই নিয়ে আসবো।

দিপ্তি:কিন্তু সেটা কবে নির?

নিরব:যেই কারণে এতো কিছু করা সেই কারণটা মিটে গেলেই।

দিপ্তি:কিন্তু আমার মনে হয়না এতে আদতেও কোনো কাজ হবে।

নিরব:সেটা বোঝাই যাবে।এখন চল..

দুই দিন পর—

নিরব:এইযে মিস প্রতিভা,কতক্ষন ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না?কানে কম শোনো?
(কথাটা বলেই প্রভার সামনে এসে দাড়ালো নিরব।বেশ কিছুক্ষণ ধরে পিছন থেকে ডেকেই চলেছে কিন্তু প্রভা কোনো সারাই দিচ্ছে না।
রাত প্রায় ৮ টা বাজে এখন।রুমের মধ্যে দম বন্ধ লাগছিলো বলে বাইরে এসে একঅটু হাটাচলা করছিলো প্রভা,ঠিক তখনি নিরব ডাক দেয় তাকে।শুনেও না শোনার ভান করে চলে যেতে নেয় সে।তখন ই নিরব সামনে এসে দাঁড়ায়)

প্রভা:কিছু বলবেন?

নিরব:বাব্বাহ!এখন কি তোমার সময়ের সঙ্কট নাকি?

প্রভা:সময়ের যথেষ্ট মূল্য আছে।শুধুশুধু সময় নষ্ট করে কোনো লাভ নেই।

নিরব:হুম।গুড,কিন্তু আমার জানা মতে এখন তোমার কোনো কাজ নেই।

প্রভা:অবশ্যই আছে।আমি ভিতরে যাবো,পড়তে বসবো।সরুন আমার সামনে থেকে।

নিরব:সরবো না।

প্রভা:মানে?

নিরব:চলো আমার সাথে।
(কথাটা বলেই প্রভা কে কিছু বলার সুযোগ দেয় না নিরব।হাত ধরে টেনে ক্যাম্পাস এর বাহিরে নিয়ে আসে।হাত ধরে গাড়ির সামনে এনে বলে)

নিরব:গাড়িতে ওঠো।

প্রভা:কিহ?এই রাতের বেলা আমি আপনার সঙ্গে কোথায় যাবো হ্যা?আমাকে কি খেলনার পুতুল পেয়েছেন?যখন যা খুশি বলবেন আর আমি মেনে নেবো?না আমি যা…

নিরব:তোমার এই নষ্ট এফ এম রেডিও বন্ধ করো তো।চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো।

প্রভা:আমি উঠবোনা।

নিরব:ওকে (কথাটা বলেই কোলে তুলে নেয় প্রভা কে।গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সিটবেল্ট টা বেধে দেয়)

প্রভা:এই এই আপনি কি করছেন টা কি হ্যা?দেখুন,ভালোয় ভালোয় বলছি ছেড়ে দিন আমায়। ছাড়ুন বলছি,আমি কিন্তু এখন করবো।
(আরো হাজারো কথা বলতে থাকে প্রভা।কিন্তু নিরব তার কোনো প্রতিউত্তর না করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।কোনো উত্তর না পেয়ে বেশ কিছুক্ষন পর প্রভাও চুপ করে যায়।
১০ মিনিট পর তাদের গাড়ি থেমে যায়।নিরব গাড়ি থেকে বেড়িয়ে প্রভার সাইডে গিয়ে ওকে নামার ইশারা দেয়।প্রভাও এবার কিছু না বলে চুপচাপ নেমে যায় গাড়ি থেকে।কিন্তু নামতেই বেশ অবাক হিয়ে যায়,কারণ ওরা একটা ব্রিজ এ।

প্রভা:এই আপনি কি আমাকে এখান থেকে ফেলে দিতে নিয়ে এসেছেন?ও মা গোওওও!

নিরব এবার প্রভার মুখ চেপে ধরে।চোখ গরম দেওয়ায় প্রভা চিৎকার করা থামিয়ে দেয়।
নিরব এবার প্রভার মুখ ছেড়ে দিয়ে আঙুল দিয়ে পাশের দিকে ইশারা দেয়।
নিরব এর ইশারা অনুযায়ী পাশে তাকাতেই থমকে যায় প্রভা।কারণ সেখানে রয়েছে দিপ্তি এবং আদিব(আপনাদের মনে আছে কিনা জানিনা।আদিব হলো রোদেলার ভাই)
দিপ্তি আর আদিব একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।প্রভা কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।

প্রভা:ভাইয়া তুমি এখানে?আর আপু তুমি! ত তোমরা এভাবে!

দিপ্তি:কিহ?খুব অবাক লাগছে তাই না?

প্রভা:নিশ্চুপ

দিপ্তি:তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিচ্ছি।
আদিব এর সঙ্গে আমার রিলেশন আরো দু বছর আগে থেকেই।কিন্তু আমি দেশে আসার কিছুদিন আগে একটা বিষয়ে প্রচুর রাগারাগি হয় আমাদের মাঝে।যার ফলে আদিব রেগে গিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।আমিও রেগে গিয়ে ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করিনা।কিন্তু থাকতেও পারতাম না ওকে ছাড়া।খুব কষ্ট হতো।
সেদিন রাতে আমি নিরব কে সবটা জানাই,খুব কাঁদছিলাম আমি।তাই ও আমায় সান্তনা দিচ্ছিলো তখন।আর সেটাই তুই দেখে নিলি।
নিরব প্লান করেই আমার সাথে বেশি মেলামেশা করতো।আর ফেইক আইডি দিয়ে সবকিছুর ভিডিও আদিব কে পাঠাতো।পুড়োটাই আমাদের প্লান ছিলো।একটা মানুষ আর যাই করুক না কেনো নিজের ভালোবাসার মানুষের ভাগ কাউকে দিতে পারে না।যার ফল সরুপ আদিব ও ওর ভুল টা বুঝতে পারে।আর ফিরে আসে আমার কাছে।

(স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রভা।কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।তার মানে এসব নাটক ছিলো?কিন্তু তাহলে সেদিন রাতে নিরব ঐ ধরণের কথা কেনো বললো)

দিপ্তি:এনি ওয়ে,এবার তোদের মাঝের ঝামেলা তোরা মিটিয়ে নে।আমি গেলাম লং ড্রাইভ এ। এন্ড এগেইন থ্যাংকস এ লট নির।ইউ আর এ রিয়েল বেস্ট ফ্রেন্ড।

কথাটা বলেই আদিব কে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে দিপ্তি।কিছুক্ষণের মাঝেই চোখের আড়াল হয়ে যআয় তারা।প্রভা এখনো হা কঅরে দাঁড়িয়ে আছে।

নিরব:এইযে মিস প্রতিভা,মুখে কিন্তু মাছি ঢুকে যাবে।

প্রভা:ত তার মানে আপনি সেদিন রাতে সব মিথ্যে বলেছিলেন?

নিরব:উম হু,সবটা মিথ্যে বলিনি।

প্রভা:মানে?

নিরব:মানে হলো এটা যে আমি কোনো প্রতিভা কে ভালোবাসি না,আর নাই আমার কোনো প্রতিভা কে চাই।কিন্তু..

প্রভা:কিন্তু?

নিরব:কিন্তু,আমার দিয়া কে চাই।আমার দিয়াপাখি কে চাই।যে একান্ত আমার,শুধুই নিরবের।বুঝলে দিয়াপাখি?এখন থেকেই নিজের ভবিশ্যৎ পরিকল্পনা শুরু করে দাও।

প্রভা:হুহ,বললেই হলো?এইযে মিঃচঞ্চল আপনি কান খুলে শুনে রাখুন,আমি দরকার রিক্সা ওয়ালার সাথে নিজের ভবিশ্যৎ পরিকল্পনা করবো।তবুও আপনার সঙ্গে ন..

প্রভাকে আর কিছু বঅলার সুযোগ না দিয়েই নিরব তার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে।চোখ দিয়ে আগুণ ধরছে তার।প্রভা ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে এবার।নিরব এবার প্রভার মুখ ছেড়ে দিয়ে দু কাধ শক্ত করে চেপে ধরে।

নিরব:আমি তোর থেকে অনুমতি চাইনি। তোকে জানিয়েছি মাত্র।তুই চাস কিংবা না চাস আই ডোন্ট কেয়ার।বললাম না তুই শুধুই আমার! আরে রিক্সাওয়ালা তো দূড়ে থাক তুই যদি রাস্তার পাগল এর দিকেও চোখ দুলে তাকাস আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না দিয়াপাখি।তোকে শুধু আমার সঙ্গেই নিজেকে কল্পনা করতে হবে। শুধু আমার সঙ্গে।তুই একান্তই আমার।শুধুই নিরবের দিয়াপাখি🌼।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here